মহা মৈত্রীজোট কী? মহা মৈত্রীজোটের যুদ্ধকালীন তেহরান, ইয়াল্টা ও পটসডাম শীর্ষ সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

মহা মৈত্রীজোট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গ নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ ভুলে গিয়ে পরস্পর পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং সোভিয়েত রাশিয়া একটি অক্ষশক্তি বিরোধী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই মিত্রতা মহাজোট (Grand Alliance) নামে পরিচিত। এই জোট উইলফ্রিড ন্যাপের ভাষায় ছিল- 'as improbable as it was in the longrun overwhelming'. মহাজোট গঠনের উদ্দেশ্য ছিল একটাই যে কোনো উপায়ে অক্ষশক্তিকে পরাজিত করা। যদিও তখন ব্রিটেন ও আমেরিকা সোভিয়েত রাশিয়াকে অবিশ্বাসের চোখে দেখত। হিটলার বিরোধী মহাজোটের সৃষ্টি রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের পরিচায়ক।
মহা মৈত্রীজোটের ঘটনাপ্রবাহ
সমকালীন পরিস্থিতিতে মিত্রপক্ষ ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে একটি মিত্রতা চুক্তি অনিবার্য হয়ে ওঠে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো সোভিয়েত রাশিয়া ও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি ফ্যাসিস্ট বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠনের দাবিতে সোচ্চার হয়। প্রধানত দুটি ঘটনার প্রেক্ষিতে মহাজোট গড়ে ওঠে। প্রথমত জার্মানির রাশিয়া আক্রমণ এবং দ্বিতীয়ত পার্ল হারবারে জাপানের বোমাবর্ষণ।
১৯৪১ সালের ২২ জুন হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির রূপান্তর ঘটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ঘোষণা করেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত যে কোনো রাষ্ট্রই ব্রিটেনের বন্ধু। তাত্ত্বিক বিরোধ আপাতত দূরে সরিয়ে ব্রিটেন রাশিয়াকে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ফলে ১৯৪২ সালের ২২ জুলাই ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অন্যদিকে আমেরিকাও রাশিয়াকে সামরিক সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। লেন্ড'লিজ এক্ট-১৯৪১ অনুসারে রাশিয়াকে সামরিক সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়। ঠিক হয় ১৯৪১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৪২ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত রাশিয়াকে প্রতি মাসে ৪০০ যুদ্ধ বিমান, ৫০০ ট্যাংক ও প্রচুর ধ্বংসকারী মারণাস্ত্র দেওয়া হবে। লেন্ড লিজকে কেন্দ্র করে রাশিয়া, ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যে মৈত্রীর সূত্রপাত ঘটায়। ক্রমশ ব্রিটেন, আমেরিকা ও রাশিয়া কাছাকাছি আসে এবং তাদের মধ্যে একটি মৈত্রী জোট গঠনের পথ প্রশস্ত হয় ৷
১৯৪১ সালের জুলাই মাসে জাপান ইন্দোচীন আক্রমণ করে। এর ফলে ব্রিটেন ও আমেরিকা আতঙ্কিত হয়। কেননা এ অঞ্চলে তাদের উপনিবেশ ছিল। তারা জাপানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমেরিকা জাপানকে ইন্দোচীন ও চীন থেকে সেনা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জাপান এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে। এই অবস্থায় ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটি পার্ল হারবার আক্রমণ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ দিনটিকে একটি কলঙ্কিত দিন বলে অভিহিত করেছেন। উইলফ্রিড ন্যাপ এই দিনটিকে জাপানের পক্ষে এক সর্বনাশা মূঢ়তার দিন বলে চিহ্নিত করেছেন।
মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধ
এভাবে বিশ্বযুদ্ধ এশিয়ায় সম্প্রসারিত হয়। আক্রমণের পরের উপযুক্ত বিচার জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু পার্ল হারবার আমেরিক পারেনি। জাপানি রণতরি ও ৩৩৫টি যুদ্ধ বিমান পার্ল হারবার গুড়িয়ে চেনা করা জাপান ইন্দোচীন ও ব্রহ্মদেশ অধিকার করে। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি জী, মূল্য আসে। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। আমেরিকা সিদ্ধান্ত বেস্থা, রণকৌশলের ক্ষেত্রে আমেরিকা ইউরোপকে অগ্রাধিকার দিবে। স্টালিন মার্কিন সিদ্ধতি সমর্থন করেন। ফলে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া এর মধ্যে জোট গড়ে ওঠার পথ
হয়। এভাবে যুদ্ধের আমোঘ গতি বিশ্ব কূটনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন ঘটায় এ সোভিয়েত রাশিয়া ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা নাৎসি জার্মান বিরোধী এক মিত্র গোষ্ঠীতে পরিণত হয় ।
মহা মৈত্রীজোটের কার্যাবলি
১৯৪১ সালের শেষ থেকে মহাশক্তি জোট বিশ্বরাজনীতির গতিধারা নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যুদ্ধ ও কূটনীতি এই দুই নীতি অনুসরণ করেই মহাজোটের কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। একদিকে যেমন অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে অধিক কৌশল গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল অন্যদিকে যুদ্ধোত্তর কালে নয়া আন্তর্জাতিক কাঠামো বিন্যাসের সম্ভাবনা নিয়েও মহাজোটের রাষ্ট্রগুলোকে চিন্তা ভাবনা করতে হয়েছিল। মহাজোটের আওতায় পরবর্তী চার বছরে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণ, পরাজিত শত্রুর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তার নীতিনির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সোভিয়েত রাশিয়া, ব্রিটেন ও আমেরিকার শীর্ষ ও অন্যান্য নেতার মধ্যে বেশ কয়েকটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর সোভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিনিধিদের মস্কো সম্মেলনে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে হিটলার বিরোধী জোটের সম্পদ ব্যবহারের প্রশ্নে মিলিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপরে ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিমিয়ার ত্রিশক্তি সম্মেলন হয় ও ফ্যাসিস্ট জার্মানিকে চূড়ান্ত পরাজয়ের পরিকল্পনাগুলো সমন্বিত করা হয়।
মহাজোট গড়ে উঠলেও বিভিন্ন প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা শক্তির সম্পর্ক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। যুদ্ধকালীন সহযোগিতা তাদের অতীতের বিদ্বেষকে পুরোপুরি মুছে দিতে পারেনি। পরিস্থিতির কারণে তারা কাছাকাছি এলেও এদের সহাবস্থান কখনো সম্ভব ছিল না। যুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাস এই সত্যকেই প্রমাণ করে। কমিউনিস্ট রাশিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এদের কাছে কাম্য ছিল না। তাদের পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। সার্বিক বিচারে বলা যায় যে, মহাজোট শেষ পর্যন্ত না টিকলেও এর ঐতিহাসিক সাফল্য ও তাৎপর্য ছিল অপরিসীম।
মহা মৈত্রীজোটের যুদ্ধকালীন ৩টি শীর্ষ সম্মেলন
নিম্নে তেহরান, ইয়াল্টা ও পটসড্যাম সম্মেলন তুলে ধরা হলো :
ক. তেহরান সম্মেল
সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো নিম্নরূপ ছিল
