সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের বাংলা অভিযান

ভিযান
সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের বাংলা অভিযান
১২২৭ খ্রিস্টাব্দ সুলতান গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজীর পরাজয় ও মৃত্যুর পর বাংলার মুসলিম রাজ্য দিল্লির
মুসলিম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর দিল্লির দুর্বল শাসনের সুযোগে
বাংলায় মুসলমান শাসনকর্তারা একাধিকবার বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। ১২৬৬
খ্রিস্টাব্দ সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লির সিংহাসন আরোহণ করে লখনৌতির বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন
করেন। বলবন জানতেন যে, বাংলা সর্বদা বিদ্রোহ করে।সুতরাং তিনি আমীন খানকে লখনৌতির শাসনকর্তা
এবং তুিঘ্রল খান সহকারি গভর্নর নিযুক্ত করেনÑ যাতে একে অপরের বিদ্রোহাত্মক কাজে বাধা দিতে পারে
এবং দৈনন্দিন ঘটনা সুলতানের গোচরে আনতে পারে। কিন্তু তুঘ্রিল খান অল্পদিনের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে
তাঁর উপরিস্থ গভর্নর আমীন খানকে বহিষ্কার করেন এবং লখনৌতির রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করার দিকে
মনোযোগ দেন। তিনি উড়িষ্যা আক্রমণ করেন এবং বিপুল ধনরতœ ও হাতি হস্তগত করার পর তুঘ্রিল খানের
মনে স্বাধীন হবার সাধ জাগে। তিনি প্রচলিত রীতি ভঙ্গ করে যুদ্ধলব্ধ অর্থ দিল্লিতে না পাঠিয়ে নিজে রেখে

দেন। তিনি পূর্ববঙ্গে অভিযান পরিচালনা করেন এবং সোনারগাঁও-এর নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত জয় করেন।
সোনারগাঁও-এর অদূরে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ তৈরি করেন যা ‘তুঘ্রিলের কিল্লা' বা ‘নারকিল্লা' নামে অভিহিত।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজত্বকালে মোঙ্গলেরা পাঞ্জাব সীমান্তে প্রায় প্রতি বৎসরই আক্রমণ চালায়;
তাই, বলবন তাঁর রাজত্বের ষষ্ঠ বৎসরে পাঞ্জাব সীমান্তে গমন করেন এবং সেখানে প্রায় দুই বৎসরকাল
অতিবাহিত করেন। এই সময়ে তিনি একবার কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হলে কিছুদিন দরবারে উপস্থিত হতে
অপারগ হয়ে পড়েন। ফলে, বাইরে রটে যায় যে, সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের মৃত্যু হয়েছে। এই
সুযোগে বাংলায় তুঘ্রিল খানের অনুচরেরা তাঁকে স্বাধীনতা ঘোষণার পরামর্শ দেন এবং তুঘ্রিল তাঁর
অনুচরদের পরামর্শ মেনে সুলতান মুগিসউদ্দিন নাম ধারণ করে লখনৌতিতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তুঘ্রিল কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার খবর পেয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে পড়েন।
তিনি তুঘ্রিলকে শাস্তি দেয়ার জন্য অযোধ্যার গভর্নর মালিক তুরমতীকে সেনাপতি নিযুক্ত করে তুঘ্রিলের
বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। ত্রিহুতের নিকট উভয় বাহিনী সামনাসামনি শিবির স্থাপন করে বেশ
কিছুদিন অপেক্ষা করে রইল। দূরদর্শী তুঘ্রিল খান এই সুযোগে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে নতুন নতুন সৈন্য সংগ্রহ
করেন এবং দিল্লির সৈন্যবাহিনীর সেনানায়কদের মধ্যে গোপনে প্রচুর ধনরতœ বিলি করেন। এতে দিল্লিস্থ
বাহিনীর অনেকেই ভিতরে ভিতরে তুঘ্রিল খানের পক্ষ অবলম্বন করে। যুদ্ধ আরম্ভ হলে দিল্লির সৈন্যবাহিনীর
অনেকেই যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকে। ফলে, দিল্লি বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং পলায়ন করে।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন এর পরের বৎসর তুঘ্রিলকে দমন করার জন্য শিহাবউদ্দিন নামে আর একজন
সেনাপতির অধীনে এক নতুন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু
হঠাৎ দিল্লির সৈন্যবাহিনীর কিছু অংশ যুদ্ধক্ষেত্র হতে সরে দাঁড়ায়। সম্ভবত, তুঘ্রিলের নিকট হতে তারা
গোপনে উৎকোচ গ্রহণ করেছিল। ফলে, শিহাবউদ্দিনও পরাজিত হয়ে দিল্লি ফিরে যান। অত:পর ১২৮০-
৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দিকে সুলতান বলবন নিজে বিশাল সৈন্যবাহিনীসহ লখনৌতি আক্রমণ করেন। পথে
দোয়াব ও অযোধ্যা হতে তিনি অনেক সৈন্য সংগ্রহ করেন। বলবন লখনৌতির কিছু দূরে পৌঁছলে তুঘ্রিল
লখনৌতি ছেড়ে পলায়ন করেন। বলবন সিপাহসালার হিসামউদ্দিনকে লখনৌতির শাসক নিযুক্ত করেন।
অত:পর বলবন তুঘ্রিলের পশ্চাদ্ধাবন করেন। তুঘ্রিল সোনারগাঁও-এর সন্নিকটে নির্মিত দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ
করেন। কিন্তু বলবন সোনারগাঁও-এর রাজা দনুজ রায়ের সাহায্যে দুর্গ আক্রমণের প্রাক্কালে তুঘ্রিল উড়িষ্যার
দিকে পলায়ন করেন। বলবন খবর পেয়ে ক্ষিপ্রগতিতে তুঘ্রিলকে অনুসরণ করেন। এবং উভয় সৈন্যদলকে
কয়েকভাগে ভাগ করে তুঘ্রিলের খোঁজে পাঠান। একদিন এইরূপ এক ক্ষুদ্রবাহিনী মালিক শের মান্দাজের
অধীনে বেশ কয়েক মাইল দূরে যায় এবং একদল ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলিত হয়। এই ব্যবসায়ীদের কাছ
থেকে মালিক জানতে পারেন যে, মাইল খানেক দূরে একটি নদীর তীরে তুঘ্রিল শিবির স্থাপন করেছেন।
মালিক শের মান্দাজ তাঁর ক্ষুদ্রবাহিনীসহ ক্ষিপ্রগতিতে তুঘ্রিলের শিবির আক্রমণ করেন এবং তুঘ্রিল এইরূপ
আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁর সৈন্যরা যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায় এবং তুঘ্রিল নিজে সাঁতরিয়ে
নদী পার হওয়ার সময় হঠাৎ একটি তীর বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন কিছুদিন
লখনৌতিতে অবস্থান করেন এবং পুত্র বুঘরা খানকে লখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দিল্লি ফিরে যান,
ফলে বাংলা আবার দিল্লির শাসনাধীনে আসে।
সার সংক্ষেপ
হিন্দু-বৌদ্ধ শাসনের অবসানের পর মুসলিম শাসকদের আগমন বাংলার সমাজ সংস্কৃতিতে ব্যাপক
পরিবর্তন বয়ে আনে। বাংলায় প্রাথমিক মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কালে বখতিয়ার খলজী অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। নিজের দৃঢ়তা, অভিযানে ঝাড়খন্ড অঞ্চল ব্যবহার এবং ঝটিকা
আক্রমণ বখতিয়ারের সহজ সাফল্যের কারণ। খলজী মালিকদের অধীনে (আলী মর্দান খলজী, শীরান
খলজী) বাংলায় মুসলমান শাসন অব্যাহত থাকে। এরপর ইওয়াজ খলজী লখনৌতির মুসলিম রাজ্যকে
বাংলার মুসলিম রাজ্যে পরিণত করতে শুন্ডু করেন। মুসলমান শাসকদের মধ্যে তিনিই প্রথম বাংলায়
নৌবাহিনীর পত্তন করেন। তাঁর আমলের অনেক মুদ্রা পাওয়া গেছে। ইওয়াজ দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায়

মুসলিম সম্প্রসারণের পথ সুগম করেন। ইওয়াজের মৃত্যুর পর দিল্লির সুলতান বলবন বাংলা অভিযান
পরিচালনা করেন। এসময় বুঘরা খান লখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং বাংলা দিল্লির
শাসনাধীনে আসে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে (√) চিহ্ন দিন।
১। বখতিয়ার খলজী কোন অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন?
(ক) আফগানিস্তানের গরমশির (খ) মধ্য এশিয়ার
(গ) উত্তর ভারতের (ঘ) দক্ষিণ ভারতের।
২। বখতিয়ার খলজী কোন বিহার জয় করেন?
(ক) সোমপুর বিহার (খ) শালবন বিহার
(গ) ওদন্তপুরী বিহার (ঘ) আনন্দ বিহার।
৩। বখতিয়ারের নদীয়া আক্রমণের পথ কোনটি?
(ক) তেলিয়াগড় (খ) ঝাড়খন্ড
(গ) দেবকোট (ঘ) সোনারগাঁও।
৪। খলজী মালিকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?
(ক) বখতিয়ার খলজী (খ) আলী মর্দান খলজী
(গ) শীরাণ খলজী (ঘ) ইওয়াজ খলজী।
৫। সোনারগাঁও-এর দুর্ভেদ্য দুর্গের নামÑ
(ক) তুঘ্রিলের কিল্লা (খ) বাঁশের কিল্লা
(গ) বসনকোর্ট দুর্গ (ঘ) একডালা দুর্গ।
৬। দনুজ রায় কোন অঞ্চলের রাজা ছিলেন?
(ক) সাতগাঁও (খ) লখনৌতি
(গ) সোনারগাঁও (ঘ) চট্টগ্রাম।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। বখতিয়ার খলজীর তিব্বত অভিযানের বিবরণ দিন।
২। আলীমর্দান খলজী সম্পর্কে যা জানেন লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বাংলা বিজয় অভিযান পর্যালোচনা করুন।
২। বখতিয়ার খলজীর কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন।
৩। গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজীর আমলে মুসলিম বাংলার সীমানা কতদূর বিস্তৃত হয়েছিল? তাঁর কৃতিত্ব
মূল্যায়ন করুন।
৪। গিয়াসউদ্দিন বলবনের বাংলা অভিযানের ফলাফল বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]