বাংলার নবজাগরণ সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখুন।


উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের
সূচনা হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কার এবং সমাজ সংস্কার আন্দোলন সংঘটিত হয়। আধুনিক শিক্ষার প্রবর্তন
এবং নতুন সাহিত্য বিকশিত হয়। জীবনের সবক্ষেত্রে এই নবচিন্তা-চেতনা ও কর্মকান্ডক নবজাগরণ হিসেবে
আখ্যায়িত করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে বাংলায় ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা ছিল এই নবজাগরণের প্রধান
অনুঘটক। অনেক সময় ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে তুলনায় একে বাংলার রেনেসাঁস বলেও অভিহিত করা
হয়। স্থানিক ও কালগত ব্যবধানের কারণে বাংলার এই জাগরণ ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে পুরোপুরি
তুলনীয় হতে পারে না। এজন্য অনেকে একে রেনেসাঁস বলতে নারাজ, এমনকি নবজাগরণ বলতেও আপত্তি
করেন। ফলে অনেক অনর্থক বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে।
ইউরোপীয় রেনেসাঁস শুরু হয় পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে। এর একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, এর দ্বারা
মধ্যযুগের সঙ্গে আধুনিক যুগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পার্থক্য নির্ণয় করা সহজ হয়। একই মানদন্ডে বাংলার
নবজাগরণের বিশ্লেষণান্তে দেখা যায় যে, এর ফলে কার্যত মধ্যযুগের সঙ্গে আধুনিক যুগের পার্থক্য সূচিত
হয়েছে। ইউরোপের ক্ষেত্রে এটা সর্বোতভাবে সত্য, বাংলার ক্ষেত্রে অংশত। বাংলার নতুন চিন্তা ও কার্যাবলী
লক্ষ্য করলে এটা বোধগম্য হয়। অবশ্য স্বীকার করতে হবে যে, নতুন ভাবধারা সব সম্প্রদায় ও শ্রেণীকে
সমভাবে প্রভাবিত করেনি। তবুও এর গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোন কারণ নেই। বাংলার নবজাগরণের
মধ্যে অপূর্ণতা ছিল, ব্যর্থতাও ছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, ইউরোপীয় রেনেসাঁস আরম্ভ হয় স্বাধীন
নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্রপুঞ্জ ইতালিতে, কিন্তু বাংলা তথা ভারতবর্ষ ছিল পরাধীন।
বৃটিশ শাসনের ফলে সৃষ্ট আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের মধ্যে নবজাগরণের বীজ নিহিত
ছিল। নতুন শাসন ব্যবস্থা বাংলায় প্রথম শুরু হয়। এর ফলস্বরূপ নবজাগরণের প্রথম পদধ্বনি বাংলাতেই
শোনা যায়। সেই বিবেচনায় ইউরোপে ইতালির যে ভ‚মিকা ছিল ভারতবর্ষে বাংলার সে ভ‚মিকা ছিল।
ধনতান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ট, যা ছিল
সামন্ততান্ত্রিক অচলায়তন ভেঙ্গে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কায়েমের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এই মাপকাঠিতে
মূল্যায়ন করলে বাংলার নবজাগরণের অপূর্ণতাসমূহ দৃষ্টিগোচর হয়। বাংলার আর্থ-সামাজিক বিবর্তন
ইউরোপের সামন্তবাদ থেকে ধনতন্ত্রে উত্তরণের সাথে পুরোপুরি খাপ খায় না। এখানে বৃটিশ শাসনের ফলে
বাণিজ্যিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সূচনা হয়, কিন্তু একই সঙ্গে ১৭৯৩ খ্রি. প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে
এক নতুন সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থারও সূত্রপাত হয়। বস্তুত, সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের সহাবস্থান ছিল ভারতবর্ষে



বৃটিশ শাসনের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কাজেই সামন্ততান্ত্রিক চিন্তা-চেতনাও ছিল বাংলার নবজাগরণের
অন্যতম উপাদান।
নবজাগরণ একদিনে শুরু হয়নি এবং স্বল্পকালের মধ্যে শেষও হয়নি। পুরো উনিশ শতক ছিল এর সময়কাল
যার পরিসীমায় নবজাগরণের বহুমাত্রিক বিস্তার ঘটে। তথাপি রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) স্থায়ীভাবে
কলিকাতা শহরে বসবাস শুরু করার বছর অর্থাৎ ১৮১৪ সালকে নবজাগরণের প্রারম্ভিক বছর গণ্য করা হয়ে
থাকে। তাঁর জীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে নতুন চিন্তাধারার মূর্ত প্রকাশ ঘটেছে। বাংলার
নবজাগরণের প্রাথমিক পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। একই সাথে তাঁর কার্যাবলীর মধ্যে বিধৃত
আছে নবজাগরণের অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা। রামমোহন বৃটিশ শাসনকে ভারতের জন্য বিধাতার আশীর্বাদ
স্বরূপ মনে করেছেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তেরও তিনি সমর্থক ছিলেন;
এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন জমিদার শ্রেণীর একজন ছিলেন রামমোহন। তাঁর ধর্ম তথা সমাজ
সংস্কার প্রচেষ্টা প্রচলিত আর্থ-সামাজিক কাঠামোর মধ্যেই সীমিত ছিল। তবুও সময়ের বিচারে তিনি ছিলেন
প্রগতিশীল চিন্তা ও সংস্কারমূলক কর্মের মুখ্য প্রতিভ‚। তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে কেউই চিন্তা ও কর্মের
ব্যাপ্তিতে তাঁর সমকক্ষ ছিলেন না। তাঁর লেখনীর মধ্যে তাঁর ধ্যান-ধারণার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তিনি
আরবি-ফারসি ভাষাতেও ব্যুৎপন্ন ছিলেন। তাঁর একেশ্বরবাদী পুস্তক “তুহফাতুল মুয়াহিদীন” ফারসি ভাষায়
লিখিত এবং উনিশ শতকের প্রারম্ভে প্রকাশিত হয়। কলিকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার আগে থেকেই
রামমোহন ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তৎপর ছিলেন। রাম মোহনের একেশ্বরবাদী ধর্মচিন্তার ফলস্বরূপ ১৯২৮
খ্রি. প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মসভা। ধর্ম সংস্কারের মাধ্যমে রামমোহন সমাজ সংস্কার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে সতীদাহ প্রথা রদের ব্যাপারে তাঁর ভ‚মিকা স্মরণযোগ্য। তিনি এই বর্বর প্রথার বিরুদ্ধে তাঁর
লেখনীর মাধ্যমে জনমত গঠন করেন এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ককে নৈতিক সমর্থন দান করেন।
১৮২৯ খ্রি. ডিসেম্বর মাসে বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা বেআইনী ঘোষণা করেন। এভাবে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও
কুসংস্কার নির্মূলের মধ্য দিয়ে বাংলায় নবজাগরণের সূচনা হয়। তবে নতুন ভাবধারার সঙ্গে পুরাতন ধ্যানধারাও ক্রিয়াশীল ছিল। রামমোহনের প্রথাবিরোধী ধর্মবিশ্বাসের জন্য অনেক রক্ষণশীল ব্যক্তি তাঁর
বিরুদ্ধাচরণ করতেন। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা ছিলেন রাজা রাধাকান্ত দেব। তাঁর নেতৃত্বে গোঁড়া
হিন্দুগণ সতীদাহ প্রথার স্বপক্ষে বৃটিশ সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু সময়ের দাবি উপেক্ষা
করে এই অমানবিক প্রথা টিকিয়ে রাখা রাধাকান্ত দেব এবং তাঁর অনুসারীদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কলিকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের
উদ্দেশ্যে বিত্তশালী হিন্দুদের উদ্যোগে স্থাপিত এই কলেজ বাংলার নবজাগরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা
পালন করে। এ প্রসঙ্গে হিন্দু কলেজের শিক্ষক হেনরি ডিরোজিওর (১৮০৭Ñ৩১) অবদান বিশেষভাবে
স্মরণীয়। স্বল্পায়ু ডিরোজিও ছিলেন একাধারে অধ্যাপক, কবি, দার্শনিক এবং মুক্ত চিন্তার অগ্রনায়ক। যুক্তি ও
বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ছিল তাঁর জীবন দর্শন। ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র সতের
বছর বয়সে তিনি হিন্দু কলেজে ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাসের শিক্ষক নিযুক্ত হন। শুধু শ্রেণীকক্ষে
শিক্ষাদানের মধ্যে তাঁর কার্যক্রম সীমিত ছিল না। সাহিত্য সভা ও বিতর্ক সভার মাধ্যমে তিনি কলেজের
সেরা ছাত্রদেরকে নিজের চিন্তা-ভাবনার প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তাঁর ছাত্রদেরকে
মুক্তচিন্তা চর্চায় উৎসাহিত করতেন। এ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত হলেও তাঁর কবিতায় দেশপ্রেমের প্রচুর
নিদর্শন পাওয়া যায়। বস্তুত, পরবর্তীকালে স্বাদেশিকতা বলতে যা বোঝায় তার প্রাথমিক স্ফ‚রণ হয় তাঁর
কবিতায়।
ডিরোজিও ও তাঁর শিষ্যদের কার্যাবলীতে প্রচলিত সামাজিক রক্ষণশীলতা বিশেষত হিন্দু ধর্মের প্রতি প্রচন্ড
ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ পায়। এঁরা ছিলেন র‌্যাডিকেল চিন্তাধারার সোচ্চার প্রতিনিধি। রামমোহন রায় ও তাঁর
অনুসারীরা চেয়েছিলেন ধর্ম সংস্কারের মধ্য দিয়ে সমাজ সংস্কার; ডিরোজিয়ানদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মের সম্পূর্ণ
বিলোপ সাধন এবং নতুন সমাজ গঠন। রামমোহন রায়ের মতাদর্শ ডিরোজিয়ানদের নিকট সুবিধাবাদী বলে
প্রতীয়মান হয়। ক্রমশ এই র‌্যাডিকেলদের কেউ কেউ মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাঁরা মদ্যপান ও গো-


মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতি নিজেদের ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রকাশ করতে থাকেন। হিন্দু কলেজ
কর্তৃপক্ষ ডিরোজিওকে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে পদচ্যুত করে। তাঁর বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্রদের নৈতিক
অধপতন ঘটানোর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। অল্প কয়েকমাস পর মাত্র বাইশ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ
করেন।
ডিরোজিওর শিষ্যগণ তাঁর মৃত্যুর পরও কলিকাতার সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনে সক্রিয় ছিলেন। শেষতক
তাঁরা ইয়ং বেঙ্গল নামে পরিচিত হন। তাঁদের মধ্যে বয়সের অনুপাতে পরিণত বুদ্ধি ও সমাজ চেতনার
পরিচয় পাওয়া যায়। ডিরোজিয়ানগণ তাঁদের গুরুর জীবদ্দশায় এনকোয়ারার (ঊহয়ঁরৎবৎ) এবং জ্ঞানানে¦ষণ
নামক দু'টি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন।
এই পত্রিকা দু'টিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারিত হয়। এসবের মধ্যে ছিল জুরির বিচারের
অধিকার, আদালতের ভাষা হিসেবে ইংরেজির প্রচলন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইত্যাকার দাবি-দাওয়া।
১৮৪২ খ্রি. ইয়ং বেঙ্গলগণ একটি নতুন সংবাদপত্র প্রকাশ করেন; এর নাম ছিল ইবহমধষ ঝঢ়বপঃধঃড়ৎ। এই
পত্রিকায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মতামত সম্বলিত লিখা স্থান পেত। ১৮৫১ খ্রি. বৃটিশ ইন্ডিয়ান
এসোসিয়েশন গঠন প্রক্রিয়ায় ডিরোজিয়ানদের অনেকের গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা ছিল।
শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে ইয়ং বেঙ্গলদের প্রভাব কমতে শুরু করে। ঐ সময়কার সংস্কারমূলক কার্যাবলীর
প্রধান পুরুষ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০Ñ৯১ খ্রি.)। তিনি বিধবা বিবাহ প্রচলন এবং স্ত্রী শিক্ষা
বিস্তারের কাজে মনোনিবেশ করেন। বিদ্যাসাগর অধিকতর সামাজিক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হন। আইনের
মাধ্যমে বিধবা বিবাহ প্রচলন সহজসাধ্য হলেও একে সত্যিকার সামাজিক রীতিতে পরিণত করা খুবই কঠিন
ছিল। বরাবরের মতো এ ব্যাপারেও সামাজিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামিই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। একই কারণে
স্ত্রী শিক্ষা প্রসারেও ঈশ্বরচন্দ্রের সাফল্য ছিল সীমিত। তবুও এসব সংস্কারের ব্যাপারে তিনিই ছিলেন
পথিকৃৎ। তিনি বহুবিবাহ এবং বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। বাঙালি হিন্দু সমাজের সার্বিক
কল্যাণই ছিল বিদ্যাসাগরের সংস্কার কার্যাবলীর মূল লক্ষ্য। সংস্কারমুক্ত মন ও জীবনবোধে উনিশ শতকের
বাংলায় তাঁর সমকক্ষ পাওয়া ভার।
বাংলা সাহিত্যের বিকাশ নবজাগরণের অন্যতম ফলস্বরূপ। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের শিক্ষার
জন্য স্থাপিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলা গদ্যের বিকাশে বিরাট অবদান রাখে। পরবর্তীকালে
বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র ও অন্যান্য লেখকদের হাতে বাংলা গদ্য পরিণত রূপ পায়। সাহিত্যের
অন্যান্য শাখা যেমন নাটক, কবিতা ইত্যাদিও পরিশীলিত ও আধুনিক রূপ ধারণ করে।
একথা স্বীকার করতে হবে যে, উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগরণের অনেক দুর্বলতা ও অপূর্ণতা ছিল।
মূলত হিন্দু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে নতুন চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। মুসলিম সম্প্রদায় ছিল
এই নবজাগরণের পরিধির বাইরে। এর প্রধান কারণ, মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে অনীহা। এসব
সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও উনিশ শতকের প্রারম্ভ থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলায় যে বহুমাত্রিক পরিবর্তনের জোয়ার বয়ে
যায় তাকে অবশ্যই নবজাগরণ হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। এর ঐতিহাসিক মূল্য অস্বীকার করা যায়
না।
সারসংক্ষেপ
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনে নতুন চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ও
বিকাশ শুরু হয়। ইংরেজ শাসনের ফলে আধুনিক শিক্ষার প্রচলন এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন
এর প্রধান কারণ। এই নতুন ভাবধারার বহুমাত্রিক প্রকাশ ঘটে; যেমনÑ ধর্ম সংস্কার, সমাজ সংস্কার,
আধুনিক সাহিত্যের উদ্ভব ইত্যাদি। মোটকথা, মধ্যযুগের সঙ্গে আধুনিক যুগের পার্থক্য নির্দেশক
কর্মকান্ডই ছিল নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্য, যার ফলে বাংলা তথা ভারতে আধুনিকতার সূচনা হয়।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইতিহাস পৃষ্ঠা  ২৩৯
অবশ্য নবজাগরণ সকল সম্প্রদায় ও শ্রেণীকে সমানভাবে প্রভাবিত করেনি। আধুনিক শিক্ষার অসম
বিস্তার এর মূল কারণ। নানা সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও নবজাগরণের ঐতিহাসিক তাৎপর্য অনস্বীকার্য।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১. বিনয় ঘোষ, বাংলার নবজাগৃতি, কলিকাতা, ১৯৭৯।
২. অ.ঋ. ঝধষধযঁফফরহ অযসবফ, ঝড়পরধষ ওফবধং ধহফ ঝড়পরধষ ঈযধহমবং রহ ইবহমধষ, ১৮১৮-১৮৩৫,
ঈধষপঁঃঃধ, ১৯৬৫.
৩. ঝঁংড়নযধহ ঝধৎশধৎ, ঙহ ঃযব ইবহমধষ জবহধরংংধহপব, ঈধষপঁঃঃধ, ১৯৭৯.
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। বাংলার নবজাগরণ শুরু হয় কোন শতাব্দীতে?
(ক) ষোড়শ (খ) সপ্তদশ
(গ) অষ্টাদশ (ঘ) উনবিংশ।
২। নবজাগরণের ফলে বাংলায়Ñ
(ক) প্রাচীন যুগ শেষ হয় (খ) মধ্য যুগ শুরু হয়
(গ) আধুনিক যুগ শুরু হয় (ঘ) কোনটিই সত্য নয়।
৩। ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণেরÑ
(ক) পুরোপুরি মিল আছে (খ) কোন মিল নাই
(গ) আংশিক মিল আছে (ঘ) কোনটিই সত্য নয়।
৪। রামমোহন রায় কোন সাল থেকে কলিকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেনÑ
(ক) ১৮১৪ (খ) ১৮১৭
(গ) ১৮২০ (ঘ) ১৮৩০।
৫। নি¤েœর কোন পত্রিকার সঙ্গে ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী জড়িত ছিল?
(ক) সম্বাদ কৌমুদী (খ) সমাচার দর্পন
(গ) বেঙ্গল গেজেট (ঘ) জ্ঞানানে¦ষণ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। নবজাগরণ বাংলায় প্রথম শুরু হয় কেন?
২। বাংলার নবজাগরণে হেনরী ডিরোজিওর ভ‚মিকা কি ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। উনবিংশ শতাব্দিতে বাংলায় ধর্ম ও সমাজ সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২। বাংলার নবজাগরণ সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]