ভি. আই. লেনিনের উত্থান সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখ । মার্কসবাদী নেতা হিসেবে লেনিনের কৃতিত্ব নিরূপণ কর

ভোলগা নদীর তীরে সিমবিরস্ক শহরে লেনিনের ছেলেবেলার দিনগুলো কাটে। সেখানে তিনি কৃষকদের কঠিন জীবন, নাবিকদের পরিশ্রম ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর উপর পুলিশের অত্যাচার স্বচক্ষে দেখেছেন। ১৭ বছর বয়সে লেনিন মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার পর লেনিন খেলাধুলা ও বৌদ্ধিক চর্চার উৎসাহ দেখান । বাল্যকাল থেকেই লেনিন ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর।
এরপর লেনিন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ডিনের কাছে একটি আবেদনপত্র পেশে অংশগ্রহণ করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়। তাঁর বড় ভাই আলেকজান্ডার রুশ নারোদনিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জার তৃতীয় আলেকজান্ডারকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৮৮৭ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ফাঁসি দেওয়া হয়। এছাড়া লেনিনের অন্য আরেক ভাই এবং দুই বোন রুশ পুলিশের নজরবন্দীতে ছিলেন। সতেরো বছরের তরুণ লেনিন বড় ভাই এর হত্যা এবং ভাইবোনগুলোর উপর পুলিশের নজরদারিতে খুব মর্মাহত হন। লেনিন যখন বড় ভাই আলেকজান্ডারের মৃত্যুর খবর পান, তখন বলেছিলেন “আমরা স্বতন্ত্র পথ গ্রহণ করব” লেনিন তাঁর ভাইয়ের মতো ব্যক্তি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে জারের বিরুদ্ধে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তাকে কিছুকাল একটি গ্রামে অন্তরিন রাখা হয়। অন্তরিন অবস্থায় লেনিন মার্কসবাদ মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করেন। ক্রমে মার্কসবাদের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ও আস্থা সৃষ্টি হয় । কাজানে এম. ই. ফেদোসিয়েভের পরিচালনায় একটি মার্কসবাদী বিপ্লবী চক্র ছিল। লেনিন তাতে যোগ দেন এবং অবিরাম পড়াশোনা, চিন্তা ও আলোচনার দ্বারা মার্কসবাদ অধিগত করেন ।
লেনিন ১৮৮৫ সালে কয়েক মাস পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণ করেন এবং প্লেখানভ, পল এক্সেলরড এবং Emancipation of Labour Group এর প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে সুইজারল্যান্ডে সাক্ষাৎ করেন। রাশিয়ায় ঐক্যবদ্ধ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠনের মা বীজ সম্ভবত এই তিনজনের মধ্যে আলোচনায় অঙ্কুরিত হয়েছিল। নয়া উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসেন এবং 'Petersburg Marxist Study Circle' কে একটি সক্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সর্বাত্মক প্রয়াস চালান। লেনিন The workers cause' নামে একটি গোপন সাময়িকপত্র প্রকাশ করতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই লেনিনকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাময়িকভাবে সেন্ট পিটার্সবুর্গে অন্তরিন রাখা হয়।
তাঁর লেনিন নিজেকে একজন মার্কসবাদী বিপ্লবীরূপে সুশিক্ষিত করে তোলেন। এই প্রত্যয় দৃঢ় হয় যে, একমাত্র সমাজতান্ত্রিক পথেই রুশ জাতির মুক্তি সম্ভব। কিছুকাল পর অন্তরিন অবস্থা থেকে মুক্তি পান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গিয়ে 'Social Democratic' গ্রুপের সাথে যুক্ত হন। কাজান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে সেন্ট পিটার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় ৩৩ জনের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে আইন শাস্ত্রে স্নাতক হন।
১৮৯২ সালের মার্চ থেকে তিনি সামারা সারকিট কোর্টে প্রাকটিস শুরু করেন। সামারায় তিনিই প্রথম মার্কসবাদী চক্র গড়ে তোলেন। সামারায় অবস্থানকাল প্লেখানভ এর 'Our differences' গ্রন্থটি পড়ে মার্কসবাদের প্রতি তাঁর আরো আগ্রহ জন্মায় । মার্কসকে মূল ভাষায় পড়ার জন্য তিনি জার্মান ভাষা শিখেন। সেন্ট পিটার্সবুর্গে থাকাকালে 'Social Democratic' গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হয়ে মার্কসবাদী তত্ত্বের প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন এবং শ্রমিক শ্রেণির সাথে সহযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
১৮৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লেনিন দেশে ফিরে আসেন। অবিলম্বে একটি ঐক্যবদ্ধ মার্কসবাদী পার্টি গঠনে লেগে যান। সেন্ট পিটার্সবুর্গের ২০টি মার্কসবাদী চক্রকে ঐক্যবদ্ধ করে 'League of struggle for the emancipation of the working class' গঠন করেন। রাশিয়ায় বিপ্লবী মাকর্সবাদী পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটাই ছিল রাশিয়ার প্রথম সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক প্রতিষ্ঠান। শ্রমিক শ্রেণির উপর এর প্রভাব ছিল এই লিগের। সদস্যরা ক্রমশ রাশিয়ায় শিল্প ধর্মঘটগুলোতে অংশগ্রহণ করতে থাকে। এভাবে শ্রমিক আন্দোলনে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভাবধারা সঞ্চারিত হয়। অচিরেই জারের পুলিশ বিভিন্ন ধর্মঘট সংগঠিত করার অপরাধে লেনিনকে গ্রেফতার করে এবং তিন বছরের জন্য সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দেয়। এই সময় অপর এক নির্বাসিতা বিদুষী নারী ক্রুপস্কায়র সঙ্গে তাঁর পরিণয় হয় ১৮৯৮ সালে । সাইবেরিয়াতে বিশেষ এক ধরনের কাগজ পাওয়া যেত, যাতে দুধ দিয়ে লিখলে আগুনের সাহায্য ছাড়া সেই লেখা পড়া যেত না। এই পদ্ধতিতে লিখে পাহারাদারদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাঁর নিদের্শনাবালি তিনি গোপনে মস্কোতে পাঠাতেন। এই নির্বাসনে বসেই তিনি কয়েক খণ্ডে বিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস রচনা করেন। ১৯০০ সালে লেনিন সাইবেরিয়া থেকে রাশিয়ায় ফিরে আসেন। কিন্তু জারের পুলিশ তাঁর জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। সরকারি খাতায় ‘বিপজ্জনক মানুষ' হিসেবে চিহ্নিত লেনিন বুঝতে পারেন যে, সমগ্র রাশিয়া জারের কারাগারে পরিণত হয়েছে এবং রাশিয়ায় বসে বিপ্লবী কাজকর্ম চালানো সম্ভব নয় । লেনিন স্বেচ্ছায় সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত জীবন বেছে নেন এবং বিপ্লবী কাজকর্ম পরিচালনার দিকে নজর দেন। সেখান থেকে তিনি গোপনে যুদ্ধ বিরোধী এবং বিপ্লবী পত্রপত্রিকা, পুস্তক, পুস্তিকা প্রভৃতি রাশিয়াতে পাঠাতে থাকেন, যাতে করে রাশিয়ার মানুষ বিপ্লবী আদর্শে দীক্ষিত হতে পারে ।
অন্তরিন অবস্থায় লেনিন ১৮৯৯ সালে লেখেন 'The development of capitalism in Russia' গ্রন্থ। ১৯০০ সালে প্লেখানভ এর সহায়তায় লেনিন ইসক্রা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ইসক্রা অর্থ স্ফুলিঙ্গ। ইসক্রা পত্রিকা রাশিয়ায় মার্কসবাদ প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পত্রিকার মাধ্যমে রাশিয়ায় সংগ্রামী শ্রমিকদের একত্রিত করা সম্ভব হয়েছিল। লেনিন স্থাপিত ডিসেম্বর। লিপজিগ, স্টুডগার্ড, মিউনিখ ও লন্ডন থেকে ইসক্রা প্রকাশিত হতো। ইসক্রা পত্রিকা রুমানিয়ার মধ্য দিয়ে গোপনে রাশিয়ায় প্রচারিত হতো। প্রথম সংখ্যায় লেনিনের লেখা সম্পাদকীয় ছিল “আমাদের আন্দোলনের সামনে জরুরি কর্তব্য” ইসক্রা এর মাধ্যমে লেনিন সমাজতন্ত্রের উপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লেখতে শুরু করেন। ইসক্রার উদ্দেশ্য ছিল মার্কসবাদের প্রচার, শ্রমিকদের সংগঠিত বিপ্লবের বাণী প্রচার করা। ইসক্রা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে লেনিন একটি সংগঠিত দল ও সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উপর জোর দেন এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উদ্যোগ চালিয়ে যান। এসব বিষয় তিনি তাঁর ১৯০২ সালে প্রকাশিত 'What is to be done' গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। একে বলশেভিক মতাদর্শের প্রাথমিক দলিল বলা হয় ।
প্রবাসে লেনিনের মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন বিপ্লবী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৯০৩ সালে লন্ডনে একটি সম্মেলন আহ্বান করেন। এই সম্মেলনে লেনিন দুটি বক্তব্য রাখেন। প্রথমত, একটি কঠোর শৃঙ্খলাবদ্ধ দল গঠন করা, যার সদস্য হবে শুধুমাত্র সক্রিয় কর্মীরা। দ্বিতীয়ত, এই দলের কর্মসূচি হবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। জারতন্ত্র, ভূস্বামী, পুঁজিপতিদের উচ্ছেদ করে সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা হবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্য। এই সাংগঠনিক ও তাত্ত্বিক প্রশ্নে অধিকাংশ প্রতিনিধি লেনিনকে সমর্থন করলেও স্বল্প সংখ্যক প্রতিনিধি লেনিনের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। ফলে লন্ডন কংগ্রেস থেকে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। লেনিনের সমর্থকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বা বলশেভিক এবং তাঁর বিরোধীরা সংখ্যালঘিষ্ঠ বা মেনশেভিক দল নামে পরিচিত হয়।
১৯০৫ সালে দেশে ফিরে লেনিন বিপ্লবের সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু আবারও দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরবর্তী এক দশক ছিল লেনিনের জন্য কঠিন সময়। লেনিন কখনো হতাশাকে প্রশ্রয় দেননি। ১৯১২ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত লেনিন ইউরোপে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সমাজবাদী সম্মেলনে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর পক্ষে, উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি রাশিয়ার বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা বক্তৃতা দেন এবং বহু মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন।
