জার শাসিত রাশিয়ায় বৈপ্লবিক নিহিলিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর

নিহিলিস্ট ও নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন
রোমান্টিকবাদ, মানবতাবাদ ও ধ্রুপদি সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ পশ্চিম ইউরোপের মতো রাশিয়াতেও জাতীয়তাবাদী মনোভাব সৃষ্টি করে। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার যে সংস্কার চালু করেন তার পটভূমিতে কোনো গণজাগরণ বা বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল না। এই সংস্কার অভিজাত শ্রেণি উপর থেকে চাপায়। তার দ্বারা জনসাধারণের মধ্যে কোনো সার্থক প্রতিক্রিয়া ঘটেনি। রুশ জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ছিল চরমপন্থি বিপ্লববাদের ফল। এই বিপ্লবী চরমপন্থিবাদ দুটি ধারায় রাশিয়াতে প্রবাহিত হয় । টুর্গেনিভের “পিতা ও পুত্র” (Fathter and Sons) উপন্যাসে তার চিত্ররূপ দেখা যায়। ৪০ এর দশকের প্রবীণ বিপ্লবী জাতীয়তাবাদীরা চাইকোভস্কির সঙ্গীতের সুরমূর্ছনা, রিমস্কি কোসাকভের সংগীত লহরী, দস্তয়েভস্কি, তুর্গেনিভ ও টলস্টয়ের মানবতাবাদী সাহিত্যের রসাস্বাদন করে গড়ে ওঠেন। এই সকল সংগীতকার ও সাহিত্যকারগণ তাঁদের রচনায় মানবতাবাদী ভাবাবেগের সঙ্গে জনকল্যাণ প্রচার এবং সামাজিক বৈষম্য ও অর্থনৈতিক দুর্দশার বিরুদ্ধে প্রচার করেন। কৃষকদের নিদারুণ দুর্দশার কথা তাঁরা গানে, সুরমূর্ছনায়, সংগীতে ও সাহিত্যে প্রকাশ করেন। এই সঙ্গে তাঁরা জাতীয়তাবাদী আবেগ ছড়ান। বুদ্ধিজীবী শ্রেণি তাঁদের এই ভাবধারা সাগ্রহে বরণ করে। মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ নগরীতে ১৮৬০-এর দশকে জাতীয় সংগীতালয় স্থাপিত হয়। চাইকোভস্কির সংগীত ও ব্যালে শুধু রাশিয়ার নয়, সমগ্র পশ্চিম ইউরোপে সানন্দ গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই সকল সংগীত ও সাহিত্যে একই অমলিন বিষয়ের ছায়া ছড়িয়ে থাকত যা শ্রোতা ও পাঠককে মানবিক মূল্যবোধে আপ্লুত করতো, জাতীয় চেতনার অনুরণন ছড়িয়ে দিত। তুর্গেনিভের পিতা ও পুত্র (Father and Sons ) উপন্যাসে এই ধরনের ভাববাদী জাতীয়তাবাদীদের 'পিতা' অর্থাৎ প্রবীণ জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী বলা হয়।
দ্বিতীয় ধারার বিপ্লবী জাতীয়তাবাদীরা ছিলেন ৬০-এর দশকের। তুর্গেনিভের ভাষায় এঁরা ছিলেন ( Sons) বা পুত্রগণ নবীন ভাবধারার বিপ্লবী। প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের মানসিকতার বহু ফারাক ছিল। এঁরা ছিলেন বস্তুবাদ, হিতবাদ বা উপযোগবাদ ও দৃষ্টবাদে আস্থাশীল। এঁরা রাশিয়ার ঐক্য ও স্বাধীনতা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। তাঁরা শোষণহীন সমাজ, জনগণের শান্তি ও মঙ্গল চাইতেন। তাঁরা অদৃষ্টবাদকে ঘৃণা করতেন। তাঁরা ভুয়া ভাবাবেগপ্রসূত দেশপ্রেমে বিশ্বাস করতেন না। ১৮১২ সালে বৈদেশিক আক্রমণের বিরুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের স্মৃতি ছিল তাঁদের কাছে ধূসর ও মূল্যহীন। তাঁরা বর্তমানকেই বেশি করে আলোচনা করেন। তাঁরা জনগণের কথাই বেশি করে বলেন