২য় নিকোলাস
বিশ শতকের শুরুতে সারা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁ সোভিয়ত ইউনিয়নের ১৯০৫ সালের বিপ্লব। এ বিপ্লব ছিল ১৯১৭ সালের বিপ্লব ও ১৯১৭ সালে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্বাভাস। জার নিকোলাসের সময় সংঘটিত ১৯০৫ সালের বিপ্লবকে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বি অভিহিত করা হয়। ১৯০৫ সালে রুশ সোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বলশে মেনশেভিক), কাদেত বুর্জোয়া পার্টি, শ্রমিক ও কৃষক, সৈনিকরা ঐক্যব পুঁজিপতি, অভিজাত শ্রেণি এবং জারের শাসনের বিরুদ্ধে বড় রকমের বিপ্লব স করে। এ বিপ্লবের ফলে জারতন্ত্র বড় রকমের ঝাঁকুনি খায়। জার দ্বিতীয় নিে কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থে কিছু সংস্কার সাধন করতে বাধ্য হন এবং এ বিপ্লব ১৯১৭ ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ও অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ প্রস্তুত করে। রাি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাই ১৯০৫ সালের বিপ্লবের জন্য দায়ী ি
১৯০৫ সালের বিপ্লব : কারণ, প্রকৃতি ও ফলাফল
১৯০৫ সালের বিপ্লবের পটভূমি (Background)
তৃতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় নিকোলাস জার পদ লাভ করেন ১৮৯৪ সালে। তিনি রোমানভ রাজবংশ ও জারতন্ত্রের শেষ প্রতিনিধি। তাঁর অভিষেকের দিনেই পুলিশি অদক্ষতার জন্য তেরোশ লোক পদদলিত হয়ে মারা যায়। ঘটনাটি তাঁর সমগ্র তেইশ বৎসরের রাজত্বকালের প্রকৃতির দ্যোতক। নিকোলাস স্বৈরশাসনের বজ্রমুষ্টি শিথিল করেননি। তিনি ঘোষণা করেন যে, পিতার মতোই “দৃঢ় ও অবিচলভাবে” তিনি স্বৈরতন্ত্রের নীতিগুলো অক্ষুণ্ণ রাখবেন। কিন্তু তাঁর স্বৈরাচার প্রীতি থাকলেও পিতার মতো স্বৈরাচারী শাসক সুলভ ব্যক্তিত্ব বা দৃঢ়চিত্তের অধিকারী তিনি ছিলেন না। রাজত্বের প্রথম দিকে তিনি পোবিডোনোস্টেভ ও প্লেভ নামে দুজন প্রতিক্রিয়াশীল মন্ত্রীর প্রভাবাধীন ছিলেন। পরে তিনি রানি এবং তাঁর প্রিয়পাত্র রাসপুটিন নামে এক দুর্নীতিপরায়ণ পাদ্রির প্রভাবাধীন হয়ে পড়েন।
গুপ্তচর বাহিনীর সংবাদের উপর ভিত্তি করে শাসন পরিচালিত হতো। সরকার-বিরোধী সমালোচনা কঠোর দমননীতির দ্বারা স্তব্ধ করা হতো। অসংখ্য মানুষ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল; নয়তো সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষায়তন থেকে উদারনৈতিক শিক্ষকদের কর্মচ্যুত করা, এমনকি তাদের নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হতো। স্বাধীন চিন্তা বা উদারনীতির কণ্ঠরোধ করা হতো । রাশিয়ার এক খ্যাতনামা অধ্যাপক ভিনোগ্রাডোভ ইংল্যান্ডে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর জবানী অনুসারে, “তল্লাশি, গ্রেপ্তার, কারাদণ্ড এবং সাম্রাজ্যের দূরবর্তী স্থানে নির্বাসন থেকে কারোরই অব্যাহতি নেই। রাজনৈতিক তদারকি থেকে শুরু করে সমস্ত রকম ব্যক্তিগত ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চলছে। এই রকম আইনের প্রেক্ষাপটে আমরা আছি।” তথাকথিত বিপজ্জনক বহু বই নিষিদ্ধ হয়। ছাত্রদের পেছনে গুপ্তচর নিযুক্ত হয়। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-পঞ্চমাংশ ছাত্র সাইবেরিয়ার নির্বাসিত হয় বা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
অ-রুশ জাতিগুলোর ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিতভাবে রুশীকরণ নীতি অনুসৃত হলো। অপশাসনে ও অত্যাচারে ইহুদিরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ফিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে দেওয়া হলো। ফিন, জার্মান, পোল ইত্যাদি সকলেই অকথ্য অত্যাচারে জর্জরিত হতে থাকল ।
অবশ্য এই সমস্ত দমনমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নতি ঘটেছিল । কিন্তু রাশিয়ার শিল্পায়নের মূলে ছিল বিদেশি মূলধনের সাহায্য। তাই বিদেশি মূলধনের শোষণ সেখানে অনিবার্যভাবে দেখা দিয়েছিল। দুটি বিপ্লব দ্বিতীয় নিকোলাসের রাজত্বকালকে স্বাতন্ত্র্যে চিহ্নিত করে রেখেছে। একটি ১৯০৫ সালের বিপ্লব, অন্যটি ১৯১৭ সালের বিপ্লব। প্রথম বিপ্লবটি দ্বিতীয় বিপ্লবটিরই মহড়া বিশেষ এবং দ্বিতীয় বিপ্লবটি রাশিয়ার জারতন্ত্রের অবসান ঘটায় এবং সেখানে সাম্যবাদী সরকার স্থাপিত হয়।
১৯০৫ সালের বিপ্লবের কারণ (Causes)
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সামন্ততন্ত্রের অন্তরালে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকের উদারনৈতিক ভাবধারার সংক্রমণ বাঁচিয়ে রাশিয়া চলছিল। কিন্তু নানা উপাদানের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে - সংঘটিত হয় ১৯০৫ সালের বিপ্লব। এই উপাদানগুলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. রাজনৈতিক কারণ
ক. স্বৈরশাসন : তিন শতাব্দী ধরে রাশিয়ায় কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল। দৈবস্বত্বে বিশ্বাসী জার ছিলেন প্রচলিত রাজনৈতিক ও সমাজব্যবস্থার মধ্যমণি। জারতন্ত্র পরিচালিত হতো সৈন্যবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ভূস্বামী, অভিজাত শ্রেণি, আমলা ও চার্চের মাধ্যমে। জনপ্রতিনিধিমূলক কোনো সংস্থা ছিল না। গ্রামগুলোতে মিরগুলোর কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। এই রকম শাসনব্যবস্থায় প্রয়োজন ছিল দক্ষ শাসকের কিন্তু জার দ্বিতীয় নিকোলাস আদৌ দক্ষ শাসক ছিলেন না। তিনি দেশপ্রেমিক হলেও দুর্বলচিত্ত এই শাসক রাজত্বের প্রথমদিকে প্রতিক্রিয়াশীল পোবিডোনোস্টেভ ও স্বৈরাচারী প্রেভের প্রভাবাধীন ছিলেন। রানি আলেকজান্ডার বশীভূত হয়ে তিনি বুদ্ধিজীবী-ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকদের সাংবিধানিক সংস্কারের সমস্ত প্রচেষ্টাকে বানচাল করে দেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, কারাদণ্ড, নির্বাসনদণ্ড এবং বিস্তারিত গুপ্তচর ব্যবস্থার পুনর্গঠন তাঁর শাসনরীতির বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া তিনি জার্মান, ইহুদি, ফিন, পোল ইত্যাদি অ-রুশ জাতীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে নির্মমভাবে রুশীকরণ নীতি অবলম্বন করেন ।
খ. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অসন্তোষ
জারতন্ত্রের এই ঘোর প্রতিক্রিয়াশীলতায় রুশ জনগণের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। ভূমিদাসের মুক্তির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ভূস্বামীরা আশা করেছিল তাদের ত্যাগের বিনিময়ে তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার পাবে। কৃষকরা মিরের অত্যাচারে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের বৈধতার স্বীকৃতি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল। আবার রাশিয়ায় ইউরোপীয় উদারনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ভাবধারার অনুপ্রবেশ রোধ করা রুশ স্বৈরাচারী শাসকদের শতচেষ্টাতেও সম্ভব হয়নি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে রুশ বুদ্ধিজীবীরা গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের জন্য আন্দোলন শুরু করে।
গ. গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতি
রুশ শাসকরা দমনমূলক নীতি অবলম্বন করে। রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ ছিল। এইভাবে নিয়মতান্ত্রিক পথে রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনার অধিকার না থাকায় বহু গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতি গড়ে উঠতে থাকে।
১৯০৫ সালের বিপ্লব : কারণ, প্রকৃতি ও ফলাফল
ঘ. বিভিন্ন রাজনৈতিক দল
১৮৯৮ সালের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দল নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে মার্কসবাদী এই দলটি ‘বলশেভিক (সংখ্যাগরিষ্ঠ) ও ‘মেনশেভিক’ (সংখ্যালঘু) নামে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। বলশেভিকরা লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবের মাধ্যমে রুশ সমাজের আমূল পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিল। অন্যদিকে মেনশেভিকদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল-প্রথমে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং তারপর সামাজিক পরিবর্তন সাধন ৷ এছাড়া আরেকটি উল্লেখযোগ্য দল সোশালিস্ট রেভলিউশনারি দলের কর্মসূচি ছিল সমস্ত জমিকে রাষ্ট্রায়ত্ত করে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত করা। কৃষকদের মধ্যে তারা সমাজতান্ত্রিক মতবাদ বিস্তারে মনোযোগী ছিল। তারা দলের লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে গ্রহণ করে। উদারনৈতিক জমিদার ও বুর্জোয়ারা গঠন করে ‘লিগ অব এমানসিপেশান' (১৯০৩ সালে)। শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র সংস্থাপনই ছিল এর মূল লক্ষ্য। পোল্যান্ড, ইউক্রেন, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে সমাজতন্ত্রী দল প্রভাব বিস্তারে সামর্থ হয়। ১৯০০ সালে লেনিনের চেষ্টায় প্রকাশিত হয় ‘ইসকা’ (স্ফুলিঙ্গ) নামে পত্রিকা। পত্রিকাটি রুশ জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত করতে প্রভূত সাহায্য করেছিল। ছাত্র-শিক্ষক-কৃষকদের নানা বিচ্ছিন্ন অভ্যুত্থান ঘটতে থাকে। এগুলো সমস্তই অবশ্য দমিত হয়ে যায়। এই রাজনৈতিক চেতনার মূলে অর্থনৈতিক সংকটের ভূমিকাও নগণ্য ছিল না ।
২. অর্থনৈতিক
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাশিয়ায় দ্রুত শিল্পায়ন ঘটলেও তার মূলে ছিল বিদেশি মূলধনের সাহায্য। ফলে জাতীয় ঋণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। হিসাব করে দেখা গেছে ১৮৯৪-১৯০৩ সাল পর্যন্ত রুশ সরকারের বিদেশি লগ্নিকারের সুদ হিসেবে বার্ষিক দেয় ছিল চল্লিশ কোটি রুবল। ১৯০৪ সালে রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল চারশ কোটি রুবল। রাশিয়ার প্রজাশক্তির সিংহভাগ কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভূস্বমীদের তুলনায় ‘মির’ গুলি কম অত্যাচারী ছিল না। তারা ‘মির’ ছেড়ে যেতে পারত না বা ইচ্ছামতো জমি জায়গা বিক্রি করতে পারত না। শিল্পে-নিযুক্ত শ্রমিকদের অবস্থা সমভাবেই শোচনীয় ছিল। শিল্পবিপ্লবের আদিপর্বে উদ্ভূত সমস্ত কুফল নিয়ে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সে কারণে ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লবের পূর্বের বৎসরগুলোতে ঘন ঘন কৃষক বিদ্রোহ ও শিল্পে ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ১৮৯৯ থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় শিল্পক্ষেত্রে মন্দা দেখা দেয়। বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা চরম দুর্দশার সম্মুখীন হয়। এই অর্থনৈতিক মন্দার বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে না পেতেই দূরপ্রাচ্যে রাশিয়া জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনে সংরক্ষিত সৈন্য সংগৃহীত হয় গ্রামাঞ্চল থেকে। ফলে কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত হয় ও শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পায়। রাজনৈতিক দলগুলো কৃষক/শ্রমিকদের অসন্তোষকে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করে।
৩. সামাজিক
রাশিয়ার সমাজ ছিল দ্বিধাবিভক্ত, একদিকে অভিজাত সম্প্রদায় অন্যদিকে কৃষক-শ্রমিক সম্প্রদায়, যারা ছিল জনসংখ্যার সিংহভাগ। রাজনৈতিক দিক থেকে
ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কৃষকদের দুঃখদুর্দশার অন্ত ছিল না। রাশিয়ায় উল্লেখযোগ্যভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠেনি তখনও। তাই মুষ্টিমেয় শিক্ষিত ব্যক্তি ও বিপুল সংখ্যক জনগণের মধ্যে ছিল বিস্তর ব্যবধান। মুষ্টিমেয় শিক্ষিতজনের মধ্যে কিছু সংখ্যক জেমস্টভো গুলোর মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য দাবি প্রবল হয়ে ওঠে। এরা গণসংযোগ স্থাপনের জন্য সচেষ্ট হয়। এর ফলে আমলাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয় । রুশ যাজকরা ছিল অভিজাত শ্রেণিভুক্ত। তারা অর্থ লোলুপতা ও পাপাচারের জন্য জনগণের শ্রদ্ধা হারিয়েছিল।
৪. প্রত্যক্ষ কারণ
রুশ-জাপান যুদ্ধে (১৯০৪-০৫) রাশিয়ার ধারাবাহিক বিপর্যয় ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লব ত্বরান্বিত করেছিল। যুদ্ধের আরম্ভ থেকেই জনগণ এটিকে রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থবিরোধী হিসেবে গণ্য করেছিল। জাতীয় অবমাননায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ অভ্যুত্থান ঘটায়। নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পথে সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি কেবলমাত্র শিক্ষিতজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। সাধারণ মানুষও এই দাবিগুলোতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
পোর্ট আর্থার আক্রমণ করলে যুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘদিন জাপান কর্তৃক অবরোধের পর ১৯০৪ সালের ২০ ডিসেম্বর পোর্ট আর্থার দুর্গের সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে। জাপান ১৯০৫ সালের ১৪ মে কোরিয়া প্রণালিতে তুসিমা (Tsushima) দ্বীপে রাশিয়ার নৌবাহিনীকে পরাজিত করলে দূরপ্রাচ্য থেকে বাল্টিক সাগর পর্যন্ত রাশিয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রুশ-জাপান যুদ্ধে জল, স্থল সর্বত্রই রাশিয়া জাপানের হাতে পরাজিত হয়। ১৯০৫ সালের ২৩ আগস্ট উভয় শক্তির মধ্যে পোর্টসমাউথের (যুক্তরাষ্ট্র) সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে রুশ-জাপান যুদ্ধের অবসান হয়। এ চুক্তির ফলে রাশিয়া পোর্ট আর্থার ও দক্ষিণ সাখালিন জাপানের হাতে সমর্পণ করে এবং কোরিয়ায় জাপানের প্রাধান্য স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। একটি এশীয় শক্তির হাতে রাশিয়ার এ পরাজয় লজ্জাজনক ও অপমানকর ছিল।
রাশিয়ার সৈনিক ও নাবিকদের মধ্যে এ যুদ্ধ অজনপ্রিয় হলেও তারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে। তবে সেকেলে যুদ্ধাস্ত্র, সৈনিকদের নিকৃষ্টমানের প্রশিক্ষণ, অফিসারদের অযোগ্যতা ও কোনো কোনো সময় তাদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য রাশিয়া পরাজিত হয়।
এই যুদ্ধের জন্য মানুষের দুঃখদুর্দশা আরো বেড়ে যায়। যুদ্ধে বহুলোকের জীবনহানি ঘটে, অর্থনীতি ভেঙে পড়ে এবং রাজকোষ শূন্য হয়ে আসে। এ সময় জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের কারণে কৃষক-শ্রমিকের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। জোর করে
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত