দ্বৈত শাসন
যেহেতু এই ইউনিটের অন্য একটি পাঠে (পাঠ-৫) দ্বৈত শাসন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে,
ফলে এখানে সংক্ষেপে এবং প্রসঙ্গক্রমে কিছু আলোচনা করা হবে। কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যাপক দুর্নীতি,
দেশীয় রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা এবং বিদেশী বণিক (যেমন ফরাসি, ডাচ)দের ঈর্ষা ইত্যাদি
কারণে ক্লাইভ দিওয়ানীর কাজ প্রকাশ্যভাবে কোম্পানির হাতে নেননি। তিনি রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব
কোম্পানির মনোনীত রেজা খান এবং সিতাব রায় নামে দু'জন নায়েব সুবার হাতে ন্যস্ত করেন। শুল্ক
আদায়, দিওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার ভারও এদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এসব নায়েব সুবারা আইনত
নবাবের অধীনে ছিলেন, তবে তাদের প্রধান কাজ ছিল কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করা। ক্লাইভের প্রবর্তিত এই
ব্যবস্থাই দ্বৈত শাসন (উড়ঁনষব মড়াবৎহসবহঃ) ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ শাসন ক্ষমতা নবাব ও
কোম্পানির মধ্যে ভাগ করা হয়। রাজস্ব আদায়ের মালিক হয় কোম্পানি। নবাব পেলেন ক্ষমতাহীন দায়িত্ব
এবং কোম্পানি লাভ করলো দায়িত্বহীন ক্ষমতা। এই দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং এতে বিশৃ´খল
ও অরাজক পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে। বাংলার অর্থনৈতিক দূরবস্থা প্রকট হয়ে ওঠে এবং
বাংলা থেকে অর্থ ব্রিটেনে চলে যায়। এক হিসাবে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দেই ৫.৭ মিলিয়নের
মতো অর্থ ইংল্যান্ডে পাচার হয়েছিল। এই নির্মম লুণ্ঠনের কারণে অচিরেই বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
ক্লাইভের সংস্কার
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর নির্দেশ অনুযায়ী ক্লাইভ দুর্নীতি দূরীকরণের জন্যে কয়েকটি
সংস্কার প্রবর্তন করেন। প্রথমত, তিনি কোম্পানির কর্মাচারীদের পুরস্কার গ্রহণ এবং ব্যাবসা-বাণিজ্য করার
বিষয়টি নিষিদ্ধ করেন। দ্বিতীয়ত, ক্লাইভ কোম্পানির কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ক্লাইভ কোম্পানির সিভিল সার্ভিসে সংস্কার করেন। তিনি কোম্পানির কলিকাতা কাউন্সিলের সভ্যদের মধ্যে
পাঁচ জনকে অবসর দেন এবং তিনজনকে সদস্যপদ থেকে বরখাস্ত করেন। তাদের পরিবর্তে তিনি নতুন
এবং দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ করেন।
ক্লাইভ সামরিক বিভাগেও সংস্কার করেন। সেনাবাহিনীর ব্যয় হ্রাসের জন্যে ক্লাইভ সৈনিকদের দ্বিগুণ ভাতা
বন্ধ করে দেন। মীরজাফর পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যদের সহায়তায় কৃতজ্ঞ হয়ে সৈন্যদের ভাতা দ্বিগুণ
করেন। কথা ছিল যুদ্ধের সময় সৈনিকরা এরকম ভাতা পাবে। কিন্তু দেখা গেল, শান্তির সময়ে দ্বিগুণ ভাতা
দেয়া হচ্ছিল। ক্লাইভ ঘোষণা করলেন যে, যুদ্ধে নিযুক্ত সৈন্যরা এরূপ ভাতা পাবে। এতে বিদ্রোহ দেখা
দিলে ক্লাইভ কঠোর হাতে তা দমন করেন।
ক্লাইভের মূল্যায়ন
ক্লাইভ তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন একজন সাধারণ কেরানি হিসেবে। কিন্তু তিনি ছিলেন পরিশ্রমী,
উচ্চাকাক্সক্ষী এবং একজন ধূর্ত ব্যক্তি। বাংলায় এসে তিনি উদ্ভাবনী শক্তি এবং ধূর্ততার মাধ্যমে গভর্নর পদ
লাভ করেছিলেন।যদিও তিনি দুর্নীতিপরায়ণ এবং অর্থলোভী ছিলেন, তথাপি সে সময় কোম্পানির
পরিচালকমন্ডলী মনে করেছিলেন যে, বাংলা ও ভারতে ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষায় তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।
ঠিক এই কারণেই তাঁকে দ্বিতীয়বার গভর্নর করে পাঠানো হয়েছিল। ক্লাইভ যুদ্ধ পরিকল্পনা, যুদ্ধ জয় এবং
ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ¡ী শক্তিগুলোকে পরাজিত করে বাংলা তথা ভারতে ইংরেজ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন
করেন। তাঁর নিজ চরিত্র এবং কিছু কর্মকান্ডের ফলে ইংরেজ জাতির নামে কলঙ্ক লেপন হয়েছে সত্য, তবু
তাঁরই চেষ্টায় ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়াপত্তন হয়েছিল। ইঙ্গ-ভারতীয় ইতিহাসে তাই
ক্লাইভের নাম সবার আগে স্মরণীয়।
সারসংক্ষেপ
রবার্ট ক্লাইভ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সাধারণ কেরানি হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু
পরিশ্রম, উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে বাংলার গভর্নর হন। কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যষড়যন্ত্র, শঠতা,
দুর্নীতির আশ্রয়নিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি। যে কারণে তাঁকে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলার গভর্নর নিযুক্ত
করা হয়। তারই প্রচেষ্টায় ভারতে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়াপত্তন হয়েছিল।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১। আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাস (১২০০Ñ১৮৫৭ খ্রি.)।
২। ড. মুহম্মদ আবদুর রহিম ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস।
৩। হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ভারতবর্ষের ইতিহাস।
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ক্লাইভ কত খ্রি. জন্মগ্রহণ করেনÑ
(ক) ১৭২০ খ্রি. (খ) ১৭২৫ খ্রি.
(গ) ১৭৩০ খ্রি. (ঘ) ১৭৩৫ খ্রি.।
২। ক্লাইভ কোন যুদ্ধে প্রথম রণনৈপুণ্য প্রদর্শন করেনÑ
(ক) কর্ণাটকের দ্বিতীয় যুদ্ধে (খ) পলাশীর যুদ্ধে
(গ) বক্সারের যুদ্ধে (ঘ) মাদ্রাজের যুদ্ধে।
৩। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কত খ্রি. দিওয়ানী লাভ করেÑ
(ক) ১৭৬০ খ্রি. (খ) ১৭৬২ খ্রি.
(গ) ১৭৬৫ খ্রি. (ঘ) ১৭৭০ খ্রি.।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। ক্লাইভের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
২। ক্লাইভের বিভিন্ন সংস্কার সম্পর্কে যা জানেন লিখুন।
৩। সংক্ষেপে ক্লাইভের মূল্যায়ন করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। ক্লাইভের উত্থান এবং বাংলায় কোম্পানিকে এক নম্বর শক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান
আলোচনা করুন।
২। ক্লাইভের দ্বিতীয় পর্যায়ের শাসনকাল সম্পর্কে বিবরণ দিন।
৩। ক্লাইভের চরিত্রের একটি মূল্যায়ন তৈরি করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত