আফ্রিকা ও জাতিসংঘের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ কর। আফ্রিকার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নীতি ও গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনসহ এর বিভিন্ন উন্নয়নে জাতিসংঘের ভূমিকা তুলে ধর। অথবা, স্বাধীনোত্তর আফ্রিকার উন্নয়নে জাতিসংঘের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিশ্বের প্রেক্ষাপট দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে এবং এ সময় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান ঘটে এবং সেই সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নেরও আবির্ভাব ঘটে পরাশক্তি হিসেবে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য গঠিত হয় জাতিসংঘ। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সংগঠন ও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়। জাতিসংঘের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং এজন্য সকল প্রকার উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া হয়। যেহেতু আফ্রিকা মহাদেশ ছিল উপনিবেশবাদের শিকার। তাই জাতিসংঘের সাথে আফ্রিকার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। জাতিসংঘ আফ্রিকার জন্য আলাদা নীতি গ্রহণ করে এবং জাতিসংঘের হাত ধরেই আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করে। তাছাড়া স্বাধীনোত্তর আফ্রিকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জাতিসংঘ আপ্রাণ চেষ্টা চালায় এবং বর্তমান পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের আফ্রিকান নীতি ও পদক্ষেপ : জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আফ্রিকার ক্ষেত্রে কতিপয় নীতি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিম্নে জাতিসংঘের এ পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
আফ্রিকার স্বাধীনতা অর্জনে পদক্ষেপ : ১৯৪৫ সালে সানফ্রান্সিসকো শহরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের সনদে বলা হয় যে, বিশ্বের প্রতিটি দেশ হবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এবং প্রতিটি দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে। ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ 'Declaration of Decolonizational Rule' পাস করে। এ আইনটি আফ্রিকার অনুপনিবেশকরণের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। কারণ এ আইনে বলা হয় যে, শর্তহীনভাবে দ্রুতগতিতে উপনিবেশবাদের অবসান ঘটাতে হবে।
উপনিবেশবাদ মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি এবং বিশ্বশান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ
জাতিসংঘ অনতিবিলম্বে সুস্পষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরাধীন জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘ মোট সাতটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে । যথা :
i. অছি পরিষদ : অছি পরিষদের মাধ্যমে উপনিবেশগুলোতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে তাদেরকে স্বশাসনের জন্য উপযুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।
ii. অনুপনিবেশকরণে বিশেষ কমিটি : অনুপনিবেশকরণ ঘোষণার বাস্তবায়ন, তদারক এবং সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর উপর চাপ দেয়ার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।
iii. নিরাপত্তা পরিষদ : আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজ। আফ্রিকার উপনিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয় ।
iv. নিষেধাজ্ঞা আরোপ : জাতিসংঘ আগ্রাসী সরকার ও রাষ্ট্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। V. পর্যবেক্ষক প্রেরণ : আফ্রিকার উপনিবেশগুলোর ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ পর্যবেক্ষকের কাজ হবে উপনিবেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত গঠন এবং স্বাধীনতার উপযোগী পরিবেশ সম্পর্কে রিপোর্ট প্রদান করা।
vi. নির্বাচন তদারক করা : উপনিবেশগুলোতে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা তদারক করার জন্য জাতিসংঘ একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে।
vii. স্বাধীনতা : উপর্যুক্ত পদক্ষেপের ফলে আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে থাকে এবং জাতিসংঘের হাত ধরে লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, সুদান, নামিবিয়া, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
আফ্রিকার সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের পদক্ষেপ : আফ্রিকার দেশসমূহের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও পারস্পরিক সংঘাত বর্তমানে চরম পর্যায়ে রয়েছে। জাতিসংঘ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। আফ্রিকার ব্যাপারে জাতিসংঘের বিশেষ উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আফ্রিকার উপর গৃহীত বিশেষ অধিবেশনে (Special Session on Africa) একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে, যার নাম ছিল Program of Action for African Economic Recovery and Development (1986-1990)। ১৯৯১ সালে সাধারণ পরিষদে বিশেষ কর্মসূচি মূল্যায়ন করে আফ্রিকার পুনর্বাসন ও উন্নয়নের জন্য নতুন কর্মসূচি হাতে নেয় । এর নাম ছিল 'New Agenda for Development of Africa in 1990's.

১৯৯৭ সালে নিরাপত্তা পরিষদ আফ্রিকার উপর মন্ত্রী পর্যায়ে একটা বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে। উক্ত অধিবেশনে আফ্রিকায় বিরাজমান সংঘাত সংঘর্ষের ব্যাপারে ভীষণ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয় এবং এতদঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানানো হয়।
১৯৬০-৬৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তি কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় মিশন ছিল আফ্রিকার কঙ্গো। প্রায় ২০,০০০ সৈন্যের শান্তিরক্ষী মিশন দেশের স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং এতদঞ্চলে শাস্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এছাড়া প্রথম থেকেই জাতিসংঘ আফ্রিকায় বিরাজমান জাতি বিদ্বেষ প্রথার অবসানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে । নামিবিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের পিছনেও জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ।
জাতিসংঘের শান্তি মিশন : আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় অগ্রগতির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি চূড়ান্ত শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর মধ্যকার বিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের অধীনে বহুজাতিক বাহিনীর অংশগ্রহণকে প্রচলিত অর্থে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বলা হয়ে থাকে। স্বাধীনোত্তর উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অশান্তি দেখা দেয় এবং আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা দেখা দেয়। এতে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে এবং আফ্রিকার শান্তিরক্ষার জন্য বিভিন্ন শান্তিরক্ষী মিশন প্রেরণ করে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ সফলতা অর্জন করে । নিম্নে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রেরিত আফ্রিকায় শান্তিরক্ষী মিশনের নাম উল্লেখ করা হল ঃ

United Nations Operations in Congo (UNOC), কঙ্গো ১৯৬০ সালে।
2
United Nations Verification Mission in Angola (UNAVEM), ১৯৭৫ সালে।
United Nations Operations in Mozambic (UNOMOZ), ১৯৯৩ সালে ।
8
United Nations Assistance Mission for Ruanda (UNAMIR), ১৯৯৩ সালে ।
C.
United Nations Operation in Somalia (UNOSOM), ১৯৯২ সালে ।

United Nations Observer Mission to Verify the Referendum in Eritrea (UNOMVRE),
১৯৯১ সালে।
United Nations Mission in Haity (UNMIH), ১৯৯৩ সালে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আফ্রিকা ছিল উপনিবেশবাদের শিকার এবং এখানে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সহায়তা করা এবং স্বাধীনোত্তর আফ্রিকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জাতিসংঘ এগিয়ে আসে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ সফলতা অর্জন করেছে। তাই জাতিসংঘ ও আফ্রিকার মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে এবং আজ অবধি জাতিসংঘ আফ্রিকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ।

জাতিসংঘ কী? আফ্রিকার জাতিগত বিরোধ নিরসনে এর ভূমিকা নিরূপণ কর।


অথবা, জাতিসংঘের সংজ্ঞা দাও। আফ্রিকার জাতিগত সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ কতটা সফলতা অর্জন করেছে যুক্তি দাও ।
উত্তর ভূমিকা : স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহে একটি অদ্বিতীয় সংগঠন হিসেবে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশ্বের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভিভাবক হিসেবে জাতিসংঘকে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘকে সরকারগুলোর রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জাতিসংঘ কোন বিশেষ সরকার বা কোন একক জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না। সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো একটি সমিতির মতো, যা কেবল সদস্যদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। যেহেতু “বিশ্বশান্তি "কে মূল উদ্দেশ্যে রেখে সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল। ফলে আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে জাতিসংঘ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
জাতিসংঘ : জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বা সংগঠন, যা বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য গঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে আন্তর্জাতিক শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিপুঞ্জ গঠিত হলেও সংস্থার সাফল্য ও স্থায়িত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। বরং কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, জাতিপুঞ্জ গঠিত হওয়ার অল্পকাল পরেই এ সংস্থাটির তাবৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৩৯ সালে আরো একটি বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্যভাবে সংঘটিত হয়। বিশ্বযুদ্ধের পরে লীগ অব নেশন্স তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বিশ্বের মাটিতে সর্বপ্রথম জন্মলাভ করা আন্তর্জাতিক সংগঠনের
অকালমৃত্যু ঘটে। অতঃপর লীগ অব নেশন্সের ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে নব উদ্যম এবং উৎসাহে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫১টি দেশের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গৌরবোজ্জ্বল সংগঠন জাতিসংঘ গঠিত হয়। এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। জাতিস অর্ধশতাব্দীকালের বেশি বছরের ইতিহাস অতিক্রম করেছে এবং এর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৩তে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ সনদের তৃতীয় অধ্যায়ের সপ্তম পর্যায়ে বর্ণিত ছয়টি প্রধান অঙ্গসংস্থার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের কার্যক্রম পরিচালিত হয় । যে ছয়টি সংস্থার সমন্বয়ে জাতিসংঘ গঠিত তা হলো :
১. সাধারণ পরিষদ বা The General Assembly,
২. নিরাপত্তা পরিষদ বা The Security Council,
৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ বা The Economic and Social Council,
৪. অছি পরিষদ বা The Trusteeship Council,
৫. আন্তর্জাতিক বিচারালয় বা The International Court of Justice এবং
৬. সচিবালয় বা The Secretariat |
তবে বর্তমানে অছি পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে।
আফ্রিকার জাতিগত বিরোধ নিরসনে জাতিসংঘ : জাতিগত বিরোধ বলতে দুই বা ততোধিক জাতির মধ্যে স্বার্থসংশিষ্ট বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতকে বুঝায়। ক্ষুদ্র অর্থে জাতিগত বিরোধ বলতে দুটি জাতি, গোত্র বা বর্ণের লোকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বুঝালেও বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতিগত বিরোধের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। এখন জাতিগত বিরোধ বলতে শুধু দুটি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার সংঘাতকেই বুঝায় না, বরং অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ, ক্ষুদ্র যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, প্রক্সিযুদ্ধ ইত্যাদিকে বুঝায়। স্নায়ুযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পরে বিশ্বব্যাপী জাতিগত সংঘাত বা গোত্র দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাতে। আফ্রিকার দেশসমূহের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও পারস্পরিক সংঘাত বর্তমানে চরম পর্যায়ে রয়েছে। আফ্রিকার এ সংঘাত নতুন কোন ঘটনা নয়, বরং এতদঞ্চলের সংঘাতের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। সুদীর্ঘকালব্যাপী আফ্রিকার বিদ্যমান ও সংকট সেখ কার আর্থসামাজিক অবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে। আফ্রিকা এখন জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়ে পড়িয়েছে।
আফ্রিকার ব্যাপারে জাতিসংঘ বিশেষ উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আফ্রিকার উপর গৃহীত বিশেষ অধিবেশনে (Special Session on Africa) একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে, যার নাম ছিল Program of Action for African Economic Recovery and Development (1986-1990)। ১৯৯১ সালে সাধারণ পরিষদে বিশেষ কর্মসূচি মূল্যায়ন করে আফ্রিকার পুনর্বাসন ও উন্নয়নের জন্য নতুন কর্মসূচি হাতে নেয়। এর নাম ছিল New Agenda for Development of Africa in 1990's.
১৯৯৭ সালে নিরাপত্তা পরিষদ আফ্রিকার উপর মন্ত্রী পর্যায়ে একটা বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে। উক্ত অধিবেশনে আফ্রিকায় বিরাজমান সংঘাত সংঘর্ষের ব্যাপারে ভীষণ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয় এবং এতদঞ্চলে শাস্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানানো হয় ।
উদাহরণ : জাতিসংঘের উদ্যোগে আফ্রিকায় যে জাতিগত বিরোধের সমাধান হয় তার কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে দেয়া হলো :
১. কঙ্গো সমস্যার সমাধান : ১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে কঙ্গোর রাজধানী ব্রাজাভিলে জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ দেখা দিলে ঔপনিবেশিক শাসক বেলজিয়াম কঙ্গো ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ফলে কঙ্গো স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন উপদলীয় নেতাদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। বেলজিয়ামের প্ররোচনায় কঙ্গো ‘কাতাঙ্গা’ প্রদেশ বিচ্ছিন্নভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কঙ্গো সরকার তখন জাতিসংঘের সৈন্যবাহিনী অপসারণের অনুরোধ জানায়। জাতিসংঘ কঙ্গোতে নিরপেক্ষ সৈন্য মোতায়েন করে এবং কাতাঙ্গার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের প্রেরিত সেনাবাহিনীকে কঙ্গো সরকারকে সহায়তা করতে বলা হয়। ১৯৬২ সালের জানুয়ারি মাসে 'কাতাঙ্গা' নেতা জর্জ শোম্বে নিরপেক্ষ সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে 'কঙ্গো-কাতাঙ্গা' সমস্যার সমাধান হয়। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের সফলতার পরিচয় পাওয়া যায়।

হাইতির সমস্যার সমাধা... ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সাধারণ পরিষদ হাইতির স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট
এরিস্টিককে অপসারণ করে। হাইতিতে সন্ত্রাস, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সামরিক বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রস্তাব করা হয়। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে সেখানে একটি বেসামরিক মিশন প্রেরণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য United Nations Mission in Haity (UNMII) প্রেরণ করা হয়। UNMIH হাইতির উপর। তেল ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং একজন নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে।
৩. অ্যাঙ্গোলা সমস্যার সমাধান : দেশটিতে বিরোধ চলছে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গেরিলা গোষ্ঠীর মধ্যে। স্বাধীনতার শুরু থেকেই অ্যাঙ্গোলা সরকার সোভিয়েত সমর্থনপুষ্ট এবং বিদ্রোহী বাহিনীর ইউনিটাকে সমর্থন দিচ্ছে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ আফ্রিকা। সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর লড়াই, ক্ষমতা দখলের সংঘর্ষ চলে আসছে অনেকদিন থেকে। এ সংকট নিরসনের জন্য জাতিসংঘ উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ ইউনিট-অ্যাঙ্গোলা সরকারকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় । উভয়পক্ষই জাতিসংঘের প্রস্তাব সাময়িকভাবে মেনে নেয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের দুর্যোগময় সন্ধিক্ষণে জাতিসংঘের জন্ম। বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আফ্রিকার জাতিগত বিরোধ নিরসনের জন্য জাতিসংঘ আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং এক্ষেত্রে সফলতাও অর্জন করে। যেমন- হাইতির সমস্যা, কঙ্গোর সমস্যা, অ্যাঙ্গোলার সমস্যা, সোমালিয়ার সমস্যা প্রভৃতির সমাধান করে। বর্তমান পর্যন্ত আফ্রিকার জাতিগত বিরোধ নিরসনে জাতিসংঘ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]