সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও ভারতবর্ষের বিভক্তি


১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। এ ছিল দ্বিধাবিভক্ত
জাতীয়তাবাদ তথা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চূড়ান্ত পরিণতি। এই বিভাজনের মূল নিহিত ছিল সম্প্রদায়
ভিত্তিক চিন্তা-চেতনার মধ্যে যা প্রথম থেকেই জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে আচ্ছন্ন করেছিল। ভারতের হিন্দু
ও মুসলমান দুই প্রধান সম্প্রদায়ের ওপর বৃটিশ শাসনের অভিঘাত ছিল ভিন্নতর। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুগণ
সহজে নতুন শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজেদের জাগতিক উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। এক্ষেত্রে মুসলিম
সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার জন্য তারা সব বৈষয়িক ব্যাপারে হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গে উনিশ
শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়দের সামনে যতটুকু উন্নতির সম্ভাবনা ছিল তার চাবিকাঠি ছিল এই
নতুন প্রচলিত শিক্ষা। হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এই শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আত্মোন্নতিতে
সক্ষম হয়। নানা কারণে মুসলিম সম্প্রদায় এই শিক্ষা গ্রহণে যুগপৎ অনিচ্ছুক ও অপারগ হওয়াতে তাদের
উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষার ব্যাপারে মুসলমানগণ নানা দ্বিধাদ্বন্দে¡ থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত সম্প্রদায় হিসেবে
তারা হিন্দুদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে জাতীয়তাবাদী
চেতনার উম্মেষকালে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান বিদ্যমান ছিল, যা তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণাবিদ্বেষ, সন্দেহ ও বিভেদের বীজ বপন করে। রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যবাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক ভিত
এভাবেই তৈরি হয়। এই সম্প্রদায় ভিত্তিক বিভেদ বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের ‘ভাগ কর এবং শাসন
কর' নীতির সহায়ক হয়।
উনিশ শতকের শেষ দিকে যখন বৃটিশ সরকার কিছু কিছু সংস্কারের মাধ্যমে ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা
প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয় তখন মুসলমানদের মধ্যে হিন্দু আধিপত্যের ভীতি দেখা দেয়; কারণ গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনই স্বাভাবিক। তখনকার ভারতবর্ষে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক আনুগত্যের বাইরে
অন্য কোন কিছু রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল হবে তা বোধগম্য হয়নি। মুসলমানদের ভীতি খুব অমূলক ছিল বলে
মনে হয় না। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তি ছিল খুবই দুর্বল ছিল। বৈষয়িক সাফল্য হিন্দুদের
মধ্যে একপ্রকার শ্রেয়বোধের জন্ম দেয় যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ভীতি ও স্বাতন্ত্র্যবোধকে আরো বাড়িয়ে
তোলে।



এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উনিশ শতকের মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতীয় জাতীয়তাবোধের পরিবর্তে
স্বীয় সম্প্রদায়ের জাগরণের প্রচেষ্টাই অধিক লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত, হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কার্যাবলিতে এই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয় যে ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণা
তেমন শক্তিশালী ছিল না। ১৮৮৫ খ্রি. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পর দেখা যায় যে এই
সংগঠনে মুসলমানদের উপস্থিতি ছিল নগন্য। যদিও কিছু মুসলমান প্রথম থেকে কংগ্রেস পার্টিতে নেতৃত্বের
পদে আসীন ছিলেন, তথাপি ব্যাপকহারে মুসলমানদের সমর্থন লাভে এই সংগঠন শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়।
অসাম্প্রদায়িক ও সর্বভারতীয় জাতীয়তার দাবিদার হিসেবে কংগ্রেসের এই ব্যর্থতা সাম্প্রদায়িক
রাজনীতিকেই শক্তিশালী করে।
বিশ শতকের শুরুতে বৃটিশ ভারতীয় সরকার কর্তৃক গৃহীত কতিপয় সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধির সহায়ক
হয়। এ প্রসঙ্গে ১৯০৫ খ্রি. ভাইসরয় লর্ড কার্জনের বঙ্গবিভাগ উল্লেখযোগ্য। এর প্রতিক্রিয়া সারা ভারতে
বিস্তার লাভ করে এবং রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে। যদিও সরকারি
ভাষ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র প্রশাসনিক সুবিধার্থে সুবৃহৎ বাংলা প্রদেশকে দুই ভাগ করা হয়, বঙ্গ বিভাগ বিরোধী
উদীয়মান জাতীয়তাবাদী শক্তি একে ‘ভাগ কর এবং শাসন কর' নীতির বহিপ্রকাশ হিসেবে দেখে। কার্জনের
কিছু বক্তব্যের মধ্যেও এই ভেদনীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯০৪ খ্রি. ফেব্রুয়ারি মাসে লর্ড কার্জন
ঢাকায় প্রদত্ত এক ভাষণে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের নিকট এমন এক সম্ভাবনা তুলে ধরেন যা পূর্বেকার
দিনের মুসলমান রাজা-বাদশাহদের আমলে বিদ্যমান ছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, পশ্চাৎপদ পূর্ব বাংলার
মানুষের সম্মুখে লর্ড কার্জন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিত্র তুলে ধরেন। ঢাকার নওয়াব সলিমুল্লাহর সক্রিয়
সমর্থনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মধ্যে পরিকল্পিত বঙ্গবিভাগের পক্ষে জনমত সংগঠিত হতে
থাকে। অপরদিকে কলিকাতা কেন্দ্রিক হিন্দু ভদ্রলোক শ্রেণী এর ঘোরতর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। বঙ্গ
বিভাগের বিপক্ষেও সাম্প্রদায়িক এবং শ্রেণী স্বার্থের উপাদান নিহিত ছিল। পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে গঠিত
নতুন প্রদেশ কলিকাতা কেন্দ্রিক পেশাজীবী, কল-কারখানার মালিক, ভ‚-স্বামী ইত্যাদির শ্রেণীস্বার্থকে বিঘিœত
করবে এটা সহজেই অনুমেয় ছিল। এ ধরনের বেশির ভাগ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষিত ভদ্রলোক শ্রেণীর
অন্তর্গত ছিল। সুতরাং বঙ্গ বিভাগের পশ্চাতে কার্জনের আসল উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন এর ফলে বাংলা
তথা ভারতীয় রাজনীতিতে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি আরো ব্যাপকতর হয়।
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের জন্মের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের
স্বাতন্ত্র্যবোধ প্রাতিষ্ঠানিকরূপ লাভ করে। মুসলিম লীগের দাবি অনুসারে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লি-মিন্টো
সংস্কার আইনের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন প্রথার বন্দোবস্ত করা হয়। নানা উত্থান-পতনের
মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত মুসলিম লীগই ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত
হয়। মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা এবং মুসলমানদের ওপর এর ক্রমবর্ধমান প্রভাব ছিল কংগ্রেসের দাবির প্রতি
এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। দুই দলের মধ্যে কোন কোন সময় সহযোগিতার ভাব লক্ষ্য করা গেলেও তাদের
পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল মূলত বৈরীভাবাপন্ন। শেষ পর্যন্ত এই সম্পর্ক প্রবল শত্রুতায় পর্যবসিত হয় এবং
ভারতবর্ষের দ্বিধাবিভক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি সৃষ্টিতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। এই দাঙ্গা ছিল
একাধারে সাম্প্রদায়িকতার কারণ ও ফলস্বরূপ। বিশ শতকের প্রারম্ভিক বছরগুলোতে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা
উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। নানা রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে সৃষ্ট পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং
অসহিষ্ণুতাই এই সমস্ত দাঙ্গার প্রধান কারণ ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক দলের বা ব্যক্তির
উস্কানিমূলক কার্যকলাপ। ১৯২০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক হারে সংঘটিত


হতে থাকে। খিলাফত-অসহযোগ আন্দোলনের পরবর্তী বছরগুলোতে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হিন্দুমুসলমান ঐক্যের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য আন্দোলন চলাকালীন সময়েই
মালাবারে মোপলা বিদ্রোহ (১৯২১খ্রি.) ঘটে এবং বোম্বাইসহ বিভিন্ন পশ্চিম ভারতীয় শহরে ও গ্রামাঞ্চলে
দাঙ্গা শুরু হয়। দরিদ্র ও অশিক্ষিত মোপলা মুসলমানগণ তাদের চেয়ে উন্নত হিন্দু জমিদার ও মহাজনদের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ দ্রুত হিন্দু-মুসলিম খিলাফত-অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতা
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আধিক্যের জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল। ১৯২৪ খ্রি. দিল্লি, লাখ্নৌ, এলাহাবাদসহ উত্তর
ভারতের বিভিন্ন শহরে দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ১৯২৫ খ্রি. কমপক্ষে তেরটি দাঙ্গা সংঘটিত হয়। সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গা প্রসঙ্গে অস্পৃশ্যদের নেতা বি.আর.আম্বেদকরের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। ১৯২০-৪০ সময়কালে
সংঘটিত দাঙ্গা পর্যালোচনাপূর্বক তিনি মন্তব্য করেন, “একথা বলা অতিরঞ্জিত হবেনা যে এ ছিল ভারতের
হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিশ বছরের গৃহযুদ্ধের এক রেকর্ড; এর মধ্যে কখনও কখনও স্বল্প সময়ের জন্য
সশস্ত্র শান্তি বিরাজ করতো।”
১৯২০-এর দশকের শেষ পর্যায়ে সব দলমত ও সম্প্রদায় কর্তৃক গ্রহণযোগ্য একটা সাংবিধানিক কাঠামো
নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুই প্রধান দল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতানৈক্যের ফলে এই সমস্ত
উদ্যোগ অকৃতকার্য হয়ে যায়। এর ফলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ভারতীয় রাজনীতির প্রধান নিয়ামক শক্তিতে
পরিণত হয়। এই প্রসঙ্গে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত
বিধিসমূহের বাস্তবায়নের বিষয় লক্ষনীয়। ১৯৩৬-৩৭ খ্রিস্টাব্দের প্রাদেশিক নির্বাচনের ফলাফল অনুসারে
কংগ্রেস আটটি প্রদেশে সরকার গঠন করে এবং ১৯৩৯ খ্রি. অক্টোবর পর্যন্ত দুই বছরের অধিক সময় ঐসব
প্রদেশে কংগ্রেস শাসন বলবৎ থাকে। এই সময়ে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আরো বিস্তার লাভ করে
এবং ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন ভারতের সম্ভাবনা বিলীন হয়ে যায়। কংগ্রেস শাসনের প্রতি মুসলমানদের বিরূপতার
সুযোগে জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ সংগঠিত হয় এবং কংগ্রেস শাসিত প্রদেশসমূহে মুসলিম নির্যাতনের
অভিযোগ উত্থাপন করে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে লীগের লক্ষৌ অধিবেশনে জিন্নাহ অভিযোগ করেন
যে কংগ্রেস “হিন্দু-নীতি” (ঐরহফঁ চড়ষরপু) অনুসরণ করছে এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক হয়ে
সাম্প্রদায়িক বিরোধের উস্কানি দিচ্ছে। এ ছিল কংগ্রেসের নিজস্ব অস্ত্র দিয়ে তাকেই ঘায়েল করার চেষ্টা,
এতদিন পর্যন্ত এ জাতীয় অভিযোগ কংগ্রেসই লীগের বিরুদ্ধে আনয়ন করত। এইচ.ভি. হডসন তাঁর ঞযব
এৎবধঃ উরারফব নামক পুস্তকে জিন্নাহর এই উক্তিকে 'ধ ৎবসধৎশধনষব পধংব ড়ভ ংঃবধষরহম ড়হব’ং
ড়ঢ়ঢ়ড়হবহঃ’ং পষড়ঃযবং' বলে অভিহিত করেছেন।
এই পর্যায়ে জিন্নাহর বক্তব্যের মূলকথা ছিল এই যে কংগ্রেস শাসনাধীন মুসলমানগণ সুবিচার ও ন্যায়নীতি
(লঁংঃরপব ধহফ ভধরৎঢ়ষধু) আশা করতে পারেনা। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দলের পাটনা সম্মেলনে
তিনি ঘোষণা করেন যে ‘কংগ্রেসী ফ্যাসিবাদ'-এর কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। এই
সময় কংগ্রেস শাসিত প্রদেশসমূহে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন সংক্রান্ত রিপোর্ট (পীরপুর রিপোর্ট)
প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টের প্রণেতা ছিল মুসলিম লীগ কাউন্সিল কর্তৃক নিয়োজিত কমিটি। একই বিষয়ের
ওপর পরবর্তী বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয় শরীক রিপোর্ট যার রচয়িতা ছিল বিহার মুসলিম লীগ।
পীরপুর রিপোর্টের নি¤েœাক্ত বক্তব্যের মধ্যে তৎকালীন রাজনীতিতে প্রবল সাম্প্রদায়িক চেতনা এবং সংখ্যালঘু
মুসলমান জনগণের ভীতি মূর্ত হয়েছে:
ঞযব পড়হফঁপঃ ড়ভ ঃযব ঈড়হমৎবংং এড়াবৎহসবহঃং ংববসং ঃড় ংঁনংঃধহঃরধঃব ঃযব ঃযবড়ৎু ঃযধঃ ঃযবৎব
রং ংড়সবঃযরহম ষরশব রফবহঃরঃু ড়ভ ঢ়ঁৎঢ়ড়ংব নবঃবিবহ ঈড়হমৎবংং ধহফ ঃযব ঐরহফঁ গধযধংধনযধ...
ডব গঁংষরসং ভববষ ঃযধঃ, হড়ঃ রিঃযংঃধহফরহম ঃযব হড়হ-পড়সসঁহধষ ঢ়ৎড়ভবংংরড়হং ড়ভ ঈড়হমৎবংং
ধহফ ঃযব ফবংরৎব ড়ভ ধ ভবি ঈড়হমৎবংংসবহ ঃড় ভড়ষষড়ি ধ ঃৎঁষু হধঃরড়হধষ ঢ়ড়ষরপু, ধ াধংঃ সধলড়ৎরঃু


ড়ভ ঃযব ঈড়হমৎবংং সবসনবৎং ধৎব ঐরহফঁং যিড় ষড়ড়শ ভড়ৎধিৎফ, ধভঃবৎ সধহু পবহঃঁৎরবং ড়ভ
ইৎরঃরংয ধহফ গঁংষরস ৎঁষব, ঃড় ঃযব ৎব-বংঃধনষরংযসবহঃ ড়ভ ধ ঢ়ঁৎবষু ঐরহফঁ জধল. (কংগ্রেস
সরকারগুলোর আচরণ এই তত্ত¡কেই প্রতিষ্ঠিত করছে বলে মনে হয় যে, কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভার
উদ্দেশ্য অভিন্ন। ...আমরা মুসলমানগণ মনে করি যে, কংগ্রেসের অসাম্প্রদায়িক বক্তব্য ও সত্যিকার জাতীয়
নীতি অনুসরণে উক্ত দলের স্বল্প সংখ্যক সদস্যের আগ্রহ সত্তে¡ও কংগ্রেস সদস্যবৃন্দের একটা বিরাট
সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হিন্দু, যারা বৃটিশ ও মুসলিম শাসনের অনেকগুলো শতাব্দী পর বিশুদ্ধ হিন্দু রাজ
পুন:প্রতিষ্ঠার দিকে তাকিয়ে আছে।)
একথা সত্য যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি উদ্রেককারী কার্যকলাপ কংগ্রেস শাসিত প্রদশেসমূহে
সংঘটিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উর্দুকে অবহেলা এবং হিন্দীর পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশাসন কর্তৃক
হিন্দুদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, সরকারি চাকরিলাভের ব্যাপারে মুসলমানদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে
বঞ্চিতকরণ ইত্যাদি। আরো ছিল “বন্দে মাতরম”কে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা প্রদান, কংগ্রেসের দলীয়
পতাকাকে জাতীয় পতাকার ন্যায় ব্যবহার এবং “ওয়ার্ধা স্কীম” তথা কংগ্রেস-প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন
যার মূল কথা ছিল অহিংসা, চরকায় কাপড় বয়ন এবং ধর্মীয় শিক্ষা বর্জন। মুসলমানগণ এ ধরনের
কার্যকলাপ মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, কংগ্রেস শাসনের দুই বছরাধিক
সময়ে দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে ভারত-বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন বিপুল শক্তি সঞ্চয় করে। এই সময়ে
মুসলিম লীগ ভারতীয় মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে স্বীয় দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে
সক্ষম হয় এবং একটা মুসলিম গণসংগঠনে পরিণত হয়।
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতকে বৃটিশ যুদ্ধ প্রচেষ্টার অন্তর্ভুক্ত করা হয়
ভারতীয় মতামতের তোয়াক্কা না করেই। এজন্য কংগ্রেস ভারতীয় সরকারের সমালোচনায় লিপ্ত হয়Ñ যদিও
দলের ওয়ার্কিং কমিটি ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ করে। মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটিও
জার্মান আগ্রাসন-বিরোধী যুদ্ধকে নীতিগতভাবে সমর্থন জানায়। তবে লীগের ওয়ার্কিং কমিটি ভারত
সরকারকে এই মর্মে সাবধান করে যে, মুসলমানদের অটুট সমর্থন কেবল দু'টি শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হবেÑ
(১) কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সুবিচার ও ন্যায়নীতির প্রতিষ্ঠা;
(২) মুসলমানদের প্রতি সরকারের এইমর্মে আশ্বাস যে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মতি ব্যতীত কোন
ভবিষ্যত শাসনতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণ বা সে সম্পর্কে কোন ঘোষণা দেওয়া হবে না। সংক্ষেপে যুদ্ধারম্ভের
পটভ‚মিতে যথাশীঘ্রই সম্ভব ক্ষমতার হস্তান্তর ছিল কংগ্রেসের দাবি; অন্যদিকে যে কোন শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে
ভিটো দেওয়ার এখতিয়ার ছিল মুসলিম লীগের দাবি। এর ফলে বৃটিশ ভারতীয় সরকার, কংগ্রেস ও মুসলিম
লীগের মধ্যে যে ত্রি-পক্ষীয় টানাপোড়েন শুরু হয় তা শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষের বিভাজনের মধ্যে পরিণতি লাভ
করে।
অতপর মুসলিম লীগ নেতা জিন্নাহ ভারতীয় মুসলমানদেরকে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেন
এবং তাদের জন্য পৃথক আবাসভ‚মির দাবিও জোরদার হয়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জিন্নাহ
ঘোষণা করেন যে, যে কোন সাংবিধানিক ব্যবস্থায় এটা স্বীকৃত হতেই হবে যে ভারত এক জাতি নয় বরং
দুই জাতির দেশ। মুসলমানগণ কোন পক্ষের চাপিয়ে নেওয়া বন্দোবস্ত গ্রহণ করবে না এবং নিজেদের ভাগ্য
নিজেরাই নির্ধারণ করবে। ঐ বছরের মার্চ মাসের ২৩ তারিখে বিখ্যাত ‘লাহোর প্রস্তাব' গৃহীত হয় লীগের
লাহোর অধিবেশনে। এই প্রস্তাবের মূলকথা ছিল ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মুসলিম
সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র (ঝবঢ়বৎধঃব ংঃধঃবং) গঠন। প্রস্তাবে পাকিস্তান শব্দটির উল্লেখ


ছিল না। কিন্তু পরবর্তীকালে মূলত কংগ্রেস প্রভাবিত সংবাদপত্রসমূহের সমালোচনামূলক লেখায় এটি
‘পাকিস্তান প্রস্তাব' হিসেবে উল্লেখ হতে থাকে।
পরবর্তী বছরগুলোতে ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সাংবিধানিক প্রশ্নে অনেক ত্রিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা
চলে। এসবের উদ্যোক্তা ছিল বৃটিশ কর্তৃপক্ষ। ক্রিপস মিশন (১৯৪২ খ্রি.), সিমলা সম্মেলন (১৯৪৫ খ্রি.)
এবং সর্বশেষে ক্যাবিনেট মিশন (১৯৪৬ খ্রি.) এই সমস্ত বৃটিশ উদ্যোগের ফল। একটা দুর্বল কেন্দ্র এবং
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করা ছিল সম্ভবত বৃটিশ প্রচেষ্টাসমূহের
লক্ষ্য। কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ততদিনে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে কোন আপোস ফর্মুলা দুই
প্রধান রাজনৈতিক দলের নিকট একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে গান্ধী-জিন্নাহ্র
মধ্যকার সরাসরি আলোচনাও ব্যর্থ হয়ে যায়। ঘন ঘন রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং বিশৃ´খলা
রাজনৈতিক ব্যর্থতার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে দেখা দেয়। এই প্রসঙ্গে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট
কলিকাতায় সংঘটিত ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা উলে খযোগ্য যা ইতিহাসে - ঞযব এৎবধঃ ঈধষপঁঃঃধ
করষষরহম নামে খ্যাত হয়েছে। এই অবস্থায় বৃটিশ সরকার প্রয়োজনে ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এডমিরাল লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ক্ষমতা হস্তান্তরের দায়িত্ব অর্পণ করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে
শেষ ভাইসরয় নিয়োগ করা হয়।সমস্ত দল ও মতের ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার পর
মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং ৩ জুন তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। সেই বিভাজনপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।
ভারতবর্ষের দ্বিধাবিভক্তি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবশ্যম্ভাবী ফল এবং এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী।
সারসংক্ষেপ
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বৃটিশ ভারত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে দু'টি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের
আবির্ভাব হয়। এই বিভাজন ছিল হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি। ভারতে
জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষকালেই সাম্প্রদায়িক ভাবধারা লক্ষ্য করা যায়। দুই প্রধান সম্প্রদায়ের
মধ্যকার সার্বিক অসমতা তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় জাতীয়তাবোধ জাগরণের পথে অন্তরায় সৃষ্টি
করে। সংখ্যালঘু মুসলমান সংখ্যাগুরু হিন্দু কর্তৃক শাসিত ও শোষিত হওয়ার ভয় করতো। এই ভীতি
পুরোপুরি অমূলক ছিল না, কারণ ধর্মীয় আনুগত্যই ছিল সর্বাপেক্ষা প্রবল। ১৯৩৭Ñ৩৯ খ্রি. বৃটিশ
ভারতের আট প্রদেশে কংগ্রেস শাসনের সময় মুসলিম ভীতি আরো ঘনীভ‚ত হয়। ফলে মুসলিম লীগের
দ্বিজাতিতত্তে¡র ধারণা ও স্বতন্ত্র আবাসভ‚মির দাবি জোরদার হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে এই দাবি
পূর্ণতা লাভ করে। রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলেই দায়ী ছিল।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী ঃ
১. ঝ.গ. ইঁৎশব ধহফ ঝধষরস অষ-উরহ ছঁৎধরংযর, ঞযব ইৎরঃরংয জধল রহ ওহফরধ: অহ ঐরংঃড়ৎরপধষ জবারব.ি
উযধশধ, ১৯৯৫.
২. ঐ.ঠ. ঐড়ফংড়হ, ঞযব এৎবধঃ উরারফব: ইৎরঃধরহ-ওহফরধ-চধশরংঃধহ, কধৎধপযর, ১৯৬৯.
৩. ঝঁসরঃ ঝধৎশধৎ, গড়ফবৎহ ওহফরধ, ১৮৮৫-১৯৪৭, উবষযর, ১৯৮৩.


পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ভারতে ইংরেজি শিক্ষা চালু হয়Ñ
(ক) সপ্তদশ শতাব্দীতে (খ) অষ্টাদশ শতাব্দীতে
(গ) উনবিংশ শতাব্দীতে (ঘ) বিংশ শতাব্দীতে।
২। মুসলমানগণ শিক্ষাক্ষেত্রে হিন্দুদের তুলনায়Ñ
(ক) পিছিয়ে ছিল (খ) এগিয়ে ছিল
(গ) সমান অবস্থায় ছিল (ঘ) কোনটিই সঠিক নয়।
৩। উনিশ শতকের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ ছিলÑ
(ক) সবল (খ) দুর্বল
(গ) একেবারে অনুপস্থিত (ঘ) একমাত্র বৈশিষ্ট্য।
৪। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় কোন খ্রিস্টাব্দে?
(ক) ১৮৯০ (খ) ১৯০৬
(গ) ১৯১৩ (ঘ) ১৯৩০।
৫। ভারতবর্ষের দ্বিধাবিভক্তির জন্য দায়ী ছিলÑ
(ক) কংগ্রেস (খ) মুসলিম লীগ
(গ) বৃটিশ সরকার (ঘ) সবাই।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। ভারতীয় জাতীয়তাবাদে সাম্প্রদায়িক ভাবধারার উন্মেষ হয় কেন?
২। দ্বিজাতিতত্তে¡র মূলকথা ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করুন।
২। ১৯৪৭ খ্রি. ভারতবর্ষের বিভাজনের কারণগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]