সোভিয়েত ইউনিয়ন আফ্রিকায় কী কী ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল লিখ ।

আফ্রিকায় সোভিয়েত পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধর।
অথবা, আফ্রিকা সোভিয়েত সম্পর্ক নির্ণয় কর।
অথবা, স্বাধীনতার পর আফ্রিকার উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতির বাস্তবায়ন সম্পর্কে লিখ।
অথবা, আফ্রিকার মস্কো নীতির বাস্তবায়ন সম্পর্কে লিখ ৷
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৮৮০ এর দশকে ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে এবং সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরোপীয় দেশ হওয়া সত্ত্বেও আফ্রিকায় কোন উপনিবেশ স্থাপন করে নি। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯২২ সালে গঠিত হয় USSR । তখন থেকে সমগ্রবিশ্বে সমাজতন্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। কারণ রাশিয়া ছিল পুঁজিবাদ ও উপনিবেশবাদের বিপক্ষে। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার সাথে আফ্রিকার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। কারণ আফ্রিকা ছিল উপনিবেশবাদের শিকার এবং এই উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাশিয়া আফ্রিকাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। ফলে স্বাধীনোত্তর আফ্রিকার সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং আফ্রিকান দেশে সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ।
আফ্রিকা সম্পর্কে মস্কো পরিকল্পনা : আফ্রিকা সম্পর্কে প্রথম সরকারিভাবে চিন্তাভাবনা শুরু হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে। কেননা এ সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের পরাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার নিয়ে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু করে। Communist Party of Soviet Union বা CPSU এর ২২তম সম্মেলনে আফ্রিকার সম্বন্ধে দুটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যেমন- Maximum object এবং Minimum object। এ সময় আফ্রিকার প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বীকার করে নিয়ে তাদের সাহায্যের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৬০ এর দশকে এসে মস্কো পরিকল্পনা জোরদার করা হয়। এ সময় সোভিয়েত নেতারা আফ্রিকান দেশগুলোকে কয়েকটি বিশেষ ভাগে ভাগ করেন এবং তার ভিত্তিতে সাহায্য ও সহযোগিতার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। যেমন-
১. কমিউনিস্ট বাকের প্রতি প্রীতি : আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশ কমিউনিস্ট বাকের প্রতি প্রীতি সম্পর্ক বজায়।
রাখছে। যেমন- ঘানা, গিনি ও মালি। এ দেশসমূহ প্রগতিশীল দেশ ও একদলীয় শাসনব্যবস্থা বর্তমান। এসব দেশের নেতারা গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সহমর্মিতা বজায় রাখছে যাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে সহায়ক হয়।
২. পাশ্চাত্য বিরোধী : কতিপয় দেশ পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব পোষণ করছে। যেমন- মিশর, মরক্কো প্রভৃতি দেশ যা সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য ক্ষতিকর।
৩. ব্যবসায়িক সম্পর্ক : কতিপয় আফ্রিকান দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখছে, কিন্তু তারা কমিউনিস্ট সরকারের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করছে না এবং এটা সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য শুভ নয়। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে সুদান, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, ইথিওপিয়া প্রভৃতি দেশ।
৪. পুঁজিবাদী বাকের প্রতি প্রীতি : কতিপয় আফ্রিকান দেশ পুঁজিবাদী বাকের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে, যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের শত্রু। যেমন- সুদান, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, ইথিওপিয়া প্রভৃতি দেশ।
৫. ফ্যাসিস্ট সরকার : কিছুকিছু দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এরা সোভিয়েত ইউনিয়নের কোন নীতিই গ্রহণ করছে না । যেমন- দক্ষিণ আফ্রিকা, মৌরিতানিয়া ও আইভরিকোষ্ট ।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ : সোভিয়েত ইউনিয়ন আফ্রিকায় তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নিম্নে এ পদক্ষেপসমূহ দেয়া হলো :
১. প্রশিক্ষণগত পদক্ষেপ : প্রথমে আফ্রিকার ব্যাপারে কতকগুলো প্রশিক্ষণগত পদক্ষেপ নেয়া হয়। যেমন- ১৯৫০ সালের পর শিক্ষার প্রসারতার জন্য পদক্ষেপ, আফ্রিকান বিশেষজ্ঞ ক্যাডার তৈরি, রুশ টেকনিশিয়ান ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের আফ্রিকায় প্রেরণ, আফ্রিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন দেশে বসবাসরত আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূত জনগণের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের যোগাযোগ প্রভৃতি পদক্ষেপ নেয়া হয় ।
২. আফ্রিকান প্রতিষ্ঠান গঠন : সোভিয়েত ইউনিয়ন আফ্রিকার ব্যাপারে জনসচেতনতা জাগানো ও প্রভাব বিস্তারের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে । যথা :
ক. Academy of Science (১৯৫৭)। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আফ্রিকার বিভিন্ন বিষয়াদির তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করা হয়।
খ. African Institute (১৯৫৯)। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় মস্কোতে এবং এর পরিচালক করা হয় ইভান পথেখিনকে। এ প্রতিষ্ঠান আফ্রিকা সম্পর্কিত প্রতিবেদনমূলক গ্রন্থ, ডিকশনারি, পপুলার হ্যান্ডবুক প্রভৃতি প্রকাশ করতো।
৩. সংবাদপত্র প্রকাশ : পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া আফ্রিকার জন্য সংবাদপত্র প্রকাশ করতে শুরু করে এবং এটা শুরু হয় ১৯৬১ সাল থেকে। প্রথমে 'Oriental Studies Journal' নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করে যার দুটি ভাগ ছিল। যেমন- Contemporary East এবং Soviet Orientology। অবশ্য পরবর্তীতে এ ভাগ দুটি পরিবর্তন করে রাখা হয় Asia and Africa Today এবং People of Asia and Africa. এ পত্রিকায় আফ্রিকার উপনিবেশবাদকে সমলোচনা করা হয় এবং আফ্রিকার দুরবস্থার জন্য উপনিবেশবাদকে দায়ী করা হয়। এ পত্রিকায় বলা হয় যে, আফ্রিকানদের গর্ব করা উচিত যে, তারা ঔপনিবেশিক শাসন হতে মুক্তি পেয়েছে। এ উদ্দেশ্যে আফ্রিকার অভিজাতদের মধ্যে প্রচারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়, যাতে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
৪. স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে আফ্রিকায় স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৬০ এর দশকে এসে আফ্রিকান দেশগুলো দ্রুত স্বাধীনতা অর্জন করে। এই প্রেক্ষাপটে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আফ্রিকান দেশগুলোর স্বাধীনতার স্বীকৃতি দান করে সোভিয়েত ইউনিয়ন অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এবং সেই সাথে দ্রুত এসব দেশে সোভিয়েত দূতাবাস খোলা হয়। তাছাড়া ১৯৫৮ সালের শেষের দিকে সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আফ্রিকান ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়। ফলে আফ্রিকার সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।
৫. কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন : স্বাধীনোত্তর আফ্রিকায় সোভিয়েত প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফলতা অর্জন করে ।
: আফ্রিকান দেশগুলো যখন স্বাধীনতা অর্জন করে তখন সোভিয়েত নেতা বৃদ্ধির জন্য রাশিয়ায় আফ্রিকান নেতাদের ভ্রমণের সুযোগসহ বিভিন্ন প্রকার সুযোগ ৬০ এর দশকে আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়কদের জন্য রাশিয়া এক এবং উক্ত অনুষ্ঠানে গিনির জাতীয়তাবাদী নেতা আহমেদ সেকুতুকে ডে লেনিন
ক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় রাশিয়ার পক্ষ থেকে রা হয় Friendship University |
