চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল বর্ণনা করুন


১৭৮৬ খ্রি. লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হয়ে আসেন। কর্নওয়ালিস ছিলেন একজন
সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ এবং অত্যন্ত ক্ষমতাশালী গভর্নর জেনারেল। বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে বিভিন্ন রকম
সংস্কার কাজের জন্যে তিনি একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ভ‚মি ব্যবস্থায় তিনি যে যুগান্তকারী পরিবর্তন করেন
তা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে।
চিরস্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তন পূর্ব ভ‚মি ব্যবস্থা
স্মরণাতীত কাল থেকে বাংলা তথা ভারতে কৃষিজাত শস্যের একটি অংশ ভ‚মি রাজস্ব হিসেবে রাজকোষে
জমা দেয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। এটি আদায়ের নানা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে রাজ
কর্মচারীরা সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে আদায় করতেন। অনেকক্ষেত্রে মধ্যবর্তী কেউ এটি আদায়
করতেন। এরা ছিলেন জমিদার, জোতদার বা অন্য কোন উপাধিধারী মধ্যস্বত্বভোগী। এরা নির্দিষ্ট কমিশন
পেতেন। আবার তাদের নিজস্ব জমিদারীও ছিল। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নির্দিষ্ট রাজস্ব
প্রদানের ভিত্তিতে জমির ওপর ব্যক্তি মালিকানা কায়েম করে। এই ব্যবস্থা ব্রিটিশ-পূর্ব ভ‚মি ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে
চুরমার করে দেয়। রাজা বা নবাব এবং কৃষক সমাজের মধ্যবর্তী ছোট খাট শাসক, জমিদার, জায়গীরদার
প্রমুখ মধ্যস্বত্বভোগী রাজস্ব সংগ্রাহকরা চাষীদের মতোই এদেশে ভ‚মির সাথে স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন।
কিন্তু এরা কেউ ভ‚মির সাথে চিরায়িত বন্ধনে যুক্ত কৃষককে জমি থেকে উৎখাত করতে পারতেন না। লর্ড
কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে সবকিছু পরিবর্তিত হয়ে যায়। ভ‚মির দলিল বা চুক্তিপত্রের অধিকারীর
স্বার্থ রক্ষা করা ও ব্রিটিশ আইনের সম্পত্তির অধিকারের পবিত্রতা বজায় রাখার তাগিদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার
ব্যবহার করে উনবিংশ শতাব্দীর বাংলায় এবং ভারতে লক্ষ লক্ষ চাষীকে জমি ও জীবিকা অর্জনের অধিকার
থেকে বঞ্চিত করে। তদুপরি এই বন্দোবস্ত এ অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী নির্ভরশীলতার রূপটিকে তছনছ করে
দেয়।
চিরস্থায়ী ব্যবস্থার পটভ‚মি
পাঠ - ২
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইতিহাস পৃষ্ঠা  ১৭১
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের জন্যে কর্নওয়ালিস একা দায়ী ছিলেন না। ১৭৭০ খ্রি. থেকে এ ব্যবস্থার পক্ষে-
বিপক্ষে নানা অভিমত গড়ে ওঠে এবং কর্নওয়ালিসের সময়ে তা বাস্তব রূপ লাভ করে। ১৭৭০ খ্রি. স্কটিশ
চিন্তাবিদ আলেকজান্ডার দাও (অষবীধহফবৎ উড়)ি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রস্তাব করেন। ১৭৭২ খ্রি. ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজ হাতে বাংলার দেওয়ানি তুলে নেয়। তখন থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের জন্যে পাঁচ
বছর মেয়াদে জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এই পাঁচসনা ইজারাদারী ব্যবস্থার মেয়াদ শেষ হবার আগেই গভর্নর
জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস পরবর্তীকালে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা
করেন। তিনি প্রাদেশিক রাজস্ব কাউন্সিলগুলোকে নির্দেশ দেন যে, তারা যেন এই ব্যবস্থার সাফল্য-ব্যর্থতা
যাচাই করে পরবর্তী বন্দোবস্ত কিরূপ হওয়া উচিত সে বিষয়ে তাদের মতামত পেশ করেন। দেখা যায় যে,
প্রত্যেকটি প্রাদেশিক কাউন্সিল পাঁচসনা ইজারাদারী ব্যবস্থার বিপক্ষে মত প্রকাশ করেন। তারা পরিস্কারভাবে
বললেন, নিলাম পদ্ধতিতে খাজনা আদায়ে অনিশ্চয়তা থেকে যায়। তারা আরো বলেন, জমিদারদের সঙ্গে
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন এ কারণে যে, কোম্পানির পক্ষে সরাসরি রায়তদের কাছ থেকে রাজস্ব বা
খাজনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। কারণ, এ কাজের জন্যে যে লোকবল এবং অর্থের প্রয়োজন তা কোম্পানির
ছিল না। এই অবস্থায় লন্ডনে কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীরা (ঈড়ঁৎঃ ড়ভ উরৎবপঃড়ৎং) সিদ্ধান্ত নেয় যে,
“এমন একটি রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যে নীতি হবে চিরস্থায়ী ব্রিটিশ জাতি এবং কোম্পানির
স্বার্থের অনুক‚ল।” অর্থাৎ তারা বাংলা তথা সমগ্র ভারতে শাসক ইংরেজদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক
ভিত্তিকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিলেন।
এ রকম একটি পটভ‚মিতে এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের নির্দেশ মাথায় নিয়ে ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দের
সেপ্টেম্বর মাসে কর্নওয়ালিস ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাজধানী কলিকাতায় এসে পৌঁছেন। তিনি এসেই
কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশ দেন যে, তারা যেন, ভ‚মি ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত সরবরাহ করেন।
কর্নওয়ালিস ও জন শোর বিতর্ক
বাংলায় কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান এবং অভিজ্ঞ ছিলেন জন শোর। তিনি ছিলেন
রাজস্ব বিশেষজ্ঞ এবং ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত সৎ। প্রথম দিকে তিনি চিরস্থায়ী ব্যবস্থার পক্ষে মত প্রকাশ
করেন। তাঁর সততা এবং রাজস্ব বিষয়ে গভীর জ্ঞানের কারণে কর্নওয়ালিস তাকে রাজস্ব উপদেষ্টা নিয়োগ
করেন এবং রাজস্ব বিষয়ে কর্নওয়ালিস পুরোপুরি জন শোরের ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে
জন শোর তাঁর মত পাল্টে দেন। তিনি ১৭৮৯ খ্রি. এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে চিরস্থায়ী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মত
প্রকাশ করেন। তার প্রধান যুক্তি ছিল যে, এরকম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে যে তথ্য প্রয়োজন তা
কোম্পানির হাতে নেই। এজন্যে দেশব্যাপী একটি জরিপ করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে কর্নওয়ালিস এই ব্যবস্থা প্রবর্তনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। জন শোরের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে তিনি
যুক্তি দেখান যে, ১৭৬৫ খ্রি. থেকেই ভ‚মি ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ-পঁচিশ
বছরে যদি তথ্য সংগ্রহ শেষ না হয়, তবে কোন দিনই আর হবে না। দ্বিতীয়ত, ১৭৭০ খ্রি. যে দুর্ভিক্ষ
হয়েছিল তাতে বাংলার লোকসংখ্যা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়এবংএতে কৃষি জমির এক তৃতীয়াংশ জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে
পড়ে। কর্নওয়ালিসের ধারনা ছিল যে, জমিদাররা যদি চিরস্থায়ীভাবে ভ‚মির অধিকার না পান, তবে তারা
জঙ্গলাকীর্ণ কৃষি জমি আবাদ করবেন না।
চিরস্থায়ী প্রবর্তন এবং এই ব্যবস্থার সুফল ও কুফল
দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কর্নওয়ালিস অভিজ্ঞ জন শোরের মতামত উপেক্ষা করে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করেন।তিনি এজন্যে লন্ডনে কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর মতামত চাইলেন। কর্নওয়ালিসের প্রস্তাব
পরিচালকমন্ডলীর সভায় অনুমোদিত হয় এবং ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কলিকাতায় এসে পৌঁছায়।
এস এস এইচ এল
ইউনিট--- পৃষ্ঠা  ১৭২
ফলে দেখা যায় যে, কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ঘোষণা দেন।
এ ব্যবস্থার সুফল ও কুফল সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ
সুফল
(ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কোম্পানি তার বাৎসরিক রাজস্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছিল। ফলে
কোম্পানির কর্মকর্তারা বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন করতে সমর্থ হয়।
(খ) জমিদারগণ যখন দেখলো তারাই জমির প্রকৃত মালিক তখন তারা নিজেদের পাশাপাশি ভ‚মি এবং
রায়ত (কৃষক) শ্রেণীর উন্নয়নের জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন বাংলার বিভিন্ন গ্রামে
দেখা যায় যে, রায়তদের উপকারের জন্যে পুকুর খনন, বিদ্যালয়, চিকিৎসালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা
জমিদাররাই করেছিলেন। দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সময়ও জমিদাররা তাদের রায়তদের রক্ষার চেষ্টা
করতেন।
(গ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র শিল্পগুলোর ক্ষেত্রে জমিদাররা পৃষ্ঠপোষকতা দান করে।
ফলে কিছু ক্ষেত্রে শিল্পেরও উন্নতি হয়।
(ঘ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে যে জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল, ক্রমে এরাই ইংরেজদের সবচেয়ে
বিশ্বস্ত ও অনুগত শ্রেণীতে পরিণত হয়েছিল। ইংরেজরা এই ব্যবস্থা থেকে এভাবে বড় ধরনের
সুবিধা পেয়েছিল।
(ঙ) এই ব্যবস্থার ফলে কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ের ঝামেলা থেকে মুক্তি পায়।
ফলে তারা শাসন কাজ পরিচালনায় নিযুক্ত হয় এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
কুফল
বাংলা তথা ভারতের সমাজে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। দেখা যায় যে, শতাব্দীর
পর শতাব্দী এ দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে এই ব্যবস্থার প্রভাব রয়ে গিয়েছিল। ইংরেজ ঐতিহাসিক
ডবিøউ. ডবিøউ হান্টার কতিপয় কুফলের কথা লিখেছেন। যেমন ঃ
(ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল ভ‚মি জরিপ না করেই। রাজস্ব বিশারদ জন শোর এজন্যে এ ব্যবস্থার
বিরোধিতা করে যেসব বিপদের কথা বলেছিলেন, কিছুদিনের মধ্যে বাস্তবেও সেগুলো প্রতিফলিত
হলো। একজন জমিদারের অধীনে কি পরিমাণ জমি চাষাবাদের যোগ্য অথবা নিষ্কর অথবা গো-চারণ
ভ‚মি ছিল তা নির্ধারণ না করেই শুধুমাত্র নিলামের ভিত্তিতে রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছিল। ফলে
কোথাও রাজস্বের হার অত্যধিক হয়েছিল, আর কোথাও হয়েছিল অনেক কম। এই অবস্থায় একজন
জমিদারের জমিদারীর প্রকৃত সীমা নির্ধারিত না হওয়ায় অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা এবং নানা রকম
অব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
(খ) এই ব্যবস্থায় রায়ত শ্রেণী জমিদারের অত্যাচারের শিকার হয়। কর্নওয়ালিসের ধারণা ছিল যে,
জমিদাররা যেভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে ভ‚মির বন্দোবস্ত
পেয়েছিলেন, একইভাবে জমিদাররাও রায়তদের জমির অধিকার প্রদান করবে। কিন্তু বাস্তবে তাঁর
ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কারণ অতি তুচ্ছ কারণে বা বিনা কারণে অনেক সময় রায়তদের জমি
থেকে উচ্ছেদ করা হতো। উচ্চহারে রাজস্ব নির্ধারিত হওয়ায় রায়তদের কাছ থেকে উচ্চহারে খাজনা
আদায় করা হতো। ফলে তাদের আর্থিক দুর্দশা বৃদ্ধি পায়।
(গ) জমির মালিকানা চিরস্থায়ী হবার ফলে যে কোন উপায়ে জমি ক্রয় বা অধিকারের প্রশ্নটি প্রধান হয়ে
দাঁড়ায়। ফলে জমির মূল্যবৃদ্ধি, জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা, মারামারি বৃদ্ধি পেতে লাগলো।


(ঘ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার আর্থিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়লো। জমিদাররা পরিশ্রম না করে
আরামপ্রিয় ও বিলাসী জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়লো।তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করা শুরু করলেন।
তাদের অবর্তমানে নায়েব গোমস্তারা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে।এবং রায়তদের ওপর বিভিন্ন প্রচারের
নির্যাতন ও অত্যাচার শুরু করে।রায়ত শ্রেণী সব অধিকার হারিয়ে ভ‚মিদাসে পরিণত হয়েছিল।অনেক
ইংরেজ ঐতিহাসিক পরবর্তীকালে লিখেছেন যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কোম্পানি যে রাজনৈতিক
সুবিধা পেয়েছিল তার জন্য অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হয়েছিল অনেক বেশি। দীর্ঘমেয়াদে দেখা গেল
যে, এই ব্যবস্থা একটি অত্যাচারের যন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। সর্বোপরি এই ব্যবস্থার ফলে গ্রাম থেকে
শহরে সম্পদ স্থানান্তর হয়েছিল।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ত্রুটি সংশোধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ইংরেজদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করেছিল সত্য, কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু থাকার ফলে
দেশের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ছিল না। শহুরে পরগাছা জমিদার শ্রেণী এবং তাদের এজেন্ট নায়েব
গোমস্তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমাজের তৃণমূলের অধিকার হারা মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল।
কোম্পানির অনেক দূরদর্শী কর্মকর্তা এসব বিষয়ে সচেতন ছিলেন। ফলে দেখা যায় যে, চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তের বিভিন্ন ত্রুটি দূর করতে বিভিন্ন আইন প্রবর্তন করা হয়। যেমন ১৮৫৯ খ্রি. লর্ড ক্যানিং রাজস্ব
আইন (জবহঃ অপঃ) পাস করে অন্যায়ভাবে রায়তদের উচ্ছেদ করা বা অতিরিক্ত এবং নিয়ম বহির্ভুত খাজনা
আদায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তবে ভ‚মিতে রায়তদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো ১৮৮৫
খ্রিস্টাব্দের ইবহমধষ ঞবহধহপু অপঃ বা বাংলা প্রজাস্বত্ব আইন। এই আইনে বলা হলো যে, সুনির্দিষ্ট কারণ
ব্যতীত কোন রায়তকে জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ১৯২৮ খ্রি. এই আইনের একটি
সংশোধনী পাস হয় এবং এতে রায়তদের জমির স্বত্ব বিক্রির অধিকার দেয়া হয়। তবে এতে বলা হয় যে,
এই বিক্রির সময় পাঁচ ভাগের এক ভাগ অর্থ বিনিময় মূল্য (ঞৎধহংভবৎ ভববং) হিসেবে জমিদারকে দিতে
হবে। ১৯৩৮ খ্রি. এক আইনে জমি বিক্রির সময় জমিদারকে প্রদেয় বিনিময় মূল্যের বিষয়টি রদ করা
হয়।১৯৫০ খ্রি. এক আইনে পূর্ববঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিষিদ্ধ করে জমিদারী প্রথা বিলোপ করা হয়।
সারসংক্ষেপ
১৭৮৬ খ্রি.লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হয়ে আসেন।ভ‚মি ব্যবস্থায় তিনি যে
যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়ন করেন তা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে পরিচিত। এটি প্রবর্তনের জন্যতিনি
একা দায়ী ছিলেন না। বস্তুত, ১৭৭০ খ্রি. থেকে এ ব্যবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে নানা অভিমত গড়ে ওঠে
এবং তাঁর সময়ে এটি বাস্তব রূপ লাভ করে (১৭৯৩খ্রি.)। এর ফলে কোম্পানি তার বাৎসরিক রাজস্ব
সম্পর্কেনিশ্চিত হয়। কিন্তু জমি জরিপ না করে নিলামের ভিত্তিতে রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করায়
রাজস্বের হার কোথাও অত্যধিক আবার কোথাও অনেক কম হয়েছিল। যাইহোক, এই বন্দোবস্তের ফলে
বাংলার আর্থিক কাঠামো দুর্বলহয়ে পড়ে। এই ব্যবস্থায় সৃষ্ট ইংরেজদের অনুগত, শহুরে পরগাছা
জমিদার শ্রেণী ও তাদের এজেন্ট নায়েব গোমস্তাদের অত্যাচারে অধিকারবঞ্চিত রায়ত শ্রেণীর ক্ষোভে
ফুসে ওঠে। ফলে বিভিন্ন আইন প্রবর্তন করে এর ত্রুটিসমূহ দূর করার চেষ্টা করা হয়। অবশেষে ১৯৫০
সালেএক আইন দ্বারা পূর্ববঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিষিদ্ধ করে জমিদারী প্রথা বিলোপ করা হয়।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১. আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাস (১২০০-১৮৫৭খ্রি.)।
২. ড. মুহম্মদ আবদুর রহিম ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস।


পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন কে?
(ক) ক্লাইভ (খ) হেস্টিংস
(গ) কর্নওয়ালিস (ঘ) জন শোর।
২। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?
(ক) ১৭৫৭ খ্রি. (খ) ১৭৬০ খ্রি.
(গ) ১৭৬৫ খ্রি. (ঘ) ১৭৯৩ খ্রি.।
৩। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের বিরোধিতা করেন কে?
(ক) জন শোর (খ) রিপন
(গ) কার্জন (ঘ) ফুলার।
৪। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় কোন শ্রেণীÑ
(ক) রায়ত (খ) নায়েব গোমেস্তা
(গ) জমিদার (ঘ) ইংরেজ।
৫। বাংলা প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?
(ক) ১৮৮০ খ্রি. (খ) ১৮৮৫ খ্রি.
(গ) ১৮৯০ খ্রি. (ঘ) ১৮৯৫ খ্রি.।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ত্রুটি সংশোধনে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা করুন।
২। লর্ড কর্নওয়ালিস সম্পর্কে একটি টীকা লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত- পূর্ব ভ‚মি ব্যবস্থা উল্লেখপূর্বক এই পদ্ধতি প্রবর্তনের পটভ‚মি বর্ণনা করুন।
২। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]