Civil War : Red Army, Allied Intervention, War Communism, Bolsheviks in Power বলশেভিক শাসনামলে রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধ ও এর কারণ গৃহযুদ্ধের ফলাফল

লাল ফৌজ
ঐতিহাসিক রুশ (বলশেভিক) বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়া সমাজতান্ত্রিক র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। লেনিনের শাসনামলে (১৯১৮-১৯২১) তিন বছর রাশিয়া সরকার ও ক্ষমতাসীন বলশেভিক দলকে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয় এসময় রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে মিত্র বাহিনী সরাসরি হস্তক্ষেপ করে রাশিয়ার উপর তীর আক্রমণ চালায় এবং প্রতিবিপ্লবীদের সহযোগিতা করতে থাকে। এসময় লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক সরকার লাল ফৌজ গঠন ও যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। অবশেষে বলশেভিকরা জয়লাভ করে। তারা কঠোর হস্তে গৃহযুদ্ধ দমন করে। এতে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ভিত্তি যেমন মজবুত হয়, তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও রশিয়ার গৌরবময় পথ চলার সূচনা হয়। নিম্নে রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ, লাল ফৌজ, মিত্রবাহিনীর হস্তক্ষেপ, যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ, বলশেভিকদের ক্ষমতা লাভ এবং এ সরকারের শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।
৬.১
বলশেভিক শাসনামলে রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধ ও এর কারণ
১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের পর থেকেই সরকার তার বিরোধী মতের মানুষদের প্রতি অত্যন্ত নিপীড়িনমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকেন। এর ফলে সমাজের ঐ সকল অংশ থেকে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। তারা সকলে বলশেভিক শাসনের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়। সুতরাং এরকম একটি প্রেক্ষাপট থেকে আমরা গৃহযুদ্ধের কারণসমূহকে অনুসন্ধানের জন্য চেষ্টা করবো।
ক. গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করা
বলশেভিকরা ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই সরাসরি সকল প্রকার গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিরোধিতা করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, সংবিধান সভা বাতিল করা হয়। এর কারণ কেবল এটি ছিল না যে, এখানে নির্বাচিত ব্যক্তিরা ছিলেন। বরং এর সাথে যুক্ত ছিল, এই সংবিধান সভায় নরমপন্থি, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী ধারা থেকে সমাজের অনেক মানুষ। সুতরাং এরকম একটি পরিপ্রেক্ষিতে বলশেভিকরা একেবারে নিজেদের মতো মানুষ একটি সংবিধান সভা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা করতে তারা ব্যর্থ হন ।
খ. সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ
সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জার্মানির সাথে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল- তা মানসিকভাবে মানতে পারছিলেন না। তারা মনে করতেন যে, এটি কেবল রাশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য আত্মহত্যারই শামিল নয়, বরং তাদের যে মিত্র শক্তির সাথে এতদিন ধরে সম্পর্ক রয়েছে তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এই ধরনের ধারণায় বিশ্বাসী সামরিক কর্মকর্তারাই পরবর্তীকালে দক্ষিণাঞ্চলে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক সৈন্যবাহিনী এবং তারা ভন ও কিউবান কোসাকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সমাজের ভেতরকার প্রতিক্রিয়াশীল অংশ- বিশেষ করে বড় বড় ভূমির মালিকরা এই বলশেভিক বিরোধী জোটে যোগদান করেন। এছাড়াও জর্জিয়া, ইউক্রেন এবং কালমিকসরাও এই বলশেভিক বিরোধী জোটে যোগদান করেন। তারা এই জোটে যোগদান করেছিল এ কারণে তারা পুরো বিষয়টিকে দেখেছিলেন রাশিয়ার কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ হিসেবে। তারা ভেবেছিলেন, যদি তারা রাশিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেন তবে তারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারবেন।
গ. কৃষকদের মনোভাব ও অবস্থান
রাশিয়ার কৃষক সমাজ নয়া বলশেভিক শাসনকে পরিপূর্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছিল। কারণ বলশেভিকরা যেভাবে তাদের প্রথা প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব চাপাতে চেয়েছিল—এই বিষয়টিকেও তারা মেনে নিতে চায়নি। সোভিয়েত সরকার কৃষকের সামষ্টিক শক্তি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ছিলেন। কারণ এই কৃষকরাই সৈনিক ও শহুরে প্রলেতারিয়েতের জন্য খাবার সরবরাহ করতো। সুতরাং বলশেভিকরা পুরো কৃষক সমাজের ক্ষমতাকে নিরপেক্ষ একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এ লক্ষ্যে তারা পুরো গ্রামীণ কৃষক সমাজকে দুইভাগে বিভক্ত করেন এবং এই দুই পক্ষের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, বলশেভিকরা পুনরায় গ্রামীণ সমাজকেও দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেন। যেখানে এক পক্ষে ছিলেন ধনী কৃষক সমাজ-তারা ‘কুলাক’ নামে পরিচিত। অন্যপক্ষে ছিলেন-দরিদ্র কৃষককুল- যারা ‘বেদনিয়াকি' নামে পরিচিত ছিলেন। তারা দরিদ্র কৃষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি গঠনের পেছনে মূল কারণ ছিল যাতে ধনী কৃষকরা সরকারের কালেক্টরদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো প্রকার শস্য জমিয়ে রাখতে বা অন্য কোথাও পাচার করতে না পারেন। এই কমিটিগুলোর দরিদ্র কৃষকরা বলশেভিকদের প্রধান সমর্থক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ।
বস্তুত এভাবে রাশিয়ার একটি গৃহযুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয়েছিল। যেখানে পুরো সমাজ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এ দুই পক্ষ একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। যদিও একদিক থেকে সোভিয়েতের লোকরা ছিলেন দেশপ্রেমিক (কারণ তারা একই সময়ে দেশে বিদেশি আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করছিলেন), কর্মে উদ্দীপ্ত এবং ভীতু প্রকৃতির। বিশেষ করে, সমাজের ঐ অংশের কৃষকদের মাঝে ভীতি বেশি ছিল যারা এই বিপ্লবের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। একদিকে শ্বেত বিপ্লবীরা, অন্যদিকে সামরিকভাবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও বিপুল সম্পদের উপর বিদেশিদের হস্তক্ষেপের বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। যদিও তারাও রাজার শাসন পুনরায় ফিরে আসুক তা ভেতরে ভেতরে চাইতেন, অন্যরা আবার দেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চাইতেন ।
ঘ. Peoples Army গঠন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য গঠিত চেকোশ্লোভাক ব্রিগেডই বলশেভিকদের প্রথম আঘাত হানে। অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনী ত্যাগকারী কিছু সৈনিক, যুদ্ধবন্দী এবং রাশিয়ায় বসবাসকারী চেক ও শ্লোভাকদের দ্বারা এই ব্রিগেড গঠিত হয়। ব্রেস্টলিটভস্ক চুক্তির পরে তাদেরকে সাইবেরিয়া ও ভ্লাডিভস্টক হয়ে পশ্চিম ফ্রন্টে যেতে বলা হয় । রুশ সরকার তাদেরকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বললে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারা অস্ত্রসমর্পণ করতে অস্বীকার করলে Peoples commissar of war ট্রটস্কি তাদেরকে জোরপূর্বক নিরস্ত্র ও বন্দী করার আদেশ দেন। কিন্তু এ আদেশ পালন করার জন্য সোভিয়েত সৈন্যরা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না। ফলে ক্ষুব্ধ ৩৫,০০০ চেকোশ্লোভাক একটার পর একটা শহর দখল করতে থাকে, কমিউনিস্ট বিরোধী শক্তি তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দিতে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় চেকদের সহায়তায় স্থানীয় সরকার গড়ে ওঠে। সমাজতন্ত্রী বিপ্লবীরাও চেকদের সাথে যোগ দেয় এবং সংবিধান সভা গঠন করে। একটি Peoples Army-ও গঠন করে। এসব কারণে রাশিয়ায় সর্বত্র গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]