মীর কাশিম ও বক্সারের যুদ্ধ


মীর কাশিমের ক্ষমতা লাভ ও তাঁর শাসন নীতি
নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাজে ক্লাইভের সহযোগিতার বিনিময়ে মীর জাফর
ইংরেজদেরকে প্রভুত অর্থ প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু মসনদে বসে মীর জাফর ইংরেজ কোম্পানিকে
তাঁর চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি লাভের
আশায় মীর জাফর ওলন্দাজ ও আর্মেনিয়ান বণিকদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইংরেজ কোম্পানির কলিকাতা কাউন্সিল মীর জাফরকে অপসারণ করে তাঁর
জামাতা মীর কাশিমকে মসনদে বসাবার সিদ্ধান্ত নেয়। মীর কাশিম এক গোপন চুক্তিতে বর্ধমান, মেদিনীপুর
ও চট্টগ্রামÑ এ তিন জেলার জমিদারী ইংরেজ কর্তৃপক্ষের হাতে অর্পণ করেন। বিনিময়ে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের
অক্টোবর মাসে তিনি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব পদে আসীন হন।
নবাব মীর কাশিম ছিলেন একজন দূরদর্শী ও স্বাধীনচেতা শাসক। মসনদে বসেই তিনি অনুধাবন করেন যে,
ইংরেজদের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে দেশ শাসন করতে হলে তাঁকে প্রথমেই চুক্তিবদ্ধ ঋণ
পরিশোধ এবং নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। সেজন্য দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে
পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে তিনি কতিপয় সংস্কার সাধন করেন। মীর জাফরের অযোগ্যতা ও প্রশাসনিক
দুর্বলতার সুযোগে সরকারি আমলা ও কর্মচারীরা এমন দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে ওঠে যে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ
ও পদমর্যাদার অপব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করা এক রীতিতে পরিণত হয়। মীর কাশিম দুর্নীতিবাজ
কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেন এবং তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। বহু উচ্চপদস্থ
দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদের বরখাস্ত করা হয়। তাছাড়া সরকারি ব্যয় হ্রাসের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত
রাজকর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়। সরকারের অর্থিক চাহিদা মিটানোর উদ্দেশ্যে তিনি জগৎশেঠ পরিবার
থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করেন। প্রত্যেক জমিদারীর প্রকৃত সম্পদ অনুসন্ধান করে মীর কাশিম
জমিদারদের সঙ্গে রাজস্বের নতুন বন্দোবস্ত করেন। এর ফলে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব ধার্য ও
সংগৃহীত হয়। যেসব জমিদার অবাধ্য ও বিদ্রোহী হয়েছিল তাদেরকে তিনি দমন করেন ও নিয়মিত রাজস্ব
আদায়ে বাধ্য করেন। বিহারের ডেপুটি নায়েব রাম নারায়ণ প্রভুত সরকারি অর্থ কুক্ষিগত করে হিসাব
প্রদানে গড়িমসি করায় বিলম্বে হলেও নবাব তাকে বরখাস্ত ও কারারুদ্ধ করেন।



অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শৃ´খলা পুন:প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মীর কাশিম তাঁর শক্তিবৃদ্ধিরও চেষ্টা করেন। মীর
জাফরের আমলের দুর্নীতিপরায়ণ ও বিশ্বাসঘাতক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করে নবাব নিজের বিশ্বাসভাজন
ব্যক্তিদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন।সেনাবিভাগেও তিনি কিছু রদবদল করেন।তিনি
আর্মেনিয়ানদেরকে তাঁর সৈন্যদলে ভর্তি করেন এবং সৈন্যবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ
করেন। গুর্গিন খান নামক জনৈক আর্মেনিয়ান নায়কের ওপর সেনাদল পুনর্গঠনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
গোলন্দাজ ও পদাতিক সৈন্যদেরকে ইউরোপীয় কায়দায় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়। মুহাম্মদ তকী
খান নামে একজন সেনানায়কও নবাবকে তাঁর প্রতিরক্ষা বাহিনী সুশৃ´খল করার কাজে সাহায্য করেন।
রাজধানী মুর্শিদাবাদ ছিল ইংরেজ কোম্পানির ক্ষমতার কেন্দ্র কলিকাতার অতি নিকটে। তাছাড়া
মুর্শিদাবাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এজন্য কলিকাতার কর্তৃপক্ষের পক্ষে নবাবের
কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা ও শাসন বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুবিধা ছিল। এসব সমস্যা বিবেচনায় রেখে মীর
কাশিম ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তাঁর রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে স্থানান্তর করেন।
মীর কাসিমের সাথে ইংরেজ বিরোধ
মীর কাশিম ক্ষমতায় আরোহণ করে একে একে সব অভ্যন্তরীণ বিশৃ´খলা দূর, তাঁর শত্রুদের দমন এবং
স্বীয় শক্তি শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। কিন্তু দেশ শাসনে তাঁর স্বাধীন নীতি ও গৃহীত কার্যকলাপ
ইংরেজদের পছন্দ হলো না। কোম্পানির অনেক কর্মকর্তা নবাবকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেন এবং
তাঁর নীতি শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে আশংকা করেন। মীর জাফরকে পদচ্যুত করে
মীর কাসিমের মতো যোগ্য ব্যক্তিকে সিংহাসনে বসানো ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে তাঁর শক্তি বৃদ্ধি
করার সুযোগ দেয়া একটি রাজনৈতিক ভুল বলে এদের নিকট প্রতীয়মান হয়। এ আশংকাই তাদেরকে
নবাবের বিরুদ্ধে ঈর্ষানি¦ত করে তোলে। শীঘ্রই বাণিজ্যিক সুবিধাদি নিয়ে মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের
বিরোধ সৃষ্টি হয়। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের মুঘল সম্রাটের ফরমান অনুযায়ী ইংরেজ কোম্পানি বাংলায় বিনা শুল্কে
বাণিজ্যের অধিকার পায়। দস্তকের ব্যবহার বা বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার কোন অধিকার সেই ফরমান বা
পরবর্তীকালের কোন চুক্তিতে কোম্পানির কর্মচারীদের বেলায় প্রযোজ্য ছিল না। কিন্তু তারা কোম্পানির
বাণিজ্যিক সুবিধার অপব্যবহার করে বেআইনী ব্যক্তিগত ব্যবসায় লিপ্ত হয় ও বাণিজ্য কর ফাঁকি দেয়।
পলাশীর যুদ্ধের পর অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে কোম্পানির কর্মচারীদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পায়, এমনকি
ইংরেজদের দেশীয় নায়েব-গোমস্তারাও এর সুযোগ নিতে থাকে। এতে সরকার শুল্কখাতে বিরাট অংকের
রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয় এবং অন্যান্য বণিকরাও ভীষণ অসুবিধায় পড়ে। কারণ বিধিমাফিক বাণিজ্য কর
দিতে হতো বিধায় তাদের পণ্যের দাম বেশি হতো এবং এহেন অসম বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার ফলে
ইংরেজ ও তাদের আশ্রিতদের সঙ্গে তাদের টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়েপড়ে। এর ফলে বিশেষত দেশীয়
বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়। একচেটিয়াভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে
কোম্পানির কর্মচারী ও তাদের গোমস্তারা। এদের উৎপীড়নমূলক ব্যক্তিগত ব্যবসা ও অত্যাচারে পণ্য
উৎপাদকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ এ শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক ন্যায্যমূল্যের কম দামে পণ্য দ্রব্য কিনে
নিতো। এর ফলে দেশে উৎপাদন হ্রাস পায় এবং দেশের আর্থিক সমস্যাও বাড়ে।
নবাব মীর কাশিম ইংরেজ কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ইংরেজ গভর্নর ভ্যান্সিটার্টকে অবহিত
করেন এবং তা বন্ধের দাবি জানান। কলিকাতা কাউন্সিল নবাবের অভিযোগ উপেক্ষা করলে তিনি
কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য তাদের কাছ থেকে শুল্ক আদায় করার নির্দেশ দেন। কিন্তু
ইংরেজ কর্মচারীরা বাণিজ্য শুল্ক দিতে অস্বীকার করায় নবাবের শুল্ক বিভাগের কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের


সংঘাত বাধে। এরপর নবাব বাংলায় সব বণিকদের ওপর থেকে বাণিজ্য কর প্রত্যাহার করেন। এতে
অন্যান্য বণিকরাও বিনাশুল্কে বাণিজ্যের সুবিধা লাভ করে। এ ব্যবস্থার ফলে ইংরেজ কোম্পানির বিশেষ
সুবিধা বাতিল হয়ে যাওয়ায় তারা নবাবের ওপর ক্ষেপে যায়।
নবাবের সাথে সমঝোতায় আসার উদ্দেশ্যে গভর্নর ভ্যান্সিটার্ট তাঁর প্রতিনিধি এমিয়েটকে পাঠান। কিন্তু
সমস্যার কোন শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়নি। এদিকে পাটনার ইংরেজ কুঠির এজেন্ট এলিস হঠাৎ করে পাটনা
আক্রমণ ও তা দখল করেন। এতে নবাবের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। মীর কাশিমের সৈন্যবাহিনী পাল্টা আক্রমণ
করে পাটনায় ইংরেজ কুঠি বিধ্বস্ত করে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। তারা গভর্নরের দূত এমিয়েটকে হত্যা করে।
এরপর কলিকাতা কাউন্সিল নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয় এবং মীর কাশিমকে পদচ্যুত করে মীর
জাফরকে পুনরায় বাংলার মসনদে বসায় (২৪ জুলাই, ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ)।
মীর কাশিম তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন। কিন্তু নবাবের সেনাবাহিনীর
প্রধানদের কপটতা ও দুর্বল সামরিক তৎপরতার কারণে কাটোয়া, গিরিয়া, মুর্শিদাবাদ, সোতি ও উদয়নালার
যুদ্ধে তিনি পরাজয় বরণ করেন। ইংরেজ সৈন্যরা তাঁকে অনুসরণ করে রাজধানী মুঙ্গের থেকেও বিতাড়িত
করে। ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে পাটনার যুদ্ধে মীর কাশিমের সৈন্যদল সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হলে
নিরূপায় হয়ে তিনি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলার রাজ্যে আশ্রয় নেন। মীর কাশিম নবাব সুজাউদ্দৌলা
এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে এক মৈত্রী জোট গঠন করেন এবং তাঁদের সম্মিলিত বাহিনী
বিহারের দিকে অগ্রসর হয়। ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মনরো এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মিত্রপক্ষের গতিরোধ
করে। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বক্সার নামক স্থানে উভয়পক্ষে ঘোরতর লড়াই হয়। মীর কাশিম ও
তাঁর মিত্ররা এ যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন। বাংলার নবাব বক্সারের প্রান্তর থেকে পালিয়ে গিয়ে জীবন
রক্ষা করেন। কয়েক বছর অজ্ঞাতবাস করে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লির নিকটে মারা যান। বক্সারের যুদ্ধে
বিজয়ী ইংরেজ সৈন্যরা অযোধ্যায় প্রবেশ করলে সুজাউদ্দৌলা রাজ্য ত্যাগ করে রোহিলাখন্ডে আশ্রয় নেন।
কোন দিক থেকে সাহায্য না পেয়ে পরে তিনি ইংরেজদের নিকট আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। সম্রাট শাহ
আলমও ইতোপূর্বে কোম্পানির সঙ্গে সন্ধিতে আবদ্ধ হন।
বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব
ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অত্যধিক এবং এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফল নবাব
মীর কাশিমের পতন এবং মীর জাফরের পুনরায় বাংলার মসনদে আরোহণ। তাছাড়া এ যুদ্ধে ইংরেজদের
হাতে শক্তিশালী অযোধ্যা রাজ্যের অধিপতি এবং দিল্লির মুঘল সম্রাটের পরাজয় ঘটে। বাংলায় ও উত্তর
ভারতে স্বাধীন শাসন ক্ষমতার পতন এবং এর ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতা এখানে পরবর্তীকালে
ঔপনিবেশিক শাসনের পথ তৈরি করে। বক্সারের যুদ্ধ কেবল বাংলাতেই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করেনি, তাদের আধিপত্য ও প্রভাব অযোধ্যা এবং এলাহাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। সামরিক
দিক থেকে এ যুদ্ধ ইংরেজদের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পলাশীতে তারা জয়ী হলেও তা ছিল যুদ্ধের নামে
একটা প্রহসন। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে তাদের যুদ্ধ কৌশল ও সমর নৈপুণ্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। এতে
তাদের মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। বস্তুত পলাশীতে জয়ী হবার ফলে বাংলায় ইংরেজ প্রভ‚ত্বের সূচনা হয়। বক্সারের
যুদ্ধের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে তারা নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং এখানে ঔপনিবেশিক
শাসনের সূত্রপাত ঘটায়।
মীর কাশিমের পরাজয়ের কারণ


স্বাধীনচেতা নবাব মীর কাশিম ইংরেজ আধিপত্য থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিরোধে জড়িয়ে পড়েন এবং
শেষ পর্যন্ত অবধারিত সংঘর্ষে পরাজিত হন। তাঁর পরাজয়ের পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। প্রথমত,
অর্থনৈতিক দুর্বলতা তাঁর পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল। মীর জাফরের ঋণের বাবদ ইংরেজদের তিনি
বিপুল অর্থ দেন। মসনদ লাভের জন্যও তাদেরকে তাঁর অনেক টাকা দিতে হয়। অর্থ সংকটের কারণে
একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠন করতে তিনি সক্ষম হননি। দ্বিতীয়ত, জমিদার ও কর্মচারীরা তাঁর প্রতি
বিশ্বস্ত ছিল না। এদের অসহযোগিতার কারণে মীর কাশিম তাঁর শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে
কাজে লাগাতে পারেননি। তৃতীয়ত, যুদ্ধক্ষেত্রে কোন কোন সৈন্যাধ্যক্ষের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয়
ঘটে। উদয়নালার যুদ্ধে সেনাপতি মরকা ও আরাটুন গোপনে শত্রুদের সাহায্য করেন এবং বক্সারের যুদ্ধে
সুজাউদ্দৌলার উজির মহারাজা বেশী বাহাদুর বিশ্বাসঘাতকের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হন। চতুর্থত, সামরিক
ক্ষেত্রে মীর কাশিম এবং তাঁর সৈন্যদলের দুর্বলতা পরাজয়ের আর একটি বড় কারণ। বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ
পক্ষের সমর নৈপুণ্য ও রণকৌশল নিঃসন্দেহে উন্নততর ছিল। তাছাড়া মীর কাশিম নিজেও সেনাপতিরূপে
দক্ষতা ও প্রতিভার পরিচয় দেননি। তাঁর সৈন্যদের মধ্যে শৃ´খলা ও সংগঠনের অভাব ছিল। তাই তিনি
যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজয় বরণ করেন।
সারসংক্ষেপ
ইংরেজদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মীর কাশিম বাংলার মসনদে আসীন হন। কিন্তু দেশ
পরিচালনায় তাঁর স্বাধীন কার্যক্রম ইংরেজ কর্তৃপক্ষের পছন্দ হলো না। বিশেষ করে ইংরেজ বণিকদের
ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে কোন কর না দেয়ার কারণে নবাবের সঙ্গে কোম্পানির বিরোধ শুরু হয়।
অনিবার্য সংঘর্ষের ফলে মীর কাশিমের সামরিক পরাজয় ঘটে। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে বক্সারের
যুদ্ধে তিনি একাই পরাজিত হননি। অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং দিল্লির মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ
আলমও এ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেন। এর ফলে ভারত উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের পথ সুগম
হয়।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১। আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাস (১২০০Ñ১৮৫৭ খ্রি.)।
২। ড. মুহম্মদ আবদুর রহিম ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস।
৩। হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ভারতবর্ষের ইতিহাস।
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। মীর কাশিম কখন বাংলার নবাব হন?
(ক) আগস্ট, ১৭৫৯ খ্রি. (খ) ফেব্রুয়ারি, ১৭৬০ খ্রি.
(গ) অক্টোবর, ১৭৬০ খ্রি. (ঘ) জানুয়ারি, ১৭৬১ খ্রি.।
২। কোন আর্মেনিয়ান সেনাপতির ওপর মীর কাশিম তাঁর সৈন্যদল পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেন?
(ক) আরাটুন (খ) গুর্গিন খান
(গ) সেনাপতি মরকা (ঘ) সেনাপতি মর্কট।
৩। মীর কাশিম কোথায় তাঁর রাজধানী স্থানান্তর করেন?


(ক) মুর্শিদাবাদ (খ) উদয়নালা
(গ) পাটনা (ঘ) মুঙ্গের।
৪। ভ্যান্সিটার্ট কে ছিলেন?
(ক) ইংরেজ সেনাপতি (খ) কলিকাতার ইংরেজ গভর্নর
(গ) একজন পরিব্রাজক (ঘ) ইংরেজ গোমস্তা।
৫। বক্সারের যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়?
(ক) ১৭৬০ খ্রি. (খ) ১৭৬২ খ্রি.
(গ) ১৭৬৪ খ্রি. (ঘ) ১৭৭৭ খ্রি.।
৬। কোন মুঘল সম্রাট বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হন?
(ক) দ্বিতীয় শাহ আলম (খ) ফররুখশিয়ার
(গ) জাহান্দর শাহ (ঘ) দ্বিতীয় আকবর।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। কি পরিস্থিতিতে মীর কাশিম বাংলার মসনদে আসীন হন?
২। মসনদে বসে স্বীয় ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মীর কাশিম কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?
৩। ইংরেজদের সাথে মীর কাশিমের বিরোধের প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করুন।
৪। বক্সারের যুদ্ধের ঐতিহাসিক ফলাফল আলোচনা করুন।
৫। বক্সারের যুদ্ধে মীর কাশিম কেন পরাজিত হন?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। ইংরেজদের সাথে মীর কাশিমের বিরোধের কারণগুলো কি ছিল? তিনি কেন পরাজিত হয়েছিলেন?
২। যে পরিস্থিতিতে বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয় তা আলোচনা করুন। এই যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব কি
ছিল?
৩। বক্সারের যুদ্ধের পটভ‚মি ব্যাখ্যা করুন। মীর কাশিম কেন এই যুদ্ধে পরাজিত হন?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]