বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ


বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ
মধ্যযুগের আগে বাংলা ভাষার লিপি রচনার গতি বেশ ধীর ছিল। পাল ও সেন যুগে সংস্কৃত ভাষার প্রভাব বেশি থাকায়
বাংলা ভাষার তেমন উন্নতি হয়নি। বাংলা ভাষার সবচেয়ে পুরোনো নমুনা বলে পন্ডিতরা চিহ্নিত করেছেন চর্যাপদকে।
চর্যাপদের ভাষা পুরোপুরি বাংলা নয়, বলা চলে এটি বাংলা-পূর্ববর্তী ভাষা। কিন্তু তারপরও চর্যাপদকে বাংলা ভাষার
প্রাচীনতম নমুনা বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ একে চর্যাগীতি বলেন। কেননা, এতে রাগরাগিনীর উল্লেখ
আছে। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মুখে মুখে এগুলো গান হিসেবে প্রচলিত ছিল। বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাসে চর্চাপদের গুরুত্ব
অপরিসীম। কেননা, এগুলো থেকে প্রাচীন বাংলা এবং তার ঠিক আগেকার ভাষার নমুনা ও সমাজের চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
পাল ও সেন যুগের বৌদ্ধ গুরুরা এসব চর্যাপদ রচনা করেন। অষ্টম, নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এসব গান রচিত
হয়েছে। এর ভাষা ছিল একই সঙ্গে বাংলা, অহমিয়া এবং উড়িয়া ভাষার পূর্বপুরুষ। পরে বাংলা ভাষা উড়িয়া থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়, লাভ করে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। পরে অহমিয়া ভাষাও বাংলা থেকে পৃথক হয়ে যায়। চর্যাপদের পর দীর্ঘকাল বাংলা ভাষার
কোনো নমুনার কথা জানা যায়নি। মনে করা হচ্ছে যে, সেন রাজাদের আমলে প্রচুর সংস্কৃত শাস্ত্র এবং সাহিত্য রচিত হলেও
মুসলমানদের আগমনের প্রথম দু’শতাব্দীতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দিকে তেমন কোনো দৃষ্টি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে
পঞ্চদশ শতাব্দীতে বড়– চন্ডীদাসের রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ উল্লেখযোগ্য পুঁথি সাহিত্য কর্ম। এতে বাংলা ভাষার শব্দের রূপ
খুঁজে পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষা নতুন গতি লাভ করে সুলতানি যুগে। ফারসি ও আরবির সংস্পর্শে এসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দ্রুত বিকাশ
ঘটে। স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের অভ্যুদয় বাংলা ভাষাকেও অপরিহার্য করে তোলে। সুলতানি যুগে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা
ভাষার প্রসার ঘটে। ইলিয়াসশাহী আমলে মহাকাব্য ও পৌরাণিক কাহিনী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা বাংলায়
ভাবপ্রবণ ও মানবতাবাদী সাহিত্যের উদ্ভব ঘটে। বাংলার সুলতান রুকনউদ্দিন-এর পৃষ্ঠপোষকতায় কৃত্তিবাস বাংলা ভাষায়
‘রামায়ণ’ রচনা করেন। চট্টগ্রামের শাসক পরাগল খার সহযোগিতায় কবি পরমেশ্বর ‘মহাভারত’ বাংলায় অনুবাদ করেন।
আরো অনেক গ্রন্থই তখন রচিত হয়। মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় লৌকিক কাব্যের সাহিত্য রচনা শুরু হয়। ষোড়শ
শতকে সারিবদ্ধ খাঁ নামক একজন মুসলমান ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য রচনা করেন। হুসেনশাহী যুগে (১৪৯৩-১৫৩৮) বাংলা ভাষা
ও সাহিত্যের বিকাশ বিস্ময়কর অগ্রগতি লাভ করে। বাংলার শাসকগণ এ সময়ে দেশীয় সাহিত্যের প্রতি সকল প্রকার
সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন।
খ. শিক্ষা ব্যবস্থা
মধ্যযুগের বাংলার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শাসকরা শিক্ষাদীক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। সুফিসাধকগণ ‘খানকাহ’গুলোকে
উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করেছেন। দেশে মসজিদগুলোকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়। শিক্ষা
ক্ষেত্রে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মশিক্ষার গুরুত্ব বেশি ছিল। মুসলমান শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা মক্তব দিয়ে শুরু হতো। প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে আরবি, ফার্সি ও বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া হতো। সম্রাট আকবরের শিক্ষানীতিতে পাঠ্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন

করা হয়। মক্তবেও গদ্য-পদ্য পড়ালেখা ছাড়াও কবিতা মুখস্থ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অংক
আবশ্যক করা হয়। ফার্সি শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে হিন্দু সমাজ যথেষ্ট এগিয়ে আসেন। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা
ছাড়াও যুক্তিবিদ্যা, অংকশাস্ত্র, রসায়ন ইত্যাদি পড়ানো হতো। তবে মধ্যযুগে বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের উচ্চ শিক্ষা
তেমন গড়ে উঠেনি। নারীদের শিক্ষা ছিল সীমিত আকারের এবং তা প্রধানত প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা ছিল।
গ. স্থাপত্য ও শিল্পকলা
মধ্যযুগে যে সব দেশ থেকে শাসকশ্রেণী বাংলার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের স্থাপত্য
ও শিল্পকলার নিদর্শন বহন করে এনেছিলেন। এগুলো তাদের ব্যক্তিত্বের এবং প্রতিভার পরিচয় বহন করে। তবে পশ্চিম
এশিয়ার স্থাপত্যের উপকরণ বাংলায় বেশি লক্ষ করা গেছে। মসজিদ নির্মাণে বাংলার আঞ্চলিক স্থাপত্যকেও গুরুত্ব দেওয়া
হয়েছে। চিত্রকলার ক্ষেত্রেও মুঘলরা যতখানি যতœবান ছিলেন সুলতানি যুগে এই শিল্পের তেমন কদর ছিল না। ফলে বাংলায়
চিত্র শিল্প ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ততটা বিকশিত হতে পারেনি। তবে মুঘল আমলে ঢাকাসহ কিছু কিছু জায়গায়
মসজিদ, সমাধি, প্রাসাদ, দুর্গ ইত্যাদি নির্মাণে স্থাপত্য শিল্পের চমৎকার নিদর্শন স্থাপিত হয়েছিল। এই ধারা সুবাদারদের
আমলেও অব্যাহত ছিল। ঢাকায় নবাব আমলের জিনজিরা প্রাসাদসহ নির্মিত ইমারতসমূহ এখন দর্শনীয় স্থান হিসেবে
পরিচিত। কিছু কিছু পুল, ঈদগাহ, চিল্লা খানা মধ্যযুগের দর্শনীয় স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]