মুর্শিদকুলী খান
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনের অভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের যে অবক্ষয় শুরু হয় সে
সময় বাংলা প্রদেশে স্বীয় প্রতিভা ও কর্মদক্ষতা গুণে যিনি নিজেকে একজন সফল শাসনকর্তা হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি হলেন বাংলার দিওয়ান এবং মুঘল সুবাদার মুর্শিদকুলী খান। সাধারণ অবস্থা থেকে
ধাপে ধাপে উন্নতি লাভ করে শেষে ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলী বাংলার সুবাদার পদে অধিষ্ঠিত হন। রাজস্ব
ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তিনি স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন এবং কর্মদক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার দ্বারা
বাংলার সুবাদার পদে উন্নীত হন। তাঁর জন্ম দাক্ষিণাত্যের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। ছোট বেলায় হাজী সফী
ইস্পাহানি নামে পারস্যের এক মুসলমান তাঁকে কিনে নেন এবং তাঁর নাম দেন মুহাম্মদ হাদী। হাজী শফির
নিকট তিনি রাজস্ব বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন এবং এক সময় তাঁর সঙ্গে ইরান চলে যান। ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে
হাজী শফির মৃত্যু হলে মুহাম্মদ হাদী দাক্ষিণাত্যে চলে আসেন। রাজস্ব বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনে
সম্রাট আওরঙ্গজেব প্রথমে তাঁকে হায়দ্রাবাদের দিওয়ান এবং পরে ইয়ালকুন্ডলের ফৌজদার নিযুক্ত করেন।
সম্রাট তাঁর কর্মদক্ষতায় বিমুগ্ধ হয়ে তাঁকে করতলবখান উপাধি দেন এবং ১৭০০ খ্রি. তাঁকে বাংলার মত
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের দিওয়ান নিযুক্ত করে পাঠান। সে সময় বাংলার সুবাদার ছিলেন শাহজাদা আজিম
উদ্দিন। মুহাম্মদ হাদীকে একই সঙ্গে মকসুদাবাদ, বর্ধমান ও মেদিনীপুরের ফৌজদারের দায়িত্বও দেয়া হয়।
১৭০১ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে উড়িষ্যা প্রদেশের দিওয়ান হিসেবে নিয়োগ করেন এবং
মুর্শিদকুলী খান উপাধিতে ভ‚ষিত করেন। মুর্শিদকুলীর বিশ্বস্ততা ও কর্মদক্ষতার ওপর সম্রাটের পূর্ণ আস্থা
ছিল। সেজন্য আওরঙ্গজেব তাঁর ওপর বাংলা সুবার দায়িত্ব ছাড়াও অন্য প্রদেশের শাসনকার্যের ভার দেন।
১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে উড়িষ্যার নায়েব সুবাদার এবং পরের বছর বিহারের দেওয়ান নিযুক্ত করা হয়।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বের শেষ পর্যন্ত মুর্শিদকুলী বাংলার দিওয়ান ছিলেন এবং এ সময় রাজস্ব বিষয়ে
তিনি বিশেষ পারদর্শিতা ও সাফল্যের পরিচয় দেন। তাঁর চেষ্টায় পূর্বেকার রাজস্বের ঘাটতি দূর হয় এবং
রাজস্ব উদ্বৃত্তে পরিণত হয়। প্রতি বছর এক কোটি টাকার ওপর রাজস্ব আদায় করে তিনি সম্রাটকে
দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করেন। ফলে সম্রাট তাঁর ওপর খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন, তাঁর মর্যাদা
বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অতিরিক্ত দায়িত্বও তাঁকে প্রদান করা হয়। কিন্তু সুবাদার শাহজাদা আজিম উদ্দিনের
সঙ্গে মুর্শিদকুলীর সম্পর্ক ভাল না থাকায় একবার তাঁর প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র ঘটে। সুবাদারের অবৈধ বাণিজ্যে
অর্থ উপার্জনের বিরোধিতা করায় তিনি মুর্শিদকুলীর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় একদল
