বার ভ‚ঁইয়া কারা এবং তাঁদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা
সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবা বা প্রদেশে পরিণত হলেও এখানে তখন
কার্যকরভাবে মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। উত্তর-পশ্চিম বাংলার নগর ও দুর্গ এলাকায় মুঘল
শাসন সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলার বিখ্যাত জমিদারগণ মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এসব জমিদারদের নিজস্ব নৌবহর ও সৈন্যদল ছিল। তাঁরা সম্মিলিতভাবে মুঘল আধিপত্যের বিরুদ্ধে সম্রাট
আকবরের খ্যাতনামা সমরনায়কদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। বাংলার ইতিহাসে এসব জমিদাররা বার ভ‚ঁইয়া
নামে খ্যাত। বার ভ‚ঁইয়া বলতে বারজন প্রসিদ্ধ ভ‚-স্বামী বুঝালেও আসলে এসব জমিদারদের সংখ্যা ছিল
অনেক। মুসলমান এবং হিন্দুÑ উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন এ জমিদারগণ।
মুঘল বিজয়ের প্রাক্কালে অনেক ভ‚ঁইয়া বা জমিদার বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে শাসন করতেন।
এদের অনেকে বিভিন্ন জায়গীরদার বা ইজারাদারদের বংশধর ছিলেন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে জমিদারীর
মালিক হয়েছেন। তাছাড়া আফগানদের পতনের পর কোন কোন পাঠান সর্দার বাংলায় আশ্রয় নেন এবং
বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা স্বাধীন জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। ড. আবদুল করিমের মতে, বাংলায় বার ভ‚ঁইয়াদের
উৎপত্তি হয় আফগান শাসনামলে। শেরশাহের পুত্র ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর দিল্লিতে যেমন রাজনৈতিক
বিশৃ´খলা দেখা দেয়, বাংলায়ও তদ্রুপ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। এরূপ পরিস্থিতিতে উদ্ভব হয়
বার-ভঁ‚ইয়াদের। গৌড় বা তান্ডার কেন্দ্রীয় শাসনের প্রতি অনুগত থাকলেও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাধীন
ছিলেন। পরবর্তীতে এ জমিদাররা মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
বার ভ‚ঁইয়াদের নেতৃত্ব দেন সোনারগাঁও-এর জমিদার ঈশা খান এবং পরে তাঁর পুত্র মুসা খান। ভাওয়াল
অঞ্চলে গাজী পরিবার ছাড়াও অন্য দু'জন বড় জমিদার ছিলেন মজলিস পরতাপ ও মজলিস কুতুব। ফতেহ
খান দক্ষিণ সিলেটে, করিমদাদ মুসাজাই ও ইব্রাহিম মোড়ল কিশোরগঞ্জে, আনোয়ার খান বানিয়াচঙ্গে, তাজ
খান ও সলিম খান হিজলী এবং শামস খান বীরভ‚মের জমিদার ছিলেন। পাবনা অঞ্চলে মাসুম খান কাবুলী
ও তাঁর পুত্র মির্যা মুমিন শক্তিশালী জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আফগান দলনেতাদের মধ্যে সাহসী
ব্যক্তিত্ব ওসমান খান লোহানী এবং বায়জিদ কররানী শ্রীহট্ট অঞ্চলে সামন্ত শাসকের মতো প্রভাব বিস্তার
করতে সক্ষম হন। বার ভ‚ঁইয়াদের মধ্যে হিন্দু ভ‚স্বামীরাও ছিলেন। এদের মধ্যে যশোহরের প্রতাপাদিত্য,
বিক্রমপুরের চাঁদ রায় ও কেদার রায়, শাহাজাদপুরের রাজা রায়, চান্দ্রপ্রতাপ বা মানিকগঞ্জের বিনোদ রায় ও
মধু রায়, চন্দ্রদ্বীপের পরমান্দ রায়, ভুলুয়ার অনন্ত মানিক্য ও লক্ষণ মানিক্য, বাঁকুড়ার বীর হামির ছিলেন
প্রধান। বাংলায় মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এসব জমিদারগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সোনারগাঁও-এর
জমিদার ঈসা খানের নেতৃত্বে জমিদারদের বাহিনী সম্রাট আকবরের সেনাপতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু
ক্ষেত্রে তাঁদের পরাভ‚ত করেন। সেজন্য সম্রাট আকবরের শাসনকালে বাংলার অধিকাংশ জায়গায় মুঘল
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।
সুবাদার ইসলাম খানের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
বার ভ‚ঁইয়াদের দমন করে বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা সম্রাট জাহাঙ্গীরের কৃতিত্বপূর্ণ কাজ। পর পর
কয়েকজন সুবাদার বিদ্রোহী সামন্ত ভ‚স্বামীদের দমন করতে ব্যর্থ হলে সম্রাট জাহাঙ্গীর অবশেষে ইসলাম
খান চিশতীকে সুবাদার নিয়োগ করে বাংলায় পাঠান। ফতেহপুর সিক্রীর শেখ সলিম চিশতীর দৌহিত্র
ইসলাম খান ছিলেন একজন সুনিপুণ যোদ্ধা ও বিচক্ষণ শাসনকর্তা। দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি সহজেই
অনুধাবন করেন যে, বার ভ‚ঁইয়াদের নেতা মুসা খানকে দমন করতে পারলে তাঁর পক্ষে অন্যান্য জমিদারদের
পরাভ‚ত করা সহজ হবে। তাছাড়া বাংলার ভৌগোলিক অবস্থার বিবেচনায় তিনি উপলব্ধি করেন যে,
তখনকার রাজধানী প্রদেশের এক প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় সেখান থেকে সমগ্র বাংলার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা
ছিল অসম্ভব। তাই তিনি রাজমহল হতে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। নদীমাতৃক বাংলায়
জমিদারদের নৌশক্তির মোকাবিলা করার জন্য তিনি মুঘল নৌবহরকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করেন।
একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করে একদিকে তিনি ক‚টনীতির মাধ্যমে জমিদারদের ঐক্য ভাঙ্গার চেষ্টা
করেন, অন্যদিকে স্থল ও জল উভয় পথেই সামরিক অভিযানের ব্যাপক আয়োজন করেন।
বার ভ‚ঁইয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান
ইসলাম খান যখন রাজমহল হতে ঘোড়াঘাট পৌঁছেন তখন যশোহরের জমিদার প্রতাপাদিত্য স্বেচ্ছায়
মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করেন। মুঘল আক্রমণে ভীত হয়ে বাঁকুড়ার বীর হামির, বীরভ‚মের শামস খান ও
হিজলীর সলিম খান সম্রাট জাহাঙ্গীরের আনুগত্য মেনে নেন। কিছুদিন ব্যর্থ প্রতিরোধের পর ভ‚ষণা অঞ্চল
অর্থাৎ ফরিদপুরের জমিদার সত্রজিৎ পরাজয় স্বীকার করেন। সত্রজিৎ-এর সহযোগিতায় মুঘল বাহিনী
মজলিস কুতুবের ফতেহবাদও অধিকার করে।
১৬০৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইসলাম খান ঘোড়াঘাট হতে পাবনার শাহজাদপুর পৌঁছেন এবং বার
ভ‚ঁইয়াদের নেতা মুসা খানের সুরক্ষিত যাত্রাপুর দুর্গ আক্রমণ করেন। এ অঞ্চলের ডাকচরায় জমিদারদের
আরো একটি দুর্গ ছিল। মুসা খানের নেতৃত্বে জমিদাররা মুঘল বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কিন্তু
শেষ পর্যন্ত মুঘলদের তীব্র আক্রমণে উভয় দুর্গের পতন ঘটে এবং মুসা খান ও তাঁর মিত্ররা পলায়ন করতে
বাধ্য হন। অতপর ইসলাম খান চিশতি ঢাকার দিকে অগ্রসর হন এবং বিনা বাধায় শহরে প্রবেশ করেন। এ
সময় তিনি ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন (১৬১০ খ্রিস্টাব্দে) এবং এর নামকরণ করেন
জাহাঙ্গীরনগর। রাজধানী শহরের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদিও তিনি গ্রহণ করেন।
ঢাকা মুঘল অধিকারে আসার পর ইসলাম খান সোনারগাঁও অভিমুখে অগ্রসর হন। এ সময়ে মুসা খান ও
তাঁর মিত্ররা লক্ষ্যা নদীতে মুঘলদের বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হন। তাঁরা নদীর পূর্ব তীরের দুর্গগুলো সুরক্ষিত
