সামরিক শাসন সম্পর্কে ক্লড -ই-ওয়েলচ ও অধ্যাপক ডুবয়ের তত্ত্ব আলোচনা কর।

আফ্রিকার সামরিক শাসন অভ্যুত্থানের পশ্চাতে কড-ই-ওয়েলচ কী কী কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যাখ্যা কর।
, আফ্রিকার সামরিক শাসনের কারণ বিশ্লেষণে কড-ই-ওয়েলচ ও ডুবয় এর অবদান
তুলে ধর।
উত্তরঃ ভূমিকা : উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সামরিক বাহিনী করলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সংকট দূরীভূত হওয়ার পরও সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক রাজনৈতিক সংকট ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ক্ষমতা দখল করে। এদিক থেকে বিবেচনা। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে সামগ্রিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে এবং সে রাষ্ট্রের সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। সামরিক বাহিনী বেসামরিক সরকারের দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতার কারণে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা করলে তাকে সামরিক হস্তক্ষেপ বলা হয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে।
সামরিক শাসন সম্পর্কে কড-ই-ওয়েলচ : স্বাধীনতাউত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ঘন ঘন সামরিক অভ্যুত্থান এবং এ সামরিক শাসনের কারণে দেশটি আজও অনুন্নত রয়ে গেছে। আফ্রিকার এ সামরিক শাসন নিয়ে বিভিন্ন গবেষক গবেষণা চালিয়েছেন এবং তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন। এসব গবেষকগণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ক্লড-ই-ওয়েলচ। ক্লড-ই-ওয়েলচ আফ্রিকার সামরিক শাসন সম্পর্কে গবেষণা করে যে তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন তাই মূলত ক্লড-ই-ওয়েলচ তত্ত্ব। তিনি তাঁর তত্ত্ব Journal of Modern African Studies Vol - 5, No-3, 1967' নামক প্রবন্ধে প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর তত্ত্বে আফ্রিকার সামরিক শাসনের জন্য ৮টি কারণকে দায়ী করেছেন। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ক্রমহ্রাসমান বৈধতা : ওয়েলচ আফ্রিকায় সামরিক শাসন জারির পিছনে ক্ষমতাসীন
রাজনৈতিক দলের ক্রমহ্রাসমান বৈধতাকে দায়ী করেছেন। তিনি রাজনৈতিক দলকে বৈধতা বা অবৈধতা এ দু'ভাবে বিচার করেছেন। যেমন-
ক. কোন দল বা সরকার অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসলে তা হবে অবৈধ।
খ. সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেও কোন সরকার তার কর্মকাণ্ডের জন্য অবৈধ হতে পারে। ২. রাজনৈতিক সরকারের ব্যর্থতা : ওয়েলচ সামরিক অভ্যুত্থানের পিছনে রাজনৈতিক সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। তার মতে, একটি রাজনৈতিক সরকার যখন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয় তখন সে সরকার জনগণ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে সরকার রাজনৈতিকভাবে দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়ে সামরিক বাহিনীর সাহায্য। নেয়। সেনাবাহিনীর সহায়তায় সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার এ কৌশল কিছুদিনের মধ্যে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলে উৎসাহিত করে। এই প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক সরকারের ব্যর্থতার পূর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শাসনক্ষমতা দখল করে ।
৩. ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল : যদি কোন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ ও কোন্দল থাকে, তাহলে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। ওয়েলচ আফ্রিকার সামরিক শাসনের কারণ সম্পর্কে তাই ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে বিভিন্ন উপদলের উদ্ভব হয় এবং এর ফলে দলের ক্ষমতা বিনষ্ট হয়। এতে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। এ প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতায় আসার পথ পরিষ্কার হয়। ফলে সামরিক বাহিনী এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দেশের শাসনভার নিয়ে নেয় ।
৪. বাইরের হস্তক্ষেপের অসম্ভাবনা : পৃথিবীতে যত সামরিক শাসন জারি হয়েছে তার পিছনে বহিঃশক্তির প্রভাব বিদ্যমান ছিল। কারণ কোন দেশের সামরিক বাহিনী যদি মনে করে যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করলে বাইরে থেকে কোন চাপ বা হস্তক্ষেপ আসবে না, তাহলে তারা শাসন ক্ষমতা দখল করে নেয়। তাই ওয়েলসের মতে, সামরিক শাসনের পশ্চাতে আরেকটি কারণ হচ্ছে বাইরের হস্তক্ষেপ বা চাপের অসম্ভাবনা।
৫. দেশের অভ্যন্তরে সংঘাতময় পরিস্থিতি : সামরিক শাসনের পিছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে সংঘাতময় পরিস্থিতি। আর এটি উল্লেখ করেছেন সামরিক শাসনের কারণ বিশ্লেষক ক্লড ওয়েলচ। তিনি বলেছেন যে, জাতীয় ইস্যুতে মতবিরোধ এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা থাকলে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ পায় ।
৬. অর্থনৈতিক অবনতি : অর্থনৈতিক অবনতি সামরিক শাসনের আরেকটি প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেয় এবং ওয়েলসের মতে, সামরিক শাসনের অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক অবনতি বা আর্থিক সংকট। কেননা সরকারের আর্থিক সংকটে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং এর প্রভাব গিয়ে পড়ে জনগণের উপর। ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মান নিচু হয়ে যায় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এতে জন অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় এবং তা গিয়ে পড়ে সরকারের উপর। ফলে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে এবং এ অবস্থায় সামরিক শাসন আসে ।
৭. প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দুর্নীতি : সামরিক শাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে ক্লাউড ওয়েলস দেখিয়েছেন প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দুনীর্তিকে। কোন দেশের বেসামরিক সরকার যখন প্রশাসনিক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে, তখন প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখা দেয়। প্রশাসনে অদক্ষ ও অযোগ্য লোক, নিয়োগ, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ প্রভৃতি কারণে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি প্রবেশ করে। ফলে প্রশাসনিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ে এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দেখা দেয় দুর্বলতা যা সামরিক বাহিনী সুনজরে দেখে না। ফলে সামরিক বাহিনী দুর্নীতি রোধের অজুহাতে ক্ষমতা দখল করে নেয় ।
৮. সেনাবাহিনীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা : ক্লাউড ওয়েলস সামরিক শাসনের পিছনে সব শেষে দায়ী করেছেন সেনাবাহিনীর উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে । কেননা সামরিক বাহিনী যদি মনে করে যে, তারা বেসামরিক বাহিনীর চেয়ে উন্নত এবং নেতৃত্বদান ও যোগ্যতায় শ্রেষ্ঠ আসনে অসীন, তাহলে তাদের মনে ক্ষমতা গ্রহণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা জাগে যা শাসনক্ষমতা দখলের পিছনে কাজ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]