রাশিয়ার সার্ফ বা ভূমিদাসদের অবস্থা কী ছিল? ১৮৬১ সালের ভূমিদাস উচ্ছেদ আইন দ্বারা ভূমিদাসরা কতদূর উপকৃত হয় তা আলোচনা কর ।

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের কৃতিত্ব ও তাঁর নীতির বিফলতা
একটি পিছিয়েপড়া, মধ্যযুগীয় ভূমিদাস ও কৃষি অর্থনীতির দেশকে আধুনিকমনস্ক এবং শিল্প অর্থনীতির দেশে পরিণত করা সহজ কাজ ছিল না। দীর্ঘদিনের পঙ্কিল ও ক্লেদাক্ত, শাসন, সমাজ ও অর্থনীতিকে সংস্কার করে রাশিয়ার আধুনিক যুগে অনুপ্রবেশ জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারই ঘটান। হয়ত তাঁর সংস্কারের বেশ কিছু ত্রুটি ছিল, হয়ত তিনি সাহসী হয়ে আরও বেশি অগ্রগামী সংস্কার করেননি, কিন্তু সার্বিকভাবে বিচার করলে তাঁকে 'মুক্তিদাতা জার' (Czar Liberator) বলাই সংগত। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কার নীতি নিশ্চয়ই মৌলিক সংস্কার অর্থাৎ রুশ গণতন্ত্রীকরণের প্রশ্নকে এড়িয়ে যায়। ফলে তিনি সংস্কারের ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দেন। সর্বস্তরে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। না কৃষক, না বুদ্ধিজীবী, কেউই তাঁর সংস্কারে সন্তুষ্ট হয়নি। কৃষক সমাজ ভূমিদাস প্রথা থেকে মুক্ত হলেও তাদের আর্থিক দুর্দশা ক্ষতিপূরণের চাপে আরও বাড়ে। ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের প্রথম ৪ মাসের মধ্যে ৪৬৯টি কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। অপরদিকে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন এবং সংবিধান প্রবর্তন না করায় দেশপ্রেমী ও চরমপন্থিরা হতাশ হয়ে বিদ্রোহের পথ ধরে। জার আলেকজান্ডার আন্তরিকভাবে সংস্কার চাইলেও জারের স্বৈরতন্ত্রকে খর্ব করতে তিনি আদপেই রাজি ছিলেন না। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বহু বিস্তৃত, বহু জাতি অধ্যুষিত রাশিয়ায় সাম্রাজ্যের ঐক্য তাহলে ভেঙে যাবে। কিন্তু চরমপন্থিরা তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত ছিল না। তারা মনে করতো যে, ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাস্ত হওয়ার ফলে রাশিয়ার পুরাতনতন্ত্র যে অকার্যকরী তা প্রমাণিত হয়। জার সেই পুরাতনতন্ত্রকে জোড়াতালি প্রকৃত সংস্কার দ্বারা রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তাঁর উদার নীতি একটি কৌশলমাত্র। তিনি সংস্কার এড়িয়ে যাচ্ছেন। এজন্য চরমপন্থি বিপ্লবী বা নিহিলিস্টরা জারের প্রাণনাশের চেষ্টা করে। তারা বিশ্বাস করতো জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার হলেন পুরাতনতন্ত্রের প্রতীক। তাঁকে হত্যা করলে পুরাতনতন্ত্র ধসে পড়বে। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন যে, জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার যদি ব্যাপক সংস্কারের দাবি মেনে নিতেন তবে হয়ত জারের সাম্রাজ্যে শান্তি ও স্থিতি আসত। লাওনেল কোচান এই মত অগ্রাহ্য করেছেন। তিনি বলেন যে, জারের সাম্রাজ্যে রুশ জাতি ছাড়া পোল, তুর্কি, ইউক্রেনীয় প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী ছিল। স্বশাসনের দাবি মেনে নিলে হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্যের মতোই জারের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ত। শুধু পোল্যান্ডের কথা ধরলে বোঝা যাবে যে, জারের পক্ষে সাম্রাজ্যের ঐক্য ও জারতন্ত্রের অস্তিত্ব রক্ষা করে সাম্রাজ্যে গণতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তন কত দুঃসাধ্য কাজ ছিল। পোল্যান্ডের ক্যাথলিক গোষ্ঠী ছিল ঘোর রুশ বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। এছাড়া ছিল পোল জমিদার ও বুদ্ধিজীবীদের সংগঠন যা ছিল শুধু রুশ বিরোধী নয়; সশস্ত্র বিদ্রোহে এরা বিশ্বাসী ছিল। জার আলেকজান্ডার উদার নীতি অনুসরণ করে পোলদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিলে রুশ বিরোধী ক্যাথলিক গোষ্ঠী ও উদারপন্থি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। স্বাধীন ও বৃহত্তর পোল্যান্ডের দাবিতে ১৮৬৩ সালে তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন নিজে ক্যাথলিক দেশের শাসক এবং ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের প্রধান সমর্থক হিসেবে
পোলিশ ক্যাথলিক ও জাতীয়তাবাদীদের প্রতি সমর্থন জানান। এমনকি ব্রিটেনের সহানুভূতিও ছিল পোল জাতীয়তাবাদীদের প্রতি। কিন্তু জার সরকার পোল ভূমিহীন । জমি দানের লোভ দেখালে জাতীয়তাবাদীরা পোল কৃষকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই সুযোগে রুশ সেনা পোল বিদ্রোহ দমন করে। জার তাঁর ভূমিদাস মুক্তির ঘোষণা পোল্যান্ডে প্রয়োগ করে পোল জাতীয়তাবাদী জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করে পোল কৃষকদের কম ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্তে বণ্টন করেন। পোল কৃষকরা স্বাধীনতার পরিবর্তে জমি পেয়ে নিশ্চেষ্ট হয়। প্রাশিয়ার চ্যান্সেলর বিসমার্কও জার শাসন নীতিকে জার্মানির ভবিষ্যৎ স্বার্থের জন্য দৃঢ় সমর্থন করেন। স্বদেশে নিহিলিস্ট বিপ্লবীদের চরমপন্থি নীতি ও তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা, বুদ্ধিজীবীদের তিক্ততা এবং পোল্যান্ডে সংবিধান নাকচ করেন। পোল্যান্ডে রুশীকরণ নীতি জোরদার করেন। জাতীয়তাবাদী ও ক্যাথলিকদের উপর দমনপীড়ন চালাতে থাকেন। পোল্যান্ডের সরকারি ভাষা হিসেবে রুশ ভাষা চালু করা হয়। রাশিয়াতে তিনি দমননীতি গ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত ১৮৮২ সালে নিহিলিস্ট বিপ্লবীদের হাতে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার নিহত হন।
iii. জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের বৈদেশিক নীতি, ১৮৪৮–১৮৮১ সাল ১. এশিয়ায় বিস্তার নীতি
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ক্রিমিয়ার যুদ্ধের শেষ দিকে সিংহাসনে বসেন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে যে হতাশাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা দেয় তা সামলাবার দায়িত্ব তাঁর উপর বর্তায়। জার আলেকজান্ডার প্যারিসের সন্ধি স্বাক্ষর করে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান করেন। জারের বৈদেশিক মন্ত্রী প্রিন্স গোরচাকফ্ (Gortchakff) ইউরোপে স্থিতাবস্থা বজায় রেখে এশিয়ায় রুশ সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির উপর জোর দেন। গোরচাকফ্ এই আশা করেন যে, রাশিয়া ইউরোপ থেকে আপাতত হাত উঠালে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর অন্তর্বিরোধ দেখা দিবে। এই সুযোগে রাশিয়া পুনরায় ইউরোপীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারবে।
২. তিন সম্রাটের চুক্তিতে যোগদান