আফ্রিকা অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত দেশ। এ সুযোগ গ্রহণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন । শর্ক গড়ে তোলে। এ লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বরে, ১৯৬০ সালের জানুয়ারি এবং ণিজ্যিক বিশেষজ্ঞ দল তিউনিস সফর করে। তাছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন তিউনিসকে
• ঋণ প্রদানের কথা ঘোষণা করে।
উ : সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা ব্রেজনেভ আফ্রিকার ব্যাপারে কতিপয় নীতি গ্রহণ াহায্য প্রদান ।
১৯৮১ সালের মে পর্যন্ত এ ১০ বছরের মধ্যে ছয়টি আফ্রিকান দেশের সাথে সহযোগিতামূলক ।ছাড়া এ সময় আরো ১০টি আফ্রিকান দেশ সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ন : ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে এবং সাথে সাথে আফ্রিকায়ও য়। কারণ স্নায়ুযুদ্ধ শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন হয় এবং বিশ্বের প্রভাব থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং বিশ্বের দেশগুলোতে য়। এদিকে আফ্রিকান দেশগুলোর পুনর্গঠনের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ছিল না। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আফ্রিকানরা বেশি সাহায্য আশা করে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। অবশেষে তারা পুঁজিবাদী বিশ্ব থেকে কায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বিনষ্ট হয়। ফলে আফ্রিকান দেশগুলোতে পুঁজিবাদের । অপরপক্ষে, আফ্রিকায় সমাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে আফ্রিকায় সোভিয়েত
লাচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের য়েন তার সমাজতন্ত্রের আদর্শ সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। ১৯৬০ এর দশকে যখন । করতে থাকে তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন সেদিকে দৃষ্টি দেয় এবং সেখানে প্রভাব বিস্তারের উনিয়ন বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। একপর্যায়ে আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় তষ্ঠিত হয় । কিন্তু এ প্রভাব বিস্তার বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। কারণ স্নায়ুযুদ্ধের শেষে সোভিয়েত পতন ঘটে আফ্রিকান নীতি । তাই বর্তমানে আফ্রিকায় রাশিয়ার নীতি তেমন জোরালো নেই ।
কৈ নীতি বিশ্লেষণ কর ।
ক্ষেত্রে যে বৈদেশিক নীতি প্রয়োগ করে, তা লিখ।
সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধর।
পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণ কর।
গয়া মহাদেশের বর্তমান প্রধান শক্তিধর দেশ হচ্ছে চীন এবং আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের । এ উত্থানের পশ্চাতে রয়েছে উন্নয়নশীল ও তৃতীয় বিশ্বের সমর্থন। কেননা এসব দেশ চীন এবং স্বাভাবিকভাবেই এসব দেশের উপর চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ ।দ হতে মুক্তি লাভ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের এবং এসব দেশের অধিকাংশ ইত। তাই এসব দেশের জন্যে চীন আলাদা নীতি গ্রহণ করেছে যাতে সে আফ্রিকান করতে পারে। অতএব, আফ্রিকার চৈনিক নীতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি।
আফ্রিকায় চৈনিক নীতির কারণ : বিশ্বের প্রতিটি দেশই আফ্রিকার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে এবং এর উপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে, তার কারণ ঐশ্বর্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ। চীন যেহেতু উদীয়মান পরাশক্তি, তাই সে আফ্রিকার জন্য আলাদা পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে। অবশ্য এ নীতি গ্রহণ করার পশ্চাতে কতিপয় কারণ নিহিত রয়েছে। কারণগুলো নিম্নে দেয়া হলো ।
চীন এক সময় পরোক্ষভাবে উপনিবেশবাদের শিকার হয় এবং ১৯১১ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের মাধ্যমে এ
• উপনিবেশবাদের অবসান হয়। তবে চীন ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পর সমাজতন্ত্র গ্রহণ করে এবং উদীয়মান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তাই চীন ক্ষমতার প্রতি আকর্ষণবোধ করে এবং বিশ্ব শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু তৎকালীন যুগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই চীন সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আফ্রিকানদের উপর নজর দেয় এবং এসব দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কারণ তৎকালীন দুই পরাশক্তি নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। ফলে এ সুযোগ গ্রহণ করে চীন আফ্রিকার প্রতি আলাদা নীতি গ্রহণ করে। কারণ চীন উন্নয়নশীল দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং এ পরিকল্পনার বাস্তব প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় ১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলনের পর থেকে। এতে চীন ও আফ্রিকার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।
আফ্রিকান দেশগুলো উপনিবেশবাদ হতে মুক্তি পেলেও এরা নব্য উপনিবেশবাদের শিকার হয়। এ নব্য উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় চীন। এতে চীনের প্রতি আফ্রিকান দেশগুলো আকর্ষণবোধ করে। ফলে, চীন আফ্রিকার জন্য সহযোগিতামূলক নীতি গ্রহণ করে।
তৎকালীন যুগে কতিপয় পরাশক্তির মধ্যে একমাত্র চীনই তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত ও এশিয়ান ।
৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল পাশ্চাত্য ও শ্বেতাঙ্গ দেশ। অন্যদিকে, চীন ছিল পীতবর্ণের দেশ। তাই আফ্রিকান দেশের সাথে মিল ছিল।
আফ্রিকায় চৈনিক নীতির বৈশিষ্ট্য : আফ্রিকায় চীন যে নীতি গ্রহণ করে তার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য ছিল। নিম্নে এ বৈশিষ্ট্যগুলো দেয়া হলো:
১. রুশ চীন আদর্শিক দ্বন্দ্ব : রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পর চীনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু উভয় দেশ সমাজতান্ত্রিক হলেও আদর্শগত দ্বন্দ্ব ছিল। কারণ এরা ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তৃতীয় বিশ্বের উপর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে চীন আফ্রিকার জন্য আলাদা নীতি গ্রহণ করে। এর উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকাসহ সমগ্র তৃতীয় বিশ্বে সোভিয়েত প্রাধান্য খর্ব করা।
২. স্বাধীনতা সংগ্রামে চীনের সমর্থন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে রুশ মার্কিন দ্বন্দ্ব শুরু হয় যা স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত। এ দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে এবং এ সংগ্রামে চীন সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতাসহ সমর্থন দান করে। এর বৈশিষ্ট্য ছিল এসব দেশে চৈনিক মডেলে বিপ্লব সংঘটিত করা।
৩. স্নায়ুযুদ্ধকালীন চৈনিক নীতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও চীন স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হাত মিলিয়েছে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকান দেশ অ্যাঙ্গোলাতে সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে আমেরিকা এবং চীন একই সমতলে অবস্থান করেছে। রুশ-চীনও দ্বন্দ্ব সবসময় আদর্শগত করতে হয় নি। অ্যাঙ্গোলার MPL দল ছিল সোভিয়েত আর UNITA ছিল চীন এবং মার্কিন সমর্থিত। চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তি পরীক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আফ্রিকা। এখানে চৈনিক নীতির ভিতর একটা স্ববিরোধিতা লক্ষ্য করা যায় যা তার বৈশিষ্ট্য।
৪. ভূরাজনীতির অভাব : ভূরাজনীতি হচ্ছে কোন পরাশক্তি কর্তৃক দুর্বল দেশে ঘাঁটি স্থাপন করে সে দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করা। এ কাজ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোমালিয়ার বারবেরায় তৈরি ছিল শক্তিশালী নৌঘাঁটি। কিন্তু চীন এরকম কোন ভূরাজনীতি গ্রহণ করে নি। অর্থাৎ চীন সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমেই আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তার করার পরিকল্পনা করে।
আফ্রিকায় চৈনিক নীতির বাস্তবায়ন/কৌশল : আফ্রিকায় চৈনিক নীতির পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য যে কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিম্নে তা দেয়া হলো :
১. সাহায্য কর্মসূচি : আফ্রিকার চৈনিক নীতির প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে সাহায্য প্রকল্প বা কর্মসূচি। সাহায্য প্রকল্পের মাধ্যমেই কোন দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করা সম্ভব। কারণ দাতাগোষ্ঠী দেশ সর্বদা দাতা গ্রহণকারী দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। চীন তাই এ নীতি গ্রহণ করেছে। চীন বিভিন্নভাবে আফ্রিকায় সাহায্য প্রকল্প চালু করেছে।
যেমন-
ক. খুব সহজ শর্তে চীন আফ্রিকায় ঋণ প্রদান করে।
খ. অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে।
গ. অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়াও প্রকল্প সাহায্য। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকায় চীনের বড় প্রকল্প সাহায্য হচ্ছে তাঞ্জানিয়া এবং জাম্বিয়ার ভিতরে সংযোগকারী রেলপথ Tanzam Freedom Railway. এ রেলপথ তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যার পুরোটাই চীন সাহায্য করে।
ঘ. কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সাহায্য প্রকল্প।
এভাবে চীন সাহায্য প্রকল্প দিয়ে আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৭০ সালের পর চীন প্রায় ৩০টি আফ্রিকান দেশে সামরিক বা অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করে ।
২. শুভেচ্ছা মিশন প্রেরণ : কোন দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষেত্রে শুভেচ্ছা মিশন প্রেরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন তাই এ নীতি গ্রহণ করে। চীন বিভিন্ন সময় আফ্রিকান দেশে শুভেচ্ছা মিশন প্রেরণ করে আফ্রিকার উপর প্রভাব বিস্তার করে ।
৩. শুভেচ্ছা সফর ও প্রতিনিধি বিনিময় : শুভেচ্ছা সফর ও প্রতিনিধি বিনিময় ব্যবস্থার মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। চীন এ নীতির বাস্তবায়ন করে। ১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলনের সময় চীনের প্রতিনিধিরা সর্বপ্রথম আফ্রিকার নেতৃবৃন্দের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই এর সাথে সাক্ষাৎ হয় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের। এর পরপরই শুরু হয় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চীনা নেতৃবৃন্দের সফর। ১৯৫৪-'৬৪ সালের মধ্যে অনেকবার চীনা প্রতিনিধি দল আফ্রিকা সফর করে এবং চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইও আফ্রিকা সফর করেন। ফলে আফ্রিকা ও চীনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।
৪. আফ্রিকান নেতৃবৃন্দের চীনে আমন্ত্রণ ও সফর : আফ্রিকান নেতৃবৃন্দের সাথে সফরের পর চীনা নেতৃবৃন্দ তাদেরকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ আমন্ত্রণের বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় China Africa Friendship Association. এ আমন্ত্রণে আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ সাড়া দেন এবং ১৯৬০ সালে চীনে মোট ৮০০টি প্রতিনিধি দল আসে যার মধ্যে ২০০টি আফ্রিকান।
৫. চীনা দূতাবাস খোলা : আফ্রিকায় চীনা দূতাবাস খোলার মাধ্যমে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়। এ লক্ষ্যে ১৯৫৮ সাল থেকে দ্রুতগতিতে চীন আফ্রিকায় দূতাবাস খোলে এবং চীন আফ্রিকান সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্নায়ুযুদ্ধকালীন আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করতে থাকে এবং পরাশক্তি দেশ আফ্রিকায় অর্থনৈতিকভাবে উপনিবেশবাদের সৃষ্টি করে। এ সময় চীন উদীয়মান পরাশক্তিতে পরিণত হতে থাকে এবং চীন আফ্রিকান দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে চীন আফ্রিকায় বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে যা আজও বিদ্যমান।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]