আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার গঠন, সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন কর ।

উত্তরা ভূমিকা : ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় আগমন করে এবং আফ্রিকাকে দখল ব নিয়ে সেখানে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে। ঔপনিবেশিক শাসন স্থাপনের পর ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকানদের উ অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয় এবং তারা ইউরো শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর আফ্রিকান নেতৃ নিজ নিজ দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। কিন্তু শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় আফ্রিকার অভ্যা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং আফ্রিকার স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়। এ প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ চিন্তিত হয়ে এবং তারা একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ প্রয়োজনীয়তা থেকেই জন্ম হয় আফ্রিকার ঐক্য সংস্থা OAU যা গঠিত হয় ১৯৬৩ সালে।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠন : ব্রাজাভিল ও ক্লাসাবাঙ্কা এই দুই গ্রুপের বিরোধ অবসান হওয়ায় আফ্রি ঐক্য সংস্থা গঠনের পথ পরিষ্কার হয়। এ প্রেক্ষাপটে ৩২টি আফ্রিকান দেশের উপস্থিতিতে ১৯৬৩ সালের ২৫ গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU)। উভয় গ্রুপের আদর্শ ও স্বার্থকে সমুন্নত রেখে রচিত হয় আফ্রিকান সংস্থার মূল সনদ ।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার ধারা' বা শর্ত : ১৯৬৩ সালের ২৫ মে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার সমদ রচিত হয়। সনদের যারা বা শর্তসমূহকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
প্রথম ধারা
2
আফ্রিকান জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।
স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভূখণ্ডগত সংহতি রক্ষা ও অর্জন করা।
৩. আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও দৃঢ়তা স্থাপন করা।
৪. আফ্রিকা হতে সকল ধরনের উপনিবেশবাদের বিলুপ্তি করা।
C.
জাতিসংঘের সাথে সংহতি রেখে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উন্নয়ন ঘটানো ।
দ্বিতীয় ধারা : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার মধ্যে সকল আফ্রিকান রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও মাদাগাস্কারসহ তার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
তৃতীয় ধাপ্পা
১. সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌম নীতিমালা প্রণয়ন ।
২. অন্য রাষ্ট্রের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ নয় ।
৩. ভূখণ্ডগত ঐক্যের প্রতিশ্রুতি রক্ষা।
৪. অভ্যন্তরীণ বিবাদের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করা।
৫. রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা।
৬. আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর ভূতত্তগত স্বাধীনতার জন্য অগ্রসর হওয়া ও
৭. আন্তর্জাতিক জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন সমর্থন করা।
চতুর্থ ধারা : প্রত্যেক স্বাধীন ও সার্বভৌম আফ্রিকান রাষ্ট্র এ সংগঠনের সদস্য হতে পারবে।
পঞ্চম ধারা : প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র মানবাধিকারের দায়িত্ব পালন করবে।
গঠনতন্ত্র বা শাখা : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা কয়েকটি শাখা নিয়ে গঠিত। নিম্নে এ শাখাগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. সংসদ (Assembly) : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হচ্ছে Assembly বা সংসদ। এ সংস্থা গঠিত হয়েছে প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রের একটি ভোটের সমন্বয়ে এবং এর অধিবেশন বসে বছরে একবার। এ সংস্থার দুই-তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
২. মন্ত্রিপরিষদ (Council of ministers) : এটা মূলত মন্ত্রিপরিষদ। এ পরিষদ গঠিত হয় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সমন্বয়ে। এ সংস্থা Assembly এর কাছে দায়বদ্ধ এবং Assembly এর মাধ্যমে এর কাজ বাস্তবায়িত হয়।
৩. মহাসচিৰ (Secretary general) : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার সবার উপরে রয়েছে Secretary General, তিনি Assembly কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং তাকে সহায়তা করার জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার সাফল্য : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠিত হয় ১৯৬৩ সালে এবং আজ এটা দীর্ঘপথ অতিক্রম করেছে। ফলে এর কিছু সফলতা রয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :
১. শান্তিরক্ষায় অবদান : স্বাধীনতার পর আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের মধ্যে বিবাদ শুরু করে এবং বিভিন্ন সময় সীমান্ত নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আসে অস্থিতিশীলতা এবং অশান্তি বিরাজ করে। এ অশান্তি দূর করে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা কাজ করে এবং এক্ষেত্রে সফলতাও পায়। যেমন-
ক. আলজেরিয়া ও মরক্কোর মধ্যে সংঘটিত ও সীমান্ত সংঘর্ষের নিরসন করা হয়।
ঘ. ১৯৬৫ সালে ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করা হয় ।
গ. কেনিয়া ও সোমালিয়ার মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ ।
২. আফ্রিকার স্বাধীনতাসংগ্রামে সফলতা : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের পরও অনেক দেশ উপনিবেশবাদের কবল হতে মুক্ত হতে পারে নি। তারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে নি। এ সময় এগিয়ে আসে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা। আফ্রিকান ইউনিয়নের সাহায্য নিয়েই অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, রোডেশিয়া প্রভৃতি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার ব্যর্থতা : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা অনেকক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারলেও
অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারে নি। এক্ষেত্রে সংস্থার বিফলতাই প্রকাশ পায়। যেমন-
কঙ্গো সমস্যার সমাধানে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। কেননা কঙ্গো সমস্যা জটিল আকার ধারণ করলে OAU একটি কমিশন গঠন করে ১৯৬৪ সালে। কিন্তু কমিশন কোন সাফল্য বয়ে আনতে পারে নি।
যে কোন দেশের উন্নতির মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। কিন্তু OAU অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোন সফলতাই বর আনতে পারে নি। অর্থনৈতিক অবনতি রক্ষার জন্য কোন সুষ্ঠু পদক্ষেপই সংস্থা গ্রহণ করতে পারে নি। ফলে আফ্রিক আজও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে পারে নি। তাই আফ্রিকা অনুন্নত দেশের তালিকায় অবস্থান করছে। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীনতার পর আফ্রিকান দেশসমূহ শাসনক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে নি। ফলে আফ্রিকান দেশসমূহের মধ্যে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ হতাশাগ্রস্ত হয় এবং সংশয় প্রকাশ করে স্বাধীনতার রক্ষা নিয়ে। তাই তারা আফ্রিকার ঐক্য রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে প্রথম এগিয়ে আসে ঘানা-গিনি ও মালি নামক তিনটি দেশ তাদের একান্ত প্রচেষ্টায়ই ১৯৬৩ সালে গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা বা OAU। তবে এ সংস্থা আফ্রিকার সফলতা তেমন অর্জন করতে পারে নি এবং ব্যর্থতাই বেশি। তবুও আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা আফ্রিকার উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।

আফ্রিকীয় ঐক্য সংস্থা কেন গঠিত হয়েছিল? আন্তরাষ্ট্রীয় বিবাদ মীমাংসায় এ সংস্থার অবদান আলোচনা কর।


অথবা, আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের পটভূমি লিখ। এটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধ নিরসনে কতটা সফল হয়েছিল? লিখ।
উত্তর ভূমিকা : স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন। আফ্রিকার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আফ্রিকা মহাদেশের রাষ্ট্রগুলো উপনিবেশবাদের শিকার হতে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং আফ্রিকানরাই নিজ দেশের শাসনভার গ্রহণ করে। কিন্তু তারা প্রশাসনিকভাবে দক্ষ না হওয়ায় শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হয়। ফলে আফ্রিকার অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং এ সমস্যা সমাধানে গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU)। এখন কথা হচ্ছে এ OAU আফ্রিকার আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাদ মীমাংসায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছিল। কেননা আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠিত হয়েছিল আফ্রিকার আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাদ মীমাংসার লক্ষ্যেই।
আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের কারণ : কোন একটি বিশেষ কারণে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠিত হয় নি। এর পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিহিত রয়েছে। নিম্নে এ কারণসমূহ দেয়া হলো :
১. আফ্রিকান নেতৃবৃন্দের সংশয় : স্বাধীনতার পর আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের শাসনক্ষমতা পায় স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়কগণই। কিন্তু তারা সঠিকভাবে দেশ চালাতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হন। এদিকে একযোগে ১৩টি আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দের মধ্যে হতাশা ও সংশয় কাজ করে। কারণ তাদের ধারণা এত বেশি রাষ্ট্রের উদ্ভব হলে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। তাই তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ।
২. ড. নতুমার ভূমিকা : আফ্রিকায় যখন বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে অনৈক্য দেখা দেয়, তখন ঐক্য সাধনের জন্য এগিয়ে আসেন ঘানার প্রেসিডেন্ট ড. নক্রুমা। তিনি তাঁর রচিত 'African Golden Road Ahead' নামক গ্রন্থে আফ্রিকার সকল দেশের সমন্বয়ে একটি 'United Government' গঠনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁর এ প্রস্তাব গৃহীত হয় নি।
৩. ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়নের অবদান : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের প্রথম পদক্ষেপ নেয় ঘানা ও গিনি এ দুটি রাষ্ট্র। তারা ১৯৫৮ সালের ২৩ নভেম্বর একত্রিত হয়ে একটি ঐক্য সংস্থা গঠন করেন এবং এর নাম দেন ফেডারেল ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের সদস্য দেশের দুটি রাষ্ট্রপ্রধানই সমান মর্যাদার অধিকারী হন। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৬৩ সালে ফেডারেল ইউনিয়নে যোগ দেয় মালি। ফলে এ সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়ন' এ ইউনিয়ন আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠনের পটভূমি রচনায় অনেকখানি সাহায্য করেছে।
৪. ব্রাজাভিল গ্রুপের অবদান : ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়ন ছিল মূলত ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চল যারা ব্রিটেন থেকে মুক্ত স্বাধীনতা অর্জন করে। এ গ্রুপের বিপক্ষে চলে যায় আইভরিকোস্টের প্রেসিডেন্ট হাউফয়েট বায়োগনি। আইভরিকোস্ট ছিল ফরাসি উপনিবেশ। তাই তিনি সাবেক ফরাসি উপনিবেশগুলোর সমন্বয়ে গঠন করেন 'কনসিয়াল ডিআই ইনটেনটি' নামক সংস্থা। এ সংস্থার সদস্য ছিল আইভরিকোস্ট, দাহমি, আপারডোন্ট, নাইজার প্রভৃতি রাষ্ট্র। এ সংস্থার দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে ব্রাজাভিলে। এ সম্মেলনে সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আফ্রো মালাগাছ ইউনিয়ন (AMU)। তবে এ সংস্থা 'ব্রাজাভিল গ্রুপ' নামে পরিচিত হয়। এ সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল-
ক. সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পরস্পরের সীমানার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
খ. আইনগত সরকারের বিরুদ্ধে কোন প্রকার বিদ্রোহকে সমর্থন না করা।
গ. ফ্রান্সের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
৫. ক্লাসাবাঙ্কা গ্রুপের অবদান : ব্রাজাভিল গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর ঘানা-গিনি-মালি ইউনিয়ন হতাশাগ্রস্ত হয়ে সংশয় প্রকাশ করে যে তারা ব্রাজাভিল গ্রুপের কাছে হেরে যাচ্ছে জাতীয় সংহতি অর্জনের প্রতিযোগিতায়। মূলত এ গ্রুপ ছিল ব্রিটিশ সমর্থক। তারা ব্রাজাভিল গ্রুপকে নব্য উপনিবেশবাদের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে। এ প্রেক্ষাপটে তারা ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মরক্কোর রাজধানী ক্লাসাবাক্কায় মিলিত হয়। এ সম্মেলনে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশের কিছু আফ্রিকান দেশ অংশগ্রহণ করে। এসব দেশের মধ্যে ছিল মরক্কো, লিবিয়া, আলজেরিয়া প্রভৃতি দেশ। এসব দেশের প্রতিনিধিরা একটি সংস্থা গঠন করে এর সনদ রচনা করেন । এ গ্রুপ 'ক্লাসাবাঙ্কা গ্রুপ' নামে পরিচিত হয়। এ গ্রুপের উদ্দেশ্য ছিল- ক. অভিন্ন বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা ।
খ. অভিন্ন ডাক ব্যবস্থার প্রচলন করা ।
গ. নব্য উপনিবেশবাদ মোকাবিলার জন্য একটি কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড গঠন করা।
৬. আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠন : আফ্রিকার ঐক্যস্থাপন নিয়ে ব্রাজাভিল গ্রুপ ও ক্লাসাবাঙ্কা গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় এবং এ বিরোধের অবসান করে ঐক্য স্থাপনের জন্য ১৯৬৩ সাে "দ্দিস আবাবায় একটি সম্মেলন আহ্বান করা হয়। এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১২ মে ১৯৬৩ সালে এবং সম্মেলনে ৩২টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত হন। উক্ত সম্মেলনে আফ্রিকার ঐক্য নিয়ে আবারও দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। অবশেষে ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট হাইলে গেলামির হস্তক্ষেপে বিরোধের অবসান হয় এবং আফ্রিকার ঐক্য সংস্থা গঠনের পথ পরিষ্কার হয়। এ প্রেক্ষাপটে ৩২টি দেশের উপস্থিতিতে ১৯৬৩ সালের ২৫ মে গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU)। উভয় গ্রুপের আদর্শ ও স্বার্থকে সমুন্নত রেখে রচিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার মূল সনদ
আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধ মীমাংসায় OAU এর অবদান : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠিত হয় আফ্রিকার সমস্যা সমাধান এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষসহ কতিপয় সমস্যা বিদ্যমান যা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধ নামে পরিচিত। এ আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধ মীমাংসায় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিম্নে এগুলো দেয়া হলো :
১. সীমান্ত সংঘর্ষ নিষ্পত্তি : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সফলতা হচ্ছে সীমান্ত বিরোধ নিরসন। স্বাধীনোত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয় যা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাত নামে পরিচিত। এ সংঘাত নিরসনের জন্য সংস্থাটি ১৯৬৪ সালে একটি কমিশন গঠন করে যার নাম দেয়া হয় 'Commission of Mediation, Concilliation and Arbitration' এ কমিশন বেশ কয়েকটি দেশের সীমান্ত বিরোধ নিরসন করে। যেমন- কেনিয়া, ঘানা, মরক্কো, আপারভোল্ট, ইথিওপিয়া, আলজেরিয়া প্রভৃতি ।
২. অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি : আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা গঠিত হয়েছিল অভ্যন্তরীণ বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। তাই আফ্রিকান ঐক্য সংস্থাটি প্রথমেই এদিকে দৃষ্টি দেন। সংস্থাটি আফ্রিকান দেশগুলোর রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা নিরসনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংঘাত ও সামরিক বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা তীব্র আকার ধারণ করলে বিষয়টি আফ্রিকান ঐক্য সংস্থায় উত্থাপিত হয়। বিরোধ নিরসনে ১১টি দলের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সাফল্য না আসলে পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৮১ সালে সংস্থাটি সেখানে 'Inter African Peace Keeping Force' পাঠায়। এবার সফলতা অর্জিত হয় এবং বহু নরনারীর প্রাণরক্ষা পায় ।
৩. জায়ারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা জায়ার স্বাধীনতা পায় ১৯৬০ সালে বেলজিয়ামের নিকট থেকে। জায়ারের একটি প্রদেশ ছিল কাতাঙ্গা। কাতাঙ্গার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। কারণ স্বাধীনতার পর কাতাঙ্গার উন্নতির জন্য জায়ারের সরকার কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করে নি। ফলে কাতাঙ্গার জনগণের সাথে জায়ারের বিরাট ব্যবধান। সৃষ্টি হয়। এতে কাতাঙ্গায় জন অসস্তোষ প্রকাশ পায় এবং জায়ারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাতাঙ্গা স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। ফলে জায়ারে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ বিশৃঙ্খলা দূর করতে OAU এগিয়ে আসে এব OAU একটি কমিশন গঠন করে জায়ারে পাঠায়। এ কমিশন একটা শাস্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছতে সক্ষম হয়।
৪. নাইজেরিয়ার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা : নাইজেরিয়া হচ্ছে গোত্রবিভাজিত সমাজব্যবস্থা এবং এখানে ছোট বা প্রায় ২৫০টি গোত্র রয়েছে। এ গোত্রগুলোর মধ্যে ইবো ও ইউরোবা হচ্ছে প্রধান গোত্র। স্বাধীনতার পর নাইজেরিয়া শাসনক্ষমতা নিয়ে এ দু' গোত্রের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। নাইজেরিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করে ইউরোবা গোত্র এব তারা ইবো গোত্রের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে ইবো গোত্র অধ্যুষিত বায়াফ্রা নাইজেরিয়া থেকে বিচ্ছি হওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে যা বায়াফ্রা সমস্যা নামে পরিচিত। এ বায়াফ্রা সমস্যা থেকেই শুরু হয় নাইজেরিয়া গৃহযুদ্ধ। এ গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্য OAU প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় এবং অবশেষে সফলতা পায়। কারণ এ সংস্থা কর্মতৎপরতার ফলেই নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ শেষ হয় ১৯৭০ সালের দিকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীনতার পর আফ্রিকায় যে বিশৃঙ্খলা। অনৈক্য দেখা দেয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত হয় ১৯৬৩ সালে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা (OAU)। এ সংস্থা যে উদ্দেশ্য নি গঠিত হয়েছিল তা সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে না পারলেও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধ নিরসনে অনেকাংশে সফলতা অর্থ করতে পেরেছিল। কারণ আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার প্রচেষ্টার ফলেই কতিপয় দেশের সীমান্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটে এর নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। তাই আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাদ মীমাংসায় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা সফলতা অর্জন করেছে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]