বলশেভিক শাসনামলে রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধের ফলাফল গৃহযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর হস্তক্ষেপের পরও বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ

বলশেভিক শাসনামলে রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধের ফলাফল
গৃহযুদ্ধের ফলে রাশিয়ার সবকিছু সম্পূর্ণরূপে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এ অবস্থার কারণ ছিল প্রতিযোগী তিনটি পক্ষের যথা : বলশেভিক, প্রতিবিপ্লবী ও বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের ধ্বংসযজ্ঞ। এর ফলে গৃহযুদ্ধের শেষে রাশিয়া নিঃশেষিত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত। গৃহযুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং বৈদেশিক আক্রমণে ক্ষত রাশিয়াকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছিল। বাল্টিক অঞ্চলের দেশসমূহ বেসারবিয়া, ফার্স প্রভৃতি এলাকা রাশিয়ার হাতছাড়া হয়ে যায় ৷
সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলক খাদ্য শস্য সংগ্রহের নীতির ফলে কৃষকরা বেশি
উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ফলে কৃষকরা উৎপাদন একদম কমিয়ে দেয়, যা জাতীয় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ছিল। শিল্প উৎপাদনও এ সময় হ্রাস পায়। ১৯২০ সালে মোট শিল্প উৎপাদন ছিল 10.2% যা ১৯১৩ সালের শিল্প উৎপাদনের চেয়ে কম নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের অভাব দেখা দেয়। ফলে জনগণ দুর্দশায় পতিত হয়। ১৯২১-২২ সালে খরা ও দুর্ভিক্ষ জনগণের এই দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পায়। George Vernadsky লিখেছেন, "Devastation, disorganization, chaos and starvation were the legacy which the civil war left to a nation already bleed white by the enormous losses of the World War."
গৃহযুদ্ধের সম্ভবত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল হলো বলশেভিকদের আরো শক্তিশালী হয়ে আবির্ভূত হওয়া। বিদেশি সাহায্যপুষ্ট সকল বিরোধীদের বিরুদ্ধে তারা সফল হয়। হেজেন বলেন যে, সোভিয়েত রাশিয়ার জনগণ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে একটি দেশাত্মবোধক যুদ্ধ করে এবং রাশিয়ার মাটি থেকে বিদেশি হানাদারদের তাড়িয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে সফল হয়। সন্দেহ নেই তারা CHEKA'র মাধ্যমে অনেক হত্যাযজ্ঞ ও সন্ত্রাস চালায় এবং চেকরা যখন মস্কোর দিকে অগ্রসর হয় তখন শ রাজপরিবারকে হত্যা করে তবুও তারা বিপ্লবের পরে আর্থিকভাবে লাভবান সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সমর্থন লাভ করে।
৬.৩
বলশেভিক দল কর্তৃক লাল ফৌজ (Red Army) গঠন
বলশেভিক পার্টি কর্তৃক লাল ফৌজ (Red Army) গঠন ও প্রতিবিপ্লবী বিদ্রোহ এবং বৈদেশিক আক্রমণ দমন রাশিয়ার ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে রক্ষার জন্য বলশেভিক পার্টি ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রটস্কিকে সামরিক কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করে শ্রমিক ও কৃষকদের সমন্বয়ে লাল ফৌজ (Red Army) নামে একটি সেনাদল গঠন করেন। উল্লেখ্য, এ বাহিনীতে পূর্বে স্বেচ্ছায় বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বলশেভিকদের প্রধান সামরিক শক্তি রেড গার্ডের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বাহিনীতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা থেকে সাধারণ সদস্যরা পর্যন্ত যোগ দেয়। কনসোমল (Young Communist League) সদস্যরাও লালফৌজে যোগ দিয়ে প্রতিবিপ্লবীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। জারের আমলের ৫০ হাজার দেশপ্রেমী সেনা অফিসার লাল ফৌজকে প্রশিক্ষণ দান ও পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। রুশজাতি ছিল স্বভাতই দেশপ্রেমিক। বৈদেশিক আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশ রক্ষার জন্য তারা বলশেভিক সরকারকে সহায়তা করে। সকল বিপদের মুখে লাল ফৌজ বুক আগলিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লাল ফৌজ প্রথম প্রথম পুস্কভ আর নার্ভার কাছে জার্মানদের প্রতিরোধ করে এবং ১৯১৮ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি পেত্রোগ্রাদের বিরুদ্ধে জার্মান অভিযান রুখে দেয়। এরপর থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখটি সোভিয়েত ইউনিয়নে লাল ফৌজ
রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস ১৯৪৫ খ্রি. পর্যন্ত দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ১৯১৮ সালে ৩ মার্চ জার্মানির স রাশিয়ার ব্রেস্ট-লিটভস্কের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জার্মানির সাথে বলশেভিক সরকারের যুদ্ধ আপাতত বন্ধ হয়। ১৯১৮ সালে নভেম্বরে জার্মানির প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর রাশিয়া থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়।
অন্যদিকে মিত্রশক্তিবর্গ জার্মানির পরাজয়ের পর রাশিয়ার অভ্যন্তরে আ আরো জোরদার করে এবং প্রতিবিপ্লবী শক্তিগুলোকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে বলশেভিক পার্টি লেনিনকে প্রধান করে 'শ্রমিক প্রতিরক্ষা পরিষদ' গঠন করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে রক্ষায় অগ্রসর হয়। এ পরিষদ প্রতিবিপ্লব ও বিদেশি হস্তক্ষেপকারীদের মোকাবিলার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এ সময় স্টালিনের নেতৃত্বে প্রতিবিপ্লবী ও শ্বেত রক্ষীদের শায়েস্তা করার জন্য চেকা নামে এক গুপ্ত পুলিশ বাহিনী গঠন করেন। এর সাহায্যে তিনি প্রতিবিপ্লবী এবং কুলাক বিদ্রোহীদের ধ্বংস করেন। স্টালিন শ্বেত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাল সন্ত্রাস চালান। সকল বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে লাল ফৌজ ১৯১৮ সালের শরৎকালে পূর্বদিকের ফ্রন্টে এক ব্যাপক আক্রমণ অভিযান শুরু করে এবং শত্রুকে উরালের পেছনে বিতাড়িত করেন।
প্রতিবিপ্লবী মিত্রবাহিনীর সবচেয়ে বড় ভরসা সেনাপতি এডমিরাল আলেকজান্ডার কোলচাক ৪০,০০০ শক্তিশালী চেক সেনা নিয়ে ১৯১৯ সালে সাইবেরিয়ার ব্যাপক এলাকা এবং উরাল অঞ্চল দখল করে নেয়। ১৯১৯ সালের মার্চ মাসে কোলচাক ভার নিকট এসে পড়ে। তাকে প্রতিহত করার জন্য অভিজ্ঞ বলশেভিক সেনাপতি ক্রুঞ্জের নেতৃত্বে সেরা লাল ফৌজ শক্তিশালী প্রতি আক্রমণ গড়ে তুলে এবং কোলচাকের বাহিনীকে বিতাড়িত করে। একই সময় মিত্রবাহিনীর সহায়তায় জেনারেল ইউদেনিচের অধীনে শ্বেতরক্ষী বাহিনী ১৯২১ সালে পেত্রোগ্রাদ আক্রমণ করে লালফৌজের হাতে পরাজিত হয়। আবার জেনারেল দেনিকিনের শ্বেত বাহিনী দঃক্রিমিয়া থেকে ইউক্রেন দখল করে মস্কোর দিকে এগিয়ে আসছিল, উল্লেখ্য, ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে মস্কোকে সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের রাজধানী করা হয়েছিল। লাল ফৌজ সর্বশক্তি নিয়োগ করে দেনিকিনের বাহিনীকে পরাজিত করে।
১৯২০ সালের শেষভাগে লাল ফৌজ ক্রিমিয়ার শ্বেতবাহিনীকে পরাজিত করে এবং ইউক্রেনীয় কমিউনিস্টদের সাহায্যে ইউক্রেনের অভ্যুত্থান দমন করা হয়। ট্রান্সককেশিয়া ও মধ্য এশিয়া মুক্ত হয় ।
পোল বাহিনীও ফ্রান্সের এবং রাশিয়ার প্রতিবিপ্লবী সেনাপতি র‍্যাঙ্গেলের সাহায্যে শক্তিশালী হয়ে রাশিয়া আক্রমণ করে। কিন্তু লাল বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পোল বাহিনী পিছু হটে যায়। লাল বাহিনী পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশো দখলের উদ্যোগ নিলে শেষ পর্যন্ত মিত্রশক্তি পোল্যান্ড রক্ষার জন্য কার্জন লাইন বরাবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলে রাশিয়া বাধ্য হয়ে তা মেনে নেয়। তবে পোল্যান্ড ১৯২১ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার সাথে রিগা শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়। তবে ইউক্রেনের কিছু অংশ পোল্যান্ডের হাতে থাকে ।
১৯২২ সালে লাল ফৌজ জাপানি আক্রমণকারীদের বিতাড়িত করে ভ্লাদিভস্ত
কসহ দূরপ্রাচ্য শত্রুমুক্ত করে ।
১৯২১ সাল নাগাদ ব্রিটেন ও ফ্রান্সও একদিকে রণক্লান্ত, আর্থিক দুর্দশা, অপর দিকে নিজ দেশের শ্রমিক শ্রেণির বিরোধিতা প্রভৃতি কারণে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে এবং তাদের সেনাবাহিনী রাশিয়া থেকে সরিয়ে নেয় ৷
অন্যদিকে রাশিয়া পারস্য, বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো, রুমানিয়া ও তুরস্কের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করে তারা সীমান্ত সুরক্ষিত করে।
এভাবে শেষ পর্যন্ত বলশেভিক সরকার বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ও অভ্যন্তরীণ প্রতিবিপ্লব এই দ্বৈত বিপদ থেকে মুক্তি পায় এবং সাথে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার অস্তিত্ব রক্ষা পায় ।
লেনিনের নেতৃত্ব এবং তাঁর দুই সহকর্মী ট্রটস্কি ও স্টালিনের কর্মদক্ষতা বলশেভিক সরকারকে এই ঘোর বিপদ থেকে রক্ষা করে। জনসমর্থনের অভাবে শ্বেত বাহিনী ও বিদেশি শক্তি পরাজিত হয়। শেষ পর্যন্ত বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক সরকার পূর্ণ জয়লাভ করে। রুশভূমি শ্বেত রুশদের সন্ত্রাসমুক্ত হয়। বিপ্লবী বলশেভিক সরকার প্রতিবিপ্লবীদের নিষ্ঠুর শাস্তি দেয়। গুপ্ত পুলিশ বা চেকার হাতে বহু লোক মারা পড়ে। বহু বুর্জোয়া সাদা রুশ বিদেশে পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়। রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে উভয় বাহিনীর হাতে ১৪ মিলিয়ন লোক প্রাণ হারায় এবং ২ মিলিয়ন দেশ থেকে পালিয়ে যায়। যুদ্ধের ভয়াবহতা সত্ত্বেও রাশিয়া তার স্বাধীনতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে এবং দ্রুত শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনের কাজ করতে সক্ষম হয়।
৬.৪ রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর হস্তেক্ষেপ
চেকদের এরূপ প্রাথমিক সাফল্য পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তিবর্গকে রাশিয়ায় কমিউনিস্ট সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য হস্তক্ষেপে উৎসাহিত করে।
১. গণতন্ত্র ও কমিউনিস্ট আদর্শের সংঘাত
পশ্চিমা শক্তিবর্গের গণতান্ত্রিক আদর্শের সঙ্গে কমিউনিস্ট আদর্শের সংঘাত রাশিয়ায় ইউরোপীয় মিত্রবাহিনীর হস্তক্ষেপের অন্যতম প্রধান কারণ। রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্য এবং সাম্যবাদী মতাদর্শের বিজয় ধনতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী পশ্চিমা ইউরোপ ও আমেরিকার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক সরকারগুলো রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের ফলে আশঙ্কা করে যে, এই বিপ্লব তাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া পুঁজিবাদী দেশসমূহ সাম্যবাদী মতাদর্শের বিরোধিতাকে নিজেদের স্বার্থরক্ষার উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের বিপ্লবের জন্য রাশিয়া যে উস্কে দিচ্ছিল তা বিদেশি শক্তিসমূহ রাশিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে বাধা দেয় ।
রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস ১৯৪৫ খ্রি. পর্যন্ত মিত্রশক্তি আশা করেছিল জারের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলে জার্মানির বিরুদ্ধে পূর্ব দেশীয় রণাঙ্গন আবার জোরদার হবে। তাছাড়া বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ার হাতে কমিউনিস্ট রাশিয়ার হাতে জায়মানস্ক এবং আরকেনজোল নামক দুটি ঘাঁটিতে যে যুদ্ধের রশদ জমা হয়েছিল, তা কমিউনিস্ট রাশিয়ার হাতে চলে যাক তা তাদের অভিপ্রেত ছিল না ।
অন্যদিকে বলশেভিকদের শাস্তির পক্ষে প্রচার “যুদ্ধ কেবল সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে হয়, সাধারণ মানুষের তাতে কোনো লাভ হয় না” এ ধরনের প্রচার মিত্রপক্ষের দেশগুলোর অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষ ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যেও এক যুদ্ধ বিরোধী মনোভাব তৈরি করছিল, যা ঐসব দেশের শাসকশ্রেণির আদৌ কাম্য ছিল না। তাই পশ্চিমা শক্তিবর্গ রাশিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে।
বিদেশি শক্তিগুলো রাশিয়ায় হস্তক্ষেপে খুব তৎপরতা দেখিয়েছিল। কেননা, তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল নয়া সোভিয়েত সরকার খুবই দুর্বল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং একটু চেষ্টা করলেই এ সরকারের পতন ঘটবে। বৈদেশিক শক্তিগুলোর ধারণা ছিল যে, রুশ জনগণ তাদের মুক্তিদাতা মনে করে তাদের স্বাগত জানাবে। অন্যদিকে সোভিয়েত সরকারের অল্পদিনে জনসমর্থন লাভ দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবিপ্লবী এবং প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলোকে মরিয়া করে তোলে।
২. বিদেশি ঋণ প্রদানে অস্বীকৃতি
বলশেভিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর জার আমলের সব বিদেশি ঋণ অস্বীকার করে এবং বিনা ক্ষতিপূরণে সব বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে। ফলে বিদেশের শিল্পপতিরা রাশিয়াতে হস্তক্ষেপের জন্য নিজ নিজ দেশের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল ।
৩. জার্মানির সাথে ব্রিস্ট লিটোভস্কের চুক্তি
মিত্রশক্তির সাথে কোনোরূপ আলাপ আলোচনা না করেই একতরফাভাবে জার্মানির সাথে ১৯১৮ সালে ব্রিস্ট লিটোভস্কের চুক্তি করে রাশিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার ফলে মিত্রশক্তিকে বিপাকে পড়তে হয়। রুশ সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিতে মিত্রশক্তিকে রাশিয়ার নানাস্থানে সেনা নামাতে হয়। ফলে পশ্চিমা শক্তিবর্গ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। যুদ্ধের শেষে বলশেভিকদের শায়েস্তা করার জন্য পশ্চিমা শক্তিবর্গের সেনাবাহিনী প্রতিবিপ্লবীদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং পশ্চিমা শক্তিবর্গ রাশিয়ায় হস্তক্ষেপ করে ।
8. Allied Supreme War Council -এর অনুমোদন
১৯১৮ সালের ২ জুলাই রাশিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ অনুমোদন করে। রাশিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রথম কার্যকর পদক্ষেপ নেয় ফ্রান্স। ফ্রান্স চেক সৈন্যদের রাশিয়া ছাড়ার পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার আদেশ দেয় এবং ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্পন্ন করতে বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, অতিরিক্ত সৈন্য বলশেভিক পার্টি কর্তৃক মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হওয়ার পর, দুনিয়ার প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্বের অষ্টম দিনেই নবীন । সোভিয়েত রাষ্ট্র কর্তৃক রাশিয়ায় জাতিসমূহের অধিকারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। জাতিসমূহের এই অধিকারের দলিলে সকল জাতিগত বিশেষ সুবিধা ও বিধিনিষেধের বিলুপ্তি, সাবেক রুশ সাম্রাজ্যে বসবাসরত সকল জাতির সমতা ও সার্বভৌমত্ব এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
পাশাপাশি পশ্চাৎপদ এলাকাগুলোর বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি গোষ্ঠীর বিকাশ ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসমূহের একটি স্বেচ্ছামূলক ইউনিয়ন গঠন করার উদ্যোগ চলছিল। একটি ফেডারিক রাষ্ট্র গঠনের মূলনীতি প্রসঙ্গে অক্টোবর বিপ্লবের স্থপতি মহামতি লেনিন লিখেছেন, “আমরা চাই জাতিসমূহের একটি স্বেচ্ছামূলক সংঘ (ইউনিয়ন)- যে সংঘে থাকবে না এক জাতির উপর আরেক জাতির কোনো রকম বলপ্রয়োগের তথা নিপীড়ন চালানোর সুযোগ-যে সংঘ হবে পূর্ণ আস্থা, ভ্রাতৃপ্রতিম ঐক্যের সুস্পষ্ট স্বীকৃতি ও সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছামূলক সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত।"
“পুরানো দুনিয়ার-জাতিগত নিপীড়ন, জাতিগত কলহ আর জাতিগত বিচ্ছিন্নতার দুনিয়ার বিপরীতে শ্রমিকরা স্থাপন করছে এক নয়া দুনিয়া, সকল জাতির মেহনতি জনগণের ঐক্যের দুনিয়া, এমন এক দুনিয়া যেখানে নেই কোনো বিশেষ সুবিধা ভোগের কিংবা মানুষের ওপর মানুষের সামান্যতম নিপীড়নের সুযোগ।”
মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ, জাতিগত বিরোধ, বিশেষ কোনো এক জাতিকে বাড়তি সুযোগ সুবিধা দান-শুরুতেই সোভিয়েত ইউনিয়নে এই সব বৈষম্যমূলক নীতি বাতিল করে দেওয়া হয়। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই ছোট-বড় সব জাতি এবং সব ভাষাভাষী মানুষের সমঅধিকারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘ। দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও সামাজিক নিপীড়ন দূর করার সাথে সাথে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘ গঠনের মধ্য দিয়ে শতাধিক জাতি অধ্যুষিত সোভিয়েত দেশ থেকে জাতিগত সমস্যা চিরতরে নির্মূল হয়।
মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বিজয়ের ফলে স্বাধীন জাতিসত্তা হিসেবে যে ৪টি (রাশিয়া, ইউক্রেন, বিয়েলোরাশিয়া ও ট্রান্সককেশিয়া) সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের উদ্ভব ঘটেছিল ১৯২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সেসব প্রজাতন্ত্রের পূর্ণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা তাঁদের প্রথম সোভিয়েত সমূহের জাতীয় কংগ্রেসে মিলিত হয়েছিলেন - গঠন করেছিলেন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘ।
সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র সংঘের উদ্ভব কোনো আকস্মিক ব্যাপার ছিল না। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সমগ্র ধারা এবং বিপ্লবোত্তর প্রথম বছরগুলোর ঘটনাপ্রবাহ এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। সে সময় বিভিন্ন জাতি ও জাতিসত্তার মানুষ বুর্জোয়া ও ভূ- স্বামীদের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন, স্থাপন করেছেন সোভিয়েত শাসনব্যবস্থা এবং দেশি প্রতিবিপ্লবী ও বিদেশি হস্তক্ষেপকারী-আক্রমণকারীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছেন সমাজতন্ত্রের সাফল্যগুলোকে ।
রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস ১৯৪৫ খ্রি. পর্যন্ত জাতীয় ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সোভিয়েত জাতিসমূহের গৃহযুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের সময় যার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল শান্তির সময় তা বেড়ে গিয়েছিল। যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার, উন্নত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ে তোলার ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পাদনের একমাত্র উপায় ছিল সকল সোভিয়েত জাতির যৌথ প্রয়াস, ভ্রাতৃপ্রতিম সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা। শত্রু ভাবাপন্ন বিদেশি শক্তিসমূহের হুমকির মোকাবিলায় জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও ঐক্যের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কারণ সে সময়ের পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র পরিবেষ্টিত অবস্থায় কোনো সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের পক্ষেই। বিচ্ছিন্নভাবে নিজেকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের কাছে সাময়িক পরাজয়বরণের বিপদ থেকে মুক্ত ভাবা সম্ভব ছিল না।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘ তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমে গঠিত হয়েছিল ৪টি অঙ্গ প্রজাতন্ত্র নিয়ে। বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫টি সার্বভৌম সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নিজস্ব সংবিধান যেখানে প্রতিফলিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রজাতন্ত্রের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজন ।
প্রতিটি অঙ্গ প্রজাতন্ত্রের সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার রয়েছে। কোনো অঙ্গ প্রজাতন্ত্রের সীমানা তার সম্মতি ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে না (১৫টি প্রজাতন্ত্র ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নে রয়েছে-২০টি স্বশাসিত প্রজাতন্ত্র, ৮ টি স্বশাসিত অঞ্চল এবং ১০টি স্বশাসিত এলাকা)।
সোভিয়েত ইউনিয়নে শাসনক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় জনগণের ডেপুটিদের সোভিয়েতসমূহের মাধ্যমে, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক ভিত্তি। গোটা দেশে রয়েছে ৫১ হাজারেরও বেশি সোভিয়েত, অঙ্গ প্রজাতন্ত্র ও স্বশাসিত প্রজাতন্ত্রসমূহের সুপ্রিম সোভিয়েতসমূহ, টেরিটরিয়াল ও আঞ্চলিক সোভিয়েতসমূহ এবং স্বশাসিত এলাকা, জেলা, নগর এলাকা (ওয়ার্ড), উপশহর ও গ্রাম সোভিয়েতসমূহ। তারা সবাই রাষ্ট্রক্ষমতায় সমন্বিত পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব করছে। এসব সোভিয়েতের রয়েছে ২০ লক্ষাধিক নির্বাচিত ডেপুটি এবং কয়েক কোটি স্বেচ্ছাকর্মী। জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ভিত্তিতে কাজ করার মাধ্যমে জনগণের সরকারের এই প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থাগুলো নিজ নিজ এলাকার উৎপাদন, সামাজিক বিকাশ এবং সাংস্কৃতিক জীবনকে সক্রিয়ভাবে প্রভাবিত করছে।
প্রকৃতপক্ষে সুপ্রিম সোভিয়েতের কাঠামোই সামগ্রিক জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে প্রতিটি প্রজাতন্ত্রের স্বার্থের সংগতিসাধন সম্ভব করে তুলছে। সুপ্রিম সোভিয়েত দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত : ইউনিয়ন সোভিয়েত ও জাতিসমূহের সোভিয়েত। উভয়ের ডেপুটিসংখ্যা (৭৫০), অধিকার ও ক্ষমতা সমান। জাতিসমূহের সোভিয়েত রয়েছে জনসংখ্যা নির্বিশেষে প্রতিটি প্রজাতন্ত্রের সমসংখ্যক (৩২) প্রতিনিধি ।
৬০ বছর সময়কালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন তারা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উন্নত ও মজবুত করার সাথে সাথে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে বিরাট
অগ্রগতি অর্জন করেছে।
যেসব জাতি একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এই সময়ের মধ্যে তারা তাদের জীবনকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। অঙ্গ প্রজাতন্ত্রগুলোর শিল্পোৎপাদন বেড়েছে শত শত গুণ । আজ প্রতিটি প্রজাতন্ত্রের রয়েছে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির উপযুক্ত শিল্পসমূহ। সাবেক নিরক্ষর কৃষকদের পৌত্র-প্রপৌত্ররা আজ চালাচ্ছে পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটরের ন্যায় জটিল ও সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ।
কৃষির ক্ষেত্রেও ঘটেছে অভূতপূর্ব অগ্রগতি। কাঠের লাঙলের পরিবর্তে আজ কৃষকরা ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। প্রতিটি প্রজাতন্ত্র জন্ম দিয়েছে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক কারিগরি ও শিল্পকর্মী।
দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেশের প্রতিটি জাতির জনগণের জীবনযাত্রার মান নিরবচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধির এক নির্ভরযোগ্য ভিত্তি তৈরি করেছে। ১৯৮০ সালে গড় মজুরি ও বেতন ১৯৭০ এর তুলনায় প্রায় ১০৪ গুণ ছিল। ব্যাপকভাবে আধুনিক গৃহনির্মাণ প্রজাতন্ত্রগুলোর জীবনে আজ একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য পরিণত হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকেও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। একাদশ পঞ্চবর্ষ কালপর্বে (১৯৮১-১৯৮৫) শিল্পোৎপাদন ২৬-২৮ শতাংশ এবং কৃষি উৎপাদন ১২-১৪ শতাংশ বাড়বে ।
সোভিয়েত ইউনিয়নে আজ আর অনুন্নত এলাকা কিংবা অনগ্রসর জাতি নেই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা, সম্মিলিত প্রচেষ্টা, ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও বিশেষায়নের ফলে ছোট-বড় নির্বিশেষে প্রতিটি প্রজাতন্ত্রই অর্জন করছে দ্রুত অগ্রগতি। প্রজাতন্ত্রগুলোর সাংস্কৃতিক অগ্রগতির প্রতিও দেওয়া হচ্ছে নিরন্তর মনোযোগ। আজ প্রতিটি প্রজাতন্ত্রেরই রয়েছে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়, থিয়েটার ও সাধারণ পাঠাগার, প্রকাশনা ভবন আর বিজ্ঞান একাডেমিসমূহের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। অথচ ৬০ বছর আগে দেশের বহু জাতির লিখিত ভাষাই ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয়, একাডেমি বা সাহিত্যতো দূরের কথা ।
সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘ গঠনের ৬০তম বার্ষিকী সম্পর্কিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “বাস্তব ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘ সকল
সোভিয়েত জাতি ও জাতি সত্তার রাষ্ট্র ব্যবস্থার এক গতিশীল ও কার্যকর রূপ, যা গঠিত হয়েছে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রত্বের ক্রমবিকাশের মাধ্যমে সাম্যবাদী স্বশাসন প্রতিষ্ঠার সমগ্র ঐতিহাসিক কালপর্বের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে।”
লেনিনের ঐতিহাসিক ‘শান্তির ডিক্রির পথ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবিচলভাবে অনুসরণ করে যাচ্ছে লেনিনবাদী শান্তির নীতি। সম্প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রিম সোভিয়েত কর্তৃক গৃহীত “বিশ্বের সকল পার্লামেন্ট ও জাতির প্রতি” আবেদনটি শান্তির নীতির প্রতি তার দৃঢ় আনুগত্যের আরেকটি প্রমাণ। এই আবেদনে বলা হয়েছে যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন কাউকে হুমকি দেয় না, কোনো দেশের সাথে সংঘাত চায় না কিংবা সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের অভিলাষ পোষণ করে না।
এক উন্নত সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ার প্রক্রিয়ায় এবং যৌথ শ্রম ও সাম্রাজ্যবাদী হানাদারদের বিরুদ্ধে তাদের সাধারণ মাতৃভূমি সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘ রক্ষার জন্য যৌথ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম দিয়েছে এক আন্তর্জাতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী সোভিয়েত জাতিসমূহের অভিন্ন ঐতিহাসিক নিয়তি এবং ৬০ বছরের অর্জিত তাদের সমগ্র অভিজ্ঞতা পরিণত হয়েছে এক অপরাজেয় ঐক্য বিধায়ক শক্তিতে।
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গঠনের গোড়ার দিকে লেনিন এই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, “জনগণ কেবল তাদের উদ্যম ও সম্পদকে একত্রিত করার মাধ্যমেই তাদের যুগ প্রাচীন পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠতে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং বাইরে থেকে আসা হুমকির বিরুদ্ধে এর সাফল্যকে সমুন্নত রাখতে সমর্থ হবে।”
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সংঘের ৬০ বছরের ইতিহাস লেনিনের আশাবাদ যথার্থ বলেই প্রমাণ করছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বলশেভিকদের সরকার গঠনের পরপরই রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ এ সরকারকে চাপের মুখে ঠেলে দেয়। গৃহযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর হস্তক্ষেপ রাশিয়ার বলশেভিক সরকার ও ক্ষমতাসীন বলশেভিক পার্টিকে নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। বলশেভিক সরকার লাল ফৌজ ও যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ সরকার গঠন করে মিত্রবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শেষ পর্যন্ত বলশেভিকরা জয়ী হয় এবং সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার নতুন করে পথ চলা শুরু হয়। ক্ষমতাসীন বলশেভিক অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার ভিত্তি মজবুত করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]