জার তৃতীয় আলেকজান্ডারের (১৮৮১-১৮৯৪) শাসনামল

জার তৃতীয় আলেকজান্ডারের (১৮৮১-১৮৯৪) শাসনামল ১. জার আলেকজান্ডারের প্রতিক্রিয়াশীলতা দ্বিতীয় আলেকজান্ডার বিপ্লবীদের দ্বারা নিহত হলে, ১৮৮১ সালে তাঁর পুত্র তৃতীয় আলেকজান্ডার জারের সিংহাসনে বসেন। জার তৃতীয় আলেকজান্ডার ছিলেন দারুণ প্রতিক্রিয়াশীল স্বভাবের লোক। তিনি তাঁর পিতামহ নিকোলাসের মতো “এক জার, এক গির্জা ও এক রাশিয়া” র (One Czar, One Church, One Russia) আদর্শ ঘোষণা করেন। সংবিধানবাদ, উদারতন্ত্র ও গণতন্ত্রকে তিনি বিজাতীয় এবং রুশবিরোধী ভাবধারা বলে বাতিল করে দেন। সংবাদপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক দলগুলির উপর তিনি কঠোর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লোপ করেন। জিমন্যাশিয়া বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপরে কঠোর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা হয়। যদি কোনো ছাত্র অর্থোডক্স গির্জার বিরোধিতা করতো, তবে তার নাম বিদ্যালয় থেকে কেটে দেওয়া হতো। জার তৃতীয় আলেকজান্ডার প্রাদেশিক ও জেলা পরিষদ বা জেমেস্টভোর ক্ষমতা লোপ করেন। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সভাগুলিতে তিনি ভূস্বামীদের প্রাধান্য ফিরাতে চেষ্টা করেন। জেমেস্টভোর কর্মচারীদের তিনি সিভিল সার্ভিসের অধীনে এনে তাদের উপর প্রাদেশিক শাসনকর্তার নিয়ন্ত্রণ চাপান ।
২. সামন্ততন্ত্র ও রুশীকরণ
জার তৃতীয় আলেকজান্ডার মনে করতেন যে, অভিজাত ও সামন্ত শ্রেণিই হলো জারতন্ত্রের আসল শক্তি। এজন্য তিনি ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদের আইনকে পছন্দ করতেন না। তিনি "বাস্টার্ড ফিউডালিজম” (Bastard Feudalism) বা অবৈধ সামন্ততন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালান। ল্যান্ড ক্যাপটেন (Land captain) নামে এক শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করে তিনি সামন্তপ্রথা ফিরাবার চেষ্টা করেন। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের ভূমিদাস উচ্ছেদ আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের দুটি প্রধান অভিযোগ ছিল, যথা :
১. জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা কৃষকদের ছিল না। প্রতিবছর ক্ষতিপূরণের টাকা যোগাড় করতে কৃষকদের খেতের ফসল নীচু দামে বিক্রি করতে হতো এবং ঋণ নিতে হতো।
২. কৃষকদের যে জমি দেওয়া হতো তা ছিল প্রধানত পতিত বা অনুর্বরা জমি এবং তার পরিমাণ ছিল খুব কম। জার তৃতীয় আলেকজান্ডার কৃষকদের এই সকল অভিযোগের প্রতিকার করেননি। অধিকন্তু তিনি তাদের উপর পুনরায় সামন্তপ্রথা চাপাবার চেষ্টা চালান। রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের পর গ্রামীণ জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল। ১৮৬১ সালে এই জনসংখ্যা ছিল ৭৩ মিলিয়ন। ১৮৯৭ সালে তা ১২৫ মিলিয়নে পৌছে যায়। এর ফলে জমির চাহিদা ও জমির দাম বহুগুণ বাড়ে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও রাজস্বের মিলিত অর্থ দিয়ে খাদ্য সংকুলান হতো না। এজন্য ঘন ঘন কৃষক বিদ্রোহ হতে থাকে। জার তৃতীয় আলেকজান্ডার কৃষকদের ক্ষোভ দূর করার কোনো চেষ্টা করেননি।
৩. রুশীকরণ নীতি
রাশিয়ায় পোল, ফিন, ইহুদি প্রভৃতি বহু অ-রুশ জাতি বসবাস করতো। জার তৃতীয় আলেকজান্ডার এই জাতি গোষ্ঠীগুলোর স্বায়ত্তশাসনের দাবি অগ্রাহ্য করেন। তিনি তাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকে দমিয়ে রুশীকরণ নীতি নেন। তিনি এই জাতিগোষ্ঠীগুলোকে রুশ ভাষা শিখতে বাধ্য করেন। তাদের মাতৃভাষার চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। ইহুদিদের উপর নির্মম নীতি চালান হয় । জার আলেকজান্ডারের বাল্যকালে তাঁর শিক্ষকরা তাঁর মনে নিষ্ঠুর ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ান। জার মনে করতেন যে, রাশিয়ার যাবতীয় বিপ্লবী মতগুলো ইহুদিরাই ছড়ায়। এজন্য তিনি ইহুদিদের পেইল বা বস্তি এবং গ্রামে বসবাস করতে বাধ্য করেন। তিনি তাদের শহর থেকে হটিয়ে দেন । ৪. শিল্প নীতি
তাঁর
জার তৃতীয় আলেকজান্ডার শিল্প গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতেন । অর্থমন্ত্রী কাউন্ট উইটি ব্যাপক শিল্প স্থাপনের কাজে হাত দেন। ফরাসি মূলধনের সহযোগিতায় ব্যাপক রেল নির্মাণ এবং শিল্প স্থাপনের কাজ আরম্ভ হয়। সুতিবস্ত্র, লৌহ ও তৈল শিল্পের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। রাশিয়ায় কাপড়ের কলগুলোর এত উন্নতি ঘটে, যে ক্ষেত্রে ১৮৮১ সালে ৯.৭ মিলিয়ন টন তুলা আমদানি করা হতো সেক্ষেত্রে ১৮৯৪ সালে ১৫.৪ মিলিয়ন টন তুলা আমদানি করা হয়। আশির ও নব্বই- শিল্পের অভূতপূর্ব বিস্তার ঘটে। জার্মান ও ফরাসি মূলধন লগ্নি দ্বারা রাশিয়ার শিল্পে মূলধনের সরবরাহ করা হয়। ১৮৯০ সালে রাশিয়ার লগ্নি করা বিদেশি মূলধনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০০ মিলিয়ন রুবল। রেলপথ, অস্ত্র কারখানা, লোহা ঢালাই কারখানা প্রভৃতি ভারী শিল্পের অসাধারণ বিকাশ ঘটে। কৃষকদের উপর শিল্প কর চাপিয়ে শিল্পের মূলধন আদায় করা হয়। ইউক্রেনে কয়লা, লোহা ও তৈল শিল্প, পোল্যান্ডে বস্ত্র, ধাতু শিল্প গড়ে ওঠে। রুশ শিল্পে পুঁজিবাদী বিকাশ তীব্র হতে থাকে।
জার তৃতীয় আলেকজান্ডারের রাজত্বকালে বৈদেশিক নীতি এক নয়া মোড় নেয় । ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়া নিরপেক্ষতা ত্যাগ করে ১৮৯৮ সালে ফ্রাঙ্কো-রুশ সামরিক চুক্তি সম্পাদন করে। এর ফলে ত্রিশক্তি আঁতাতের প্রথম ধাপ রচিত হয়।