সৈন্য তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে একদিন দিওয়ানের পথ রোধ করার চেষ্টা করে। মুর্শিদকুলী উক্ত
ঘটনার জন্য সুবাদারকে দায়ী করেন এবং সম্রাটের অনুমতি নিয়ে তিনি রাজস্ব দফতর ঢাকা থেকে
মকসুদাবাদ স্থানান্তর করেন (১৭০৩ খ্রি:)। মুর্শিদকুলীর নামানুসারে এর নাম রাখা হয় মুর্শিদাবাদ।
১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সিংহাসন নিয়ে মুঘলদের মধ্যে উত্তরাধিকারের লড়াই শুরু
হয়। এ সময় দুই বছরের বেশি সময়কালে মুর্শিদকুলী খানকে বাংলার দিওয়ানের পদ থেকে অপসারণ করা
হয়। ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে পুনরায় বাংলার দিওয়ান নিয়োগ করা হয়। ফররুখশিয়ার যখন সম্রাটের পদে
আসীন হন (১৭১৩ খ্রি:), তখন মুর্শিদকুলীকে বাংলার নায়েব সুবাদারের দায়িত্ব দেয়া হয়। এক বছর পর
তিনি উড়িষ্যার সুবাদারীর পদ লাভ করেন এবং তাঁকে জাফর খান উপাধি দেয়া হয়। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে
মুর্শিদকুলী বাংলার সুবাদার হন। কার্যত এ সময় থেকেই বাংলার নবাবী আমলের শুরু।
রাজস্ব প্রশাসনে মুর্শিদকুলী যেমন দক্ষ ছিলেন, সুবাদার হিসেবেও তিনি তেমনি যোগ্যতার পরিচয় দেন।
তাঁর সুশাসনে বাংলায় নিরবচ্ছিন্ন শান্তি বিরাজমান ছিল। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের অভ‚তপূর্ব উন্নতি হয়।
শাসনকার্যে স্বীয় পরিবার, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এবং অনুগতদের নিযুক্ত করে তিনি সকল ক্ষেত্রে স্বীয়
ক্ষমতা সুদৃঢ় করেন।রাজস্ব বিভাগে হিন্দু কর্মচারীদের প্রাধান্য ছিল। শাসন বিভাগ, বিচার ও সেনাবাহিনীতে
মুসলমানগণ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো লাভ করেন। মুর্শিদকুলী একজন প্রজাহিতৈষী ও ন্যায় পরায়ণ শাসক
ছিলেন। তাঁর শাসনে অতি সাধারণ প্রজাও অত্যাচার হতে নিরাপদ ছিল। অত্যাচারীকে তিনি এরূপ কঠোর
শাস্তি দিতেন যে, কেউ অত্যাচার করার সাহস পেতো না। ঐতিহাসিক সলিমুল্লাহ্ মন্তব্য করেন যে, তাঁর
কঠোর অনুশাসন ও পক্ষপাতহীন বিচারের কারণে বাঘ ও মেষ একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতো এবং বাজপাখি
ও চড়ুই একই নীড়ে বাস করতো। জনগণের মঙ্গলের জন্য তিনি কৃষিপণ্যের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার
ব্যবস্থা নেন। তাছাড়া খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে মজুতদারী নিষিদ্ধ করা হয় এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তির
ব্যবস্থা করা হয়।
মুর্শিদকুলী খানের রাজস্ব সংস্কার
মুর্শিদ কুলী খানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্বপূর্ণ কাজ ছিল রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার। বাংলায় এসে তিনি রাজস্ব
ব্যবস্থার শোচনীয় অবস্থা দেখতে পান। তখন দেশের প্রায় সমগ্র ভ‚ভাগ কর্মচারীদের বেতনের পরিবর্তে
জায়গীর স্বরূপ নির্দিষ্ট ছিল। এর ফলে ভ‚মি রাজস্ব থেকে সরকারের আয় ছিল না বললেই চলে এবং বাণিজ্য
শুল্কই ছিল রাজকোষের আয়ের প্রধান উৎস। তাছাড়া ভ‚মি রাজস্ব নির্ধারণের জন্য ভ‚মি জরিপের কোন
ব্যবস্থা ছিল না। জমিদাররা সরকারকে নির্দিষ্ট রাজস্ব দিতেন এবং তাঁরা প্রজাদের নিকট হতে নিজেদের
নির্ধারিত হারে খাজনা আদায় করতেন। বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থার এ দুর্দশা দেখে তিনি রাজস্ব সংস্কারের
প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন।
প্রথমে তিনি কর্মচারীদের জায়গীরগুলোকে সরকারের খাস জমিতে পরিণত করেন এবং তাদেরকে উড়িষ্যা
প্রদেশে জায়গীর প্রদান করেন। দ্বিতীয়ত, তিনি ভ‚মি জরিপের মাধ্যমে প্রজাদের দেয় খাজনা নির্ধারিত করে
দেন। রাজস্ব আদায়ের জন্য ইজারাদারদের সঙ্গে ভ‚মির বন্দোবস্ত করা হয়। টোডরমলের রাজস্ব ব্যবস্থার
মতো তিনি জমির উর্বরতা শক্তি, কয়েক বৎসরের উৎপন্ন শস্যের বাৎসরিক গড় ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে
এক-তৃতীয়াংশ শস্য ভ‚মিকর হিসেবে নির্ধারণ করেন। এভাবে কয়েক বছরের শস্যের মূল্যের বাৎসরিক গড়
নির্ণয় করে টাকায় বিঘাপতি খাজনার পরিমাণ নিরূপণ করেন। প্রজরা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শস্য বা টাকায়
খাজনা দিতে পারতো। জমিদার বা ইজারাদার কর্তৃক প্রজাদের নিকট হতে নির্ধারিত হারের বেশি ভ‚মিকর
দাবি করা নিষিদ্ধ হয়। সরকার কর্তৃক নিয়োজিত রাজস্ব বিভাগের কর্মচারী আমিলদের রাজস্ব আদায়ের খরচ
হ্রাস করা হয়। ভ‚মি রাজস্ব বন্দোবস্ত ও তা সংগ্রহের নিমিত্তে সমগ্র বাংলাকে ১৩টি চাকলায় ভাগ করা হয়।
মুর্শিদকুলী কর্তৃক প্রবর্তিত উপর্যুক্ত পদ্ধতির রাজস্ব ব্যবস্থা ‘মাল জামিনী' নামে অভিহিত।
মুর্শিদকুলী খান রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় করার জন্য ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
তিনি ইজারাদারদেরকে তাদের ওপর নির্ধারিত রাজস্ব ১২ কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করেন। তিনি
আদায়কৃত সরকারি রাজস্বের হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি যথাযথভাবে গড়ে তোলেন। গ্রাম্য পাটোয়ারী, আমিল,
কানুনগো, দিওয়ান সকলের ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা হয়। রাজস্ব আদায় ও হিসাব রাখার
ব্যাপারে অনিয়ম বা শৈথিল্য উপেক্ষা করা হতো না এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল বলে
জানা যায়। পূর্বে জমিদারদের নিকট হতে যে রাজস্ব আদায় হতো তা অনিশ্চিত ছিল। মুর্শিদকুলীর রাজস্ব
ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ায় সরকারি আয় শুধু নিশ্চিতই হয়নি, বরং তা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। পূর্বে বাংলায়
রাজস্ব ঘাটতি হতো। মাল জামিনী ব্যবস্থা প্রচলনের পর পূর্বেকার রাজস্ব ঘাটতি দূর হয় এবং রাজস্ব খাতে
১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত হয়। মুর্শিদকুলীর রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রজারাও উপকৃত হয়। ইজারাদারগণ নির্দিষ্ট
হারেই খাজনা আদায় করতেন এবং কোনরূপ অতিরিক্ত কর আদায় নিষিদ্ধ ছিল। ফলে প্রজাদের কর দেয়ার
সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে।
কেউ কেউ মুর্শিদকুলী খানের রাজস্ব সংস্কারের বিরূপ সমালোচনা করেছেন। সমসাময়িক ইতিহাস লেখক
সলিমুল্লাহ লিখেন যে, মুর্শিদকুলী রাজস্ব আদায় ও হিসাব রাখার ক্ষেত্রে খুব কড়াকড়ি করতেন। রাজস্ব বাকি
পড়লে তিনি জমিদার, আমিল, কানুনগো ও মুৎসুদ্দিদের দিওয়ানখানায় বন্দি করে রাখতেন। তাদেরকে
বিভিন্ন প্রকারের অমানবিক শাস্তি দানের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। আধুনিককালের ঐতিহাসিকগণ তাঁর
বর্ণনাকে অতিরঞ্জন বলে বিবেচনা করেন। তবে এটা ঠিক যে, মুর্শিদকুলী খেলাপি কিছু কিছু জমিদারদের
