বাংলায় মুসলিম জাগরণ আবদুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলী


পলাশী যুদ্ধের পরবর্তী শতাধিক বছর বাংলার মুসলমানদের জন্য চরম দুঃসময় ছিল। সরকারি শিক্ষানীতি,
ভ‚মিনীতি ইত্যাদির ফলে মুসলিম সমাজের সার্বিক অবক্ষয় ত্বরানি¦ত হয়। এর জন্য মুসলমান জনগণ
নিজেরাও কম দায়ী ছিল না। নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া বা আধুনিক শিক্ষা
গ্রহণে তাদের একাধারে অক্ষমতা ও অনিচ্ছা মুসলিম সম্প্রদায়ের অধপতনের জন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল।
উনিশ শতকের প্রারম্ভ থেকে বাংলায় যে নবজাগরণের জোয়ার আসে তার সঙ্গে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক
ছিল না। ভারতবর্ষের অন্য কোন অঞ্চল অপেক্ষা বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এই এলাকার
মুসলমানদের দুর্দশার অভিঘাত সারা ভারতে অনুভ‚ত হয়। বাংলায় মুসলমান সম্প্রদায় জীবনের সবক্ষেত্রে
পিছিয়ে পড়ে। কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অশিক্ষা এবং দারিদ্র্য তাদের নিত্য সহচরে পরিণত হয়।
এই অবস্থায় উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দু'জন নেতার আবির্ভাব বাংলার মুসলমানদের জীবনে নতুন
আশা-উদ্দীপনার সঞ্চার করে। দেরিতে হলেও মুসলমান সমাজের একাংশের মাঝে এক নবজাগরণের সৃষ্টি
হয়। এই জাগরণের বহিপ্রকাশ ঘটে নতুন শিক্ষা গ্রহণের আকাক্সক্ষার মাধ্যমে। যে দুই নেতার চেষ্টায়
মুসলিম সমাজে এই পরিবর্তনের সূচনা হয় তাঁরা হলেন নওয়াব আবদুল লতিফ (১৮২৮Ñ১৮৯৩খ্রি.) এবং
সৈয়দ আমীর আলী (১৮৪৯Ñ১৯২৮ খ্রি.)। বয়সের পার্থক্য সত্তে¡ও এরা দু'জন সমসাময়িক ছিলেন এবং
নিজ নিজ সামর্থানুযায়ী মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতির কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তবে দুঃখের বিষয় যে
তাঁরা একযোগে কাজ করেননি এবং দু'জনের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য বিদ্যমান ছিল। তথাপি তাঁদের অক্লান্ত
চেষ্টার ফলে উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে বাংলার মুসলমান সমাজের মধ্যে যে জাগরণের সৃষ্টি হয় তার
যথাযথ মূল্যায়ন অত্যাবশ্যক।



আবদুল লতিফ তৎকালীন পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার
নাম কাজী ফকির মাহমুদ। তাঁর পরিবার আরব বংশোদ্ভূত বলে দাবি করা হতো। কাজী ফকির মাহমুদ
ফারসি ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন এবং কলিকাতার সদর দিওয়ানী আদালতে ওকালতি করতেন। নিজ পুত্রকে
আধুনিক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করার ইচ্ছা তাঁর ছিল। কিন্তু সেই সময় মুসলমানদের জন্য কলিকাতা
মাদ্রাসা ব্যতীত আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। হিন্দু কলেজের দ্বার শুধুমাত্র হিন্দু ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত
ছিল। তবে আবদুল লতিফ যাতে আরবি-ফারসি-উর্দুর সঙ্গে ইংরেজিতেও পারদর্শী হন সে ব্যাপারে তাঁর
পিতা যতœশীল ছিলেন। শিক্ষা সমাপনান্তে কিছুদিন একজন ধনীলোকের ব্যক্তিগত সচিবের পদে কাজ করার
পর আবদুল লতিফ প্রথমে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল এবং পরে কলিকাতা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৮৪৯
খ্রিস্টাব্দে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৮৬২ খ্রি. তাঁকে ইবহমধষ
খরমরংষধঃরাব অংংবসনষু-র সদস্য মনোনীত করা হয়। এই পদে তিনিই ছিলেন প্রথম মুসলমান। ১৮৮০
খ্রি. সরকার তাঁকে সম্মানসূচক নওয়াব উপাধি প্রদান করেন।
আবদুল লতিফের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলার মুসলিম সমাজকে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহী করে
তোলা। অবশ্য শিক্ষাগত ও সামাজিক ব্যাপারে আবদুল লতিফের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ রক্ষণশীল ছিল। তিনি
মুসলমান সম্প্রদায়ের নানা অযৌক্তিক চিন্তা-চেতনায় আঘাত করতে চাননি। যেহেতু উচ্চ শ্রেণীর মুসলিম
পরিবার তাঁর সন্তানকে হিন্দু ও খ্রিস্টান শিক্ষক অধ্যুষিত বিদ্যালয়ে পাঠাতে রাজি ছিল না, সেজন্য মুসলিম
ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগও অনেক সীমিত ছিল। আবদুল লতিফ কলিকাতা মাদ্রাসাকে আধুনিক
শিক্ষার উপযোগী করে তোলার জন্য সচেষ্ট হন। ফলে সেখানে সরকারি সহায়তায় এ্যাংলো-পারসিয়ান
বিভাগ চালু এবং ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৫৫ খ্রি. হিন্দু কলেজকে প্রেসিডেন্সি কলেজে
রূপান্তরিত করার সরকারি সিদ্ধান্তের পশ্চাতে আবদুল লতিফের বিরাট ভ‚মিকা ছিল। এই কলেজে জাতি-ধর্ম
নির্বিশেষে অধ্যয়নের অনুমতি দেওয়া হয়। মহসীন ফান্ডের টাকা যাতে মুসলিম ছাত্রদের বেশি উপকারে
আসে সেজন্যে তিনি চেষ্টা করেন এবং বহুলাংশে সফলও হন।
১৮৬৩ খ্রি. আবদুল লতিফ গড়যধসসবফধহ খরঃবৎধৎু ঝড়পরবঃু গঠন করেন। নিয়মিত বক্তৃতার ব্যবস্থা করে
এই সমিতি জ্ঞান বিস্তারে সহায়তা করে। উত্তর ভারতে স্যার সৈয়দ আহমদ খান যে আনুগত্যের ভাবধারা
সৃষ্টিতে তৎপর ছিলেন, আবদুল লতিফের কার্যাবলীও সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল। মুসলমানগণ যাতে
ইংরেজ শাসন মেনে নিয়ে নিজেদের বৈষয়িক উন্নয়নে মনোযোগী হয় এটাই ছিল তাঁর প্রধান চিন্তা। উনিশ
শতকের শেষার্ধে ভারতীয় মুসলমানদের মানস গঠন ও চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে শাসক মহলে নানা জল্পনাকল্পনা চলছিল। ধর্মগত কারণে মুসলমানরা বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য কিনাÑ বড়লাট
লর্ড মেয়ো কর্তৃক উত্থাপিত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে উইলিয়াম হান্টার 'ঙঁৎ ওহফরধহ গঁংধষসধহং'
শীর্ষক গ্রন্থ রচনা করেন ১৮৭১ খ্রি.।
ধর্মীয় বাক-বিতন্ডার জটাজালে নিজেকে না জড়িয়েও আবদুল লতিফ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ
ব্যাপারে তিনি প্রখ্যাত মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরীর সহায়তা লাভে সমর্থ হন। ১৮৭২ খ্রি. আবদুল
লতিফের অনুরোধে মাওলানা জৌনপুরী ভারতকে ‘দার-উল-ইসলাম' হিসেবে ফতোয়া দেন। ওয়াহাবিগণ
প্রচারণা করছিল যে, ভারত “দার-উল-হারব” অর্থাৎ যেখানে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে
মুসলমানদের উচিত বিধর্মী শাসকের বিরুদ্ধে জেহাদ করা। মাওলানা জৌনপুরী যুক্তি দেন যে, যেহেতু
ভারতে মুসলমানগণ নিজ ধর্ম বিনা বাধায় পালন করতে পারে সে কারণে এদেশ ‘দার-উল-ইসলাম';
কাজেই মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরীর ফতোয়া অনুসারে বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদে লিপ্ত হওয়া


মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্যের অংশ নয়। এটাই ছিল উক্ত ফতোয়ার তাৎপর্য। এভাবে বৃটিশ শাসনের প্রতি
মুসলিম মানসে একটা আনুগত্যের বাতাবরণ তৈরিতে আবদুল লতিফ সাফল্য অর্জন করেন।
অবশ্য আবদুল লতিফের চিন্তা-ভাবনা রক্ষণশীলতা ও স্ববিরোধ থেকে মুক্ত ছিল না। ইংরেজি শিক্ষা
বিস্তারের পক্ষে হয়েও তিনি ইউরোপের উদারনৈতিক ভাবধারা গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিলেন। বাংলা ভাষা এবং
স্বীয় সম্প্রদায়ের ব্যাপারেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ ছিল। গড়যধসসবফধহ খরঃবৎধৎু ঝড়পরবঃু-র কার্যাবলী
পরিচালিত হতো ইংরেজি, উর্দু, ফারসি ইত্যাদি ভাষায়; সেখানে বাংলার কোন স্থান ছিল না। তিনি নিজে
বাংলা ভাষা ভাল জানতেন, কিন্তু চর্চা করতেন না। বাংলার মুসলমান সমাজে যে বৈষম্যমূলক আশরাফআতরাফ প্রথা প্রচলিত ছিল আবদুল লতিফ তার সমর্থক ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়। ১৮৮২ খ্রি. ভারতীয়
শিক্ষা কমিশন (হান্টার কমিশন) -এর নিকট প্রদত্ত বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলার উচ্চ ও
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মুসলমানদের ভাষা হবে উর্দু। শুধুমাত্র নি¤œবিত্ত শ্রেণীর মুসলমানদের ভাষা বাংলা; তবে সেই
ভাষাকে আরবি, ফারসি শব্দের বহুল প্রয়োগের মাধ্যমে ইসলামিকরণ করতে হবে। এসব কারণে আবদুল
লতিফের সংস্কার প্রচেষ্টা সীমিত গন্ডির ভেতর আবদ্ধ ছিল। তাই তাঁর সাফল্যও ছিল সীমিত। সে কারণে
তিনি উত্তর ভারতে তাঁর সমসাময়িক সংস্কারক স্যার সৈয়দ আহমদ খানের কাছাকাছি পৌঁছুতে সক্ষম
হননি।
আমীর আলী তুলনামূলকভাবে প্রাগ্রসর চিন্তা-চেতনার অধিকারী ছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, পদমর্যাদা
এবং পান্ডিত্যে তিনি তৎকালীন বাংলার মুসলিম সমাজে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ছিলেন। আমীর আলীর পিতা
সা'দত আলী অযোধ্যার নবাবের অধীনে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই রাজ্য বৃটিশ কর্তৃক দখলীকৃত
হওয়ার অল্প আগে তিনি বাংলায় চলে আসেন এবং হুগলীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। আমীর
আলীর পরিবারও আরব-ইরানি বংশোদ্ভূত বলে দাবি করতো। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে আমীর আলী হুগলী কলেজ
থেকে (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে) এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর বিষয় ছিল ইতিহাস। এরপর
তিনি আইনে ডিগ্রি নেন এবং কলিকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। অল্পদিন পর তিনি সরকারি
বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তিনি ওহহবৎ ঞবসঢ়ষব থেকে
ব্যারিস্টারি পাশ করেন। অতপর দেশে ফিরে এসে তিনি কলিকাতা হাইকোর্টে আকর্ষণীয় আইন ব্যবসা
গড়ে তোলেন। মুসলিম আইনে ব্যুৎপত্তির জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজ তাঁকে ঐ বিষয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক
নিযুক্ত করে। কয়েক বছর তিনি উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৮৭৭ খ্রি. তাঁকে কলিকাতার প্রেসিডেন্সি
ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ করা হয়। এরপর তিনি অস্থায়ী চীফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ লাভ করেন।
কিন্তু ১৮৮১ খ্রি. আমীর আলী সরকারি চাকুরি থেকে পদত্যাগ করে পুনরায় আইন ব্যবসাতে ফিরে আসেন।
ইতোমধ্যে আইনজীবী হিসেবে তাঁর সুনাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই সময় তাঁর কার্যকলাপ আইন পেশার
বাইরেও পরিব্যাপ্ত হয়। সরকার তাঁকে ইবহমধষ খবমরংষধঃরাব ঈড়ঁহপরষ-এর সদস্য মনোনীত করে।
১৮৮৩ খ্রি. উদারপন্থী ভাইসরয় লর্ড রিপন তাঁকে ওসঢ়বৎরধষ খবমরংষধঃরাব ঈড়ঁহপরষ-এর সদস্য পদে
মনোনয়ন দান করেন। ১৮৯০ খ্রি. আমীর আলী কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত হন এবং
পরবর্তী চৌদ্দ বছর উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯০৪ খ্রি. অবসর নিয়ে তিনি ইংল্যান্ড গমন এবং ইংরেজ
স্ত্রী ও দুইপুত্র নিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে আমৃত্যু বসবাস করেন। ১৯০৯ খ্রি. তিনি ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ
আদালত চৎরাু ঈড়ঁহপরষ-এর সদস্যপদে নিযুক্ত হন। সেই পদে তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়।
খ্যাতিপূর্ণ কর্মজীবনের পাশাপাশি আমীর আলী মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতির চেষ্টাও নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি ইসলাম ধর্মের উদার ও যুক্তিশীল (খরনবৎধষ ধহফ জধঃরড়হধষ) ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এই প্রসঙ্গে
উল্লেখযোগ্য তাঁর দু'টি বিখ্যাত গ্রন্থÑ অ ঝযড়ৎঃ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব ঝধৎধপবহং (১৮৮৯ খ্রি.) এবং ঞযব ঝঢ়রৎরঃ


ড়ভ ওংষধস (১৮৯১ খ্রি.)। দু'টি গ্রন্থই ইংল্যান্ডে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে উভয় পুস্তকের অসংখ্য
সংস্করণ প্রকাশিত হয়। শেষোক্ত গ্রন্থটি আজ অবধি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ গ্রন্থ
হিসেবে বিবেচিত। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের কাছে এই পুস্তকের আবেদন খুব বেশি। দু'টি পুস্তকে
তিনি ইসলামের গৌরবময় ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন। এই ব্যাপারে আমীর আলী স্যার সৈয়দ আহমদের থেকে
এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ মনে করতেন ইসলাম প্রগতি বিরোধী নয়, আমীর আলী
বিশ্বাস করতেন ইসলামই প্রগতি।
আমীর আলীর রাজনৈতিক চিন্তাও তাঁর সমসাময়িক অনেকের চেয়ে অগ্রগামী ছিল। তিনি মনে করতেন
মুসলমানদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা উচিত এবং সেজন্য তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠন দরকার।
১৮৭৭ খ্রি. তিনি ঘধঃরড়হধষ গড়যধসসবফধহ অংংড়পরধঃরড়হ স্থাপন করেন। পরবর্তী ২৫ বছর তিনি এই
প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত তাঁরই চেষ্টায় ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের
বিভিন্ন প্রদেশে এই সংগঠনের ৫৩টি শাখা খোলা হয়। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণই
ছিল এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। ১৮৮২ খ্রি. হান্টার কমিশনের নিকট প্রেরিত স্মারকলিপিতে এই সংগঠন
পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখে। মোটকথা, আধুনিক শিক্ষা এবং সে যুগের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার পক্ষে আমীর আলী অক্লান্তভাবে কাজ করেন। তবে প্রধানত শিক্ষার প্রশ্নে আমীর আলীর সঙ্গে
আবদুল লতিফের মতভেদ ছিল। আবদুল লতিফ মুসলমানদের জন্য ঐতিহ্যিক মাদ্রাসা শিক্ষার
প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
আবদুল লতিফ ও আমীর আলী ভিন্ন মতাবলম্বী হলেও তাঁদের লক্ষ্য ছিল এক অর্থাৎ মুসলিম সমাজের
সার্বিক উন্নয়ন সাধন। তাঁদের প্রভাব মূলত শহরকেন্দ্রিক উচ্চবিত্তের মুসলমানদের মধ্যে সীমিত ছিল। তবে
সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রতি তারা আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন একথা সত্যি, যদিও প্রচলিত
শিক্ষা ব্যবস্থায় মুসলমান কৃষকদের পক্ষে তাদের ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ যোগাড় করা সম্ভবপর ছিল
না। সীমিত সাফল্য সত্তে¡ও এই দুই নেতা উনিশ শতকে মুসলিম সমাজে নতুন জাগরণের সূচনা
করেছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁদের অবদান অকিঞ্চিৎকর মনে করার কোন অবকাশ নেই।
সারসংক্ষেপ
উনিশ শতকের বাংলার মুসলিম সমাজে অবক্ষয় ও অধপতনের অবস্থা বিরাজ করছিল এবং সে সঙ্গে
ছিল নেতৃত্বের সংকট।এ অবস্থায় নওয়াব আবদুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলীর আবির্ভাব
মুসলমানদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে। উভয় নেতা সমসাময়িক ছিলেন এবং একই উদ্দেশ্যে
অর্থাৎ মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষা বিস্তার এবং নবজাগরণ সৃষ্টির চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু
তারা একযোগে কাজ করতে সক্ষম হননি। তাদের মধ্যে অনেক ধর্মীয় ও সামাজিক প্রশ্নে মতভেদ
ছিল। আমীর আলী ছিলেন তুলনামূলকভাবে প্রাগ্রসর চিন্তার অধিকারী; কিন্তু আবদুল লতিফ সংকীর্ণতা
এবং রক্ষণশীলতা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। মতানৈক্য এবং নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও দুই নেতা
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রতি অনুরাগ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমীর আলী স্বীয়
সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছুটা রাজনীতি সচেতনতা সৃষ্টিতেও সফল হয়েছিলেন।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১। অমলেন্দু দে, বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও বিচ্ছিন্নতাবাদ, কলিকাতা, ১৯৮৭।
২। অ.ঋ. ঝধষধযঁফফরহ অযসবফ, ইধহমষধফবংয: ঞৎধফরঃরড়হ ধহফ ঞৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ, উযধশধ, ১৯৮৭.


৩। ঝরৎধলঁষ ওংষধস (বফ.), ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ইধহমষধফবংয, ১৭০৪-১৯৭১, ঠড়ষ. ও (চড়ষরঃরপধষ ঐরংঃড়ৎু) উযধশধ,
১৯৯২
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। আবদুল লতিফ জন্মগ্রহণ করেনÑ
(ক) রাজশাহীতে (খ) ফরিদপুরে
(গ) কলিকাতায় (ঘ) বোম্বেতে।
২। আবদুল লতিফ শিক্ষা গ্রহণ করেনÑ
(ক) হুগলী কলেজে (খ) হিন্দু কলেজে
(গ) কলিকাতা মাদ্রাসায় (ঘ) প্রেসিডেন্সি কলেজে।
৩। ঙঁৎ ওহফরধহ গঁংধষসধহং নামক পুস্তকের লেখক ছিলেনÑ
(ক) সৈয়দ আমীর আলী (খ) উইলিয়াম হান্টার
(গ) লর্ড মেয়ো (ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৪। আমীর আলী কর্তৃক লিখিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিলÑ
(ক) ঞযব ঝঢ়রৎরঃ ড়ভ ওংষধস (খ) উরংপড়াবৎু ড়ভ ওহফরধ
(গ) ঙৎরবহঃধষরংস (ঘ) ঘড়হব ড়ভ ঃযবস.
৫। আমীর আলী এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন কোন খ্রিস্টাব্দেÑ
(ক) ১৮৬৮ খি. (খ) ১৮৭২ খ্রি.
(গ) ১৮৯০ খ্রি. (ঘ) ১৯০০ খ্রি.।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। শিক্ষার ব্যাপারে আবদুল লতিফের মনোভাবের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
২। আমীর আলীর কর্মজীবন সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। বাংলার মুসলিম জাগরণে নওয়াব আবদুল লতিফের ভ‚মিকা মূল্যায়ন করুন।
২। সৈয়দ আমীর আলীর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চিন্তার একটি বিবরণ দিন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]