সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ
সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতা যে অনিবার্য তা প্রথম থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সর্বপ্রথম উল্লেখ করা যেতে
পারে যে, বিদ্রোহের কোন সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছিল না। বিদ্রোহের প্রারম্ভ সম্বন্ধে কোন স্থিরতা ছিল না।
বিদ্রোহ এবং বিদ্রোহীদের সংবাদ প্রেরণের কোন সংগঠন ছিল না।প্রকৃত সংহতি ছাড়াই কোম্পানির ভারতীয়
সৈন্যবাহিনীতে এই মহাবিদ্রোহ আত্মপ্রকাশ করে। ফলে একযোগে এবং একই সময়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে
বিদ্রোহ শুরু হলে ব্রিটিশ শক্তির যে সমূহ বিপদ ঘটতো তা হয়নি। অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ধারার মধ্যে
যোগাযোগের অভাব দেখা দেয়। বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ কর্মপন্থা ও উদ্দেশ্য অনুসরণ
করে চলেন। এর ফলে এই বিদ্রোহ পরিকল্পনাবিহীন বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভে পরিণত হয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ
করা যেতে পারে যে, পাটনা শহরকে কেন্দ্র করে ওয়াহাবিদের যে অভ্যুত্থান আরম্ভ হয়, তার সঙ্গে গয়া এবং
শাহবাদে কুনওয়ার সিংহের নেতৃত্বে যে অভ্যুত্থান ঘটে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। বিদ্রোহীদের মধ্যে
সম্পর্ক থাকলে ইংরেজদের পক্ষে কলিকাতা থেকে উত্তর ভারতে সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ পাঠানোর ব্যবস্থা
বিকল করে দেওয়া দুরূহ ছিল না। অধিকতর দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায় মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এবং
পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও-এর দত্তক পুত্র নানা সাহেবের মধ্যে স্বার্থের বিরোধ বজায় থেকে গিয়েছিল। ফলে
যে ধরনের সহযোগিতা সাফল্যকে সুনিশ্চিত করতে পারতো তা আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পার্থক্যের জন্যে
তিরোহিত হয়ে যায়। বহুধা বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহ কখনও সাফল্য অর্জনের উপযুক্ত শক্তি সঞ্চয় করতে সমর্থ
হয়নি। ফলে ব্রিটিশ শাসকদের পক্ষে সুসংহত পরিকল্পনার দ্বারা বিদ্রোহ দমন করা সহজসাধ্য হয়।
দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ কূটনীতির গভীর চাতুর্য ও প্রায় অপ্রত্যাশিত সাফল্যও বিদ্রোহের ব্যর্থতার অপর এক প্রধান
কারণ। ইংরেজগণ কূটনীতির আশ্রয় নিয়ে তদানীন্তন দেশীয় রাজ্যগুলোর অধিকাংশ রাজাদের তাদের পক্ষে
ধরে রাখতে সক্ষম হয়। কয়েক বৎসর পূর্বে ছলেবলে ও কৌশলে পাঞ্জাব অধিকার করা সত্তে¡ও ইংরেজগণ
শিখদের সমর্থন লাভ করে। শিখ, গুর্খা, রাজপুত এই যুদ্ধ বিশারদ তিন গোষ্ঠীর সমর্থন লাভ না করলে
ইংরেজদের পক্ষে বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হতো না। লর্ড ক্যানিং মন্তব্য করেন, “সিন্ধিয়া যদি বিদ্রোহীদের
পক্ষে যোগ দেন তাহলে কালই আমাকে জিনিসপত্র নিয়ে এদেশ ত্যাগ করতে হবে।” কাশ্মিরের মহারাজা
গুলাব সিং সম্পর্কে জেনারেল লরেন্স বলেন যে, “১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে আমাদের অবস্থা যে অনেকটা মহারাজার
দয়ার ওপর নির্ভর করেছিল, তা বললে অত্যুক্তি হবে না।” প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানের আমীর দোস্ত
মহম্মদ থেকে শিখ, গুর্খা ও রাজপুত সৈন্য এবং সিন্ধিয়া, হোলকার ও হায়দ্রাদের নিজাম প্রমুখদের সাহায্য
ভিন্ন ইংরেজ সৈন্যধ্যক্ষদের প্রতিভা ও ধৈর্য বিদ্রোহকে প্রশমিত করতে পারতো না।
তৃতীয়ত, যুদ্ধ ক্ষমতা ও সংগঠনের দিক থেকে শাসকপক্ষ বিদ্রোহীদের অপেক্ষা বহুলাংশে শ্রেষ্ঠ ছিল।
অস্ত্রশস্ত্রের প্রাচুর্য, সামরিক দক্ষতা, শৃ´খলা, সেনাপতির সংহত পরিচালনা, রেল ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা
প্রচলনের কল্যাণে ইংরেজদের সাফল্য প্রায় সুনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের পক্ষে সাহস ও
উদ্দীপনার অভাব ছিল না, কিন্তু কেন্দ্রীভ‚ত নেতৃত্বের অভাবে অভ্যুত্থান প্রথমাবস্থা থেকে ‘স্বত:স্ফ‚র্ত
উচ্ছৃ´খলায়' পরিণত হয়। অভ্যুত্থানের মূলে বিদেশী শাসনের যন্ত্রণাবোধ থাকলেও তাকে সংগঠিত রূপ
দেওয়া সম্ভবপর হয়নি। যে আদর্শ ও অনুপ্রেরণা উদ্দীপনার শিহরণ সারা দেশে সঞ্চারিত করে তা ক্রমশ
লুপ্ত হয়ে পড়ে। বিদ্রোহী সিপাহীদের মধ্যে একটি বোধ স্পষ্ট ছিল যে, পরাজয়ের শাস্তি হল নির্মম অত্যাচার
ও ভয়াবহ মৃত্যু। এই কারণে তারা প্রায়ই অকারণ নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করায় জনসাধারণের সমর্থন থেকে
বঞ্চিত হয়ে পড়ে। সিপাহীদের অর্থাভাব ও গোলাগুলির অভাবও তাদের পঙ্গু করে দিয়েছিল।
চতুর্থত উল্লেখ করা যায় যে, সামগ্রিকভাবে ভারতের জনসাধারণ এই বিদ্রোহে ব্যাপক বা সক্রিয়ভাবে
অংশগ্রহণ করেনি। যে সামগ্রিক গণবিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসনকে অবলুপ্ত করতে পারতো সেই ব্যাপক রূপ এই
বিদ্রোহ ধারণ করতে পারেনি। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণী এই বিদ্রোহের মধ্যে কোন
শুভ সম্ভাবনার ইঙ্গিত খুঁজে পায়নি। তারা এই বিদ্রোহকে সামন্ততান্ত্রিক এবং রক্ষণশীল শক্তির প্রতিরোধ
সংগ্রাম বলে অভিহিত করেন। ইংরেজ শাসনকে তাঁরা সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ বলে মনে করেন এবং ভারতের
উন্নতির জন্য এবং পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার জন্য ইংরেজ শাসনের স্থায়িত্ব কামনা করেন।
পরিশেষে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ইংরেজ সৈন্যাধ্যক্ষ লরেন্স ভ্রাতৃদ্বয়, নিকলসন, আউট্রাম, হ্যভলক,
এডওয়ার্ড প্রভৃতির নিপুণ দক্ষতা, অবিচল ধৈর্য্য এবং অসম সাহসিকতা ব্রিটিশ শাসকদের সাফল্য সুনিশ্চিত
করেছিল।
সিপাহী বিদ্রোহের স্বরূপ
সিপাহী বিদ্রোহের চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা বিতর্ক ও মতান্তর রয়েছে। বিভিন্ন অভিমতের
সমন¦য় সাধন করে এ পর্যন্ত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আজও সম্ভবপর হয়নি এবং কখনও হবে
কিনা বলা দুরূহ। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যতীত প্রায় সকল ঐতিহাসিক বা লেখকই এই বিদ্রোহকে সিপাহী
বিদ্রোহ ভিন্ন অন্য কোন ব্যাপক বিদ্রোহ আখ্যা দিতে সম্মত হননি। বিদ্রোহ দমনের অন্যতম নায়ক স্যার
জন লরেন্স অভিমত পোষণ করেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ মূলত সামরিক বিদ্রোহ এবং চর্বি-মিশ্রিত
কার্তুজের প্রচলন থেকেই এর উৎপত্তি। টমসন ও গ্যারাট একে রাজ্যচ্যুত রাজা ও জমিদারদের রাজ্য ও
সম্পত্তি পুনরুদ্ধার বা মুঘল সম্রাটের সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা বা নিছক একটি সামরিক বিদ্রোহ বলে উল্লেখ
করেছেন। অপরদিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদীগণ এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে ঘোষণা
করেছেন। প্রখ্যাত বিপ্লবী নায়ক দামোদর আভারকর এই বিদ্রোহকে ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে উল্লেখ
করেছেন। সম্প্রতি ভারতীয় দুই প্রধান ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার এবং ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন এই
বিদ্রোহের স্বরূপ ও প্রকৃতি সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।তাঁদের মতে, সামরিক বাহিনীতে আলোড়নের
মধ্য দিয়ে এই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়। অভ্যুত্থানের কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনতার সমর্থন লাভ করলেও এটিকে
জাতীয় বিদ্রোহ বলা কোনক্রমেই সঙ্গত বা ইতিহাসনিষ্ট নয়।
কয়েকটি ক্ষেত্রে কিন্তু প্রায় সকল ঐতিহাসিক এবং লেখকদের মধ্যে মতৈক্য লক্ষ্য করা যায়। পশ্চিম বিহার
থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত যে ভ‚খন্ডে অধিকাংশ বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয় সেখানে বিদ্রোহ প্রায় সর্বত্র জনসমর্থন
লাভ করেছিল। স্বয়ং গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করেন যে, অযোধ্যার এই
বিদ্রোহ প্রকৃতপক্ষে এক জাতীয় অভ্যুত্থানের আকার ধারণ করেছিল। ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন উল্লেখ করেন যে,
হিন্দু-মুসলিম সৌভ্রাত্র এই অভ্যুত্থানের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং বিদ্রোহের সর্বস্তরে হিন্দু এবং মুসলমানের
অংশগ্রহণ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল। ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন বিভিন্ন দৃষ্টান্তের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে,
জনসাধারণের স্তর থেকেই বিদ্রোহীরা তাদের দল বৃদ্ধি করেছিল। এই বক্তব্যের সমর্থনে অনেকে ঐ সময়ে
উত্তর ভারতের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ‘চাপাটি' (রুটি) চালানোর ঘটনার কথা উল্লেখ করে থাকেন। তাঁরা
একে মহা বিদ্রোহের নীরব পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিদ্রোহের সময় বাংলায় এর কোন প্রভাব
পড়েনি একথা বলা হয়ে থাকে, কিন্তু সেখানেও অসন্তোষের অভাব ছিল না এবং ব্রিটিশ পক্ষের পরাজয়ের
সংবাদে সকলেই পুলকিত হয়ে উঠতো। শিক্ষিত জনগণের মধ্যে ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে যে ক্ষোভ ছিল তা
পাদ্রী আলেকজান্ডার ডাফ-এর রচনা থেকে জানা যায়। তিনি মন্তব্য করেন, “অনেকে ইংরেজ শাসনের
অনুক‚লে থাকলেও তারা ঐ শাসনের প্রতি অনুরক্ত বললে ভুল ধারণার সৃষ্টি হবে।”
ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার এই বিদ্রোহের স্বরূপ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এর কোন একটি বিশিষ্ট
রূপ ছিল না। এটি ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেছিল। তিনি এই অভিমত দেন যে, “ঞযব
ড়ঁঃনৎবধশ ১৮৫৭ ধিং হড়ঃ সঁঃরহু মৎড়রিহম ড়ঁঃ ড়ভ ধ হধঃরড়হধষ ৎবাড়ষঃ ড়ৎ ভড়ৎসরহম ঢ়ধৎঃ ড়ভ রঃ, নঁঃ
ঢ়ৎরসধৎরষু ধ সঁঃরহু মৎধফঁধষষু ফবাবষড়ঢ়রহম রহঃড় ধ মবহবৎধষ ৎবাড়ষঃ রহ ঃযৎবব পবৎঃধরহ ধৎবধং.” তাঁর মতে
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ মূলত ছিল সিপাহীদের বিদ্রোহ, কোথাও সিপাহীদের পশ্চাতে ছিল স্থানীয়
জমিদার বা অভিজাত শ্রেণীর প্রতিনিধিগণ। আবার কোথাও ছিল জনসাধারণের সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়
সহানুভ‚তি, যদিও জনসাধারণের সমর্থন কোন অবস্থাতেই জনবিদ্রোহের রূপ গ্রহণ করেনি। ড. মজুমদার
এই কথাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, সেই সকল শ্রেণীই সিপাহীদের বিদ্রোহে যোগদান করেছিল
যাঁদের স্বার্থ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে ক্ষুন্ন করেছিল। যেমন বিদ্রোহের নেতৃবর্গ (মুঘল সম্রাট দ্বিতীয়
বাহাদুর শাহ, নানা সাহেব, ঝাঁসির রাণী), অযোধ্যার জমিদার, তালুকদার ও প্রজারা। সে কারণে দেশীয়
রাজন্যবর্গের এক বিরাট অংশ এবং জনসাধারণের বিপুল অংশ এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি। উপরন্তু
তারা ব্রিটিশ পক্ষকে যথাসাধ্য সাহায্য করতেও ত্রুটি করেনি।
অপরদিকে ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন মন্তব্য করেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের আন্দোলন সিপাহীদের বিদ্রোহরূপেই
আরম্ভ হয়েছিল, কিন্তু সর্বত্র এই বিদ্রোহ সিপাহীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। অযোধ্যা ও শাহাবাদ ভিন্ন
অন্যত্র বিদ্রোহীদের প্রতি জনসাধারণের সমর্থন এমন কিছু ছিল না যার দ্বারা একে জাতীয় সংগ্রামের পর্যায়ে
উন্নীত করা যেতে পারে। এছাড়া ড. সেন মন্তব্য করেছেন যে, যে সকল অঞ্চলে জনসাধারণের সমর্থন ছিল
সে সকল অঞ্চলের বিদ্রোহী নেতাদের লক্ষ্য ছিল প্রতি বিপ্লব ঘটানো।
প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় অভ্যুত্থান বলতে যা বুঝায় তা ১৮৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাবলীর মধ্যে পুরোপুরি
দেখতে পাওয়া যায় না। কেননা তার উপযোগী বাস্তব পরিস্থিতি তখনও সৃষ্টি হয়নি। প্রকৃত জাতীয়
আন্দোলনের আবির্ভাব সে যুগে সম্ভব ছিল না। এই প্রসঙ্গে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২১ মে হিন্দু প্যাট্রিয়ট
পত্রিকায় হরিশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় লেখেন, “গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা থেকে দেখা গিয়েছে যে, ভারতীয়
প্রজাদের মনে ইংরেজ শাসনের প্রতি আনুক‚ল্য একান্ত স্বপ্ন। শুধু সিপাহীদের নয় সারা দেশেই যেন বিদ্রোহ
ঘটছে। ...সিপাহীদের সাম্প্রতিক বিদ্রোহগুলো সম্পর্কে বলা যায়, প্রথম থেকেই দেশের সহানুভ‚তি তারা
আকর্ষণ করতে পেরেছে। এমন একজনও ভারতবাসী নেই যে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ফলে যে অসন্তোষ
দেখা দিয়েছে তার গুরুভার অনুভব করছে না। বস্তুত, এই অসন্তোষ বিদেশী শক্তির অধীন হয়ে থাকার
অবশ্যম্ভাবী পরিণাম।”
কোন বিদ্রোহে বেশির ভাগ জনগণ অংশগ্রহণ করে না। সংখ্যা লঘুরাই বিদ্রোহ বা বিপ্লব শুরু করে। নিরস্ত্র
জনগণের পক্ষে কাতারে কাতারে বিদ্রোহে যোগ দেয়া সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায়
নেই যে, অধিকাংশ ভারতবাসী মনে মনে ব্রিটিশ শাসনের অবসান কামনা করেছিল। বিদ্রোহী সিপাহীরা যদি
আর একটু সতর্ক ও সংযত হতো তবে তারা অনেক বেশি জনসমর্থন পেতো। এদিক দিয়ে বিচার করলে
১৮৫৭-র বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলাই সঙ্গত।
অভ্যুত্থানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বিতর্ক থাকা সঙ্গত এবং স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতবর্ষের জনমানসে এই
বিদ্রোহের তাৎপর্য অসাধারণ। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, পরবর্তীকালে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে এই
বিদ্রোহের স্মৃতি যে আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল তা বিনা সংশয়ে গ্রহণ করা যায়।
সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল
সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল সম্পর্কে স্যার লেপেন গ্রিফিন মন্তব্য করেছেন, “ঞযব ৎবাড়ষঃ ড়ভ ১৮৫৭ ংবিঢ়ঃ
ঃযব ওহফরধহ ংশু পষবধৎ ড়ভ সধহু পষড়ঁফং.” প্রকৃতপক্ষে এই বিদ্রোহের ফলে বহু অনিশ্চয়তার অবসান এবং
ভারতের শাসন ব্যবস্থার বিরাট পরিবর্তন ঘটেছিল।
মহাবিদ্রোহ ভারতের রাষ্ট্র পরিচালকদের শাসননীতির ক্ষেত্রকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। ইংরেজ
শাসকগণ এ যাবত অনুসৃত শাসননীতির মৌলিক ব্যর্থতা উপলব্ধি করেছিলেন এবং শাসন ব্যবস্থার
পরিবর্তন সাধন করতে এগিয়ে আসেন। কোম্পানির ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ভারতের জনসাধারণের স্বার্থের
পরিপন্থী বিবেচনা করে ব্রিটেনের কর্তৃপক্ষ ভারতের শাসনভার একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে রাখতে
স্বীকৃত হলেন না। ফলে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২
আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন পাশ করে ভারত সাম্রাজ্যের শাসনভার ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার হাতে
অর্পণ করে। ফলে ভারতে ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রত্যক্ষ শাসন প্রবর্তিত হয়। বোর্ড অব কন্ট্রোলের
পরিবর্তে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের মধ্য থেকে একজনকে ভারত সচিবের পদে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৫
জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি কাউন্সিলের সাহায্যে ভারত সাম্রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করবেনÑ এরূপ
সিদ্ধান্ত হয়। ভারতের গভর্নর জেনারেল ‘ভাইসরয়' বা রাজপ্রতিনিধি নামে পরিচিত হন। ‘গভর্নর জেনারেল'
লর্ড ক্যানিং প্রথম ‘ভাইসরয়' বা রাজপ্রতিনিধি পদে নিযুক্ত হন। এই ক্ষমতা হস্তান্তর করাকে কানিংহাম
‘বাস্তব পরিবর্তন অপেক্ষা আনুষ্ঠানিক মাত্র' বলে বর্ণনা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ১৭৮৪ খ্রি. পিটের ভারত
আইন লিপিবদ্ধ হওয়ার সময় থেকে ভারত সম্পর্কিত সকল ক্ষমতা বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতির ওপর
ন্যস্ত করা হয়েছিল এবং ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা ও দায়িত্ব বহুক্ষেত্রে হ্রাস করা হয়েছিল।
দেশীয় রাজ্যগুলোর আনুগত্য লাভের উদ্দেশ্যে এবং একে চিরস্থায়িত্ব প্রদানের আশায় লর্ড ডালহৌসি
প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যক্ত হয় এবং দেশের চিরাচরিত রীতিগুলোকে লঙ্ঘন করা হবে না বলে
উল্লেখ করা হয়। দেশীয় রাজাদের এই বলে আশ্বাস দেয়া হয় যে, ব্রিটিশ সরকার আর রাজ্য বিস্তার করবেন
না। তাদের সঙ্গে যেসব সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেগুলো বলবৎ থাকবে এবং সকল বিষয়ে তাদের
অধিকার ও মান মর্যাদা রক্ষা করা হবে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের অভ্যুত্থান সংঘটনে ব্রিটিশ শাসকদের প্রবর্তিত
কয়েকটি সংস্কারের দায়িত্ব রয়েছে মনে করে বিদ্রোহের পর থেকে কর্তৃপক্ষ সমাজ সংস্কার বিষয়ে সতর্ক
হয়। ভারতের সামাজিক রীতিনীতি ও ধর্মীয় ব্যাপারে সরকার হস্তক্ষেপ করবেন না বলে আশ্বাস দেয়া হয়।
মহারাণীর ঘোষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয় যে, একমাত্র ব্রিটিশ নাগরিক ও প্রজাদের হত্যাকান্ডের সঙ্গে
প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ ভিন্ন অপর সকলকে শাস্তিদান থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হবে এবং জাতিধর্ম
নির্বিশেষে যোগ্যতানুযায়ী ভারতবাসীকে উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত করা হবে। ঘোষণাপত্রের এই আশ্বাস বাস্তবে
রূপ দেয়ার জন্য ১৮৬১ খ্রি. ভারতীয় সিভিল সার্ভিস আইন পাশ করা হয়।
ভারতীয় সামরিক বিভাগ পুনর্গঠিত করা হয়। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে সিপাহীদের ভ‚মিকা প্রধান ছিল
বিবেচনা করে ‘ভাগ কর এবং শাসন কর' নীতি (উরারফব ধহফ ৎঁষব) অবলম্বন করে প্রেসিডেন্সি
সেনাবাহিনীকে পৃথক করে রাখা হয়, ইউরোপীয় সৈন্যসংখ্যা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করা হয়, গোলন্দাজ
বাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয় এবং সীমান্ত রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষার দায়িত্ব
ইউরোপীয় সামরিক কর্মচারীদের ওপর অর্পণ করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুগত কয়েকটি বিশেষ
সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে বেশি সংখ্যায় সৈন্য নিয়োগ করা শুরু হয়।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয়করণ নীতি ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইন দ্বারা
পরিত্যক্ত হয় এবং বোম্বাই ও মাদ্রাজ কাউন্সিলকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রত্যর্পিত হয়।এই নতুন
কাউন্সিল আইন দ্বারা ভারতের নতুন আইনসভা গঠিত হয়। নতুন আইন সভায় পাতিয়ালার মহারাজা,
বেনারসের রাজা ও স্যার দীনকর রাওকে বেসরকারি সভ্যরূপে গ্রহণ করা হয়।
বিদ্রোহের ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেয়া হয়
এবং তাঁর পুত্র ও পৌত্রগণকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ‘১৮৭৬ খ্রি. রাজনকীয় অধিকার' আইন
ইংল্যান্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়াকে ‘ভারত সম্রাজ্ঞী' আখ্যা দেয়া হয়। এইভাবে ইতিহাস খ্যাত মুঘল বংশের
অবসান ঘটে।
বিদ্রোহ দমনের পর ভারতের সামাজিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে। হিন্দুগণ পাশ্চাত্য সাহিত্য এবং বিজ্ঞান
সর্বান্তকরণে গ্রহণ করে আধুনিকতার পথে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু ভারতীয় মুসলমানগণ তীব্র ইংরেজ
বিরোধী মনোভাব গ্রহণ করে এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতা সর্বোতভাবে বর্জন করে পিছিয়ে পড়তে থাকে।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যেমন একটি যুগের পরিসমাপ্তি তেমনই একটি নতুন যুগের আবির্ভাবের সুযোগ
হয়। ব্রিটিশ শাসকগণ তখন থেকে ভারতের অভ্যন্তরে সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি করা অপেক্ষা অর্থনৈতিক
শোষণের প্রতি অধিকতর দৃষ্টি দিতে থাকেন। ভারতের সামন্ততান্ত্রিক শক্তির নিকট থেকে যে বিরোধিতার
আশঙ্কা এতদিন পর্যন্ত ছিল তার অবসান হয়। তখন থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে এক নতুন আন্দোলনের
সম্মুখীন হতে হয়। এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয় মধ্যবিত্ত সমাজ।
নব উদ্ভূত মধ্যবিত্ত শ্রেণী প্রথম পর্যায়ে বৃটিশ সরকারের চরিত্র পরিবর্তন করে তাকে ভারতের স্বার্থের
উপযোগী করে তুলতে সচেষ্ট হয়।
সারসংক্ষেপ
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ বিগত একশত বৎসরে ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকার কর্তৃক গৃহীত
ব্যবস্থা ও অনুসৃত নীতির প্রতি ভারতীয় জনগণের চরম অসন্তোষের ফল। রাজনৈতিক, সামাজিক ও
ধর্মীয় শাসন সংক্রান্ত এবং অর্থনৈতিক, সামরিক কারণে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। ঔপনিবেশিক
শাসন তথা শোষণ, বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবার আশায় সিপাহীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির ভিতকে কঠোরভাবে নাড়া দিয়েছিল। বৃটিশদের ক‚টকৌশল, সিপাহীদের সুষ্ঠু সামরিক
সংগঠন, পরিকল্পনাহীন বিদ্রোহ ও অস্ত্র-শস্ত্রের অভাব এবং ইংরেজদের সামরিক সংগঠনের দক্ষতা,
সর্বোপরি জনগণের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থনের অভাবে এই বিপ্লব ব্যর্থ হয়। বিপ্লবের ফলস্বরূপ ভারতে
কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। ভারতের শাসনভার সরাসরি বৃটেনের রাণীর অধিকারে চলে যায়।
পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত কাউন্সিল ভারতের শাসনভার পরিচালনা
করবে। এসঙ্গে স্বত্ববিলোপ নীতির বিলুপ্তি ঘোষণা, ইউরোপীয় সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি, ভারতীয়দের উচ্চ
রাজপদে নিয়োগ দান প্রভৃতি সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১। রতন লাল চক্রবর্তী, সিপাহী যুদ্ধ ও বাংলাদেশ, ঢাকা।
২। এ.কে.এম. আবদুল আলীম, ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস, ঢাকা।
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ভারতে সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল কত খ্রিস্টাব্দে?
(ক) ১৭৫৭ খ্রি. (খ) ১৮৫৭ খ্রি.
(গ) ১৭৬৪ খ্রি. (ঘ) ১৮২৭ খ্রি.।
২। কি কারণে লর্ড ডালহৌসি অযোধ্যা রাজ্য ছিনিয়ে নিয়েছিলেন?
(ক) কুশাসনের অভিযোগ এনে (খ) সুষ্ঠু শাসন পরিচালনার অভিপ্রায়ে
(গ) সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য (ঘ) রাজ কর্মচারীদের অভিযোগের কারণে।
৩। ‘এবহবৎধষ ঝবৎারপবং ঊহষরংঃসবহঃ অপঃ’ কে প্রবর্তন করেছিলেন?
(খ) লর্ড ডালহৌসি (খ) লর্ড ক্যানিং
(গ) লর্ড ওয়েলসলি (ঘ) লর্ড কর্নওয়ালিস।
৪। সর্বপ্রথম কার নেতৃত্বে সিপাহীরা বিদ্রোহ (১৮৫৭ খ্রি.) ঘোষণা করেছিলেন?
(ক) মঙ্গল পান্ডে (খ) অসীম পান্ডে
(দ) সুসল পান্ডে (ঘ) অমল পান্ডে।
৫। কতজন সদস্য নিয়ে ভারত শাসনের জন্য কাউন্সিল গঠিত হয়?
(ক) ২০ (খ) ১০
(গ) ১৫ (ঘ) ২৫।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণের ওপর একটি টীকা লিখুন।
২। সিপাহী বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ চিহ্নিত করুন।
৩। সিপাহী বিদ্রোহের সামরিক কারণসমূহ উল্লেখ করুন।
৪। পরিকল্পনাহীন বিদ্রোহ সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণÑ স্বপক্ষে যুক্তি দিন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা করুন।
২। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের স্বরূপ উল্লেখপূর্বক এর ব্যর্থতার কারণ বর্ণনা করুন।
৩। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের বিস্তার ও দমনের বিশেষ উল্লেখপূর্বক এর ফলাফল বর্ণনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত