১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পটভূমি আলোচনা কর ।

সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব অন্যতম। ১৯০৫ সালের মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে সমস্ত ঘটনা শিরোনামে মুদ্রিত তাদের মধ্যে বিপ্লবের পর ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের পতন হয় এবং রাশিয়ায় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে দ্বিতীয় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব বলা হয় এবং নয়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এটি মার্চ বিপ্লব নামেও পরিচিত।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লব, ১৯১৭
February Revolution, 1917
সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি (পুরানো ক্যালেন্ডার)/ মার্চ (নয়া ক্যালেন্ডার) মাসে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে বিপ্লব সংঘটিত হয় তা ‘ফেব্রুয়ারি বিপ্লব, ১৯১৭' নামে পরিচিত। এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী জার শাসনের অবসান ঘটে। জার শাসক দ্বিতীয় নিকোলাসের শোচনীয় পতন ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিপ্লবে ডুমা বা রুশ জাতীয় পরিষদের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া শ্রেণি ক্ষমতা অধিকার করে। এর ফলে জারতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের পতন ঘটে। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সন তারিখ সম্পর্কে বলা দরকার যে-সোভিয়েত (রুশ) বিপ্লবী ক্যালেন্ডার পুরাতন ইউরোপীয় ক্যালেন্ডারের ১৩ দিন পরে ধরা হয়। সেই অর্থে পুরাতন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে মার্চ বিপ্লব বলা হয় ৷
১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের বিভিন্ন পর্যায়
Various Phases of the Revolution of 1917
ফরাসি বিপ্লবের ন্যায় রুশ বিপ্লব (১৯১৭ সাল) হল আধুনিক যুগের ইতিহাসের এক প্রধান ঘটনা। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় এক অথবা একাধিক বিপ্লব ঘটে। এ সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে তিন প্রকার মত দেখা যায়। রদেনস্টিন (Rothenstein) নামক ঐতিহাসিকের মতে, রাশিয়ায় প্রকৃতপক্ষে তিনটি বিপ্লব ঘটে। এই তিনটি বিপ্লবের শেষ পাঁদে বলশেভিক দল লেনিনের নেতৃত্বে ক্ষমতা লাভ করে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। রদেনস্টিনের মতে, ১৯০৫ সালে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম বিপ্লব ঘোষিত হয়। এর ফলে জারতন্ত্রের পতন সূচিত হয়। এরপর ১৯১৭ সালে মার্চ মাসের বিপ্লবে ডুমা বা রুশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়া শ্রেণি ক্ষমতা অধিকার করে। জার ও অভিজাততন্ত্রের পতন ঘটে। রাশিয়ায় প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়। এটি ছিল রুশ বিপ্লবের দ্বিতীয় ধাপ। এরপর ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে (মতান্তরে অক্টোবর মাসে) বলশেভিক দল বুর্জোয়াদের বিতাড়িত করে শ্রমিক শ্রেণির সাহায্যে সমাজতন্ত্র স্থাপন করে। এটি ছিল বিপ্লবের শেষ ধাপ। E. H. Carr প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, রুশ বিপ্লবের দুটি পর্যায় ছিল। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে জারতন্ত্রের পতন ও প্রজাতন্ত্র ঘোষণা দ্বারা রাজনৈতিক বিপ্লব সাধিত হয়। জারের স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটে। বুর্জোয়া শ্রেণি ক্ষমতা অধিকার করে। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে বলশেভিক শ্রেণি শ্রমিকরাজ প্রতিষ্ঠা করলে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে। রুশ বিপ্লবের একটি তৃতীয় ব্যাখ্যা রুশ সরকার দ্বারা প্রকাশিত পুস্তকে পাওয়া যায়। এই তৃতীয় মত অনুসারে ১৯১৭ সালে দুটি বিপ্লব ঘটে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে জারতন্ত্রের পতনের ফলে 'বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব' সাধিত হয়। কিন্তু বুর্জোয়া শ্রেণি তাদের নিজ স্বার্থে বিপ্লবকে ব্যবহার করে। ফলে ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে ‘সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব' ঘটে।
