ঊনবিংশ শতকের প্রাক্কালে রাশিয়ার সার্বিক অবস্থা জার পিটার ও জারিনা ক্যাথারিনের আমলে রাশিয়া

ঊনবিংশ শতকের রাশিয়া
Nineteenth Century Russia
ঊনবিংশ শতকের (১৮০০-১৮৯৯) সাল পর্যন্ত ১০০ বছরের রাশিয়ার ইতিহাস পরিক্রমা তুলে ধরা হলো। ঊনবিংশ শতকের প্রাক্কালে রাশিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি, জার ১ম আলেকজান্ডার (১৮০১-১৮২৮), জার ১ম নিকোলাস (১৮২৮-১৮৫৫), জার ২য় আলেকজান্ডার (১৮৫৫-১৮৮১), জার ৩য় আলেকজান্ডার (১৮৮১-১৮৯৪) ও জার ২য় নিকোলাসের (১৮৯৪-১৯১৭) শাসনামল তুলে ধরা হয়েছে।
ক. ঊনবিংশ শতকের প্রাক্কালে রাশিয়ার সার্বিক অবস্থা
১. জার পিটার ও জারিনা ক্যাথারিনের আমলে রাশিয়া
রাশিয়ার আধুনিক যুগের ইতিহাস রোমানভ বংশের শাসনকালে আরম্ভ হয়। জার পিটার দি গ্রেট বা মহান পিটার (১৬৮২-১৭২৫ সাল) রাশিয়ার আধুনিকীকরণ আরম্ভ করেন। এই কারণে তাঁকে 'আধুনিক রাশিয়ার জনক' বলা হয়। এরপর অষ্টাদশ শতকে জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন (১৭২৬-১৭৯৬ সাল) উদারনৈতিক আভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং বৈদেশিক ক্ষেত্রে রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করে রাশিয়াকে একটি ইউরোপীয় শক্তিতে পরিণত করেন। নেপোলিয়নের আমলে রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডার (১৮০১-১৮২৫ সাল) নেপোলিয়নকে মস্কোর যুদ্ধে পরাস্ত করে ইউরোপে বিরাট খ্যাতি লাভ করেন। রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডার বিরাট জনপ্রিয়তা এবং ক্ষমতা নিয়ে ভিয়েনা সম্মেলনে যোগ দেন। রাশিয়ার জনবল, বিরাট ভৌগোলিক সীমানা এবং স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, ইউরোপীয় শক্তিগুলোর ঈর্ষার উদ্রেক করে। ভিয়েনা সম্মেলনের পর ইউরোপের রক্ষণশীল শক্তিগুলোর প্রধান স্তম্ভ হিসেবে রাশিয়া পবিত্র চুক্তি (Holy Alliance) ঘোষণা করে। এভাবে রাশিয়া ইউরোপের শক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তিরূপে পরিগণিত হয় ।
২. রাশিয়ার জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মমত
ঊনবিংশ শতকের প্রাক্কালে রাশিয়ার সমাজব্যবস্থা ছিল মধ্যযুগীয়। রাশিয়ার জনসংখ্যার মধ্যে ইউরোপীয় ও এশীয় জাতিগোষ্ঠীর লোক ছিল। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী ছিল স্লাভ (Slav) গোষ্ঠীর লোক। তাতার বা তুর্কি, মোঙ্গোল, পোল, ইউক্রেনীয় প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীর লোকও রাশিয়াতে বসবাস করতো। রাশিয়ার জনগণের প্রধান ধর্মমত ছিল অর্থোডক্স গ্রিক খ্রিষ্টধর্ম। পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশও একই ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়ার্ক ছিলেন এই সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু। রুশ জারেরা এই গির্জাকে তাঁদের স্বৈরতন্ত্র স্থাপনের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। গির্জা রুশ জনসাধারণকে শিক্ষা দিত যে, জার ছিলেন ঈশ্বরের আদিষ্ট পুরুষ তাঁর বিরোধিতা করার অর্থ ছিল ঈশ্বরের বিরোধিতা। গির্জার প্রচারের ফলে সাধারণ লোকের মধ্যে জারের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ইচ্ছা নষ্ট হয়। রাশিয়ার সাম্রাজ্যে বসবাসকারী তুর্কি ও মোঙ্গল প্রভৃতিরা ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
৩. অভিজাত শ্রেণি
রাশিয়া ছিল মূলত এক বিরাটকায় অনগ্রসর দেশ। ঊনবিংশ শতকের প্রাক্কালে রাশিয়ার সমাজ ছিল প্রধানত দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত, যথা : অভিজাত ও কৃষক সম্প্রদায়। রাশিয়াতে ১,৪০,০০০ অভিজাত পরিবার ছিল। অভিজাতদের অধীনে বিরাট জমিদারি, ম্যানর এবং বহু সার্ফ বা ভূমিদাস ছিল। অভিজাত শ্রেণি বংশানুক্রমিকভাবে জমিদারির স্বত্ব ভোগ করতো। এই অভিজাতরা তাদের বংশমর্যাদার জন্য বিশেষ গর্বিত ছিল। অভিজাত বংশীয়দের অধিকাংশ লোক সরকারের সামরিক ও অসামরিক পদে কাজ করতো।
ঊনবিংশ শতকের রাশিয়া
৪. মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনুপস্থিতি
ঊনবিংশ শতকের প্রাক্কালে রাশিয়ায় বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয়নি। বাশিয়া ছিল এক কৃষিপ্রধান দেশ। শিল্প গঠন ও নগর গঠন না হওয়ার ফলে রাশিয়াতে । সেটন বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব হয়নি। রাশিয়ার অধিকাংশ লোক ছিল কৃষিজীবী। ওয়াটসন নামক ঐতিহাসিকের মতে, রাশিয়ার অধিবাসীরা প্রধানত ভূমিদাস ও স্বাধীন এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। কৃষকদের চাষের জমিগুলো ছিল খুবই ছোট। এই কৃষক জমির উৎপাদন এত কম হতো যে, ক্ষুদ্র কৃষকরা অনেক ক্ষেত্রে নিজ নিজ জমি বড় মালিককে লিজ দিয়ে সেই মালিকের খামারে দিনমজুর হিসেবে জীবিকানির্বাহ করতো। রাশিয়ার কৃষকরা ছিল মোট জনসংখ্যার ৯৪.৫% ভাগ ।
৫. সার্ফ ও ভূমিদাস শ্রেণি
রাশিয়ার বেশির ভাগ কৃষক ছিল সার্ফ বা ভূমিদাস শ্রেণির অন্তর্গত। ষোড়শ শতক থেকে রাশিয়ার সার্ফ বা ভূমিদাস প্রথার চলন হয়। দ্বিতীয় ক্যাথারিনের আমলে রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে সার্ফ প্রথার চলন হয়। ভূমিদাসদের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। ম্যানর প্রথা অনুসারে এরা জমিদারদের জমির একখণ্ড চাষ করতো। এর বিনিময়ে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এদের জমিদারদের জমিতে বিনা পারিশ্রমিকে চাষাবাদের কাজ করতে হতো। এছাড়া এরা কর্ভি বা বেগারের কাজ করতে বাধ্য ছিল। বাঁধ নির্মাণ, খাল খনন বা পুল নির্মাণের জন্য এদের বিনা পারিশ্রমিকে বাধ্যতামূলক শ্রমদান করতে হতো। এরা জমিদারকে নানাপ্রকার কর ও শ্রম দিত। এরা গির্জাকে ধর্ম কর বা টাইদ (Tithe) দিত। রাশিয়ার আইনে সার্ফ বা ভূমিদাসরা ছিল জমিদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। গৃহপালিত পশুর মতোই ভূমিদাসদের গণ্য করা হতো। কারণ আইনে ভূমিদাসদের কোনো অধিকার স্বীকার করা হতো না। তারা ছিল আইনের চোখে নির্জীব পদার্থ মাত্র। ভূমিদাস পরিবারে লোকসংখ্যা বাড়লে এদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাজারে বিক্রি করা হতো। দৈহিক নির্যাতন ভূমিদাসদের রাষ্ট্র রক্ষা করলেও তাদের রক্ষায় রাষ্ট্র এগিয়ে আসত না। বিদ্রোহী ভূমিদাসদের শাস্তিস্বরূপ নির্বাসনে পাঠান হতো। রাশিয়ার আদালতে ভূমিদাসদের মামলা দ্বারা অধিকার রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। ভূমিদাসদের ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। ম্যানর কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে তারা ম্যানর ত্যাগ করে অন্যত্র যেতে পারত না। রুশ সার্ফ বা ভূমিদাসদের জীবন ছিল মার্কিন দেশের তুলা খামারের ক্রীতদাসদের মতো। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের জন্য তারা মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করতো। ১৮২৬-১৮৫৪ সালের মধ্যে রাশিয়ায় ৭১২টি ভূমিদাস ও কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। ভূমিদাসদের মুক্তির জন্য ১৮৬১ সালের আগে জার সরকার কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি।
৬. অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা
রাশিয়ার অর্থনীতি ছিল কৃষিভিত্তিক। ডেভিড ল্যান্ডস ও গারশেনক্রন নামক প্রখ্যাত অর্থনৈতিক ঐতিহাসিকদের মতে, সামন্তপ্রথার প্রভাবে রাশিয়াতে লোকে কায়িক পরিশ্রমের কাজকে নীচু চোখে দেখত। ফ্রান্সের ন্যায় রাশিয়ার লোকে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যকে হীন কাজ মনে করতো। ফলে বাণিজ্য ও শিল্পে ইংল্যান্ড সহ অন্যান্য
দেশ অপেক্ষা রাশিয়া অনেক পেছনে পড়েছিল। ধনবণ্টন না হওয়ায় সমাজে মুষ্টিমেয় ধনী অভিজাত এবং বাকি দরিদ্র চাষি নিয়ে রাশিয়ার সমাজ গঠিত ছিল। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে যেরূপ ধনী বুর্জোয়া ও নিম্ন মধ্যবিত্ত বা পাতি বুর্জোয়া ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির উদ্ভব হয় রাশিয়ায় তা হয়নি।
৭. শিল্প ব্যবস্থা
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে রুশ জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন, জার্মানির সহযোগিতায় রাশিয়ায় কিছু কিছু শিল্প স্থাপনের চেষ্টা করেন। ফলে উরাল (Urall) ও রোস্টোভ অঞ্চলে দু একটি শিল্পের কেন্দ্র স্থাপিত হয়। অষ্টাদশ শতকে রাশিয়ায় কয়লা ও তেল উৎপাদনের চেষ্টাও আরম্ভ হয়। শিল্পকে কৃষির বিকল্প হিসেবে স্থাপন করার কোনো প্রচেষ্টা এই সময় দেখা যায়নি।
৮. জারের স্বৈরতন্ত্র
আগেই বলা হয়েছে যে, জারের অধীনে রাশিয়ায় এক স্বৈরতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। জার ও তাঁর সৈন্যবাহিনী এবং তাঁর অনুগামী অভিজাতরাই ছিলেন শাসনব্যবস্থার প্রধান কাঠামো। ডুমা (Duma) বা জাতীয় পার্লামেন্ট নামক একটি সংসদ থাকলেও তার অধিবেশন জারের ইচ্ছামতো আহূত হতো। ডুমা বা জাতীয় পরিষদের সদস্যরা ছিল অভিজাত শ্রেণির লোক। সর্বসাধারণের ভোটে গণতান্ত্রিক প্রথায় ডুমার সদস্যরা নির্বাচিত হতো না। রাশিয়ার শাসনব্যবস্থা ছিল প্রধানত অভিজাত কর্মচারীদের কুক্ষিগত। ব্যক্তিগত যোগ্যতার কোনো সমাদর ছিল না। বংশমর্যাদাই ছিল স্বীকৃতির মাপকাঠি। সরকারি কর্মচারীরা ছিল দুর্নীতিপরায়ণ। এই যুগের রুশ ঐতিহাসিক ওয়ালেসের মতে, “সকল ব্যবস্থাই ছিল দুর্নীতিপূর্ণ; সকল কিছুই ছিল অবিচারমূলক এবং অসৎ।” বিচারকেরা উৎকোচ গ্রহণ করতে দ্বিধা করতো না; রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীরা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করতো। সমাজের নীচু তলার লোকেদের ভাগ্য ছিল অন্ধকারময়।
৯. উদারতন্ত্রবাদের প্রসার
ঊনবিংশ শতকের রাশিয়ায় এই হতাশাময় চিত্রের মধ্যেও পরিবর্তনের স্রোত দেখা দেয়। রুশ জনগণ ছিল স্বভাবতই স্বদেশপ্রেমী। অভিজাত, কৃষক সকলেই স্বদেশকে ভালোবাসত। রুশ অভিজাতদের মধ্যে একাংশ যারা সামরিক বিভাগে যোগ দিয়ে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেয়, তারা পশ্চিম ইউরোপে এসে উদারনৈতিক ভাবধারায় দীক্ষিত হয়। পশ্চিম ইউরোপের উদারনৈতিক শাসনব্যবস্থার সঙ্গে জারের স্বৈরতন্ত্রের তুলনা করে তারা রাশিয়ায় সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য কামনা করে। টলস্টয়ের ভুবন বিখ্যাত রচনা 'ওয়্যার এন্ড পিস' (War and Peace) নামক উপন্যাসে দেখা যায় যে, রুশ অভিজাতদের একাংশ ফরাসি বিপ্লব উদ্ভূত , উদারতন্ত্রবাদের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। তাঁর 'রিসারেকসান' উপন্যাসেও উদারপন্থি অভিজাতের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এই সকল উদারপন্থিদের ধারণা ছিল যে, রাশিয়ায় স্বৈরশাসনের পরিবর্তন না ঘটলে রাশিয়ার আধুনিকীকরণ সম্ভব হবে না। ১৮২৫ সালে ডেকাব্রিস্ট বা ডিসেম্ব্রিস্ট বিদ্রোহের মাধ্যমে বিপ্লবী ভাবধারার প্রথম স্ফুরণ ঘটে।
ভরীণ শাসন নীতি ও সংস্কার রতন্ত্রবাদের প্রতি অনুরাগ
এর পর তাঁর পুত্র প্রথম পল কিছুকাল জার | জনৈক রুশ সেনাপতির দ্বারা নিহত হলে তাঁর | রোমানভ বংশের উত্তরাধিকারী হিসেবে জারের লেকজান্ডারের গৃহশিক্ষক ছিলেন উদারতান্ত্রিক র প্রভাবে আলেকজান্ডারের মনে উদারতন্ত্রের প্রতি রা ছিলেন স্বভাবতই স্বৈরশাসক। সুতরাং প্রথম ত হলেও তাঁর শাসনব্যবস্থায় এর প্রভাব গভীর ছিল নীতিতে কিছু কিছু উদারনীতির পরিচয় দেন। ১৮১৮ ত্যাগ করে পুরোপুরি স্বৈরতন্ত্রকে অনুসরণ করেন। মাশীলতা
রের চরিত্রে ছিল একটি স্ববিরোধিতা। তিনি উদারতন্ত্রে বাসননীতিতে এই নীতিকে প্রয়োগ করতে পারেননি। লা াের অনুরাগী হলেও, কিছুকাল পরে ফন ক্রুডেনার নামে বে তিনি গির্জার অধিকার নীতিকে আঁকড়ে ধরেন। জারের তার দরুন তিনি কার্যকরীভাবে কোনো একটি বিশেষ নীতি
৩. উদারতান্ত্রিক সংস্কার
১৮০১ সালের পর জার কিছুকাল শাসনব্যবস্থায় উদারনৈতিক হাওয়া বইয়ে দেন। এজন্য তিনি ‘উদারনৈতিক জার' (Liberal Czar) হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। (১) তিনি রাশিয়াতে গুপ্ত ও দমনমূলক পুলিশ বাহিনীকে লোপ করেন। (২) বৈদেশিক ভ্রমণ এবং বৈদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের জন্য তিনি রুশ ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের অনুমতি দেন। (৩) শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিক্ষক-শিক্ষণ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। (৪) মস্কো, ভিলনা এবং ডোরনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি সাধন করা হয়। (৫) সেন্ট পিটার্সবার্গ, কাজান ও খারকোভে তিনি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। (৬) তিনি দুর্ভিক্ষ পীড়িত রুশ কৃষকদের সাহায্যের জন্য দুর্ভিক্ষ ত্রাণ নীতি গ্রহণ করেন। (৭) রুশ কারাগার, হাসপাতালগুলির উন্নতির জন্য তিনি বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেন।
৪. ভূমিদাস প্রথা সংস্কারে অনাগ্রহ
রাশিয়ার প্রধান সামাজিক সমস্যা ছিল সার্ফ বা ভূমিদাসদের সমস্যা। জার প্রথম আলেকজান্ডার ভূমিদাসদের স্বার্থরক্ষার জন্য আইন রচনার উপযোগিতা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি এই উদ্দেশ্যে কোনো মৌলিক আইন প্রণয়ন করতে বিরত থাকেন। তিনি আশঙ্কা করতেন যে, ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ঘটালে রাশিয়ার জারতন্ত্র ভেঙে পড়বে। জারতন্ত্র ছিল অভিজাতদের উপর নির্ভরশীল। ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ঘটলে অভিজাতরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং জারতন্ত্র ভেঙে পড়বে। ভূমিদাসদের দৈহিক নির্যাতন তিনি আইন করে বন্ধ করেন। তিনি আইন করে ভূমিদাসদের নির্বাসনে পাঠান। ভূমিদাসদের পণ্যসামগ্রীর মতো বাজারে বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়।
৫. সংবিধান সংস্কার
জার প্রথম আলেকজান্ডার, সংবিধান সংশোধনের জন্য, সুপারিশ রচনার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি নিয়োগ করেন। এই কমিটি সরকারের ক্ষমতার বিভাজন, ব্যক্তিস্বাধীনতা স্থাপন প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে একটি খসড়া রচনা করে। কিন্তু জার সংবিধান সংশোধনে প্রকৃত আগ্রহী ছিলেন না। তিনি এই খসড়াকে অকার্যকরী করেন। তিনি পোল্যান্ডে একটি সংবিধান প্রবর্তন করে পোলদের স্বায়ত্তশাসন দান করেন। পোলদের জাতীয় পরিষদ বা ডায়েটকে বাজেট পাস ও আইন রচনার অধিকার দেন। পোলদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং জাতীয় ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।
৬. রক্ষণশীল নীতিতে প্রত্যাবর্তন
জার প্রথম আলেকজান্ডার তাঁর শাসননীতিতে কিছুকাল উদারতন্ত্র অবলম্বন করলেও ক্রমে তিনি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ভিয়েনা কংগ্রেসে এবং ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ে মেটারনিকের সঙ্গে তিনি মিলিত হন। মেটারনিকের প্রভাবে তাঁর মধ্যে রক্ষণশীল চিন্তা জাগ্রত হয়। পোলরা স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেলেও তাতে শান্ত না হয়ে স্বাধীনতা দাবি করলে জার উদারনীতির পথ পরিত্যাগ করেন। তিনি পোল জাতিকে প্রদত্ত সংবিধানে বহু অধিকার নাকচ করেন। ১৮১৮ সালের পর জার উদারতন্ত্রের পথ ত্যাগ করে পুরোপুরি রক্ষণশীলতার নীতি গ্রহণ করেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]