করেন। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে মুঘলদের সাথে মুসা খান ও অন্যান্য জমিদারদের নৌযুদ্ধ শুরু হয়।
মুঘল বাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে মুসা খানের কত্রাবু দুর্গ অধিকার করে। এরপর তাঁরা কদমরসুল
সহ মুসা খানের আরো কয়েকটি দুর্গ দখল করে। অবস্থার বিপর্যয়ে মুসা খান সোনারগাঁও প্রত্যাবর্তন
করেন। কিন্তু রাজধানী নিরাপদ নয় ভেবে তিনি মেঘনা নদীতে অবস্থিত ইব্রাহিমপুর দ্বীপে আশ্রয় নেন।
মুঘল বাহিনী সোনারগাঁও দখল করে নেয়। মুসা খানের মিত্রবাহিনীভূক্ত কয়েকজন জমিদার যেমন, বাহাদুর
গাজী, মজলিস কুতুব ও শামসুদ্দিন বাগদাদী এ সময়ে মুঘল সৈন্যদলের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। মুঘল
সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করায় ইসলাম খান তাঁদেরকে স্ব স্ব জমিদারী জায়গীর স্বরূপ ভোগ করার সদয়
অনুমতি দেন। এ অবস্থায় বার ভুঁইয়াদের প্রধান নেতা মুসা খান অসহায় হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনিও
পরাজয় স্বীকার করেন এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের আনুগত্য মেনে নেন।
মুসা খানের আÍসমর্পণের পর অন্যান্য বিদ্রোহী জমিদারদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে এবং তাঁরা মুঘল আধিপত্য
মেনে নেয়। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন চন্দ্রদ্বীপ বা বাক্লার জমিদার রামচন্দ্র। যশোহরের জমিদার
প্রতাপাদিত্য প্রথম দিকে মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করলেও পরে বিরোধিতা করেন। তাঁর ছিল এক বিশাল
রাজ্য, অনেক রণপোত এবং সৈন্যদলও ছিল অনেক বড়। সলকা নামক স্থানে তৈরি তাঁর দুর্গকে তিনি
দুর্ভেদ্য ভেবেছিলেন। ইসলাম খান তাঁর বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেন।
সেনাপতি গিয়াস খান ও মির্যা নাথনের অধীনে মুঘল বাহিনী প্রতাপাদিত্যের সলকা দুর্গ অবরোধ করলে
প্রতাপাদিত্যের পুত্র উদয়াদিত্য বাধা দিয়ে ব্যর্থ হন। পরে প্রতাপাদিত্য কাগরঘাটা দুর্গে সৈন্য সমাবেশ করে
মুঘলদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এখানেও শোচনীয় পরাজয় বরণ করে শেষে তিনি আÍসমর্পণে বাধ্য
হন। বন্দি অবস্থায় তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। প্রতাপাদিত্যের রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয় এবং সেনাপতি
গিয়াস খানকে যশোহরের শাসক নিযুক্ত করা হয়। ভুলুয়ার জমিদার অনন্ত মানিক্য মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার
না করায় তাঁর বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরিত হয়। মুঘল বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তিনি পরাজিত হন এবং
শেষে আরাকানে পলায়ন করেন। তাঁর শাসিত অঞ্চলও মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
বর্তমান সিলেট জেলায় অবস্থিত বুকাইনগরের আফগান জমিদার ওসমান খান লোহানী ছিলেন মুঘল
বিরোধী শক্তির অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। মুসা খানের বশ্যতা স্বীকারের পরও তিনি মুঘল আধিপত্য মেনে
নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর বুকাইনগর রাজ্য খুব বিশাল ছিল না, কিন্তু তিনি ছোট বড় কয়েকটি দুর্গ
নির্মাণ করে তাঁর রাজ্যকে দুর্ভেদ্য করে রাখেন। এবার ইসলাম খান ওসমানের দিকে দৃষ্টি দেন এবং তাঁর
বিরুদ্ধে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। কয়েকটি খন্ড যুদ্ধের পর ওসমান বুকাইনগর ছেড়ে পালিয়ে যান
এবং সিলেটের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ঘাঁটি স্থাপন করেন। মুঘল বাহিনী বুকাইনগর দুর্গ অধিকার করতে
সক্ষম হলেও ওসমান খানকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করতে ব্যর্থ হয়। পরের বছর ইসলাম খান সুজাত খানের
নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী ওসমানের বিরুদ্ধে পাঠান। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে বর্তমান
মৌলভীবাজার জেলার দৌলতপুর নামক স্থানে উভয়পক্ষে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ওসমান খান
পরাজিত ও নিহত হন। বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর সৈন্যরা অনন্যোপায় হয়ে সুজাত
খানের নিকট আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। শ্রীহট্টের আরেকজন আফগান জমিদার বায়জিদ কররানীও তখন
মুঘল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ফলে সমগ্র সিলেট অঞ্চল মুঘল কর্তৃত্বাধীনে আসে।
ইসলাম খানের সুবাদার নিযুক্তির মাত্র ৪ বছরের মধ্যে বাংলার বিশাল এলাকায় মুঘল বিজয় সূচিত হয়।
উত্তরে ঘোড়াঘাট থেকে দক্ষিণে সমুদ্র এবং পশ্চিমে রাজমহল থেকে পূর্বদিকে সিলেট ও দক্ষিণ-পূর্বে ফেনী
নদী পর্যন্ত সমগ্র ভ‚ভাগ মুঘল শাসনাধীনে আসে। এর পরে ইসলাম খান উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী কোচবিহার,
কামরূপ ও কাছাড়ের প্রতি দৃষ্টি দেন। কোচবিহারের রাজা ল²ীনারায়ণ মুঘলদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন
করেন। কিন্তু কামরূপের রাজা পরীক্ষিত নারায়ণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় ইসলাম খান কামরূপ জয়
করেন। তিনি ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে কাছাড় রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। কাছাড়ের রাজা
প্রতাপনারায়ণ কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুঘল সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করেন। ফলে কাছাড়ও বিজিত
হয়। ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে সুবাদার ইসলাম খান মৃত্যুমুখে পতিত হন।
ইসলাম খানের কৃতিত্ব
বার ভ‚ঁইয়াদের দমন করে বাংলায় মুঘল অধিকার প্রতিষ্ঠা সুবাদার ইসলাম খানের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি।
আকবরের সময়ের বিখ্যাত সেনাপতিরা বাংলায় মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার পরিচয় দেন। কিন্তু
ইসলাম খান মাত্র চার বছরের মধ্যে সমগ্র বাংলা জয় করে মুঘল শাসন সুদৃঢ় করেন। যুদ্ধ পরিকল্পনায় তিনি
যেমন নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন, তেমনি তাঁর সাংগঠনিক শক্তিও প্রশংসনীয় ছিল। একজন বিচক্ষণ রণকুশলী ও
শাসক হিসেবে ইতিহাসে তাঁর স্থান উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। রাজমহলে এসেই তিনি বাংলার ভ‚-প্রকৃতি, নদ-
নদীর গতিপথ এবং বিভিন্ন স্থানের সামরিক গুরুত্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। নদীমাতৃক
বাংলায় বার ভূঁইয়াদের দমনের উদ্দেশ্যে তিনি নৌবাহিনী শক্তিশালী করেন এবং পূর্ব বাংলার ঢাকায়
রাজধানী স্থানান্তর করেন। সামরিক অভিযানের পাশাপাশি ক‚টকৌশলের মাধ্যমেও তিনি জমিদারদের শক্তি
খর্ব করার চেষ্টা করেন। বাংলায় মুঘল আধিপত্য স্থাপনে তাঁর গৃহীত ব্যবস্থাদি বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হয়।
সারসংক্ষেপ
সম্রাট আকবর বাংলায় মুঘল অধিকার ও মুঘল শাসনের সূত্রপাত করেন। কিন্তু তাঁর বিখ্যাত সেনাপতিরা
অনেক চেষ্টা করেও সমগ্র বাংলায় মুঘল অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বার ভ‚ঁইয়া নামে পরিচিত
বাংলার পুর্বাঞ্চলের সামন্ত জমিদাররা মুঘলদের প্রতিরোধ করেন। এদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কারণে
আকবরের সময়কালে মুঘল শাসন বাংলার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে। বার ভ‚ঁইয়াদের
সম্পূর্ণভাবে দমন করার কৃতিত্ব সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে মুঘল সুবাদার ইসলাম খান চিশতীর। একটি
সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে ইসলাম খান তাঁদেরকে পদানত করার কাজটি সম্পন্ন করেন। সেজন্য তিনি
প্রথমে বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। পরবর্তীকালে তিনি পূর্ব বাংলার
বিভিন্ন অঞ্চলের জমিদারদের বিরুদ্ধে একে একে সমর অভিযান পরিচালনা করেন। জমিদারদের
শক্তিকে বিধ্বস্ত করে তিনি এ অঞ্চলে মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। সমগ্র বাংলায় মুঘল আধিপত্য
প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান উল্লেখ্যযোগ্য ও প্রশংসনীয়।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১. আবদুলকরিম, বাংলার ইতিহাস (১২০০Ñ১৮৫৭ খ্রি.)।
২. ড. মুহম্মদ আবদুর রহিম ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস।
৩. গঁযধসসবফ গড়যধৎ অষর, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব গঁংষরসং ড়ভ ইবহমধষ, ঠড়ষ. ১(অ)
৪. ঔ.ঘ. ঝধৎশধৎ, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ইবহমধষ, ঠড়ষ. ওও.
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ঈসা খান কোন অঞ্চলের জমিদার ছিলেন?
(ক) সপ্তগ্রাম (খ) ভুলুয়া
(গ) সোনারগাঁও (ঘ) চন্দ্রদ্বীপ।
২। বার ভ‚ঁইয়াদের মধ্যে যশোহরের জমিদার কে?
(ক) সত্রজিত (খ) কেদার রায়
(গ) মুসা খান (ঘ) প্রতাপাদিত্য।
৩। ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপিত হয় কত খ্রি.?
(ক) ১৬০৮ খ্রি. (খ) ১৬১০ খ্রি.
(গ) ১৬১১ খ্রি. (ঘ) ১৬১৩ খ্রি.।
৪। ভুলুয়ার জমিদার অনন্ত মানিক্য মুঘলদের কাছে পরাজিত হয়ে কোথায় পলায়ন করেন?
(ক) আরাকানে (খ) আসামে
(গ) ত্রিপুরায় (ঘ) ঢাকায়।
৫। ল²ীনারায়ণ কোন রাজ্যের রাজা ছিলেন?
(ক) কাছাড় (খ) কোচবিহার
(গ) আসাম (ঘ) কামরূপ।
৬। সুবাদার ইসলাম খান কত বছর বয়সে মারা যান?
(ক) ৩৩ বছর (খ) ৩৭ বছর
(গ) ৪২ বছর (ঘ) ৪৩ বছর।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। বাংলার বার ভ‚ঁইয়া বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়?
২। বার ভ‚ঁইয়াদের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল?
৩। বাংলার কোন কোন অঞ্চলে বার ভ‚ঁইয়াদের জমিদারী প্রতিষ্ঠিত ছিল?
৪। বার ভ‚ঁইয়াদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণের পূর্বে সুবাদার ইসলাম খান কি ধরনের প্রস্তুতি ও
পরিকল্পনা গ্রহণ করেন?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। কারা বার ভূঁইয়া নামে বাংলার ইতিহাসে পরিচিত? কিভাবে তাঁদের উৎপত্তি হয়?
২। সুবাদার ইসলাম খান কিভাবে বার ভ‚ঁইয়াদের দমন করেছিলেন?
৩। বার ভূঁইয়া বলতে কাদেরকে বুঝায়? কিভাবে তাঁদেরকে দমন করা হয়?
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত