জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারের বিবরণ দাও। সংস্কারগুলোর তাৎপর্য কী ছিল?

২য় আলেকজান্ডারের (১৮৫৫-১৮৮১) শাসনামল
২য় আলেকজান্ডার
দ্বতীয় আলেকজান্ডারের অভ্যন্তরীণ শাসন সংস্কার নীতি এবং কৃতিত্ব বিচার আলেকজান্ডারের উদারতন্ত্রীবাদ
রাশিয়ার ইতিহাসে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের রাজত্বকালকে একটি বলা যায়। ঐতিহাসিক সেটন ওয়াটসনের (Seton Watson) মতে, জার সরকারের পরাজয়ের ফলে রুশ রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে পচনশীল অবস্থা জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার শাসন সংস্কারের প্রলেপ দ্বারা সেই ক্ষত । আন্তরিক চেষ্টা করেন। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ছিলেন মানবতাবাদী ক শাসক। তাঁর পিতা নিকোলাসের শাসনকালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার ন তিনি ভুলতে পারেননি। স্বৈরাচারী ও হৃদয়হীন শাসনব্যবস্থা এবং রাশিয়ার জাতীয় জীবনে অবক্ষয় সৃষ্টি করেছিল একথা তিনি বুঝতে য়ার যুদ্ধের সময় রাশিয়ার শিল্প ও কারিগরি ক্ষেত্রে অনগ্রসরতা ধরা ত্র ইঙ্গ-ফরাসি সেনার রাইফেলের পাল্লা ছিল ১২ শত পেস, সেক্ষেত্রে
রুশ সেনার রাইফেলের পাল্লা ছিল মাত্র ৩৫০-৪০০ পেস। বিজ্ঞানীরা বলেন যে রাশিয়ার পিছিয়ে পড়া সমাজ, জনসাধারণের নিরক্ষরতা এবং ভূমিদাস প্রথার জনা রাশিয়ায় আধুনিক শিল্প গঠনের পরিবেশ নেই। সমকালিক যুগে পশ্চিম ইউরোপে জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল। মরুভূমিতে বালুর ঝড়ের সময় উটপাখি যেরূপ বালুর স্তূপে মুখ লুকিয়ে আত্মরক্ষার বৃথা চেষ্টা করে, সেরূপ এই পরিবর্তনশীল যুগে রাশিয়া রক্ষণশীলতা ও স্বৈরতন্ত্রের কবচ ধারণ করে রক্ষা পাবে না একথা তিনি বুঝতে পারেন। জারের স্বৈরতন্ত্রকে সহনীয় করতে হলে কিঞ্চিৎ উদারনৈতিক সংস্কার প্রবর্তন করতে হবে এই বাস্তব বুদ্ধির তিনি পরিচয় দেন। তিনি একদা মন্তব্য করেন যে “আমরা যে যুগে বাস করছি, সেই যুগের মর্মকথা বুঝে যদি আমরা উপর থেকে সংস্কারের চেষ্টা না করি, তবে নীচতলার লোকেরাই উপরের লোকদের উপর সংস্কার চাপিয়ে দেবে। নীচতলা থেকে সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়া অপেক্ষা, উপর থেরে সংস্কার করা ভালো ।
২. দমননীতি প্রত্যাহার
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার প্রথমে তাঁর পূর্ববর্তী জারের আমলের দমননীতিকে রদ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি ডেকাব্রিস্ট বিদ্রোহীদের নির্বাসন দণ্ড মুকুব করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর নিয়ন্ত্রণ রহিত করেন। থার্ড সেকসন নামক গুপ্ত অত্যাচারী পুলিশ বাহিনীকে লোপ করা হয়। বোর্ড অব সেন্সর বা সেন্সর দপ্তরের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। সংবাদপত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা হয়। এইভাবে উদারনৈতিক নীতি অনুসরণ করে দ্বিতীয় আলেকজান্ডার জনসাধারণের শ্রদ্ধা পান ।
৩. ভূমিদাস প্রথার বিলোপ ১৮৬১ সাল
জার দ্বিতীয় আরেকজান্ডারের প্রধান এবং গভীর মূল সংস্কার ছিল ভূমিদাস প্রথার বিলোপ। ভূমিদাস প্রথার ত্রুটি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদরা সরকারবে বহুদিন ধরে সচেতন করেন। মার্কসবাদী ঐতিহাসিকদের মতে, রাশিয়ার উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণি ও খেত মালিকরা বুঝতে পারে যে, ভূমিদাস মজুর অপেক্ষা নগদ বেতনের স্বাধীন মজুরদের দ্বারা খেতে ও কারখানায় উৎপাদন অনেক বেশি বাড়ে । জায় নিজেও একথা বোঝেন যে নিরক্ষর, উদ্যমহীন ভূমিদাস মজুর, দক্ষ মজুরের তুলনায় অত্যন্ত কম উৎপাদন করে। বড় থেকে ছোট সকল জমিদার বুঝতে পারে যে ভূমিদাস প্রথা লাভজনক ছিল না। নগদ বেতনের শ্রমিক উদ্যমহীন, নেতিয়ে পড়া, হতাশাজনক ভূমিদাসদের চেয়ে অনেক বেশি কর্মঠ। ছোটখাট জমিদাররা বুঝেছিল যে, তাঁদের জমির অর্ধাংশ ভূমিদাসদের ছেড়ে দিয়ে বাকি অর্ধাংশ চাষের জন্য ভূমিদাসরা যে শ্র দেয় তা মোটেই লাভজনক নয়। এইভাবে ঊনবিংশ শতকের গোড়া থেকেই ভূমিদাস প্রথা যে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক নয়, সেই ধারণা গড়ে উঠেছিল। জা নিকোলাসের আমল থেকে রাশিয়ায় ক্ষুদ্র শিল্পের গঠন শুরু হয়। উত্তর রাশিয়ার ভূস্বামীরা তাদের শিল্পকারখানায় ভূমিদাস মজুর খাটাত। কিন্তু শিল্প শ্রমিক হিসেবে ভূমিদাসরা ছিল ভয়ানক অদক্ষ ও অলাভজনক। রাশিয়ায় বড় শিল্প গঠনের জন
চিন্তাভাবনা শুরু হলে, প্রশ্ন দেখা দেয় যে শিল্পে শ্রমিক সরবরাহ কীভাবে হয়? যেহেতু রাশিয়ার অন্তত ৫০% বেশি লোক হলো ভূমিদাস এবং ভূমিদাস হিসেবে তারা মালিকের জমির সঙ্গে বাঁধা ছিল, সেহেতু শিল্পে শ্রমিক সরবরাহ কীভাবে হবে এই প্রশ্ন দেখা দেয়। তাছাড়া শিল্প শ্রমিক হিসেবে ভূমিদাসরা ছিল অনুপযুক্ত। যদি তাদের ভূমিদাস প্রথা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, তবেই তারা নিজেদের পুরোপুরি শিল্প-শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করে, দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। মোট কথা, স্থানীয় দক্ষ শিল্প শ্রমিকের সরবরাহ পেতে হলে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ছিল একটি আবশ্যিক শর্ত।
রাশিয়াতে মুদ্রা অর্থনীতির চালু হওয়ার ফলে ধনী ভূস্বামীরা তাদের খামারে প্রচুর ফলন ঘটিয়ে, উদ্বৃত্ত শস্য রপ্তানি করে পুঁজি জোগাড় করতে চাইত। এই ধরনের বাজারভিত্তিক উৎপাদনের কাছে ভূমিদাসদের শ্রম লাভজনক ছিল না। এজন্য রাশিয়াতে অর্থনৈতিক নিয়মেই ভূমিদাস প্রথা ক্ষয় পাচ্ছিল। ক্ষয় পাচ্ছিল। জার প্রথম আলেকজান্ডারের আমলে রুশ জনসংখ্যার ৫৮% ছিল ভূমিদাস। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের আমলে ৪৪.৫% জনসংখ্যা ছিল ভূমিদাস। সামাজিক দিক থেকেও ভূমিদাস প্রথা সামাজিক অসন্তোষ, শ্রেণিবিরোধ ও তিক্ততা সৃষ্টি করে। রুশি আইনে ভূমিদাসরা ছিল আসলে ভূস্বামীর দাস মাত্র। জার প্রথম আলেকজান্ডারের আগে তাদের মালিকের গৃহপালিত পশুর মতোই গণ্য করা হতো। ইচ্ছামতো দৈহিক শাস্তি, অতিরিক্ত বেগার খাটানো, পরিবারের লোকেদের ইচ্ছামতো বিচ্ছিন্ন করে বিক্রি করা, খনি ও কারখানায় ভাড়া কাটানো হতো। জার প্রথম আলেকজান্ডার আইন করে এই সকল শোষণ নীতি রদ করলেও, ভূমিদাসদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হয়নি। ১৮৬০ সাল পর্যন্ত রুশি রদ করলেও, ভূমিদাসদের আইনের চোখে কোনো স্বীকৃতি ছিল না। আইনের চোখে তখনও তারা ছিল নির্জীব পদার্থ (Thing)। এজন্য সমাজে তিক্ততা ও বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। ঘন ঘন ভূমিদাস ও কৃষক বিদ্রোহ দ্বারা ভূমিদাস শ্রেণি তাদের অসন্তোষ জানাতে থাকে ।
