আফ্রিকায় প্রেরিত জাতিসংঘ মিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা কর । আফ্রিকার শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের প্রেরিত জাতিসংঘ শান্তি মিশনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।

উত্তর ভূমিকা : বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিরোধপূর্ণ স্থানগুলোতে শান্তিরক্ষী মিশন প্রেরণ করা হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত কিংবা বিরোধপূর্ণ স্থানগুলোতে ভারসাম্য আনয়নে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতিসংঘের নিজস্ব পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী নেই। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনী সংক্রান্ত সহায়তা দান এবং সুযোগ সুবিধা সরবরাহের দায়দায়িত্ব সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলো বহন করে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী পুলিশ ও সৈন্যবাহিনী সদস্য দেশগুলো স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সরবরাহ করে। শান্তিরক্ষী বাহিনী যে অস্ত্র ব্যবহার করে তাও সরবরাহ করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
আফ্রিকায় প্রেরিত শান্তিরক্ষী মিশন : ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষক নিয়োগের মধ্য দিয়ে মূলত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে প্রায় ১১৫টি সদস্য রাষ্ট্রে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী বাহিনীর আট লক্ষাধিক সদস্য কাজ করছে। এ সদস্যের মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকায় নিয়োজিত ছিল এবং বর্তমানেও রয়েছে। নিম্নে আফ্রিকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কঙ্গো মিশন : United Nations Operations in Congo (UNOC), ১৯৬০
মিশন : জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় শান্তিরক্ষী এ মিশনটি ১৯৬০ সালে কঙ্গোতে প্রেরণ করা হয়। এ বাহিনী কঙ্গোর স্বাধীনতা অর্জন ও জাতিগত বিরোধ নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপনে UNOC বিবদমান গ্রুপগুলোর মাঝে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
২. অ্যাঙ্গোলার শান্তি মিশন : United Nations Verification Mission in Angola (UNAVEM), ১৯৭৫ । মিশন : ১৯৭৫ সালের পর থেকে অ্যাঙ্গোলার সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপ UNITA (National Union for the Total Independence of Angola) এর মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছিল। এ অবস্থা নিরসনকল্পে জাতিসংঘ ১৯৮৯ সাল থেকে পর পর চারটি মিশন অ্যাঙ্গোলায় প্রেরণ করে। এগুলো হচ্ছে UNAVEM-I (১৯৮৯-৯১), UNAVEM-II (১৯৯২-৯৪), UNAVEM-III (১৯৯৫-৯৭), UNOMA (United Nations Observer Mission in Angola ), ১৯৯৭।

মিশনগুলো অ্যাঙ্গোলায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে :
ক. ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা।
খ. সরকারি বাহিনী ও UNITA এর মধ্যে লুসাকা চুক্তিতে সহায়তা করা।
গ. একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
ঘ. যুদ্ধপরবর্তী মানবিক সাহায্য প্রদান করা।
ঙ. অ্যাঙ্গোলা থেকে স্থল ও ভূমি মাইন অপসারণ করা ইত্যাদি।
৩. মোজাম্বিক জাতিসংঘ মিশন : United Nations Operation in Mozambic (UNOMOZ), ১৯৯৩ : মিশন : ১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সরকার ও REAMO নামক কাদের সাথে দীর্ঘদিন যাবত গৃহযুদ্ধ চলে আসছিল। এ অবস্থার নিরসনে UNOMOZ মোজাম্বিকে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশসহ
২৪টি রাষ্ট্রের বাহিনী সেখানে মোতায়েন করা ছিল। UNOMOZ এর কার্যাবলি নিম্নরূপ :
ক. ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত রোম শান্তিচুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র বিরতি পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করা।
খ. বিবদমান গ্রুপগুলোকে পৃথক স্থানে সরিয়ে দিতে সাহায্য করা।
গ. গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ করা।
৪. রুয়ান্ডা সাহায্য মিশন : United Nations Assistance Mission for Ruanda (UNAMIR), ১৯৯৩। মিশন : ১৯৯০ সাল থেকে রুয়ান্ডার 'হুত' প্রধান সরকার এবং ‘তুসী'দের সংগঠন প্যাট্রিয়াটিক ফোর্সের মধে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এ জাতিগত দ্বন্দ্ব পার্শ্ববর্তী উগান্ডা ও বুরুন্ডিতে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালে UNAMIR রুয়ান্ডাতে মোতায়েন করা হয়। পরবর্তীতে ব্যাপক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে সেখানে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে এলে জাতিসংঘ তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩টি রাষ্ট্রের সৈন্য সেখানে মোতায়েন ছিল। এ বাহিনীর কার্যাবলি নিম্নরূপ ঃ
রুয়ান্ডা থেকে আসা শরণার্থীদের সাহায্য ও আশ্রয়দানের জন্য অপারেশন ।
শরণার্থীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং বিমান থেকে খাদ্য সরবরাহে সাহায্য করার জন্য অপারেশন সাপোর্ট। রুয়ান্ডার বেসামরিক লোকদের মানবিক সাহায্য প্রদান ।
৫. সোমালিয়া অপারেশন : United Nations Operation in Somalia (UNOSOM), ১৯৯২।
মিশন : ১৯৯১ সালে সোমালিয়ার অস্থায়ী সরকার প্রধান আল মাহাদি মোহাম্মদ এবং বিদ্রোহী ফারাহ আইদিন এর সৈন্যদের মাঝে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা প্রশমনে ১৯৯২ সালে নিরাপত্তা পরিষদ ৭৩৩ নং প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং UNOSOM-I কে সেখানে প্রেরণ করে। সকল প্রকার অস্ত্র আক্রমণ বন্ধ করা এ বাহিনীর দায়িত্ব ছিল। কিন্তু এ মিশন ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে UNITAF (United Task Force) গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ৮১৪ নং প্রস্তাব অনুযায়ী UNOSOM-II কে দায়িত্ব দেয়া হয় UNITAF এর স্থলে। বাংলাদেশসহ ২৯টি দেশের সৈন্য সেখানে মোতায়েন ছিল। ১৯৯৫ সালে সোমালিয়া থেকে UNOSOM প্রত্যাহার করা হয়। UNOSOM-III এর গৃহীত কার্যাবলি হলো :
ক. গণহত্যা রোধ করা।
খ. শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে ভূমিকা রাখা।
গ. মানবিক ত্রাণ তৎপরতায় ভূমিকা রাখা।
ঘ. স্থানীয় সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. হাইতি মিশন : United Nations Mission in Haity (UNMIH), ১৯৯৩।
মিশন : ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সাধারণ পরিষদ হাইতির প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করে এবং সেখানে সন্ত্রাস, সামরিক বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করা হয়। এ মিশন হাইতির উপর তেল ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং একজন নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। জাতিসংঘ বিগত দিনগুলোতে আফ্রিকার যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন থেকে শুরু করে জাতিগত দাঙ্গা নিরসন, যুদ্ধের মুখোমুখি অবস্থা থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থা আনয়ন, মানবিক ত্রাণ তৎপরতা, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর, গণতান্ত্রিক নির্বাচন পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। তাই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের অবদান অনস্বীকার্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]