৪.৩ ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পটভূমি (Background)
১৯১৭ সালের বিপ্লবের মূল রাশিয়ার ইতিহাসে প্রোথিত ছিল। প্রায় তিন শতাব্দী ধরে রোমানভ বংশীয়রা জারপদ অলংকৃত করে আসছিলেন। তাঁদের রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব ছিল দৈবস্বত্বে বিশ্বাসী স্বৈরাচারপ্রিয় জারদের হাতে। অভিজাতদের পরামর্শে জার শাসন পরিচালনা করতেন। শাসনকার্যে জনসাধারণের অংশগ্রহণের কোনো অধিকার ছিল না। তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতাও ছিল না। বিনা বিচারে আটক, বেত্রাঘাত, সাইবেরিয়ায় নির্বাসন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজয়ের পর পরিস্থিতির চাপে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার অভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু সংস্কারকামিতা তাঁর চরিত্রের সহজাত প্রবণতা ছিল না। নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারপ্রিয়তার জন্য তিনি সংস্কারগুলোর যুক্তিসংগত সীমানায় পৌঁছুতে চাননি দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের পর জারতন্ত্র প্রথাসিদ্ধ সংস্কার বিমুখতায় ফিরে যায়। অথচ তখন প্রায় সমগ্র ইউরোপে গণতন্ত্রবাদ-জাতীয়তাবাদপ্রসূত পরিবর্তনের প্রবল স্রোত বইছে; রাশিয়ার লৌহবেষ্টনীতে তা প্রতিহত হচ্ছিল। অবশ্য রাশিয়ার শাসকশ্রেণি সেই লৌহবেষ্টনীকে দমনপীড়নের দ্বারা দুর্ভেদ্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলো। ১৯০৫ সালের বিপ্লবের প্লাবন দেখা দিল রাশিয়ায়। এই বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারী বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য এবং শ্রমিকশ্রেণি অর্থনৈতিক, সামাজিক অধিকার অর্জনের জন্য সচেষ্ট হয়। তাদের আন্দোলন যেমন ছিল স্বৈরাচারী শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে তেমনি পুঁজিপতিদের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধেও। অনন্যোপায় জার দ্বিতীয় নিকোলাস ডুমা বা পার্লামেন্ট আহ্বান করে অর্ধ-সাংবিধানিক শাসন প্রবর্তন করেন। কিন্তু বিপ্লবের ধাক্কা সামলে উঠে ডুমাকে ক্ষমতাহীন করতে থাকেন তিনি। নির্বাচনের আইন এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যে কুলাক বা বৃহৎ ভূস্বামীরাই ডুমার সদস্যপদ লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী স্টোলিপিন প্রধানত এই কুলাকদের স্বার্থেই শাসন পরিচালনা করতে থাকেন। ফলে অগণিত দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকদের অসন্তোষ রাশিয়াকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে ।
দেশের এই সংকটকালে রাশিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে। প্রাথমিক
জয়লাভের পর রাশিয়ার ধারাবাহিক বিপর্যয় ঘটতে থাকে। বুর্জোয়া ও ভূস্বামী সদস্যরা। ডুমাতে একটি প্রগতিবাদী দল (Progressive Bloc) গঠন করে। জনগণের আস্থাভাজন দায়িত্বশীল সরকার এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে যুদ্ধ সমাপ্তির সোচ্চার দাবি ওঠে। জার নিকোলাস এতে কর্ণপাত না করে ডুমাকে স্থগিত রাখেন। ১৯১৬ সালে পুনরায় ডুমা আহুত হয়। ডুমা এই দাবি পুনরায় উত্থাপন করে এবং যুদ্ধ পরিচালনায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আনে। ক্রুদ্ধ জার ডুমার অধিবেশন স্থগিত রাখেন। অদূরদর্শী ও অবাকস্থিতচিত্ত জার সম্রাজ্ঞী আলেকজান্ডার প্রিয়পাত্র ভণ্ড সন্ন্যাসী রাসপুটিনের পরামর্শে শাসন ও যুদ্ধ পরিচালনায় মারাত্মক