‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো'র উপর একটি টীকা লিখ । মার্কসবাদের প্রকৃতি ও প্রকারভেদ রাশিয়ায় কেন মার্কসবাদের প্রসার ঘটে?

মার্কসবাদের প্রকৃতি ও প্রকারভেদ
মার্কসবাদের ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যার মূল কথা হলো এই যে, ঐতিহাসিক বিবর্তনের স্বাভাবিক গতির ফলে ধনতান্ত্রিকতা সমাজতান্ত্রিকতার নিকট পরাজয় স্বীকার করবে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে এই মতবাদের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সমাজতান্ত্রিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, কারণ মার্কসের ভবিষ্যদ্বাণী প্রকৃতপক্ষে কার্যকরী হচ্ছে না, এই ছিল তাদের অভিজ্ঞতা। সমাজতান্ত্রিকদের মধ্যে সকলেই আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান চান। কিন্তু মালিকানার অবসানের উপায়, কীরূপ রাষ্ট্রের হাতে এই মালিকানা ন্যস্ত হওয়া উচিত, এই সকল বিভিন্ন বিষয়ে সমাজতান্ত্রিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। তাদের মতভেদের মূল কারণগুলো হলো : (১) উৎপাদনের উপাদানগুলো কী ধরনের সরকারের হাতে দেওয়া হবে, (২) ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং ব্যক্তিগত শিল্প-প্ৰচেষ্টা আংশিকভাবে স্বীকার করা হবে কি না, (৩) কী পন্থা অনুসরণ করে উপাদানগুলো রাষ্ট্রের আয়ত্তাধীনে আনা হবে?
১. কালেকটিভিজম
প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যার তারতম্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের সমাজতন্ত্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে। নরমপন্থি সমাজতান্ত্রিকগণ (Moderate Socialists)-যেমন ইংল্যান্ডের লেবার পার্টি, জার্মানি ও ফ্রান্সের কোনো কোনো সমাজতান্ত্রিক দল-‘কালেকটিভিজম’ (Collectivism) অর্থাৎ রাষ্ট্র কর্তৃক কেবলমাত্র উৎপাদনের উপাদানগুলোর নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী। এই মতবাদে বিশ্বাসীরা ধর্মঘট এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ এবং শাসনতান্ত্রিক উপায়ে শাসনকার্য হস্তগত করে নিজ মতবাদ কার্যকরী করতে চান ।
২. সিন্ডিক্যালিজম
অপরপক্ষে সিন্ডিক্যালিস্টরা (Syndicalists) শ্রমিক সংঘের উপর মালিকানা স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। ইতালি ও ফ্রান্সে এই মতবাদে বিশ্বাসী সমাজতান্ত্রিকদের সাময়িক প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। সিন্ডিক্যালিস্টরা বিপ্লবাত্মক কর্মপন্থায় বিশ্বাসী ।
৩. এনার্কিজম
বিপ্লবী আদর্শে বিশ্বাসী অপর একদল সমাজতন্ত্রবাদী ‘এনার্কিস্ট’ (Anarchist) নামে পরিচিত। এরা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করতো না। তারা এমন একটি সমাজ স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন যেখানে কোনো আইন, সরকার বা মানুষের দ্বারা উদ্ভাবিত কোনো শাসনব্যবস্থা থাকবে না। তাঁরা ‘প্রাকৃতিক' রাষ্ট্র স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। বাকুনিন ( Bakunin) এবং ক্রপটকিন (Kroptkin) ছিলেন এই মতবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। কীভাবে এরূপ প্রাকৃতিক রাষ্ট্রে পৌঁছানো যাবে, সে বিষয়ে এনার্কিস্টরা কোনো নির্দেশ দেয়নি।
৪. গিল্ড সোসিয়েলিজম
'গিল্ড সোসিয়েলিজম' ( Guild Socialism) নামে অপর একটি সমাজতান্ত্রিক মতবাদ ইংল্যান্ডে প্রচারিত হয়েছিল। এই মতবাদের বিশ্বাসীরা ‘কালেকটিভিজম' ও ‘সিন্ডিক্যালিজম' এর সংমিশ্রণে নিজেদের মতবাদ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁরা উৎপাদনের উপাদানগুলোর উপর রাষ্ট্রীয়কর্তৃত্ব চেয়েছিলেন, কিন্তু শিল্প পরিচালনার ভার তাঁরা বিভিন্ন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, ম্যানেজার এদের উপর স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন।
৫. কমিউনিজম
বিপ্লবাত্মক পন্থায় বিশ্বাসী সমাজতান্ত্রিকগণ কমিউনিস্ট নামে পরিচিত। এরা চরমপন্থি সমাজতান্ত্রিক । তাঁরা সর্বপ্রকার সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বাধীনে স্থাপন করে রাষ্ট্রের অধীন জনসাধারণকে এক বিশাল শ্রমিক সমাজে পরিণত করতে চান। শ্রম সকলকেই দিতে হবে এবং সেই শ্রমের উপযুক্ত পারিশ্রমিক যাতে পাওয়া যায় সেই দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এই মতবাদে বিশ্বাসীরা বিপ্লবাত্মক উপায়ে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের পক্ষপাতী ।
বর্তমানে উপর্যুক্ত বিভিন্ন প্রকারভেদ উঠে গিয়ে বিবর্তনমূলক (Evolutionary) এবং বিপ্লবাত্মক (Revolutionary) সমাজতন্ত্রবাদে রূপলাভ করেছে। বর্তমানে সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট এই দুই নামেই সমাজতান্ত্রিকদের প্রধানত ভাগ করা হয়ে থাকে ।
৩.৭ বিভিন্ন রাষ্ট্রে মার্কসবাদের প্রসার
সমাজতন্ত্রবাদ যে ক্রমেই শক্তিশালী এবং সর্বজনগ্রাহ্য প্রভাবে পরিণত হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ এবং বর্তমান শতাব্দীর প্রথম ভাগের ইতিহাস হতে প্রমাণিত হয়। ফার্ডিনান্ড ল্যাসেল (Ferdinand Lassalle)-এর নেতৃত্বে স্থাপিত জার্মানির সোশিয়েল ডেমোক্র্যাটিক দল (Social Democratic Party) বিসমার্ক'এর ন্যায় প্রতিক্রিয়াপন্থি ব্যক্তিকেও শ্রমিক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক আইনকানুন প্রণয়নে বাধ্য করেছিল।
ইংল্যান্ডে ফ্যাবিয়ান সোসাইটি (Fabian society) এবং ইন্ডিপেন্ডন্ট লেবার পার্টির স্থাপনের মধ্যেই সেখানকার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিচয় লাভ করা যায়। নানাপ্রকার কারখানা আইন এবং শ্রমিক হিতৈষী আইন পাস সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাব হিসেবে পরিগণিত হয়। ফ্রান্সে পারি কমিউ স্থাপনে তথাকার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বেবিউফ'এর সময় হতেই সমাজতান্ত্রিকতার প্রভাব ফ্রান্সে অনুভূত হয়েছিল।
মার্কসবাদের আধুনিক প্রয়োগে দেখা যায় লেনিন ও বলশেভিক দলের জারতন্ত্র দমনের ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব মার্কসবাদের সর্বাধিক সফল প্রয়োগ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। চীন, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি অপরাপর দেশেও 'কমিউনিজম' এক শক্তিশালী প্রভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাপর বহু রাষ্ট্র উগ্র সমাজতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী না হলেও বিবর্তনমূলক শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র স্থাপনের পক্ষপাতী, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। জনকল্যাণকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা স্থাপন প্রগতিশীল রাষ্ট্র মাত্রেরই আদর্শ বলে গৃহীত হয়েছে ।
ধনতন্ত্রবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে মার্কসের যুদ্ধ ঘোষণা এখনও স্তব্ধ হয়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তরা এখনো মার্কসবাদের মধ্যে মুক্তির পথ খোঁজেন। কারণ মার্কসবাদ যে প্রচণ্ড আশাবাদ সৃষ্টি করেছিল তাতে দরিদ্রের দারিদ্র্য বিধির বিধান বা চিন্তন নয়। ইতিহাস তাদের জন্য একদিন মুক্তি আনবেই। এই আশাবাদ এখনো মার্কসবাদকে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে গ্রহণীয় করেছে।
মার্কসবাদ আন্তর্জাতিক আন্দোলন রূপে ১৮৬৪ সাল থেকেই শুরু হয় বলা যায় । কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো গ্রন্থে মার্কস “সকল দেশের প্রলেতারিয়েতদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।” তাঁরা তখন ভাবতেন যে দুই চার বছরের মধ্যে ধনতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের বিফলতা থেকে মার্কস শিক্ষা নেন যে, ধনতন্ত্র ধ্বংস এত সহজে হবে না। এজন্য ১৮৬৪ সালে লন্ডনে মার্কস ও এঙ্গেলস “ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং মেনস এসোসিয়েশন' গঠন করেন। এই সমিতির পরিচালনায় ১৮৬৬-৬৯ সাল পর্যন্ত ৪টি কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। ১৮৬৪ সালে এই সমিতিকে এজন্য First Global বা প্রথম বৈশ্বিক বলা হয়। কিন্তু অন্তঃকলহের ও আদর্শগত ব্যবধানের ফলে প্রথম বৈশ্বিক ভেঙে যায়। মাইকেল বাকুনিন নামে নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক দাবি করেন যে, প্রলেতারীয় বিপ্লবের লক্ষ্য হওয়া উচিত রাষ্ট্রব্যবস্থার অবলুপ্তি। কারণ তাঁর মতে, রাষ্ট্রই হলো সর্বাপেক্ষা বড় শোষণ যন্ত্র। তাছাড়া ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয়া যুদ্ধের পর সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ১৮৭৬ সালে প্রথম বৈশ্বিক ভেঙে যায় ।
প্রথম বৈশ্বিক ভেঙে গেলে সমাজতন্ত্র জাতীয় স্তরে পতিত হয়। এ সময় জার্মানিতে ফার্দিনান্দ লাসেল ইউনিভার্সাল জার্মান ওয়ার্কিং মেনস এসোসিয়েশন গঠন করেন। ১৮৭৫ সালে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমবায়ে জার্মান সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠিত হয়। ১৮৭১ সালে জার্মানির রাইখস্ট্যাগে এই দল ৩৪.৮% ভোট পায়। ১৯১২ সাল থেকে এ দল জার্মান পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ফ্রান্সে কতকগুলো ছোট ছোট
সমাজতন্ত্রী দল প্রথমে গড়ে ওঠে। ১৮৯৩ সালে জাঁ জোয়ারেস ফ্রান্সে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন। ১৯০৫ সালে ফ্রান্সে সোস্যালিস্ট দলগুলো সমবেত হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করে। ১৯১৪ সালে ফরাসি পার্লামেন্টে এদের সদস্য সংখ্যা ছিল ১০২। ব্রিটেনেও সমাজতন্ত্রের হাওয়া ইংলিশ চ্যানেলে পার হয়ে বইতে থাকে। ১৮৮৪ সালে কিছুসংখ্যক ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী ফেবিয়ান সোসাইটি (Fabian society) স্থাপন করেন। ফেবিয়ান গোষ্ঠী সঠিক অর্থে মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রে ও শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না। তাঁরা আন্দোলন দ্বারা পার্লামেন্ট থেকে শ্রমিকের জন্য প্রয়োজনীয় আইন পাস করানো যাবে বলে মনে করতেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ, এইচ জি ওয়েলস প্রমুখ ছিলেন ফেবিয়ান দলের সদস্য। ক্রমে রাশিয়াতে কমিউনিস্ট পার্টি অব সোভিয়েত ইউনিয়ন বা C.P.S.U. দলটি বিশ্বে মার্কসবাদের প্রধান প্রবক্তায় পরিণত হয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতা অধিকার করে সমাজতন্ত্রকে বাস্তব রূপদানের নীতি নেয়। সমস্ত বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটাবার জন্য কোনো কোনো মার্কসবাদী নেতা জিহাদ ঘোষণা করেন। রাশিয়ার উদ্যোগে মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয় ।
৩.৮ রাশিয়ায় মার্কসবাদ প্রসারের কারণ
মার্কসবাদের উদ্ভব জার্মানিতে হলেও এর সফল প্রয়োগ ঘটে রাশিয়ায়। রাশিয়াতে উনিশ শতকে কৃষকদের লোকবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার পরে রুশরা মার্কসবাদী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সে সময় রাশিয়াতে ব্যাপকভাবে কলকারখানাও বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠতে থাকে। তাতে মার্কসের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ এবং সর্বহারা বিপ্লবের সম্ভাবনা অনেককে আকৃষ্ট করে। অধ্যাপক হারকেভ রাশিয়ায় মার্কসবাদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন ।
প্রথমত, রাশিয়ার হতাশাগ্রস্ত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে মতাদর্শের যে শূন্যতা বিরাজ করছিল, তা মার্কসবাদ পূরণ করে।
দ্বিতীয়ত, মার্কসবাদ পূর্বের জনপ্রিয় মতাদর্শের মতো বিভিন্ন উপাদান একীভূত করেছিল যেমন- একটি দর্শন, কর্মপরিকল্পনা এবং সমাজতন্ত্রের অনিবার্যতা সম্পর্কে একটি বিশ্বাস ।
তৃতীয়ত, মার্কসবাদ রাশিয়ায় ধনতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করেছে বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীদের এমন আশা শক্তিশালী হয় ।
চতুর্থত, ই. এইচ. কার লিখেছেন, "Marxism introduced into revolutionary theory and practice the order, method and authority, which had hitherto been the prerogative of governments and thereby laid foundations of the disciplined revolutionary." মার্কসের সমাজতন্ত্রবাদ রুশ চিন্তাবিদগণের মনে সমাজ বিপ্লবের প্রেরণা দেয়। লেনিন ও বলশেভিকগণ মার্কসবাদের আদর্শে রুশ বিপ্লবকে পরিচালিত করেন।
মার্কসবাদের প্রসার ও ভি. আই. লেনিনের উত্থান রাশিয়ায় মার্কসবাদ প্রসারে পিবি এক্সেলরড ও প্লেখানভের অবদান ক. পি বি এক্সেলরডের অবদান রাশিয়ায়
আরও একজন লোকবাদী পিবি এক্সেলরড মার্কসবাদকে রাশিয়ার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপযোগী করে চালাতে চেয়েছিলেন। তিনি দেখেন যে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সর্বহারা নেই। কৃষকরা চায় জমি, সাম্যবাদ চায় না। রাশিয়ায় নেই রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মার্কস নিদের্শিত সর্বহারা বিপ্লবের প্রয়োজনীয় প্রথম পর্যায় চালিয়ে নেওয়ার জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণি নেই। এসব সমস্যায় তার উত্তর হলো সর্বহারারা অবশ্যই নেতাদের আকর্ষণ করবে এবং তখনই নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মার্কসবাদীরা রাশিয়ায় একটি গুপ্ত ছোট দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং নেতারা ছিল হাতেগোনা কয়েকজন, যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী । রাশিয়ায় মার্কসবাদের বিকাশ এবং লেনিনের জীবনী প্রায় সমার্থক ছিল ।
খ. প্লেখানভের অবদান
রাশিয়ায় বিপ্লবী মার্কসবাদের প্রধান নেতা ছিলেন রুশ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসির জনক জর্জি ভালোন্তনোভিচ প্লেখানভ। প্রথম জীবনে প্লেখানভ লোকবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। সরকারের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য ১৮৮০ সালে তিনি পশ্চিম ইউরোপে যান এবং সেখানে মার্কসবাদ অধ্যয়ন ও অনুশীলনের সুযোগ পান এবং মার্কসবাদে দীক্ষিত হন। মার্কসবাদকেই বিপ্লবের অভ্রান্ত অস্ত্র বলে গ্রহণ করেন। লোকবাদী আন্দোলনের ইউটোপিয়ান চরিত্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম অবহেলিত হয়েছিল বলে এবং কৃষকদের ভূমিকার উপর জোর দেওয়ায় তিনি হতাশ হন। কিন্তু তিনি সমাজতন্ত্রের উপর বিশ্বাস হারাননি এবং বৈজ্ঞানিক মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের শক্তি লক্ষ করেন। লোকবাদীদের ভ্রান্ত ধারণার মার্কসবাদী সমালোচনার প্রথম জবাব দেন প্লেখানভ এবং এভাবে রাশিয়ায় মার্কসবাদ বিস্তারের পথ উন্মুক্ত করেন। লোকবাদী আন্দোলনের ভুল হতে শিক্ষা নিয়েই প্লেখানভ রাশিয়ায় মার্কসবাদের প্রচার ও প্রসার করেন যার পরিপূর্ণতা আসে লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে। প্লেখানভ নিজেই মার্কস ও এঙ্গেলসের 'The Manifesto of the Communist Party' রুশ ভাষায় অনুবাদ করেন এবং রাশিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করেন। তিনি প্রচার করেন যে, রাশিয়ার বর্তমান সমস্যা সমাধানের জন্য মার্কসীয় সমাজতন্ত্র বিশেষ উপযোগী ।
তিনি দীর্ঘদিন লোকবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন কিন্তু তিনি তাদের সন্ত্রাসবাদী নীতি অনুমোদন করেননি। প্লেখানভ ৪০ বছর বিদেশে অবস্থান করেন। অধিকাংশ সময় তিনি সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করেন। রাশিয়ায় শ্রমিক আন্দোলনের বিস্তার এবং পশ্চিম ইউরোপীয় শ্রমিকদের অভিজ্ঞতার প্রভাবে প্রথম রুশ মার্কসবাদী সংগঠন গড়ে তোলার পক্ষে অনুকূল অবস্থা তৈরি হয়। তিনি ১৮৮৩ সালে জেনেভায় Emancipation of labour নামে একটি মার্কসবাদী গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। রাশিয়ার সর্বপ্রথম মার্কসবাদী বিপ্লবী সংস্থা ভেরা জাসুলিচ, পাভেল আকসেলরদ প্রমুখ এ সংগঠনের সদস্য ছিলেন। এটি রুশ বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের তত্ত্বগত বুনিয়াদ স্থাপন করে। রাশিয়ায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের চিন্তাধারা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এর সদস্যরা।
এ সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল লেখনীর মাধ্যমে মার্কসবাদের প্রচার ও প্রসার। অত্যন্ত গোপনে এই সংস্থা বিদেশ হতে তাদের কর্মতৎপরতা পরিচালনা করে। এই Emancipation of labour-ই সর্বপ্রথম রাশিয়ায় বিপ্লবী সংগ্রামের একটি সঠিক স্পষ্ট এবং সময়োপযোগী কর্মসূচি প্রদান করে। সংগঠনটি লোকবাদী আন্দোলনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই বছর তিনি 'Socialism and the political struggle' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। পরের বছর তিনি 'Our Differences' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। এই পুস্তিকায় প্লেখানভ মার্কসবাদী এবং লোকবাদীদের পার্থক্য তুলে ধরেন। তাঁর এ দুটি গ্রন্থ লোকবাদী (নারোদনিক) মতবাদকে কঠিন আঘাত হানে। প্লেখানভ প্রমাণ করে দেখান যে রাশিয়া পূর্বেই ধনতন্ত্রের পথ গ্রহণ করেছে এবং ধনতন্ত্রের পথে না এগিয়েও রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে লোকবাদীদের এই মতবাদ ভুল। কৃষকরাই বিপ্লবের প্রধান শক্তি এবং তারাই বিপ্লবের নেতৃত্বে দেবে লোকবাদীদের এই মতবাদকে তিনি ভুল প্রতিপন্ন করেন। তিনি প্রমাণ করে দেখান যে, রাশিয়ায় যেমন ধনতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে তেমনি শ্রমিক শ্রেণিরও জন্মলাভ ঘটেছে, তারাই ধনতন্ত্রের সমাধি রচনা করবে। কয়েকজন প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ-ই ইতিহাসের নিয়ন্ত্রক এবং জনসাধারণ তাদের সমর্থক ও অনুসারী মাত্র লোকবাদীদের (নারোদনিকদের) এই তত্ত্বকে তিনি ভুল প্রমাণ করেন। তিনি যুক্তি দেখান যে, বিপ্লবের মাধ্যমে লোকবাদীদের কাঙ্ক্ষিত বিশেষ ধরনের রুশ সমাজতন্ত্রের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি উন্নয়নের একটি প্রয়োজনীয় পর্যায় হিসেবে ধনতন্ত্রকে বিবেচনা করেন। প্লেখানভ রাশিয়ায় ধনতন্ত্রের আগমনে একটি শিল্প শ্রমিক শ্রেণির সৃষ্টি দেখতে পান যারা একটি বিপ্লব ঘটাবে। ১৮৮৫ সালে প্লেখানভ তাঁর শেষ গ্রন্থ Towards the Development of the Monistic Conception of History প্রকাশ করেন। প্লেখানভ মনে করতেন বিপ্লবী আন্দোলন দুটি পর্যায়ে বিকশিত হতে পারে। প্রথম পর্যায়ে রাজনৈতিক বিপ্লব, যা স্বৈরতন্ত্রের জায়গায় সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি সামাজিক বিপ্লব, যা উৎপাদন পদ্ধতি শ্রমিকদের হাতে ন্যস্ত করবে। তিনি বিশ্বাস করতেন এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য কমপক্ষে প্রথম দিকে বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বে পৃথক Social Democratic Party of the Russian Worker অবশ্যই গঠন করতে হবে। প্লেখানভের চিন্তাধারা রুশ সামাজিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের তাত্ত্বিক ভিত্তি গঠন করেছিল। লেনিনের নেতৃত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত রাশিয়ায় মার্কসবাদের ক্ষেত্র রচনার কাজে যারা আত্মনিয়োগ করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্লেখানভ সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য
প্লেখানভ ও তাঁর অনুসারীদের নীতি ও কার্য পদ্ধতিতে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ | ত্রুটি ছিল । শ্রমিক শ্রেণি বিপ্লবের নেতৃত্বে থাকলেও বা প্রধান শক্তি হলেও কৃষক শ্রেণির
সহযোগিতা ও মৈত্রী যে একান্ত প্রয়োজন, তা প্লেখানভ বুঝতে পারেননি। ফলে রাশিয়ায় মার্কসবাদের প্রয়োগ তত্ত্ব সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে | এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য লেনিনকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও | প্লেখানভ Emancipation of Labour ও রাশিয়ায় মার্কসবাদের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং রাশিয়ায় মার্কসবাদী সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক দলের অভ্যুত্থানের পথ প্রশস্ত করে।
৩.১০ রাশিয়ায় মার্কসবাদ প্রসার
জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশে মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ভিত্তি লাভের পরে রাশিয়ায় মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আগমন ঘটে। ১৮৭২ সালে সর্বপ্রথম রুশ ভাষায় কার্ল মার্কস রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ দাস ক্যাপিটালের প্রথম খণ্ড এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জার সরকার এই গ্রন্থ নিষিদ্ধ করে। ফলে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণি মার্কসবাদের সঙ্গে তাড়াতাড়ি পরিচিত হওয়ার সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়। ১৮৭০ এর দশকে রাশিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এদের মাধ্যমে মার্কসবাদী চেতনা রাশিয়ায় প্রসারিত হয়। প্রথম দিকের রুশ বুদ্ধিজীবী যারা বিদেশে অবস্থান করছিলেন এবং লোকবাদী আন্দোলনের সমর্থকরা মার্কসীয় চিন্তাধারার প্রভাবের মধ্যে পড়েছিল। তারা কৃষকদের বিদ্রোহ করার ক্ষমতায় বিশ্বাস হারিয়েছিল। তারা মার্কসবাদে নয়া আশা দেখতে পায়। কেননা, মার্কস বলেন যে, ধনতন্ত্র হলো বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় একটি অবশ্যম্ভাবী পর্যায়। যা পূর্বে তারা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। এসব বুদ্ধিজীবীরা নয়া শিল্প শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে বিপ্লবের আশা দেখতে পান। ক্রমবর্ধমান শ্রমিক আন্দোলন ও Emancipation of Labour এর প্রভাবে রাশিয়ায় বিভিন্ন স্থানে মার্কসবাদী দল ও চক্র গড়ে ওঠে। মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, কাজান, কিয়েভ প্রভৃতি এলাকায় মার্কসবাদী চক্র গঠন করা হয় । কাজানে ফেদোমিয়েভের নেতৃত্বে এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ-এ ব্রুসনিয়েভের নেতৃত্বে গঠিত সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক চক্রগুলো বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁরা গোপন বৈঠকে মিলিত হতেন। এরা মার্কসবাদ সম্পর্কে পড়াশোনা করতেন এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেন। এসব মার্কসবাদী চক্রগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন ও পৃথক ছিল এবং শ্রমিক আন্দোলন থেকেও এগুলো দূরে ছিল । শ্রমিক শ্রেণিকে শক্তিশালী ও বিপ্লবী নেতৃত্বের উপযুক্ত করতে প্রয়োজন ছিল
রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলগুলোকে একত্রিত ও সংঘবদ্ধ করা এবং মার্কসবাদী প্রচারণার সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলন ও সংগ্রামকে সংযুক্ত করা। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ১৮৮৪ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গের Marxist Social Democratic Party প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বুলগেরীয় সাম্যবাদী নেতা ব্লাগোইয়েভ। এই দলটি প্লেখানভের দল থেকে স্বতন্ত্রভাবে এবং একই সময়ে মার্কসবাদ প্রচার করতে থাকে। জার সরকারের জুলুম এবং নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কা প্রভাবিত শ্রমিক গোষ্ঠীরা তেমন সংঘবদ্ধ হতে পারেনি। তথাপি ইতস্তত বিক্ষিপ্ত রাশিয়ার মার্কসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে একই ছায়াতলে আনার জন্য ১৮৯৮ এ প্রথম চেষ্টা হয়েছিল। মাত্র ৯ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে ঐ বছর মিনস্ক শহরে Russian Social Democratic Labour Party গঠিত হয়। এটি বর্তমান রুশ কমিউনিস্ট পার্টির পূর্বসূরি। এই পার্টির উপর অত্যাচারী জার সরকারের দমননীতি নেমে আসে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার এবং তাদেরকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হয় । এর ফলে মার্কসবাদের প্রসারের ক্ষেত্রে বাধা নেমে আসে।
মার্কসবাদের প্রভাবে লোকবাদী দর্শন নবজীবন লাভ করে, যদিও এটা তখনও মিখাইলভস্কির নৈতিক সমাজ বিদ্যাকে আঁকড়ে ধরেছিল। বিশ শতকের প্রথম দশকের প্রথম অর্ধাংশে Socialist Revolutionary পার্টি গঠন করা হয় এবং চেরনভ ও অন্যান্যদের দ্বারা এর তত্ত্ব ও কর্মসূচির বিশদীকরণে স্পষ্টতই মার্কসবাদের প্রভাব দেখা যায়। নয়া পার্টি অন্যান্য মার্কসবাদীদের মতো শিল্পশ্রমিক শ্রেণির প্রধান ভূমিকাসহ দুই পর্যায়ের একটি বিপ্লবকে ধারণ করে। মার্কসবাদীদের মতে, তারা কৃষকদের পেটি বুর্জোয়া হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে অস্বীকার করে বরং যখন প্রলেতারিয়েতরা বিপ্লবের উদ্যোগ নেবে তখন কৃষকদের জনসমর্থনের উপর জোর দেয় ।
এভাবে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিকাশে মার্কসবাদ গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব সফল হবার ফলে মার্কসবাদীদের উপর যে দমনপীড়ন হতো তা বন্ধ হয়ে যায় এবং নানা চড়াই উতরাই পার হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে মার্কসবাদের প্রচার ও প্রসার ঘটতে থাকে। তবে রাশিয়ায় বুদ্ধিজীবীরা মার্কসবাদকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেননি। রাশিয়ার অবস্থা ও পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী মার্কসবাদে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনয়ন করেন। লেনিন ছিলেন রাশিয়ায় মার্কসবাদের একজন অতি উৎসাহী অনুগামী । কেননা তিনি বলতেন, "Marx had brilliantly rounded off the three main currents of nineteenth century thought, the currents that flowed in the three most advanced countries in the world; classical German Philosophy, Classcial British Political Economy and French Socialism."

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]