রাশিয়ায় ঘন ঘন ভূমিদাস বিদ্রোহের ফলে রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক শান্তি বিপন্ন হয়। সরকারি হিসেব মত ১৮০১ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত ৬০ বছরে রাশিয়ায় ৫৫০টি কৃষক বিদ্রোহ ঘটেছিল। অপর একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে ১৪৬৭টি কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। রুশ ইতিহাসের গবেষক লাওনেল কোচান অবশ্য সরকারি পরিসংখ্যানটাই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করেন। জারের প্রতি অনুগত সেনাদল এবং কসাক অশ্বারোহী সেনার বেত্র ও ধারালো অসির আঘাতে কৃষক বিদ্রোহগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তথাপি ঘন ঘন কৃষক বিদ্রোহ এমন একটি বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে, জার ও তাঁর ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতারা বোঝেন যে অবিলম্বে কোনো সুদূরপ্রসারী স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে রাশিয়াতে স্থিতাবস্থা ও স্বৈরশাসন ব্যবস্থা ধসে পড়তে পারে। সাহিত্যিক তুর্গেনিভ ও পুশকিন প্রভৃতি ভূমিদাসদের সমর্থনে কলম ধরায়, বুদ্ধিজীবীরা এই প্রথার অবলুপ্তিতে কাম্য মনে করে।
জারের ভূমিদাস উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যেটুকু দ্বিধা ছিল তা ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার শোচনীয় পরাজয় দূর করে দেয়। জার নিকোলাসের মতো রক্ষণশীল f জারও তাঁর মৃত্যুর আগে বুঝে ফেলেন যে, উদ্যমহীন, হতাশাগ্রস্ত ভূমিদাস সেনা নিয়ে আধুনিক যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব নয়। ঐতিহাসিক লিপসনের মতে, তিনি তাঁর উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে বলেন যে, “আমি এখন বৃদ্ধ, আমার পক্ষে সাহসী পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তোমাকেই রাশিয়ার অবস্থার পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে।”
রাশিয়ায় জারের শাসনের প্রধান স্তম্ভ ছিল রুশ অভিজাতকুল। সেহেতু ভূমিদাস উচ্ছেদের ফলে জার তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করেন। তিনি প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮৫৭ সালের ৩ ডিসেম্বর একটি আদেশনামার দ্বারা লিথুয়ানিয়া প্রদেশের সকল সার্ফ বা ভূমিদাসদের মুক্ত বলে ঘোষণা করেন। ইতোমধ্যে তিনি সেনাপতি রোস্টোভস্টেভের নেতৃত্বে একটি কমিটি নিয়োগ করে ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের পরিকল্পনা রচনার কাজ শুরু করেন। এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ১৮৬১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জার ভূমিদাসদের মুক্তির ঘোষণা ( Edict of Emancipation) জারি করেন।
৪. মুক্তির ঘোষণাপত্র
ভূমিদাস মুক্তির ঘোষণাপত্র (১৮৬১ সাল) ৪টি নীতির উপর রচিত হয়, যথা, (১) ভূমিদাসদের স্বাধীন ও মুক্ত নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে; (২) মুক্ত ভূমিদাসদের জীবিকার জন্য জমি দিতে হবে; (৩) সমগ্র ব্যবস্থাটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত হবে; (৪) অভিজাত বা সামন্তদের আর্থিক ক্ষতি না করে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করা হবে। ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ আইনে (১৮৬১ সাল) বলা হয় যে : (১) রাজকীয় জমি ও সামন্ত জমিতে যে সকল ভূমিদাস আছে তারা সকলে এখন থেকে স্বাধীন প্রজার মর্যাদা পাবে। (২) মুক্ত ভূমিদাসদের উপর জমিদারদের আর কোনো অধিকার থাকবে না। তারা রাশিয়ার স্বাধীন নাগরিকের মতো সকল রাজনৈতিক ও অন্যান্য অধিকার ভোগ করতে পারবে। (৩) জমিদারদের জমির প্রায় অর্ধেক মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসদের দেওয়া হবে। অর্থাৎ জমিদারদের যে জমি ভূমিদাসরা জীবিকার জন্য চাষাবাদ করতো, সেই জমি এখন থেকে তারাই স্থায়ী স্বত্বে আবাদ করতে পারবে। এই জমি আবাদ করে কৃষকেরা জীবিকানির্বাহ করবে। (৪) এই জমির জন্য জমিদারেরা ক্ষতিপূরণ পাবে। এই ক্ষতিপূরণের জন্য প্রদেয় অর্থ আপাতত সরকার থেকে জমিদারদের দেওয়া হবে। (৫) কৃষকেরা ৪৯ বছরের কিস্তিতে এই অর্থ সরকারকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। (৬) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অর্থের উপর কৃষকেরা সরকারকে ৬৯% হারে সুদ দিবে।
যদি কোনো কৃষক জমিদারের অর্ধেক জমির বদলে সিকি জমি চায় তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। (৭) কৃষকদের যে জমি দেওয়া হবে তার পরিচালনা এবং মালিকানা গ্রাম পঞ্চায়েৎ বা মির বা কমিউনগুলোর উপর বর্তাবে। কৃষকেরা এই জমি কেবলমাত্র
চাষাবাদ করবে। তারা এই জমি দান করতে পারবে না। (৮) প্রতি গ্রামের গৃহস্থরা মিলে গ্রাম প্রধান বা স্টারকোস্টাকে নির্বাচন করবে। (৯) কয়েকটি কমিউন মিলে ক্যান্টন বা ভোলোস্ট গঠিত হবে। (১০) ক্যান্টন আদালতে জমি সংক্রান্ত বিবাদের বিচার হবে। (১১) জমিদারদের জমির কোন অংশ এবং কতখানি জমি কৃষকেরা পাবে তা স্থির করার দায়িত্ব একটি কমিশনের হাতে দেওয়া হয়। গ্রাম্য মির বা কমিউন সরকারি কর আদায়, সরকারে সেই কর জমা করা, সেনা সংগ্রহ, জমি বণ্টন প্রভৃতির দায়িত্ব বহন করবে।
৫. ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ আইনের ত্রুটি
জার দ্বিতীয় আরেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ আইনের জন্য রুশ জনগণের নিকট ‘মুক্তিদাতা জার' (Czar Liberator) হিসেবে পরিচিত হন। রাশিয়ার আধুনিকীকরণে তাঁর দান অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ আইনের কয়েকটি ত্রুটির জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। (১) জমিদাররা কৃষকদের যে জমি হস্তান্তর করে তার জন্য যে অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে বরাদ্দ করা হয়, তা হস্তান্তরিত জমির ন্যায্য দাম অপেক্ষা অনেক বেশি ছিল। ঐতিহাসিক সেটন ওয়াটসনের (Seton Watson) মতে, দক্ষিণ রাশিয়ার কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে যে জমি কৃষকদের দেওয়া হয় তার মোট ন্যায্য দাম ছিল ২৮৪ মিলিয়ন রুবল। কিন্তু কৃষকেরা এই জমির বাবদ ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোট ৩৪১ মিলিয়ন রুবল দিতে বাধ্য হয়। উত্তর রাশিয়ার হস্তান্তরিত জমির মোট ন্যায্য দাম ছিল ১৮০ মিলিয়ন রুবল। সেই জমির জন্য কৃষকদের দিতে হয় ৩৪০ মিলিয়ন রুবল। এজন্য কৃষকেরা অসন্তুষ্ট হয়। (২) রাশিয়ার অ-কৃষিমৃত্তিকা অঞ্চলে ভূমিদাসরা জমিদারদের জমিতে বেগার চাষ না করে মালিকদের শিল্পকারখানায় কাজ করতো। ভূমিদাস মুক্তি আইন দ্বারা ভূমিদাসরা মুক্ত হলে, এ সকল মালিক দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ তাদের শিল্পগুলোতে বিনা মজুরিতে কাজ করবার লোক ছিল না। অপরদিকে তারা হস্তান্তরিত জমির দরুন যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পায় তার দ্বারা তাদের প্রকৃত ক্ষতিপূরণ হয়নি। (৩) দক্ষিণ রাশিয়ার উর্বরা কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে জমিদাররা ভূমিদাসদের প্রাপ্য জমি হস্তান্তর না করে বেশি জমি ধরে রাখার চেষ্টা করে। এজন্য ১৮৬১ সালের পর দক্ষিণে বার বার কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। মোটামুটিভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্ত কৃষকদের গভীর অসন্তোষের কারণ ছিল। ক্ষতিপূরণের দাবি মেটাতে মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসদের প্রায় গোটা জীবন কেটে যায়। তারা স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করার সুযোগ পায়নি। (৪) ভূমিদাস উচ্ছেদ আইনে মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসদের হাতে জমির মালিকানা স্বত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ এই জমির জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়। জমির স্বত্ব কৃষকদের হাতে না দিয়ে গ্রামীণ কমিউন বা মিরগুলোর হাতে দেওয়ার ফলে কৃষকেরা কমিউনগুলোর দ্বারা নির্যাতিত হয়। আগে জমির মালিকানা ছিল ব্যক্তিগত বা জমিদারদের হাতে, এখন যৌথ মালিকানা বা গ্রামসভার হাতে মালিকানা দেওয়া হয়। জনৈক রুশ ঐতিহাসিকের মতে, জার দ্বিতীয়
আলেকজান্ডারের সংস্কারের ফলে রাশিয়ায় জেন্ট্রি বা জোতদার প্রথা বৃদ্ধি পায়। সাধারণ কৃষকদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সর্বোপরি, জমিদারগণকে প্রদেয় ক্ষতিপূরণের বোঝা তাদের নিকট ভয়ানক কষ্টদায়ক মনে হয়। (৫) তাছাড়া
C ভূমিদাসদের জমি বন্দোবস্ত করার সময় ম্যাজিস্ট্রেট ও গ্রাম সভাগুলি দুর্নীতির আশ্রয় নেয় । ভালো জমিগুলো জমিদারের ভাগে রেখে খারাপ জমিগুলো মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসদের দেওয়া হয়। (৬) ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ের ভার গ্রাম সভাগুলির হাতে দেওয়া হয়। গ্রাম সভাগুলো ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য কৃষকের উপর ভীষণ চাপ দেয় ৷ ভূমিদাস উচ্ছেদ আইনের ফলে জমিদারদের বিশেষ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অর্ধেক জমির মালিকানা তখনও তাদের হাতে ছিল । তাছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদ তাঁরা এককালীন মোটা টাকা পায়। ক্ষতিপূরণের অর্থ জমির ন্যায্য মূল অপেক্ষা বেশিই ছিল। তখনও ৯৫ মিলিয়ন ডেসিয়াটিন জমি জমিদারদের হাতে থেকে যায়। সেই জমিগুলি ছিল উচ্চ ফলনশীল। এজন্য জনৈক জমিদার মন্তব্য করে যে, “আমাদের বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়নি। আগে আমরা শেরি, শ্যাম্পেন খেতাম, কোনো হিসাবপত্র রেখে চলতাম না, এখন ভদকা খাই, হিসাব রেখে চলি।” ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে ভূমিদাসদের অনেক কষ্ট হতো। এই অর্থ পরিশোধ করে তাদের জীবিকানির্বাহ করা ছিল দুষ্কর। পরবর্তীকালে জার সরকার ক্ষতিপূরণের শর্তের ত্রুটি বুঝতে পারেন। ১৯০৫ সালে
যখন ক্ষতিপূরণের শর্ত লোপ করা হয়, তখন ক্ষতিপূরণের – অংশ অর্থ পরিশোধ করা
হয়েছিল। সুতরাং ক্ষতিপূরণের শর্ত লোপ করলে কৃষকদের কোনো লাভ হয়নি। ভূমিদাস উচ্ছেদ আইনের কতকগুলো ত্রুটির জন্য হয়তো বিশেষ জনপ্রিয় হয়নি। কৃষকরা প্রতিবাদে হয়ত বিদ্রোহ করে। তবুও সার্বিক দিক থেকে দেখলে ভূমিদাস উচ্ছেদ আইনকে রাশিয়ার প্রগতি ও আধুনিকীকরণের প্রধান ধাপ বলা যায়। যদিও কোনো কোনো ঐতিহাসিক ভূমিদাস আইনকে জার সরকার ও জমিদার শ্রেণির মিলিত চক্রান্ত বলেন। এই মন্তব্য হতাশাপ্রসূত। ভূমিদাস উচ্ছেদ আইন একদিকে রাশিয়ার ৪৮% লোককে রাজনৈতিক পরিণামে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়। কৃষকের জমির মালিকানা লাভের পথ, শেষ পর্যন্ত প্রস্তুত করে।
৬. স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। (১) স্বায়ত্তশাসন সংস্কার (১৮৬৪ সাল) দ্বারা জার রুশ জনগণের গণতান্ত্রিক ক্ষুধাকে মিটাবার চেষ্টা করেন। তিনি অভিজাত ও কৃষকদের জন্য স্বতন্ত্র সভা লোপ করে সভায় সকল শ্রেণির সদস্য গ্রহণের নিয়ম চালু করেন। (২) সর্বসাধারণের ভোটে জেলা পরিষদের সদস্যদের নির্বাচনের নিয়ম করা হয়। এক্ষেত্রে সর্বসাধারণ বলতে তিন একই শ্রেণির নির্বাচক ছিল যথা : (ক) নগরবাসী; (খ) জমির ব্যক্তিগত মালিকানাযুক্ত কৃষক, (গ) গ্রামীণ কমিউন। জেলা পরিষদ বা ভোলোস্ট (Volost) ছিল স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার
(Zemestvo) সদস্য নির্বাচনের নিয়ম প্রচলন করা হয়। (৪) জেলা পরিষদের প্রথম ধাপ। (৩) জেলা পরিষদে সদস্যদের ভোটে প্রাদেশিক সভা বা জেমেস্টভোর সদস্যদের রাস্তা নির্মাণ, পুল নির্মাণ, প্রাথমিক শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। (৫) বছরে একবার প্রাদেশিক সভা বা জেমেস্টভোর অধিবেশন ডাকা হতো। এই সভায় সারা প্রদেশের জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাস্তাঘাট প্রভৃতি সমস্যা আলোচিত হতো। প্রাদেশিক পরিষদে বাজেট ও নীতিনির্ধারণ করা হতো। সেই নীতি অনুযায়ী জেলা স্তরে কাজকর্ম হতো। জেলা পরিষদের কার্য নির্বাহের জন্য বেতনভোগী। কর্মচারীদের দ্বারা প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা হয়।
৭. স্বায়ত্তশাসন আইনের দুর্বলতা
জারের প্রবর্তিত স্বায়ত্তশাসন আইন জনপ্রিয়তা পায়নি। রাশিয়ায় দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসন বা পার্লামেন্টারি প্রথা প্রবর্তন না করে কেবল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করায় উদারপন্থি ও সংস্কারবাদীরা হতাশ হয়। প্রাদেশিক ও জেলা সভাগুলোর হাতে জনকল্যাণমূলক কাজের দায়িত্ব থাকলেও তাদের হাতে প্রয়োজনমাফিক অর্থ ও ক্ষমতা ছিল না। জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য তাদের সরকারের দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হতো। জেমেস্টভো সভার পরিকল্পনার ব্যয় বরাদ্দের জন্য কর আদায়ের ক্ষমতা ছিল না। কাজেই এই সভাগুলিকে সরকারের কৃপণ অর্থ বরাদ্দের ওপর নির্ভর করতে হতো। প্রাদেশিক সভাগুলির কাজে সরকারি কর্মচারীরা হস্তক্ষেপ করায় এই সভাগুলির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হতো। জেমেস্টভো সভায় সাধারণ লোকের প্রতিনিধি অপেক্ষা, জমি মালিকের সংখ্যাই বেশি ছিল। কাজেই সাধারণ লোকের স্বার্থ অপেক্ষা জমি মালিক শ্রেণির স্বার্থই বেশি রক্ষা করা হতো। জেলা স্তরের নিচে স্বায়ত্তশাসনের কোনো পরিষদ না থাকায়, গ্রামগুলোর প্রয়োজন বুঝে কাজ করা সম্ভব হতো না। আসলে রাশিয়ার বুদ্ধিজীবী ও উদারতন্ত্রীরা চেয়েছিল পশ্চিম ইউরোপের মতো নির্বাচিত কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট ও দায়িত্বশীল মন্ত্রিসভা। তার বদলে জার কেন্দ্রে স্বৈরতন্ত্র বহাল রেখে প্রদেশ স্তরে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করলেও, আসল গণতন্ত্রের দাবি তাতে পূরণ হয়নি।
৮. বিচার বিভাগের সংস্কার, অন্যান্য সংস্কার
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ায় আধুনিক বিচারব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য জুরি প্রথা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যাজিস্টেট নিয়োগ করেন। তিনি বিচারব্যবস্থাকে শাসনব্যবস্থা থেকে পৃথক করার ব্যবস্থা করেন। এর ফলে বিচার বিভাগের উপর প্রশাসনিক আমলাদের নিয়ন্ত্রণ দূর হয়। বিচারকদের চাকরির নিরাপত্তা থাকায় তারা নির্ভীক ও নিরপেক্ষ বিচার করতে পারে। গোপন বিচার নিষিদ্ধ হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বিচারের সময় উকিল নিয়োগের অধিকার পায়। বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে সিনেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর নিচে কেন্দ্র, প্রদেশ ও জেলা স্তরে ক্রমিক পর্যায়ে স্থাপিত হয়। আগে বিচারব্যবস্থা ছিল পক্ষপাতদুষ্ট ও জনস্বার্থ বিরোধী। টলস্টয়ের 'রিসারেকসান' উপন্যাসে তার পরিচয় পাওয়া যায় ।
এখন জার আলেকজান্ডারের সংস্কারের ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা অনেক পরিমাণে রক্ষিত হয়। নাগরিকরা অনেকটা নিরপেক্ষ বিচারের সুবিধা ভোগ করতে পারে। তবে যথেষ্ট
সংখ্যক আইনজ্ঞ বিচারকের অভাবে বিচার বিলম্বিত হতে থাকে।
৯. শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার
জার আলেকজান্ডার রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য বিশেষ উদ্যম দেখান। শিক্ষামন্ত্রী গোলোভনিন (Golovnin) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার জন্য একটি কোড বা বিধান প্রণয়ন করেন। রাশিয়ায় মোট আটটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন দান করা হয়। অধ্যাপকদের ভোটে রেক্টর নির্বাচন করার ব্যবস্থা হয়। জারের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচিত ব্যক্তি রেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হতো। অধ্যাপকের পদে, অধ্যাপক সমিতি প্রার্থী মনোনয়ন করতো এবং শিক্ষামন্ত্রী তাদের নিয়োগ করতেন। অধ্যাপকদের পাঠদানের ব্যাপারে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়। নয়া শিক্ষামন্ত্রী দিমিদ্রি তলস্তয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি সংশোধন করেন। তিনি গ্রিক ভাষা ও অঙ্কশাস্ত্র পাঠের উপর জোর দেন। বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষার গুরুত্ব হ্রাস করা হয়। আধুনিক বিষয়ে ছাত্রদের জ্ঞান লাভকে তিনি সন্দেহের চোখে দেখতেন। প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব প্রাদেশিক পরিষদ বা জেমেস্টভোর উপর বর্তায়। শিক্ষামন্ত্রী তলস্তয় স্ত্রী-শিক্ষার সমর্থন করেন। ছাত্রীদের মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ দেওয়া হয়। দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা হয়। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের শিক্ষানীতির ফলে রাশিয়ায় সাক্ষরতার প্রসার হয়। শতকরা ১৩.৮% শিশু বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের সুযোগ পায়। ৩.৫% বালিকা সাক্ষরতা জ্ঞান লাভ করে।
১০. শিল্প নীতি
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের আমলে শিল্প ব্যবস্থার অগ্রগতি ঘটে। সেটন ওয়াটসনের মতে, ভূমিদাসদের মুক্তির ফলে রুশ শিল্প ব্যবস্থায় বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যে শিল্পগুলি ভূমিদাস মজুরের পরিবর্তে নগদ মজুরের উপর নির্ভরশীল ছিল তাদের বিশেষ সুবিধা হয়। ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের ফলে গ্রাম থেকে বহু কৃষক শ্রমিকের কাজ নিয়ে শহরে চলে আসে। রেলের বিস্তারের ফলে শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। রাশিয়ার মতো বৃহৎ দেশে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হলে শিল্প কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ছিল না। যদিও ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ায় রেলপথ নির্মাণের কাজে জোয়ার আসে। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রেলপথ ও অস্ত্র নির্মাণের শিল্পকে অগ্রাধিকার দেন। তবে এই সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের শিল্প বিশেষত বস্ত্রশিল্প গঠনে নজর দেওয়া হয়। প্রধানত ভারী শিল্প গঠনের জন্যই বেশি উদ্যোগ নেওয়া হয়। রুশ শিল্প গঠনের জন্য রাষ্ট্রই প্রধান ভূমিকা নেয়। রাষ্ট্রের প্রচেষ্টাতেই মূলধন সরবরাহ ও শিল্পের উদ্যোগ শুরু হয়। বিদেশি মূলধনের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়। ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ, বিচারব্যবস্থার সংস্কার, শুল্ক সংস্কারের ফলে শিল্প গঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]