১৯১৭ সালের ‘মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের' (বলশেভিক বিপ্লব) প্রধান প্রধান কারণ ও ফলাফলের বিবরণ দাও ।

বলশেভিক বিপ্লব
১৯১৭ সালের মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব (বলশেভিক বিপ্লব) সারা বিশ্ব জুড়ে একটি সাড়া জাগানো ঘটনা। এই বিপ্লবের সাফল্য সারা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক Turning point. সোভিয়েত ইউনিয়নে বিংশ শতকের প্রথম দিকে বিপ্লব আলোড়ন সৃষ্টি করে। জারের বিরুদ্ধে ১৯০৫ সালের ১ম বিপ্লব, ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব (মার্চ) তথা ২য় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব যা বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এ বিপ্লবের ধারাবাহিক ৩য় পর্যায় হচ্ছে ১৯১৭ সালের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫.১ ১৯১৭ সালের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব
বিশ শতকে সারা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৯১৭ সালের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিপ্লব সমগ্র মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক—এক কথায় রাশিয়ার আর্থসামাজিক জীবনে এক গুণগত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এক নয়া যুগের সূচনা করে এ বিপ্লব। এই বিপ্লব শুধু রাশিয়ার ইতিহাসে নয়, সমগ্র মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই বিপ্লব সংগঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণি। রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণি, কৃষক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিল রাশিয়ান কমিউনিস্ট তথা ‘বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে। এই পার্টির মূলনায়ক ছিলেন ভ, ই. লেনিন বা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। লেনিনের নেতৃত্বে সংঘটিত রাশিয়ার এই বিপ্লব হলো পৃথিবীর প্রথম সফল
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে হয়েছিল বলে এই বিপ্লবকে বলশেভিক বিপ্লব নামে অভিহিত করা হয়। আবার অক্টোবর মাসে হয়েছিল বলে এই বিপ্লবকে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবও বলা হয়ে থাকে। এই বিপ্লবের মূল শক্তি ছিল। শ্রমিক শ্রেণি। তাই চরিত্রগতভাবে এই বিপ্লব হলো প্রলেতারিয়েত কমিউনিস্ট বিপ্লব । ইতিপূর্বে ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সফল বুর্জোয়া বিপ্লব । এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমাজ ও রাজনীতিতে সামন্ত শাসন ও শোষণের অবসান ঘটিয়ে বুর্জোয়া যুগের সূচনা করে। অন্যদিকে, ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব | বা বলশেভিক বিপ্লব বুর্জোয়া যুগের অবসান রাশিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর প্রভাব অনুভূত হয়েছিল আফ্রো-এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে। সারা পৃথিবীতে সমাজ পরিবর্তন ও বদলের লড়াইয়ে বলশেভিক বিপ্লব এখনও পৃথিবীর দেশে দেশে | আদর্শ হিসেবে বিরাজমান। এই বিপ্লব সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী শোষিত, বঞ্চিত, | অবহেলিত, নিপীড়িত মানুষকে পুরো বিশ শতক ধরে মুক্তির দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে এবং একবিংশ শতকেও মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। প্রায় শতবর্ষ পূর্তি হতে চললেও বলশেভিক বিপ্লব এখনও পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি জীবন্ত ঘটনা হিসেবে বিরাজমান ।
৫.২ ১৯১৭ সালের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের কারণসমূহ
বলশেভিক বিপ্লবের মতো বিশাল ঐতিহাসিক ঘটনার পটভূমি আকস্মিকভাবে কিংবা স্বল্প সময়ের ভেতরে তৈরি হয়নি। এই বিপ্লবের সামাজিক পটভূমি তৈরি হয়েছিল উনিশ শতকে। বলা যায় ইউরোপে সমাজতন্ত্রবাদের উদ্ভব ও বিকাশ এবং রাশিয়াতে এই আন্দোলনের বিস্তৃতি বলশেভিক বিপ্লবের পটভূমি প্রস্তুত করেছিল । এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের কারণসমূহ হলো নিম্নরূপ :
১. ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের উদ্ভব ও বিকাশ
শিল্পবিপ্লবোত্তর ইউরোপের সমাজ ও রাজনীতিতে বহুমুখী উত্থানপতনের ভেতরে পুঁজিপতিদের শোষণ, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের কল্যাণ, দ্রুত শহরায়নের সমস্যাসমূহ মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয় প্রধান হয়ে ওঠে। সমাজ পরিবর্তন, মানুষের অধিকার রক্ষা, শ্রমিক শ্রেণির কাজের সময়, বেতন ভাতা, ছুটি এবং সর্বোপরি পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে পশ্চিম ইউরোপে সামাজিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। এই পটভূমিতে উৎপত্তি ঘটে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের। ব্রিটিশ সমাজতন্ত্রী চার্লস ওয়েন, ফরাসি সমাজতন্ত্রী সেন্ট সাইমন, চার্লস ফুরিয়ার, লুই ব্লাঙ্ক, প্রুধোঁ, রাশিয়ার সমাজতন্ত্রী মিখাইল বাকুনিন, ক্রপোৎকিন প্রমুখের হাত ধরে উনিশ শতকেই সমাজতন্ত্র
একটি রাজনৈতিক মতাদর্শে পরিণত হয়। এই সকল সমাজতন্ত্রী ইউরোপের সমাজ রাজনীতিতে সমাজতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করলেও বিষয়টির পরিসর, রাজনীতির মতাদর্শের দিক থেকে এর প্রয়োগ, এই মতাদর্শের লক্ষ্য ও পরিসীমা নির্ধারণ করতে পারেননি। এই জন্য এই সকল সমাজতন্ত্রীকে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রী বলা হয়ে থাকে। এই সমাজতান্ত্রিক মতবাদের বাস্তব পরিপূর্ণ রূপরেখা, যৌক্তিক প্রয়োগ পদ্ধতি এবং সমাজতন্ত্র অর্জনের পথরেখা তুলে ধরেন কার্ল মার্কস। এই জন্য মার্কসকে। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক বলা হয়। কার্ল মার্কসের আদর্শ ও নির্দেশিত পথরে সামনে রেখে উনিশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের দেশে দেশে বিপ্লবী কমিউনিস্ট সমাজতান্ত্রিক পার্টি গড়ে ওঠে। রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি কার্ল মার্কসের নির্দেশিত আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক দল। মহামতি লেনিন মার্কসের নির্দেশিত পথ ও আদর্শকে সৃজনশীলভাবে এগিয়ে নিয়ে যান এবং রাশিয়ার বিপু সম্পন্ন করেন। তাই বলা যায় যে, বলশেভিক বিপ্লব হলো উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া সমাজ বদলের লড়াইয়ের চূড়ান্ত পরিণতি ।
২. রাশিয়ার সমাজ কাঠামোর অসারতা
আঠারো শতক থেকে ইউরোপের বিশেষত পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে বহুমুখী পরিবর্তন সাধিত হয়। পশ্চিম ইউরোপ হয়ে দাঁড়ায় আধুনিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, জীবনধারা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিকাশের কেন্দ্রস্থল। ক্রমে এই দেশসমূহে বিকশিত হয় আধুনিক উদারনৈতিক চিন্তাধারা, গণতান্ত্রিক রাজনীতি, কল্যাণমুখী প্রশাসন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা। ইউরোপের এই সমাজ বিকাশের গতি থেকে রাশিয়া ছিল অনেক দূরে। উনিশ শতকেও রাশিয়াতে বিদ্যমান ছিল সামন্তবাদী আর্থসামাজিক কাঠামো। এই দুর্বল অসার সামন্ত আর্থসামাজিক ব্যবস্থা রাশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছিল সম্পূর্ণ অনুপযোগী এই ব্যবস্থার কেন্দ্রে ছিল জারের একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, শোষণ, নির্যাতন আর অত্যাচার। সামন্ত সমাজ কাঠামো এবং রাশিয়ার সম্রাট জারের স্বৈরতান্ত্রিক নির্যাতন বলশেভিক বিপ্লবের পথকে সুগম করেছিল ।
৩. জারতন্ত্রের অযোগ্যতা
রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের পথকে এগিয়ে দিয়েছিল জারতন্ত্রের অযোগ্যতা। ১৮৫৪-৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়, ১৯০৫ সালে জাপানের সাথে যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয় ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ সাধারণ মানুষের কাছে জারতন্ত্রের অযোগ্যতাকে প্রকটভাবে তুলে ধরেছিল। বিশেষত পশ্চিম ইউরোপে এমনকি এশিয়াতেও রাশিয়া একটি দুর্বল দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে রাশিয়ার মানুষ দুর্বল ও অযোগ্য জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে বিপ্লবী বলশেভিকদের স্বাগত জানিয়েছিল।
৪. চরম শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমিক আন্দোলন
উনিশ শতকের সত্তরের দশকে রাশিয়ায় দ্রুত শিল্পায়ন ঘটে। সম্রাট দ্বিতীয় জার আলেকজান্ডারের শিল্পনীতি এই ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল। এই সময় রাশিয়াতে ভূমিদাস শ্রেণি বহাল ছিল। শিল্পায়নের সাথে সাথে এই ভূমিদাস বা সার্ফ শ্রেণি শ্রমিক শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। শ্রমিক শ্রেণির জীবনের মান ছিল খুবই নিম্ন। তাদের বেতন ভাতা এবং কাজের সময়ের কোনো সরকারি নীতিমালা ছিল না। রাশিয়ার শ্রমিক সমাজ ছিল চরমভাবে শোষিত এবং নির্যাতিত শ্রেণি। রাশিয়াতে শ্রমিক ধর্মঘট এবং শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করা নিষিদ্ধ ছিল। এই পটভূমিতে কলকারখানা প্রতিষ্ঠা, ভূমির উপর সামাজিক মালিকানা আরোপ, কলকারখানা জাতীয়করণ প্রভৃতি বিষয়াবলি শ্রমিক শ্রেণিকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে। মহামতি লেনিনের নেতৃত্ব ও আদর্শের প্রতি শ্রমিক শ্রেণি সর্বাত্মকভাবে সমর্থন জানায় । লেনিনের দীক্ষায় এই শ্রমিক শ্রেণি বিপ্লবী শ্রেণিতে পরিণত হয় এবং বলশেভিক বিপ্লবে মূল ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় যে, রাশিয়াতে শ্রমিক অসন্তোষ এবং শ্রমিক আন্দোলন বলশেভিক বিপ্লবের পথ তৈরি করেছিল।
৫. সার্ফ বা ভূমিদাস শ্রেণির চরম অসন্তোষ
রাশিয়ার সমাজে ভূমিদাস শ্রেণির দুর্দশা, তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ সুদীর্ঘ সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়েছিল। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথার বিলোপসাধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এই পদক্ষেপের ফলে ভূমিদাসরা সামন্তপ্রভুর হাত থেকে গ্রামীণ সংস্থা মির এর অধীনে ন্যস্ত হয়েছিল মাত্র। তাদের বিদ্যমান আর্থসামাজিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে সামন্তবাদের পতনের পটভূমিতে ভূমিদাস শ্রেণি স্বাধীন কৃষকে পরিণত হয়েছিল। সমাজ পরিবর্তন এবং উন্নয়নে এর ফলাফল হয়েছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। রাশিয়ার সমাজে ভূমিদাস শ্রেণি কৃষকে পরিণত হতে পারেনি। এরা পরিণত হয়েছিল ভূমিহীন শ্রেণিতে। ফলে রাশিয়াতে উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের প্রথম দিকে একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। রাশিয়ার সমাজে বরাবরই দুটি শ্রেণি বিদ্যমান ছিল। একটি অভিজাত, অপরটি ভূমিহীন। উনিশ শতকের শেষদিকে রাশিয়ার একটি সামাজিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে রাশিয়াতে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র সতেরো জন অভিজাত শ্রেণির, আর বাকি সকলেই ভূমিহীন। রাশিয়ার সকল জমিই ছিল রাজপরিবার এবং সামন্ত অভিজাত শ্রেণির দখলে। তাই রাশিয়ার সমাজে ভূমিদাস বা ভূমিহীন শ্রেণির সামাজিক অসন্তোষ, বিদ্রোহ ইত্যাদি ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই | ভূমিহীন শ্রেণি বলশেভিক বিপ্লবের পটভূমি প্রস্তুত করেছিল।
৬. লেখক দার্শনিকদের প্রভাব
১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবে ফরাসি কবি, লেখক, সাহিত্যিক, দার্শনিক অধ্যাপকেরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বলশেভিক বিপ্লবের বেলায়ও এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। বলশেভিক বিপ্লবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল জার্মান কালজয়ী দার্শনিক কার্ল মার্কসের লেখনীমালা। রুশ সাহিত্যিক পুসকিন, লিও টলস্টয়, দস্তয়েভস্কি, ইভান তুর্গেনিভ প্রমুখের লেখায় জার শাসনের স্বৈরাচারিতা, শোষণ, নির্যাতন আর অত্যাচারের চিত্র ফুটে উঠেছিল। তাদের লেখনীমালা দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে জার বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি করেছিল। সমকালীন ব্রিটেন ফ্রান্সের কবি, দার্শনিক, অধ্যাপক, পণ্ডিতদের লেখা রাশিয়ার উদারপন্থি অভিজাত সম্প্রদায়কে সমাজ পরিবর্তনে অনুপ্রাণিত করে। এই সকল লেখক, দার্শনিক ও পণ্ডিতের লেখনী বলশেভিক বিপ্লব সংগঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল।
৭. নিহিলিজম ও নারোদনিক আন্দোলনের প্রভাব
উনিশ শতকের রাশিয়াতে সমাজ পরিবর্তনের জন্য জার বিরোধী অনেক গু আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। গড়ে উঠেছিল অনেক গুপ্ত সংগঠন। এই সংগঠনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিহিলিজম এবং নারোদনিক (রুশ শব্দ নারোদ - অর্থ হচ্ছে জনগণ) আন্দোলন। এই দুটি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল জার শাসনের অত্যাচার, শাসন, শোষণ ইত্যাদি থেকে দেশকে মুক্ত করা এবং সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক মুক্তি সাধন। জার শাসনের চরম দমননীতির মুখে এই দুটি আন্দোলনই সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়ে যায়। তাদের আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তাদের প্রয়াস ও আত্মদান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। ক্রমে রুশ জনগণ বলশেভিকদেরকে মুক্তির দিশারি হিসেবে গ্রহণ করে নেয় ।
৮. রাশিয়াতে চরম অর্থনৈতিক সংকট
বলশেভিক বিপ্লবের কারণ হিসেবে বিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটকে চিহ্নিত করা যায়। জারতন্ত্র ও অভিজাত শ্রেণির ভোগবিলাসী জীবনযাপন, অর্থনীতিতে পরিকল্পনার অভাব, কৃষিক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব, শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকদের আন্দোলন ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব প্রভৃতি মিলে অর্থনীতিকে অকার্যকর করে তোলে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট সাধারণ মানুষ বিশেষত শ্রমিক ও ভূমিদাস শ্রেণির জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই অবস্থা, থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাশিয়ার সাধারণ মানুষ জার শাসনের অবসান কামনা করে এবং বলশেভিক বিপ্লবকে স্বাগত জানায় ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয় ঘটে। এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী জারের দুঃশাসন আর চরম দমননীতি। এই যুদ্ধে জারের প্রতি জনগণের কোনো প্রকার সমর্থন ছিল না। এই সামরিক বিপর্যয়ের মুখে জার সরকার গ্রামের ভূমিহীন কৃষকদেরকে জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করে। তাদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়। ইতোমধ্যে যুদ্ধে রাশিয়ার বাহিনীর বিপর্যয়, সেনাবাহিনীতে অনিয়মিত সরবরাহ, খাদ্যঘাটতি, কয়লার অভাবে নিষ্ক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি রিলে রুশ সেনাবাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। সেনাবাহিনীর এবং দেশের এই অবস্থার জন্য সাধারণ মানুষ জারকে দায়ী করে এবং জারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করাকেই প্রধান কতর্ব্য বলে মনে করে। দেশের এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জনগণ লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টিকেই একমাত্র মুক্তিদাতা হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। এই সময়ে বলশেভিক পার্টি রাশিয়ার প্রধান রাজনৈতিক দল এবং লেনিন রাশিয়ার কৃষক শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তেমন পটভূমিতে বলশেভিক বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে।
৫.৩ বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব
উনিশ শতকের শেষ দুই দশকে রাশিয়াতে শ্রমিক আন্দোলন প্রবলভাবে দানা বেঁধে ওঠে। গ্রামাঞ্চলে ভূমিহীন কৃষকদের আন্দোলন আগে থেকেই চলে আসছিল। এই সময়ে রাশিয়ার শ্রমিক সমাজ, কৃষক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ সমাজতান্ত্রিক মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকে। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা সামাজিক গণতান্ত্রিক পতন, শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠা, বহুমুখী সমাজ পরিবর্তনের কর্মসূচি। এই দলের মাধ্যমে তৎকালীন ইউরোপের অন্যান্য দেশের সোসালিস্ট ও কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর সাথে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণির সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রাশিয়াতে এই দল বহুদূর অগ্রসর হতে পারেনি। এই পটভূমিতে ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠা ঘটে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের। এই দলের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল শ্রমিক শ্রেণির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা, বৃহৎ জমিদারি বিলুপ্ত করে কৃষকদের মধ্যে জমি বিতরণ, ভারী শিল্প জাতীয়করণ, কৃষিতে যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কঠোর দলীয় শৃঙ্খলা, আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থা, সমাজ পরিবর্তনে দৃঢ় অবস্থান ইত্যাদি প্রশ্নে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলে ভাঙন দেখা দেয়। আদর্শিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যে দুর্বল অংশটি পার্টি থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরা সংখ্যায় ছিল কম। এই নরমপন্থি অংশটিকে বলা হয় মেনশেভিক। কঠোর আদর্শিক অবস্থান এবং শ্রমিক শ্রেণির রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের মূল অংশটির। এই অংশটি ছিল দলে
