আফ্রিকা মহাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈকট্যের নীতি গ্রহণের কারণ কী? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নীতির বাস্তবায়নে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা লিখ ।

যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধর।
অথবা, স্বাধীনোত্তর আফ্রিকার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষণ কর।
উত্তরা ভূমিকা : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশ। এ মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও অফুরন্ত খনিজ সম্পদের জন্য ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে শাসন ও শোষণের ক্ষেত্র পরিণত করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয় এবং এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান ঘটে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করে এবং এর জন্য মার্কিন আফ্রিকান সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এ প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান দেশ মার্কিন প্রশাসনের যে কোন পদক্ষেপের প্রতি সবসময় নৈতিক সমর্থন প্রদান করে। এতে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করে। অন্যদিকে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত কর্মকাণ্ডে আফ্রিকা সমর্থন দেয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকা মহাদেশের প্রতি নৈকট্যের নীতি গ্রহণ করে।
আফ্রিকার প্রতি মার্কিন নৈকট্য নীতি গ্রহণের কারণ : আফ্রিকা মহাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নৈকট্য গ্রহণ করে। এ নৈকট্য নীতি গ্রহণ করার পিছনে কতিপয় বিশেষ কারণ নিহিত রয়েছে। নিম্নে এ কারণগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. স্নায়ুযুদ্ধ ও মার্কিন প্রভাব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র নিয়ে যে আদর্শগত দ্ব স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধ হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। এ যুদ্ধ শেষে একক পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান ঘটে এ বিশ্বকে শাসন করার ক্ষমতা পায়। স্বাধীনোত্তর আফ্রিকায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে পুঁজিবাদ ি ারের চেষ্টা করে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পায় এবং তাই আফ্রিকার পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে মার নৈকট্য নীতি গ্রহণ করে।
২. ৯/১১ ঘটনা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ৯/১১ ঘটনা একটি স্মরণীয় ঘটনা। কেননা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্ব জঙ্গিবাদ হামলায় নিউইয়র্কের টুইনটাওয়ার ধ্বংস হয়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচি হয়। শুরু করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। কারণ মার্কিনিরা এ ঘটনার জন্য মুসলমানদেরকেই দায়ী করে অথচ আফ্রিকার প্রতি নৈকট্য নীতি গ্রহণ করে মুসলিম মহাদেশ হওয়া সত্ত্বেও। এর কারণ দুটি; যথা :
ক: আফ্রিকায় মুসলিম জঙ্গিবাদ নেই।
খ. আফ্রিকা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন ও সহায়তা করছে।
৩. মুসলিম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আফ্রিকা : আফ্রিকা একটি মুসলিম মহাদেশ। কিন্তু তারা সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়ি তারা সবসময় মুসলিম সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ লক্ষ্যে আফ্রিকা মহাদেশ সক্রিয়ভাবে ি আন্তর্জাতিক ফোরামে মার্কিন যে কোন উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওসামা বিন লাে ও আল কায়েদা বিরোধী কর্মকাণ্ডে নৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিব প্রতি নৈকট্য নীতি গ্রহণ করেছে।
৪. আফ্রিকান ইউনিয়নের নীতি : ১৯৬৩ সালে গঠিত হয় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা বা OAU। সংস্থাটি ২০০২ স এসে পরিবর্তিত হয়ে গঠিত হয় ATTI African Union । AU গঠনের পর এর নীতিরও পরিবর্তন ঘটে। এ সময়। নীতির কথা বলা হয় যা আনে। কাকে আকর্ষণ করে। যথা :
ক. সমগ্র আফ্রিকায় গণতন্ত্রায়ন ।
খ. প্রত্যেকটি আফ্রিকান সরকারের লক্ষ্য হবে সুশাসন নিশ্চিত করা ।
আফ্রিকার এ নীতি গ্রহণ মার্কিন প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করে । ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার প্রতি নৈকট্য নীতি গ্রহণ করে ৫. আফ্রিকানদের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ : আফ্রিকার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈকট্য গ্রহণের অন্যতম কারণ আফ্রিকানদের গৃহীত অর্থনৈতিক পদক্ষেপ। ২০০২ সালে এসে আফ্রিকান ইউনিয়ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুটি পদক্ষেপ করে এবং এ পদক্ষেপ দুটি মার্কিন প্রশাসনকে আকৃষ্ট করে। যথা :
i.
ii.
Kampala Declaration এর মাধ্যমে পাস করা হয় "The Conference on security stabi development and co-operation in Africa." এ ঘোষণায় আফ্রিকান দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্না উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
'New Partnership for Africa বা NEPAD, এই নীতিটি ঘোষণা করে চারটি আফ্রিকান দেশ। যে দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া ও সেনেগাল। তাদের ঘোষণায় আফ্রিকান দেশসমূহের আত্মোন্ন মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
এ নীতি দুটি গ্রহণ করার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার প্রতি নৈকট্য নীতি গ্রহণ করে।
আফ্রিকান নীতি গ্রহণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ/কৌশল : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার প্রতি যে ? নীতি গ্রহণ করে তা বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য কতকগুলো পদক্ষেপ বা কৌশল অবলম্বন করে। নিম্নে তা দেয়া হলো :

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই আফ্রিকার শক্তিশালী দেশের উপর আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শক্তিশালী দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সমগ্র আফ্রিকাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও ইথিওপিয়া এ চারটি দেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের প্রভাব বিস্তার করে। কারণ এ চারটি দেশ আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
দেশের প্রভাব ছিল। এ লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় এসব দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ইউরোপীয় দেশের উপনিবেশ ছিল তাই আফ্রিকার উপর কতিপয় ইউরোপীয় কারণ এদের মাধ্যমেই আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তার সহজ হয়।
আফ্রিকার গণতন্ত্র, সুশাসন ও মুক্তবাজার অর্থনীতি চালুর ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে এবং এর মাধ্যমে সেখানে প্রভাব বিস্তার করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আফ্রিকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহায়তা দানের মাধ্যমে সেখানে প্রভাব বিস্তার করে। প্রথমে ক্লিনটন প্রশাসন কংগ্রেসে পাস করে African Growth and Opportunity Act, 2000. এ আইনের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের বাজার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বুশ ক্ষমতায় এসে এ আইনের কিছুটা সংশোধন করে পাস করেন AGO 11। এ আইনের মাধ্যমেই আফ্রিকানদের অর্থনীতিতে কিছু সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসন আফ্রিকানদের সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য গঠন করে 'Millenniums Challenge Account' নামক ফান্ড। এ ফান্ডের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকানদের অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ঔপনিবেশিক শাসন হতে আফ্রিকা মুক্তি পাওয়ার পর দেশ গঠনে তারা আত্মনিয়োগ করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। কারণ নব্য উপনিবেশবাদ। এ উপনিবেশবাদের মূল হোতা যুক্তরাষ্ট্র। কারণ আফ্রিকার সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে সেখানে মার্কিন প্রভাব বাড়ানো হয়েছে। যদিও আফ্রিকার স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ছিল। কিন্তু এটা করা হয়েছে তার নিজ স্বার্থে। কারণ ইউরোপীয় শক্তিবর্গ চলে যাওয়ার পর সেখানে পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থেই আফ্রিকার ক্ষেত্রে নৈকট্য নীতি গ্রহণ করেছে এবং নৈকট্য নীতি দ্বারাই আফ্রিকাকে নব্য উপনিবেশবাদে পরিণত করেছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]