জার প্রথম আলেকজান্ডারের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর। জার প্রথম নিকোলাসের অভ্যন্তরীণ নীতি আলোচনা কর ।

জার প্রথম আলেকজান্ডারের বৈদেশিক নীতি
১. নেপোলিয়ন বিরোধী গোষ্ঠীতে যোগদান ও পরাজয়
জার প্রথম আলেকজান্ডারের অভ্যন্তরীণ নীতির ন্যায় তাঁর বৈদেশিক নীতি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, জার প্রথম আলেকজান্ডারের আমলে রাশিয়া ইউরোপীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রস্থান অধিকার করে। সিংহাসনে বসার পর জারের সম্মুখে প্রধান সমস্যা ছিল নেপোলিয়নের সম্পর্কে নীতিনির্ধারণ। তিনি ১৮০১-০৪ সাল পর্যন্ত নেপোলিয়নের সম্পর্কে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেন। কিন্তু নেপোলিয়ন জার্মানি জয় করার পর আলেকজান্ডার নিরপেক্ষতা নীতি ত্যাগ করেন। তিনি তৃতীয় শক্তিজোটে যোগ দিয়ে নেপোলিয়নের হাতে ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেন।
২. টিলজিটের সন্ধি ১৮০৭ সাল
১৮০৭ সালে জার প্রথম আলেকজান্ডার, নেপোলিয়নের সঙ্গে বিখ্যাত টিলজিটের সন্ধি স্বাক্ষর করেন। এই সন্ধির দ্বারা পোল্যান্ডে নেপোলিয়নের আশ্রিত রাজ্য, কিংডম অব ওয়ারসকে জার মেনে নেন। তিনি নেপোলিয়নের প্রচারিত মহাদেশীয় প্রথা (Continental System) সমর্থন করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধে যোগ দেন। নেপোলিয়ন কর্তৃক জার্মানি ও ইতালির পুনর্গঠন ব্যবস্থাকেও জার মেনে নেন। এর বিনিময়ে পূর্ব ইউরোপে রুশ আধিপত্য স্থাপনের দাবিকে নেপোলিয়ন মেনে নেন। ফিনল্যান্ড, বেসারাবিয়া এবং ককেশাসের তৈল সমৃদ্ধ অঞ্চলে রুশ অধিকার স্থাপিত হয় । ৩. নেপোলিয়নের সঙ্গে বিরোধ
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে জারের সঙ্গে নেপোলিয়নের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রুশ মন্ত্রীরা জারকে একথা বুঝান যে, রুশ জারের মিত্রতার সাহায্যে নেপোলিয়ন ইউরোপে একাধিপত্য স্থাপন করেছেন। নেপোলিয়নের মহাদেশীয় প্রথা গ্রহণের ফলে রুশ বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। পোল্যান্ডে ফরাসি প্রভাব বিস্তারের ফলে রুশ নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে। এই সকল কারণে জার মহাদেশীয় প্রথা অগ্রাহ্য করেন। এর ফলে নেপোলিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধাবস্থা দেখা দেয় ।
৪. মস্কো অভিযান : জারের প্রতিরোধ
১৮১২ সালে নেপোলিয়ন তাঁর গ্র্যান্ড আর্মি (Grand Army) নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। কিন্তু নেপোলিয়নের ইউরোপ বিজয়ী সেনাদল মস্কো অভিযানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। নেপোলিয়ন হতমান ও হতবল হয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। তাঁর পিছু নিয়ে রুশ বাহিনী জার্মানিতে উপস্থিত হয়।
৫. নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে জয় : জারের উদারতান্ত্রিক নীতি
নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য, পশ্চিম ইউরোপে, বিরাট সংখ্যক রুশ বাহিনীর অবস্থান রাশিয়াকে এক বিরাট সামরিক মর্যাদা দান করে। নেপোলিয়ন বিজেতা হিসেবে জার আলেকজান্ডার ইউরোপের জনসাধারণের নিকট অসাধারণ জনপ্রিয়তা পান। এই সময় ইউরোপে রুশ প্রভাব অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পায়। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে জয়লাভ করলেও জার তাঁর মাথা ঠাণ্ডা রাখেন। তিনি ভিয়েনা সম্মেলনে উদারতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে মনে করতেন। মেটারনিক প্রভৃতি
প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিজ্ঞদের বিরুদ্ধে তিনি উদারতন্ত্রের সমর্থক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। সামরিক শক্তি ও আদর্শবাদ উভয় নীতির দ্বারা তিনি রাশিয়ার মর্যাদা বিশেষ বৃদ্ধি করেন। তিনি পোল্যান্ডকে স্বায়ত্তশাসনমূলক সংবিধান দিয়ে ইউরোপের নিপীড়িত জাতিগুলোর মুক্তির দূত হিসেবে নন্দিত হন।
৬. ভিয়েনা সম্মেলনে জারের নীতি
ভিয়েনা সম্মেলনে জার উদারতন্ত্রের সমর্থকের ভূমিকা নিলেও তিনি রাশিয়ার স্বার্থের কথা ভোলেননি। তাঁর প্রভাবে সন্ধিকর্তারা ফ্রান্সকে উদার শর্ত দান করতে বাধ্য হন এবং জার্মানির ৩৯টি রাজ্য নিয়ে একটি Bund বা রাষ্ট্রমণ্ডল গঠিত হয়। অপরদিকে জার অস্ট্রিয়া ও ব্রিটেনের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে পোল্যান্ডের
অংশ এবং ফিনল্যান্ড
ও বেসারাবিয়া অধিকার করতে সমর্থ হন। তিন লক্ষ রুশ সৈন্য জার্মানিতে উপস্থিত থাকার ফলে মিত্রশক্তির পক্ষে রাশিয়ার দাবি অগ্রাহ্য করা সম্ভব হয়নি।
৭. জারের প্রতিক্রিয়াশীল নীতি গ্রহণ
কিন্তু মেটারনিকের কূটনীতির ফলে জার আলেকজান্ডার ক্রমে ক্রমে তাঁর ইউরোপীয় প্রভাব, প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলেন। ধূর্ত মেটারনিক বুঝতে পারেন যে, জারকে রক্ষণশীল মতে দীক্ষিত না করলে, ইউরোপে তাঁর পরিকল্পিত রক্ষণশীলতাকে স্থাপন করা যাবে না। তিনি জারকে একথা বোঝাতে সমর্থ হন যে, উদারতন্ত্র হলো একটি বৈপ্লবিক শক্তি। এর প্রভাবে জারের স্বর্গীয় অধিকার নীতি বিনষ্ট হবে। তিনি ফ্রান্সে সমাজতন্ত্রবাদীদের প্রভাব, জার্মানির ছাত্রসমাজের বিদ্রোহী মনোভাব, রাশিয়ায় বুদ্ধিজীবীদের সংবিধান পরিবর্তনের দাবি উল্লেখ করে বলেন যে-এই আন্দোলনগুলোর উদ্দেশ্য হলো ইউরোপীয় রাজশক্তিগুলিকে ধ্বংস করা। জার আলেকজান্ডার পবিত্র চুক্তি ঘোষণা করে ইউরোপে রক্ষণশীলতা স্থাপন করার পরিকল্পনা করেন। অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও প্রাশিয়া এই তিন রক্ষণশীল শক্তি এর ফলে জোটবদ্ধ হয়।
৮. শক্তি সমবায়
ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ের সদস্য হিসেবে জার আলেকজান্ডার, মেটারনিকের রক্ষণশীল নীতির ঘোর সমর্থকে পরিণত হন। জারের উদারতন্ত্রী ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। কিন্তু জার শীঘ্রই উপলব্ধি করেন যে, শক্তি সমবায়ে যোগদানের ফলে, তিনি রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি যাই করুন না কেন, তাঁকে শক্তি সমবায়ের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে। ১৮২০ সালের মেটারনিক কর্তৃক রচিত প্রতিক্রিয়াশীল দলিল 'প্রোটোকল অব ট্রপোতে' জার স্বাক্ষর দেন। স্পেনে উদারতান্ত্রিক বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি তা দমনের জন্য সৈন্য পাঠাবার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইংল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া স্পেনে রুশ সেনার অনুপ্রবেশ সমর্থন না করায় তিনি হতাশ হন। এদিকে তুরস্কের বিরুদ্ধে গ্রিসে বিদ্রোহ দেখা দেয়। গ্রিসে রুশ প্রভাব বিস্তারের জন্য রুশ জার, গ্রিক বিদ্রোহীদের সহায়তা করতে অভিপ্রায় জানান । কিন্তু অস্ট্রিয়া বা ইংল্যান্ড, কেউই রাশিয়ার এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। ফলে জার আলেকজান্ডারকে নিরস্ত হতে হয়। জারের আহত অভিমানকে শান্ত করার জন্য, মেটারনিক তাঁকে বলেন যে, “মনে করুন গ্রিস ইউরোপের অন্তর্গত নয়।”
১ম নিকোলাস