১৯১৭ সালের মার্চ মাসের ১৫ তারিখ দ্বিতীয় নিকোলাস পদত্যাগ করলে ল্যাভড (Lvov) এর নেতৃত্বে অস্থায়ী সরকার দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে তুলে নেয়। কিন্তু নড়বড়ে এই বুর্জোয়া সরকারের পক্ষে যুদ্ধজনিত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ছিল না। এই সরকার রুশ জনগণের ব্যাপক সমর্থন লাভ করতে পারেনি। ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুইজারল্যান্ড থেকে জার্মান সামরিক বাহিনীর সহায়তায় লেনিন মার্টভসহ দু'শ রুশ বিপ্লবীকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। জার্মান সরকারের লক্ষ্য ছিল লেনিনকে রাশিয়ায় এনে অস্থায়ী সরকারের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট করে তোলা। কিন্তু লেনিন জার্মানির সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চালান। লেনিনের প্রত্যাবর্তনের ফলে দালাল হিসেবে কাজ করেননি। তিনি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে
নমামিতিক দলে শৃঙ্খলা ও ঐক্য ফিরে আসে। একই সময়ে নিউইয়র্ক থেকে ট্রটস্কি
| রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে পেত্রোগ্রাদ শহরে লেনিন। | বলশেভিকদের কর্মপন্থা ঘোষণা করেন। এটা 'এপ্রিল থিসিস' নামে পরিচিত। লেনিন
'এপ্রিল থিসিসে' বলেন
-
(১) সামরিক সরকারের সাথে কোনো সমঝোতা নয়, (২)
| যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হবে, (৩) সব জমি রাষ্ট্রীয়করণ করতে হবে, (৪) দেশের | সর্বত্র সোভিয়েতগুলোতে ক্ষমতা দখল করতে হবে, (৫) বলশেভিক কমিউনিস্ট নামে। | পরিচিত হবে, (৬) উৎপাদন ও বণ্টনের উপর জাতীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এপ্রিল থিসিস বলে যা প্রচারিত হয়, তা লেনিন কর্মসূচি হিসেবেই নির্ধারণ করেছিলেন। তৎক্ষণাৎ কার্যকর করার জন্য নয় ।
১৯১৭ সালের জুলাই মাস নাগাদ সরকারের বিপদ ঘনিয়ে আসে। ইতোমধ্যে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন কেরেনস্কি এবং সেনাপ্রধান হন জেনারেল করনিলভ। কেরেনস্কি নানা দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেন। অন্যদিকে করনিলভ কেরেনস্কির হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে চান। কেরেনস্কি-করনিলভ দ্বন্দ্বে সংকট তৈরি হয়। সামরিক সরকার কঠোর হাতে বলশেভিকদের দমনে উদ্যত হয়। ট্রটস্কি কারারুদ্ধ হন। লেনিন পুনরায় ফিনল্যান্ড পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ সময় লেনিন তার 'State and Revolution' গ্রন্থটি রচনা সমাপ্ত করেন। ফিনল্যান্ড থেকে লেনিন বিপ্লবের জন্য দলকে সংগঠিত হওয়ার নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে রাশিয়ার সর্বত্র বলশেভিক দলের প্রাধান্য স্থাপিত হয়। সামরিক সরকারের দুর্বল মুহূর্তে লেনিন বলশেভিক দলকে বিদ্রোহের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের আহ্বান জানান। ১৯১৭ সালের ৬ নভেম্বর বলশেভিকরা পেত্রোগ্রাদের সকল সরকারি অফিস দখল করে এবং পরের দিন সামরিক সরকারের কার্যালয় উইনটার প্যালেস দখল করে নেয়। ৮ নভেম্বর লেনিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত অব দি পিপলস কমিশার্স নামে একটি নয়া অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। বলশেভিক বিপ্লব জয়যুক্ত এবং মার্কসবাদের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয় ।
লেনিন দুই পর্যায়ের বিপ্লবের কথা বলেছেন। প্রথম পর্যায় হলো বুর্জোয়া পর্যায়। এই পর্যায়ে স্বৈরশাসন উৎখাত হবে এবং ধনতন্ত্রের উপর বিজয় লাভ করবে। দ্বিতীয় পর্যায় হলো প্রলেতারিয়েত পর্যায়। এ পর্যায়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পরিশেষে এভাবে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে।
লেনিন গোঁড়া মার্কসবাদ থেকে কিছুটা বিচ্যুত হন। তিনি বিপ্লব ঘটানোর জন্য কৃষকদের সহায়তাকারী হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন। লেনিন বিশ্বাস করতেন সব কৃষকই ভূমি অভিজাতদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন এবং সহজেই স্বৈরশাসন এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে সহায়তাকারী হতে পারে। লেনিন উদারনৈতিকদের সাথে বন্ধুত্বের পক্ষে ছিলেন না । বরং বিপ্লবী সমাজতন্ত্রীদের সরাসরি ক্ষমতা দখলের পক্ষে ছিলেন।
লেনিন লোকবাদীদের ভ্রান্ত মতাদর্শের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বিকল্প হিসেবে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মার্কসীয় দর্শন । বিপ্লবতত্ত্ব পর্যালোচনা করে লেনিন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, নিছক সাম্যবাদী কার্যকলাপের দ্বারা বিপ্লবীদের উদ্দেশ্য সাধন হবে না। সুগঠিত আন্দোলন ও সুশৃঙ্খল বিপ্লবী দল গঠনের মধ্যেই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিহিত আছে। লেনিনের মতে মার্কসবাদ অনুযায়ী রাশিয়ার জারতন্ত্রের পতনের পর বুর্জোয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং তারপর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। জারতন্ত্রের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রাশিয়ার তৎকালে বিরাজমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার নিরিখে লেনিন মার্কসীয় চিন্তায় কিছু পরিবর্তন আনয়ন করেন। মার্কস বুর্জোয়া বিপ্লবকে বিপ্লবী প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায় বলেছেন। ১৯০৫ সালের বিপ্লবের ব্যর্থতার পরে লেনিন উপলব্ধি করেন যে, যেহেতু রাশিয়ায় প্রকৃত বুর্জোয়া নেই তাই প্রকৃত বিপ্লব প্রলেতারিয়েতদের মুখ্য ভূমিকার দ্বারাই ঘটানো সম্ভব। লেনিন বাস্তবে বলশেভিকদের দ্বারা এ ধরনের একটি বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হন ।
লেনিন প্রলেতারিয়েতদের একনায়কতন্ত্রের একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন, যা মার্কসের সংজ্ঞা থেকে পৃথক। মার্কস মনে করতেন, রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যাবে, কেননা রাষ্ট্র হলো শোষণের হাতিয়ার। কিন্তু লেনিন তা মনে করতেন না। লেনিন রাষ্ট্রকে পার্টির সমর্থক মনে করতেন এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উপায় মনে করতেন। লেনিন বিশ্বাস করতেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি মাত্র শ্রেণি থাকবে এবং ঐ শ্রেণির স্বার্থ তুলে ধরার জন্য একটি পার্টিই থাকবে। লেনিন পার্টির মধ্যে গণতন্ত্রের এবং পার্টির নিচ থেকে উপরের কমিটিতে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। পার্টি হবে কেন্দ্রীভূত ও সুশৃঙ্খলিত । পার্টির নিম্ন কমিটিগুলো উপরের কমিটির অধীনস্থ থাকবে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ফলে লেনিনের এই ধারণা জন্মায় যে, রাশিয়ায় সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। বহুদলীয় গণতন্ত্র রাশিয়ার জন্য উপযোগী নয় বলে তিনি মনে করতেন। রুশ শ্রমিকদের শ্রেণিসংগ্রামের পথে মার্কসীয় তত্ত্ব অনুযায়ী অধিকার আদায়ের কথা তিনি ভাবতেন। একারণে রুশ শ্রমিকদের মধ্যে মার্কসীয় তত্ত্ব প্রচার দ্বারা তাদের শ্রেণিচেতনা জাগরণের উপর তিনি জোর দেন। শ্রমিকরাই হলো বিপ্লবের হাতিয়ার এবং একমাত্র সর্বহারা শ্রমিকরাই বিপ্লব আনতে সক্ষম, একথা তিনি বিশ্বাস করতেন।
তখন মার্কসবাদ বিকৃত হচ্ছিল প্রচুর পরিমাণে। রাশিয়ার বহু মার্কসবাদী ত্রুটিমুক্ত ছিল না। এদের মধ্যে একদল আইনানুগ মার্কসবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এরা একদিকে নারোদনিকদের বিরোধিতা করেছিলেন অন্যদিকে পুঁজিবাদের
শ্রেষ্ঠত্বের কথাও প্রচার করেছিলেন। রাশিয়ার আইনানুগ মার্কসবাদীরা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও সর্বহারা একনায়কতন্ত্রকে বাদ দিয়েই মার্কসবাদ প্রচার করতে চেয়েছিলেন। তারা মার্কসবাদের মূল তত্ত্বকেই অস্বীকার করেন। লেনিন এই আইনানুগ মার্কসবাদীদের প্রবলভাবে আক্রমণ করেন এবং তাদের যুক্তি ও তত্ত্বকে খণ্ডন করেন। কিন্তু তিনি নারোদনিকদের বিরুদ্ধে প্রচার কাজের জন্য সাময়িকভাবে এদের সাথে সমঝোতা করা শ্রেয় বলে মনে করেন। রাশিয়ার মার্কসবাদীদের আগে একটি ত্রুটি ছিল। মার্কসবাদীরা মার্কসবাদের আলোচনা ও মার্কসবাদের মৌখিক প্রচার করেছিলেন। কিন্তু মার্কসবাদকে শ্রমিকদের সংগ্রামের সাথে যুক্ত করে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেননি। এ ত্রুটি দূর করার জন্য শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে আন্দোলন গড়ে তোলা রুশ মার্কসবাদীদের আশু করণীয় বলে লেনিন ঘোষণা করেন ।
লেনিন বিশ্ব বিপ্লবের কথা ও মার্কসবাদকে হালনাগাদ করেন। লেনিনের সময়ে ধনতান্ত্রিক বিশ্ব বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ শুরু করে। লেনিন মনে করেন এর ফল পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় টানাপোড়েন ও অসংগতি দেখা দেবে যা বিশ্ব বিপ্লবকে উৎসাহিত করবে। লেনিন যুক্তি দেখান যে, যেসব দেশ পুঁজিবাদী শোষণে ভোগে, সেসব দেশে বিপ্লবী কার্যকলাপের অবস্থা তৈরি হয়। সেসব দেশে বলশেভিকরা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব দিতে পারে। স্টালিন যথাযথভাবে মার্কসবাদে লেনিনের অবদানকে বর্ণনা করে লিখেছেন, Leninism is the Marxism of the era of imperialism and of the proletarian revolution.
লেনিন ছিলেন রুশ বিপ্লবের মহানায়ক, রুশ বিপ্লবের রূপকার। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের বহু নেতা ছিলেন। এর বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন নেতার আবির্ভাব হয় । কিন্তু ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের নেতা ছিলেন একজন, তিনি হলেন লেনিন। এ কারণে খ্রিস্টোফার হিল লিখেছেন রুশ বিপ্লব ছিল লেনিনের বিপ্লব। তিনি একাধারে রাজনৈতিক, তাত্ত্বিক ও সংগঠক। তিনি শুধু রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না, বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনেরও একজন প্রধান নেতা ছিলেন। লেনিনের অন্যতম কৃতিত্ব মার্কসবাদকে বিশ্লেষণ করে একে রাশিয়ার উপযোগী করে প্রয়োগ করা। তিনি মার্কসবাদেক বিকশিত করেন, সংশোধন করেননি। তিনি ছিলেন মার্কসীয় তত্ত্বের রূপকার। মার্কসীয় বিমূর্ত তত্ত্বকে রাশিয়ার জীবনধারার উপযোগী করে তাঁর বাস্তব এবং সুযোগমতো প্রয়োগ দ্বারা তিনি বিশ্বকে ফলিত সাম্যবাদের নয়া পথ দেখান। ঐতিহাসিক ফিশার বলেছেন যে, লেনিন মার্কসীয় দর্শনের প্রতিপাদকে রাশিয়ার সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক পদ্ধতির মাধ্যমে অনিবার্য উত্তরণে পৌঁছে দিয়েছেন। ১৯২৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনিই ছিলেন এই চিন্তাদর্শের মহান রূপকার । তিনি ছিলেন একাধারে ইতিহাসের সৃষ্টি এবং ইতিহাসের স্রষ্টা।
রাশিয়ার তথা পৃথিবীর ইতিহাসে রুশ বিপ্লবের মুখ্য নায়ক লেনিনের নাম স্থায়ী অক্ষরে মুদ্রিত হয়ে আছে। তাঁর প্রকৃত নাম ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ। তিনি ১৮৭০ সালে কাজান প্রদেশের সিনবিরস্ক নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। লেনিন বিপ্লবী ঐতিহ্যপূর্ণ এক পরিবারে জন্মেছিলেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জারকে হত্যা করতে গিয়ে ফাঁসিতে প্রাণ হারান (১৮৮৭ সালে)। এই মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ কিশোর লেনিন জারতন্ত্রের পতন ঘটাতে ব্রতবদ্ধ হন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অল্প পরেই ছাত্র বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। কয়েক বৎসর পর অবশ্য তিনি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। তিনি আইনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন (১৮৯৯ সাল)। তিনি মার্কসবাদের অনুরাগী হয়ে ওঠেন। বিপ্লবী দলে যোগদানের অপরাধে নির্বাসিত হন।
১. লেনিনের আদর্শ
সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত অবস্থাতেও লেনিন রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ‘ইসক্রা' পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ লিখে এই স্বপ্ন সার্থক করার পথ নির্দেশ করতেন। লেনিনের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বিপ্লবের মুখ্য নায়ক হলো শ্রমিক শ্রেণি। সুতরাং তাদের মধ্যে মার্কসীয় তত্ত্ব প্রচার করে তাদের শ্রেণি সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। একমাত্র শ্রমিকরাই বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে ।
২. গুণাবলি
লেনিন শ্রমকুণ্ঠ তাত্ত্বিক নেতামাত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন অক্লান্ত কর্মী, প্রত্যয়দৃঢ় ও বাগ্মী। অতি গভীরে প্রসারিত চিন্তার অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আর তাঁর ছিল অসাধারণ বাস্তবজ্ঞান ।
৩. এপ্রিল থিসিস
মার্চ বিপ্লবের পর যখন বুর্জোয়া সামরিক সরকার ব্যর্থ অথচ সোশ্যাল ডেমোক্রেট দলও উপযুক্তভাবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছে না সেই সংকটকালে দীপ্ত সূর্যের মতো জার্মান সরকারের সহায়তায় সুইজারল্যান্ড থেকে রাশিয়ায় আভির্ভূত হন লেনিন। লেনিন তাঁর পরিকল্পিত সমাজ বিপ্লব শুরু করলে রাশিয়া বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এই আশাতেই অবশ্য জার্মানি তাকে সাহায্য করেছিল। স্বদেশে ফিরেই তিনি এপ্রিল থিসিসে বলেন যে, রাশিয়ায় একই সঙ্গে সামন্ত প্রভু ও বুর্জোয়াদের হাত থেকে শ্রমিকের স্বার্থে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ায় এক দুর্লভ সুযোগ উপস্থিত, অর্থাৎ বুর্জোয়া শাসনের অনিবার্য সংকটের জন্য অপেক্ষা না করেই বুর্জোয়া বিপ্লবের সঙ্গেই শ্রমিক বিপ্লব ঘটাতে হবে। ধনতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ধাপ বাদ দিয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ সম্প্রদায়ের (প্রলেতারিয়েত) একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং বলশেভিকদের ক্ষমতা দখল করতেই হবে। তাঁর 'শান্তি, রুটি ও জমি'র স্লোগান জনচিত্ত জয় করেছিল। অবশেষে লেনিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নভেম্বর বিপ্লব জয়যুক্ত হয় । লেনিনের অভ্রান্ত নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা ও বাস্তবজ্ঞান রাশিয়ায় নব প্রতিষ্ঠিত সাম্যবাদী শাসনকে অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করেছিল। তিনি যথার্থভাবেই বুঝেছিলেন যে, একই সঙ্গে বিপ্লবের সংহতি সাধন ও যুদ্ধ পরিচালনা রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই উচ্চমূল্যে জার্মানির কাছ থেকে অপমানজনক ব্রেস্ট লিটভস্কের সঙ্গি স্বাক্ষর করতে তিনি পিছপা হননি। এর ফলে বিস্তীর্ণ ভূভাগ হারালেও রাশিয়া দেশ গঠনের সুযোগ পেয়েছিল। আবার যথার্থভাবেই এই সন্ধিকে তিনি সাময়িক মনে করেছিলেন। বস্তুত কিছুকাল পরই মিত্রপক্ষের কাছে জার্মানির পরাজয়ে এই সন্ধি নাকচ হয়ে যায়। এগুলো সমস্তই তাঁর দূরদর্শিতা ও বাস্তবজ্ঞানের সাক্ষ্য বহন করে।
৫. নয়া অর্থনৈতিক নীতি
‘নয়া অর্থনৈতিক নীতি' প্রবর্তন তাঁর উচ্চ রাজনীতিক সুলভ বাস্তববোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং প্রমাণ করে যে, তিনি অহেতুক গোঁড়ামি থেকে মুক্ত ছিলেন ও প্রয়োজনবোধে নমনীয় হতে পারতেন। এই ‘নয়া অর্থনৈতিক নীতি’তে প্রকৃতপক্ষে তিনি মার্কসবাদের মূল বিষয় অক্ষুণ্ন রেখে ধনতন্ত্রবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদের মধ্যে ফলপ্রসূ সমন্বয়সাধন করেন। এর ফলে রাশিয়ায় কৃষি শিল্পে অভাবনীয় উন্নতি ঘটে-রাশিয়া আর্থিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি পায় ।
৬. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়
লেনিন বুঝেছিলেন, ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সাম্যবাদী সোভিয়েত সরকারকে স্বীকৃতি সহজে দেবে না। এই স্বীকৃতি না থাকায় রাশিয়া প্যারিসের শান্তি বৈঠকে (১৯১৯ সাল) আমন্ত্রিত হয়নি। সুতরাং পূর্ব ইউরোপের পুনর্গঠনের ব্যাপারে রাশিয়া তার বক্তব্য রাখতে পারেনি। ভার্সাই সন্ধি দ্বারা রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল (জার্মানিকে যা প্রদত্ত হয়েছিল)-ফিনল্যান্ড, ল্যাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্থোনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয় । লেনিন তাঁর এই কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা দূর করার জন্য জার্মানির সঙ্গে র্যাপালোর চুক্তি স্বাক্ষর করেন (১৯২২ সাল)। উপায়ান্তর না দেখে ইংল্যান্ড ১৯২৪ সালে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও একে একে ঐ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। অবশেষে ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি বিশ্বের প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্রের জনক লেনিন দেহত্যাগ করেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, রাশিয়ানরা কার্ল মার্কস, ফ্রেডারিক এঙ্গেলস, পিবি এক্সেলরড ও প্লেখানভ সহ বহু সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের অনুসারী দার্শনিক ও রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রে মার্কসবাদ প্রসারের যে স্রোতধারার সৃষ্টি হয় তার প্রভাব রাশিয়াতেও পড়ে। মার্কসবাদেই তারা বৈপ্লবিক মতাদর্শ খুঁজে পায়। মার্কসবাদের আধুনিক প্রয়োগ দেখা যায় লেনিন ও বলশেভিক দলের জারতন্ত্র দমনে। আর ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবে মার্কসবাদের চূড়ান্ত প্রয়োগ ঘটে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার মার্কসবাদী নেতা লেনিন গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]