এদিকে ঐক্যবদ্ধ জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্ক রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার সঙ্গে এক শক্তিজোট গঠনের সংকল্প করেন। বিসমার্কের উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জোট গড়ে জার্মানির শত্রু ফ্রান্সকে বিচ্ছিন্ন রাখা। এই উদ্দেশ্যে ১৮৭৯ সালে ড্রে-কাইজার বুন্ড বা তিন কাইজারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু রুশমন্ত্রী গোরচাকফ্ অনুভব করেন যে, বিসমার্ক রাশিয়ার মিত্রতার সুযোগে ইউরোপীয় শক্তিসাম্য জার্মানির অনুকূলে এনেছেন। ১৮৭৫ সালে War Scare বা ফ্রান্স কর্তৃক জার্মানি আক্রমণের সম্ভাবনার অজুহাতে, জার্মানি ফ্রান্স আক্রমণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে গোরচাকফ্ বিসমার্ককে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন যে, জার্মানি ফ্রান্সকে আক্রমণ করলে রাশিয়া নিরপেক্ষ থাকবে না। গোরচাকফ্-এর সতর্কবাণীর ফলে বিসমার্কের পরিকল্পনা বানচাল হয়। এজন্য রুশ-জার্মান সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয় ।
৩. বার্লিনের সন্ধি : জার্মানির সঙ্গে মিত্রজোট ভঙ্গ
ইতোমধ্যে ১৮৭৭ সালে রাশিয়া-তুরস্কের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে তুরস্ককে পরাস্ত করে রাশিয়া তুরস্কের উপর ১৮৭৮ সালে স্যানস্টিফেনোর সন্ধি চাপিয়ে দেয়। এই সন্ধি পরিবর্তন করতে রাশিয়া রাজি না হওয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে অস্ট্রিয়া ও ইংল্যান্ডের যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। বিসমার্কের প্রভাবে রাশিয়া বার্লিন কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বার্লিন চুক্তির (১৮৭৮ সাল) দ্বারা স্যানস্টিফেনোর সন্ধির শর্তগুলোর পরিবর্তন করে। কিন্তু বার্লিন কংগ্রেসের পর রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির তিন সম্রাটের জোট ভেঙে যায়। রুশ মন্ত্রী গোরচাকফ্ মনে করেন যে, বিসমার্ক বার্লিন কংগ্রেসে রাশিয়ার স্বার্থ না দেখে অস্ট্রিয়ার প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন। রুশ নেতারা বলেন যে, “রাশিয়ার কাঁধে চড়ে জার্মানি বড় হয়েছে।”
৪. দূর প্রাচ্যে ও মধ্য এশিয়ায় রাজ্যবিস্তার
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ইউরোপের বাইরে এশিয়ায় রাজ্যবিস্তার নীতি নেন। তিনি দূর প্রাচ্যে শাখালিন দ্বীপপুঞ্জ (১৮৭৫ সাল) অধিকার করেন। আইগুনের সন্ধির (১৮৫০ সাল) দ্বারা জার চীনের মাঞ্চু সম্রাটের কাছ থেকে মোঙ্গলিয়ার আমুর উপত্যকার বিশাল অঞ্চল অধিকার করেন। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে রাশিয়ার ব্লাডিভোস্টক বন্দর স্থাপিত হয়। ট্রান্স-সাইবেরীয় রেলপথের দ্বারা এই বন্দর রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। মধ্য এশিয়ার তুর্কি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো যেমন- খিভা, বোখারা, খোকন্দ রুশ সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত হলে রুশ সীমান্ত আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এর ফলে ইংরেজ অধিকৃত ভারতে রুশ অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এজন্য ইঙ্গ-রুশ বিরোধ বাড়ে।
৫. রুশ-তুর্কি যুদ্ধ : স্যানস্টিফেনোর সন্ধি
ইতোমধ্যে জার আলেকজান্ডার পুনরায় পূর্ব ইউরোপের দিকে দৃষ্টি ফেরান। ১৮৬৩ সালে পোল বিদ্রোহ দমনে তিনি প্রাশিয়ার সহায়তা পেয়ে প্রাশিয়ার প্রতি সন্তুষ্ট হন। এজন্য ১৮৬৬ সালে অস্ট্রো-প্রাশীয় এবং ১৮৭০ সালে ফ্রাঙ্কো-প্রাশীয় যুদ্ধের সময় জার প্রাশিয়ার স্বার্থে নিরপেক্ষ থাকেন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর প্যারিসের সন্ধির দ্বারা রাশিয়ার উপর শুল্ক নিয়ন্ত্রণমূলক সামুদ্রিক শর্ত ব্রিটেন চাপায় । জার ১৮৭০ সালে ফ্রাঙ্কো-প্রাশীয় যুদ্ধের সুযোগে প্যারিসের সন্ধির সামুদ্রিক শর্তগুলো ভেঙে ফেলেন । ফলে কৃষ্ণসাগর থেকে দার্দানেলিস প্রণালির পথে রুশ যুদ্ধ জাহাজ ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। রাশিয়া এই সামুদ্রিক শর্ত ভাঙলে ইঙ্গ-রুশ বিরোধ বাড়ে। সামুদ্রিক শর্ত ভাঙার জন্য ইংল্যান্ড অসন্তুষ্ট হলেও এককভাবে রাশিয়াকে নিরস্ত্র করতে সমর্থন করে তুরস্কের শাসন থেকে স্লাভ জাতিগুলোর মুক্তি আন্দোলনকে (Pan Sla Movement) তিনি সমর্থন করে তুরস্ককে দুর্বল করার চেষ্টা করেন। ইতোমধ্যে তুরস্কের শাসনের বিরুদ্ধে বুলগেরিয়ার খ্রিষ্টানদের বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই বিদ্রোহের
জন্য তুরস্ক বুলগেরিয়ার উপর অমানুষিক অত্যাচার চালায়। এজন্য ইউরোপীয় খ্রিষ্টীয় জনমত আলোড়িত হয়। বুলগেরিয়ার উপর অত্যাচার উপলক্ষ্যে জারের সেনাদল তুরস্ক আক্রমণ করে। তুরস্ক পরাজিত হয়। স্যানস্টিফেনোর সন্ধির (১৮৭৮ সাল) দ্বারা তুরস্ক রাশিয়াকে বাটুম, বেসারাবিয়া ও দোব্রুজা অঞ্চল ছেড়ে দেয়। কিন্তু জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের এই সাফল্য স্বল্পস্থায়ী ছিল। ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি শক্তিগুলোর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহি মনোভাবের ফলে জার বাধ্য হয়ে ১৮৭৮ সালে বার্লিনের সন্ধির দ্বারা স্যানস্টিফেনোর সন্ধিকে পরিবর্তন করেন। বার্লিনের সন্ধির ফলে বলকান উপদ্বীপে রুশ প্রভাব ক্ষুণ্ন হয়। বার্লিনের সন্ধির দ্বারা রাশিয়া কারস, বাটুম ও বেসারাবিয়া অঞ্চল রাখতে পারলেও দার্দানেলিস প্রণালিতে রুশ জাহাজ চলাচলের অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয়। সর্বোপরি বৃহত্তর বুলগেরিয়াকে রাশিয়া এক তাঁবেদার রাষ্ট্ররূপে স্যানস্টিফেনোর সন্ধিতে গঠন করলেও, বার্লিনের সন্ধির দ্বারা বুলগেরিয়াকে ব্যবচ্ছেদ করা হয় এবং রুশ প্রভাব খর্ব করা হয়। অস্ট্রিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা অধিকার করলে বলকানে রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিরূপে দেখা দেয়। মোটামুটিভাবে বার্লিনের সন্ধিকে রাশিয়ার একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক পরাজয় বলে গণ্য করা হয়। বার্লিনের সন্ধিকে রাশিয়ার একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক পরাজয় বলে গণ্য করা হয়। বার্লিনের সন্ধিতে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার পক্ষ সমর্থন করায় জার্মানির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়। ফলে প্রথম তিন সম্রাটের জোট যাতে রাশিয়া অন্যতম সদস্য ছিল তা ভেঙে যায় 1
সার্বিকভাবে বিচার করলে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের বৈদেশিক নীতি ইউরোপে সফল না হলেও, ইউরোপের বাইরে এশিয়ায় রাজ্যবিস্তারে উল্লেখযোগ্য সফলতা পায়। মধ্য এশিয়ায় ও মঙ্গোলিয়ায় এবং ককেশাসে রাশিয়ার রাজ্যসীমার উল্লেখ্য বিস্তার ঘটে। ইউরোপে ক্রিমিয়া পরবর্তী রুশ বিরোধী বন্দোবস্ত তিনি নস্যাৎ করতে অক্ষম হন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন যে, পশ্চিম ইউরোপে রুশ বিস্তার নীতি প্রতিহত হওয়ার ফলেই রাশিয়া দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে ইউরোপের বাইরে বিস্তার নীতি নেয়। ১৮৬৭ সালে জার সরকার প্রচুর ডলারের বিনিময়ে আলাস্কা অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তান্তর করেন। রুশ সমর্থক ঐতিহাসিকরা জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের ইউরোপীয় নীতির সমর্থনে বলেন যে, জারের বলকান বিস্তার নীতি বাধাপ্রাপ্ত হলেও, জার সরকার প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্য স্থাপনের যুদ্ধের সময় যথেষ্ট দূরদর্শিতা দেখান। জার সরকার জার্মানির ঐক্যকে ঐতিহাসিক শক্তির পরিণতি মেনে নিয়ে জার্মানির ঐক্য যুদ্ধের সময় নিরপেক্ষতা নীতি নেন। এজন্য এই ঐতিহাসিকরা জার সরকারের প্রশংসা করে বলেন যে, জার্মানির ঐক্যের ব্যাপারে অন্যান্য শক্তিগুলি ভুল করলেও, রাশিয়া নিরপেক্ষ থেকে ইউরোপের রাজনীতির গতি সম্পর্কে তার গভীর অন্তঃদৃষ্টির পরিচয় দেয়। কিন্তু এই মন্তব্যকে প্রেক্ষাপটহীন মন্তব্য বলা যায়। জার্মানির ঐক্যযুদ্ধের সময় রাশিয়ার ইতিহাসের গতি পুরো নিরপেক্ষ ছিল না, নিজ স্বার্থেই
নিরপেক্ষ ছিল। প্রথমত, ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ব্রিটেন, ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ প্রতিরোধ ও অস্ট্রিয়ার শত্রুতামূলক নিরপেক্ষতার জন্য জার সরকার অসন্তুষ্ট ছিলেন। এজন্য অস্টো-প্রাশীয় বা ফ্রাঙ্কো-প্ৰাশীয় যুদ্ধে জার নিরপেক্ষ থাকেন। অস্ট্রিয়া বা ফ্রান্সের প্রতি জার সরকার তখনও অনুকূল মনোভাব নেননি। দ্বিতীয়ত, বিসমার্ক তাঁর তোষণ নীতির দ্বারা জার সরকারকে প্রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব নিতে রাজি করান। তৃতীয়ত, প্যারিসের সন্ধির সামুদ্রিক শর্তগুলি ছিল জার সরকারের গলার কাঁটা। এই কাঁটা তুলতে ফ্রান্স (১৮৭০ সাল) রাজি হয়নি। বিসমার্ক কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক সন্ধি বা প্যারিসের সন্ধির তোয়াক্কা না করে রাশিয়াকে এই সামুদ্রিক শর্তগুলো ভাঙতে কূটনৈতিক সহায়তা দেন। তার ফলে ফ্রাঙ্কো-প্রাশীয় যুদ্ধে বিসমার্ক রাশিয়ার নিরপেক্ষতা কিনতে পারেন। সুতরাং জার্মানির ঐক্য যুদ্ধে রাশিয়ার নিরপেক্ষতা ঐতিহাসিক নিয়মের কাছে স্বার্থশূন্য আত্মসমর্থন ছিল, এই মতের সারবস্তু নেই। সর্বোপরি, পরবর্তী সময় রুশমন্ত্রী গোরচাকফ্ বার্লিনের সন্ধিতে হতাশ হয়ে বরং জার্মানির ঐক্যে নিরপেক্ষ থাকা ভুল হয়, একথাই বলেন। গোরচাকফ্ বলেন যে, “জার্মানি রাশিয়ার কাঁধে চড়ে বড় হয়েছে। আজ জার্মানি রাশিয়াকে নিরাশ করতে ভয় পায় না।” যাই হোক, জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার, তাঁর ইউরোপীয় নীতিতে ব্যর্থতা বরণ করেন, একথাই বলা দরকার। তিনি প্যারিসের সন্ধির পরিবর্তন ও অস্ট্রিয়া বিরোধিতা জয় করতে পারেননি। তিনি তিন সম্রাটের জোটে যোগ দিয়ে কিছুকাল বিসমার্কের ক্রীড়নকে পরিণত হন। অন্ধ ফরাসি বিরোধিতার জন্যই তিনি এই জোটে যোগ দেন। পরবর্তীকালে রুশ নীতি দিক পরিবর্তন করে এবং জার্মানির বিরুদ্ধে শক্তিসাম্য রক্ষার জন্য ফ্রান্সের মিত্রতা বরণ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]