ঔপনিবেশিক অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য


ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠাকালে ভারতের অর্থনীতি ছিল কৃষিভিত্তিক। পরিপূরক হিসেবে ছিল কুটির শিল্প
যার মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় এবং শৌখিন দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন হতো। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম
এবং প্রধান অর্থনৈতিক ফল হলো একদিকে কৃষি বিষয়ক সম্পর্ক তথা ভ‚মি ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন এবং
অন্যদিকে কুটির শিল্পের বিশেষত বয়ন শিল্পের ধ্বংস সাধন। উভয়বিধ পরিবর্তন সাধিত হয় ঔপনিবেশিক
শক্তির স্বার্থের তাগিদে। যেহেতু বাংলায় সর্বপ্রথম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, তাই এই
অর্থনৈতিক ওলটপালটের প্রাথমিক ধাক্কা এই অঞ্চলেই লাগে।
প্রায় দুইশত বছর পর্যন্ত ঔপনিবেশিক শাসনামলে উপমহাদেশের অর্থনীতি কৃষি প্রধানই থেকে যায়। তথাপি
কিছু শিল্প-কারখানা ভারতবর্ষের প্রধান শহরগুলোতে গড়ে ওঠে। তবে কৃষি অথবা শিল্প যে ক্ষেত্রেই হোক
না কোন, ঔপনিবেশিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচিত হয় বৃটেনের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের নিরিখে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে যে সমস্ত উপাদান অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বের দাবিদার
সেগুলো হচ্ছেÑ
(১) প্রায় সমসাময়িক কালে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব এবং এদেশীয় অর্থনীতির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব,
(২) নতুন ভ‚মি ব্যবস্থার প্রবর্তন, এবং (৩) ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ঐক্য সাধন।
প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগে ভারতবর্ষীয় কুটির শিল্পজাত দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উভয় চাহিদা
বিদ্যমান ছিল। ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পর ভারতীয় দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পেতে শুরু করে। বাংলার
কুটির শিল্পের মধ্যে বস্ত্রশিল্প অগ্রগণ্য ছিল। ঢাকার মসলিনের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও
ভারতবর্ষের অন্যান্য এলাকায় নির্মিত হতো ধাতব দ্রব্য এবং কাষ্ঠ নির্মিত নানা দ্রব্য সামগ্রী। ইংল্যান্ডের
সফল শিল্প বিপ্লবের পর সেখানে কারখানায় উৎপন্ন দ্রব্য অনেক সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে যায়। ফলে
ভারতবর্ষের হস্তনির্মিত দ্রব্যাদি প্রতিযোগিতায় হেরে যায়। এইভাবে দেশীয় শিল্পের অবনতি ও ধ্বংসের পথ



সুগম হয়। ঔপনিবেশিক সরকারের নীতি উপরোক্ত অর্থনৈতিক প্রবণতাকে ত্বরানি¦ত করে। ভারত থেকে
ইংল্যান্ডে বস্ত্রাদি রপ্তানির উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়Ñ যার প্রধান লক্ষ্য ছিল বৃটিশ বস্ত্রশিল্পকে
উৎসাহিত করা। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে অনুসৃত মুক্ত বাণিজ্য নীতির ফলে ভারতে বৃটিশ পণ্যদ্রব্যের
অবাধ আগমন ঘটতে থাকে। দেশীয় শিল্পকে রক্ষার কোন চেষ্টা ঔপনিবেশিক সরকার করেনি; কারণ নিজ
দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নতুন ভ‚মি ব্যবস্থা এবং ভ‚মি রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি ভারতবর্ষের দীর্ঘ ঐতিহাসিক
অভিজ্ঞতা ও ধ্যান-ধারণার পরিপন্থী ছিল। ভ‚মি রাজস্ব সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বাংলাতেই প্রথম আরম্ভ
হয়। ১৭৬৫ খ্রি. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে মুঘল সম্রাট কর্তৃক বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিওয়ানী প্রদানের
মধ্য দিয়ে এর সূত্রপাত ঘটে, এবং ১৭৯৩ খ্রি. ভারতে কোম্পানির কর্ণধার লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক চিরস্থায়ী
বন্দোবস্ত প্রবর্তনের মাধ্যমে এর একটি পর্যায় শেষ হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে যে নতুন জমিদার
শ্রেণীর সৃষ্টি হয় তারা জমির সত্যিকার মালিক হয়ে যায় এবং জমির ওপর কৃষকের অধিকার হরণ করা হয়।
অথচ প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলে কৃষকই ছিল বস্তুতপক্ষে ভ‚মির মালিক এবং জমিদারগণ রাজস্ব সংগ্রাহক
মাত্র। ভ‚মি মালিকানার পরিবর্তনের প্রভাব বাংলার অর্থনীতিতে অত্যন্ত ক্ষতিকারক ছিল। এর সামাজিকরাজনৈতিক ফলও সুখকর হয়নি। জমিতে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর আবির্ভাবের ফলে কৃষকের ওপর বৈধ এবং
অবৈধ করের বোঝা বেড়ে যায়। অল্প সংখ্যক সুবিধাভোগী, রাজানুগত শ্রেণীর জন্ম হয়, বেশিরভাগ ভ‚মিনির্ভরশীল মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। জমির মালিকানা পেলে
জমিদারগণ স্বীয় চেষ্টায় ভ‚মির উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে ইংল্যান্ডের মতো এদেশেও কৃষি বিপ্লব
সাধন করবেÑ লর্ড কর্নওয়ালিসের এই আশা সম্পূর্ণভাবে বিফল হয়েছিল। অবশ্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের
ফলে কোম্পানিও খুব বেশি লাভবান হয়নি। জমিদার কর্তৃক সরকারকে দেয় রাজস্বের পরিমাণ চিরতরে
নির্ধারিত হওয়ার ফলে পরবর্তীকালে ভ‚মির মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধিজনিত বাড়তি আয় থেকে সরকার
বঞ্চিত হয়। এই বন্দোবস্তে শুধু লাভবান হয় জমিদার এবং জমিদার কর্তৃক সৃষ্ট অন্যান্য মধ্যস্বত্বভোগী
গোষ্ঠী। এই কারণে কোম্পানির শাসন ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বিস্তৃত হওয়ার পর ঔপনিবেশিক সরকার
ঐ সমস্ত অঞ্চলে (অর্থাৎ ভারতের উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম ও মধ্যবর্তী এলাকাসমূহ) এই বন্দোবস্ত প্রবর্তনে
বিরত থাকে।
বাংলার কৃষকের শোচনীয় অবস্থার নিরসনে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। শুধু ১৮৫৭ খ্রি.
কোম্পানির শাসনের অবসান এবং বৃটিশ রাজের শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পরবর্তীকালে জমির ওপর কৃষকের
অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু সীমিত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়; যেমন: ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের রাজস্ব
আইন (জবহঃ অপঃ) এবং ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ভ‚মিস্বত্ব আইন (ঞবহধহপু অপঃ)।
কোম্পানির শত বছর শাসনকালের বেশিরভাগ সময়ই ছিল অর্থনৈতিকভাবে স্থবির। কোম্পানির নীতিই এর
জন্য মূলত দায়ী ছিল। উনিশ শতকের মাঝামাঝি বিশেষত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক শাসনভার ছেড়ে
দেওয়ার পর থেকে কিছুটা অর্থনৈতিক পরিবর্তন তথা উন্নয়নের আভাস লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। বাড়তি
জনসংখ্যা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ইতোমধ্যে সাধিত ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ঐক্য এই
পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী। এই সময়ে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কলিকাতা ও বোম্বাই শহরের আশেপাশে
কিছু কলকারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বোম্বাইতে প্রাথমিক পর্যায়ে স্থাপিত হয় বস্ত্রকল এবং
কলিকাতায় পাটকল। পরবর্তী প্রায় একশত বছর অর্থাৎ ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তিকাল পর্যন্ত পরাধীন
ভারতের শিল্পায়নের ধারায় কয়েকটি বিশেষত্ব প্রতিভাত হয়; যেমনÑ (১) ঔপনিবেশিক সরকার কর্তৃক
শিল্পায়ন নিরুৎসাহিত করার নীতি সত্তে¡ও কিছু মানুষের ব্যক্তিগত উচ্চাশা ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে


ভারতের সীমিত শিল্পায়ন, এবং (২) বেশির ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভোগ্যপণ্য উৎপাদন যার ফলে
যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিন ইত্যাদির জন্য বৃটিশ ভারত সবসময় বৈদেশিক আমদানীর ওপর নির্ভরশীল ছিল।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতবর্ষে বৃটিশ শাসনের অর্থনৈতিক ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও
লেখালেখি শুরু হয়। এই ব্যাপারে পথিকৃৎ ছিলেন দাদাভাই নওরোজী। ১৮৭১ খ্রি. প্রকাশিত তাঁর
'চড়াবৎঃু ধহফ ঃযব টহ-ইৎরঃরংয জঁষব রহ ওহফরধ' শীর্ষক পুস্তকে তিনি সর্বপ্রথম এই প্রসঙ্গের অবতারণা
করেন। তিনি লিখেন যে, বৃটিশ শাসনের অর্থনৈতিক ফল হচ্ছে ভারত থেকে অবিরামভাবে ইংল্যান্ডে সম্পদ
পাচার হওয়া। এই ছিল বিখ্যাত উৎধরহ ঞযবড়ৎু বা সম্পদ পাচার তত্তে¡র মূলকথা। পরবর্তী সময়ে আরো
অনেক অর্থনীতিবিদ ও জাতীয়তাবাদী নেতা এই তত্তে¡র বিস্তারিত আলোচনায় ব্রতী হন। ভারতের দারিদ্র্যের
সঙ্গে এই সম্পদ পাচারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে যায়। এই তত্তে¡র ব্যাখ্যাকারীদের মধ্যে রমেশচন্দ্র দত্ত,
মহাদেব গোবিন্দ রানাডে এবং গোপাল কৃষ্ণ গোখলের নাম উল্লেখযোগ্য। রমেশচন্দ্র দত্তের মতে, সম্পদ
পাচারের সঙ্গে কৃষক শ্রেণীর দারিদ্র্যের একটা কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান; কারণ ভ‚মি রাজস্বই ছিল
পাচারকৃত সম্পদের প্রধান উৎস। উৎধরহ ঞযবড়ৎু পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বিশ শতকের শুরুতে কৃষিজাত উৎপন্ন দ্রব্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি জমির
অধিকারী কৃষককুলের আর্থিক অবস্থার কিঞ্চিৎ উন্নতি সাধিত হয়। বাংলার পাটের ব্যাপারে এ কথা প্রযোজ্য
ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এটি সম্ভব হয়। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে
ধীরগতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত চলতে থাকে। শতাব্দীর শুরুতে ভারতের শিল্প মূলধন ছিল খুব স্বল্প পরিমাণ।
বিশেষত কৃষি মূলধনের তুলনায় শিল্প মূলধনের স্বল্পতা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ১৯১৩ খ্রি. মোট কৃষি
পণ্যের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি টাকা এবং কৃষি ভ‚মির মোট আনুমানিক মূল্য ছিল ৪০০০ কোটি টাকা।
একই সময়ে শিল্পখাতে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকা। প্রয়োজনীয় আর্থিক
অবকাঠামোর অভাব এবং ভ‚মির দ্রুত মূল্যবৃদ্ধি ছিল এই অবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪Ñ১৮ খ্রি.) ভারতীয় অর্থনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কৃষি দ্রব্যের দাম
ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে ভ‚মিহীন কৃষক এবং স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্গতি বাড়ে, যদিও স্বচ্ছল
কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পায়। ১৯১৮Ñ১৯ খ্রি. ভারতের বিভিন্ন এলাকায় অনাবৃষ্টির ফলে শস্যহানি ঘটে এবং
দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দেয়। তবে অষ্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণ গম এবং বার্মা (যা তখন বৃটিশ ভারতীয়
সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল) থেকে চাল আমদানি করার ফলে ভারত ব্যাপক দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পায়।
যুদ্ধের ফলে শিল্পায়নের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এতোদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র বস্ত্রশিল্প এবং পাট শিল্পই ছিল প্রধান।
এখন ঔপনিবেশিক সরকার শিল্পোন্নয়নের গুরুত্ব বুঝতে পারে; কারণ বিভিন্ন দ্রব্যের জন্য কেবল বৈদেশিক
আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা যুদ্ধকালে বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়। বিশেষত লৌহ এবং ইস্পাত শিল্পের
উন্নয়নে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটা সুবিধাজনক অবস্থার সৃষ্টি করে। ঞধঃধ ওৎড়হ ধহফ ঝঃববষ ঈড়সঢ়ধহু এই
সময় প্রায় একচেটিয়া অধিকার ভোগ করে এবং প্রচুর মুনাফা অর্জনে সমর্থ হয়। শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি
সত্তে¡ও যুদ্ধের সময় শ্রমজীবী শ্রেণীর জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে যায়। যুদ্ধকালীন মুদ্রাস্ফীতি এবং সম্পদের
সুষম বণ্টনের অভাব এর প্রধান কারণ। বস্তুত, যুদ্ধের কারণে ভারতবর্ষে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান আরো
বেড়ে যায়। যুদ্ধের সময় বাংলার পাটচাষী এবং পাটকল মালিক উভয়ই লাভবান হয়। পাটশিল্পের প্রবৃদ্ধি
যুদ্ধের পরও অর্থাৎ ১৯২০-এর দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে কয়েক বছর বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছিল তার ঢেউ
ভারতবর্ষেও লাগে। কৃষিজাত সামগ্রীর দাম কমতে থাকে। সরকার পড়তি দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন


বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়। অতপর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রাদেশিক
স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রাদেশিক সরকার কৃষকদের দুরবস্থা লাঘবের জন্য এগিয়ে আসে। তবুও
অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষতিকর প্রভাব শহর অপেক্ষা গ্রামেই বেশি অনুভ‚ত হয়। এ কারণে ১৯৩০-এর দশকে
ভারতীয় রাজনীতির মূল সামাজিক ভিত শহর থেকে গ্রামে সরে আসে। এ বাস্তবতা পরবর্তী জাতীয়তাবাদী
আন্দোলনে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৩৯ খ্রি. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে উপর্যুক্ত প্রবণতা আরও বৃদ্ধি
পায়। তদুপরি সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ও মজুতদারীর ফলে ১৯৪৩ খ্রি. বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ
দেখা দেয়। ঔপনিবেশিক শাসনাধীন দুইশত বছরের অর্থনৈতিক ইতিহাসের আলোকে দেখা যায় যে, এই
সুদীর্ঘ সময়ে ভারতবর্ষের অর্থনীতি মূলত সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ ও শ্রেণীস্বার্থের শৃ´খলে আবদ্ধ ছিল। এ কারণে
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই অঞ্চল অনেক পিছিয়ে থাকে যার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এখনও চলছে।
সারসংক্ষেপ
ঔপনিবেশিক শাসন ভারতের ঐতিহ্যিক অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক উন্নয়ন
সম্ভবপর হয়নি। কৃষিতে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে। সরকারি নীতির কারণে শিল্পোন্নয়ন
ব্যাহত হয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কল-কারখানা অপ্রতুল ছিল। অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক অবস্থার
চাপে সাময়িক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটলেও তাতে শ্রেণী স্বার্থই লাভবান হয়। ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে
ভারতবর্ষ অনুন্নত এবং বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হয়।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১। ঝ.ঝ.গ. উবংধর, ঊপড়হড়সরপ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ওহফরধ, উবষযর, ১৯৯০.
২। উরবঃসধৎ জড়ঃযবৎসঁহফ, অহ ঊপড়হড়সরপ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ওহফরধ: ঋৎড়স চৎব-ঈড়ষড়হরধষ ঞরসবং ঃড় ১৯৯১,
ঘবি ণড়ৎশ, ১৯৯৩.
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ঔপনিবেশিক শক্তি বাংলার কোন শিল্পকে সর্বপ্রথম ধ্বংস করে?
(ক) পাট শিল্প (খ) বয়ন শিল্প
(গ) জাহাজ নির্মাণ শিল্প (ঘ) কোনটিই নয়।
২। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব হয়Ñ
(ক) ষোড়শ শতাব্দীতে (খ) সপ্তদশ শতাব্দীতে
(গ) অষ্টাদশ শতাব্দীতে (ঘ) উনবিংশ শতাব্দীতে।
৩। সম্পদ পাচার তত্তে¡র পথিকৃৎ কে ছিলেন?
(ক) মহাÍা গান্ধী (খ) দাদাভাই নওরোজী
(গ) বল্লভ ভাই প্যাটেল (ঘ) উল্লেখিত কেউই নন।
৪। ভ‚মিস্বত্ব আইন প্রণীত হয়Ñ
(ক) ১৮৮৫ খ্রি. (খ) ১৮৫৯ খ্রি.


(গ) ১৯১৩ খ্রি. (ঘ) ১৯২০ খ্রি.।
৫। বাংলায় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষের কারণÑ
(ক) অনাবৃষ্টির কারণে শস্যহানি (খ) মজুতদারী
(গ) খাদ্যশস্য রপ্তানি (ঘ) বন্যা।


সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
২। উৎধরহ ঞযবড়ৎু ব্যাখ্যা করুন।
৩। ভারতবর্ষের অর্থনীতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কি প্রভাব ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। ঔপনিবেশিক অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করুন।
২। ঔপনিবেশিক আমলে ভারতবর্ষে শিল্পায়ন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]