. ঊনবিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও ।

সোভিয়েত ইউনিয়ন মানচিত্র
রাশিয়ার আয়তন এত বড় ছিল যে এটি ছিল এশিয়া একটি স্বতন্ত্র মহাদেশ। ১৮১৫ সালে রুশ সাম্রাজ্যের বিস্ত (Poland) ও ফিনল্যান্ড (Finland) থেকে সুদূর প্রাচ্য আমুর (Amur) নদীর তীর পর্যন্ত, উত্তরে উত্তর মেরু মহ থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণসাগর (Black Sea), কাস্পিয়ান সাগ আরব সাগর (Arab Sea) পর্যন্ত। এর আয়তন ছি বর্গকিলোমিটার। যা ইউরোপ মহাদেশের প্রায় অর্ধাংশ এব এক তৃতীয় অংশ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৯৯১ সালে। যাবার পূর্ব পর্যন্ত একটি রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর গোটা ভূখণ্ডের করে রেখেছিল । এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম রাষ্ট্র ।
ইউরোপের অন্য জাতিগুলোর তুলনায় রাশিয়া রাজ অনগ্রসর। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাশিয়া ছিল আংশিকভাবে সামন্ততান্ত্রিক। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন পশ্চিম জাতীয় রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত রাশিয়া তখন অংশত সামন্ত্রতাি অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতকে যখন পশ্চিম ইউরোপ সম্পূর্ণ জন্য সংগ্রামরত, রাশিয়ায় তখনও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ।
ঊনবিংশ শতকের রাশিয়া
ভূমিদাস প্রথার (Serfdom) উদ্ভব ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে । পরবর্তী শতকের ভূমিদাসরা যেসব জমিদারের জমিতে চাষবাস করতো তাদের কাছে একেবারে
দাসত্বে আবদ্ধ হয়ে যায়। রাশিয়ার ভূমিদাসদের অবস্থা ক্রীতদাসের থেকে একটুও ভালো ছিল না। রাশিয়ায় “বিভিন্ন ব্যক্তির অধীনে এই ভূমিদাসদের চেয়ে আমেরিকায় কৃষিকার্যে যে সকল নিগ্রো ক্রীতদাসরূপে নিয়োজিত ছিল তারাও সুখী ছিল” (The Negroes in the American plantations were happier than Russian private serfs.) একথা বলা হয়েছে। প্রভুদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় ভূমিদাসদের কোনো প্রতিকার লাভের অধিকার ছিল না। প্রভু তাকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দিতে পারতেন অথবা প্রকাশ্যে বিক্রয় করে দিতে পারতেন যদিও দ্বিতীয় ক্যাথরিন (Catharine II) ঘোষণা করেছিলেন, (১৭৬৫) “রাষ্ট্রের পক্ষে ঐকান্তিক আবশ্যক না হলে কেউ কাউকে ক্রীতদাস করতে পারবে না।” (One must avoid making men slaves unless it is absolutely necessary for reasons of state.) তবুও ভূমিদাস প্রথা একটি স্বীকৃত প্রথায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। রাশিয়ার সার্ফের সঙ্গে পার্থক্য সূচিত করতে একথা আলোচনা করা প্রাসঙ্গিক হবে যে রাশিয়ার সার্ফের মুক্তির (১৮৬১) ছয় শতাব্দী পূর্বে ইংরেজ সার্ফদের সম্বন্ধে ব্রাক্টন (Bracton) কী মানবীয় নীতিনির্ধারণ করেছিলেন। এই মহান ইংরেজ আইনবেত্তা লিখেছিলেন, “সার্ফদের কোনো অনিষ্ট সাধিত হলে সেই অনিষ্টকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে তার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার আছে।” (Serfs have a personal right of action in court against all persons for injuries done to themselves.) 1 ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভূমিদাসপ্রথা (Serfdom) রুশ সমাজের উপর ছিল এক দুর্বহ ভার স্বরূপ ।
জ্ঞানদীপ্তি ও ধার্মিকতার ফলস্বরূপ জার প্রথম আলেকজান্ডার (Alexander I) (১৮০১-২৫) বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ভূমিদাসদের সম্বন্ধে বিজ্ঞাপন দেওয়া নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই তাদের প্রভু কর্তৃক স্থানান্তরে প্রেরণ নিষিদ্ধ করেননি। প্রথম নিকোলাস (Nicholas I) (১৮২৫-৫৫) যেকোনো রকম বিরোধিতায় ভীষণ ভয় পেতেন। ভূমিদাস প্রথা সম্বন্ধে সংস্কার বলতে যা বোঝায় তিনি তা সযত্নে এড়িয়ে যেতেন। দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের (Alexander II) (১৮৫৫-৮১) দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আধুনিকীকরণ ব্যতীত রাশিয়ার পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়। তিনি এ কথাও স্বীকার করেন যে পরিবর্তন নিচের থেকে শুরু না হয়ে উপর থেকে শুরু হওয়া শ্রেয়। (It was better for change to 'come from above than to come from below')।
রাশিয়ার ভূমিদাসদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। তাদের সংখ্যা ছিল দেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেক। শিক্ষিত শ্রেণি ভূমিদাস বা সার্ফ প্রথা বিলোপের পক্ষপাতী এ ছিলেন। গোগোল (Gogol) এর ‘ডেড সোলস্' (Dead Souls) এবং টুর্গেনিভ (Turgenev) এর 'মেময়ের্স অফ এ হান্টসম্যান' (Momoirs of a Huntsman) প্রভৃতি উপন্যাস পাঠ করে লোকেরা ভূমিদাসদের দুঃখকষ্ট এবং নৈরাশ্যজনক ভাগ্যের কথা উপলব্ধি করল। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় (Crimean War) কৃষক অশান্তি এত গুরুতর আকার ধারণ করেছিল যে কোনো কোনো স্থানে বিশৃঙ্খলা দমন করতে একটা পুরো সৈন্যদল পাঠাতে হলো।
১৮৫৬ সালের মার্চ মাসে আলেকজান্ডার মস্কোর অভিজাত সম্প্রদায়ের নিকটে ঘোষণা করেন, “আমাদের চেষ্টা ছাড়া যদি নিচের থেকে ভূমিদাস প্রথা বিলুপ্ত হতে শুরু করে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার চেয়ে উপর থেকেই এই প্রথার বিলোপ করাই শ্রেয়।” (It is better to abolish serfdom from above than to await the time when its abolition would begin from below without action on our part.)। আমলাতন্ত্রের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রধান মুখপাত্র ছিলেন লন্ডনে হারজেন (Herzen) এবং সেন্ট পিটার্সবার্গে (St. Petersburg) চেরনিসেভস্কি (Cherny shevskii)। ১৮৫৭ সালে কোলোকোল (Kolokol) বা (The Bell) লন্ডনে প্রকাশিত হওয়ার সময় থেকেই হারজেনের প্রভাব শুরু হয়। নামমাত্র নিষিদ্ধ হলেও এই গ্রন্থ রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং সার্ফদের মুক্তি এবং মুদ্রণযন্ত্রের স্বাধীনতার দাবি ওঠে। সিক্রেট কমিটিতে (Secret committee) এবং কাউন্সিলে (Council) পরিকল্পনা প্রস্তুত হয় এবং অবশেষে ১৮৬১ সালের মার্চ মাসে উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে রাজার আদেশ বলে ভূমিদাসদের মুক্তি ঘোষণা করা হয় ।
সার্ফদের মুক্তির জন্য রাজাদেশ ভূমিদাস প্রথার বিলোপ হয়। এই প্রথা চার কোটি মানুষকে ভূম্যধিকারী বা রাষ্ট্রের দাসত্বে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এই রাজাজ্ঞা কতগুলি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রথমত, এর দ্বারা রাশিয়ার ভূমিদাস পৌর অধিকার এবং স্বাধীন কৃষকের মর্যাদা লাভ করে এবং তার প্রভুর দাসত্ব থেকে মুক্তি পায়। দ্বিতীয়ত, এর দ্বারা জমির মালিকানা অভিজাত এবং কৃষকদের মধ্যে বিভক্ত হয়। তৃতীয় নীতি ছিল এই যে জমিদার জমি হারাবার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ টাকা পাবেন। এই টাকা দেবে রাষ্ট্র। কিন্তু কৃষকরা রাষ্ট্রকে চল্লিশ বৎসরের কিস্তিতে এই টাকা পরিশোধ করবেন। আর একটি নীতি হলো জমি কৃষকদের ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হবে না দেওয়া হবে গোষ্ঠী মালিকানায় যে গ্রামের যে গোষ্ঠী বা দলের সঙ্গে যে যুক্ত তার অধীনে। এই গোষ্ঠী বা দল মির' (Mir) বলে পরিচিত। 'মির' এর হাতেই জমি থাকত,
কিন্তু মুক্তির এই আদেশ কৃষকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারেনি। প্রথমত, যে জমি কৃষকদের দেওয়া হয় তা যেমন সবচেয়ে কম উর্বর তেমুনি পরিমাণে। কম। জমির পরিমাণ কম হওয়ায় কৃষক জমির উন্নতি সাধন করার কোনো উৎসাহ পেল না। দ্বিতীয়ত, কৃষকদের বাধ্য করা হয়েছিল তাদের মুক্তির মূল্য শোধ করতে। সাধারণ কর দেওয়া ছাড়াও তার উপর এই আর্থিক বোঝা কৃষকদের উপর কঠিন আঘাত হেনেছিল। এই অতিরিক্ত বোঝা তাদের কাছে অতিশয় বিরক্তিকর হয়েছিল এবং ১৯০৫ সালে বিপ্লবকে ঠেকাতে বকেয়া কিস্তি বাতিল করতে হয়েছিল। কাগজে কলমে স্বাধীন হলেও কৃষকরা গ্রামের কমিউন (Commune) এর অধীন হয়ে পড়েছিল। কৃষকদের অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার স্বাধীনতা ছিল না, যেতে গেলে 'মির' (Mir) এর অনুমতি আবশ্যক হতো ৷
অভিজাতরা এই সংস্কারের দ্বারা বৈষয়িকভাবে উপকৃত হননি। তারা শীঘ্রই দেখতে পেলেন যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ স্বরূপ যে অঙ্গীকার পত্র বা 'Bond' তারা পেয়েছিল তা সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গিয়ে নগদ টাকা পাওয়া যায় না। তাদের অনেকেই অধিকতর উদ্যমশীল কৃষকদের কাছে নিজ নিজ জমি বিক্রয় করে বা ইজারা দিয়ে দেয় এবং এইরূপে কৃষক-মালিকানার সৃষ্টি হয় ।
ভূমিদাস প্রথা (Serfdom) বিলোপে তার ঈপ্সিত ফল পাওয়া যায়নি। রাশিয়ার কৃষকদের একাধারে ভালো এবং মন্দ হয় (both better and worse)। কৃষকরা কতকগুলি অক্ষমতা থেকে মুক্ত হয়, আবার কতকগুলো নয়া বাধ্যবাধকতার অধীন হয়। কৃষকদের মুক্তির পশ্চাতে অন্যান্য সংস্কার আসে। ১৮৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে রাজাদেশ (Decree) জারি হয় এবং এর দ্বারা এক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা-জেমস্তভো (Zemstvo) বা স্থানীয় শাসন প্রবর্তিত হয়। সুতরাং অষ্টাদশ শতাব্দীর রাজকীয় স্বৈরাচার, ভূমিদাসত্ব, পশ্চাদমুখিতা ও শিক্ষাহীনতা নিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার যাত্রা শুরু হয়। রোমানভ বংশের অধীনে জার শাসিত রাশিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এই সময়ও বজায় থাকে। জার ও তার সৈন্যবাহিনী এবং অভিজাতরা ছিলেন শাসনব্যবস্থায় মূল ক্ষমতার অধিকারী। ডুমা বা জাতীয় পার্লামেন্ট নামে একটি সংসদ থাকলেও জারের ইচ্ছার উপর এর অধিবেশন বসা নির্ভর করতো। সাধারণ মানুষের ভোটে গণতান্ত্রিক পন্থায় এর সদস্যরা নির্বাচিত হতেন না। তারা জার কর্তৃক মনোনীত হতেন এবং এরা ছিলেন অভিজাত শ্রেণিভুক্ত। এই সময় রাশিয়ায় ব্যক্তির যোগ্যতার পরিবর্তে বংশগত মর্যাদাকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। রাশিয়ার সমাজ
ছিল প্রধানত দুইটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত যথা : অভিজাত ও কৃষক। অভিজাতদের অধীনে বিরাট জমিদারি, ম্যানর এবং বহু সার্ফ বা ভূমিদাস ছিল। আভিজাত্য ছিল বংশগত। এরাই মূলত সরকারের সামরিক ও অসামরিক পদে কাজ করতো। এই সময় ইউরোপের অন্যান্য দেশে বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটলেও রাশিয়াতে তা

হয়নি। ফলে জনসংখ্যার প্রায় পুরোটা ছিল কৃষক (৯৫ শতাংশ প্রায়)। কৃষকদের মধ্যেও শ্রেণিবিভাগ ছিল যথা : স্বাধীন কৃষক ও ভূমিদাস। রাশিয়ার বেশিরভাগ কৃষ্ণ সার্ফ বা ভূমিদাস শ্রেণির অন্তর্গত। ষোড়শ শতাব্দী থেকে রাশিয়ার সার্ফ বা ভূমিদা প্রথার প্রচলন শুরু হয়। ভূমিদাসরা জমিদারদের ম্যানর বা খামার সংলগ্ন গ্রামে বাস করতো। এদের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। রাশিয়ার আইনে সার্ফ ভূমিদাসরা ছিল জমিদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এদের পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন করে বিক্রয় করা যেত। দৈহিক নির্যাতন করা যেত। ভূমিদাসদের বিদ্রোহের শাস্তিস্বরূপ নির্বাসনে পাঠানো হতো। ভূমিদাসদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। ম্যানর কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে তারা ম্যানর ত্যাগ করতে পারত না। এদের জীবন ছিল অনেকটা গৃহযুদ্ধোত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীতদাসদের মতো। কৃষক বিদ্রোহ রাশিয়ান সমাজের একটি অনুষঙ্গে পরিণত হয়। রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ও সকল পশ্চাৎপদতা সত্ত্বেও উনিশ শতকে এসে রাশিয়া অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
১.২ সামাজিক অবস্থা
Social Condition
ঊনবিংশ শতকে রাশিয়ার সমাজ দ্বিধাবিভক্ত ছিল – উচ্চস্তরে অভিজাত ও নিম্নস্তরে কৃষক সম্প্রদায়। অভিজাতরা ছিল সামন্তপ্রভু। তারা বংশানুক্রমিকভাবে জমিদারিস্বত্ব ভোগ করতো। কৃষকদের কাছ থেকে এরা অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ ও বাধ্যতামূলক শ্রম গ্রহণ করতো। তাই কৃষকদের দুঃখদুর্দশার অন্ত ছিল না। কৃষকদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল সার্ফ বা ভূমিদাস। জমিদাররা ছিল এদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তাদের গরু-ভেড়ার মতো বিক্রি করা হতো, এমনকি বন্ধকও দেওয়া চলত। ভূমিদাস ছাড়াও স্বাধীন কৃষক শ্রেণিও ছিল। তাদের অধীনে ক্ষুদ্র আয়তনের ক্ষেত্রগুলোতে উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ ছিল নগণ্য। তাই তাদের অনেকে নিজ খেত জমিদারকে ইজারা দিয়ে দিনমজুরে পর্যবসিত হতো। অবশ্য রাজার ব্যক্তিগত খেতগুলি যারা চাষাবাদ করতো তাদের অবস্থা কিছুটা উন্নত ছিল। তারা 'মির' নামে গ্রাম্যসমিতি গড়ে তুলে তার মাধ্যমে কাজকর্ম করতো। সীমাবদ্ধ স্বায়ত্তশাসনের অধিকারও তারা ভোগ করতো। জমিদারদের অধীন কৃষকদের মতো তারা বিভিন্ন কর দিত, সম্পত্তি ভোগের ব্যাপারে নানা নিয়ম-নিষেধ মেনে চলতে হতো, ইচ্ছামতো স্থান পরিবর্তন করতে পারত না ৷
সার্ফ প্রথা রাশিয়ার সামাজিক জীবনে অভিশাপস্বরূপ ছিল। মহান পিটার বা দ্বিতীয় ক্যাথারিন রাশিয়ায় নানাবিধ সংস্কার প্রবর্তন করেছিলেন কিন্তু এই কুপ্রথা উচ্ছেদের কোনো উদ্যোগ তাঁরা নেয়নি। রাশিয়ার সমাজব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি হলো তখনও মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক অবস্থা
Political Condition
ঊনবিংশ শতকে রাশিয়ায় কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী জার ছিলেন শাসনব্যবস্থার সর্বময় প্রভু। ডুমা বা জাতীয় পার্লামেন্ট ছিল রাজার আজ্ঞাবহ এক প্রতিষ্ঠান। সমস্ত রাজকর্মচারী তার দ্বারা নিযুক্ত, সুতরাং তাঁর প্রতি তাদের অখণ্ড আনুগত্য প্রদর্শন করতে হতো। এই বিশাল সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রতি প্রদেশের শাসনভার ন্যস্ত থাকত একজন প্রদেশপাল ও একটি সমিতির উপর। প্রদেশপাল ও সমিতি নিয়োগের একমাত্র অধিকারী ছিলেন জার। কেন্দ্রীয় শাসনের শিথিলতার জন্য প্রদেশপালরা স্বেচ্ছাচারী শাসকে পরিণত হতো। জনগণ নির্বাচিত সমিতিগুলোর নামেমাত্র ক্ষমতা ছিল। গ্রামাঞ্চলে ‘মির’ নামে পঞ্চায়েত জাতীয় প্রতিষ্ঠান ছিল। এগুলো বাণিজ্য ও কৃষি বিষয়ে কিছু স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করতো। আমলাতন্ত্র ও পুলিশ বাহিনীই ছিল জারের স্বেচ্ছাতন্ত্রের দুই শক্তিশালী স্তম্ভ। কেবলমাত্র অভিজাত সম্প্রদায় থেকেই নিযুক্ত হতো আমলারা। পুলিশ বাহিনীর ছিল প্রবল প্রতাপ । জনগণ তাদের অত্যাচারে ছিল অতিষ্ঠ। সরকারি কর্মচারীরা ছিল দুর্নীতিপরায়ণ। তারা তাদের স্বল্প বেতন ক্ষতিপূরণ করে নিত নির্বিবেক উৎকোচ গ্রহণের দ্বারা। বিচারকরাও এমনই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল যে, বিচারের নামে প্রহসন হতো।
১.৪ অর্থনৈতিক অবস্থা
Economic Condition
ঊনবিংশ শতকে রাশিয়ার অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। সমাজে ধন বণ্টনের বৈষম্য খুব প্রকট ছিল । সমাজের উপরে ছিল মুষ্টিমেয় বিত্তবান অভিজাত আর নীচুতলায় ছিল দরিদ্র কৃষক শ্রেণি। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের মতো রাশিয়ান বিত্তবান, বুদ্ধিজীবী বুর্জোয়া শ্রেণি গড়ে ওঠেনি। শিল্পেও রাশিয়া ছিল অনগ্রসর। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন জার্মান সহযোগিতায় শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দু' একটি স্থানে লৌহ শিল্প গড়ে ওঠে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কয়লা ও তৈল উৎপাদনের প্রয়াস দেখা যায়। অবশ্য রাশিয়ার অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা দূরীকরণে এগুলোর অবদান উল্লেখযোগ্য ছিল না।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]