ও ভাবেন। অভিজাত দেশপ্রেমীদের চিন্তাধারাকে তাঁরা বর্জন করেন। তাঁরা কার্নিসেভস্কি, আলেকজান্ডার হার্জেন, বেলিনস্কি প্রমুখের চিন্তাধারায় বিশেষত মাইকেল বাকুলিনের নৈরাজ্যবাদের দ্বারা প্রভাবিত হন। তাঁরা পুস্তিকা ও প্রচারপত্রের দ্বারা জারের ভূমিসংস্কার ও ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ আইনের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা পুরাতনতন্ত্র ভেঙে ফেলার ডাক দেন। তাঁরা বিজ্ঞানী, বাস্তববাদী, যুক্তিবাদী ও শোষণহীন সমাজের স্বপ্ন দেখতেন ।
এঁদের মধ্য থেকেই নিহিলিস্ট বা নৈরাজ্যবাদীরা উঠে আসেন। কার্নিসেভস্কি (Chernyshevoski) কৃষকদের কমিউন বা সমাজতান্ত্রিক সংগঠন করার কথা বলেন। হার্জেন আমূল অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলেন। পিজারেড রাশিয়ার বুদ্ধিজীবীদের গণবিপ্লবের স্বার্থে আগে নিজেদের সংগঠিত করার কথা বলেন। তুর্গেনিভের রচনার নিহিলিস্ট নামটি পিজারেভই একটি রাজনৈতিক মতবাদের নামকরণ হিসেবে চালু করেন।
নিহিলিজম বা শূন্যবাদকে নৈরাজ্যবাদও বলা হয়। মাইকেল বাকুলিন ছিলেন শূন্যবাদের প্রবক্তা। সিভিকবাদ, নৈরাজ্যবাদ ও নাৎসিবাদের মধ্যে মূলত কিন্তু আদর্শগত সংযোগ আছে। নিহিলিস্ট হলো সেই বিপ্লবী যে নিপীড়ন সত্ত্বেও আদর্শ ও ব্যক্তিত্বকে বলি দেয় না। নিহিলিস্ট বা শূন্যবাদীদের মতে, রাশিয়ায় ৬০-এর দশকে যা কিছু ছিল সবই পুরাতনতন্ত্র এবং বেশিরভাগ মন্দ। সামান্য কিছু যদি ভালো থাকে তাকে রক্ষা করার দরকার নেই। মন্দের সঙ্গে যদি কিছু ভালো থাকে তাকেও ধ্বংস করতে হবে। নতুবা নয়া সমাজ গড়া যাবে না। সুতরাং জারতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, গির্জাতন্ত্র সকল কিছুকে ধ্বংস করে পুরাতনতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। পুরাতন ভাববাদী শিক্ষাব্যবস্থাকেও তাঁরা নস্যাৎ করতে চান। বস্তুবাদী নিহিলিস্টরা বলতেন যে, যে শিক্ষার দ্বারা কোনো অর্থনৈতিক বা বস্তুবাদী লাভ হবে না, সে শিক্ষার দরকার নেই । কাজেই বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকেই তারা সারবস্তু বলেই ভাবতেন। মানবিক বিদ্যা, সংগীত, কলা, সাহিত্য, নন্দনতত্ত্বকে তারা অপ্রয়োজনীয় বলতেন। কারণ সাধারণ মানুষের তাতে বৈষয়িক উন্নতির সম্ভাবনা ছিল না। তাঁদের মতে একজন পাদুকা প্রস্তুতকারী সমাজের জন্য শেকসপিয়ার বা রাফায়েল অপেক্ষা মূল্যবান ও দরকারি কাজ করতো। মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের জন্য শেকসপিয়ার অপরিহার্য ছিলেন না। ঐতিহাসিক সেটন ওয়াটসনের মতে, জার্মান দার্শনিক ফয়েরবাখের (Feurbach) প্রভাবে রুশ বিপ্লবীদের মধ্যে এরূপ অদ্ভুত ধারণা গড়ে ওঠে। তারা ভুলে
যায় যে, কেবলমাত্র বস্তুবাদী শিক্ষা মানুষকে নীতিজ্ঞানহীন স্বার্থসর্বস্ব জীবে পরিণত করবে। সমাজের ও সভ্যতার অগ্রগতি বলতে কেবলমাত্র রুটি, কাপড়ের সংস্থান বুঝায় না। মানুষের সৃজনী শক্তির কলা ও শিল্পের দ্বারা বিকাশের সম্ভাবনার কথা তারা ভুলে যায়।
নিহিলিস্ট মতবাদের অন্যতম উদ্ভাবক বাকুনিন মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রের থেকে একটি স্বতন্ত্রবাদ প্রচার করেন। তিনি মার্কসীয় মত অনুযায়ী “শ্রমিক শ্রেণির একনায়কতন্ত্র" (Dictatorship of the Proletariat ) তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। ফরাসি চিন্তাবিদ প্রুধোঁর (Proudhon) মতোই তিনি প্রচার করতেন যে, পুরাতনতন্ত্রের সব কিছু এমনকি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেও ভেঙে ফেলা দরকার। কারণ রাজার বদলে যে শ্রেণির হাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্ব থাকবে, তারা যদি শ্রমিকের প্রতিনিধি হয়, তবুও তারা শোষণ চালাবে। তিনি স্থানীয় ভিত্তিতে ঐচ্ছিক শাসন সংগঠন বা মিউনিসিপ্যাল শাসনের কথা বলেন। তাঁর সঙ্গে সিন্ডিকবাদীদের পার্থক্য এই ছিল যে, তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রে শ্রমিকের সংগঠনকে রাষ্ট্রের মূলভিত্তি বলে বিশ্বাস করতেন না। মার্কসীয় তত্ত্বের সঙ্গে তার মতবাদের পার্থক্য এই ছিল যে, তিনি সর্বহারা শ্রেণির একনায়কতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন, সোস্যাল ডেমোক্র্যাটদের পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রেও তিনি বিশ্বাস করতেন না। তাঁর মতে রাশিয়ার মুক্তি শিল্প শ্রমিকের একনায়কতন্ত্র আনতে পারবে না। গ্রামের ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক এবং শহুরে চালচুলোহীন শ্রমিকরাই পুরাতনতন্ত্র ধসিয়ে এই মুক্তি আনতে সক্ষম। রাশিয়া, স্পেন ও ইতালিতে যে সামাজিক পরিস্থিতি ছিল তাতে একমাত্র এই শ্রেণিই মুক্তি আনতে সক্ষম বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। এজন্য পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপে কৃষক নৈরাজ্যবাদের তাঁকেই প্রবক্তা বলা হয় । নৈরাজ্য বা শূন্যবাদী মতের সর্বাপেক্ষা উগ্র প্রবক্তা ছিলেন মাইকেল বাকুনিন। অপর দিকে কার্নিসেভস্কি, লাভরোভ প্রমুখের মতে গ্রামে কিষাণ কমিউন এবং শহরে শ্রমিকের আরতেল (Artel) দ্বারা শ্রমিক ও কৃষকের সংগঠন দ্বারাই শোষণের অবসান ঘটানো সম্ভব।
যাই হোক, জার সরকার নিহিলিস্ট ও পপুলিস্ট বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে তীব্র দমননীতি চালান। অবশেষে ১৮৮১ সালের ১৩ মার্চ সেন্ট পিটার্সবার্গের রাস্তায় পপুলিস্ট বিপ্লবীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়। পরবর্তী জার এক দমননীতির দ্বারা বিপ্লবী আন্দোলন দমিয়ে ফেলেন।
নিহিলিজমের উদ্ভব
রাশিয়ায় নির্বিচার দমনপীড়ন ও কঠোর প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রত্যুত্তর হিসেবে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। সেখানে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন গতিযুক্ত হবার আগে বৈপ্লবিক আন্দোলন পরিচালনা করেছিল নিহিলিস্টরা। প্রথিতযশা ঔপন্যাসিক তুর্গেনিভ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'ফাদার্স অ্যান্ড সন্স' উপন্যাসে 'নিহিলিজম' শব্দটি ব্যবহার করেন। এই উপন্যাসের নায়ক বাজারোভের চরিত্র বহু ব্যক্তির চিন্তাভাবনাকে নাড়া দিয়েছিল। বিপ্লবী পিজারেভ এই নায়কের আদর্শের সঙ্গে নিজ ভাবধারার সাদৃশ্য খুঁজে পান। তিনি প্রচার করেন যে, রুশ বুদ্ধিজীবীদের উচিত গণআন্দোলনের ভাবনাচিন্তা মুলতুবি রেখে সর্বপ্রথম নিজেদের সংগঠিত করা। তিনি নিহিলিস্ট শব্দটিও ব্যবহার করেন।
হিলিস্ট মতবাদের বৈশিষ্ট্য নতিবাচক রুশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই মতবাদের প্রথম উদ্ভব ঘটেছিল। পর্বে এই মতবাদের লক্ষ্য ছিল এমন একদল মানুষ তৈরি হবে যারা সর্বপ্রকার বিরোধী, প্রচণ্ড যুক্তিবাদী-কোনো কিছুকেই অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে গ্রহণ না এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের একনিষ্ঠ পূজারি। এরা সকলেই ঐতিহ্যগত গুলোকে বিসর্জন দেবে। তাদের দৃষ্টিতে জারতন্ত্র, ক্যাথলিক চার্চ ও রাষ্ট্র সব কল্যাণকর, সুতরাং সব কিছুই ধ্বংস করতে হবে। ঘোর বস্তুবাদী নিহিলিস্টরা তো ব্যক্তির বস্তুতান্ত্রিক জীবনে যা কাজে লাগে না তা একেবারে মূল্যহীন। বিদ্যার তাই কোনো মূল্য নেই। বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যাই প্রকৃত শিক্ষার দর মতে শেকসপিয়ার বা গ্যাটের তুলনায় একজন মুচি অনেক বেশি সমাজের রে থাকে। কেননা একজোড়া জুতো ব্যক্তির বস্তুতান্ত্রিক জীবনে যে প্রয়োজন কাব্য তা আদৌ করে না। এইভাবে নিহিলিস্টরা মানুষের চিন্তার মুক্তি ঘটিয়ে দ্বার অবারিত করতে চেয়েছিল।
লিজম প্রচলিত সমাজ-রাষ্ট্র-অর্থব্যবস্থার পরিপূর্ণ বিনাশ চেয়েছিল, কিন্তু এর দিকও ছিল। সে হলো একটি সর্বজনহিতকর সমাজ জীবন গঠন। কিন্তু দুই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে সে বিষয়ে তারা একমত ছিল না। কেউ কেউ মনে য, বিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তার রূপায়ণ ঘটবে। কেউ আধুনিক দার্শনিক ও জীবতত্ত্বের ভিত্তিতে নয়া পরিকল্পনা পেশ করতে থাকে। এদের সারকথা ছিল- সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে যৌথ মালিকানা ও বর্তে বিজ্ঞান এবং কেন্দ্রীয় শাসনের পরিবর্তে কমিউনের শাসন প্রবর্তন এবং ই সাম্যনীতি গ্রহণ ।
লজম একটি তাত্ত্বিক মতবাদ বা দর্শনমাত্র থাকেনি। বলা যেতে পারে, এই *৭০ সালের পর বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা হয়েছিল। এই পর্বে এই । মূল লক্ষ্য ছিল গণসংযোগ স্থাপন। এটি তখন পপুলিস্ট বা নারোদনিকি রুশ শব্দ ‘নারোদ'-এর অর্থ জনগণ) নামে সমধিক প্রসিদ্ধ হয়।
সিদের মুক্তিনামার (১৮৬১ সাল) সীমাবদ্ধতা, তাদের দুঃখদুর্দশা বিশেষত কদের শোষণ ইত্যাদি প্রগতিশীল রুশ চিন্তাশীলদের সহানুভূতি আকর্ষণ রা সমাজ বিপ্লবের অনুরাগী হলেও মার্কসবাদের প্রতি তাঁদের অনুরাগ ছিল চার্নিসেভস্কি এবং হার্জেন-এর সূত্র ধরে তারা স্বপ্ন দেখেছিল যে, প্রতি বাসীদের দ্বারা গঠিত কমিউনগুলো সমাজতন্ত্রভিত্তিক সমাজব্যবস্থার রূপ হবে। এই সমাজে কৃষকশ্রেণি যৌথভাবে বসবাস করবে ও কাজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে- (১) যেহেতু রাশিয়ার জনসংখ্যার সিংহভাগ হলো
কৃষক, সেহেতু মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বে তারাই হবে বিপ্লবের প্রকৃত পরিচালিকা শক্তি (২) রাশিয়ায় পুঁজিবাদ শক্তিশালী হতে পারে না। সুতরাং পুঁজিবাদকে পাশ কাটিয়ে সমাজতন্ত্রবাদে পৌঁছানো সম্ভব। (৩) রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রশ্নটি তাদের কাছে জরুরি মনে হয়নি। লক্ষ্য ও লক্ষ্যসাধনের উপায় সম্বন্ধে অবশ্য এঁদের মধ্যে মতভেদ ছিল।
আন্দোলনের ত্রুটি
১৮৭৩ সালে ‘জনগণের কাছে যাওয়ার আন্দোলন শুরু হলো। কৃষকদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারার প্রচার করে তাদের শিক্ষিত করে তোলার মহান ব্রত নিয়ে দলে দলে শিক্ষিত যুবক-যুবতী কৃষকের পোশাকে গ্রামে গ্রামে অভিযান করল। জনগণের কাছে যাওয়ার এই নীতি থেকেই তাদের নামকরণ হয় পপুলিস্ট বা নারোদনিকি। ঐতিহাসিক ক্রেগ বলেছেন যে, কৃষক জীবনের সান্নিধ্যে এসে তুর্গেনিভের নায়ক বাজারোভের মতোই তাঁদের অভিজ্ঞতা হলো। বাজারোভ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে উল্লসিত হয়েছিল, কিন্তু সে ভাবতেও পারেনি কৃষকদের চোখে সে একজন ভাঁড় ছাড়া কিছু নয়। নারোদনিকিদের ধর্মপ্রচারক-সুলভ উৎসাহ ছিল সত্যি, কিন্তু এরা ভুলে গিয়েছিল যে, জনগণের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করলেই তাদের সম্মোহিত করা যায় না। তাছাড়া, কৃষকদের মধ্যে সমাজ বা শ্রেণি-সচেতনতা একেবারেই ছিল না। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের সার্থকতা সম্বন্ধে এই অশিক্ষিত শ্রেণি অবহিত ছিল না, সমাজবাদী আদর্শ তাদের মধ্যে সাড়া জাগায়নি। পপুলিস্ট আন্দোলন সমগ্র কৃষক সমাজের অভ্যুত্থান ঘটাতেও ব্যর্থ হয়। মুদ্রিত পত্রিকা মারফত প্রচার
পপুলিস্ট আন্দোলনের প্রতি রুশ সরকার নিস্পৃহ উদাসীনতার নীতি অবলম্বন করলে সম্ভবত তা স্তব্ধ হয়ে যেত। কিন্তু আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশি দমনপীড়ন এবং তাদের গণবিচার আন্দোলনটিকে জিইয়ে রাখে । একদল বিপ্লবী ‘ঝেমল্য-ই ভল্য (অর্থ : ভূমি ও স্বাধীনতা) নামে একটি গুপ্ত সমিতি স্থাপন করে জনস্বার্থ বিরোধী জার শাসনের নীতি উদঘাটন করে একটি অবৈধ মুদ্রিত পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকে।
সন্ত্রাসবাদ
নারোদনিকিদের একটি বড় অংশ এই প্রচারাভিযানে আস্থা রাখতে পারল না। তাঁরা পূর্বগামী বিপ্লবী সার্জ নেচায়েড ও পিটার কাচেভ প্রদর্শিত পথই গ্রহণযোগ্য মনে করল। এর ফলে নারোদনিকি আন্দোলন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে পরিণত হলো। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, বাঁকুনিনপন্থি নেচায়েভ সন্ত্রাস সৃষ্টিকে বিপ্লবী লক্ষ্যে পৌছানোর হাতিয়ার মনে করতেন, তিনি দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একজন বিপথগামী সদস্যকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। আর কাচেভ এর মত ছিল জনগণের উদ্যমের চেয়ে একদল বিশিষ্ট বিপ্লবীদের দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় সংকল্পের উপর বিপ্লবের সাফল্য বেশি নির্ভরশীল। এইভাবে সন্ত্রাসবাদী নারোদনিকিরা জার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং রাজনৈতিক হত্যাকে সংগ্রামের সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হিসেবে গণ্য করে। তদের ধারণা হয়েছিল যে, কিছু সংখ্যক জারের মন্ত্রী এবং স্বয়ং জারকে হত্যা করলে শাসকশ্রেণি সন্ত্রস্ত হয়ে শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দেবে ।
১৮৭৯ সালে সন্ত্রাসবাদী নারোদনিকিরা 'নারোদনায়া ভল্যা' বা গণইচ্ছা নামে একটি গুপ্ত সমিতি গড়ে তোলে। এর সদস্যরা কয়েকজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীকে হত্যা করে। এরপর জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে হত্যা করার বহু চেষ্টা করা হয়। অবশেষে তাদের হাতেই জার নিহত হন ১ মার্চ, ১৮৮১ সালে।
চূড়ান্ত ব্যর্থতা
এত করেও কিন্তু 'নারোদনায়া ভল্যা'র উদ্দেশ্য পূর্ণ হলো না। জারের হত্যার ফলে রাজনৈতিক শাসন কাঠামোর কোনো পরিবর্তন ঘটল না। রুশ সরকারের দমননীতি উগ্ররূপ ধারণ করল। নারোদনায়া ভল্যার কর্ম সমিতি জারকে আবেদন করল তাদের সদস্যদের ক্ষমা করতে হবে, জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করতে হবে। পরিবর্তে তারা সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ ত্যাগ করবে। জার কিন্তু একথায় কর্ণপাত করেননি। সমস্ত নারোদনিকি নেতাদের বন্দি করা হলো। তাদের চারজনকে ফাঁসি দেওয়া হলো, বাকিরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলো। আন্দোলন একেবারে ভেঙে গেল-তার পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ । লেনিনের জ্যেষ্ঠভ্রাতা আলেকজান্ডার নয়া জারকে হত্যার পরিকল্পনা করে আন্দোলনকে পুনর্জাগ্রত করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে তিনি সেই ভুলের মাশুল দিলেন ।
নারোদনিকি আন্দোলন একেবারে ব্যর্থ হয়নি। এই আন্দোলনের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল যে, বিপ্লবের নেতৃবর্গ যতই নিষ্ঠাবান ও আত্মত্যাগে দীক্ষিত হোন না কেন, সন্ত্রাস সৃষ্টি ও বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিপ্লবী লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব এবং জনগণকে আন্দোলনে শামিল করার মতো গঠনমূলক কর্মসূচি। এ শিক্ষা রুশ বিপ্লবীদের কম সাহায্য করেনি।
৫. শ্রমিক আন্দোলন
দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের রাজত্বকালেই নারোদনিকি আন্দোলনের পাশাপাশি শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। রাজনৈতিক অধিকার-বঞ্চিত শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের অসন্তোষ প্রকাশের কোনো আইনসঙ্গত মাধ্যম ছিল না। ধর্মঘট রাষ্ট্রবিরোধী কাজ বলে গণ্য হতো। ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের কর্মচ্যুত করা হতো। তবু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও শ্রমিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। প্রথম বৈশ্বিকভাবে গঠিত হলে কিছু সংখ্যক নির্বাসিত রুশ এই শ্রমিক সংগঠনের রুশ বিভাগ গঠন করেন। শ্রমিকদের মধ্যে একতাবোধ সঞ্চারিত হতে থাকে কয়েকটি ধর্মঘটের মাধ্যমে। ১৮৭৫ সালে শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি গুপ্ত শ্রমিক সংগঠন স্থাপিত হয়। একটির নাম দক্ষিণ রাশিয়া শ্রমিক ইউনিয়ন-এর প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল ওডেসা। অন্যটির নাম উত্তর-রাশিয়া শ্রমিক ইউনিয়ন-এর প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ। রুশ সর্বহারাদের বিপ্লবী
সংগঠন দুটি বেশিদিন তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারেনি। প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের দমননীতিতে এদের আয়ু নিঃশেষিত হয়। সংগঠন দুটির কিছু পলাতক নে অবশ্য সর্বহারাদের মধ্যে গোপনে বিপ্লবী ভাবধারার প্রচার অব্যাহত রাখেন।
৬. নারোদনিকি বা পপুলিস্ট বা জনবাদী আন্দোলন (Narodniki populist movement)
রাশিয়ায় ষাটের দশকে যে বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা হয়, যে আন্দোলনের প্রধান শাখার নাম ছিল নৈরাজ্যবাদী বা শূন্যবাদী বা নিহিলিস্ট আন্দোলন তা ক্রঃ Li নারোদনিকি আন্দোলনে পরিণত হয়। রুশ ভাষায় নারোদ ( Narod) কথাটির অর্থ হলো জনসাধারণ (People)। নৈরাজ্যবাদীরা ক্রমে পরিণত ও গঠনমূলক দৃষ্টি নেয়। গ্রা তারা জনতা (People) বিশেষত কৃষকদের অবলম্বন করে একটি বিপ্লবের কর্মসূচি মা গ্রহণ করে। নিষ্ফলা ধ্বংসাত্মক বিপ্লবের কথা না বলে কৃষক বিপ্লবের মাধ্যমে পুরাতনতন্ত্রকে ভেঙে নয়া জনবাদী সমাজ গড়ার কথা এই বিপ্লবীরা ভাবেন। যেক্ষেত্রে মার্কসবাদীরা কারখানা শ্রমিকদের রাজনৈতিক শিক্ষা ও তাদের বিপ্লবের দ্বারা রাশিয়ার নয়া সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের কথা ভাবেন, সেক্ষেত্রে পপুলিস্টরা কৃষকদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ও কৃষক বিপ্লবের দ্বারা রাশিয়ায় নয়া ব্যবস্থা গড়তে চান। এই পপুলিস্ট বিপ্লবীরা মনে করতো যে, শহুরে সংস্কৃতি মানুষকে তার প্রকৃতিপ্রদত্ত সারল্য থেকে বঞ্চিত করে। একমাত্র কৃষকরাই ছিল সৎ, পবিত্র ও কৃত্রিমতাবিহীন। কৃষকদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলে তারা মনে করতো। নারোদনিকিরা বিশ্বাস করতো যে, কৃষক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাশিয়া সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে পারত । গ্রামীণ কমিউনগুলিই হবে সেই সমাজতন্ত্রের বিকাশের বীজ।
এই পর্যন্ত নারোদনিকিদের মধ্যে মতৈক্য দেখা যায়। কিন্তু কীভাবে কৃষকদের বিপ্লবে অনুপ্রাণিত করা যাবে, এই কৌশলগত বিষয়ে জনবাদী বা পপুলিস্টরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যান। বাকুনিনপন্থিরা মনে করতো যে, কৃষকদের ডাক দিলেই তারা বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখন সমস্যা হলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে সংহতি ও সংগঠন দ্রুত তৈরি করা। যাতে গোটা দেশে কৃষক বিদ্রোহ দপ করে একসঙ্গে একই সময়ে জ্বলে ওঠে। অপর একটি গোষ্ঠী মনে করতো যে, কৃষকদের প্রস্তুতি ঘটাতে দীর্ঘসময় লাগবে। সেজন্য ষড়যন্ত্র ও গেরিলা যুদ্ধের দ্বারা বুদ্ধিজীবী বিপ্লবীদের উচিত ক্ষমতা দখল করে, কৃষকদের নেতৃত্ব দান করা। মস্কো, কিয়েড, সেন্ট পিটার্সবার্গে পপুলিস্টরা শহরে শ্রমিকদের মধ্যে প্রচার চালায়। তারা 'Back to the people' নীতি নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কৃষকদের পোশাক ধারণ করে তারা কৃষকদের কুটিরে কুটিরে বিপ্লবের ডাক পৌঁছে দেয়। কিন্তু শীঘ্রই নারোদনিকিরা বুঝতে পারে যে, কৃষকদের সঙ্গে পপুলিস্টদের ভালোভাবে বোঝাপড়াও হয়নি। ১৮৭৪ সালে পপুলিস্ট বিপ্লবীরা মরিয়া হয়ে চেষ্ট চালায়। কিন্তু তাতে রাশিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও তা গোটা দেশের সামান্য অংশ ছিল । নারোদনিকি পপুলিস্টরা কৃষকদের মানসিকতা ভালোভাবে না বোঝার ফলে তারা ব্যর্থতা বরণ করে। ইতোমধ্যে তাদের উপর সরকারের দমননীতির খড়গ নেমে আসে।
এই ব্যর্থতা থেকে পপুলিস্টরা কিছুটা শিক্ষা নেয় ।
প্রথমত, এখন থেকে পপুলিস্টরা সন্ত্রাসবাদী পন্থায় জারের দমননীতির জবাব দিতে প্রতিজ্ঞা নেন। গণআন্দোলন অপেক্ষা সন্ত্রাসবাদকেই তাঁরা আন্দোলনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে নেন। পিটার তুর্কাচেভ বলেন যে, “কৃষকরা যদি বিপ্লবে যোগ না দেয়, তবে বিপ্লবীদেরই সন্ত্রাস বা গুপ্ত হত্যা ও সম্ভব হলে যুদ্ধের দ্বারা সরকারকে হটাতে হবে। দ্বিতীয়ত, এখন থেকে বিপ্লবী আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে Land and Liberty কৃষকদের জন্য জমি ও কৃষকদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাকেই গ্রহণ করা হয় ।
তৃতীয়ত, কৃষকদের সহানুভূতি লাভের জন্য (ক) ক্ষতিপূরণ প্রদান রদ করা; (খ) গ্রামীণ কমিউনের নিয়ন্ত্রণ থেকে কৃষকদের স্বাধীনতা লাভ; (গ) কৃষকদের জমির চ মালিকানা প্রদানের দাবি তোলা হয় ।
নারোদনিকিরা এই সময় থেকে দুটি গোষ্ঠীতে ভাগ হয়, যথা : নারোদনিয়া ভলিয়া বা জনতার ইচ্ছানুসারী (Peoples will) গোষ্ঠী এবং কৃষ্ণ বিচ্ছিন্নতাবাদী (Black Partition)। প্রথম গোষ্ঠী বা নারোদনিয়া ভলিয়াই ছিল বেশি প্রভাবশালী। বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, বিপ্লবীরা বেশিরভাগ এই গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। গ্রেগরি প্লেখানভ ছিলেন নারোদনিকিদের প্রধান তাত্ত্বিক ও সংগঠনকারী। এই গোষ্ঠী সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। গুপ্ত হত্যার দ্বারা জারের বহু কর্মচারীকে নিহত সরকারি আমলাতন্ত্র ত্রাসের সৃষ্টি করে। চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্রী ভেরা সেন্ট পিটার্সবার্গের শাসনকর্তাকে পিস্তলের গুলিতে আহত করেন এবং দৃপ্ত পদক্ষেপে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেন (১৮৭৮ সালে)। নারোদনিয়া ভলিয়ার একটি উগ্রপন্থি গোষ্ঠী পুলিশি দমননীতির প্রতিবাদে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে হত্যার সংকল্প নেয়। তিন বার সম্রাট হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারা চতুর্থ বারে বোমার আঘাতে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে নিহত করে (১৮৮১ সাল)। এর ফলে পরবর্তী জার তৃতীয় আলেকজান্ডার নারোদনিকিদের বিরুদ্ধে এমন তীব্র দমননীতি চালায় যে, নারোদনিকি আন্দোলন শীঘ্রই স্তব্ধ হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]