i. জার প্রথম নিকোলাসের রাজত্বকাল, ১৮২৫–১৮৫৫ সাল অভ্যন্তরীণ নীতি ১. জার নিকোলাসের রক্ষণশীলতা
রুশ জার প্রথম নিকোলাস ছিলেন লৌহমানব। জারতন্ত্রের স্বৈরশাসন তাঁর মধ্যে প্রকৃতভাবে প্রতিফলিত হয়। কিশোর বয়স থেকে সেনা বিভাগে কাজ করার ফলে তাঁর মধ্যে সুকুমার মনোবৃত্তিগুলো বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়নি। তিনি ছিলেন ঘোর রক্ষণশীল, সংস্কার বিরোধী এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ ব্যক্তি। তবে তাঁর প্রখর বাস্তব জ্ঞান ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিতে তিনি সমর্থ ছিলেন। তাঁর স্বদেশপ্রীতিও কম ছিল না। তবে তিনি স্বদেশ বলতে তাঁর শাসিত সরকারকে বুঝতেন ।
২. স্বৈরতন্ত্র
ডেকাব্রিস্ট বিদ্রোহীদের কঠোর হাতে দমন করে, নিহত ডেকাব্রিস্টদের পা মাড়িয়ে জার প্রথম নিকোলাস রুশ সিংহাসনে বসেন। তিনি রাশিয়ার শাসন ও সমাজব্যবস্থায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য নিশ্ছিদ্র দমননীতি প্রয়োগ করেন। তাঁর নীতি ছিল, “গোঁড়ামি, স্বৈরতন্ত্র এবং রুশি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্ব” প্রচার (Orthodoxy, Autocracy and Nationality)। তিনি স্বাধীন চিন্তা ও সমালোচনাকে বন্ধ করার জন্য বোর্ড অব সেন্সরসিপ (Board of Censorship) বা নিয়ন্ত্রণ পরিষদ স্থাপন করেন। শিক্ষামন্ত্রী কাউন্ট উভারভ (Count Uvarov) ছিলেন এই পরিষদের

সর্বেসর্বা। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়গুলোকে দৃঢ় হাতে এই পরিষদের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ছাত্রদের বিদেশে পঠনপাঠন নিষিদ্ধ করা হয়। বিদেশি অধ্যাপকদের রুশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ দান নিষিদ্ধ করা হয়। উদারনৈতিক পাঠ্যবিষয়গুলোর চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের জন্য ছাত্রদের যোগদানে বাধানিষেধ আরোপ করা হয়। নিকোলাস দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার বিস্তার চাইতেন না। তাঁর আশঙ্কা ছিল যে, তার ফলে দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে জাগরণ ঘটবে। মোটকথা, মেটারনিক যেরূপ অস্ট্রিয়া ও জার্মানিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দ্বারা স্বাধীন মতামত গঠন ও প্রকাশের পথ বন্ধ করেন, জার নিকোলাসও রাশিয়াতে তাই করেন।
৩. দমননীতি
জার নিকোলাস থার্ড সেকসন (Third Section) নামে এক গুপ্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী গঠন করেন। জেনারেল বেঙ্কেনডর্ফের অধীনে এই গুপ্ত বাহিনী সমগ্র দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। বিনা বিচারে কারাদণ্ড, হত্যা, নির্বাসন দ্বারা এই বাহিনী বিপ্লবী গুপ্ত সমিতিগুলোর মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।
৪. রুশ সাহিত্যের অগ্রগতি
প্রথম নিকোলাসের দমননীতির ফলে রুশ বুদ্ধিজীবীরা রাজনীতির সম্পর্ক ত্যাগ করেন, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে সৃজনশীল কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এর ফলে নিকোলাসের রাজত্বকালে রুশি সাহিত্যের বিরাট অগ্রগতি ঘটে। নিকোলাসের শাসনকালকে ‘রুশি সাহিত্যের অগাস্টিয়ান যুগ' (Augustian Age of Russian literature) বলা হয়। রুশি সাহিত্যে একটি গোষ্ঠী ফরাসি সাহিত্যের অনুকরণে সাহিত্য রচনার চেষ্টা করেন। তুর্গেনিভ, বাকুনিন, হার্জেন প্রমুখ ছিলেন এই গোষ্ঠীর লেখক। অপর গোষ্ঠী ছিল স্লাভবাদী। রাশিয়ার জাতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আশ্রয় করে এই গোষ্ঠী সাহিত্য রচনা করেন। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক দস্তয়েভস্কি, পুশকিন, গোগোল প্রমুখ ছিলেন এই গোষ্ঠীর লোক। রোমান দেবতা জানুসের (Janus) যেমন দুটি মস্তক ছিল, নিকোলাসের যুগের রুশি সাহিত্য তেমনই পাশ্চাত্যবাদী ও জাতীয়তাবাদী এই দুই শাখায় পল্লবিত হয়।
