সিরাজ উদ্দৌলা ও পলাশীর যুদ্ধ
বাংলার মসনদে সিরাজের আরোহণ ও তাঁর প্রাথমিক অসুবিধাসমূহ
১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তাঁর দৌহিত্র সিরাজ উদ্দৌলা
মুর্শিদাবাদের মসনদে বসেন। আলিবর্দী খান মৃত্যুর পূর্বেই সিরাজকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন।
সিরাজ উদ্দৌলার জন্ম হয়েছিল ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে এবং মুর্শিদাবাদের মসনদে বসার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৩
বছর। ইতোপূর্বে মাতামহের সান্নিধ্যে থেকে তিনি সমরনীতি ও শাসন বিষয়ে দীক্ষা লাভ করেন। আলিবর্দী
খান তাঁকে বিহারের নায়েব নাযিম নিযুক্ত করেন। তিনি মাতামহের সঙ্গে মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অংশ
নেন। এসব অভিজ্ঞতা থাকা সত্তে¡ও মসনদে আসীন হয়ে তিনি অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন।
সিরাজের প্রতি বিরূপ থাকায় তাঁর খালা ঘসেটি বেগম সিরাজের এক খালাতো ভাই শওকত জঙ্গকে মসনদে
বসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করেন। তিনি তাঁর বিপুল সম্পদ ও প্রতিপত্তি নতুন নবাবের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা
করেন। অন্যদিকে নবাবের প্রধান সেনাপতি ও বখশী মীর জাফরের ভ‚মিকাও ছিল কুচক্রীর। এদের
প্ররোচনা ও সমর্থনে উৎসাহিত হয়ে পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জঙ্গ সিরাজের প্রতি অবাধ্য হন এবং তাঁর
আনুগত্য মেনে নিতে অস্বীকার করেন।
মসনদে আরোহণের পর সিরাজ উদ্দৌলা যথেষ্ট সাহস ও দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দেন। তিনি উপলব্ধি করেন
যে, ঘরের শত্রুকে দমন করতে না পারলে তাঁর মসনদ নিষ্কণ্টক হবে না। তিনি প্রথমে প্রশাসনে কতিপয়
রদবদল করেন। মীর জাফরকে বখশীর পদ থেকে অপসারণ করে মীর মদনকে ঐ পদে নিযুক্ত করেন।
তাঁর পারিবারিক দেওয়ান মোহনলালকে সচিব পদে উন্নীত করেন এবং তাঁকে মহারাজা উপাধিসহ
প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়। মোহনলালের পিতৃব্য জানকিরামকে ‘রায় রায়ান' উপাধিসহ নিজের দেওয়ান
নিযুক্ত করেন। এরপর নবাব শত্রুদের বিরুদ্ধে আঘাত হানেন। প্রথমে তিনি ঘসেটি বেগমের মতিঝিল প্রাসাদ
অবরোধ করে ধনরতœসহ তাঁকে নবাবের মনসুরগঞ্জ প্রাসাদে নিয়ে আসেন। এরপর নবাব শওকত জঙ্গকে
দমনের উদ্দেশ্যে পূর্ণিয়া অভিমুখে যাত্রা করেন। তিনি সৈন্যবাহিনীসহ রাজমহল পৌঁছলে শওকত জঙ্গ ভয়
পেয়ে নবাবের প্রতি আনুগত্য দেখান। এতে সিরাজ তাঁর সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার করে নেন।
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বিরোধ
নবাব সিরাজ উদ্দৌলা মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে বসার অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির বিরোধ সৃষ্টি হয়। সিরাজ যখন মসনদে বসেন তখন প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী অন্যান্য ইউরোপীয়
বণিকগণ উপঢৌকনসহ তাঁকে অভিনন্দন জানায়, কিন্তু ইংরেজ বণিকরা তা করেনি।এ স্বীকৃত রীতি উপেক্ষা
করায় নবাবের প্রতি অসম্মান করা হয়। দ্বিতীয়ত, কোম্পানির কর্মচারীরা বেআইনীভাবে ব্যক্তিগত ব্যবসায়
লিপ্ত হয় এবং ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাটের দেয়া ফরমানের সুবিধার অপব্যবহার করে। কোম্পানির
গভর্নর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের জন্য তাদেরকে দস্তক দিতেন। এভাবে শুল্ক ফাঁকি দেয়ায়
মুঘল রাজকোষের অসামান্য ক্ষতি হয়।সিরাজ উদ্দৌলা দস্তকের অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিলেও
ইংরেজ গভর্নর ড্রেক সে নির্দেশ উপেক্ষা করেন। তৃতীয়ত, ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে ইংরেজ ও
ফরাসিদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার উপক্রম হয়। এর প্রভাব ভারতে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকদের ওপর এসে
পড়ে। ইংরেজরা এ পরিস্থিতিতে কলিকাতায় এবং ফরাসিরা চন্দননগরে সমরসজ্জা ও দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু
করে। সিরাজ উদ্দৌলা ইউরোপীয় বণিকদের এদেশে দুর্গ নির্মাণের কাজ বন্ধ করার আদেশ দেন। ফরাসিরা
তাঁর আদেশ মেনে নেয়, কিন্তু কলিকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেক নবাবের নির্দেশ অমান্য করে দুর্গ নির্মাণ
কাজ চালাতে থাকে। চতুর্থত, কলিকাতার ইংরেজ কর্তৃপক্ষ নবাবের অবাধ্য ও অপরাধী কর্মচারীদেরকে
আশ্রয় দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে উষ্কানীমূলক কাজে লিপ্ত হয়। জাহাঙ্গীরনগরের দিওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ
নবাবের রাজস্বের বহু অর্থ নিয়ে কলিকাতায় পালিয়ে যায় এবং ইংরেজদের আশ্রয় নেয়। এতে নবাব
ইংরেজদের ওপর ভীষণ ক্রুদ্ধ হন। তিনি বিচারের জন্য কৃষ্ণবল্লভকে তাঁর নিকট প্রত্যার্পণ করতে ইংরেজ
গভর্নর ড্রেককে নির্দেশ দেন।ড্রেক নবাবের আদেশ অমান্য করেন এবং নবাবের দূত নারায়ণ দাসকে
কলিকাতা থেকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন। ইংরেজদের এসব আচরণে নবাব অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।
ইংরেজদের ঔদ্ধত্যে এবং অবাধ্যতায় ক্রোধানি¦ত হয়ে নবাব সিরাজ উদ্দৌলা তাদের শাস্তি দেবার জন্য
অগ্রসর হন।১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন নবাব ইংরেজদের কাসিমবাজার কুঠি অধিকার করে কলিকাতার দিকে
অগ্রসর হন। বাংলার সৈন্যবাহিনীকে বাধা দিতে ব্যর্থ হয়ে ড্রেক অধিকাংশ ইংরেজদেরকে নিয়ে জাহাজে
আশ্রয় নেন। সিরাজ উদ্দৌলা এক রকম বিনা বাধায় কলিকাতা দখল করেন। কয়েকজন আহত ও বন্দি
ইংরেজ সৈন্যকে একটি কক্ষে আবদ্ধ রাখা হয়। এদের মধ্যে ১৬ জন মৃত্যুবরণ করে। হলওয়েল নামক
জনৈক ইংরেজ কর্মচারী এ ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে ‘অন্ধক‚প হত্যা' নামে কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন।
ইংরেজরা কলিকাতা থেকে বিতাড়িত হয়ে ফলতায় আশ্রয় নেয় এবং নবাব তাঁর সেনাপতি মানিক চাঁদকে
কলিকাতার শাসনভার দিয়ে মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তন করেন।
কলিকাতা জয়ের পর নবাব সিরাজ উদ্দৌলা তাঁর প্রতিদ্বন্দ¡ী শওকত জঙ্গকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে পূর্ণিয়ার
দিকে অগ্রসর হন। মনিহারী নামক স্থানে উভয় বাহিনীর যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে শওকত জঙ্গ পরাজিত ও নিহত
হন। ইতোমধ্যে কলিকাতার পতনের খবর মাদ্রাজে পৌঁছলে মাদ্রাজ পরিষদ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ ও
এডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে একদল সৈন্য ও নৌবহর পাঠায়। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর ইংরেজ
নৌবহর ভাগীরথী নদীতে প্রবেশ করে এবং ফলতার ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে এদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
কয়েকদিনের মধ্যেই ক্লাইভ ও ওয়াটসন কলিকাতা আক্রমণ করে তা পুনরুদ্ধার করেন এবং ফোর্ট উইলিয়াম
দুর্গ সুরক্ষিত করেন। কলিকাতার গভর্নর মানিক চাঁদ নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাকতা করেন। তাঁর অধীনে
পর্যাপ্ত সৈন্য থাকা সত্তে¡ও তিনি যুদ্ধ না করে কলিকাতা থেকে সরে যান।
ইংরেজদের কলিকাতা দখলের সংবাদ পেয়ে সিরাজ উদ্দৌলা পুনরায় সসৈন্যে কলিকাতা অভিমুখে অগ্রসর
হন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি নবাবের বাহিনী কলিকাতার উপকণ্ঠে পৌঁছলে ক্লাইভ ও ওয়াটসন
অতর্কিতে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে নবাবের সৈন্যদলে কিছুটা বিশৃ´খলার সৃষ্টি হয়। পাল্টা
আক্রমণের পর ইংরেজ বাহিনী কলিকাতার দুর্গে পলায়ন করে। কলিকাতা জয় করার মতো নবাবের যথেষ্ট
সৈন্যশক্তি ছিল। কিন্তু এ সময় তাঁর সেনাপতিদের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে তিনি সন্দিহান হয়ে ওঠেন। তাছাড়া
তখন আহমদ শাহ আবদালীর বিহার আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ অবস্থায় নবাব ক্লাইভের সঙ্গে
আলীনগরের সন্ধি (৯ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ খ্রি:) নামে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্তমতে নবাব
ইংরেজদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের অঙ্গীকার করেন। তাদের বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যার্পণ করা হয় এবং
কলিকাতার দুর্গ সুরক্ষিত করার অনুমতিও তারা লাভ করে।
ক্লাইভ আলীনগরের সন্ধিকে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি বলেই মনে করেন এবং নবাবের সঙ্গে চূড়ান্ত শক্তি
পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। ইউরোপে তখন ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ শুরু হলে
এর প্রভাব বাংলায়ও এসে পড়ে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে কলিকাতার ইংরেজরা বাংলার নবাবের
নিষেধ অগ্রাহ্য করে ফরাসিদের কুঠি চন্দননগর অধিকার করে নেয়। এ সময় নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে
উৎখাতের জন্য মুর্শিদাবাদে এক গোপন ষড়যন্ত্র দানা বাঁধে। মীর জাফরকে মসনদে বসাবার উদ্দেশ্যে ইয়ার
লুৎফে খান, খাদিম হোসেন, রায় দুর্লভ, রাজবল্লভ, উমিচাঁদ, জগৎশেঠ প্রমুখ সৈন্যাধ্যক্ষ ও সভাসদ ষড়যন্ত্রে
লিপ্ত হয়। এরা নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ক্লাইভ উক্ত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার
জন্য উমিচাঁদকে দালাল নিযুক্ত করেন এবং তাকে ২০ লক্ষ টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ১৭৫৭
খ্রিস্টাব্দের ২৩ এপ্রিল কলিকাতা কাউন্সিল নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার পক্ষে প্রস্তাব পাশ
করে। মীর জাফরের সঙ্গেও ইংরেজদের একটি খসড়া চুক্তি অনুমোদিত হয়।
ষড়যন্ত্রের উদ্যোগ-পর্ব শেষ হলে ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে সন্ধি ভঙ্গের মিথ্যা অভিযোগ এনে ইংরেজ সৈন্য
নিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে যাত্রা করেন। নবাবের হুগলী ও কাটোয়ার ফৌজদাররা তাঁকে বাধা দেয়নি।
ইতোমধ্যে নবাব সিরাজ উদ্দৌলা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও গোপন চুক্তির কথা অবহিত হন। নবাব এক বিশাল
বাহিনী নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং মুর্শিদাবাদ থেকে ২৩ মাইল দক্ষিণে পলাশী প্রান্তরে
শিবির স্থাপন করেন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন ক্লাইভের সৈন্যবাহিনী ও নবাবের মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ
সংঘটিত হয়। মীর জাফর, রায় দুর্লভ ও খাদিম হোসেন তাদের সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধে নিস্ক্রিয় ভ‚মিকা পালন
করে। নবাবের পক্ষে মোহন লাল, মীর মদন ও সিমফ্রে মরণপন লড়াই করেও সেনাপতি মীর জাফরের
বিশ্বাসঘাতকতায় বিজয়ী হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের নামে যে প্রহসন ঘটে তাতে নবাবের বিশ্বস্ত
বাহিনী পলায়ন করে। নবাব পলাশী থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদ প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে তখন ভয়ভীতি
বিরাজ করছিল এবং নতুন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে
নবাব সিরাজ উদ্দৌলা পাটনায় পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি ধরা পড়েন এবং তাঁকে
মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মীর জাফরের পুত্র মিরণের নির্দেশে মুহম্মদী বেগ তাঁকে হত্যা করে (২
জুলাই, ১৭৫৭ খ্রি:)।
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল
পলাশীর যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফল নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পতন। যুদ্ধের পর তাঁকে হত্যা করা হয় এবং মীর
জাফর বাংলার মসনদে বসেন। কিন্তু বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় ইংরেজদের রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি
পূর্বের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ায় মীর জাফর ক্রীড়ানকে পরিণত হন। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ
কোম্পানির বাণিজ্যিক ও সামরিক আধিপত্য বহুগুণে বাড়ে। নতুন নবাবের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ
কোম্পানি প্রচুর অর্থ লাভ করে। উৎকোচ হিসেবেও কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপুল অর্থের মালিক
হয়। শুধুমাত্র বাংলায়ই ইংরেজদের একক বাণিজ্যিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি, চব্বিশ পরগণার জমিদারীও
তারা লাভ করে। পলাশীর পর বাংলার অপ্রতুল সম্পদ ইংরেজদের করায়ত্ত হওয়ায় শীঘ্রই তারা দক্ষিণ ও
উত্তর ভারতে স্বীয় আধিপত্য স্থাপনে সমর্থ হয়। পরবর্তীকালে উপমহাদেশে যে ঔপনিবেশিক শাসন
প্রতিষ্ঠিত হয় এর সূচনা পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমেই ঘটে।
পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ উদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ
পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সেনাপতি মীর জাফরের
বিশ্বাসঘাতকতা। তবে শুধু মীর জাফরের বিশ্বাসভঙ্গের কারণেই সিরাজের পরাজয় ঘটেনি। এজন্য তিনি
নিজেও কিছুটা দায়ী ছিলেন। মসনদে বসার পর সিরাজ উদ্দৌলা যে সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দেন, শেষের
দিকে সেরকম মনোবল তিনি রাখতে পারেননি। আহমদ শাহ আবদালীর বিহার আক্রমণের আশঙ্কা এবং
মীর জাফর সহ সেনাপতি, কর্মচারীদের অকর্মণ্যতা ও বিশ্বাসঘাতকতার কথা জেনে তিনি বিমূঢ় হয়ে
পড়েন। দ্বিতীয়ত, নৌশক্তির দুর্বলতা নবাবের সমর পরিকল্পনাকে ব্যাহত করে। নবাব সিরাজ উদ্দৌলা
ইংরেজদেরকে কলিকাতা থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হলেও ভাগিরথী নদী হতে তাদেরকে বহিষ্কার
করতে পারেননি। যখন ক্লাইভ ও ওয়াটসন মাদ্রাজ হতে সৈন্য ও নৌবাহিনী নিয়ে হুগলী নদীতে অনুপ্রবেশ
করেন তখন তাদেরকে প্রতিরোধ করার মতো নৌশক্তি নবাবের ছিল না। তৃতীয়ত, তিনি যখন ক্ষমতায়
ছিলেন তখন বাংলার পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাঁর অনুক‚লে ছিল না। সংকীর্ণ স্বার্থপরতা, দুর্নীতি,
বিশ্বাসঘাতকতা প্রভৃতিতে সমাজ জীবন সে সময় ছিল কলুষিত। সেনাপতি, মন্ত্রী, কর্মচারী ও সৈন্যরা তুচ্ছ
ব্যক্তিগত স্বার্থে জাতীয় ও জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেন। এসব কারণে তারা রাজদ্রোহী হন এবং বাংলার
স্বাধীনতা বিসর্জন দেন।
সারসংক্ষেপ
নবাব আলিবর্দী খানের উত্তরাধিকারী সিরাজ উদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসার পর একদিকে তিনি রাজ
পরিবারের একাংশের বিরোধিতার সম্মুখীন হন, অন্যদিকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গেও তাঁর
বিরোধ দেখা দেয়। ঘরের শত্রুকে অনায়াসে দমন করা সম্ভব হলেও বিদেশী বণিক ইংরেজদেরকে
চূড়ান্তভাবে প্রতিহত করতে তিনি ব্যর্থ হন। প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের ক্ষমতা লিপ্সা ও
বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধে
সিরাজ উদ্দৌলা পরাজিত হন এবং পরে তাঁকে হত্যা করা হয়। মসনদে বসেন মীর জাফর। ইংরেজরা
এরপর থেকে বাংলায় নিয়ন্ত্রকের ভ‚মিকা পালন করে এবং বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একক
আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। পলাশী যুদ্ধের ফলে বাংলা তথা ভারত উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের
পথ তৈরি হয়।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১। আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাস (১২০০-১৮৫৭ খ্রি.)।
২। ড. মুহম্মদ আবদুর রহিম ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস।
৩। এম.এ. রহিম, বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস (১৭৫৭Ñ১৯৪৭)।
৪। গঁযধসসবফ গড়যধৎ অষর, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব গঁংষরসং ড়ভ ইবহমধষ, ঠড়ষ.১(অ).
৫। ই.ক. এঁঢ়ঃধ, ঝরৎধলঁফফড়ষিধ ্ ঃযব ঊধংঃ ওহফরধ ঈড়সঢ়ধহু.
৬। ঔ.ঘ. ঝধৎশধৎ, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ইবহমধষ, ঠড়ষ. ওও.
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। সিরাজ উদ্দৌলা কত বছর বয়সে মসনদে বসেন?
(ক) ১৭ বছর (খ) ২১ বছর
(গ) ২৩ বছর (ঘ) ২৫ বছর।
২। শওকত জঙ্গ কোথাকার শাসনকর্তা ছিলেন?
(ক) আলীনগর (খ) পূর্ণিয়া
(গ) রাজমহল (ঘ) বিহার।
৩। সিরাজ যখন মুর্শিদাবাদের মসনদে বসেন তখন কলিকাতার ইংরেজ গভর্নর কে ছিলেন?
(ক) ক্লাইভ (খ) ড্রেক
(গ) ওয়াটসন (ঘ) মানিক চাঁদ।
৪। ‘অন্ধক‚প হত্যা' কাহিনী কার তৈরি?
(ক) হলওয়েল (খ) মীর জাফর
(গ) ক্লাইভ (ঘ) কর্নওয়ালিস।
৫। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ কোথায় অবস্থিত ছিল?
(ক) ঢাকায় (খ) মুর্শিদাবাদে
(গ) কলিকাতায় (ঘ) আগ্রায়।
৬। আলীনগরের সন্ধি কখন হয়?
(ক) ১০ এপ্রিল, ১৭৫৬ (খ) ১৪ ডিসেম্বর, ১৭৫৬
(গ) ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ (ঘ) ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭।
৭। নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে কে হত্যা করেন?
(ক) মীর জাফর (খ) উমিচাঁদ
(গ) মুহম্মদী বেগ (ঘ) মীর মদন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। বাংলার সিংহাসন লাভের পর সিরাজ উদ্দৌলার প্রাথমিক অসুবিধাগুলো কি ছিল?
২। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজ উদ্দৌলার বিরোধ হয়েছিল কেন?
৩। পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল ব্যাখ্যা করুন।
৪। সিরাজ উদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে কেন পরাজিত হন?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজ উদ্দৌলার বিরোধের কারণসমূহ কি ছিল? পলাশীর যুদ্ধে তিনি
কেন পরাজিত হয়েছিলেন?
২। পলাশীর যুদ্ধের পটভ‚মি বর্ণনা করুন। এই যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত