নয়া অর্থনৈতিক নীতি কী? এ নীতির সফলতা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর ।

নয়া অর্থনৈতিক নীতির সফলতা ও গুরুত্ব (Success and
Importance)
এই নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নের আর্থসামাজিক অবস্থাকে বহুলাংশে পরিবর্তিত করে । অর্থনীতিতে এর ফলাফল হলো নিম্নরূপ-
১. কৃষি
১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর লেনিনকে দেশের প্রতিবিপ্লবী শক্তি (কেরেনস্কি ও তার সমর্থক জোতদার শ্রেণি) এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। ১৯১৯ সালের শেষ দিকে এই বিপ্লব-বিরোধী শক্তি পরাজিত হয়। এ সময় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কতকগুলো কঠোর নীতি অনুসরণ করা হয়। এই নীতিমালাগুলোকে বলা হয় যুদ্ধকালীন সমাজতন্ত্র। এসময় রাষ্ট্র খাদ্য সংগ্রহ করে নিত এবং সমানভাবে বণ্টন করা হতো। এতে দেখা গেল কৃষকরা নিজেদের অনেকটা বঞ্চিত মনে করতো। ফলে খাদ্য উৎপাদনে তারা উৎসাহ হারিয়ে
ফেলে। নয়া পদ্ধতিতে বলা হলো যে, এখন থেকে রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য নিবে এবং একটা অংশ থাকবে কৃষকের নিজের। এতে ব্যক্তিগত স্বার্থের মানবিক প্রবৃত্তির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল মাত্র। ফলে উৎপাদনে কৃষকরা অধিকতর উৎসাহ দেখায়। দেখা যায় যে, মাত্র সাত বৎসরের মধ্যে (১৯২১-২৮) সোভিয়েত ইউনিয়ন খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কৃষকরা তাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য বিক্রি করা আরম্ভ করে, অনেক দরিদ্র কৃষক সচ্ছল হয়। বিত্তবান কৃষক পরিণত হয় জোতদার বা 'কুলাক' - এ । খাদ্যশস্য বিপণনের জন্য সারা দেশে বড় বড় বাজারের সৃষ্টি হয় এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সৃষ্টি হলো একদল দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী অনেকে এদেরকে বলেছেন নিপ মেন (NEP MEN)। এভাবে কৃষিতে পুঁজিবাদী বৈশিষ্ট্যের লক্ষণ দেখা গেল।
২. শিল্পখাতে পরিবর্তন
নয়া নীতি অনুযায়ী শিল্পখাতের তিনটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা দেয়।
এগুলো হলো :
ক. বৃহৎ শিল্প;
খ. বিদেশি পুঁজির আমন্ত্রণ;
গ. ক্ষুদ্র শিল্প ।
ক. বৃহৎ শিল্প
বড় ও ভারী শিল্প পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রেখে দেওয়া হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ না রেখে একটি শিল্প ইউনিট পরিচালনা করার জন্য একটি টাস্ট্রি বোর্ড গঠন করা হয়। তবে প্রতিটি শিল্পকারখানার জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ এবং পণ্য বিতরণ বা বিপণনের বিষয়টি রাষ্ট্রের হাতে রেখে দেওয়া হয়। ভারী শিল্প ব্যবস্থাপনার বিষয়ে লেনিন জার্মান পদ্ধতির ভক্ত ছিলেন। তাই তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে এ সময় জার্মান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করেন। জার্মান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সাফল্যজনকভাবে প্রয়োগের জন্য অনেক জার্মান বিশেষজ্ঞ সোভিয়েত ইউনিয়নে আসেন এবং তাদের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন উপকৃত হয় ।
খ. বিদেশি পুঁজির আমন্ত্রণ
নয়া অর্থনৈতিক নীতি অনুযায়ী লেনিন সোভিয়েত ইউনিয়নে সাহায্য এবং ঋণ আকারে বিদেশি পুঁজির আমন্ত্রণ জানান। একটি সমাজতান্ত্রিক দেশে বৈদেশিক পুঁজির এ ধরনের খোলামেলা আমন্ত্রণ অভাবনীয় ঘটনা ঘটে। তবে তিনি বুঝেছিলেন যে, পুঁজির পরিপূর্ণ বিকাশ ছাড়া সমাজতন্ত্র উত্তরণ অসম্ভব। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে পুঁজির আগমনে ম্রিয়মাণ শিল্পখাতে প্রাণসঞ্চার হয়। বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের জন্য সর্বমোট ২৪০০ দরখাস্ত পড়েছিল।
গ. ক্ষুদ্র শিল্প
ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রেও গোঁড়া সমাজতান্ত্রিক নীতিমালার সম্পূর্ণ বিপরীত নীতি রাষ্ট্রীয় খাতের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাকেও উৎসাহ দেওয়া হলো। অনুসরণ করা হলো । ছোট ছোট শিল্পকারখানাকে ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দেওয়া হলো।
৩. ব্যবসা-বাণিজ্য
রপ্তানি বাণিজ্য রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। তবে এক্ষেত্রে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতো না। আমদানি-রপ্তানি পরিচালনার জন্য কিছু রাষ্ট্রীয় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান যেমন- Trade Syndicate গঠন করা হয়। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ব্যবসা- বাণিজ্য ও লেনদেন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় । এ প্রক্রিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে চলে আসল মধ্যস্বত্বভোগীরা যাদেরকে ঐতিহাসিকরা বলেন 'নিপ মেন' (NEP MEN)। এরা ক্রমাগত এতই শক্তিশালী হয়ে উঠল যে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করতে লাগল । তাই এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯২৭ সালে কিছু আদেশ জারি করা হলো।
৪. ব্যাংক বিমা
নয়া অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তাই ব্যাংক ব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ১৯২১ সালে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফলে দেখা যায় যে, ১৯২৭ সালের মধ্যে আর্থিক লেনদেন ব্যাপকভাবে ও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় ।
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিমার কোনো স্থান নেই। কারণ, রাষ্ট্রই সকল মৌলিক সমস্যার সমাধান করে। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষ নিরাপত্তার জন্য এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিমা পলিসির আশ্রয় নেয়। প্রথমদিকে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিমা ছিল না। কিন্তু ১৯২১ সালে ব্যক্তি সম্পত্তি যেমন ঘবাড়ি ইত্যাদির জন্য বিমা ব্যবস্থা চালু করা হয়। তবে সমাজতন্ত্র থেকে যতই বিচ্যুতি দেখা যাক না কেন সোভিয়েত অর্থনীতিতে জোয়ার এসেছিল এসময়।
৫. মুদ্রা ব্যবস্থা
এই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় মুদ্রা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনা হয়। কাগজের মুদ্রার পরিবর্তে ধাতব মুদ্রা প্রচলন করা হয় যার নাম হলো চেরভোনেট্টজ (Chervonetez)।
৬. পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন
১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্নতা দেশটিকে জার্মান আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারেনি। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন নয়া অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে তখন
বহির্বিশ্ব একে স্বাগত জানায়। লেনিনের এই নীতি যে সঠিক ছিল তা খুব শীঘ্রই প্রমাণিত হয়-১৯২১ সালে স্বাক্ষরিত সোভিয়েত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি থেকে। কারণ ব্রিটেনের মতো দক্ষিণপন্থি একটি দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ সোভিয়েত কাঠ আমদানির আগ্রহ দেখান। তিনি ব্রিটেনের সংসদে (House of Commons) দাঁড়িয়ে বললেন যে, আমরা দৈত্যের
সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারি (We deal with cannibals too).
১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির সাথে 'র‍্যাপালো চুক্তি' (Rapallo Treaty)-তে উপনীত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হলেও ইউরোপে একটি শক্তি ছিল। তাই এই চুক্তির গুরুত্ব অনেক।
বিদেশি পুঁজি আহ্বান করায় পুঁজিবাদী বিশ্ব বিষয়টিকে একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে মনে করল। দেখা গেল ১৯২৪ সালের ২৪০০ বিদেশি আবেদন জমা পড়ল পুঁজি বিনিয়োগের জন্য। কিন্তু লেনিন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মাত্র ১৭৮টিকে পুঁজি বিনিয়োগের অনুমতি দেন।
১৯২৪ সালে এক সঙ্গে অনেকগুলো দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। প্রথমে ইংল্যান্ডের স্বীকৃতি আসে। এরপর ইতালি, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, সুইডেন, চীন, ডেনমার্ক, মেক্সিকো, ফ্রান্স স্বীকৃতি দেয়। ১৯২৫ সালে জাপান স্বীকৃতি দেয়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯২৫ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হয়।
৭.৬ নয়া অর্থনৈতিক নীতির কৌশলগত পশ্চাদপসরণ (Strategic
Retreat)
নয়া অর্থনৈতিক নীতি (NEP) প্রয়োজনের তাগিদেই গৃহীত হয়েছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আধা-সামন্তবাদী ও আধা-পুঁজিবাদী অর্থনীতি থেকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ১৯১৭ সালের পর লেনিন বিভিন্ন সংকটে পড়েন। কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস, শিল্প ধস সব মিলিয়ে দেশটিতে দুর্ভিক্ষাবস্থা তৈরি হয়। এই অবস্থায় তিনি উগ্রপন্থি মার্কসবাদীদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে এই নয়া অর্থনৈতিক নীতি প্রয়োগ করেন। ঐতিহাসিকরা এ নীতিকে মিশ্র অর্থনীতি বলে অভিহিত করেছেন। লেনিনের এই নীতি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে প্রাণচঞ্চল ও চাঙ্গা করে তোলে। অন্যদিকে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রেও এটি সফল হয়েছিল । এই নীতির কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন বহির্বিশ্বে পেয়েছিল স্বীকৃতি ।
তবে লেনিনের এই নীতি অনুসরণ করার অর্থ এই নয় যে, তিনি সমাজতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন। বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা লেনিনের রাষ্ট্রনায়কোচিত চিন্তাভাবনার ফসল হলো এই নীতি। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের পর লেনিন সমগ্র অর্থনীতিকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বে নিয়ে আসেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে গৃহযুদ্ধ,
গোকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক বিকাশের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। তখন তীক্ষ্ণ বাস্তববোধ থেকে লেনিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (১৯২৪) মিশ্র অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করেন। জাতীয় অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রগুলি, যেমন- বৃহৎ শিল্প উদ্যোগ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বৈদেশিক বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল ।
নিপ নীতি ভেঙেপড়া অর্থনীতিকেই শুধু চাঙ্গা করেনি, শ্রমিক ও কৃষকের অর্থনৈতিক প্রয়োজনের মধ্যে সমন্বয় এনেছে। গ্রামীণ ও শহরের অর্থনীতির সংযোগকে দৃঢ় করেছে ও সর্বোপরি সোভিয়েত অর্থনীতির সাম্যবাদ উত্তরণের পথ প্রশস্ত করেছে। কাজেই চূড়ান্ত বিবেচনায় নয়া অর্থনৈতিক নীতি (NEP) সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের জন্য একটি যতি চিহ্ন বটে।
এটি যে কৌশলমূলক পশ্চাদপসরণ ছিল তার সমর্থন পাওয়া যায় স্বয়ং লেনিনের একটি বক্তব্যে। লেনিন বলেছিলেন যে, “সমাজতান্ত্রিক স্তরে ক্ষুদ্র উৎপাদনের মধ্যে ধনতন্ত্রের বীজ নিহিত থাকে।” এই বিষয়টি মনে রেখে লেনিন বলেছিলেন, “সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু করছি না। দেশ বাঁচানোর জন্য সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা এক ধাপ পিছিয়ে গেলাম যাতে দু'ধাপ অগ্রসর হতে পারি।” দেখা যায় যে, যখন কৃষি শিল্প একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যায় তখন অর্থাৎ ১৯২৮ সালে পরিপূর্ণভাবে সমাজতন্ত্রের নীতি আদর্শে প্রত্যাবর্তন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। নয়া অর্থনৈতিক নীতির অধীনে গৃহীত প্রায় সকল ব্যবস্থা সাময়িক ও স্বল্পমেয়াদি ছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুঁজিবাদের সমর্থক যেসব সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয় তা ছিল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে সুদৃঢ়করণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি সাময়িক পদক্ষেপ। যদিও এ নীতি ছিল খাঁটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কিছুটা পশ্চাদপসরণ, কিন্তু বিপ্লব পরবর্তীকালে গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি সাধন, বৃহদায়তন শিল্পের অগ্রগতি প্রভৃতির জন্য নয়া অর্থনৈতিক নীতির প্রবর্তন ছাড়া বিকল্প ছিল না। সোভিয়েত অর্থনীতির উত্তরণ পর্যায়ে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দূর করে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং তার সুষ্ঠু বণ্টনের লক্ষ্যে এ নীতি অত্যাবশ্যকীয় ছিল। স্বল্পমেয়াদি পুঁজিবাদী পিছুটান প্রসঙ্গে লেনিন বলেন, “অবাধ বাণিজ্যের মধ্যে পুঁজিতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের বিপদ কিছুটা থাকে। ব্যক্তিগত ব্যবসায়ী আর খুদে ব্যক্তিগত কারবার থাকবে, দেখা দেবে কিছু বুর্জোয়া । কিন্তু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে সেটা বিপজ্জনক নয়, কেননা ব্যাংক, বহির্বাণিজ্যে একচেটে; রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পায়তন, রেলপথ, জলপরিবহণ এবং ভূমির মতো নিয়ন্ত্রক
নয়া অর্থনৈতিক নীতির ফলে পুঁজিপতি ও ভূস্বামীদের যেসব সুযোগ সুবিধা
দেওয়া হয় তার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিকভাবে এ সকল প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে সাময়িককালের জন্য বিপ্লবের বিরুদ্ধাচরণ থেকে দূরে রাখা এবং পরবর্তী সময়ে শ্রমিক ও কৃষকদের একতাবদ্ধ করে তাদেরকে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করা হয়। রাজনৈতিক দিকে থেকেও এই নীতি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সুদৃঢ়করণের পথ প্রশস্ত করেছিল। এ উদ্দেশ্য পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ সাফল্য লাভ করেছিল। সামাজিক ক্ষেত্রেও নয়া অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। ভূমির উপর ক্ষুদ্র কৃষকদের মালিকানা দেওয়ায় কৃষকরা ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় এবং তারা বিত্তশালী কৃষকে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে স্থাপিত হয় একতা এবং সামাজিক ক্ষেত্রে ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই নীতির প্রভাব বিদেশ নীতিতেও প্রতিফলিত হয়। নয়া অর্থনৈতিক নীতির জন্য রাশিয়ার কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতাবাদের অবসান ঘটে। ১৯২৪ সাল নাগাদ ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের অনেক পুঁজিবাদী দেশ রাশিয়াকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দান করে। ব্রিটেনসহ অনেক দেশ বাশিয়ায় পুঁজি বিনিয়োগ করে। এতে রাশিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্যের জন্য নয়া অর্থনৈতিক নীতি ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

নয়া অর্থনৈতিক নীতিতে রাশিয়ার বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন (Change)
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নয়া অর্থনৈতিক নীতির প্রথম প্রভাব হলো রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতার অবসান। বলশেভিক বিপ্লবের পরে পশ্চিমা সবদেশ রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং কোনো দেশই রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু নয়া অর্থনৈতিক নীতি অন্যান্য দেশ কর্তৃক রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেওয়ার পটভূমি তৈরি করে। লেনিন বিশ্ব বিপ্লবের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করে পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে কিছুটা আপস করে তাদের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, ধনতন্ত্রী দেশগুলোর সাথে আপস করে রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা একান্তই প্রয়োজন । তিনি বুঝতে পারেন যে, সাম্যবাদী প্রচার বন্ধ না করলে বৈদেশিক কারিগরি ও শিল্প প্রশিক্ষণ লাভ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে লেনিন রাশিয়ার বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করেন।
লেনিন ব্রিটেনের সাথে আলাপ আলোচনা এবং ১৯২১ সালে ইঙ্গ-রুশ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেন। চুক্তির শর্তানুসারে রাশিয়া এশিয়ার ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রচার কাজ বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতি দেয়। জার্মানিকে রুশ বিরোধী দলে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ১৯২২ সালে জার্মানির সাথে র‍্যাপালো চুক্তি সম্পাদন করেন। জার্মান
২৬৮ রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস ১৯৪৫ খ্রি. পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াল্টার রথেনো (Walter Rathenau) এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিহ্নবিন (Chicherin) এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্ত হলো-
১. মিত্রতার ভিত্তিতে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
২.রাশিয়া জার্মানি উভয়পক্ষই পারস্পরিক দাবিদাওয়া পরিত্যাগ করে।
৩. উভয় দেশ নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়।
৪ চুক্তির গোপন অংশে বলা হয় রাশিয়া জার্মান সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকদের
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
৫. জার্মানি সোভিয়েত রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেবে এবং বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান করবে ।
এই চুক্তির ফলে রণক্লান্ত ও মনোবলহীন রুশ সেনাদল ঘরে ফিরে বিপ্লবের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়। র‍্যাপালো চুক্তি ছিল পশ্চিমা শক্তিবর্গের কাছে বিনামেঘে বজ্রপাত। ইউরোপে রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধি পায়। এই চুক্তি লেনিনের অসাধারণ কূটনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচায়ক এবং তিনি জার্মানিকে পাশ্চাত্য বলয় থেকে বের করে আনতে সক্ষম হন। পশ্চিমারা রুশ কূটনীতিকে সমীহ করে চলতে বাধ্য হয়।
রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম পর্যায়ের অনাগ্রহ পরিবর্তিত হয়। পশ্চিমা দেশসমূহ রাশিয়ার বৃহৎ লাভজনক বাজার বুঝতে পারে। এটা পশ্চিমা দেশসমূহ কর্তৃক রাশিয়াকে স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত করে। ১৯২১-২৪ এর মধ্যে রাশিয়া মূলধন বিনিয়োগের ১৫০০টি আবেদন পায়। এর মধ্যে মাত্র ১৭৮টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে মূলধন বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। বিনিয়োগ উৎসাহের দুটো কারণ ছিল। প্রথমত, দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত করা। দ্বিতীয়ত, লেনিন বিশ্বাস করতেন যে, যদি বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায় তাহলে এসব রাষ্ট্র রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেবে। লেনিনের চিন্তা সঠিক ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়া ১১টি দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে। এসব চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে সোভিয়েত রাশিয়া ইউরোপীয় শক্তিবর্গের বাস্তব স্বীকৃতি লাভ করে। যদিও সরকারি পর্যায়ে তখনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি। এসব চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে রাশিয়ার নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে। ১৯২৪ সালে রুশ সরকার ঘোষণা করে যে, প্রথম যে রাষ্ট্র রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেবে তার সাথে রাশিয়া বাণিজ্য চুক্তি করবে। ১৯২৪ সালে ব্রিটেন প্রথম রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯২৪ সালের মধ্যে ইউরোপের ৯টি দেশ রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। বিশের দশকে রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করণে ব্যস্ত ছিল এবং এ ব্যাপারে সাফল্যও লাভ করে। নয়া অর্থনৈতিক নীতি অবশ্যই সাময়িক। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে যথেষ্ট উন্নতি করার পর এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসার পর ১৯২৯ সালে জানুয়ারি মাসে বলশেভিক দলের কংগ্রেসে এই ব্যবস্থার অবসান ঘোষিত হয়।
১০. আর্থিক ও রাজস্ব খাতে লেনিন কিছু সংস্কার সাধন করেন। তিনি
বাজেট প্রবর্তনের জন্য প্রথমত বিভিন্ন সেক্টরের খরচ কমানো এবং সুসম দ্বিতীয়ত আয় বাড়ানোর লক্ষ্য স্থির করেন। সরকার যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি প্রদান করতো সেগুলো ব্যক্তিগত খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উৎস হতে অর্থসংগ্রহ শুরু হয়। যেমন- রেল ভ্রমণ,
পানি, বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রভৃতির উপর খুব কম কর ধার্য করা হয়। ১১. রাশিয়ায় পুনরায় রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপন করা হয়। এই ব্যাংক ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কাজ ছিল মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা এবং বড় বড় শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় ঋণদান করা। এছাড়াও রাশিয়ায় সমবায় ব্যাংক এবং পৌর ব্যাংক স্থাপিত হয়। এরা ক্ষুদ্র কৃষক ও শিল্পপতিদের ঋণদান করতো। ব্যাংক ঋণের উপর সুদও আদায় করা হাতো। ১৯২১ সালে রাশিয়ায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির .উপর বিমা চালু হয়। এরপর ১৯২৪ সালে রাশিয়ায় জীবনবিমা চালু করা হয়। এগুলো সব পুরোপুরি সমাজতন্ত্র বিরোধী ছিল।
১২. উৎপাদন ও বণ্টনের বিভিন্ন স্তরে সমবায় সমিতিগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ
করার অনুমতি দেওয়া হয়।
১৩. শ্রমিকদের রাষ্ট্রের কাজে মনোনিবেশ করার জন্য আর সৈনিক হিসেবে নয় বরং তাদের শ্রমিক সংঘের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে দরকষাকষি করে চাকরি গ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রমিকদের কতিপয় নিয়ম মেনে চলতে হতো। সরকারি শ্রমিক সংঘকে (ট্রেড ইউনিয়ন) জনসাধারণের গণতান্ত্রিক মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার জন্য নিয়োজিত করা হয় ।
১৪. বৈদেশিক বাণিজ্য রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকারে রেখে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য
বহুলাংশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় ।
১৫. শ্রমিক ও চাকরিজীবীদের গণতান্ত্রিক দেশের মতো পারিশ্রমিক দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়। শ্রমিক ও চাকরিজীবীদের বেতনের ক্রমোন্নতির হার নির্ণয় করে তাদের বিভিন্ন হারে বেতন প্রদানের নীতি গ্রহণ করা হয়। ১৬. ১৯২৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত রাশিয়ায় কোনো ধাতব মুদ্রা ছিল না। কাগজের মুদ্রা চালু ছিল। ১৯২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাশিয়ায় নয়া ধাতব মুদ্রা চালু করে। কাগজের মুদ্রা জাল হতো বলে ধাতব মুদ্রা চালু করা হয় এবং এ মুদ্রার নাম ছিল ‘চেরভোনেট্জ’ (Chervonetz)। এটি শক্তিশালী ও স্থিতিস্থাপক ব্যাংক মুদ্রা ছিল। এর মূল্যামান ৫ মার্কিন ডলার এবং স্থানীয় ১০ রুবলের সমান ছিল । মুদ্রাস্ফীতি বন্ধ হওয়ায় অর্থব্যবস্থা মজবুত ও সুস্থির হয়ে ওঠে।
এসময় রাশিয়ায় সরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানার আয়ব্যয়ের হিসাবনিকাশ সরকার কর্তৃক গ্রহণের নীতি চালু হয়। এতে দেশের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
নয়া অর্থনৈতিক নীতির গুরুত্বকে বুঝতে গেলে বলতে হবে যুদ্ধকালীন সাম্যবাদের দ্বারা বলশেভিকরা শহর এবং গ্রামের পুঁজিপতিদের দুর্গগুলো সরাসরি আক্রমণ করে দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা করতে গিয়ে বলশেভিকরা বাড়াবাড়ি করে ফেলে এবং সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কাও দেখা দেয়। তবে লেনিন কিছুটা সময়ের জন্য নিবৃত্ত হলেন বলা যায় ঘাঁটির কাছাকাছি এসে কিছুটা পিছু হটলেন । দুর্গগুলো সরাসরি আক্রমণের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অবরোধ নীতি গ্রহণ করলেন যাতে পুঁজি সঞ্চয় করে পুনরায় আক্রমণ করতে পারেন।
বহু গোড়া সমাজতান্ত্রিক অভিযোগ করেন যে, নয়া অর্থনৈতিক নীতি সর্বহারাদের উন্নয়ন ও সাফল্যের পথ রুদ্ধ করে। কিন্তু লেনিন মূলত কৃষকদের সমর্থন লাভের জন্যই নয়া অর্থনৈতিক নীতি প্রবর্তন করেন যারা যুদ্ধকালীন সাম্যবাদের সময় সরকার বিরোধী হয়ে উঠেছিল, এটা অস্বীকার করা যায় না যে, এই নীতির ফলে কৃষকদের ভাগ্যের বেশ উন্নতি ঘটেছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯২৭ সালে নয়া অর্থনৈতিক নীতি বাতিল করা হয়। কেননা শহরের জন্য পর্যাপ্ত শস্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ১৯২৫ সালের শুরুতে নয়া অর্থনৈতিক নীতিকে পরিহাস করে 'New exploitation of the proletariat' বা ‘প্রলেতারিয়েতদের নব শোষণ' বলা হয়। লেনিন সাম্যবাদ থেকে ধনতন্ত্রে ফিরে যাওয়ায় সমালোচিত হন। কেউ কেউ একে সাম্যবাদের ব্যর্থতা বলে চিহ্নিত করেছেন। অনেক বলশেভিক লেনিনের ধনতন্ত্রে ফিরে যাওয়ায় ব্যথিত হন। লেনিন বলেছিলেন যে, সাম্যবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ কায়েম করতে হলে যে সময় এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তাকে সুনিশ্চিত করার জন্যই বিশুদ্ধ সাম্যবাদী অর্থনীতি থেকে সরে আসা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। লেনিন বলেন পেছনের দিকে এক পা গেলে পরে সাম্যবাদের দিকে বলশেভিকরা আরো দু'পা এগিয়ে যেতে পারে। কিছু রাজনৈতিক নেতা সরকারের কৌশলগত পশ্চাদপসরণের বিরোধিতা করে। তারা বিশ্বাস করতেন নয়া অর্থনৈতিক নীতি খারাপ ফল বয়ে আনবে, কেননা এর জন্য নিপ ম্যানরা আরো ধনী এবং ক্ষমতাশালী হচ্ছে যা সমাজতন্ত্রের আদর্শের পরিপন্থি। ট্রটস্কি ক্রমান্বয়ে একজন বামপন্থি বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। নয়া অর্থনৈতিক নীতি প্রবর্তনের ফলে বুর্জোয়া ও কুলাকদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রটস্কি তা সহজে মেনে নেননি। বিরোধীদের মনোভাব বাস্তবসম্মত ছিল। বাহ্যিকভাবে মনে হয়েছিল সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেছে। রাশিয়ার নেতৃবৃন্দ এ নীতিকেই অনুসরণ করেন। কেননা সমাজতন্ত্রের এই পশ্চাদপসরণ ত্রিশের দশকে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক আক্রমণের সুযোগ করে দেয়।
নয়া অর্থনৈতিক নীতি রাশিয়ার আর্থিক পুনরুজ্জীবন এবং রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের বুনিয়াদকে শক্তিশালী করেছিল। রাশিয়ায় শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে সদ্ভাব ফিরে এসেছিল, বহির্বিশ্বের সাথে রাশিয়ার নয়া করে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। Ellsworth
previous Raymond, "Created hastily as stopgate with our planning, the NEP intended to save socialism by encouraging petty capitalism."

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]