মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধের পটভূমি ও কারণ লিখ

Great Patriotic War: Operation Barbarosa, Grand Alliance, Results of the War মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধ, ১৯৪১-১৯৪৫
রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে জার্মানি ১৯৪১ সালের ২২ জুন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৯৪১ সালের ২২ জুন থেকে ১৯৪৫ সালের ৯ মে (জার্মানি আত্মসমর্পণের তারিখ) পর্যন্ত নাজি জার্মানি ও তার বিভিন্ন মিত্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন ফ্রন্টে সোভিয়েত লাল ফৌজ, কমিউনিস্ট পার্টির অগণিত নেতাকর্মী ও দেশপ্রেমিক সাধারণ জনগণ যে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনা করে তাকে ‘মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধ' (The Great Patriotic War) নামে অভিহিত করা হয়েছে। জার্মানি কর্তৃক সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রান্ত হওয়ার পর পরই সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘প্রভেদা' ‘সোভিয়েত জনগণের দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ' (The Great patriotic War of The Soviet People Velikaya Otechest vennaya voyna Sovetskogo naroda) শিরোনামের একটি বড় প্রবন্ধে নাজি জার্মানির আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য সোভিয়েত জনগণকে আহ্বান জানায়। প্রগতি প্রকাশন, মস্কো কর্তৃক ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত ও বাংলায় অনূদিত ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস গ্রন্থে' রক্ষা করেছিল তাদের সমাজতান্ত্রিক মাতৃভূমি- নের দেশপ্রেমিক হাযুদ্ধ'। এটা হলো 'মহাযুদ্ধ, তার কারণ, ফ্যাসিবাদের নামল সোভিয়েত জনগণ- সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎই শুধু আর জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ, সমগ্র বিশ্বজনের এর পরিণতির উপর। ফ্যাসিস্ট আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে । ছিল ন্যায়যুদ্ধ। কমিউনিস্ট পার্টি আর সোভিয়েত সরকার র উপর পূর্ণাঙ্গ জয় না হওয়া অবধি যুদ্ধ চালানো হবে, সংগ্রামরত সমস্ত পদানত মানুষকে সাহায্য করা হবে দের জোঁয়াল ছুঁড়ে ফেলে দেবার জন্য।”
ইউনিয়নের বাইরে ‘দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ' শব্দের ব্যবহার । বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং জার্মানি ও তার মধ্যে যুদ্ধকে রাশিয়ানরা এ নামে অভিহিত করে। উল্লেখ্য, সাথে জাপান কিংবা ১৯৩৯ সালের পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও গামে অভিহিত হয়নি। জার্মানির এ আক্রমণ ‘রাশিয়া অভিযান' নামে খ্যাত।
ও সোভিয়েত সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাল ফৌজের প্রেমিক জনগণ সমাজতান্ত্রিক মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য নাজি n লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, তাই এটা ‘দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ' । আর 3 বিপুল অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী জার্মান বাহিনীর ধ্বংস সাধন থেকেই শুরু হয়। মানব ইতিহাসে অন্য দেশের তুলনায় আত্মত্যাগ ছিল সবচেয়ে বেশি। এর ২৬.৬ মিলিয়ন নরনারী 5 ইউনিয়ন একাকী তিন বছর ধরে জার্মান আক্রমণ মোকাবিলা ণপ্রেমিক জনতা শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নকেই রক্ষা করেনি, সারা তার অবদান ছিল অনন্য। আর তাই এটা ‘মহাযুদ্ধ’।
যুদ্ধের সময় সোভিয়েত সরকার বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য 'Orders War' পুরস্কার চালু করে। সেরা উৎপাদনকারীদের জন্য কমিউনিস্ট [ক্ষা কমিটি চালু করেছিল ‘লাল পতাকা’ এবং ‘বোনাস’ পুরস্কার। শ্রমিক সোভিয়েত জনতা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল হিটলারের দানবীয় । করেছিল সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও বিশ্বকে। এজন্য মহা ভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রেমিক যুদ্ধের পটভূমি ও কারণ
মিক যুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ পটভূমি ও কারণ এখানে তুলে ধরা হলো :
১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে। তার ঠিক দুদিন পরে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে (৩ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই যুদ্ধে এক দিকে ছিল জার্মানি, ইতালি ও জাপান বা অক্ষ শক্তি। অন্যদিকে এর প্রতিপক্ষ ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন এবং রাশিয়া যারা মিত্রশক্তি নামে পরিচিত। যুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকা মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৯৪১ সালের ২২ জুন থেকে ১৯৪৩ সালের ৩১ জানুয়ারি) জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ করে ব্যাহত করে রাশিয়ার শান্তিপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ফ্যাসিস্ট জার্মান আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় রুশ জনগণের মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধ। এমন নৃশংস যুদ্ধে রাশিয়া আর কখনো জড়ায়নি। মলোটভের মতে, ‘রুশ-জার্মান যুদ্ধ জার্মানির দুর্দশাগ্রস্ত জনগণ, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবীদের নয়, বরং রুক্তলোলুপ ফ্যাসিবাদী জার্মানির শাসকগোষ্ঠী এই যুদ্ধ আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। হিটলার কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী সাম্যবাদীদের কাছে যুদ্ধের চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে যায়। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ জনগণের যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। জার্মানির দ্বারা আক্রান্ত হবার পর রাশিয়াও মিত্রপক্ষের সঙ্গে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেয়।
দারুণ বিপদের সামনে যখন সোভিয়েত রাশিয়ার জীবনমরণ প্রশ্ন, সোভিয়েত রাশিয়ার বিভিন্ন জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রশ্ন নির্ধারিত হচ্ছিল তখন সমাজতান্ত্রিক পিতৃভূমির রক্ষায় অপরিসীম সহনশক্তি, সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেয় রুশ জনগণ। আরো সজোরে কমিউনিস্ট পার্টিকে ঘিরে দাঁড়ালো রুশ জনগণ ও তার নেতৃত্বে উত্থিত হলো জার্মান ফ্যাসিস্ট আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ। সোভিয়েত জনগণের সমস্ত নৈতিক ও কায়িক গুণের কঠোর অগ্নিপরীক্ষা ছিল এই মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধ, আর সে পরীক্ষায় রুশ রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও প্রাণশক্তি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চেয়ে অনেক শ্রেয় বলে প্রমাণিত হয় ।
ব্রিটেন আক্রমণের পাশাপাশি হিটলার রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এই পরিকল্পনার নাম অপারেশন বারবারোসা। ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ই হিটলারের রাশিয়া অভিযানের পরিকল্পনা বা অপারেশন বারবারোসা Top Secret হুকুমনামায় বলা হয় যে, জার্মানির সেনাদল ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হবার আগেই দ্রুত সামরিক অভিযান করে সোভিয়েত রাশিয়াকে ধ্বংস করতে হবে। অপারেশন বারবারোসা সম্পর্কে হিটলার এক হুকুমনামায় বলেন যে, ‘সারা পৃথিবীর দম বন্ধ হবে'। শুধু তাই নয় নুরেমবার্গের নথিপত্র থেকে জানা যায়, রাশিয়া অভিযানের আগে “কীটপতঙ্গের মতো বংশ বৃদ্ধিকারী ও নিম্নজাতীয় রুশদের” হত্যা করার জন্য পৈশাচিক হুকুমনামা জারি করেন। প্রখ্যাত সমর বিশারদ ফুলারের মতে, ব্রিটেন বা আমেরিকা এগিয়ে আসার আগেই একটি মাত্র বিদ্যুৎগতি অভিযান দ্বারা রাশিয়াকে ধ্বংস করাই ছিল জার্মানির সামরিক কৌশল। ১৯৪১ সালের ২২ জুন অপারেশন বারবারোসার কাজ শুরু হয়। ১৯৪১ সালের ২২ জুন হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেন। কোন রকম আগাম ঘোষণা ছাড়াই হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেন। হিটলারের রাশিয়া আক্রমণ রুশ ইতিহাসে একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।
ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে হিটলার কোনো রকম যুদ্ধ ঘোষণা না করেই বিশ্বাসঘাতকের মতো অকস্মাৎ ১৯৪১ সালের ২২ জুন রাশিয়া আক্রমণ করে। রাশিয়ার সাথে অনাক্রমণ চুক্তি বলবৎ থাকা সত্ত্বেও হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেন। রাশিয়ার সাথে একটা বোঝাপড়া ছিল বলেই হিটলারের পক্ষে ১৯৩৯-৪০ দু'বছর ধরে বিভিন্ন রণাঙ্গনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়। জার্মান-রুশ বোঝাপড়ায় চিড় ধরে কেন তার সহজ উত্তর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে সাধারণভাবে কিছু আলোচনা করা যেতে পারে। ১. হিটলার প্রথম থেকেই রাশিয়ার মনোভাব সম্পর্কে সন্দেহপরায়ণ ছিলেন এবং রাশিয়ার দিক থেকে আক্রমণের সম্ভাবনাকে তিনি কোনো সময়ই উড়িয়ে দেননি। এ অবস্থায় হিটলার রাশিয়া দখল করে নিশ্চিত হতে চায় । যাতে তিনি পুরো নজর ব্রিটেনের দিকে দিতে পারেন।
২. রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি সম্পর্কে হিটলার শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। এটি ছিল তার কাছে নিছক একটি কৌশল মাত্র। ঐতিহাসিক এলান বুলক (Allan Bullock) এর মতে এটি ছিল তাঁর One by one নীতির ফল। তিনি একই সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম দুটি রণাঙ্গনে যুদ্ধ চালাতে রাজি ছিলেন না। তাই পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ শেষ করে তিনি পূর্ব দিকে রাশিয়ার দিকে নজর দেন।
৩. অধ্যাপক এ.জে রাইডার মনে করেন হিটলারের রুশ আক্রমণের পশ্চাতে অর্থনৈতিক কারণ অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় রাশিয়া জার্মানিতে প্রচুর খাদ্য ও রসদ সরবরাহ করে। দূরপ্রাচ্য থেকে রবার, টিন, নিকেল প্রভৃতি সাইবেরিয়ার পথে রাশিয়া তা জার্মানিতে সরবরাহ করতো। ফ্রান্সের পতনের পর রাশিয়া জার্মান শক্তি সম্পর্কে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং এই সব সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে হিটলার প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। হিটলার মনে করেছিলেন রাশিয়া জয়ের ফলে ইউক্রেনের গমের ভাণ্ডার এবং বাকুর পেট্রোলিয়াম খনিগুলো তার হস্তগত হবে যা তার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে নানাভাবে সাহায্য করবে। হিটলার মনে করেন রাশিয়া জয়ের ফলে রুশ সীমান্তে অবস্থানরত জার্মান সৈন্যদলকে তিনি অনায়াসে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবেন ।
৪. রাশিয়া কর্তৃক রুমানিয়া ও তিনটি বল্টিক রাজ্যজয়, রাশিয়ার অস্ত্রসজ্জা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি হিটলারের আশঙ্কার কারণ হয়ে ওঠে। তিনি রাশিয়া কর্তৃক জার্মানি আক্রমণের সম্ভাবনা দেখতে পান। এই কারণে রাশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার আগেই তিনি রাশিয়াকে আক্রমণ করেন। এলান বুলকের মতে হিটলারের লক্ষ্য ছিল পূর্ব ইউরোপে জার্মান আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। এ ব্যাপারে রাশিয়া ছিল তার প্রধান অন্তরায়। তাই তিনি রাশিয়ার উপর আক্রমণ করেন। পঞ্চমত, হিটলার ভেবেছিলেন তিনি অতি দ্রুত রাশিয়ার সবটা দখল করে নিতে পারবেন। জার্মানরা রাশিয়ার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তান
উপস্থিত হতে পারবে। সেখান থেকে ব্রিটেনের ভারত সাম্রাজ্যের উপর আঘাত হানা যাবে। হিটলার আরও ভেবেছিলেন সাম্যবাদী রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে তিনি ব্রিটেনের হিটলার বিরোধিতার তীব্রতা কমিয়ে আনবেন। তাছাড়া ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধে জার্মান বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হলে হিটলার আশঙ্কা করেন যে, এই সুযোগে রাশিয়া পূর্ব দিক থেকে জার্মানির উপর আঘাত হানতে পারে। এই সম্ভাবনা রোধ করার জন্য হিটলারই প্রথম রাশিয়ার উপর আক্রমণ করেন।
৫. ১৯৪১ সালের ২২ জুন ৩০ লক্ষ সৈন্য ৬,৩০০ ট্যাংক ও ৫০০ বিমান নিয়ে জার্মান বাহিনী রুশ সীমান্ত অতিক্রম করে দ্রুত রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকে। ২২ জুন দিনটি ছিল নেপোলিয়নের ব্যর্থ রুশ অভিযানের ১২৯তম দিন। হিটলার ও নেপোলিয়ন, দুজনেরই পরিণতি হয় এক এবং উভয়ের পরাজয়ের জন্য রাশিয়ার শীত ও পোড়ামাটি নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরপর দুই শতাব্দীর দুই বড়ো মহারথী ও একনায়কের পতনের সাক্ষী হয়ে রইল রাশিয়া। পৃথিবীর ইতিহাসে এর চেয়ে বড় আক্রমণ ইতিপূর্বে আর হয়নি। হিটলার নিজে একে ‘পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম সামরিক অভিযান' বলে বর্ণনা করেছেন। এই আক্রমণের শুধু সম্মুখটাই ছিল ৩,০০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে জার্মান সেনাদল উত্তরে লেনিনগ্রাদ, মধ্যে মস্কো এবং দক্ষিণে স্টালিনগ্রাদ অভিমুখে অগ্রসর হয়। ইতালি ও হাঙ্গেরি জার্মান বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। এর ফলে যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হয়।
দেশপ্রেমিক রুশদের প্রতিরোধ সংগ্রাম
হিটলারের ধারণা নস্যাৎ করে রাশিয়ায় কোনো সাম্যবাদ বিরোধী বিপ্লব ঘটেনি বরং জার্মান আগ্রাসনে রুশ জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়। রেনার ও স্টেপলে বলেন, রুশ জনসাধারণ কমিউনিস্ট হোক আর অকমিউনিস্ট সকলে নিজেদের বিরোধ ভুলে গিয়ে স্টালিনের নেতৃত্বকে স্বীকার করে এবং জার্মান আক্রমণকে এক মহা দেশপ্রেমমূলক যুদ্ধে রূপান্তরিত করেছিলেন। রুশ জনগণ কমিউনিস্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এ সংগঠন কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। রাশিয়া এবং অন্যান্য পূর্ব ইউরোপের দখলীকৃত এলাকায় প্রতিরোধ সংগঠনের অনেক সদস্য আত্মগোপন করে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে নাৎসি বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল। রাশিয়ার সমতল বা যুগোস্লোভিয়ার পর্বতাঞ্চলে কমিউনিস্টরা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানদের আঘাত করে।
স্টালিন আগে থেকেই এই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। জার্মান বাহিনীর গ্রিস ও যুগোস্লোভিয়া আক্রমণের সময়েই স্টালিন সতর্ক হয়ে যান। তিনি লাটভিয়া, লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া, বেসারবিয়া প্রভৃতি জোটবদ্ধ দেশগুলোকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে এনে একটা বিরাট বাফার অঞ্চল গড়ে তোলেন। হিটলার বলেছিলেন “যত শীঘ্র আমরা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে পারব, তত ভালো” ।
জুলাই স্টালিন জাতির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, এ ণের জীবন-মৃত্যু যুদ্ধ। তিনি সোভিয়েত ভূমির জনগণের তকে টিউটন আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে, ১৮ শতকে পোল দ্ধে এবং ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ স্টিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দ্ধ সাধারণ যুদ্ধ নয়। এই যুদ্ধ দুই বিরোধী বাহিনীর মধ্যে নয়, প্রেম ও স্বাধীনতার যুদ্ধ। ফ্যাসিস্ট আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে এ রাশিয়াকে ফ্যাসিস্ট বিপদ থেকে মুক্ত করবে না সমগ্র ফ্যাসিস্ট ক্তি দেবে। স্টালিনের আহ্বানে দেশের জনসাধারণ অভূতপূর্ব দেয়।
কে জার্মান ফ্যাসিস্ট বাহিনী বেশ সাফল্য লাভ করে, হটে যেতে দর। এ সাফল্যের কতকগুলো কারণ ছিল। সোভিয়েত রাশিয়া উভিশনের এক বাহিনী (১৫৩টি জার্মান, ১৮টি ফিনিশ, ১৭টি রীয়); স্থল সৈন্যের সাহায্যে ছিল ৫,০০০ বিমান ও প্রধান নৌ বাহিনীর পেছনে ছিল প্রায় গোটা ইউরোপীয় মহাদেশের পদানত সম্পদ ও জনবল, এ বাহিনী পুরোপুরি সংহত এবং ইউরোপে যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। তাদের সরঞ্জামের মধ্যে ছিল প্রচুর শেস্ত্র ও যন্ত্র। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রগুলোর জোটের বিরুদ্ধে সোভিয়েত গকী লড়তে হয়, কারণ ১৯৪৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত ইউরোপে য়নি। পশ্চিম থেকে কোনো সার্থক প্রতিরোধ ছিল না বলে করা রুশ ফৌজের বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যদের প্রধান অংশটা বিনা বাধায় রাশিয়ার সীমান্তে শক্তি কেন্দ্রীভূত ও স্থানান্তরিত
ক যুদ্ধে রুশ জনগণ নিঃসঙ্গ ছিল না। পিতৃভূমির মুক্তি ও দর লড়াইয়ে মিশে যায় বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ার সাহায্যে ব্রিটেন া ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটেনের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ র স্থির হয় যে, (১) উভয় রাষ্ট্রই যুগ্মভাবে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ দ্ধ পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করবে এবং (৩) পরস্পরের মধ্যে উই এককভাবে জার্মানির সঙ্গে সন্ধি করবে না।
যার উপর জার্মান আক্রমণের চাপ কমাতে রুশ নেতৃবৃন্দ পশ্চিম নো স্থানে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার জন্য মিত্রশক্তিকে বার বার এ শক্তি এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা অনুধাবন করলেও বিশেষ আগ্রহ * ভিন্ন মত আছে। অনেকে মনে করেন এ সময় দ্বিতীয় রণাঙ্গন মত্রশক্তির ছিল না এবং তারা তখন উত্তর আফ্রিকা ও ইতালির যুদ্ধ । রণাঙ্গন খুলতে ইচ্ছুক ছিল না। আবার অনেকে মনে করেন স্ব ইচ্ছাকৃত এবং হিটলারের আক্রমণের ফলে রাশিয়া যাতে ই নাকি তারা বিলম্ব করেছিল।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]