জার দ্বিতীয় নিকোলাসের শাসনকাল, ১৮৯৪-১৯১৭ সাল


১. স্বৈরতন্ত্রবাদ
জার দ্বিতীয় নিকোলাস ছিলেন রোমানভ বংশের শেষ সম্রাট। তিনি সিংহাসনে বসার পর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে, “আমার পরলোকগত পিতার ন্যায় আমি দৃঢ় ও অবিচলিতভাবে স্বৈরতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করব।” তিনি তাঁর পিতার মতোই স্বর্গীয় অধিকারের আদর্শে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু জার নিকোলাস স্বৈরতন্ত্রী হলেও এই শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিত্ব তাঁর ছিল না।
২. অক্টোবর ঘোষণা নীতি
জার নিকোলাসের শাসনকালে ক্যাডেট, সোস্যাল ডেমোক্র্যাট প্রভৃতি বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। এরা রাশিয়ায় বিপ্লব ঘটাতে তৎপর ছিল। ১৮৯৮ সালে মার্কসপন্থি দলগুলো মিলিত হয়ে রুশ সোস্যাল ডেমোক্র্যাট দলের প্রতিষ্ঠা করে। রাশিয়া থেকে নির্বাসিত বিপ্লবীরাই ছিল এই দলের প্রাণশক্তি। কারণ রাশিয়ার ভেতর জারের দমননীতির জন্য এই দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। সোস্যাল ডেমোক্র্যাটদের দুটি প্রধান গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল তাদের নাম হয় বলশেভিক এবং সংখ্যালঘুদের নাম ছিল মেনশেভিক। (জার দ্বিতীয় নিকোলাসের রাজত্বকালে সংঘটিত ১৯০৫ সালের বিপ্লব : কারণ, প্রকৃতি ও ফলাফলের জন্য অধ্যায় - ২ দ্রষ্টব্য)। এছাড়া ছিল সোস্যাল রেভোল্যুশনারি নামে বুদ্ধিজীবী পরিচালিত দল।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]