বখতিয়ার খলজীর জীবনের শেষ কাজ তিব্বত অভিযান। হয়তোবা বখতিয়ার খলজী তুর্কিস্থানের সঙ্গে


তিব্বত অভিযান
বখতিয়ার খলজীর জীবনের শেষ কাজ তিব্বত অভিযান। হয়তোবা বখতিয়ার খলজী তুর্কিস্থানের সঙ্গে
সোজা যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই তিব্বত আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু বাংলায় মুসলিম শাসনের
প্রতিষ্ঠাতা দুর্দম্য সাহসী তুর্কি বীরের তিব্বত অভিযান বিফল হয়। প্রকৃতপক্ষে, তিব্বত পর্যন্ত তিনি যেতে
পারেননি বলে মনে হয়। তবে তিনি খুব সতর্কতার সাথে তিব্বত অভিযানের পরিকল্পনা করেন এবং
লখনৌতি হতে তিব্বত পর্যন্ত রাস্তার সংবাদ সংগ্রহ করেন। সকল প্রস্তুতির পর বখতিয়ার খলজী দশ হাজার
সৈন্যসহ লখনৌতি হতে তিব্বতের দিকে রওয়ানা হন। উত্তর-পূর্ব দিকে কয়েকদিন চলার পর বর্ধনকোট
শহরের পূর্বদিকে ‘বেগমতী' নামক নদী অতিক্রম না করে বখতিয়ার খলজী উত্তর দিকে অগ্রসর হতে
থাকেন। এভাবে ১৫ দিন চলার পর একটি শস্যশ্যামলা স্থানে একটি দুর্গ দেখতে পান। বখতিয়ার খলজী
তাঁর সৈন্যদের নিয়ে সেখানে পৌঁছালে দুর্গের সৈন্যরা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জনসাধারণ মুসলমানদের
সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সমস্ত দিন ধরে যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে বখতিয়ার খলজী জয়লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে
তাঁর পক্ষের অনেক সৈন্য যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। রাতে বন্দি শত্রুসৈন্যরা তাঁকে জানায় যে মাত্র কয়েক মাইল
দূরে করমবত্তন নামে একটি শহর আছে, সেখানে কয়েক লক্ষ সৈন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। বখতিয়ার খলজী
তখন লখনৌতি প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে পুনরায় যাত্রা শুরু করেন, কিন্তু ১৫ দিনের রাস্তায় তাঁর সৈন্যবাহিনী
বা ঘোড়া কোনরূপ খাবার সংগ্রহ করতে পারেনি, কারণ পার্বত্য এলাকার লোকেরা পথের সকল শস্য বা
ঘোড়ার খাদ্য পূর্বেই নষ্ট করে ফেলে। ফলে, অনেকে খাদ্যের অভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ইতোমধ্যে
লখনৌতি ফেরার পথে উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশের পার্বত্য লোকেরা চারিদিক হতে তাঁদেরকে আক্রমণ
করে। এমতাবস্থায় তাঁরা নিকটস্থ একটি মন্দিরে আশ্রয় নিলে সেখানেও তাঁরা শত্রুদের হাত হতে নিস্তার
পেলেন না এবং শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে দেবকোটে ফিরে আসেন। বখতিয়ার খলজী দেবকোটে
অবস্থানকালে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। বিপুল সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শোকে এবং ব্যর্থতার গøানিতে
বখতিয়ার খলজী ভেঙ্গে পড়েন।এভাবে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন এবং ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন
করেন। বখতিয়ার খলজীর ব্যর্থ তিব্বত অভিযানে বিশাল বাহিনী ধ্বংস হওয়ায় বাংলায় মুসলিম সাম্রাজ্যের
বিস্তৃতি সাময়িকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। পার্শ্ববর্তী হিন্দু রাজ্যগুলো এ সুযোগে শক্তি বৃদ্ধির সময় পায়।
অপরপক্ষে লখনৌতির মুসলমান সেনানায়কদের মধ্যেও অন্তর্বিরোধ দেখা দেয়। পরবর্তীকালে দিল্লির সাথে
বিরোধে লখনৌতির মুসলমানেরা সংঘবদ্ধভাবে বাধা দিতে পারেনি। ফলে দিল্লির মুসলিম সুলতান বাংলায়
ক্ষমতা বিস্তারের সুযোগ পায়।
খলজী মালিকদের অধীনে বাংলা
মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই লখনৌতির মুসলমান রাজ্যে বিশৃ´খলা দেখা দেয়।
বখতিয়ার খলজীর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁর অন্যতম প্রধান অমাত্য মুহাম্মদ শীরাণ খলজী লখনৌতির হতে
তাড়াতাড়ি দেবকোটে ফিরে আসেন। অত:পর দেবকোটে উপস্থিত খলজী আমীর এবং সৈনিকবৃন্দ তাঁকে
নেতা নির্বাচিত করেন এবং তিনি লখনৌতির শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি সম্ভবত এক বৎসরকাল
(১২০৭-১২০৮ খ্রি:) শাসন করেন। দিল্লির সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবককে বখতিয়ার খলজীর অপর প্রধান
অমাত্য আলী মর্দান খলজী প্ররোচিত করেন লখনৌতি আক্রমণ করার জন্য। কুতুবউদ্দিনও হয়তো
সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি অযোধ্যার শাসনকর্তা কায়েমাজ রুমীকে লখনৌতি অভিযানে পাঠান এবং
লখনৌতির খলজী মালিকদের বিরোধ মীমাংসা করতে আদেশ দেন। কায়েমাজ রুমী ১২০৭ খ্রিস্টাব্দে
লখনৌতির দিকে সসৈন্যে অগ্রসর হন এবং বিনা যুদ্ধেই দেবকোট অধিকার করেন এবং হুসামউদ্দিন
ইওয়াজ খলজীকে দেবকোটের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে অযোধ্যার দিকে প্রত্যাবর্তন করে। যুদ্ধে শীরাণ


খলজী পরাজিত হয়ে মাযেদা ও সন্তোষের (বগুড়া ও দিনাজপুর) দিকে পলায়ন করেন। এভাবেই মুহাম্মদ
শীরাণ খলজীর শাসনকাল শেষ হয়।
হুসামউদ্দিন ইওয়াজ খলজী দিল্লির অধীনস্থ শাসনকর্তা হিসেবে লখনৌতির মুসলিম রাজ্য শাসন করতে
থাকেন অর্থাৎ লখনৌতি দিল্লির অধীনস্থ একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ইওয়াজ খলজী এই পদে প্রায় ২ বছর
(১২০৮-১০ খ্রি:) পর্যন্ত বহাল ছিলেন। কিন্তু এরপর আলী মর্দান খলজী আবার লখনৌতিতে ফিরে আসেন।
ইতোমধ্যে আলী মর্দান খলজী দিল্লির সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। সুলতান
কুতুবউদ্দিন আইবক আলী মর্দানকে লাহোরে সাদরে গ্রহণ করেন এবং বন্ধুত্বের পুরস্কারস্বরূপ তাঁকে
লখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। আলী মর্দান খলজী বিরাট সৈন্যবাহিনীসহ লখনৌতির দিকে যাত্রা
করেন। আলী মর্দান খলজী কুতুবউদ্দিন আইবক কর্তৃক নিযুক্ত হওয়ায় আইবকের বিরুদ্ধাচরণ করা উচিত
হবে না বুঝতে পেরে ইওয়াজ খলজী কুশী নদী পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে আলী মর্দান খলজীকে অভ্যর্থনা
জানালেন। তিনি স্বেচ্ছায় আলী মর্দানের হাতে শাসনভার ছেড়ে সরে দাঁড়ালেন। আলী মর্দানের শাসনভার
গ্রহণ করার অল্পদিন পর লাহোরে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের মৃত্যু হয়। এই সুযোগে আলী মর্দান
খলজী সুলতান আলাউদ্দিন উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই হিসেবে সুলতান আলাউদ্দিন
আলী মর্দান বাংলার প্রথম মুসলমান স্বাধীন সুলতান। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি যথেচ্ছ ব্যবহার
করতে থাকেন। লখনৌতির খলজী আমীরদের প্রতিও তিনি অত্যাচার ও উৎপীড়ন আরম্ভ করেন। খলজী
আমীরেরা তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হুসামউদ্দিন ইওয়াজ খলজীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং গোপনে
সুলতান আলাউদ্দিন আলী মর্দানকে সম্ভবত ১২১২ খ্রিস্টাব্দে হত্যা করেন। অত:পর হুসামউদ্দিন ইওয়াজ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]