ভুল করতে থাকেন। ১৯১৬ সালের শেষাশেষি এমনকি উগ্র জারতন্ত্রের সমর্থকদের ধারণা হয় যে, আসন্ন বিপ্লবকে রুখতে হলে নিকোলাসকে জারপদ থেকে অপসারিত করতে হবে। তাঁর চৈতন্যোদয়ের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাঁরা রাসপুটিনকে হত্যা করে। তবু জার তাঁর স্বৈরাচারী নীতিতে অটল থাকলেন। বস্তুত, তাঁর শাসন করার কোনো ক্ষমতাই ছিল না। বিপ্লবের এক সপ্তাহ আগে যেদিন পেত্রোগ্রাদে প্রায় নব্বই হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে যোগদান করেছে সেদিন নিকোলাস ছেলেদের হাম হওয়ায় স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে লিখেছিলেন যে, তাঁরও খুব অসুবিধে; কেননা প্রতি সন্ধ্যায় তাঁর নিয়মিত আধঘণ্টার ‘পেসেন্স' খেলা হচ্ছে না, অবশ্য তিনি শীঘ্রই অবসর সময়ে ডোমিনো খেলা শুরু করবেন। (৬ মার্চ, ১৯১৭ সাল)। এক কথায় অকর্মণ্য অথচ স্বৈরাচারপ্রিয় জার গণঅসন্তোষকে বর্ধিত করে চলেছিলেন।
জার শাসনাধীন রাশিয়া ছিল 'বহুজাতির কয়েদখানা'। রুশ জাতি ছাড়া বহু অরুশ জাতি রাশিয়ায় বসবাস করতো। যেমন- ইউক্রেনীয়, পোল ইত্যাদি ইউরোপীয় জাতি, জর্জীয়, আর্মেনীয় প্রভৃতি দেশীয় অর্ধ-খ্রিষ্টান জাতি এবং উজবেক, কাজাক, তাজিক প্রভৃতি এশীয় মঙ্গোল ও তাতার মুসলিম জাতিসমূহ। এই সমস্ত জাতির জাতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে জোরজবরদস্তি রুশ সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়াই ছিল জারতন্ত্রের সুপরিকল্পিত নীতি। স্বভাবতই জারতন্ত্রের প্রতি এরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিল।
রাশিয়ার সমাজব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল শ্রেণিবৈষম্য। সমাজের উচ্চস্তরে ছিল অভিজাতরা ও নিম্নস্তরে কৃষক ও শ্রমিকরা। মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী ও শহরবাসীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। অভিজাতরা জন্মকৌলীন্যের জোরে সমস্ত রকম সামাজিক সম্মান ও প্রতিপত্তি রাজনৈতিক অধিকার ও ক্ষমতা ভোগ করতো। রাষ্ট্রের অধিকাংশ ভূসম্পত্তির মালিক ছিল তারাই। রাশিয়ার প্রজাশক্তির বৃহত্তম অংশ ছিল কৃষক। তারা ছিল অশিক্ষিত ও দরিদ্র। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার সার্ফ বা ভূমিদাসদের মুক্তি দিয়েছিলেন কিন্তু তারা এতে খুব উপকৃত হয়নি। 'মির' নামক গ্রাম্য সমিতির অত্যাচারে এদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালের বিদ্রোহের পর তারা নিজ নিজ জমির অধিকার পায়। কিন্তু এদের অনেকেরই স্বাধীনভাবে চাষ করার সামর্থ্য ছিল না। ফলে তারা জমি বিক্রয় করে ফেলে। কুলাক বা বৃহৎ জোতদার শ্রেণি এই জমির মালিক হয়ে বসে। সুতরাং দিন দিন তাদের দুর্দশা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
রুশ শ্রমজীবীদের অবস্থাও কৃষকদের মতোই অসহনীয় ছিল। ফ্যাক্টরি প্রথার বৈধ মাধ্যম ছিল না। ধর্মঘট করা বা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা নিষিদ্ধ ছিল। দমন-উৎপীড়ন করে বহু ট্রেড ইউনিয়ন ভেঙে ফেলা হয়। ফলে তারা জারতন্ত্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের অসন্তোষে ইন্ধন যোগাল বলশেভিকদের সাম্যবাদী প্রচার। তাদের বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে, দেহশ্ৰমী সমাজের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে তাদের দুরবস্থা ঘুচবে না। ১৯০৫ সালে বিপ্লবের সময় রুশ শ্রমিকশ্রেণি তাদের এই রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় দিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রুশ শ্রমিকদের সেই সচেতনতা ও সংঘবদ্ধতা বৃদ্ধি পায় ৷
ফরাসি বিপ্লবের মতোই রুশ বিপ্লব সাহিত্যের ক্ষেত্র থেকে পরোক্ষ অনুপ্রেরণা লাভ করেছিল। গোর্কি, টলস্টয়, তুর্গেনিভ, দস্টয়েভস্কি প্রমুখ রুশ সাহিত্যসেবীদের রচনা রুশ বিপ্লবের মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। বাকুনিনের নৈরাজ্যবাদ ও কার্ল মার্কসের সাম্যবাদ রুশ বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা ও চেতনাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। এঁদের রচনা থেকে সর্বপ্রকার শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার শক্তি জনসাধারণ লাভ করেছিল ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ রুশ বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে অসংখ্য প্রাণহানি ও সামরিক বিপর্যয়, চোরাকারবারীদের মুনাফা অর্জনের নির্লজ্জ প্রয়াসের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, কয়লার আমদানি বর্জনের ফলে কলকারখানা ও যানবাহন বন্ধ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি, কৃষকদের বাধ্যতামূলকভাবে সৈন্যবিভাগে নিযুক্তি ও তজ্জনিত কৃষির ব্যাপক ক্ষতি এবং সর্বোপরি খাদ্যাভাব জারশাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রচণ্ডভাবে বিক্ষুব্ধ করে তোলে । এই বিক্ষোভ প্রথমে খাদ্যদাঙ্গা হিসেবে ও পরে বিপ্লবে রূপলাভ করে।
১৯১৭ সালের ৮ মার্চ-এর (পুরানো বর্ষপঞ্জি অনুসারে ২৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে প্রায় নব্বই হাজার শ্রমিক পেত্রোগ্রাদে ধর্মঘট করে। ২ দিন পর তা সাধারণ ধর্মঘটে রূপলাভ করে। বলশেভিক দলের পেত্রোগ্রাদ সমিতি পেত্রোগ্রাদের রাস্তা প্রচারপত্রে ছেয়ে ফেলে। এতে লেখা ছিল “জারতন্ত্র নিপাত যাক ! যুদ্ধ বন্ধ কর ! পৃথিবীর শ্রমিকদের ভ্রাতৃত্ব দীর্ঘজীবী হোক।” পরদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পথযুদ্ধ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণের কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের সাহায্য করে। শ্রমিকরা অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে বহু অস্ত্রশস্ত্র দখল করে। তারা কারাগার ভেঙে বন্দিদের মুক্ত করে এবং জারের মন্ত্রী ও সেনাপতিদের গ্রেফতার করে। ঐ দিনই সন্ধ্যার মধ্যে সমগ্র পেত্রোগ্রাদ বিদ্রোহীদের করায়ত্ত হয়। ডুমার ভীতসন্ত্রস্ত বুর্জোয়া সদস্যরা দ্রুত একটি সামরিক সমিতি গঠন করে। ঐ দিনই পেত্রোগ্রাদ শ্রমিক ও সৈন্যদের নিয়ে গঠিত হয় সোভিয়েত এবং প্রথম অধিবেশন বসে। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৫ মার্চ ডুমা সমিতি সাময়িক সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। ঐ দিন রেলশ্রমিকরা পেত্রোগ্রাদগামী জারের ট্রেন অবরোধ করে রেলকামরাতেই জারকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। কিন্তু এই বুর্জোয়া সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সংকট থেকে রুশদের পরিত্রাণ করতে পারল না। সাম্যবাদী দলের নেতা লেনিন ও তাঁর সহযোগী ট্রটস্কি সামরিক সরকারকে উচ্ছেদ করে সাম্যবাদী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করলেন ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে।
বি. এইচ. সুমনার বলেছেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ না দিলে জারতন্ত্রের পতন ঘটত না। (Tsarism would not have collapsed as it did but for the War.)। অনেকে এই মতের অনুসারী হলেও এটি যুক্তিযুক্ত নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জারতন্ত্রের পতন ত্বরান্বিত করেছিল সত্য, কিন্তু অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার জন্য জার শাসনের অবসান ঘটতে বাধ্য ছিল। ১৮২৫ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত বহুবার জারশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। ১৯০৫ সালের বিপ্লব জারতন্ত্রে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছিল। এর পর থেকেই জারতন্ত্রের দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। অবশেষে ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব তার অবসান ঘটায়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]