। আফ্রিকার ঐক্য সংস্থা গঠনের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর। OAU এর গঠনের কারণ সম্পর্কে লিখ।

উত্তর ভূমিকা : ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় আগমন করে এবং আফ্রিকাকে দখল করে।
নিয়ে সেখানে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে। ঔপনিবেশিক শাসন স্থাপনের পর ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকানদের উপর শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ। অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয় এবং তারা ইউরোপীয় নিজ নিজ দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। কিন্তু শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় আফ্রিকার অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং আফ্রিকার স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়। এ প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তারা একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ প্রয়োজনীয়তা থেকেই জন্ম হয় আফ্রিকার ঐক্য সংস্থা বা DAU যা গঠিত হয় ১৯৬৩ সালে।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের পটভূমি বা প্রেক্ষাপট : কোন একটি বিশেষ পটভূমির ভিত্তিতে কিংবা হঠাৎ করে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গড়ে উঠে নি। এর পশ্চাতে রয়েছে দীর্ঘ পটভূমি। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো : ১. আফ্রিকান নেতৃবৃন্দের হতাশা ও সংশয় : স্বাধীনতার পর আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলো শাসনক্ষমতা পায় কিন্তু তারা সঠিকভাবে দেশ চালাতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হন। এদিকে একযোগে ১৩টি আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দের মধ্যে হতাশা ও সংশয় কাজ করে। কারণ তাদের ধারণা "এত বেশি রাষ্ট্রের উদ্ভব হলে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা অনিবার্য।” তাই তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এক্ষেত্রে প্রথম এগিয়ে আসেন থানার প্রেসিডেন্ট ড. নক্রুমা। তিনি তাঁর রচিত 'African Golden Road Ahead' নামক গ্রন্থে আফ্রিকার সকল দেশের সমন্বয়ে একটি 'United Government' গঠনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁর এ প্রস্তাব গৃহীত হয় নি ।
২. আটটি দেশের সমস্যা নিয়ে সম্মেলন : স্বাধীনতার পর প্রথমে ১৯৫৮ সালে আটটি দেশের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে ঔপনিবেশিকতার অবসান, স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐক্য বিধান। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আলজেরিয়ার মুক্তিসংগ্রাম প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। উক্ত আটটি দেশের মধ্যে রয়েছে তিউনিস, লিবিয়া, গিনি, মরক্কো, ঘানা, মিশর, লাইবেরিয়া ও ইথিওপিয়া
৩. আদ্দিস আবাবায় দ্বিতীয় সম্মেলন (১৯৬০) : আফ্রিকার ঐক্য সাধন ও সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হয় ১৯৬০ সালে আদ্দিস আবাবায়। এ সম্মেলনে উক্ত আটটি দেশসহ মোট ১৫টি দেশের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ ও সাদা-কালো সংকট সম্পর্কিত সমস্যা ও তার সমাধান।
৪. ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়ন গঠন : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের প্রথম পদক্ষেপ নেয় ঘানা ও গিনি এ দুটি রাষ্ট্র। তারা ১৯৫৮ সালের ২৩ নভেম্বর একত্রিত হয়ে একটি ঐক্য সংস্থা গঠন করেন এবং এর নাম দেন ফেডারেল ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের সদস্য দেশের দুটি রাষ্ট্রপ্রধানই সমান মর্যাদার অধিকারী হন। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৬৩ সালে ফেডারেল ইউনিয়নে যোগ দেয় মালি। ফলে এ সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়ন'। এ ইউনিয়ন আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের পটভূমি রচনায় অনেকখানি সাহায্য করেছে।
৫. ব্রাজাভিল গ্রুপ : ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়ন ছিল মূলত ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চল, যারা ব্রিটেন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। এ গ্রুপের বিপক্ষে চলে যায় আইভরিকোস্টের প্রেসিডেন্ট হাউফয়েট বায়োগনি । আইভরিকোস্ট ছিল ফরাসি উপনিবেশ। তাই তিনি সাবেক ফরাসি উপনিবেশগুলো নিয়ে গঠন করেন 'কনসিয়াল ডিআই ইনটেনটি' নামক সংস্থা। এ সংস্থার সদস্য ছিল আইভরিকোস্ট, দাহমি, আপারভোল্ট, নাইজার প্রভৃতি রাষ্ট্র। এ সংস্থার দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে ব্রাজাভিলে। এ সম্মেলনে সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘আফ্রো মালগাছ ইউনিয়ন' বা (AMV)। তবে এ সংস্থা 'ব্রাজাভিল গ্রুপ' নামে পরিচিত হয়। এ সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল-
ক. সদস্য দেশগুলোর পরস্পরের সীমানার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। খ. আইনগত সরকারের বিরুদ্ধে কোন প্রকার বিদ্রোহকে সমর্থন না করা।
গ. ফ্রান্সের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
৬. ক্লাসাবাঙ্কা গ্রুপ : ব্রাজাভিল গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর 'ঘানা-গিনি-মালি' ইউনিয়ন হতাশা ব্যক্ত করে সংশয় প্রকাশ করে যে, তারা ব্রাজাভিল গ্রুপের কাছে হেরে যাচ্ছে জাতীয় সংহতি অর্জনের প্রতিযোগিতায়। মূলত এ গ্রুপ ছিল ব্রিটিশ সমর্থক তারা ব্রাজাভিল গ্রুপকে নব্য উপনিবেশবাদের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে। এ প্রেক্ষাপটে তারা ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মরক্কোর রাজধানী ক্লাসাবাঙ্কায় মিলিত হয়। এ সম্মেলনে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশের কিছু আফ্রিকান দেশ অংশগ্রহণ করে। এসব দেশের মধ্যে ছিল মরক্কো, লিবিয়া, আলজেরিয়া প্রভৃতি দেশ। এসব দেশের প্রতিনিধিরা একটি সংস্থা গঠন করে এর সনদ রচনা করেন। এ গ্রুপ 'ক্লাসাবাক্কা গ্রুপ' নামে পরিচিত হয়। এ গ্রুপের উদ্দেশ্য ছিল-
ক. অভিন্ন বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
খ. অভিন্ন ডাক ব্যবস্থার প্রচলন করা।
গ. নব্য উপনিবেশবাদ মোকাবিলার জন্য একটি কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড গঠন করা।
৭. মনরোভিয়া সম্মেলন : ক্লাসাবাঙ্কা গ্রুপের কার্যকলাপে ভীত হয়ে ব্রাজাভিল গ্রুপ ১৯৬১ সালের মে মাত্র লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ায় একটি সম্মেলন আহ্বান করেন। এ সম্মেলনে ব্রাজাভিল গ্রুপের সদস্য ছাড়া। টোগোসহ কিছু ক্ষুদ্র দেশ অংশগ্রহণ করে। এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল ব্রাজাভিল গ্রুপভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব অক্ষ রেখে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সনদ তৈরি করা।
৮. দুই গ্রুপের বিবাদ : ব্রাজাভিল গ্রুপ ও ক্লাসাবাঙ্কা গ্রুপের মধ্যে বিবাদ স্পষ্ট হয়ে উঠে। কারণ উভয় গ্রুপের ছি আদর্শগত বিরোধ। তবে তারা সবাই চেয়েছিল আফ্রিকার ঐক্য। তাদের বিরোধের প্রধান কারণ ছিল আফ্রিকার স্বাধী রাষ্ট্রগুলোর প্রকৃতি ও ধরন নিয়ে এবং ঐক্য সংস্থার ধরন নিয়ে।
৯. আদ্দিস আবাবা সম্মেলন (১৯৬৩) : আফ্রিকার ঐক্য সংস্থার গঠন নিয়ে যখন দুই গ্রুপের মধ্যে বিবাদ চরা তখন ১৯৬৩ সালে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান দেশগুলোর একটি সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১২ মে ১৯৬৩ সালে এবং এ সম্মেলনে ৩২টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীনতার পর আফ্রিকান দেশস শাসনক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে নি। ফলে আফ্রিকান দেশসমূহের মধ্যে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। অবস্থার প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ হতাশাগ্রস্ত হয় এবং সংশয় প্রকাশ করে স্বাধীনতার রক্ষা নিয়ে। তাই তা আফ্রিকার ঐক্য রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে প্রথম এগিয়ে আসে ঘানা-গিনি ও মালি নামক তিনটি দে তাদের একান্ত প্রচেষ্টায়ই ১৯৬৩ সালে গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা বা OAU। তবে এ সংস্থা আফ্রিকার সফল তেমন অর্জন করতে পারে নি এবং ব্যর্থতাই বেশি। তবুও আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা আফ্রিকার উন্নতির জন্য কাজ করে যাে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]