(১) যতদিন না জার্মানিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা সম্ভব হচ্ছে ততদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেবে না। (২) পোল্যান্ডের প্রশ্নে ঠিক হয় পূর্বদিকে কার্জন রেখা ও পশ্চিমদিকে ওডার নদীর তীর ভবিষ্যৎ পোল্যান্ডের সীমানা নির্ধারিত হবে। (৩) জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বলা হয় যে, অখণ্ড ঐক্যবদ্ধ জার্মান রাষ্ট্র শান্তির পক্ষে বিপজ্জনক, তাই জার্মানিকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করা হবে। (৪) যুগোস্লোভিয়ায় জার্মান বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামে পূর্ণ সমর্থন জানান হবে এবং (৫) ১৯৪৪ সালের মে মাসে ফ্রান্সের মধ্য দিয়ে জার্মান বিরোধী দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলা হবে।
খ. ইয়াল্টা সম্মেলন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধনীতি ও যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর পুনর্গঠন ও শান্তিস্থাপনের জন্য মিত্রশক্তিবর্গের রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলনে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ যুদ্ধকালীন সম্মেলনগুলোর মধ্যে ইয়ান্টা (Yalta) সম্মেলন অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এ সম্মেলনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে শান্তিস্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান United Nations Organizations এর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। নিচে ইয়াল্টা (Yalta) সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ছিল নিম্নরূপ : সিদ্ধান্তসমূহ
১. সামরিক সিদ্ধান্ত
ইয়াল্টা সম্মেলনে প্রথমেই সামরিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। রাশিয়ানরা ও অ্যাংলো আমেরিকানরা ভবিষ্যৎ অভিযান সম্পর্কে নিজ নিজ নকশা অপরের নিকট ব্যাখ্যা করেন। এ আলোচনার মাধ্যমে ইউরোপীয় যুদ্ধের ব্যাপারে কোনো সামরিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটা পরস্পরের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে একটি ব্যাপারে তাঁরা একমত হন যে আইজেন হাওয়ার সামরিক সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রয়োজন হলে মস্কোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবেন।
২. জার্মানি সম্পর্কে
জার্মানিতে ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রাধান্য যে অংশে স্থাপিত হবে সে অংশ হতে ফ্রান্সের জন্য একটি পৃথক অংশ গঠন করে তার উপর ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দেওয়া হবে। পরাজিত জার্মানির প্রতি মিত্রদের সাধারণ নীতির ব্যাপারে সবাই একমত হন যে, নাৎসি দল, নাৎসি আইন ও প্রতিষ্ঠানাদি এবং জার্মানির সমরবাদকে চিরতরে দূর করবে। যুদ্ধে মিত্রপক্ষের যে ক্ষতি হয়েছিল জার্মানিকে জাহাজ, যন্ত্রপাতি, বিদেশে জার্মানির বিনিয়োগ করা অর্থ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অংশ বা শেয়ার প্রভৃতি দ্বারা তার ক্ষতিপূরণ দানে বাধ্য করা হবে। সোভিয়েত রাজধানী মস্কোতে ক্ষতিপূরণ কমিশনের অধিবেশনে বসবে। জার্মানির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কীভাবে ব্যবহৃত হবে সেজন্য মিত্রপক্ষীয় একটি যুগ্ম সমিতি (Allied Control Council) বার্লিনে স্থাপিত হবে।
৩. পোল্যান্ড সম্পর্কে
উপযুক্ত বিচার
হিটলার পোল্যান্ড অধিকার করলে তদানীন্তন পোল্যান্ড সরকার ল গ্রহণ করেছিল । ইয়াল্টা সম্মেলনে স্থির হয় যে লন্ডনস্থ পোল্যান্ড সরকার এবং পোল্যান্ডে যে সরকার চালু ছিল এ দুয়ের প্রতিনিধি নিয়ে একটি অস্থায়ী সরবচনা করা। করা হবে। এই অস্থায়ী সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীনে সাধারণ নির্বাচনের য়, মূল্য পোল্যান্ডের স্থায়ী সরকার গঠিত হবে। পোল্যান্ডের রাজ্যসীমা পূর্বদিকে 'কার্জন লবস্থা, (Curzon Line ) পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। পোল্যান্ডের পশ্চিম দিকের রাজ্যসীমার সাীতি জার্মানির রাজ্য হতে কতকাংশ নিয়ে যোগ করে দেওয়া হবে। অবশ্য এজন্য জার্মানির, সাথে শান্তিচুক্তির সময় পর্যন্ত পোল্যান্ডকে অপেক্ষা করতে হবে। ইয়াল্টা সম্মেলনে মূলত পোল্যান্ডের সমস্যা সবচেয়ে কঠিন সমস্যা ছিল।
৪. যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে রিপোর্ট প্রস্তুতের ব্যবস্থা
যুদ্ধের জন্য দায়ী রাষ্ট্রদের এবং যুদ্ধ সৃষ্টির অপরাধে অপরাধীদের সম্পর্কে কী নীতি গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে ইয়ান্টা সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, রুশ, মার্কিন ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রিবর্গ ভবিষ্যতে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন।
৫. রুশ-মার্কিন-ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের কিছুকাল পর পর মিলিত হবার সিদ্ধান্ত
পৃথিবীর নিরাপত্তা, শান্তি ও গণতান্ত্রিক শাসন বজায় রাখবার জন্য রুশ-মার্কিন-ব্রিটিশ প্রতিনিধিগণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন এবং এ উদ্দেশ্যে কিছুকাল অন্তর অন্তর একত্রে মিলিত হবার প্রতিশ্রুতিও ইয়াল্টা সম্মেলনে নেয়া হয় ।
এই ছিল ইয়াল্টা সম্মেলনের প্রধান প্রধান সিদ্ধান্ত। এছাড়াও এই সম্মেলনে পৃথিবীর জনসাধারণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সর্বত্র আইনশৃঙ্খলার পুনঃস্থাপন, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ মাত্রেরই উন্নতি সাধন স্বাধীনভাবে নির্বাচনের সুযোগ দান, পরাজিত ও জার্মানির উপর ব্রিটেন, রাশিয়া ও আমেরিকার সর্বাত্মক প্রাধান্য স্থাপন প্রভৃতি নীতি স্থিরকৃত হয় ৷
ইয়াল্টা সম্মেলনে জার্মানির শাসনব্যবস্থার জন্য ভবিষ্যৎ নীতি কী হবে সে সম্পর্কে বৃহৎ শক্তিত্রয়ের নেতা অকৃত্রিম মনের মিলে পৌঁছতে অক্ষম হয়েছে। ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে তিন নেতা কোনো ঐক্যমতে পৌঁছতেও ব্যর্থ হন। অবশ্য এ সম্মেলনে জার্মান সমস্যা এ অসন্তোষজনকভাবে সম্পাদনের মূল কারণ ছিল অন্যান্য ব্যাপারের আলোচনার চাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ স্থাপনের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিল। ইয়ান্টাতে সবচেয়ে কঠিন সমস্যা ছিল পোল্যান্ড নিয়ে এবং এর পেছনেই অধিকাংশ সময় ব্যয় হয়। কারণ একে নিয়ে রুশ ও পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যকার মতভেদ ছিল মৌলিক ও অনড়।
সুতরাং দেখা যায় যে, ইয়াল্টা সম্মেলনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এগুলো হলো সামরিক অবস্থা, জার্মানিতে মিত্রদের ভবিষ্যৎ নীতি, UNO স্থাপনের ব্যাপারে কিছু সমস্যা দূর করা, পোল্যান্ড প্রশ্ন এবং মুক্ত ইউরোপ সংক্রান্ত ঘোষণা। নৈতিকতার পার্থক্যের কারণে মৈত্রীত্রয়ের পরস্পর বিরোধী উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও এরা ঐকমত্যে পৌঁছার লক্ষ্যে অদক্ষের ন্যায় কাজ করেছে। এমতাবস্থায় এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে ইয়ান্টা চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং ইয়াল্টা সম্মেলনের পর নানা উত্থানপতন সত্ত্বেও মহা মৈত্রী চুক্তিটি সর্বদা ক্রমবর্ধমান ভাঙনের ইঙ্গিত প্রদর্শন করেছে।
গ. পটসড্যাম সম্মেলন ১৯৪৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিত্রশক্তিবর্গ তাদের কূটনীতি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মেলনের আহ্বান করেছিলেন। যেমন- ক্যাসাব্লাংকা সম্মেলন তেহরান সম্মেলন, ইয়ান্টা সম্মেলন এবং পটসড্যাম সম্মেলন। উদ্দেশ্য ছিল অক্ষশক্তি বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা এবং যুদ্ধ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্ন আলোচনা, সিদ্ধান্ত নেওয়া যুদ্ধোত্তর বিশ্বের রূপরেখা গঠন এবং ভবিষ্যতে যেন এরকম যুদ্ধ না হয় প্রভৃতি সম্প বিশেষ আলোচনা করা। নিচে আমরা শুধু পটসড্যাস (Potsdam) সম্মেলন (১৯৪৫) এর বিভিন্ন দিকই আলোচনা করব।
পটসড্যাম সম্মেলন ১৯৪৫
যুদ্ধকালীন সম্মেলনগুলোর মধ্যে সর্বশেষ সম্মেলনই হলো জার্মানির পটসডাম নগরীর সম্মেলন। ১৯৪৫ এর ১৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত এ সম্মেলন চলেছিল। এ সম্মেলন শুরু হলে মিত্র শক্তিবর্গের ক্ষমতা কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে এ সম্মেলনে কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সিদ্ধান্তসমূহ
এ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে USSR, USA, England এবং জাতীয়তাবাদী চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রিবর্গ নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। কাউন্সিলের প্রধান অফিস হবে লন্ডনে। তবে এটাও বলা হয়েছিল যে অপরাপর দেে রাজধানীতেও এ কাউন্সিলের অধিবেশন বসতে পারবে। এ কাউন্সিলের সর্ব কর্তব্য ছিল ইতালি, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডের সাথে শান্তিচুক্তি পত্র প্রস্তুত করা এবং উপযুক্ত সময়ে জার্মানির সাথে ও মিত্রপক্ষের শান্তিচুক্তি রচনা করা।
কিন্তু জার্মানির সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পূর্বে মিত্রপক্ষ জার্মানির উপর যে আধিপত্য ভোগ করবে এর নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে পটসড্যাম সম্মেলনে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়েছিল ।
১. পরাজিত জার্মানির উপর সোভিয়েত, ব্রিটিশ, মার্কিন ও ফরাসি অধিকার স্থাপিত হলো। যে অঞ্চল যে সরকারের অধীনে ছিল সে অঞ্চল সে সরকারের সেনাপতি সর্বাত্মক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। কিন্তু সমগ্র জার্মানির স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়াদি যুগ্মভাবে স্থিরকৃত হবে এ নীতি গৃহীত হলো। এ ধরনের কাজের জন্য উপরিউক্ত পাঁচটি দেশের সেনাপতিদের নিয়ে একটি Control Council নিয়ন্ত্রণ সমিতিও গঠিত হবে ।
2
জার্মানির নাৎসি দল বা ন্যাশনাল সোসালিস্ট দলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে হবে এবং ঐ আমলের শিক্ষা, আইনকানুন, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদির পরিবর্তন করে গণতন্ত্রের ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে হবে।
৩. জার্মানির অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প পরিবহণ সংক্রান্ত বিষয়াদি
Control Council-এর তত্ত্বাবধানে থাকবে। জার্মানির শাসনব্যবস্থ অকেন্দ্রীকরণ এবং আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। কোনো কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা না থাকলেও অর্থ বাণিজ্যিক এবং শিল্প পরিবহণ সংক্রান্ত ইত্যাদির জন্য Control Council এর অধীনে কয়েকটি কেন্দ্রীয় বিভাগ গঠিত হলো ।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধসমূহের মধ্যে মস্কোর যুদ্ধ স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ, কুর্সকের যুদ্ধ ও বার্লিনের চূড়ান্ত যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১. মস্কোর যুদ্ধ
প্রথম পাঁচ মাসের যুদ্ধে জার্মান বাহিনী রাশিয়ায় অভ্যন্তরে বহু দূর ঢুকে পড়ে এবং বহু এলাকা হস্তগত করে। ১৯৪১ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হয়। জার্মান বাহিনী প্রায় গোটা ইউক্রেন অধিকার এবং দানিয়ুব নদীর অববাহিকার কয়লাক্ষেত্রগুলো দখল করে মস্কোর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়। হিটলারের আদেশ যেভাবেই হোক মস্কো দখল করতে হবে। এ সময় তিনি আস্থার সাথে ঘোষণা করেন, “বিজয় তাঁর।
কিন্তু এ সময় সোভিয়েত সরকার, কমিউনিস্ট পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষ কমিটিও লড়াই চালিয়ে যাবার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে এবং ঘোষণা দেয় : ‘মস্কে আত্মসমর্পণ করবে না!' এ সময় কমিউনিস্ট পার্টি আরো ঘোষণা করে : শত্রুর পরাজয় হওয়া চাই মস্কো থেকেই।' সোভিয়েত বাহিনী জার্মান আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়।
নভেম্বর মাসে জার্মান প্যাঞ্জার ডিভিশন (ট্যাংক ডিভিশন) আরো একটা অভিযান চালায় মস্কোর বিরুদ্ধে। ২৭ নভেম্বরের মধ্যে জার্মান বাহিনী ক্রেমলিনের ১৯ মাইলের মধ্যে এসে পড়ে। মস্কোকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। নভেম্বর-ডিসেম্বরের শীতকাল শুরু হলে মস্কোয় প্রবেশের রাস্তা বরফ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড তুষারপাতে নাজি অস্ত্রশস্ত্র বরফে জমাট বাঁধে (Frozen) এবং এর সৈন্যবাহিনী প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এটা পরিষ্কার বুঝা যায় যে, ভেরমাখট মস্কো দখল করার পক্ষে অত্যন্ত দুর্বল এবং জার্মান সেরা ট্যাংক ডিভিশনগুলোকে মস্কোর বিভিন্ন প্রবেশপথে ঠেকিয়ে রাখার পাশাপাশি মার্শাল শ্যাপোসনিকভের (Marshal Shaposhnikov) নেতৃত্বে সোভিয়েত কমান্ড নয়া রিজার্ভ সৈন্য এনে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এ সময় সাইবেরিয়া থেকে এবং জাপানের নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা পেয়ে দূরপ্রাচ্যের সুপ্রশিক্ষিত ডিভিশনকে মস্কোতে স্থানান্তর করা হয়। নয়া সোভিয়েত সেনাবাহিনী শত্রু অপেক্ষা শীতকালের যুদ্ধের জন্য অধিক প্রস্তুত ছিল। ৫ ডিসেম্বর (১৯৪১) এই বাহিনীগুলা মস্কোর চারদিকের জার্মান বাহিনীকে 'টি-৩৪' ট্যাংক এবং ‘কাতিউশা’ রকেট ল্যাঞ্চার দিয়ে আক্রমণ করে। ১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে বিধ্বস্ত এবং শীতে কাবু জার্মান বাহিনীকে রাজধানী মস্কো থেকে ২৫০ মাইলের বেশি দূরে বিতাড়িত করা হয়। ডজন-ডজন শহর এবং হাজার-হাজার গ্রাম মুক্ত হয়। দক্ষিণ ফ্রন্টে এবং লেনিনগ্রাদের কাছে শত্রুর উপর প্রচণ্ড আঘাত হানা হয়। বিভিন্ন ফ্রন্টে সোভিয়েত বাহিনীর অগ্রগতি সাধিত হতে থাকে ।
প্রকাশ পায়। ভের্মাখটের অর্থাৎ জার্মান জি ধূলিসাৎ করে দেয়, বানচাল হয় চার কাছে জার্মানদের পরাজয় ছিল ঘটনা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের মণকারীদের পরাস্ত করার জন্য বিশিষ্ট না করা হয়, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের
খ্যাত স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ এখানে তুলে
ঘটের ৬ষ্ঠ আর্মি এবং চতুর্থ প্যানজার আর্মি সালের নভেম্বরে জার্মানরা দক্ষিণ ফ্রন্টে ভিযান শুরু করে। জার্মানরা প্রায় ১০ লক্ষ জন্য একটা মরিয়া চেষ্টা চালায়। এ জার্মান , রুমানীয় এবং একটি হাঙ্গেরীয় বাহিনী য়েত প্রতিরোধ বাহিনীর সৈন্যদের অপেক্ষা কল্পনা ছিল ভল্গা ও ককেশাস অঞ্চল ধরে াবে। এ অঞ্চল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাহ হতো। জার্মান বাহিনী ডন উপত্যকায় ককেশাস ও কৃষ্ণসাগরের দিকে অপর শাখা রুতে সোভিয়েত আর্মির প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেঙে কে এবং উত্তর ককেশাসে। কিন্তু রেড আর্মি দেয়।
গড়াইটা হয়েছিল ঐতিহাসিক। নাৎসি বাহিনীকে সাভিয়েত সেনা কমান্ড পরিকল্পনা এঁটেছিল। চগ্রস্ত আর হয়রানি করার সাথে সাথে তাদের * সমাবেশ করে, শেষে দু'দিক থেকে আক্রমণ সোভিয়েত কমান্ডের পরিকল্পনা। স্টালিনগ্রাদের বীর মানুষ-সেখানে জীবনমরণ সংগ্রামে নির্ধারিত শার্ল জুকভের নেতৃত্বে সোভিয়েত আর্মি অনমনীয় গ করে। তারা স্টালিনগ্রাদ রক্ষার জন্য মরণপণ ট রাস্তায় সোভিয়েত বাহিনী গণপ্রতিরোধ চালাতে রড আর্মি নাজি বাহিনীর উপর একটা মরণ আঘাত ডি আর্মির সৈনিকরা ৩ লক্ষের অধিক সৈনিকের শত্রু বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। ১৯৪৩ সালের ৩১ জানুয়ারি জার্মান ৬ষ্ঠ আর্মির ৩,০০,০০০ অধিক সৈন্যের মধ্যে ৯০,০০০ জীবিত সৈন্য আত্মসমর্পণ করতে বাধা হয়। অবশিষ্ট সৈন্য যুদ্ধে নিহত হয়। ৯০,০০০ সৈন্য ও ১৬ জন জার্মান সেনাপতি স্টালিনগ্রাদে রেড আর্মির হাতে বন্দী হয়। ইতিহাসে আর কখনো এমন বিশাল সৈন্যবাহিনী ঘেরাও হয়ে ধ্বংস হয়নি। ভলগা তীরের সোভিয়েত আর্মির এ গৌরবোজ্জ্বল বিজয় দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ এবং সমগ্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই স্রোতের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
৩. কুর্সকের যুদ্ধ
সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধ হলো কুর্সকের যুদ্ধ। ভলগা নদীর তীরে নাৎসিরা পরাজিত হবার পর অন্যান্য ফ্রন্টেও তাদের উপর নব উদ্যমে আঘাত হানা শুরু হয়। রেড আর্মি ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে উত্তর ককেশাস থেকে শত্রুকে বিতাড়িত করে এবং লেনিনগ্রাদের অবরোধের অবসান ঘটায়। সোভিয়েত ভূমি থেকে ব্যাপকহারে শত্রুর বহিষ্কার শুরু হয়ে যায়। এ সময়ের দিকে সোভিয়েত বাহিনী হাঙ্গেরীয় দ্বিতীয় আর্মিকে ধ্বংস করে দেয়। রেড আর্মি ডন নদী থেকে স্টালিনগ্রাদের পশ্চিম দিকে কুর্সক (Kursk) এবং খারকভ পর্যন্ত ৫০০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়। এরপর জার্মান বাহিনী তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য কুর্সক নামক স্থানে সোভিয়েত বাহিনীকে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত হয়। বড় বড় সব পরাজয়ের ফলে জার্মানির পরাক্রম আর সামরিক মর্যাদা হ্রাস পায়। জানোয়ারটা খোড়া হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তখনও মুখ খুবড়ে পড়েনি। হিটলার জার্মানিতে নয়া সৈন্যসমাবেশ করেছিল, ফ্রন্টে গড়ে তুলেছিল নয়া-নয়া বাহিনী, সেগুলোকে দিয়েছিল শক্তিশালী ট্যাংক, তারপরে ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে আর একটা প্রবল আক্রমণ-অভিযান চালাবার চেষ্টা করেছিল। এবার নাৎসিরা মস্কোর দক্ষিণে কুর্সক অঞ্চলে ফ্রন্টের একটা সংকীর্ণ ভাগে শক্তি কেন্দ্রীভূত করেছিল। এখানে তাদের ছিল ৫০টি ডিভিশন, তার মধ্যে কুড়িটা সাঁজোয়া কিংবা মোটর চালিত তারা ভেবেছিল, আঘাতে-আঘাতে সোভিয়েত রক্ষাব্যূহ ভেঙে ঢুকে পড়বে ভেতরে। উদ্যোগ চলে যাবে তাদের হাতে, যুদ্ধের গতিপথ বদলে যাবে তাদের অনুকূলে ।
শত্রুর পরিকল্পনাটার মর্ম সোভিয়েত কমান্ড বুঝে ফেলেছিল। শুরু হলো কুর্সকের লড়াই। এটা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লড়াই। উভয় পক্ষই নামিয়েছিল বিপুলসংখ্যক বিমান, ট্যাংক আর কামান। দুর্ভেদ্য সোভিয়েত রক্ষাব্যূহের উপর আছড়ে পড়ে ভেঙে গেল জার্মান আক্রমণ অভিযান। ১৯৪৩ সালের আগস্টে লাল ফৌজ চালায় নিষ্পত্তিকর পাল্টা আক্রমণ। লাল ফৌজ শত্রুকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় নিপার নদীর ওপারে; দনেৎস অববাহিকা এবং নিপারের পূর্বে গোটা ইউক্রেন থেকে নাৎসিদের তাড়িয়ে দেয়। ১৯৪৩ সালের আগস্টে কুর্সকের যুদ্ধে রাশিয়ায় জার্মানির শেষ কৌশলগত আক্রমণের অবসান হয়। ১৯৪৩ সালের নভেম্বর মাসের গোড়ায় কিয়েভ মুক্ত হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে চূড়ান্ত বার্লিনের যুদ্ধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের মাধ্যমে মহা দেশপ্রেমিক যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সোভিয়েত লাল ফৌজের চূড়ান্ত আক্রমণ অভিযান শুরু হয়। পশ্চিম রণাঙ্গনে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ও পূর্ব দিকে সোভিয়েত শক্তির চাপে হিটলারের বাহিনী ভয়ানক বিপদে পড়ে যায়। যুদ্ধের গতি মিত্রশক্তির অনুকূলে যায়। বিভিন্ন ফ্রন্টে জার্মান বাহিনী পশ্চাদপসরণ করতে শুরু করে। ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাভিয়েত বাহিনী জার্মান বাহিনীকে বল্কান রাষ্ট্রসমূহ থেকে বিতাড়িত করে। এরপর সোভিয়েত বাহিনী পোল্যান্ড অভিমুখে অগ্রসর হয় এবং জার্মানদের হটিয়ে ১৯৪৫ সালের ১৭ জানুয়ারি পোল্যান্ডের রাজধানী ‘ওয়ারশ’ অধিকার করে বার্লিন অভিমুখে
আসর হয়। লাল ফৌজ ফেব্রুয়ারি নাগাদ বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ দখল করে ভিসটুল ওডারনিস নদী বরাবর অগ্রসর হয়। এ সময় সোভিয়েত আর্মির স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল মধ্য জার্মানিসহ যতটা সম্ভব পশ্চিম ইউরোপে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর কাছাকাছি পৌছে যাওয়া। সোভিয়েত বাহিনী দানিয়ুব অববাহিকা দখল করে ১৯৪৫ সালের ৩০ মার্চ অস্টিয়ায় প্রবেশ করে এবং ১৩ এপ্রিল রাজধানী ভিয়েনা দখল করে বার্লিনের দিকে মুখ T ফেরায় এবং দ্রুত ছুটতে থাকে। ১৬ এপ্রিল তারা বার্লিন আক্রমণ করে। ১০ দিনের
প্রচণ্ড যুদ্ধের পর লাল ফৌজ ২৪-২৫ এপ্রিল গোটা বার্লিন নগরীকে ঘেরাও করে ফেলে। ভয়ানক যুদ্ধের পর ২৯ ও ৩০ এপ্রিল সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনের কেন্দ্রে প্রবেশ করে, এডলফ হিটলার ৩০ এপ্রিল ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন এবং সাইয়ানাইড খেয়ে এবং গুলি করে আত্মহত্যা করেন এবং গ্যাসোলিন দিয়ে নিজেদের দেহ পুড়িয়ে ফেলেন। সোভিয়েত সৈনিকেরা বিজয়ের লাল ঝাণ্ডা রাইখস্ট্যাগের শীর্ষে উড়িয়ে দেয় । সোভিয়েত বাহিনী ইয়াল্টা চুক্তি অনুযায়ী বার্লিনসহ পূর্ব জার্মানি দখল করে। সোভিয়েত লাল ফৌজ হিটলারের বাহিনীকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। নাৎসিবাদ পরাস্ত হয়। জার্মানি আত্মসমর্পণ করে। ১৯৪৫ সালের ৮ মে জার্মান সেনাপ্রধান জেনারেল আলফ্রেড জোডল (Alfred Jodl) মিত্র বাহিনীর নিকট নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং পরের দিন ৯ মে আলাদা করে বার্লিনে সোভিয়েত জেনারেল জুবকভের সাথে জার্মান বাহিনীর ফিল্ড মার্শাল উইলহেল্‌ম কিটেল (Wilhelm Keitel) আত্মসমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এভাবে বার্লিনের পতনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধের জয়যুক্ত পরিসমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। পৃথিবীতে বহুপ্রতীক্ষিত শান্তি আসে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]