শাস্তি দেন। তাদের বদলে তিনি কয়েকজন নতুন হিন্দু জমিদার বা ইজারাদারদের জমি দেন। এতে বাংলায়
এক নতুন জমিদার শ্রেণীর সৃষ্টি হয় এবং বাংলার সমাজ বিন্যাসে পরিবর্তন সাধিত হয়।
বিদেশী বণিকদের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি
মুর্শিদকুলী খান যথার্থই বুঝতে পেরেছিলেন যে, দেশের সমৃদ্ধি বাণিজ্যের উন্নতির ওপর নির্ভর করে।
সেজন্য তিনি সব ধরনের ব্যবসায়ীকে বাণিজ্য প্রসারে উৎসাহ দিতেন। তিনি বিশেষ করে ইরানি বণিকদের
তাদের ব্যবসায়ে উৎসাহ দিতেন ও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাঁর সময় বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের
বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। সম্রাট ফররুখশিয়ার ওলন্দাজ বণিকদের বাণিজ্যিক সুবিধা দেবার স্বার্থে তাদের ক্ষেত্রে
বাণিজ্য শুল্ক ২% ধার্য্য করেন। মুর্শিদকুলী ফরাসি বণিকদেরও অনুরূপ সুবিধা দেন। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে
ইংরেজ বণিকরা মুঘল সম্রাটের নিকট হতে বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করে। বাৎসরিক মাত্র তিন হাজার
টাকার বিনিময়ে তাদেরকে সমগ্র প্রদেশে শুল্কমুক্ত ব্যবসার অধিকার দেয়া হয়। তাছাড়া কলিকাতার সন্নিকটে
৩৮টি গ্রামের জমিদারী সনদ লাভের অনুমতিও তাদের দেয়া হয়। বিদেশী বণিকদের বিভিন্ন বাণিজ্যিক
সুবিধা প্রদান করলেও তারা যেন দেশের স্বার্থ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সুবাদারের কড়া নজর ছিল।
সেজন্য তিনি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ফররুখশিয়ারের ফরমান অনুযায়ী সব সুবিধা দেননি।
মুর্শিদকুলীর কৃতিত্ব
মুর্শিদকুলী খানের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সামান্য অবস্থা হতে উন্নতি সাধন করে
তিনি বাংলার সুবাদার পদে অধিষ্ঠিত হন। দিওয়ানের মতো সুবাদাররূপেও তিনি যথেষ্ট শাসন দক্ষতার
পরিচয় দেন। তাঁর সুশাসনে বাংলায় শান্তি বিরাজমান ছিল। তিনি একজন দক্ষ শাসক ও ন্যায়বিচারক
ছিলেন। সমসাময়িক ইতিহাস লেখক সলিমুল্লাহ লেখেন যে, শায়েস্তা খানের পরে মুর্শিদ কুলীর ন্যায় এরূপ
ধর্মপরায়ণ, বিজ্ঞ, বদান্য, ন্যায়নিষ্ঠ ও প্রজাদরদী শাসনকর্তা দেখা যায়নি। তিনি খুব শিক্ষিত ছিলেন এবং
আলেম ও ধর্মপরায়ণ লোকদের সমাদর করতেন। তাঁর সময়ে বাংলায় কৃষির উন্নতি হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য
বৃদ্ধি পায়, রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতি হয় এবং সুবা বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সমৃদ্ধশালী প্রদেশে পরিণত
হয়। ব্যক্তি জীবনে মুর্শিদকুলী একজন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে
চলতেন। তিনি ছিলেন শিয়া মতাবলম্বী। ঢাকা ও মুর্শিদাবাদে তিনি একটি করে মসজিদ নির্মাণ করেন।
ঢাকার মসজিদখানি বেগম বাজারে অবস্থিত। মুর্শিদাবাদে তিনি একটি কাটরা নির্মাণ করেন। এই মহান
সুবাদার ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর জামাতা সুজাউদ্দিন খান
বাংলার মসনদে আরোহণ করেন।
সারসংক্ষেপ
মুর্শিদ কুলী খান ছিলেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি। স্বীয় প্রতিভা ও যোগ্যতার বলে তিনি ধাপে ধাপে
উন্নতি লাভ করেন এবং বাংলার মতো মুঘল সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রদেশের দিওয়ান এবং
সুবাদারীর দায়িত্ব পান। সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তিনি উন্নতির শিখরে আরোহন
করেন। তিনি ছিলেন একাধারে রাজস্ব সংস্কারক, প্রজাদরদী শাসক, ন্যায় বিচারক এবং অত্যন্ত যোগ্য
ও বিচক্ষণ শাসনকর্তা। তাঁর সময়ে বাংলার কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্পের অভ‚তপূর্ব উন্নতি হয়। রাজস্বের
সংস্কার সাধন করে তিনি বাংলার ঘাটতি রাজস্বের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত সাধনে সক্ষম হন। প্রদেশের সর্বত্র
আইন শৃ´খলার উন্নতি সাধন করে মুঘল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের যুগে তিনি নিরবচ্ছিন্ন শান্তি প্রতিষ্ঠা
করেন। সকল ধরনের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করলেও তিনি ইউরোপীয় বণিকদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধির
ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখেন এবং প্রদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। কঠোর শাস্তির বিধান ও শৃ´খলা
বজায় রেখে তিনি প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। ব্যক্তি জীবনে সংযম ও ধর্মীয় জীবনযাত্রা
পালন করে তিনি নিজেকে উন্নত চরিত্রের অধিকারীরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনকালে বাংলা
প্রদেশের সার্বিক উন্নতি ঘটে এবং ইতিহাসে তিনি নিজেকে একজন সফল শাসকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত
করেন। তাঁর শাসন ব্যবস্থার ভ‚য়সী প্রশংসা করেন সমসাময়িক ইতিহাস লেখকরা।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১। আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাস (১২০০-১৮৫৭ খ্রি.)।
২। ড. মুহম্মদ আবদুর রহিম ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস।
৩। গঁযধসসবফ গড়যধৎ অষর, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব গঁংষরসং ড়ভ ইবহমধষ, ঠড়ষ. ১(অ).
৪। ঔ.ঘ. ঝধৎশধৎ, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ইবহমধষ, ঠড়ষ.ওও.
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। মুর্শিদ কুলী খানের জন্ম কোথায়?
(ক) ইরানে (খ) মুর্শিদাবাদে
(গ) দাক্ষিণাত্যে (ঘ) মুলতানে।
২। মুর্শিদকুলী কখন বাংলার দিওয়ান হন?
(ক) ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে।
৩। মুর্শিদকুলী খান যখন বাংলার দিওয়ান পদ লাভ করেন তখন বাংলা সুবার সুবাদার কে ছিলেন?
(ক) শাহ সুজা (খ) শাহজাদা আজিম উদ্দিন
(গ) হাজী শফি ইস্পাহানী (ঘ) ফররুখ শিয়ার।
৪। কখন বাংলার রাজস্ব দফতর মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়?
(ক) ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে।
৫। মুর্শিদকুলী খান কখন বাংলার সুবাদার হন?
(ক) ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে।
৬। মুর্শিদকুলী খানের রাজস্ব সংস্কার কি নামে অভিহিত?
(ক) মাল জামিনী (খ) পঞ্চসনা বন্দোবস্ত
(গ) সূর্যাস্ত আইন (ঘ) জমিদারী বন্দোবস্ত।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। বাংলার সুবাদারীর দায়িত্ব লাভের পূর্বে মুর্শিদকুলী খান কি কি পদে দায়িত্ব পালন করেন?
২। মাল জামিনী ব্যবস্থার ব্যাখ্যা দিন।
৩। ইউরোপীয় বণিকদের প্রতি মুর্শিদকুলী খানের নীতি কি ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। সুবাদার হিসেবে মুর্শিদকুলী খানের কৃতিত্ব আলোচনা করুন।
২। মুর্শিদকুলী খানের রাজস্ব ব্যবস্থা পর্যালোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত