ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর এর প্রভাব Geographical Features and its Influences on History, Society, Culture and Economy

এ অধ্যায়ের আলোচ্যসূচি
২.১ ভৌগোলিক পরিচয়
Geographical introduction
২.২ ভূপ্রকৃতি
Nature of land
২.৩ বাংলার নদ-নদী
Rivers of Bengal
২.৪ প্রকৃতির প্রভাব
Influence of nature
২.৫ ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর ভৌগোলিক প্রভাব
Geographical influences on history, society, culture and
economy
২.৬ পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য
The own characteristics of East Bengal/Bangladesh
২২. ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর এর প্রভাব ২.১ ভৌগোলিক পরিচয়
Geographical Introduction
সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামে যে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের আমরা অধিবাসী, তা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বিস্তৃত জনপদের একটা অংশ মাত্র। বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিবঙ্গের সবখানে, বিহার, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের কিছু অংশে এবং বার্মার আরাকানে বাংলা ভাষাভাষী লোক বাস করে। বর্তমানে বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় উপমাহদেশ প্রায় দুশ বছরের ইংরেজ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেরই নামান্তর। বর্তমান বাংলাদেশের সীমানা- পশ্চিমে ভারতের পশ্চিবঙ্গ, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, অরুণাচল ও আসাম রাজ্য, পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা রাজ্য ও বার্মা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের আয়তন ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইল বা ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার এবং বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।
ইংরেজ শাসনামলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল। এর আগে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যা একত্রে ছিল বঙ্গদেশ। বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে পূর্ববঙ্গ ও আসাম স্বতন্ত্র প্রদেশের মর্যাদা পায়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বঙ্গদেশ তার সীমানা ফেরত পায়নি। তখন বিহার ও উড়িষ্যা পৃথক প্রদেশের মর্যাদা লাভ করে। নতুন ব্যবস্থায় পূর্ববঙ্গ ও দার্জিলিংসহ পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বঙ্গপ্রদেশ গঠিত হয়। আসাম পৃথক প্রদেশ হিসেবে স্থান পায়। এর ফলে বাংলা ভাষাভাষী সিলেট, কাছাড় ও গোয়াল পাড়ার একটি অংশ আসামে থেকে যায়। বিহার ও ছোট নাগপুরেও বাংলাভাষী অঞ্চল কিছুটা রয়ে গেল ।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বিভক্ত বর্তমানের বাংলা ভাষাভাষী ভৌগোলিক অঞ্চল দুটি প্রাচীন আমলে ভিন্ন নামে পরিচিত একাধিক দেশের সংমিশ্রণে গঠিত। খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগেকার ঋগ্বেদে 'বঙ্গ' এর উল্লেখ নেই। ‘ঐতরেয় আরণ্যক' গ্রন্থে ‘বঙ্গ' নামে দেশের প্রথম উল্লেখ আছে। এই সুপ্রাচীন বঙ্গদেশের সীমা সম্পর্কে ডঃ নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙ্গালির ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেন, “উত্তরের হিমালয় এবং হিমালয় হইতে নেপাল, সিকিম ও ভুটান রাজ্য; উত্তর-পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা; উত্তর- পশ্চিম দিকে দ্বারবঙ্গ পর্যন্ত ভাগীরথীর উত্তর সমান্তরালবর্তী সমভূমি; পূর্বদিকে গারো- খাসিয়া-জয়ন্তিয়া-ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম শৈলশ্রেণি বাহিয়া দক্ষিণ সমুদ্র পর্যন্ত, পশ্চিমে রাজমহল সাঁওতাল পরগণা-ছোটনাগপুর-মানভূম-ধলভূম-কেওঞ্জর-ময়ূরভঞ্জের শৈলময় অরণ্যময় মালভূমি; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই প্রাকৃতিক সীমাবিধৃত ভূমিখণ্ডের মধ্যেই প্রাচীন বাংলার গৌড়-পুণ্ড্র-বরেন্দ্রীয়-রাঢ়-সুহ্ম-তাম্রলিপ্তি-সমতট-বঙ্গ-বঙ্গাল-হরিকেল প্রভৃতি জনপদ।” রাঢ়, সুহ্ম, পুণ্ড্র, বঙ্গ প্রভৃতি শব্দের সাহায্যে প্রাচীনকালে বিশেষ জাতি
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
২৩
বা উপজাতি বুঝান হতো, তারপর তাদের বিশেষ বিশেষ বাসস্থানের নাম হিসেবে তা ব্যবহৃত হতো। রাঢ় বলতে মধ্য-পশ্চিমবঙ্গ, সুহ্ম বলতে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ, পুণ্ড্র বলতে উত্তরবঙ্গ, বঙ্গ বলতে পূর্ববঙ্গ, সমতট-হরিকেল বলতে পূর্ববঙ্গের দক্ষিণাঞ্চল প্রভৃতি। বিশেষ বিশেষ স্থান বুঝাত। এখনো রাঢ় বলতে মধ্য-পশ্চিমবঙ্গ এবং বরেন্দ্র বলতে উত্তরবঙ্গকে বুঝায় । সপ্তম শতাব্দীতে বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম রাজা শশাঙ্ক এই জনপদগুলোকে গৌড় নামে একত্রিত করেন। তার পরে বঙ্গদেশ পুণ্ড্র, গৌড় ও বঙ্গ-এই
তিন জনপদে বিভক্ত ছিল ।
তবে হিন্দু যুগের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত ছিল। মুসলমান আমলে বাংলার এ ধরনের খণ্ড নামের অবসান ঘটে এবং বাংলা ভাষাভাষী। সম্পূর্ণ অঞ্চল এক নামে অভিহিত হতে থাকে ।
বিভিন্ন অঞ্চল একত্রিত করার প্রচেষ্টা মুসলমান শাসনামলে সফল হয়। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে কিংবা ১২০৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে শীত মৌসুমে অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে তুর্কি শাসনের সূত্রপাতের মাধ্যমে এ চেষ্টার আরম্ভ এবং মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনকালে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্তির মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটে।
দেশবাচক নাম হিসেবে বাংলার ব্যবহার মুসলমান অধিকারের গোড়ার দিকে প্রচলিত হয়। সম্রাট আকবরের আমলে সমগ্র বঙ্গদেশ 'সুবহ-ই-বঙ্গালহ' নামে পরিচিত হয়েছিল। ফারসি 'বঙ্গালহ' শব্দ থেকে পর্তুগিজ Bengala এবং ইংরেজি Bengal শব্দ এসেছে ।
বাংলায় পাঠান যুগের পূর্ব থেকে পশ্চিমবঙ্গ ‘গৌড়' এবং পূর্ববঙ্গ ‘বঙ্গ’ এই দুই নামে চিহ্নিত হতো। উনিশ শতকের প্রথম ভাগেও ‘গৌড়' কথাটি সমগ্র বাংলাদেশের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে মনে করা হয়, যে অঞ্চলে বং গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করতো, তাই-ই এ নামে পরিচিত। সংস্কৃতি ‘বঙ্গ’ শব্দ ‘বং’ বা ‘বঙ’ গোষ্ঠীর নাম। বং গোষ্ঠীভুক্ত মানুষের বাসভূমি ছিল ভাগীরথী নদীর পূর্বতীর থেকে আসামের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত ।
মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল তার আইন-ই আকবরী গ্রন্থে দেশ বাচক ‘বাংলা’ শব্দ ব্যবহার করে এর উৎপত্তি সম্পর্কে দেখিয়েছেন যে, এ দেশের প্রাচীন নাম 'বঙ্গ' এর সঙ্গে জমির সীমাবাচক ‘আল’ প্রত্যয়যোগে ‘বাংলা' শব্দ গঠিত হয়েছে। আবুল ফজল-এর মতে, চট্টগ্রাম থেকে গর্হি (রাজমহল) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিল ‘বঙ্গ’। প্রাচীন কালে এর রাজারা ১০ গজ উঁচু ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রকাণ্ড 'আল' নির্মাণ করতেন; এজন্য এর ‘বঙ্গালা' নাম হয়েছে। কিন্তু বঙ্গালা বা বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে এ ধরনের যুক্তি অনেক ঐতিহাসিক মেনে নেননি। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, “প্রাচীন কাল হতেই ‘বঙ্গ' ও বঙ্গাল' দুইটি পৃথক দেশ ছিল এবং অনেক প্রাচীন লিপি ও গ্রন্থে এই দুইটি দেশের একত্র উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায় ৷ সুতরাং বঙ্গদেশের নাম হতে 'আল' যোগে অথবা অন্য কোনো কারণে বঙ্গাল অথবা বাংলা নামের উদ্ভব হয়েছে, ইহা স্বীকার করা যায় না। বঙ্গাল দেশের নাম হতেই যে
২৪. ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর এর প্রভাব
কালক্রমে সমগ্র দেশের 'বাংলা' এই নামকরণ হয়েছে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।” কিন্তু মুসলমান ঐতিহাসিকদের দেয়া তথ্যে জানা যায় যে, ‘বঙ্গ’ এবং ‘বঙ্গালা' একই ভূভাগ, 'বঙ্গ' 'বঙ্গালা' রূপলাভ করে। সোনারগাঁ অঞ্চল আক্রমণের সময় থেকেই 'বঙ্গালা' নামটি মুসলমান ঐতিহাসিকদের লেখায় স্থান পায় এবং সোনারগাঁও অধিকারের পরেই ইলিয়াস শাহকে 'শাহ-ই-বঙ্গালা' রূপে অভিহিত করা হয় এবং এর পর থেকেই 'বঙ্গালা' নামটি সারা 'বাংলা'র জন্য প্রযোজ্য হয়। 'বঙ্গালা' নাম 'বঙ্গ' এর অধিবাসী 'বঙ্গাল' বা 'বাঙ্গাল' থেকে এসেছে অথবা বলা যায় ‘বঙ্গাল দেশ' (অর্থাৎ 'বঙ্গালদের দেশ) কথাটির ফারসি রূপ 'বঙ্গালা'। প্রাচীনকালে বা কোন কালে ‘বঙ্গালা’ নামে আলাদা কোন দেশ বা ভূভাগ ছিল না ।
প্রাচীন 'বঙ্গ' রাজ্যের সীমানা উত্তরে ব্রহ্মপুত্র, পূর্বে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা, পশ্চিমে ভাগীরথী ও করতোয়া এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই সমুদয় এলাকা (ভাগীরথীর পূর্ব তীরে কিছু অংশ বাদ দিয়ে) বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত।
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার পূর্ববঙ্গের ‘বাংলাদেশ' নামকরণ করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধিকার ও বিজ্ঞপ্তির প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, তাঁর ভাষায় পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশ ‘আদিতে মুসলমানদের বঙ্গালা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না ('বঙ্গ ওয়া বাঙ্গালাহ' তার প্রমাণ)। ডঃ মজুমদারের এই উক্তি সত্য এবং তথ্যভিত্তিক নয়। কারণ যে 'বঙ্গ' এর অধিবাসী 'বঙ্গাল' থেকে মুসলমানদের 'বঙ্গালা' নামের উৎপত্তি সে 'বঙ্গ' এর প্রায় সম্পূর্ণ অংশই বর্তমান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। সুতরাং ‘বাংলাদেশ' নামকরণে মোটেই অযৌক্তিক নয়।
২.২ ভূপ্রকৃতি
Nature of Land
ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অনন্য। এত নদ-নদী এরূপ বিশাল ও উর্বর সমতল ভূমি পৃথিবীর আর কোন দেশে দেখতে পাওয়া যায় না। সুজলা-সুফলা শস্যশ্যামলা বাংলা পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল। এই বদ্বীপ অঞ্চলের বেশির ভাগ ভূভাগই গড়ে উঠেছে গঙ্গা-ভাগীরথী-পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বয়ে নেমে আসা পলিমাটিতে, পৃথিবীর প্রাচীন ভূভাগগুলোর তুলনায় অপেক্ষকৃত হাল আমলে । খুব বেশি দিনের কথা নয়, যতদূর জানা যায়, জল সরে গিয়ে ফরিদপুরের কোটালি পাড়া অঞ্চল মাত্র মাথা তুলেছে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে। এই অঞ্চল তখনো ছিল সমুদ্রের কাছাকাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানে প্রাপ্ত চন্দ্র বর্মণের তাম্র শাসনেই এ সময়ে এই এলাকার বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির কথা জানা যায়। আর শুধু তো কোটালিপাড়া নয়, শত শত বছর ধরে জমে ওঠা পলিমাটিতে এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন জনপদ। আবার এই পলিমাটি জমে জমে নদী পথও অগভীর হয়েছে। কখনো দুকূল বেয়ে উপচে পড়েছে বর্ষার বিপুল জলরাশি, কখনো বা নদীপথ সরে গিয়ে জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে, ভেঙে তছনছ হয়েছে বাংলার ভূভাগ। কিন্তু তাতে ভূপ্রকৃতির মৌলিক তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
২৫
বাংলার অধিকাংশ ভূভাগই অপেক্ষাকৃত নতুন বা নবভূমি, তবু এই নতুনের মাঝে হটুকু ঠিক নতুন নয়। আবার পশ্চিমাংশে বেশ কিছুটা প্রাচীন বা পুরাভূমিও বিদ্যমান । বাংলার পশ্চিমাংশের পুরাভূমি রাজমহলের দক্ষিণ থেকে শুরু করে সমুদ্র পর্যন্ত | রাজমহল, সাঁওতাল পরগণা, মানভূম-সিংভুম-ধলভূমের জঙ্গলাকীর্ণ পার্বত্য এই পুরাভূমির অন্তর্গত। মেদিনীপুর-বাকুড়া-বর্ধমান-বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের উচ্চতর লালমাটি অঞ্চলও পুরাভূমির অংশ। বাঁকুড়া-মেদেনীপুরের কিয়দংশ রাণীগঞ্জ- আসানসোলের অংশ বিশেষ এই পুরাভূমিরই নিম্নাঞ্চল ।
বিস্তৃত
আবার এই পুরাভূমিরই একটি শাখা রাজমহলের উত্তরে গঙ্গা পেরিয়ে উত্তর বাংলার বিস্তৃত হয়েছে। বীরভূম মুর্শিদাবাদের মতোই এখানকার মাটিও লাল, স্কুল হালুময়। মালদহ-রাজশাহী-দিনাজপুর-রংপুরের ভিতর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে তার দুই তীর যেয়ে আসামের পার্বত্য অঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়েছে লালমাটির এই রেখা। এ যেন পলিমাটি দিয়ে গড়া বাংলাদেশের উর্বর ভূমি বেষ্টন করে অনুর্বর পুরাভূমির একটা বন্ধনী। উত্তর বাংলায় এই পুরাভূমির একটা অংশ অপরাংশের চেয়ে কিছুটা উঁচু। বগুড়া, উত্তর রাজশাহী, পূর্ব দিনাজপুর আর রংপুরের পশ্চিমাঞ্চল ব্যাপী অপেক্ষাকৃত উঁচু এই এলাকাই হলো ইতিহাস প্রসিদ্ধ বরেন্দ্রভূমির কেন্দ্রস্থল ৷
বাংলার পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের পুরাভূমির বন্ধনীটুকু বাদ দিলে আর বাদ বাকি প্রায় সবটুকু (চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরার পার্বত্য অঞ্চল বাদ দিয়ে) হলো নবভূমি- গঙ্গা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও তার উপনদীসমূহের জলে সিঞ্চিত। পশ্চিমে লাল মাটির বুক ভেদ করে নেমে এসেছে ময়ূরাক্ষী, অজয়, রূপনারায়ণ, ইতিহাস প্রসিদ্ধ কপিশা (আধুনিক কসাই) গঙ্গার বিভিন্ন উপনদীসমূহ। এদের জলে উর্বর হয়েছে পুরাভূমি সংলগ্ন সমতল ভূমি, রুক্ষ লাল মাটি হয়েছে উধাও, দেখা দিয়েছে স্তরে স্তরে জমে ওঠা পলিতে উর্বর শস্যশ্যামল নবভূমি। উত্তরে ঠিক পশ্চিমের মতোই লাল মাটি অঞ্চলকে ঘিরে আছে আত্রাই-মহানন্দা-করতোয়ার জল আর পলিমাটি দিয় গড়া ভূভাগ। আর পূর্ব বাংলার তো কথাই নেই। সিলেটের পূর্বাঞ্চল, ময়মনসিংহের মধুপুর গড়, ঢাকার ভাওয়ালের গড়, পার্বত্য ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাদ দিয়ে পূর্ব বাংলার সবটুকু নবভূমি। এর মাঝে ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, ত্রিপুরার সমতলভাগ ও সিলেটের অধিকাংশ ভূমি তুলনামূলকভাবে প্রাচীন। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর সমতলভূমি অঞ্চল আরো নতুন। সে জন্যই এ অঞ্চলকে বলা হয় নাব্যমণ্ডল। মধ্য ও দক্ষিণ বাংলারও একই অবস্থা। সমুদ্রের নিকটবর্তী বিরাট নদীর জলে সিঞ্চিত, নদী-নালা-খাল-বিল- জলাভূমি সমাকীর্ণ নবভূমি বৃক্ষশ্যামল, শস্যবহুল জনপদ ।
২৩ বাংলার নদ-নদী
Rivers of Bengal
নদী বাংলাদেশের প্রধান ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বড় বড় নদী। ছোট বড় অনেক উপনদী এসে এসব নদীতে মিশেছে। আবার এগুলো থেকে অসংখ্য স্রোতধারায় অগণিত শাখা প্রশাখা বের
২৬. ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর এর প্রভাব
হয়ে শিরা-উপশিরার মতো সাগর পানে বয়ে চলেছে। এত সংকীর্ণ পরিসরে এত অধিক নদ-নদীর সমাবেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। নদী বাংলার প্রাণ। তাইতো নদীপথে বাঙালি বাণিজ্যের পসরা ভাসিয়ে বিদেশে যাত্রা করে, নদীর জলে সিঞ্চিত মাটির বুকে ফসল ফলায়। বলতে গেলে এই নদীই বাংলাকে গড়ে তুলেছে, বাঙালির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। সে জন্যই তো নদীর সাথে বাঙালির নাড়ীর টান অবিচ্ছেদ্য।
বাংলা গোটা পূর্ব ভারতের নদীসমূহের সঙ্গমস্থল। উত্তর ভারত আর আসামের সমতলভূমি বেয়ে উপনদী-শাখানদীসমূহ নিয়ে নেমে এসেছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র। বাংলার নরম পলিপড়া মাটিতে এসে নানা শাখা-উপশাখায় হয়েছে বিভক্ত। এ যেন একটা বিরাট জাল গোটা বাংলাদেশ জুড়ে বিস্তৃত। বর্ষার বিপুল জলরাশি সমগ্র উত্তর-ভারত আর আসামের পলিপ্রবাহ বুকে নিয়ে এই জাল বেয়ে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার নবভূমি অনেকখানেই এই প্রচণ্ড ভার সহ্য করতে পারে না। দুকূল জুড়ে চলে ভাঙা-গড়া। ফলে নদীর খাত যায় বদলে। এক কালের সমৃদ্ধ নগর হয় পরিত্যক্ত, গড়ে ওঠে নতুন নগর। এভাবে, নদীপথের পরিবর্তনের জন্য কত জনবহুল জনপদ আর নগর যে ধুঁকে ধুঁকে ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে গেছে বাংলার ইতিহাস তার সাক্ষী। খুব বেশি দিনের কথা বাদ দিয়েই বলা চলে, গত একশ বছরে বাংলার নদ-নদীর প্রবাহ পথের যে পরিবর্তন হয়েছে তা সত্যিই ব্যাপক। তাই বাংলার অতীত ইতিহাস জানতে বা বুঝতে হলে এর নদ-নদীর প্রাচীন গতি ও প্রবাহ সম্বন্ধে কিছু জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
তেলিয়াগড়ি ও সিকরিগলির সরু গিরিপথ বেয়ে রাজমহল পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলার ইতিহাসে তেলিয়াগড়ি ও সিকরিগলির এই সংকীর্ণ গিরিপথের স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ যেন বাংলার প্রাকৃতিক দুর্গদ্বার। এর কাছাকাছিই এক সময় গড়ে উঠেছিল গৌড়, লক্ষ্মণাবতী, পাণ্ডুয়া, রাজমহলের মতো ইতিহাস প্রসিদ্ধ রাজধানীসমূহ ।
গঙ্গার গতিপথ আজকাল রাজমহল পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে বিরাট বাঁক নিয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীর আগে কিন্তু ঠিক এ রকম ছিল না। গৌড় শহরকে ডানে রেখে আরো উত্তর-পূর্ব দিয়ে ছিল তার প্রবাহ পথ। ক্রমে সেখান থেকে গতিপথ দক্ষিণ-পশ্চিমে সরে এসেছে, পিছনে ফেলে এসেছে কয়েকটি শুকনো খাত। এই শুকনো খাতগুলো প্রাচীন গতিপথের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে ।
প্রাচীন গৌড়ের প্রায় পঁচিশ মাইল দক্ষিণে গঙ্গার প্রবাহ দু ভাগে ভাগ হয়েছে। দক্ষিণ-বাহিনী প্রবাহের নাম ভাগীরথী। সমুদ্রের কাছাকাছি ভাগীরথী হুগলী নামে পরিচিত। আজকাল গঙ্গার প্রদান ধারা অপর প্রবাহ পদ্মা দিয়ে প্রবাহিত। এক সময় কিন্তু তা ছিল না। ভাগীরথী ছিল গঙ্গার প্রধান প্রবাহ পথ। কবে, কোন সময় থেকে ভাগীরথী ক্রমে শীর্ণ হয়ে উঠেছে তা ঠিক করে বলবার উপায় নেই। তবে ষোড়শ শতকের প্রথম দিকেই গঙ্গার প্রধান জলস্রোত যে পদ্মার খাতে বইতে শুরু করেছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
২৭
গঙ্গার মতো ভাগীরথীও বহুবার প্রবাহ পথ বদলেছে। যতদূর জানা যায়, প্রাচীন কোল ঘেঁষে সোজা দক্ষিণ বাহিনী হয়ে সমুদ্রে পড়ত। তখনো কিন্তু এ প্রবাহেই ছিল অজয়, কালে ভাগীরথীর ধারা পূর্ণিয়ার দক্ষিণে রাজমহল পার হয়ে রাজমহল-মানভূম-ধলভূমের মোর-এর মতো নদীগুলোর সঙ্গম। এসব নদীর জল বুকে নিয়ে ত্রিবেণী (হুগলির কাছে)। পর্যন্ত সোজা দক্ষিণে এসে পরে ভাগীরথী ত্রি-ধারায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল। সপ্তগ্রামকে (সাতগাঁও) পাশে রেখে দক্ষিণ পশ্চিমবাহী প্রবাহ সরস্বতী সমুদ্রে পড়ত আধুনিক তমলুকের কাছাকাছি কোন জায়গায়। রূপনারায়ণ আর দামোদর তখন এই সরস্বতীর প্রবাহেই। নিজেদের জলধারা উৎসারিত করে দিত। ভাগীরথীর প্রধান ধারা বুকে নিয়ে স্বরস্বতী তখন জমজমাট নদী, তার সঙ্গমে জমজমাট ইতিহাস প্রসিদ্ধ তাম্রলিপ্তি বন্দর। যমুনা ছিল দক্ষিণ- পূর্ববাহী প্রবাহের নাম । আর এ দুয়ের মাঝে ছিল ভাগীরথী ।
অষ্টম শতকের আগে কোন এক সময় গঙ্গা তার প্রাচীন প্রবাহপথ থেকে আরো পূর্ব দিকে সরে এসে রাজমহল থেকে গৌড় নগরীকে ডানদিকে রেখে বর্তমান কালিন্দী- মহানন্দার খাতে বইতে শুরু করে। অষ্টম শতকের পর সমুদ্রের কাছে সরস্বতীর মুখও বুজে যায়। ফলে জম-জমাট তাম্রলিপ্তি বন্দর পরিত্যক্ত হয়। বদলে যায় সরস্বতীর ধারা-পথ। তাম্রলিপ্তির স্থান নেয় সপ্তগ্রাম (বর্তমান সাতগাঁও)। চতুর্দশ শতকে এই সপ্তগ্রাম ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার রাজধানী । ষোড়শ শতকে ভাগীরথীর প্রধান স্রোত হুগলীর সমীপবর্তী প্রবাহ দিয়ে বইতে শুরু করে । তখন সপ্তগ্রাম তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে ।
সরস্বতীর সঙ্গমে তাম্রলিপ্তি যখন জম-জমাট তখন ভাগীরথী আধুনিক কলকাতা পর্যন্ত বর্তমান হুগলী নদীর প্রবাহ পথে প্রবাহিত হয়ে কালিঘাট, বারুইপুর, মগরার কোল ঘেঁষে আদি-গঙ্গার খাত বেয়ে সমুদ্রে পড়ত। বর্তমানে আদি-গঙ্গার খাত পরিত্যক্ত। সরস্বতীর উত্তরার্ধ আজ মৃত। মধ্যযুগে নিম্নাংশে সরস্বতী যে পথে প্রবাহিত হত, আজকাল সাঁকরাইলের পর ভাগীরথী সেই কাত বেয়ে সমুদ্রে পড়ে ।
দশম-একাদশ শতকে গঙ্গার প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়। পদ্মা অবশ্য আরো প্রাচীন। কেউ কেউ অনুমান করেন পাঁচ ছশ বছর পূর্বে পদ্মা নদীর কোন অস্তিত্বই ছিল না। “কিন্তু তা সত্য নয়। সহস্রাধিক বছর পূর্বেও যে পদ্মা নদী ছিল তার বিশিষ্ট প্রমাণ আছে। বৌদ্ধ চর্যাপদে পদ্মাখাল বেয়ে বাঙ্গালদেশে যাওয়ার উল্লেখ আছে।” এতে অনুমিত হয়, হাজার বছর আগে পদ্মা অপেক্ষকৃত ছোট নদী ছিল। সম্ভবত প্রথমে খাল কেটে ভাগীরথীর সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো যোগ করা হয়, পরে এ খালই নদীতে পরিণত হয়। কারণ কলকাতার নিচে গঙ্গা ও সরস্বতীর মধ্যে যে খাল কাটা হয়, তাই এখন গঙ্গা নদীতে পরিণত হয়ে খিদিরপুরের কাছ দিয়ে শিবপুর অভিমুখে গিয়েছে এবং কালীঘাটের কাছে আদি গঙ্গা প্রায় শুকিয়ে গেছে। সে যাহোক, ষোড়শ শতাব্দীর আগেই পদ্মা বিশাল আকার ধারণ করেছে।
অনেকের মতে, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকেই পদ্মার প্রবাহ পথের অস্তিত্ব ছিল। পদ্মা বহুবার তার গতিপথ বদলেছে । প্রাচীন পথ কি ছিল তা নির্দিষ্ট করে বলার উপায় নেই। সম্ভবত গোড়ায় পদ্মা রামপুর বোয়ালিয়া হয়ে চলন বিলের ভিতর দিয়ে ঢাকাকে পাশে
২৮ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি রেখে বুড়ীগঙ্গা ধলেশ্বরীর খাত বেয়ে মেঘনার খাড়ি পথই ছিল পদ্মার প্রাচীনতম পথ। আর সে জন্য বুড়ীগঙ্গা। চতুর্দশ শতকে পদ্মার প্রবাহপথ চট্টগ্রা ব্রহ্মপুত্রের সাথে পদ্মার সঙ্গমস্থল। অষ্টাদশ শত এসেছে। সে ফরিদপুর-বাখরগঞ্জ জেলার ভিতর দি দক্ষিণে দক্ষিণ শাবাজপুর দ্বীপের কাছাকাছি মো তখন কালিগঙ্গা ছিল একটি ছোট নদী-পদ্মা থেকে শতাব্দীতে এ ছোট নদীটিই প্রধান হয়ে ওঠে। এ শুরু করেছে। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র (যমুনা) গোয়াল এই মিলিত প্রবাহ চাঁদপুরের কাছে মেঘনার সন্দ্বীপের কাছাকাছি।
ভাগীরথী-পদ্মা ছাড়াও কয়েকটি নদীপথে গ মাথাভাঙ্গা পদ্মা থেকে বেরিয়ে ভাগীরথীতে পড়েে খাঁর প্রবাহপথেও পদ্মার জল সমুদ্রে উৎসারিত হ প্রাচীন। মধ্যযুগে ভৈরব গুরুত্বপূর্ণ নদী ছিল। ব পদ্মার প্রধান শাখা নদী ।
আজকাল লোহিত্য বা ব্রাহ্মপুত্রের প্রধান গোয়ালন্দের কাছাকাছি যমুনা পদ্মার সাথে একত্র অবশ্য এরকম ছিল না। তখন গারো পাহাড়ের কাছাকাছি দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে জামালপুর-১ গড়ের পাশ ঘেঁষে ঢাকা জেলার পূর্বাঞ্চল অতিক্রম লাঙ্গলবন্ধ পার হয়ে ধলেশ্বরীতে নিজেকে উৎসারিত প্রবেশের পথে মূল নদী থেকে বেরিয়ে শাখানদী ল প্রবাহিত হয়ে ধলেশ্বরীতে এসে মিশত। সপ্তদশ গতিপথ। অষ্টাদশ শতকে এ পথ পরিত্যক্ত হয়। বইতে শুরু করে। সে সময় মেঘনা ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গম অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগ থেকেই নদী হিসেবে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ব্ৰহ্মপুত্র অ পূর্বোক্ত পথ পরিত্যক্ত হয়। এ সময় থেকেই ব্ৰহ্ম বইতে শুরু করেছে।
মেঘনার উৎপত্তি খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ে নাম সুরমা। সুরমা সিলেট জেলার ভিতর দিয়ে (বর্তমানে জেলা) পূর্বপ্রান্ত স্পর্শ করে আজমীরীগ কাছাকাছি এসে এক সময় ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত পর্যন্ত বিস্তৃত নদীর নাম মেঘনা ।
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
তিস্তা বা ত্রি-স্রোতা উত্তরবঙ্গের প্রধান একটি নদী। হিমালয়ে তার জন্ম। বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে দার্জিলিং জলপাইগুড়ির ভিতর দিয়ে। জলপাইগুড়ি থেকে তিস্তা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। দক্ষিণবাহী পূর্বতম প্রবাহের নাম হয়েছে করতোয়া, দক্ষিণাবাহী পশ্চিমতম ধারার নাম পূণর্ভবা। মধ্যবর্তী ধারার নাম আত্রাই । যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন পূণর্ভবা মিশত মহানন্দার সাথে। আত্রাই চলন বিলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে করতোয়ার সাথে একত্রিত হতো। করতোয়া ও আত্রাইর মিলিত স্রোতধারা মিলত পদ্মার সাথে জাফরগঞ্জের কাছাকাছি।
আজ মৃতপ্রায় হলেও অতীতে করতোয়া ছিল প্রশস্ত একটি বেগবতী নদী। গঙ্গার মতো এতোটা না হলেও প্রাচীন কালে এই অঞ্চলের মানুষের চোখে করতোয়া ছিল পুণ্যতোয়া । মহাভারতে বারবার করতোয়ার উল্লেখ আছে। প্রাচীন লোকের কাছে এই নদী যে কতটা ভক্তি শ্রদ্ধার পাত্র ছিল করতোয়া মাহাত্ম্য' থেকে তা অনুমান করা যায় । আর শুধু তো সম্প্রদায় বিশেষের ধর্মকর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, করতোয়া অন্যদিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস প্রসিদ্ধ পুণ্ড্রবর্ধন নগরের অবস্থান ছিল করতোয়ার তীরে আজও করতোয়া মহাস্থান গড়ের কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত।
অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্তও তিস্তা ছিল গঙ্গা-পদ্মার শাখানদী। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের প্রলয়ংকরী বন্যার ফলে ত্রিস্রোতার মূলনদী পুরানো খাত ছেড়ে দক্ষিণ পূর্ববাহী হয়ে ব্রহ্মপুত্রে প্রবাহিত হতে শুরু করে। সেই থেকে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের একটির শাখানদী ।
I
উত্তরবঙ্গের আরেকটি প্রধান নদী কোশী (কৌশিকী)। কোশীর খাত পরিবর্তন তিস্তার চেয়ে আরো চমকপ্রদ । আজকাল কোশী বিহারের পূর্ণিয়া জেলার ভিতর দিয়ে রাজমহলের অনেক পশ্চিমে গঙ্গায় প্রবাহিত হয় । অথচ এক সময় সোজা পূর্ববাহী হয়ে কোশী ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হতো। ক্রমেই নদীর খাত পশ্চিমে সরে গেছে। এ রকম পরিবর্তনের এক পর্যায়ে কোশী আর মহানন্দা একত্র হয়ে করতোয়ায় প্রবাহিত হতো। সে সময় নদীর এ সীমাই ছিল দক্ষিণের ‘সুসভ্যদের ও উত্তরের কিরাত-কোচদের মাঝে সীমারেখা ।
কোশীর খাত পরিবর্তনের ফলেই এক কালের সমৃদ্ধ গৌড় অঞ্চল জলাভূমিতে পরিণত হয়েছিল। অস্বাস্থ্যকর জলাভূমির ও বার বার বন্যার ফলে পরিত্যক্ত হয়েছিল গৌড়-লক্ষ্মণাবতী-পাণ্ডুয়া। আজও উত্তর বাংলায় অসংখ্য মরা নদীর সোঁতা পরিলক্ষিত হয়। তার অধিকাংশই নাকি কোশীর পরিত্যক্ত খাত।
ত্রিস্রোতা-কোশীর মতো গঙ্গা-পদ্মা-লোহিত্য-করতোয়া প্রভৃতি বাংলার সবগুলো বড় বড় নদীই ঐতিহাসিক কালের ভিতরে বার বার খাত পরিবর্তন করেছে। ফলে শুধু যে নদীর প্রবাহ পথেরই পরিবর্তন হয়েছে তা নয়, জনবহুল জনপদ জলাভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে, পরিত্যক্ত হয়েছে সমৃদ্ধ নগরী, অনেক ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণে ভৌগোলিক পরিবেশেরও পরিবর্তন ঘটেছে। তাই নদী অভিহিত হয়েছে কীর্তিনাশা নামে। আবার যুগ যুগ ধরে এই পরিবর্তনই বাংলার বুকে ছড়িয়ে দিয়েছে উর্বর নরম পলিমাটির আস্তরণ। সেজন্যই তো এতো সব সত্ত্বেও নদী বাঙালির এতো আদরের। আদর করে বাঙালি সেজন্যই তো তাদের নাম রেখেছে ইচ্ছামতী, ময়ূরাক্ষী, কপোতাক্ষ, চূর্ণী, রূপনারায়ণ ।
৩০ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর এর প্রভাব
২.৪ প্রকৃতির প্রভাব
Influence of Nature
নদী বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক শোভায় সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। বর্ষার মৌসুমে অধিকাংশ নদীই দুকুল ছাপিয়ে প্লাবিত হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকাল প্রায় ছ'মাস স্থায়ী হয়। এ সময়ে বাংলার সমতল ভূমির অনেকাংশ বন্যার পানিতে ডুবে থাকে। তখন এসব এলাকার সবুজ বৃক্ষলতা শোভিত পল্লীঅঞ্চল ও গ্রামগুলো যেন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শ্যামল দ্বীপপুঞ্জ-সমন্বিত এক বিস্তীর্ণ সাগরের রূপ ধারণ করে। নদীগুলো বাংলার কৃষ্টি গঠনে সহায়তা করেছে। বাংলার ভাটিয়ালি সুর ও সারিগান এদেশের নদ-নদীরই অবদান ।
নদ-নদী ও পানি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকায় বাংলাদেশের নৌকা নির্মাণে ও নৌকা পরিচালনায় সাধারণ দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। নৌযুদ্ধেও বাঙালির নৈপুণ্যের খ্যাতি আছে। ঐতিহাসিক আবুল ফজলও এ বিষয়ে বাঙালিদের দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “তারা বিভিন্ন প্রকারের নৌকা যুদ্ধের কাজে এবং পরিবহনের জন্য ব্যবহার করে। দুর্গ আক্রমণের জন্য তারা নৌকাগুলি এমনভাবে তৈরি করে যাতে নৌকার গলুয়ের অগ্রভাগ দুর্গের উচ্চতা ছাড়িয়ে যায় এবং দুর্গ দখলে সৈন্যদের পক্ষে সুবিধা হয়।” মুসলিম শাসনামলে বাংলার শাসনকর্তাগণ নৌযুদ্ধের সুবিধার কথা উপলব্ধি করে নৌবহর প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিতেন। এমনকি, স্থলবাহিনী অপেক্ষা নৌবাহিনীর উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো ।
বাংলাদেশের অন্যতম ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এর আবহাওয়া। দেশটি বিষুব রেখার উত্তরে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি এদেশের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। এজন্য এখানকার আবহাওয়া মৃদু ও নাতিশীতোষ্ণ। মৌসুমি বায়ু দ্বারা প্রভাবিত বলে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বায়ূমণ্ডল আর্দ্র জলীয় বাষ্পপূর্ণ থাকে। ভৌগোলিক অবস্থানের দরুন এখানে কালবৈশাখী, ঘূর্ণিঝড়, প্রবল সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস মাঝে মাঝে ভীষণ প্রলয়ঙ্করী রূপ ধারণ করে ।
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়া স্বভাবতই অধিবাসীদের জীবনের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। মৃদু আবহাওয়া বাংলাদেশের অধিবাসীদেরকে প্রকৃতিগতভাবে কোমল ও শান্ত স্বভাবের করে গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশীদের আবেগময়তায় এবং তাদের পারিবারিক জীবনের ঘনিষ্ঠতায় এ প্রকৃতি বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যই বাংলার অধিবাসীদের খাদ্য, পরিচ্ছদ ও বাসস্থানের স্বরূপ নির্ধারণ করেছে। বাংলার প্রধান কৃষিজ খাদ্যশস্য যেমন- ধান, তেমনি এর অগণিত নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় সরবরাহ করছে প্রচুর পরিমাণে মাছ। তাই বাংলার অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য ভাত ও মাছ। ভাত মাছ না খেলে যেনো বাঙালির পেটই ভরতে চায় না। তাই বলা হয় ‘হাড়িতে ভাত না থাকলে বাঙালি কাহিল।' আবার বর্ষাকাল, বন্যা, ঝড়-ঝঞ্ঝা ও নদীর ভাঙাগড়ার সাথে লড়াই করেই বাংলাদেশের
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
৩১
মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। আর এজন্যই সংগ্রামশীলতা এদেশের অধিবাসীদের প্রকৃতিতে আর এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ঘরদোর, বাসস্থান প্রভৃতি প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার দিকে লক্ষ রেখেই তৈরি করতে হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের ইতিহাসের ধারাকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত করছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়া, মেঘনা প্রভৃতি বাংলার বড় বড় নদী যুগে যুগে বহুবার তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে নতুন নতুন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে কালে কালে বহু নগর, বন্দর, রাজধানী ও রাজ্যপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে, অথবা জনবসতিহীন বিরান অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। নদীর নতুন গতিপ্রবাহের পথ ধরে তীরে তীরে আবার নতুন শহর, বন্দর এবং রাজ্যপাটেররও পত্তন হয়েছে। এভাবেই বাংলার ইতিহাসে অনেক পুরানো অধ্যায়ের সমাপ্তি ও নতুন অধ্যায়ের সংযোজন ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে গৌড়, তান্ডা, সোনারগাঁও, সাঁতগাও ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এককালে এগুলো প্রসিদ্ধ ও সমৃদ্ধশালী নগর, বন্দর ও রাজধানী ছিল।
বাংলার প্রাকৃতিক সীমারেখা, নদ-নদী, জলাভূমি, বৃষ্টিপাত, দীর্ঘস্থায়ী বর্ষাকাল ও আর্দ্র আবহাওয়া বহিরাক্রমণের বিরুদ্ধে এদেশের প্রতিরক্ষার কাজ করে এসেছে। এ প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার আশ্রয়ে বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকে বহু যুগ পর্যন্ত স্বাধঁ.ন রাজনৈতিক জীবন অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলার সাথে উত্তর-ভারতের যোগাযোগ পথ ছিল প্রধানত দুটি। একটি ত্রিহুত বা উত্তর বিহারের মধ্য দিয়ে এবং অপরটি রাজমহলের নিকটবর্তী তেলিয়াগড়ির সংকীর্ণ পথ ধরে। বাংলায় প্রবেশের পথ ছিল বলে ত্রিহুতের নাম হয় দ্বারভাংগা (দার-ই-বংগ)। কিন্তু ত্রিহুতের পথে বাংলায় আসতে হলে কুশী, গন্ডক, মহানন্দা প্রভৃতি খরস্রোতা নদী অতিক্রম করতে হতো। এজন্য উত্তর-ভারতীয় সৈন্যদের অভিযান পথ হিসেব এ পথ তেমন সহজসাধ্য ছিল না। সাধারণত উত্তরভারতীয় অভিযানগুলো তেলিয়াগড়ির পথেই বাংলায় প্রবেশের চেষ্টা করতো। কিন্তু এ পথ ছিল খুবই সংকীর্ণ। বাংলার সৈন্যরা এ সংকীর্ণ পথে স্বল্প সংখ্যায় এবং অতি সহজেই উত্তর ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করতে পারত। ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে উত্তর ভারতের সৈন্যদল কখনো বাংলায় প্রবেশ করেছে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের সাহায্য ছাড়া ঘন বন-জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথ খুঁজে বের করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ ছিল। তেলিয়াগড়ির দক্ষিণে অবস্থিত ঝড়খণ্ডের অরণ্যের মধ্য দিয়ে সুগম কোন পথ ছিল না। তবে মাঝে-মধ্যে বাংলার দুঃসাহসিক কোন কোন অভিযান ঐ পথ দিয়েও পরিচালিত হয়েছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার দরুন উত্তর-ভারতীয় সম্রাটদের অনেকেই নানাভাবে চেষ্টা করেও বাংলাদেশের উপর তাদের আধিপত্য স্থাপন করতে পারেননি। কখনো কখনো কোন কোন সম্রাট যদিও বাংলা দখল করে নিতেন, তবুও তাদের কর্তৃত্ব এখানে বেশিদিন স্থায়ী হতো না। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার আশ্রয়ে এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও আবহাওয়ার অনুকূলতার দরুন এর
৩২. ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর এর প্রভাব শাসনকর্তাগণ খুব সহজেই দিল্লির অধীনতা ছিন্ন করে এখানে স্বাধীন শাসন প্রতিষ্ঠা করতেন। বাংলাদেশের শাসনকর্তার বিদ্রোহের উল্লেখ করে ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন। বারনী লিখেছেন, “জ্ঞানী ও বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ বাংলার নাম দিয়েছেন ‘বালগাক খানা' বা বিদ্রোহ ও কলহ বিবাদের স্থান; কারণ সুলতান মইজুদ্দিন মুহম্মদ বিন সামের (মুহাম্মদ ঘোরী) দিল্লি অধিকারের পর যে কোন ওলী (শাসনকর্তা) লখনৌতিতে নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি দিল্লি থেকে লখনৌতির অত্যধিক দূরত্বের সুযোগ, যাতায়াত পথে বাধা- বিপত্তি ও একটি বিস্তীর্ণ দেশের যাবতীয় সুবিধা নিয়ে অবাধ্য হয়েছেন এবং বিদ্রোহ করেছেন। যদি শাসনকর্তা বিদ্রোহ না করতেন তাহলে অন্যরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতেন এবং তাকে হত্যা করে দেশ দখল করতেন। বহুকাল বাংলার বিদ্রোহ বাংলার দ্বিতীয় প্রকৃতি ও স্বভাবে পরিণত হয়েছে। যে কেউ শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁকেই অনধিকারীগণ ও বিদ্রোহীগণ দিল্লির সুলতানের বিরুদ্ধাচারণ করতে বাধ্য করেছেন।" মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে মাত্র কয়েক বছর এবং গুপ্ত সম্রাটদের শাসনে কিছু কাল ছাড়া বাংলায় প্রাচীনকালে উত্তর ভারতীয় সম্রাটদের প্রভুত্ব স্থাপনের আর কোন নজির নেই। মুসলমান আমলে সমগ্র বাংলায় স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রায় তিন শতাব্দী এ ধারা অক্ষুণ্ণ ছিল। এই স্বাধীন রাজনৈতিক জীবনের আওতায় বাঙালিদের জাতীয় জীবনের বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে ওঠার সুযোগ পায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]