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এদেরকে বলা হয় বলশেভিক। দলের ভেতরে আদর্শিক বিভাজনের পর বলশেভিকদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন বিপ্লবী নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন। তখন থেকেই এই পার্টির নাম হয়ে যায় বলশেভিক পার্টি। বিশ শতকের শুরুতে রাশিয়াতে শিল্পবিপ্লব একটি নয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণির উৎপত্তি ঘটায়। এই শ্রেণির একটি বড় অংশ জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সমাজ পরিবর্তনের জন্য লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়। বিশ শতকের প্রথম দশকেই রাশিয়ার শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির একক সংগঠনে পরিণত হয় বলশেভিক পার্টি। এই সময়ে লেনিন মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করার পার্টি লাইন গ্রহণ করেন। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবে বলশেভিক পার্টি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে ।
৫.৪ ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহ
বিশ শতকের শুরুতে রাশিয়ার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি পশ্চিম ইউরোপের আদলে আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনতন্ত্র তথা-প্রতিনিধিত্বমূলক জাতীয় পরিষদ, দায়িত্বশীল মন্ত্রিসভা, নাগরিক স্বাধীনতা, সমাজে সকলের সমান অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা, দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কাঠামো ইত্যাদির আলোকে সমাজসংস্কার ও সমাজ নির্মাণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু রুশ সম্রাট জার দ্বিতীয় নিকোলাস এবং তার অত্যাচারী মন্ত্রী পিভি এই দাবির বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করে। ১৯০৫ সালে রুশ-জাপান যুদ্ধে জাপানের কাছে রাশিয়ার পরাজয় জার শাসনের বিরুদ্ধে দেশকে উত্তাল করে তোলে। বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণি ও কৃষক সমাজ এই সময় দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে জার দ্বিতীয় নিকোলাস রাশিয়ার জাতীয় পরিষদ ডুমার অধিবেশন আহ্বান করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দাবিগুলো অনেকটা মেনে নেন। ফলে আপাতদৃষ্টিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কিছুটা সামাজিক সুবিধা অর্জিত হলেও শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য অপূরণীয় থেকে যায় ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয় বিশেষত পোল্যান্ড থেকে রাশিয়ার সেনা বিতাড়ন, জার্মানির কাছে রাশিয়ার পরাজয় ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ থেকে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ জারের প্রতি প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সারা রাশিয়াতে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকট ও খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। সারাদেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটে, শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয় এবং কৃষক বিদ্রোহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় মারাত্মক সংকটের মুখে কমান্ডারদের আদেশ অমান্য করে দলে দলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রণাঙ্গন ছেড়ে এসে শ্রমিক, কৃষকের সাথে যোগ দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে সারা রাশিয়ায় এক ব্যাপক অভ্যুত্থান ঘটে। ৮ মার্চ তারিখে শ্রমিক, কৃষকেরা রাস্তায় নেমে আসে। জনগণ পেত্রোগ্রাদ দখল করে নেয়। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের সেনাপতি ইভানভ অনেক কষ্টে
পেত্রোগ্রাদ দখল করতে সক্ষম হন। জনগণের দাবির মুখে জার সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এভাবেই এই প্রাচীন রোমানভ রাজ বংশের অবসান ঘটে। দেশের সামগ্রিক দায়িত্ব ডুমা বা জাতীয় পরিষদ গ্রহণ করে। এভাবে রুশ বিপ্লবের প্রথম অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে
রুশ বিপ্লবের দ্বিতীয় পর্যায়ের পর অর্থাৎ ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে জারের সিংহাসন ত্যাগের পর একটি বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সরকার গঠিত হয়। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিভিন্ন মডারেট গ্রুপ ও নরমপন্থিদের প্রতিনিধিরাই ছিল মন্ত্রিসভার সদস্য। এই মন্ত্রিসভা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তাদের লক্ষ্য ও কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাদের লক্ষ্য ছিল নির্বাচিত গণপরিষদ, রাশিয়ার জন্য সাংবিধানিক সংস্কার প্রবর্তন, গণপরিষদে দেশের ভূমি সমস্যা সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ, দেশে গণতান্ত্রিক সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার রক্ষা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ, ধর্ম ও বাক্ স্বাধীনতা প্রদান প্রভৃতি । মার্চ বিপ্লব পরবর্তী এই কর্মসূচি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এটা পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর অনুকরণে একটি সংস্কার পদক্ষেপ। রাশিয়ার বিদ্যমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে এই জাতীয় একটি সংস্কার পদক্ষেপ মোটেও সময়োপযোগী ছিল না। সংস্কার পদক্ষেপের সাথে রাশিয়ার শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো প্রকার সম্পর্ক ছিল না। অথচ মার্চ বিপ্লবে এই দুই শক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। মার্চ বিপ্লবের সাফল্যে বলীয়ান হয়ে কৃষক ও শ্রমিক সমাজ আরও জোরালোভাবে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলে। কৃষক সমাজ জমি ওঠে I বিতরণের দাবি করে এবং শ্রমিক শ্রেণি পুঁজিবাদ ধ্বংসের জন্য মরিয়া হয়ে এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক শ্রেণি ও কৃষকদের দাবিদাওয়া পূরণে বুর্জোয়া সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় ।
একথা বলাই বাহুল্য যে মার্চ বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা ছিল শ্রমিক শ্রেণি ও কৃষক সমাজের। বিপ্লবের কৌশলগত কারণে বলশেভিক পার্টি স্বৈরতন্ত্রের অবসানকল্পে বুর্জোয়া শ্রেণিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু বলশেভিক পার্টির মূল লক্ষ ছিল প্রলেতারিয়েত বা শ্রমিক কৃষকের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। মার্চ বিপ্লবের সময় বলশেভিক পার্টির নেতা ভ্লাদিমির লেনিন রাশিয়ার বাইরে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন। তিনি ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে স্বদেশে ফিরে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। লেনিন তখন বলশেভিক পার্টি ও রাশিয়ার জনগণের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তিনি এসেই ঘোষণা করেন যে রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। রাশিয়ার সরকার পরিচালিত হবে শ্রমিক শ্রেণি ও কৃষকের দ্বারা। তিনি মার্চ মাসের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে বলশেভিক বিপ্লবের প্রথম পর্যায় হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে বিপ্লবের দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত স্তরের লক্ষ্য হলো জমিদার ও পুঁজিপতিদের উচ্ছেদ করে প্রলেতারিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ভারী শিল্পের উপর
রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং জমি কৃষকদের কাছে হস্তান্তর করা। রাশিয়ার সমাজে দীর্ঘকাল ধরে এই ভূমির ইস্যুটি ছিল অমীমাংসিত। এছাড়া লেনিন রাশিয়াতে চলে আসা এককেন্দ্রিক ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীভূত করে স্থানীয় ক্ষমতা আঞ্চলিক সোভিয়েতের হাতে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
১৯১৭ সালের এপ্রিল মে মাসের দিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ব্যাপক অরাজকতা দেখা দেয়। বুর্জোয়া সরকার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। দেশের অভ্যন্তরে দেখা দেয় ভোগ্য পণ্যের প্রচণ্ড অভাব। খাদ্যসংকট তীব্র আকার ধারণ করে। জার্মান বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঞ্চল দখল করতে থাকে। ক্রমে পেত্রোগ্রাদের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে পড়ে। দেশের চরম সংকটের মুখে সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে বলশেভিকরা বিভিন্ন অঞ্চলের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকে । এই সময়ে লেনিনের নেতৃত্বে পার্টির দুই নেতা ট্রটস্কি ও স্টালিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বলশেভিক পার্টির হাজার হাজার সদস্য লেনিনের নেতৃত্বে জনগণকে সাথে নিয়ে সমগ্র রাশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং পেত্রোগ্রাদের দিকে অগ্রসর হয়। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর বলশেভিকরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, টেলিফোন একচেঞ্জসহ সকল সরকারি স্থাপনা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। এভাবে সম্পন্ন হয় বলশেভিক বিপ্লব ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]