স্টালিনের শাসনামলে প্রণীত ১৯৩৬ সালের সংবিধানের বর্ণনা দাও। সমাজত প্রতিষ্ঠাই কি এ সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ছিল?

স্টালিনের শাসনামলে প্রণীত ১৯৩৬ সালের সংবিধানের
মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে ১৯১৮ সালে সোভিয়েত সংবিধান রচিত হলে এবং তা ১৯৩৬ সালে সংশোধিত হলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কাঠামো সুনির্দিষ্ট প্রতিটি শহরে ও জেলায় সোভিয়েত বা শ্রমিকসংঘ গঠিত হয়। আপন সোভিয়েতগুলোর নির্বাচিত সদস্যদেরকে প্রাদেশিক সোভিয়েতে প্রতিনিধিত্ব অধিকার দেওয়া হয়। প্রাদেশিক সোভিয়েতগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় রাশিয়া কংগ্রেস। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা এই কংগ্রেসে ন্যস্ত হয়। কেন্দ্রীয় কার্য কমিটি (Central Executive Committee) নির্বাচন করার অধিকার কংগ্রেসকে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটিকে রাষ্ট্রের মন্ত্রিসভা (People Commissars) গঠনের অধিকার দেওয়া হয়। সোভিয়েত-নির্বাচনে আঠারো ব তদূর্ধ্ব সকল পুরুষ বা নারীকে ভোটাধিকার দেওয়া হয় । এই ভোটাধিকারের একা শর্ত ছিল নিজ শ্রম দ্বারা উপার্জন করা। বিপ্লবী সৈনিক ও নাগরিকগণকেও ভোটাধিকা দেওয়া হয়। তবে ভোট প্রথা এমনভাবে স্থির করা হয় যাতে গ্রামে কৃষকদের তুলন শহরের শ্রমিকের প্রতিপত্তি বেশি বজায় থাকে। নয়া সংবিধানে রাশিয়ার নামকরণ হ ইউনিয়ন অফ সোশ্যালিস্ট সোভিয়েত রিপাবলিক (USSR)। সাম্রাজ্যের পরিবা সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। সমগ্র রাশিয়ায় কমিউনিস্ট
প্রলেতারিয়েত বা জনসাধারণের একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রকৃতপক্ষে রাশি বলশেভিকদের (Bolshevists) একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়। বলশেভিক দলে প্রধান ছিলেন লেনিন।
সোভিয়েত শাসনব্যবস্থার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়- প্রথমত, শাসন ক্ষমতা একমাত্র প্রলেতারিয়েতদের হস্তেই নিবন্ধ রাখা হয়। সোভিয়ে হয়ে শাসনব্যবস্থা হলো একদলীয় একনায়কতন্ত্র। অর্থাৎ একমাত্র শ্রমিক ও কৃষকদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিবদ্ধ রাখা হয়। অবশ্য সোভিয়েত সংবিধানের প্রধান লক্ষ্য শ্রেণিগত বৈষম্যের অবসান এবং শ্রেণিগত সংঘর্ষের অবসান করা। দ্বিতীয় বৈশি হলো পরোক্ষ প্রতিনিধিত্বের ব্যাপকতা। সমগ্র রুশ জনগণের শতকরা ৮০ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তৃতীয় সোভিয়েত শাসনব্যবস্থার সবক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য এর অন্যতম বৈশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয়। বিচারব্যবস্থাও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীনে রাখা হয় এবং বিপ্লব প্রসূত সমাজব্যবস্থা রক্ষা করাই বিচার বিভাগে
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্থানীয় বিচার, জনস্বাস্থ্য ও জনশিক্ষা সম্পর্কে আইন রচনার অধিকার দেওয়া হয় বটে কিন্তু তা রদ করার বা বাতিল করার অধিকার সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তে নিবন্ধ থাকে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯৩৬ সালের সংবিধানকে বাস্তবে 'গণতান্ত্রিক' (Democratic) বলা যায় না যে অর্থে ফ্রান্স, ব্রিটেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক এই বলে স্বীকার করা হয়। রুশ সংবিধান অনুসারে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা এর অঙ্গরাজ্যগুলোকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। কারণ কতকগুলো শ্রেণির নাগরিককে ভোটাধিকার হতে বঞ্চিত রাখা হয় এবং পরোক্ষ ও জটিল নির্বাচন পদ্ধতির ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকশ্রেণির পরিবর্তে সংখ্যালঘু শ্রমিকশ্রেণিই অধিক লাভবান হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে একমাত্র কমিউনিস্ট দল ভিন্ন অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব স্বীকৃত। নয় এবং মার্কস ও লেনিনের আদর্শের প্রতি অখও আনুগত্য প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত। কাউকেও কমিউনিস্ট দলভুক্ত করা হতো না। ১৯৩৬ সালের সংবিধান অনুসারে। সোভিয়েত সরকারের উপর কমিউনিস্ট দলের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্বীকৃত।
‘বলশেভিজম' বা বলশেভিক মতবাদ হলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলন। এর রাজনৈতিক আদর্শ হলো প্রলেতারিয়েত বা শ্রমিকদের একনায়কতন্ত্র । বলশেভিক মতবাদ হলো একমাত্র শ্রমিক ছাড়া অন্যান্য সকল সামাজিক শ্রেণির অস্তিত্ব অস্বীকার করা এবং একমাত্র শ্রমিক ছাড়া অন্যান্য সকল শ্রেণিকে উৎখাত করা। বলশেভিক মতবাদের অর্থনৈতিক আদর্শ মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত ধনতন্ত্রবাদের অবসান ঘটিয়ে সমাজতন্ত্রবাদের প্রতিষ্ঠা করাই বলশেভিকদের মূল লক্ষ্য। সকল প্রকারের ব্যক্তিগত মূলধনের অবসান ঘটিয়ে জমি ও উৎপাদনের সকল উপাদান রাষ্ট্রীয়করণ করাই বলশেভিকদের মূল লক্ষ্য। সকল প্রকারের ব্যক্তিগত মূলধনের অবসান ঘটিয়ে জমি ও উৎপাদনের সকল উপাদান রাষ্ট্রীয়করণ করাই হলো ফলশেভিজম -এর আদর্শ ।
প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সোভিয়েত নেতৃবর্গ ১৯৩৬ সালে ঘোষণা করেন যে, সাম্যবাদের অগ্রগতির পথে রাশিয়া এর বিশিষ্ট প্রাথমিক লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। এ যাবৎ কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধবাদী । দলগুলোর বিরুদ্ধে যে সকল বাধানিষেধ প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেগুলো কিঞ্চিৎ তীয় পরিমাণে শিথিল করার সিদ্ধান্ত সোভিয়েত নেতৃবর্গ গ্রহণ করেন। ১৯৩৫ সালে রাষ্ট্রীয় শিষ্ট শাসন ব্যাপারে জনসাধারণকে কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ
সোভিয়েত কংগ্রেস একটি নয়া সংবিধান রচনা করে। এটি ‘স্টালিন শাসনতন্ত্র' (Stalin Constitution) নামেও পরিচিত। এই নয়া শাসনতন্ত্র ১৯৩৬ সাল হতে চালু করা হলো। এই শাসনতন্ত্র অনুসারে সর্বোচ্চ সোভিয়েত কংগ্রেস ভেঙে দেওয়া হলো এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সোভিয়েত রাশিয়ার সর্বোচ্চ সোভিয়েত (Supreme *
Soviet of the USSR)-এর হারে অর্পণ করা হলো। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের (the Republics) গঠনতন্ত্রেও কিছু পরিবর্তন সাধন করা হলো
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করা হলো
নয়া শাসনতন্ত্র অনুসারে আবারো বৎসরের
গোষ্ঠী ও শিক্ষা নির্বিচারে ভোট প্রক
ঊর্ধ্বের সকল নাগরিককে জাতি, ধর্ম,
প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার দেওয়া হলো
কমিউনিস্ট পার্টি, শ্রমিক-সংঘ, যুব প্রতিষ্ঠান
মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিক
পরিবর্তে 'সিক্রেট ব্যালট' (Secret balloo বা গোপন পত্রের মাধ্যমে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হলো। পরোক্ষ নির্বাচনের পরিবর্তে প্রায় সকল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের রীতি গৃহীত হলো। এ যাবৎ প্রলেতারিয়েতদের অনুকূলে কৃষকদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্যমূলক নীতি প্রচলিত ছিল, তা বাতিল করা হলো। কৃষকগণকে প্রলেতারিয়েতদের সমঅধিকার মঞ্জুর করা হলো।
রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতৃবর্গ ১৯৩৬ সালের শাসনতন্ত্রকে গণতন্ত্রসম্মত বলে প্রচার করলেও একে ব্রিটেন, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের শাসনতন্ত্রের ন্যায় যথার্থ গণতন্ত্রসম্মত বলা যায় না। প্রার্থী নির্বাচনের ব্যাপারে রুশ ভোটদাতাদের কোনো প্রকার এছাড়া কমিউনিস্ট পার্টির মনোনয়ন বা বাছাই করার সুযোগ ও অধিকার ছিল না বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আন্দোলন করা বা এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সমালোচনা করা দেশদ্রোহিতা বলে বিবেচিত হলো। প্রকৃতপক্ষে স্টালিনের বিরুদ্ধে এবং স্টালিনবাদের (Stalinism) বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করার অপরাধে বহু গণ্যমান্য রুশ নেতাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল ।
৯.৭ স্টালিনের শাসনামলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি
১. পশ্চিমি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি
সোভিয়েত ইউনিয়নকে পশ্চিমি দেশগুলো স্বীকৃতি দিলেও, সোভিয়েত থেকে পশ্চিমে সাম্যবাদী বিপ্লবের প্রবাহ আসতে পারে, এই সন্দেহ দূর ইতোমধ্যে বুলগেরিয়ায় কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। চীনে কুয়ো-মিন-তাং-এ কমিউনিস্ট অনুপ্রবেশ ঘটে। এই সকল কারণে ১৯২৭ সালে পশ্চিমি দেশের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কের দারুণ অবনতি ঘটে। ইংল্যান্ডে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের অভিযোগে ইংল্যান্ডের টোরি সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে। পরে অবশ্য জানা যায় যে, ইংল্যান্ডের কয়লা শিল্পের ধর্মঘটের সোভিয়েত রাশিয়ার কোনো হাত ছিল না। এজন্য ইংল্যান্ডের মনোভাব নরম হয়। পরে শ্রমিক দল ইংল্যান্ডে ক্ষমতা পেলে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়।
এই সকল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সোভিয়েত রাশিয়া তার বৈদেশিক নীতিকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিচালিত করে। স্টালিন-ট্রটস্কি মতভেদের পর, স্টালিন ক্ষমতা
বিলে, তাঁর 'জাতীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের' আদর্শ গৃহীত হয়। এর ফলে স্টালিন
অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকে। আইজ্যাক ডায়েটশার ( Issac Deutscher) নামক ঐতিহাসিক বলেছেন যে, স্টালিন এই সময় কমিনটার্নের সঙ্গে সংশ্রব ত্যাগ করেন। তিনি কমিনটার্নকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্য বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করবে। পশ্চিমি দেশগুলো স্ট্যালিনের এই নীতির গুরুত্ব উপলব্ধি না করে ১৯২৫ সালে লোকার্নো চুক্তি সম্পাদন করে। লোকানো কংগ্রেসে সোভিয়েত দেশকে আহ্বান করা হয়নি। এখানে সোভিয়েতের কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ ছিল না। অধিকন্তু জার্মানির পূর্ব সীমান্তে লোকার্নো চুক্তির দ্বারা পোল্যান্ড ও চেকোশ্লোভাকিয়ার সঙ্গে ভার্সাই সীমান্ত আপসে সংশোধন করার অধিকার জার্মানিকে দেওয়া হয়। এর ফলে রুশ সীমান্তের দিকে জার্মানিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এতে স্টালিন হতাশা বোধ করেন ।
৩. নাৎসি শক্তির উত্থান
সোভিয়েতের আশঙ্কা ইতোমধ্যে ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে নাৎসি দল এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করলে, বিশ্ব রাজনীতিতে দারুণ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নাৎসি আগ্রাসনের আশঙ্কা দেখা দেয়। হিটলার সোভিয়েত সরকারকে ধ্বংস করার ইচ্ছা গোপন করেননি। জার্মান আক্রমণের আশঙ্কায় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিচলিত হয়। এদিকে জাপান লিগের আদর্শ অগ্রাহ্য করে মাঞ্চুরিয়া অধিকার করলে রাশিয়া তার মোঙ্গোলীয় সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য চিন্তিত হয়।
৪. পশ্চিমি রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা নীতি
এই অবস্থায় মার্শাল স্টালিন স্থির করেন যে, জার্মানির বিরুদ্ধে পশ্চিমি দেশের সঙ্গে মিত্রজোট গঠন করা দরকার। ১৯১৭ সাল থেকে পশ্চিমি দেশগুলোর সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার যে শীতল সম্পর্ক ছিল, তাকে তিনি উষ্ণতা দিতে চান। পশ্চিমি দেশগুলোর আস্থা লাভের জন্য তিনি ভার্সাই সন্ধিকে দৃঢ় সমর্থন জানান। ভার্সাই সন্ধির স্থিতাবস্থা রক্ষিত হলে, সোভিয়েত নিরাপত্তা রক্ষা হবে বলে আশা করা হয়। পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন লাভের আশায় স্টালিন কমিনটার্ন আন্দোলন রদ করেন। সোভিয়েত রাশিয়া ১৯৩৪ সালে লিগের সদস্য পদ গ্রহণ করে। লিগের আদর্শকে সোভিয়েত সরকার দৃঢ় সমর্থন জানায়। (১) ফ্রাঙ্কো-সোভিয়েত চুক্তি (১৯৩৫ সাল) দ্বারা ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কোনো তৃতীয় শক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতি দেয়। বলা বাহুল্য যে, এই তৃতীয় শক্তি ছিল নাৎসি জার্মানি। (২) নব নিযুক্ত রুশ বিদেশ মন্ত্রী ম্যাকসিম লিটভিনভ ইঙ্গ-ফরাসি সরকারের সঙ্গে নানাভাবে
রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস ১৯৪৫ খ্রি. পর্যন্ত
সম্ভাব স্থাপনের চেষ্টা করেন। উপরন্তু ১৯৩৫ সালে সন্ধির দ্বারা ফ্রান্স ও সোভিয়েত রাশিয়া, চেকোস্লোভাকিয়াকে যৌথভাবে গ্যারান্টি দেয় যে, জার্মান আক্রমণের বিক্রান্ত চেকোস্লোভাকিয়াকে তারা সাহায্য করবে। রাশিয়া অবশ্য শর্ত দেয় যে,
চেকোস্লোভাকিয়াকে সাহায্য করে, তবে রাশিয়া নিশ্চয়ই সাহায্য দিবে। স্টালিন পরি নেতাদের প্রভাবিত করার জন্য প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষা এবং আদবকায়দার পারদর্শী ম্যাক্সিম লিটভিনভকে বিদেশমন্ত্রী নিয়োগ করেন
৫. ব্রিটিশ বিরোধিতা
লিটভিনভ কর্তৃক অনুসৃত পশ্চিমি সহযোগিতা লাভের নীতি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ব্রিটেনের টোরি শাসনকর্তারা ছিলেন ঘোর সোভিয়েত বিরোধ রাষ্ট্রদূত মেইস্কির মতে ব্রিটিশ মন্ত্রী চেম্বারলেইন এই নীতি স্থির করেন যে, রু সাম্যবাদকে ধ্বংস করার জন্য রুশ সীমান্তের দিকে জার্মান জঙ্গিবাদকে ঠেলে দেওয়া দরকার। এর ফলে সোভিয়েত সাম্যবাদ ও জার্মান নাৎসিবাদ পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে ধ্বংস হবে। পশ্চিমি দেশগুলো এজন্য সোভিয়েত সরকারের সহযোগিতা নীতি অগ্রাহ্য করে। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভার্সাই সন্ধি ভঙ্গ করে নাৎসি জার্মানির অস্ত্রসজ্জার বিরোধিতা করেনি। ১৯৩৪ সালে জার্মানি ভার্সাই সন্ধি ভেঙে রূঢ় ও সার অঞ্চল দখল করলে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি নিষ্ক্রিয় থাকে। ১৯৩৮ সালে ভার্সাই ও সেন্ট জার্মেইন সন্ধি ভেঙে হিটলার জার্মানির সঙ্গে অস্ট্রিয়ার সংযুক্তি করলেও ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি তোষণ নীতি নেয়। ১৯৩৬ সালে জার্মানি ও জাপানের মধ্যে অক্ষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে পশ্চিম সীমান্তে জার্মানি ও পূর্ব সীমান্তে জাপান কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয় অবশেষে জার্মানি চেকোস্লোভাকিয়ার একাংশ দাবি করে যুদ্ধের হুমকি দিলে, ফ্রাঙ্কো-সোভিয়েত চুক্তির (১৯৩৫ সাল) শর্ত অনুসারে উভয় শক্তি জার্মানিকে যৌথ বাধা দিলে, জার্মানিকে থমকে দাঁড়াতে হতো। কিন্তু ব্রিটেনের প্ররোচনায়, ফ্রান্স ১৯৩৫ সালে ফ্রাঙ্কো-সোভিয়েত চুক্তির শর্ত পালনে অস্বীকার করে। অধিকন্তু জার্মান তোষণ নীতি অনুযায়ী মিউনিখ চুক্তির দ্বারা চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতেন জেলা জার্মানিকে হস্তান্তর করতে ব্রিটেন বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ফ্রান্সও এই তোষণ নীতির শামিল হয়। মিউনিখ চুক্তি সম্পর্কে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি রাশিয়ার সঙ্গে বিন্দুমাত্র পরামর্শের দরকার বোধ করেনি। হিটলার শেষ পর্যন্ত গোটা চেকোস্লোভাকিয়া দখল করেন। জার্মান সীমান্ত রুশ সীমান্ত সংলগ্ন হলে রাশিয়ায় জার্মান আক্রমণের সম্ভাবনা ভীষণ বাড়ে। পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে রুশ সহযোগিতা নীতির ব্যর্থতা প্রকটিত হয়।
৬. স্টালিনের আত্মরক্ষার নীতি
“পশ্চিমি দেশের সঙ্গে সহযোগিতা নীতি” বিফল হলে স্টালিন লিটভিনভকে পদচ্যুত করে মোলোটোভকে বিদেশমন্ত্রী নিয়োগ করেন। মোলোটোভ ছিলেন পশ্চিম বিরোধী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলো সোভিয়েত সরকারের
একের পর এক নীতিকে অনাক্রমণ চুক্তির প্রস্তাব ক্ষর করেন। এই চুক্তির মণ না করতে প্রতিশ্রুতি মাংসা করতে রাজি হয়। ক পরস্পরের মধ্যে ভাগ চীন এলাকা স্থির করে। ন্ড, দুই বাল্টিক রাষ্ট্রকে র অধীনে আনার ব্যবস্থা চমণের হাত থেকে তিনি যে, জার্মানির বিরুদ্ধে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির পতন বাক্রমণ করা সহজ হবে। তবে আপাতত যুদ্ধ থেকে জার্মান আক্রমণের বিরুদ্ধে । অনাক্রমণ চুক্তির জন্য করেন। কিন্তু তাঁরা ভুলে এতা লাভের জন্য রাশিয়া । ছিল ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির ণাম। এজন্য তাদের দাম
ংশ শক্তিকে পদানত করার ন আগে থেকেই পরিকল্পনা বাধা। রুমানিয়া ও বাল্টিক মানি রাশিয়া আক্রমণ করে বে রাশিয়া আক্রমণ করে।
নেপোলিয়নের মস্কো অভিযানের বিফলতার কথা হিটলার ও তাঁর সেনাপতি ভোলেননি। কিন্তু হিটলারের পরিকল্পনা সফল হয়নি। প্রথমত, ইঙ্গ-মার্কিন মিত্রশি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আগের বিরোধ ভুলে গিয়ে Grand Alliance বা বি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে মহাজোট গঠন করে। সোভিয়েত রাশিয়া আর্কেঞ্জল বন্দরের পথে প্রচুর রণসম্ভার সরবরাহ করা হয়। এর ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ায় আক্রমণকারী জার্মান সেনা সংখ্যা অে রুশ সেনার সংখ্যা ছিল অনেক গুণ বেশি। দীর্ঘ যুদ্ধে জার্মানির লোকক্ষয় হয় রণাঙ্গনে ইঙ্গ-মার্কিন আক্রমণের ভয়ে জার্মানিকে ফ্রান্সে বহু সেনা মোতায়েন রাখার হয়। এজন্য রাশিয়া আক্রমণে জার্মানি যথেষ্ট সেনা পাঠাতে পারেনি। সেনা সংখ্যা স্বল্পতা রুশ প্রতিরোধ এবং রাশিয়ার ভয়ংকর জলবায়ু, শীতে জার্মান আক্রমণের গণি মন্দীভূত হয়। তৃতীয়ত, জার্মান রণনীতি হিটলার ভুল পথে পরিচালিত করেন। জার্মান সেনাপতি ফিল্ড মার্শাল কাইটেল, ফিল্ড মার্শাল ফনবক প্রমুখ চান যে, রাশিয়ার বড় বড় শহর, শিল্প কেন্দ্র, রেল জংশন, তৈলখনি অঞ্চল দখল করলে রাশিয়ার পরাজয় ঘটবে হিটলার চান যে, স্টালিনগ্রাদ শহর দখলের জন্য জার্মানির সর্বশক্তি নিয়োগ করা হোক স্টালিনগ্রাদ দখলকে তিনি তাঁর মর্যাদার লড়াই-এ পরিণত করেন। হিটলারের এই জেদি, একরোখা রণনীতির পরিণাম ছিল ভয়াবহ। রাশিয়ার চতুর ও অভিজ্ঞ ফিল্ড মার্শাল জুকভ স্টালিনগ্রাদে রাশিয়ার মরণপণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ফলে এই নগর দখলের জন্য হিটলার তাঁর সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও বিফল হন। মাসের পর মাস গড়িয়ে গেলেও সুযোগ বুঝে লাল ফৌজ জার্মানদের প্রবল চাপ দিয়ে পিছু হটতে বাধ্য করে চতুর্থত, রাশিয়ার এই সংকট সময়ে বিলম্বে হলেও ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে নেমে পড়লে, জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খুলে যায়। জার্মানিকে বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে সেনা সরিয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে আনতে হয়। এই সাঁড়াশি আক্রমণে ও জার্মানির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির নৌ-অবরোধে জার্মানির দম ফুরিয়ে আসে। পঞ্চমত, হিটলারের আশা ছিল যে, জার্মান সেনা রাশিয়ায় ঢুকলে রাশিয়ার সাধারণ লোক বলশেভিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। রুশরা হলো অত্যন্ত দেশপ্রেমিক জাতি। বৈদেশিক আক্রমণের সম্মুখে তারা এক হয়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে মরণপণ লড়াই চালায়। স্টালিনের নেতৃত্বে তারা পূর্ণ আস্থা জানায় অবশেষে জার্মান বাহিনী জার্মানির পতন আসন্ন হলে রুশভূমি ত্যাগ করে। তাদের পিছু নিয়ে লাল ফৌজ পূর্ব ইউরোপ হয়ে জার্মানিতে ঢুকে পড়ে। বার্লিনের যুদ্ধে নাৎসি সরকারের পতন হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]