মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভ‚মি আলোচনা করুন।


মুসলিম লীগ
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় মুসলমানদের অবিসংবাদিত নেতা স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মৃত্যুর ফলে
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দেয়। এর বেশ কয়েক বছর পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন
কিছু ঘটনার সূত্রপাত হয় যা বিরাজমান সাম্প্রদায়িক স্বাতন্ত্র্যবোধকে আরো বেশি শক্তিশালী উপাদানে
পরিণত করে। লর্ড কার্জন কর্তৃক ১৯০৫ খ্রি. সম্পাদিত বঙ্গবিভাগকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক
বিরোধ জোরদার হয়। বঙ্গবিভাগ বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল কলিকাতাকেন্দ্রিক শিক্ষিত হিন্দু
পেশাজীবী শ্রেণী। নতুন সৃষ্ট প্রদেশ ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম' মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বিধায় বঙ্গবিভাগের ফলে
মুসলমানগণ লাভবান হবে এই ছিল সাধারণ ধারণা। ফলে অল্প সংখ্যক শিক্ষিত মুসলমান ব্যতীত বাংলার
বেশির ভাগ মুসলমান বঙ্গ বিভাগের পক্ষে ছিল। বঙ্গবিভাগের পক্ষে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করেন ঢাকার
নওয়াব সলিমুল্লাহ। বঙ্গবিভাগ প্রসূত বিক্ষোভ, আন্দোলন, লেখালেখি, বক্তৃতা-বিবৃতি ইত্যাদির মাধ্যমে
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার সৃষ্টি হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমান নেতৃবৃন্দ
একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন অনুভব করেন। এ-ই ছিল মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দল
প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট।
এ সময়ের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। ঘটনাটি ছিল ১৯০৬ খ্রি.
বৃটেনে উদারপন্থীগণ (খরনবৎধষং) কর্তৃক সরকার গঠন এবং নতুন সরকারের ঘোষিত ভারত-নীতি। ঐ
বছরের ২০শে জুলাই ভারত সচিব জন মর্লি ভারতবর্ষে প্রতিনিধিত্বশীল শাসন ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ইচ্ছা
ব্যক্ত করেন এবং সেই উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় শাসন সংস্কারের ইঙ্গিত দেন। এতে ভারতীয় মুসলমানদের
স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হবে সেই ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, যা মুসলিম নেতৃবৃন্দের উদ্বেগের কারণ
হয়ে দাঁড়ায়। ১ অক্টোবর পঁয়ত্রিশ জনের একটি দল আগা খানের নেতৃত্বে সিমলায় ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর
সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এটি ছিল বিখ্যাত সিমলা ডেপুটেশন। মুসলিম নেতৃবৃন্দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
লর্ড মিন্টো তাঁদেরকে এই মর্মে আশ্বস্ত করেন যে, ভবিষ্যতের যে কোন শাসনতান্ত্রিক সংস্কারে মুসলিম স্বার্থ
রক্ষার ব্যাপারে সরকার সচেতন থাকবে। তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের পেশকৃত পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা
প্রবর্তনের দাবিও সহানুভ‚তির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন।



সিমলায় সমবেত নেতারা বুঝতে পারলেন যে, শুধু একবার বড়লাটের নিকট দাবি পেশ করাই যথেষ্ট নয়;
প্রয়োজন একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সংগঠনের যার মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার জন্যে সবসময়
চেষ্টা চালানো সম্ভব। সিমলাতে প্রাথমিকভাবে স্থির করা হয় যে, কয়েক মাস পর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য মুসলিম
শিক্ষা সম্মেলনের (গড়যধসসবফধহ ঊফঁপধঃরড়হধষ ঈড়হভবৎবহপব) সভায় একটি রাজনৈতিক দল গঠনের
ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। সেই অনুসারে শিক্ষা সম্মেলন শেষ হওয়ার পর ৩০ ডিসেম্বর নওয়াব
ভিকারুল মুলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নওয়াব সলিমুল্লাহ কর্তৃক পেশকৃত নি¤েœাক্ত প্রস্তাবসমূহ
গৃহীত হয় ঃ
নি¤œলিখিত উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্যে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামক একটি রাজনৈতিক সংস্থা
গঠিত হোকÑ
(ক) বৃটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের আনুগত্য বৃদ্ধি করা এবং কোন সরকারি নীতির উদ্দেশ্য
সম্পর্কে মুসলমানদের ভুল ধারণার অবসান করা;
(খ) ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা, উন্নয়ন সাধন এবং তাদের প্রয়োজন ও
আশা-আকাক্সক্ষার কথা সরকারের নিকট সসম্মানে পেশ করা;
(গ) মুসলমানদের মধ্যে যাতে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি বৈরী মনোভাব জাগ্রত না হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ
করা। অবশ্য এই নীতির সঙ্গে লীগের অন্যান্য লক্ষ্যসমূহের যাতে কোন সংঘাত না হয় সেই ব্যাপারে
সতর্ক থাকতে হবে।
উক্ত সম্মেলনে বঙ্গবিভাগকে স্বাগত জানিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং বঙ্গবিভাগ বিরোধী আন্দোলনকে নিন্দা ও
নিরুৎসাহিত করার জন্যে সরকারের নিকট আবেদন জানানো হয়।
মুসলিম লীগের প্রথম অধিবেশন (ঝবংংরড়হ) দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ১৯০৭
খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে এবং দ্বিতীয় পর্ব পরবর্তী বছরের মার্চ মাসে আলীগড়ে। আলীগড়
সম্মেলনে আগা খানকে মুসলিম লীগের স্থায়ী সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়। একই বছরের মে মাসে
সৈয়দ আমীর আলীর সভাপতিত্বে লীগের লন্ডন শাখা খোলা হয়। আগা খান ১৯১৩ খ্রি. পর্যন্ত লীগের
সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১৯০৯ খ্রি. বৃটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। ঐ বছর মর্লি
মিন্টো সংস্কার আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের সদস্যসংখ্যা বর্ধিত করা হয়। মুসলিম
লীগের জন্যে সন্তুষ্টির কারণ ছিল এই সংস্কারের মাধ্যমে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থার স্বীকৃতিদান এবং
মুসলমানদের জন্যে আসন সংরক্ষণ। উভয়বিধ নীতি বৃটিশ ভারতীয় শাসনতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে
শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে।
মর্লি-মিন্টো সংস্কার পরবর্তী সময়ে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে একটা স্বাভাবিক আত্মতুষ্টি ও উদারতার
ভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯১০ খ্রি. জানুয়ারিতে লীগের দিল্লি অধিবেশনে মহামান্য আগা খান এই আশাবাদ
ব্যক্ত করেন যে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা (যা মুসলমানদের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজন) গ্রহণের ফলে হিন্দু ও
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে “স্থায়ী রাজনৈতিক সহানুভ‚তি এবং অকৃত্রিম কার্যকরী সম্পর্ক” গড়ে উঠবে। ঐ
বছরের ডিসেম্বর মাসে নাগপুরে লীগের চতুর্থ বার্ষিক সভার সভাপতি সৈয়দ নবী উল্লাহ উক্ত বক্তব্যের
প্রতিধ্বনি করে বলেন যে, পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে আন্তরিক সহযোগিতার সৃষ্টি করে
তাদের অভিন্ন স্বদেশভ‚মির গৌরববৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথ সুগম করবে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইতিহাস পৃষ্ঠা  ২৫৭
পরের বছর অর্থাৎ ১৯১১ খ্রি. বঙ্গবিভাগ রদের ফলে মুসলিম লীগের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। পরিবর্তিত
ব্যবস্থায় “পূর্ববঙ্গ ও আসাম” প্রদেশ বিলুপ্ত হয়। পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চল নিয়ে গভর্নর শাসিত বাংলা
প্রদেশ গঠিত হয়। বিহার ও উড়িষ্যা লেফটেন্যান্ট গভর্নর শাসিত পৃথক প্রদেশে পরিণত হয়। আসাম
বঙ্গবিভাগ-পূর্ব অবস্থায় অর্থাৎ চীফ কমিশনারের শাসনাধীনে প্রত্যাবর্তন করে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে
মুসলিম লীগ অসন্তুষ্ট হলেও কংগ্রেস দলের প্রতি এবং সার্বিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বন্ধুত্বের নীতি
অব্যাহত থাকে। কংগ্রেসী নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লীগও ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থান করে।
১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বাঁকিপুরে লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে এইমর্মে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে,
মুসলিম লীগের লক্ষ্য হচ্ছে ভারতের জন্যে যথাযথ বা প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা।
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে মুসলিম লীগের জন্যে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। বোম্বাইয়ের লব্ধ
প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লীগের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। অবশ্য একই সঙ্গে তিনি
কংগ্রেসের সদস্য হিসেবেও থাকেন। তৎকালীন ভারতীয় রাজনীতিতে একই সাথে এই দুই দলের সদস্য
হওয়া কোন অভাবনীয় ব্যাপার ছিল না। জিন্নাহ এই শর্তে লীগে যোগদান করেন যে, লীগ বা মুসলিম
স্বার্থের প্রতি তাঁর সমর্থন কোনভাবে বা কোন সময়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের ওপর কোন ছায়াপাত ঘটাবে না,
জাতীয় স্বার্থের জন্যেই তাঁর জীবন উৎসর্গিত হবে। এই অবস্থায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদে অবিচল মোহাম্মদ
আলী জিন্নাহ সত্যিকার অর্থে “হিন্দু-মুসলিম মিলনের দূত” হিসেবে কাজ করার অপূর্ব সুযোগ লাভ করেন।
অতপর ১৯১৪ খ্রি. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস উভয় দল বৃটেনের প্রতি আনুগত্য
ঘোষণা করে। লক্ষ লক্ষ ভারতীয় বৃটেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে এবং ইউরোপ, আফ্রিকা ও
মধ্যপ্রাচ্যের রণক্ষেত্রগুলোতে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এমতাবস্থায় ১৯১৬ খ্রি. কংগ্রেস ও লীগের মধ্যেও একটা চুক্তি
স্বাক্ষরিত হয় যা ‘লখ্নৌ চুক্তি' নামে খ্যাত। এই চুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেস প্রকারান্তরে মুসলিম লীগকে
ভারতের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে স্বীকার করে নেয়। চুক্তির প্রধান শর্তাবলী ছিলÑ
(১) কংগ্রেস মুসলমানদের জন্যে পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা স্বীকার করে নেয়। যেসব প্রদেশে মুসলমানগণ
সংখ্যালঘিষ্ঠ সেখানে তাদের জন্যে সংখ্যানুপাতের অতিরিক্ত প্রতিনিধিত্বের দাবি (বিরমযঃধমব) মেনে
নেয়।
(২) মুসলিম লীগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশসমূহে (বাংলা ও পাঞ্জাব) সংখ্যানুপাতের কম মুসলিম
প্রতিনিধিত্ব গ্রহণে স্বীকৃত হয়।
যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বৃটেনের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের আনুগত্যে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। যুদ্ধে
জার্মানির পক্ষাবলম্বনকারী তুরস্কের নিশ্চিত পরাজয়ের সম্ভাবনা এই জটিলতার কারণ ছিল। যুদ্ধোত্তর সময়ে
পরাজিত তুরস্কের ভাগ্য এবং তুর্কি সুলতানের মর্যাদার প্রশ্নে ভারতীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হন।
কারণ, তুরস্কের সুলতানকে মুসলিম বিশ্বের খলিফার মর্যাদা দেওয়া হতো। তবে যুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত
কংগ্রেস ও লীগ উভয় দলই বৃটেনের প্রতি অনুগত থাকে এবং সেই সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার নীতিও
অক্ষুন্ন রাখে। যুদ্ধের পর খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে ধীরে ধীরে সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন
সাধিত হয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসীন হন মহাত্মা গান্ধী এবং মুসলিম লীগের নেতৃত্বে মোহাম্মদ আলী
জিন্নাহ্। সেই সাথে জিন্নাহ্র সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কেও ফাটল ধরে এবং ১৯২০-এর দশকের প্রথম দিকে
পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে যায়। দুই নেতার চিন্তাধারা, নীতি এবং কর্মপদ্ধতি ছিল ভিন্ন এবং ভিন্ন খাতে প্রবাহিত
হয় তাঁদের কার্যকলাপ। একই সময়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যকার সম্পর্কও খারাপ হতে থাকে।
বিশেষত ১৯২২ খ্রি. প্রথম দিকে গান্ধী কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত ঘোষিত হওয়ার পর হিন্দু-


মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী বেশ কয়েক বছর ভারতের বিভিন্ন শহরে হিন্দুমুসলিম দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ফলে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে দূরত্ব আরো বেড়ে যায়।
১৯২৮ খ্রি. ভারতের জন্যে একটা গ্রহণযোগ্য শাসনতান্ত্রিক কাঠামো প্রণয়নের জন্য কংগ্রেস নেতা মতিলাল
নেহেরুকে আহŸায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণের যথাযথ
সুপারিশ ছিলনা বিধায় নেহরু কমিটির রিপোর্ট মুসলিম লীগের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি। অতপর ১৯৩০
এবং ১৯৪০-এর দশকে বৃটিশ কর্তৃপক্ষ, কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে অনেক ত্রিপক্ষীয় আলাপআলোচনা ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মতানৈক্য থেকেই যায়। ইতোমধ্যে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ
মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে স্বতন্ত্র মুসলিম আবাসভ‚মির (ঝবঢ়বৎধঃব ংঃধঃবং) প্রস্তাব নেওয়া হয়।
এই প্রস্তাব ‘পাকিস্তান প্রস্তাব' নামেও পরিচিত, এর মূলকথা ছিল ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বে
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহে মুসলিম রাষ্ট্র গঠন। এই দাবির ভিত্তি ছিল দ্বিজাতিতত্ত¡ অর্থাৎ ভারতের হিন্দু
ও মুসলমান দু'টি জাতি এবং তাদের জন্যে পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়োজন। অখন্ড ভারতের সপক্ষে কোন
সর্বসম্মত ফর্মুলার অভাবে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি ভারতীয় মুসলমানদের নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য
বিবেচিত হয়।লাহোর প্রস্তাবের পরবর্তী বছরগুলোতে জিন্নাহ'র নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ ভারতীয়
মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার
উত্থান ঘটে। এরই ফলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে বৃটিশ ভারত দ্বিখন্ডিত হয়ে স্বাধীন
রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়।
সারসংক্ষেপ
১৯০৬ খ্রি. ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা মুসলমানদের
স্বাতন্ত্র্যবাদী চিন্তার ফল। ভারতীয় কংগ্রেস মুসলিম সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। প্রধানত মুসলিম
স্বার্থরক্ষার নামে ভারতের নেতৃস্থানীয় মুসলমানগণ মুসলিম লীগের গোড়াপত্তন করেন। কংগ্রেসের মত
মুসলিম লীগেরও প্রাথমিক পর্যায়ের নীতি ছিল বৃটিশ শাসনের প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য প্রদর্শন। প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের সময় লীগ ও কংগ্রেস পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে নীতি অনুসরণ করে। ১৯১৬ খ্রি. স্বাক্ষরিত
লখনৌ চুক্তি এই নীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পরবর্তী সময়ে জিন্নাহ্র নেতৃত্বে লীগ মুসলিম স্বার্থ রক্ষায়
মনোনিবেশ করে এবং মুসলমানদের একমাত্র প্রনিতিধিত্বকারী সংগঠনের মর্যাদা দাবি করে। এতে
কংগ্রেসের সঙ্গে লীগের সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯৪০-এর মার্চ মাসে লীগের ‘লাহোর প্রস্তাব' তথা
মুসলমানদের জন্যে স্বতন্ত্র বাসভ‚মির (ঝবঢ়বৎধঃব ংঃধঃবং) দাবির ফলে এই সংঘাত চূড়ান্তরূপ নেয়।
এই স্বাতন্ত্র্যবাদী রাজনীতি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান নামক পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে পরিণতি
লাভ করে।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১. ঝ.গ. ইঁৎশব ধহফ ঝধষরস অষ-উরহ ছঁৎধরংযর, ঞযব ইৎরঃরংয জধল রহ ওহফরধ: অহ ঐরংঃড়ৎরপধষ জবারব,ি
উযধশধ, ১৯৯৫.
২. ঝঁসরঃ ঝধৎশধৎ, গড়ফবৎহ ওহফরধ, উবষযর, ১৮৮৫-১৯৪৭৭, ১৯৮৩.
৩. ঐঁময ঞরহশবৎ, ঝড়ঁঃয অংরধ: অ ঝযড়ৎঃ ঐরংঃড়ৎু, খড়হফড়হ, ১৯৬৬.
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ


নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। সিমলা ডেপুটেশনের নেতৃত্ব দেনÑ
(ক) আগা খান (খ) মহসীন-উল-মূলক
(গ) সলিমুল্লাহ (ঘ) কেউই নন।
২। মুসলিম লীগ বঙ্গ বিভাগকেÑ
(ক) স্বাগত জানায় (খ) সমালোচনা করে
(গ) এই ব্যাপারে নিরপেক্ষ ছিল (ঘ) কোনটিই নয়।
৩। বঙ্গ বিভাগের ফলে সৃষ্ট নতুন প্রদেশের নাম ছিলÑ
(ক) পূর্ব বাংলা (খ) পূর্ব পাকিস্তান
(গ) পূর্ব বঙ্গ ও আসাম (ঘ) পশ্চিম পাকিস্তান।
৪। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগে যোগ দেনÑ
(ক) ১৯০৬ খ্রি. (খ) ১৯১৩ খ্রি.
(গ) ১৯২০ খ্রি. (ঘ) ১৯৩০ খ্রি.।
৫। নেহরু রিপোর্টে মুসলিম লীগের দাবিসমূহÑ
(ক) সম্পূর্ণ মেনে নেওয়া হয় (খ) সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়
(গ) কিছু কিছু মেনে নেওয়া হয় (ঘ) মেনে নেওয়া হয় না।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। সিমলা ডেপুটেশন বলতে কি বুঝায়? এর দাবি দাওয়া কি ছিল?
২। মুসলিম লীগের প্রাথমিক উদ্দেশ্যসমূহের বিবরণ দিন।
৩। মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনের (১৯০৯ খ্রি.) মূলকথা কি ছিল?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভ‚মি আলোচনা করুন।
২। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় মুসলিম লীগের ভ‚মিকা পর্যালোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]