৫. নিকোলাসের জাতীয়তাবাদ
জার নিকোলাস স্বৈরাচারী হলেও ঘোর জাতীয়তাবাদী ছিলেন। তিনি জাতীয়তাবাদী সাহিত্য রচনার দৃঢ় সমর্থন করেন। এমনকি রাশিয়ায় বসবাসকারী অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের তিনি রুশীকরণের জন্য বিশেষ চেষ্টা করেন। তিনি ঘোর রক্ষণশীল হলেও রাশিয়ায় শিল্প বিস্তারের কাজে মনোযোগ দেন। ক্ষুদ্রশিল্পের উৎপাদন তাঁর রাজত্বকালে ৭ গুণ বৃদ্ধি পায়। সুতি বস্ত্র এবং চিনিশিল্পের উৎপাদন বিশেষ বাড়ে। যাহোক, জার প্রথম নিকোলাসের স্বৈরশাসনে রুশ জনগণ বিশেষভাবে দমিত হয়। ১৮৫৫ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটলে লোকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
ঊনবিংশ শতকের রাশিয়া
ii. জার প্রথম নিকোলাসের বৈদেশিক নীতি
১. ইউরোপে রক্ষণশীলতার প্রতি সমর্থন
৩১
জার প্রথম নিকোলাস ছিলেন ঘোর রক্ষণশীল ও সাম্রাজ্যবাদী। তাঁর বৈদেশিক নীতিতে উপরোক্ত ভাবধারার ছাপ দেখা যায়। তিনি মেটারনিকের ন্যায় ইউরোপীয় বক্ষণশীলতার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিলেন। ১৮১৫ সালে ভিয়েনা সন্ধির দ্বারা গঠিত ইউরোপের স্থিতাবস্থাকে রক্ষা করার জন্য তিনি চেষ্টা করেন। ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের প্রভাবে পোল্যান্ডে জাতীয় বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি তা কঠোর হাতে দমন করেন। তিনি পোলদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার নাকচ করেন। পোল্যান্ডে রুশীকরণ নীতিকে বলবৎ করেন। ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের তরঙ্গ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়ালে রক্ষণশীল নিকোলাস বিশেষ চিন্তিত হন। অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্যে এই বিপ্লব দমনের জন্য জার নিকোলাস হ্যাপসবার্গ সম্রাটকে তাঁর সামরিক সহায়তা দেন। রুশ বাহিনী হাঙ্গেরির বিদ্রোহ দমন করে এই দেশে হ্যাপসবার্গ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। প্রাশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডারিক উইলিয়াম যাতে জার্মানির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন না করেন এজন্য নিকোলাস তাঁর উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেন। মোট কথা, মেটারনিকের পতনের পর ইউরোপে রক্ষণশীল ব্যবস্থার প্রধান পুরোহিত হিসেবে জার নিকোলাস তাঁর ভূমিকা পালন করেন ।
২. গ্রিসের বিদ্রোহ : জারের ভূমিকা
সাম্রাজ্যবাদী নিকোলোস তুরস্কের রাজ্য গ্রাস করে রুশ সাম্রাজ্য ও প্রতিপত্তি বাড়াবার চেষ্টা করেন। তুরস্কের বিরুদ্ধে গ্রিস দেশে বিদ্রোহ দেখা দিলে জার প্রথম নিকোলাস হস্তক্ষেপের জন্য উদ্যত হন। নাভারিনোর যুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হলে জার প্রথম নিকোলাস তুরস্কের উপর অ্যাড্রিয়ানোপলের সন্ধি (১৮২৩ সালে) চাপিয়ে দেন । এই সন্ধির দ্বারা গ্রিসের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয় এবং গ্রিস পরোক্ষভাবে রাশিয়ার আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। ইংল্যান্ডে এই সন্ধির বিরোধিতা করে লন্ডনের সন্ধির দ্বারা গ্রিসের উপর রুশ প্রভাব নাশ করা হয়।
৩. উনকিয়ার স্কেলেসির সন্ধি
গ্রিসে বিদ্রোহ দেখা দিলে তা দমন করার জন্য তুর্কি সুলতান তাঁর সামন্ত মিশরের শাসনকর্তা মোহাম্মদ আলির সহায়তা নেন। এই সাহায্যের বিনিময়ে মোহাম্মদ আলি সিরিয়া অধিকার করেন এবং তাঁর প্রভু তুরস্কের সুলতানের রাজ্যের অপর অঞ্চল ও অধিকার করতে উদ্যত হন। বিদ্রোহী সামন্ত মোহাম্মদ আলিকে দমন করার জন্য তুর্কি সুলতান রাশিয়ার সাহায্য নেন। এই সাহায্যের বিনিময়ে জার নিকোলাস উনকিয়ার

(Unkair Skelessi) সন্ধির (১৮৩২ সাল) দ্বারা দার্দানেলিস প্রণালিতে শে জাহাজ চলাচলের অধিকার লাভ করেন। এই সন্ধির দ্বারা দার্দানেলিস দয়ে রাশিয়া ছাড়া অন্য দেশের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ হলে কৃষ্ণ সমুদ্র রুশ রিণত হয়।
৪. ইংল্যান্ডের বিরোধিতা ক্রিমিয়ার যুদ্ধ
তুরস্কের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এই আগ্রাসন নীতির, ইংল্যান্ড ঘোর বিরোধিতা করে। ণ ইংল্যান্ড মনে করতো যে, বলকানে রুশ আধিপত্য স্থাপিত হলে ইংল্যান্ডের স্বার্থ পন্ন হবে। এজন্য ইংল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে। মতাবস্থায় জার নিকোলাস ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে তুরস্কের সাম্রাজ্য ব্যবচ্ছেদের জন্য প্রস্তাব দিলেও ইংল্যান্ড তাতে কর্ণপাত করেনি। এদিকে যিশুখ্রিষ্টের জন্মস্থানে অবস্থিত পবিত্র গ্রোটোর গির্জার চাবির অধিকার নিয়ে ক্যাথলিক গির্জার সঙ্গে অর্থোডক্স গ্রিক গির্জার বিরোধ বাঁধে। নিকোলাস শেষোক্ত গির্জার পক্ষ নেন এবং ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন ক্যাথলিক গির্জার পক্ষ নেন। এই উপলক্ষ্যে তুরস্কের সঙ্গে জার নিকোলাসের যুদ্ধ বাঁধলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তুরস্কের পক্ষ নেয়। এই দুই শক্তি ক্রিমিয়ার যুদ্ধে যোগ দেয় ৷
৫. প্যারিসের সন্ধি : নিকোলাসের হতাশা
ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় হয়। প্যারিসের সন্ধির (১৮৫৬ সাল) দ্বারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। বিজয়ী শক্তিবর্গ এই সন্ধিতে তুরস্কের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে রুশ আক্রমণ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন শর্ত যোগ করে। রাশিয়া বেসারাবিয়া প্রদেশ তুরস্ককে ফেরত দেয়। মোলদাভিয়া ও ওয়ালেচিয়া অঞ্চল থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করতে হয়। দার্দানেলিস প্রণালির পথে রুশ যুদ্ধ জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ হয়। কৃষ্ণ সাগরের তীরে রাশিয়ার নৌঘাঁটি নির্মাণ নিষিদ্ধ হয়। মোট কথা, তুরস্কের ব্যবচ্ছেদ সম্পর্কে রুশ পরিকল্পনা প্যারিসের সন্ধির দ্বারা বিনষ্ট হয়। রাশিয়ার সামরিক মর্যাদা ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তির ক্ষতি হয়। রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে জার নিকোলাসের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক রুশরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। জার স্বয়ং এই পরাজয়ের ফলে দারুণ হতাশ হন। তিনি বুঝতে পারেন যে, রাশিয়ার মধ্যযুগীয় সমাজ এবং ভূমিদাস সেনা দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় সম্ভব হবে না। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে ভূমিদাস প্রথা সংস্কারের আবশ্যকতা বুঝিয়ে বলেন। ইতোমধ্যে ১৮৫৫ সালে জার নিকোলাসের মৃত্যু হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]