১৯১৭ সালের মহান অক্টোবর (বলশেভিক) বিপ্লবের সাফল্যের কারণ বর্ণনা কর।


৩. এপ্রিল থিসিস প্রদানের পরবর্তী কর্মসূচি
লেনিনের এপ্রিল থিসিস প্রদানের পর পরই বুর্জোয়া, মেনশেভিক, সোশ্যালিস্ট রেভ্যুলিউশনারিসহ অন্যান্য পার্টিগুলো এর তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। এমনকি তারা প্রচার করতে লাগলেন যে, ‘লেনিন দেশের শত্রু এবং জার্মানির চর'। সামরিক সরকারও জনসাধারণের আন্দোলন দমন করতে পুরানো রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের নীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু সমাজের আপামর জনসাধারণ লেনিনের 'এপ্রিল থিসিসে'র মাঝে তাঁদের মুক্তির সন্ধান পেতে চান ৷
অবশ্য এ কথাও ঠিক যে, বলশেভিক পার্টির অনেক নেতাও লেনিনের এপ্রিল থিসিসের বিরোধিতা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কামেনেভ, রিকভ প্রমুখ। এই সমস্ত নেতাদের প্রধান যুক্তি ছিল, যে কোনো সমাজের সমাজতন্ত্রের মতো আদর্শিক অবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যে ধরনের পরিপক্বতা উক্ত দেশের বা সমাজের মানুষের থাকা প্রয়োজন, সে অবস্থায় রাশিয়ার সমাজ তখন পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। অতএব সর্বহারাদের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, দেশে যাতে বুর্জোয়া গণতন্ত্র সফল হতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখা। অন্যদিকে, ট্রটস্কি সরাসরি শ্রমিকদের রাষ্ট্র কায়েম করার কথা বলেন। এর ফলে সর্বহারা শ্রেণির বিশাল কৃষক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয় । এমনকি আন্দোলনের গতি কমে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয় ৷
এপ্রিল মাসের শেষ দিকে বলশেভিক পার্টি কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করে। সেখানে রাশিয়ার সকল স্থান থেকে নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন। সম্মেলনে লেনিনের প্রস্তাব অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। স্টালিন জাতিসংক্রান্ত প্রশ্নে রিপোর্ট পেশ করেন। সম্মেলনের প্রস্তাব অনুযায়ী রাশিয়ার অন্তর্গত সকল জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি যে কোনো জাতি ইচ্ছে করলে স্বাধীন হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার অধিকারকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বলশেভিক পার্টি মনে করতো যে, ন্যায্য অধিকারের এই স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমেই বিভিন্ন জাতির শ্রমিকদের
মাঝে ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সম্মেলন থেকে দাবি জানানো হয় যে, যে সকল জাতি রাশিয়ার সাথে থাকার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, তাদেরকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিতে হবে। তাদের উপর অন্য কোনো অঞ্চলের ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এমনকি জাতিগুলোর উপর কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণও করা যাবে না। বলশেভিক পার্টি মনে করতো যে, এভাবে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে, তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ভেতর বিরাজমান | সংকট দূর করে শাসক-শাসিতের সহযোগিতার ভিত্তিতে জাতীয় সংহতি শক্তিশালী। করা সম্ভব হবে।
৪. সামরিক সরকারের প্রতি লেনিনের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও লেনিন দেখলেন যে, এর মধ্য দিয়ে সরকার পুঁজিপতি ও জমিদারদের স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, “সামরিক সরকারকে কোনো প্রকার সমর্থন দেওয়া যাবে না এবং সোভিয়েতের হাতে সকল ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।” তিনি জনসাধারণের মাঝে এই চেতনা সৃষ্টি করলেন যে, এসমস্ত সোভিয়েতই মানুষের কাছে তার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে। তবে তিনি এপ্রিল মাসের পর পরই কোনো প্রকার বিপ্লবী ঘোষণা দেননি। কারণ তারপর থেকেই বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের রূপ দেওয়ার জন্য মানুষকে সচেতন করতে থাকেন।
৫. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লেনিনের কর্মসূচি
তিনি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তিনি বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ব্যবস্থার উচ্ছেদ চেয়েছিলেন। দেশের সকল ভূমির জাতীয়করণ করা, এর ফলে ভূমির ব্যক্তি মালিকানা লোপ পেয়ে খেতমজুর ও কৃষক প্রতিনিধিদের সোভিয়েতগুলোর হাতে তা বন্দোবস্ত করা হবে। কলকারখানা ও সকল সামাজিক উৎপাদন কাঠামোর উপর শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানান। তিনি দাবি করেন যে, দেশের ব্যাংকগুলোকে জাতীয়করণ এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণের ভার সোভিয়েতের হাতে অর্পণ করতে হবে।
৬. কৃষক ও শ্রমিকদের সংঘটিত করার উদ্যোগ
লেনিন কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করার নীতি গ্রহণ করেন। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল- তিনি মনে করতেন যে, বিপ্লবের জন্য এ শ্রেণি গুরুত্বপূর্ণ। এই শ্রেণি নিপীড়িত হওয়ায় তাদের মধ্যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থাকে প্রবল।
৭. আন্দোলনের সূত্রপাত ও লেনিনের নির্দেশনা
সামরিক সরকার বলশেভিক পার্টিকে অত্যন্ত কঠোর হস্তে দমন করে। এ সময়ে অনেক বলশেভিক নেতৃবৃন্দকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বিশেষ করে ১৯১৭ সালের ৫ জুলাই বলশেভিকদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত প্রভেদা অফিস তছনছ করে সামরিক সরকারের বাহিনী। এর মধ্যে দিয়ে বিপ্লবের শান্তিপূর্ণ পর্বের অবসান ঘটে ।
১৮২

৮. লেনিনকে আটক অথবা হত্যার হুমকি
এর পর থেকেই সামরিক সরকার লেনিন ও বলশেভিক পার্টি সম্পর্কে কুৎসিত প্রচারণা চালাতে থাকেন। আইন বহির্ভূতভাবে লেনিন প্রসঙ্গে ঘোষণা করে, যে ব্যাধি লেনিনকে সরকারের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করবে অথবা তুলে দিবে তাকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এসময়ের বুর্জোয়া সংবাদপত্রগুলো বলশেভিকদের দমন পীড়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। অন্যদিকে, সরকার কর্তৃক আরোপিত সেন্সরশিপের ফলে সংবাদপত্র থেকে মানুষের উপর সরকারি দমন পীড়নের
সংবাদ পাওয়া যেত না ।
৯. লেনিনের আত্মগোপন
কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তক্রমে ভ্লাদিমির লেনিন প্রায় সাড়ে তিন মাস আত্মগোপনে থাকেন। আত্মগোপনে থেকেই তিনি পার্টির সকল কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিতে থাকেন, এসময়ে তিনি কিছুদিন লুকিয়ে থাকেন পেত্রোগ্রাদে শ্রমিকদের বাড়িতে। পরে থাকেন রাজলিভ হ্রদের তীরে একটি কুঁড়েঘরে, ফিনদেশীয় ঘেসুড় হিসেবে। এসময়েই তিনি সুবিখ্যাত গ্রন্থ State and Revolution প্রণয়ন করেন ।
১০. গুপ্ত অবস্থায় পার্টির কর্মকাণ্ড তদারকি
গুপ্ত অবস্থায় থেকেও লেনিন পার্টি ও শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এ সময়ে তাঁর সঙ্গে কয়েকজন কমরেড নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- অর্জনিকিজে, জফ, শমান, রাখিয়া প্রমুখ। তিনি পেত্রোগ্রাদের খুঁটিনাটি সংবাদ জানতেন এবং সেই আলোকেই পরবর্তী করণীয় নিয়ে পার্টিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করতেন। জুলাই মাসের দিকে বলশেভিক পার্টি অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। কিন্তু তারপরেও লেনিন বিপ্লবে বিজয়ী হওয়ার প্রশ্নে নিশ্চিত ছিলেন। তিনি কমরেডদের কাছে মন্তব্য করেন যে, অভ্যুত্থান হবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের পরে নয় বরং এই মাসের মধ্যে। তাঁর প্রস্তাব অনুসারে বলশেভিক পার্টি আপাতত তাদের স্লোগান- “সোভিয়েতের হাতে সকল ক্ষমতা চাই”-পরিত্যাগ করে। এর পেছনে কারণ ছিল-সোশ্যালিস্ট রেভ্যুলিউশনারি ও মেনশোভিক প্রভাবিত সোভিয়েতগুলো মূলত সামরিক সরকারের লেজুড়ে পরিণত হয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে লেনিন মত প্রকাশ করেন যে, ক্ষমতার পালা বদলের জন্য আশু কর্তব্য হচ্ছে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি ।
১৯১৭ সালের জুলাই মাসের শেষ নাগাদ বলশেভিক পার্টির গোপনে ষষ্ঠ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এটি গোপনে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রধান কারণ ছিল সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে হামলার সম্ভাবনা ছিল। কংগ্রেসের শুরুতেই সদস্যরা প্রশ্ন উত্থাপন করেন যে, সামরিক সরকারের আদালতে লেনিন উপস্থিত হবেন কি না? এর জবাবে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, লেনিন আদালতে উপস্থিত হবেন না। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সামরিক সরকারের তীব্র দমননীতির প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়া কংগ্রেস লেনিনকে সভাপতি হিসেবে গ্রহণ করেন।
লেনিন রাশিয়ার সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অনুধাবন করেন। রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি পটভূমি তৈরি হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তিনি পার্টিকে প্রস্তুতও করেন। কংগ্রেসের পর থেকেই বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে কলকারখানা, ফৌজ, গ্রামাঞ্চলে, শ্রমিক, সৈনিক, নাবিক ও কৃষকদের মাঝে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলতে থাকে। পুরো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড লেনিনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে। এসময়ই গড়ে তোলা হয় লাল ফৌজ। শ্রমিকরা অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং তা ব্যবহারের জন্য
প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে।
১১. বিপ্লব প্রসঙ্গে লেনিনের দিকনির্দেশনা
রাশিয়ায় বৈপ্লবিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বলশেভিক পার্টি যখন সংগ্রামে লিপ্ত, তখন বিভিন্ন মহল থেকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে এর স্বরূপ কী হবে তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছিল। লেনিন অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্তভাবে এ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন তাঁর সুবিখ্যাত রাষ্ট্র ও বিপ্লব গ্রন্থের মধ্য দিয়ে। গ্রন্থটি তিনি আত্মগোপন অবস্থায় ১৯১৭ সালে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে লিখেন। গ্রন্থে তিনি রাষ্ট্র ও প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রসঙ্গে মার্কস ও এঙ্গেলসের প্রচলিত মতবাদকে নয়াভাবে ঐতিহাসিক বাস্তবতায় ব্যাখ্যা করেন। কারণ বিপ্লবের প্রাক্কালে প্রতিবিপ্লবীরা মার্কস ও এঙ্গেলস এর বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করেন ।
লেনিন বিপ্লব প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা প্রদান করেন যে, রাষ্ট্র দেখতে যতই গণতান্ত্রিক হোক না কেন, বস্তুত সকল বুর্জোয়া রাষ্ট্রই প্রকৃতপক্ষে বুর্জোয়া একনায়কত্বের বা প্রভুত্বের একটা রূপ। তাঁর মতে, প্রলেতারিয়েতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, বুর্জোয়া ক্ষমতার উচ্ছেদ করতে হবে এবং প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাঁর মতে, এই ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে, সেটাই হবে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কারণ সেখানে জনগণের স্বার্থকেই প্রতিনিধিত্ব করবে। তিনি এর মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্রে কীভাবে প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে তাঁর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রচার করেন। লেনিনের ভাষায় বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, “রাষ্ট্র ক্ষমতা, শক্তির কেন্দ্রীভূত সংগঠন, বলপ্রয়োগের সংগঠন প্রলেতারিয়েতের দরকার শোষকদের প্রতিরোধ দমন এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ‘সুব্যবস্থার’ ব্যাপারে কৃষক, পেটি বুর্জোয়া, আধা-প্রলেতারিয়ানদের বিপুল জনসংখ্যাকে নেতৃত্ব দান, এই উভয়ের জন্যই।”
লেনিন বলশেভিক পার্টির কমরেডদের নিকট নির্দেশ প্রদান করেন যে, প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বই হচ্ছে মার্কসবাদের শিক্ষার প্রধান বক্তব্য। বস্তুত প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব নির্মাণের মধ্য দিয়েই প্রকৃত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে লেনিন মনে করতেন।
রাষ্ট্র ও বিপ্লব গ্রন্থে লেনিন 'সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমকে' কমিউনিস্ট সমাজ বিকাশের জন্য দুটি পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করেছেন। মূলত মার্কস ও এঙ্গেলসের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্ধিত করে তিনি নয়া যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন যে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তা অনিবার্যভাবেই বিকশিত হয়ে কমিউনিজমের স্তরে
১৮৪

I
গিয়ে পৌঁছবে। এ প্রসঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে তাও লেনিন অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তিনি তাঁর রাষ্ট্র ও বিপ্লব গ্রন্থে পার্টিকে চিহ্নিত করেছেন প্রলেতারিয়েত শ্রেণির অগ্রগামী বাহিনী হিসেবে। এদের কাজ হবে জনগণকে সমাজতন্ত্রের পথে পরিচালিত করা। যার মধ্য দিয়ে পার্টি নয়া সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং সকল মেহনতি মানুষের স্বপক্ষে নেতৃত্ব প্রদান করতে সক্ষম হবে। তাঁর মতে, বুর্জোয়াদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে নবজীবন প্রদান করতে পারে
কেবল কমিউনিস্ট পার্টি।
১২. লেনিনের ফিনল্যান্ড গমন ও রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় পার্টির কর্মসূচি নির্ধারণ
১৯১৭ সালের আগস্ট মাসে লেনিন ইঞ্জিনের ফায়ারম্যান হিসেবে ফিনল্যান্ড চলে যান। সেখানে পৌঁছে প্রথমদিকে তিনি হেলসিংফোর্সের কাছে একটি গ্রামে ফিন শ্রমিকদের সাথে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি হেলসিং ফোর্সে (বর্তমানে হেলসিঙ্কি নামে পরিচিত) চলে আসেন।
এই সময়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জ্বালানির অভাবে পুরো দেশের পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর ফলে শহরের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও খাদ্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। চোরাকারবারি ও মজুতদারদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে তা সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে চলে যায়। দেশের সামগ্রিক অবস্থা সাধারণ মানুষের জীবন ধারণের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই কাজগুলো সামরিক সরকারের নেতৃত্বে থাকা বুর্জোয়ারা ইচ্ছাকৃতভাবেই করে। তাঁদের ধারণা ছিল, এর ফলে সাধারণ কৃষক শ্রমিকদের ভেতর যে বিপ্লবের অনুভূতি দানা বেঁধে উঠছিল তাকে দমন করা যাবে। কারণ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে। সুতরাং এ অবস্থায় শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না এবং আসন্ন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবেরও গতিরোধ করা যাবে বলে বুর্জোয়ারা মনে করে।
আন্দোলনের এরকমই একটি পর্যায়ে লেনিন রচনা করেন আসন্ন বিপর্যয় ও তা প্রতিহত করার উপায় শীর্ষক গ্রন্থ। তিনি প্রমাণ করেন যে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে পুঁজিপতি, বুর্জোয়া ও জমিদাররা কীভাবে দেশকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এই অরাজক অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বুর্জোয়ারা ক্ষমতাকে আবার নিরঙ্কুশ করতে চাচ্ছে। লেনিন মনে করেন যে, যদি দেশকে রক্ষা করতে হয় তবে একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে, সেটি হলো—সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে- ভূমি ও ব্যাংকগুলোর জাতীয়করণ করা। এককভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক গঠন এবং উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এসব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যাবে এবং মানুষের কাজকর্মে সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি রাশিয়াকে অনৈতিক যুদ্ধের অবসান করতে হবে বলেও লেনিন মত প্রকাশ করেন।
১৯১৭ সালের অক্টোবর
১৮৫
১৩. জেনারেল কর্নিলভের প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা ও শ্রমিক শ্রেণিকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে লেনিনের ভূমিকা
রাশিয়ার বিপ্লব যখন সুনির্দিষ্ট পথ ধরে এগুচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে রাশিয়ার বুর্জোয়া শ্রেণি ও বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের মদদে ২৫ আগস্ট, ১৯১৭ সালে জেনারেল কার্নিলভ প্রতি বিপ্লবী বিদ্রোহ শুরু করেন। তাঁর প্রতিবিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিপ্লবকে নস্যাৎ করে দেওয়া এবং সামরিক একনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি রাজধানী পেত্রোগ্রাদ অভিমুখে তাঁর অধীনে থাকা সৈন্যদের প্রেরণ করেন। কিন্তু কার্নিলভের প্রতিবিপ্লবের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বলশেভিক পার্টিকে নস্যাৎ করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণি এক নয়া অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। তাঁরা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অনুধাবন করেন যে, লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিক পার্টিই কেবল তাদের স্বার্থকে রক্ষা করতে পারে। এর ফলে জনগণের চেতনায় এক নয়া ধরনের পরিবর্তন ঘটে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের পরে সোভিয়েতগুলোর নির্বাচনে বলশেভিক পার্টির আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। বলশেভিক পার্টির ও সোশ্যালিস্ট সামরিক সরকার মেনশেভিক হঠাৎ ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে
বৃদ্ধির ফলে সামরিক রেভ্যুলিউশনারিরা অপপ্রচার চালাতে থাকেন যে, বলশেভিকরা কখনই নিজেদের হাতে ক্ষমতা নিতে পারবে না। যদিও তারা ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে তবে তারা সপ্তাহ দুয়েকের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ দেশে সুশাসন দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই। এরকম একটি প্রেক্ষাপটে লেনিন ‘বলশেভিকরা কি রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধে তিনি সকল সমালোচনার জবাব দেন। তিনি লিখেন-
বলশেভিকরা যে ক্ষমতা দখল করে, প্রতিবিপ্লবকে প্রত্যাঘাত হেনে সে ক্ষমতা ধরে রেখে দেশের অর্থনীতিকে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে পারবে, তার প্রয়োজনীয় সবকটি পূর্বশর্তই বর্তমান। এ ব্যাপারে শ্রমিক ও কৃষকদের নয়া রাষ্ট্র যন্ত্র হিসেবে বিরাট ভূমিকা পালন করতে হবে সোভিয়েতগুলোকে। গরিব কৃষকদের উপর নির্ভর করে বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক শ্রেণি ক্ষমতায় এলে নিগড়মুক্ত অসংখ্য জনগণের উদ্যোগ ও উদ্যম অবারিত হবার সুযোগ মিলবে এবং এগিয়ে যাওয়া যাবে নয়া জীবন নির্মাণে ।
১৪. সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা প্রণয়ন
দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অবস্থা খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকলেও লেনিন গুপ্ত অবস্থায় ফিনল্যান্ডে অবস্থান করেন। সেখানে অবস্থান করেও পার্টির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করে দিতেন। এসময়ে এসে বৃহৎ শিল্প কেন্দ্রগুলোর ‘সোভিয়েতসমূহে' বলশেভিক পার্টি সামনে নিয়ে আসে। সেটি হলো- 'সব ক্ষমতা চাই সোভিয়েতের হাতে।' এ শ্লোগানকে সামনে আনার মধ্য দিয়ে মূলত লেনিন বুর্জোয়া সাময়িক সরকারের বিরুদ্ধে প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের আহ্বান জানান। বলশেভিক পার্টির এই স্লোগানকে তখন রাশিয়ার ২৫০টিরও বেশি সোভিয়েত সমর্থন জানিয়েছে।
১৮৬

১৯১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাঝামাঝি সময়ে লেনিন ফিনল্যান্ডে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি পেত্রোগ্রাদ এবং মস্কো কমিটির কাছে দুটি গোপন চিঠি লিখেন। এই ঐতিহাসিক চিঠির শিরোনাম ছিল যথাক্রমে ‘ক্ষমতা দখল করতে হবে বলশেভিকদের' এবং ‘মার্কসবাদ ও অভ্যুত্থান'। এই চিঠিগুলোর মাধ্যমে লেনিন সশস্ত্র অভ্যুত্থানের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
লেনিন সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা অত্যন্ত সচেতনভাবে গ্রহণ করে। তাঁর পরিকল্পনার ভেতর একদিকে যেমন দেশীয় শক্তি, প্রতিবিপ্লবী শক্তির অবস্থান ছিল, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক পরিসরে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও বিবেচনায় আনেন। তিনি পার্টির কাছে প্রস্তাব করেন যে, অনতিবিলম্বে অভ্যুত্থানের জন্য বাহিনীগুলোর হেডকোয়ার্টাস গঠন করা হোক, শক্তির বণ্টনের মাধ্যমে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ইউনিটগুলোকে সবচেয়ে জরুরি কেন্দ্রগুলোতে রাখা হোক। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, সরকারি ভবনগুলো পরিবেষ্টন করে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ কেন্দ্র দখল করা জরুরি। তিনি সুপারিশ করেন যে, শক্তিশালী সংগ্রামী বাহিনী গঠন করা, যাদের কাজ হবে পেত্রোগ্রাদ অভিমুখী বাহিনীর গতি রোধ করা ও নগরের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা। লেনিন এভাবেই একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থান সফল করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি পার্টির কাছে দাবি উত্থাপন করেন যে, কমিউনিস্টদের জনগণের সাথে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। এজন্য তিনি কমিউনিস্টদের কলকারখানা, ব্যারাক থেকে সর্বত্র থাকার উপদেশ দেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘যেখানেই জীবনের স্নায়ুমণ্ডলি, সেখানেই বিপ্লবকে বাঁচাবার উৎস।'
১৫. পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মসূচি
লেনিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বিপ্লবকে বাস্তবায়নের জন্য লালরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলা হয় । সামরিক শিক্ষকরা পাঠচক্রের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন। এটি গঠিত হয়েছিল পেত্রোগ্রাদে । বাল্টিক সাগরের নৌবহরের বলশেভিকরা নাবিকদেরকে বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত করতে থাকেন। ফ্রন্টের বলশেভিক পার্টির অনুগামী সৈনিকরা শ্রমিকদের সাহায্যে লালফৌজের সংগ্রামী বাহিনী গড়ে তোলেন ।
১৬. লেনিনের পুনরায় রাশিয়ার প্রত্যাবর্তন ও বিপ্লবী কর্মসূচি গ্রহণ
১৯১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর লেনিন পেত্রোগ্রাদের কাছাকাছি থাকার জন্য হেলসিংফোর্স থেকে ভিবর্গে চলে আসেন। বলশেভিক পার্টির মুখপত্র হিসেবে বাবোচি পুৎ (শ্রমিক পথ) পত্রিকায় লেনিনের বিভিন্ন প্রবন্ধ এ সময়ে প্রকাশিত হতে থাকে। সেখানে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কীভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা যায়, এর নিপুণ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি এসময়ে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লিখেন যে, “সংকটের গভীরতা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। রুশ বিপ্লবের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাজি ধরা হয়েছে।” তাঁর মতে, অনুকূল মুহূর্তে ছাড় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে পুরো ব্যাপারটিকে পশু করে দেওয়া। লেনিন ১৯১৭ সালের ১ অক্টোবর এক পত্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি, মস্কো ও পেত্রোগ্রাদ কমিটির কাছে বিপ্লবের বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তাব প্রদান করেন।
অক্টোবরের গোড়ার দিকে, লেনিন সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি ও তাঁর নেতৃত্ব প্রদানের জন্য অবৈধভাবে ভিবর্গ থেকে পেত্রোগ্রাদে চলে আসেন। তিনি ৭ অক্টোবর বলশেভিক পার্টির নগর সম্মেলনে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। ৮ অক্টোবর তিনি উত্তরাঞ্চলের সোভিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের নিকট এক পত্র লিখেন। সেখানে অভ্যুত্থানের জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান এবং সতর্কতা উচ্চারণ করেন। যে, 'বিলম্ব মৃত্যুতুল্য'। সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বলশেভিক পার্টির বিজয়ের ব্যাপারে তাঁর আস্থা ছিল ।
সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রশ্নে বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় অধিবেশনে ১৯১৭ সালের ১০ অক্টোবর আলোচিত হয়। লেনিন উক্ত অধিবেশনে রিপোর্ট পেশ এবং বক্তৃতা প্রদান করেন। বক্তৃতায় তিনি যুক্তি দেখান যে, প্রলেতারিয়েত ও গরিব কৃষকের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সময় চলে এসেছে। সশস্ত্র অভ্যুত্থানের জন্য বলশেভিক পার্টি লেনিনের নীতিকে কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রহণ করে। এ সময়ে বলশেভিক পার্টির দুইজন কমরেড ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেন। তারা হলেন-কামেনেভ ও জিনোভিয়েভ। তবে শেষ পর্যন্ত পার্টি লেনিনের নীতি অনুসরণ এবং কাজের ভিত্তি হিসেবে লেনিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় কমিটি অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদানের জন্য একই অধিবেশনে পলিটব্যুরো নির্বাচন করে। এখানে নেতা হিসেবে লেনিনকে নির্বাচিত করা হয় ।
১৯১৭ সালের ১৬ অক্টোবর শ্রমিক সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে লেনিন পুনরায় রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানেও তিনি অবিলম্বে অভ্যুত্থানের জন্য আবেদন জানান। উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যই লেনিনকে সমর্থন জানান। রুদ্ধদ্বার অধিবেশন বিপ্লবী অভ্যুত্থান পরিচালনার জন্য সামরিক বিপ্লবী কমিটি গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন- আ.স.বুবনভ, ফ.এ.জের্জিনস্কি, ইয়া.ম. সভেদলভ, ই.ভ.স্টালিন, এবং ম.স. উরিৎস্কি ।
অভ্যুত্থান বন্ধ রাখবার জন্য যে সকল যুক্তি বিভিন্নভাবে আসত লেনিন তা দৃঢ়ভাবে খণ্ডন করতেন। তিনি বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরেন যে, বুর্জোয়া ও সামরিক সরকার বিপ্লবের শক্তিকে ভাঙতে বিভিন্ন চেষ্টা চালাবে। লেনিন অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে পার্টির নেতা-কর্মী ও সামরিক বাহিনীর নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রাখতেন, যাতে আসন্ন লড়াইয়ের প্রস্তুতি যথাযথভাবে গ্রহণ করা যায়।
১৭. দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবের বাণী প্রচার
লেনিন ও বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভ্যুত্থানের জন্য দেশের সকল প্রান্তে পরিকল্পনা অনুসারে প্রস্তুতি চলতে থাকে। কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠিও নির্দেশনামা দলের কমরেডদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পেত্রোগ্রাদ ও মস্কোর সম্মেলনেও লেনিনের প্রস্তাবের পক্ষেই দলের সদস্যরা ভোট দেন। অক্টোবর বিপ্লবের প্রাক্কালে একই সিদ্ধান্ত দেশের ১০০টি প্রদেশ, জেলা, গুবের্নিয়া, আঞ্চলিক ও সামরিক পার্টি সম্মেলনে গ্রহণ করা হয়। সশস্ত্র অভ্যুত্থানে সহযোগিতার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল প্রতিটি এলাকায় প্রেরণ করা হয়।
১৮. কামেনেভ ও জিনোভিয়েভের ষড়যন্ত্র ও ট্রটস্কির ভূমিকা
লেনিনের সশস্ত্র অভ্যুত্থানের নীতিকে কামেনেভ ও জিনোভিয়েভ বিরোধিতা করে এবং তাঁদের মতামত পার্টিতে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারায় তারা ষড়যন্ত্রের পথ গ্রহণ করে। 'নভোয়া জিজ্ন' (নবজীবন) নামক আধা- মেনশেভিক পত্রিকায় তাঁরা যৌথভাবে এক বিবৃতি প্রদান করেন। সেখানে তাঁরা উল্লেখ করেন যে, সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ব্যাপারে বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি একমত নন। তাঁদের এই বক্তব্য প্রকাশের ফলে লেনিন যে গোপনে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছিলেন তা সামরিক সরকারের নিকট ফাঁস হয়ে যায় সামরিক সরকারও সশস্ত্র অভ্যুত্থানকে রোধ করতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লেনিন কামেনেভ ও জিনোভিয়েভকে ‘বিশ্বাসঘাতক' বলে অভিহিত করেন এবং তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন জানান। অন্যদিকে, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের স্বপক্ষে অবস্থান নিলে ট্রটস্কি সরাসরি তাঁর বিরোধিতা না করলেও দ্বিতীয় সোভিয়েতগুলোর কংগ্রেস পর্যন্ত তা মূলতবি রাখার ব্যাপারে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেন। লেনিন এই মতের তীব্র সমালোচনা করেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য লেনিনের মতামতই অভ্যুত্থান প্রশ্নে পার্টি গ্রহণ করে ।
১৯. বিপ্লব বাস্তবায়নে লেনিনের অগ্রণী ভূমিকা
এদিকে বিপ্লবের জন্য পূর্ণ উদ্যমে প্রস্তুতি চলতে থাকে। বিপ্লবী সামরিক কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে শত শত সংগঠক এবং কর্মী প্রেরণ করা হয়। এদের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, বিপ্লবের প্রধানশক্তি হিসেবে লালরক্ষী বাহিনী গঠন করার দিকে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করা। কলকারখানাগুলোতে পালাক্রমে শ্রমিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে থাকে। প্রত্যেকটি লালরক্ষী বাহিনীর সাথে একটি করে রেডক্রসের দল থাকত। লালরক্ষীর প্রতিটি সদস্যই রাইফেল বহন করতেন। এর পেছনে কারণ ছিল যে কোনো মুহূর্তে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকা। এমনকি প্রতিবিপ্লবী সেনাধ্যক্ষদের গ্রেফতার করে বিপ্লব পরিচালনার জন্য তারা একটি নিজস্ব কমিটিও গঠন করেন। প্রয়োজনের সময় বিপ্লবীদের সাহায্যের জন্য যাতে জাহাজিদের প্রেরণ করা যায়, তারও ব্যবস্থা করা হয়। বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন সদস্যদের উপর বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২১ অক্টোবর রাতে পেত্রোগ্রাদ এলাকার সামরিক বাহিনীর হেডকোয়ার্টারের সকল দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য বিপ্লবী সামরিক কমিটির প্রতিনিধি প্রেরণ করা হয়। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই প্রতিনিধিদের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। সকল স্থানের সেনাবাহিনীর কাছে সংবাদ প্রেরণ করা হয় যে, বিপ্লবী সামরিক কমিটির স্বাক্ষর ছাড়া বিপ্লবী ফৌজ যেন কারও আদেশ প্রতিপালন না করেন।
ভৌগোলিকভাবে দেখলে দেখা যাবে যে, পেত্রোগ্রাদ শহরটি কয়েকটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। নেতা নদীর উপর দশটি সেতুর মাধ্যমে শহরের এক অংশের সাথে অপর অংশের যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলোর পরিপূর্ণ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো পাহারা দেবার জন্য কয়েকটি দলকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। রেলস্টেশন, পোস্ট অফিস, টেলিগ্রাফ অফিস, উইন্টার প্যালেস দখল করার জন্য পরিপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বলশেভিক পার্টির অফিস পাহারা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। বাল্টিক সাগরে নৌবহর পুরোপুরি প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়। যুদ্ধ ‘জাহাজ আরোরা' এবং -
'জারিয়াকে' অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
পিটার পল অস্ত্রাগারের শ্রমিকরা বিপ্লবীদের কাছে সংবাদ পাঠান যে, অস্ত্রাগারের ১০ হাজার রাইফেল পার্টির শ্রমিকদের সহযোগিতায় তা দখল করা হয়। এর ফলে বিপ্লবী সামরিক কমিটির হাতে এক লক্ষ রাইফেল এবং অন্যান্য অস্ত্র শস্ত্র চলে আসে। এভাবেই পুরো রাশিয়ায় একটি সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। বিপ্লবী সামরিক কমিটির নির্দেশের জন্য দেশ প্রতীক্ষা করতে থাকে। ২২ অক্টোবর ‘পেত্রোগ্রাদের সোভিয়েত দিবস' উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, সৈনিক এবং নাবিকসহ সকলে মিছিলে যোগদান করে। মিছিল থেকে একটি দাবিই উত্থাপিত হয়, সেটি হলো- ‘সোভিয়েতের হাতে সমস্ত ক্ষমতা চাই।'
পেত্রোগ্রাদের শহরের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে বুর্জোয়ারা অনুভব করলেন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সামরিক সরকার, প্রতিবিপ্লবী সকল শক্তি একত্রিত হয়ে বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য শেষ প্রচেষ্টা চালান । তারা এজন্য হাতিয়ার হিসেবে ধর্ম এবং জাতি বিদ্বেষকে বেছে নেন। রাশিয়ায় যাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে সে চেষ্টাও করে তারা বিপ্লব ঠেকাতে আড়াই লক্ষ সৈনিককে একত্রিত করে। এর ফলে দুই বিপরীত রাজনৈতিক মতাদর্শের শক্তি মুখোমুখী এসে দাঁড়ায় । যার এক পাশে অবস্থান নেয় মার্কসবাদে বিশ্বাসী বিপ্লবীরা এবং অপর পাশে বুর্জোয়া প্রতিবিপ্লবী সামরিক সরকারের পক্ষাবলম্বনকারী সশস্ত্র বাহিনী।
২৪ অক্টোবর ভোরবেলা সামরিক সরকারের আদেশে তাঁর অনুগত সৈনিকরা প্রভেদা অফিস ঘেরাও করে পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করে। বিপ্লবী সামরিক কমিটির সদস্যদের গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ সময় সুবিধাবাদীদের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েতের কেন্দ্রীয় কমিটিগুলো আপসমূলক নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু বলশেভিকদের বিপ্লবী সামরিক কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয় যে, ‘প্রতিবিপ্লবীরা হিংস্র আক্রমণ শুরু করেছে, লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হও-বিপ্লবী সংবাদপত্রগুলোর ছাপাখানা চালু রাখ।' ২৫ অক্টোবর সোভিয়েতের দ্বিতীয় কংগ্রেস শুরু হওয়ার কথা ছিল। সামরিক সরকারের ধারণা ছিল যে, ঐ দিনই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হবে। লেনিন এসময়
আত্মগোপনে ছিলেন এবং গোপন ঘাঁটি থেকে চিঠির মাধ্যমে অভ্যুত্থানের পরবর্তী পথ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, “শত্রুকে অপ্রস্তুত অবস্থায় আঘাত হানতে হবে। ২৩ তারিখে সোভিয়েত কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা রাজধানীতে এসে পৌঁছাবে না। অতএব সেদিন অভ্যুত্থান করলে বেশি আগে হয়ে যাবে। কেননা, সোভিয়েতের মতো এত বড় সংগঠন বিপ্লবী তৎপরতা আর দৃঢ়তা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না- শত্রুরাও হুঁশিয়ার হয়ে যাবে, তাই ২৫ তারিখের কংগ্রেসের অধিবেশন পর্যন্ত কিছুতেই অপেক্ষা করা চলবে না-২৪ তারিখের সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যেই যেমন করে হোক ক্ষমতা দখল করতে হবে- দেরি করবার ফল হবে মারাত্মক।'
বিপ্লবী সামরিক কমিটি বিপ্লবীদের প্রতি আদেশ প্রদান করেন যে, তাঁরা যেন অতি দ্রুত রাজধানীর মূল ঘাঁটিগুলো, সরকারি অফিসগুলো দখল করে নেন। এছাড়া বাইরে থেকে যেসব প্রতিবিপ্লবী সৈনিকদল পেত্রোগ্রাদের দিকে রওনা করেছে তাদের প্রতিরোধ করা এবং রাজধানীর চতুর্দিকে শক্তিশালী পাহারার ব্যবস্থা করা। বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি জনগণের কাছে লড়াইয়ের অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।
২৪ অক্টোবর বিকাল পাঁচটায় বিপ্লবীরা অভিযান শুরু করেন। টেলিগ্রাফ অফিস দখল করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজধানীর ১০টি সেতু বিপ্লবীদের দখলে চলে আসে। রেলস্টেশন দখল করতে ৬০ জন বিপ্লবী যান, তারা সেখানে গিয়ে পাহারাদারদের বুঝানোর পর পাহারাদাররা সেখান থেকে চলে যায়। রেলস্টেশন বিপ্লবীদের দখলে চলে আসে। সামরিক সদর দফতরের উইন্টার প্যালেসের সড়কে পিকেট বসানো হয় । প্রতিবিপ্লবী কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয় ।
এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কেরেনস্কি রণাঙ্গন থেকে সাহায্য চেয়ে পাঠান। কিন্তু রাজধানী পেত্রোগ্রাদের আসার পথে বিপ্লবীরা সৈন্যদের ট্রেন আটকে দেন। সামরিক সরকারের এই চরম দুঃসময়ে রাজধানীতে অবস্থিত তাদের কয়েকটি রেজিমেন্ট বিপ্লবীদের উপর আক্রমণ চালাতে অস্বীকার করে এবং তারা নিরপেক্ষতার ঘোষণা দেয়। বিপ্লবীরা প্রতিবিপ্লবী ও সরকারের অনুগত বাহিনীর কাছে সাহায্য পাঠানোর সকল পথ বন্ধ করে দেন। ২৪ অক্টোবর মাঝরাতে লেনিন তাঁর গোপন ঘাঁটি থেকে প্রতিবিপ্লবীদের সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে ছদ্মবেশে 'স্মলনি'- তে এসে পৌঁছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি বিপ্লবের সকল দায়িত্বভার নিজ হাতে তুলে নেন। রাতেরবেলাই স্টেট ব্যাংক, পাওয়ার স্টেশন, অফিস-আদালতগুলো বিপ্লবীদের দখলে চলে আসে ২৫ অক্টোবর (আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে ৭ নভেম্বর) সকালের মধ্যেই গোটা রাজধানী বিপ্লবীদের দখলে চলে আসে। শুধু উইন্টার প্যালেস এবং সামরিক বাহিনীর জেনারেল
হেডকোয়ার্টার সামরিক সরকার নিজের দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছিল। ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টার বিপ্লবী সামরিক কমিটির পক্ষ থেকে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১৯১৭ সালের অক্টোবর
'সামরিক সরকার
বিজয়ের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন ক্ষমতাচ্যুত-সোভিয়েতের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা এসেছে। মজুর-কৃষক সৈনিক-বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।' এরপর বিপ্লবীরা উইন্টার প্যালেস আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। সেখানে তারা উইন্টার প্যালেসে অবস্থানকারী সৈনিকদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানান । তারা আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানালে দুই পক্ষের মাঝে রাত ৯:৪৫ নাগাদ গোলাগুলি শুরু হয়। কিন্তু সামরিক সরকারের বাহিনীর পক্ষে খুব বেশি সময় তা মোকাবিলা করা সম্ভবপর হয়নি। অবশেষে উইন্টার প্যালেসের নিয়ন্ত্রণভার লালরক্ষী বাহিনী নেয়। সম্পন্ন হয় অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের। প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লেনিন।
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি গণবিপ্লব। এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রলেতারিয়েতের নেতা হিসেবে লেনিনের আবির্ভাব ঘটে। ইতিহাসে প্রথম বারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয় প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব। প্রতিষ্ঠিত হয় কৃষক-শ্রমিকের রাষ্ট্র। তাই এটি কেবল রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার পালাবদল নয় বরং এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার জনগণের জীবন, জীবন মান ও জীবনবোধের ক্ষেত্রে এক মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এই বিপ্লবের ফলে সমাজতন্ত্রের প্রবহমাণ ধারা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে যা প্রায় পুরো বিশ শতকে রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আর সোভিয়েত সমাজতন্ত্র প্রজাতান্ত্রিক সংঘের ৬০ বছরের ইতিহাস লেনিনের আশাবাদ যথার্থ বলেই প্রমাণ করেছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]