Society : Rural Life, Women in Ancient Bengal প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ জীবন Rural life in ancient Bengal প্রাচীন বাংলার নারী Women in ancient Bengal

সমাজ : গ্রামীণ জীবন, প্রাচীন
সমাজ : গ্রামীণ জীবন, প্রাচীন বাংলার নারী অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় করা হলো :
৬.১ প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ জীবন
Rural Life in Ancient Bengal প্রাচীনকালে বাংলার অধিকাংশ লোক বর্তমা করতো। জনসাধারণ বলতে তখন প্রধানত এই কৃষিজীবী অস্ট্রিক ভাষাভাষী কৌমগুলোর সভ্যতা গ্রামীণ । গ্রামকে কেন্দ্র করে এদের জীবনযাত্রা চলমান থাকত এবং সেই বিস্তৃত কৃষি ক্ষেত্রে কৃষিকাজ কর বসবাস করত। তাদের বসতিগুলোই ছিল গ্রাম। গ্রা কৃষি কাজের প্রথম প্রয়োজন পানি। তাই জল বা পানি কৃষি কর্ম সেখানে সহজলভ্য ছিল। তাই গ্রামগুলো হাওড় প্রভৃতির তীরে।
গ্রামে সাধারণত বসবাস করত ব্রাহ্মণ, জমিদা ক্ষেত্রকর, করজীবী ও ভূমিহীন কৃষক শ্রমিকরা। এ ছাড় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও গ্রামের অধিবাসী ছিল। যেমন- কংসকার, মালাকার, চিত্রকর, তৈলাকার, সূত্রধর, তৌলি ধীবর, জ্যালক প্রভৃতি বর্ণের মানুষ। গোপ, নাপিত, রঙ সমাজসেবা শ্রেণিও গ্রামে বাস করতো। গ্রামের এক (বাউড়ি) চর্মকার, ঘট্টজীবী (পাটনী) ডোলবাহী ব্যাধ, কোল, ভীল্ল, শবর, মেদ প্রভৃতি অন্তজ শ্রেণির মানুষ ৷
গ্রামীণ অর্থনীতিতে জমির খুব চাহিদা ছিল। গ্রামে চাহিদা বেশি থাকত। কৃষিযোগ্য ও কৃষিভূমির উপর গ্রা চাহিদা বৃদ্ধি করতো। কৃষি ক্ষেত্রগুলো ছিল খণ্ড খণ্ড। ক্ষে থাকত। সেজন্য কোন পাড়া বা বসতিতে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি গিয়ে বসতি স্থাপন করতো। এভাবে নতুন গ্রাম সৃষ্টি হতো
প্রথমদিকে গ্রাম পত্তন হতো জঙ্গল পরিষ্কার করে। নিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার হতো। কোন কোন সময় রাজা দানস্বর দানগ্রহীতা লোক সংগ্রহ ও জঙ্গল পরিষ্কার করতো। নতুন নতুন বসতি স্থাপন করে গ্রাম গড়ে ওঠত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ক্ষেত্র বিস্তৃত হতো। ভূমির চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বন ও
গ্রামের পত্তন হতো।
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
১০৯
আমে কৃষির জন্য ক্ষেত্রভূমির সাথে পশু চরানোর জন্য চারণভূমি থাকত। -চারণভূমিগুলো একেকটি গ্রামের যৌথ সম্পত্তি হতো। গ্রামগুলো প্রথম পত্তনের সময় ছোট হতো। কিন্তু লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের আয়তন বৃদ্ধি পেত। গ্রামগুলোর লোকসংখ্যার তারতম্য হতো। উঁচুভূমি বা বরেন্দ্র এলাকায় গ্রামগুলোতে লোকসংখ্যার ঘনত্ব কম হত। তবে, বঙ্গ, হরিকেল, সমতট প্রভৃতি অঞ্চলের গ্রামগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, এগুলো নৌবাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল। বড় বড় গ্রামগুলোতে বাজার থাকত। বাজার হত সাধারণত নদীর ধারে। বাজারে শিল্পী ও কৃষকরা তাঁতের জিনিসপত্র নিয়ে আসত। প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য জনগণ গঞ্জে যেতেন।
প্রাচীন বাংলার গ্রামগুলো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। গ্রামের জীবনযাত্রা সহজ ছিল। কোন রকমের সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ গ্রামে ছিল না। গ্রামের সবাই মিলেমিশে বসবাস করতো। প্রাচীনকালে বাংলার বিভিন্ন গ্রামগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য সড়কপথ তৈরি হতো। অনেক ক্ষেত্রে নৌপথে যোগাযোগ থাকত। প্রশস্ত জল ও স্থল পথের পাশে যেখানে জিনিসপত্র সুলভ সেখানে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রচলন ছিল। গ্রামের শাসন কাজ পরিচালনার জন্য শাসনকেন্দ্র থাকত। গ্রামণীকে গ্রামের শাসক বলা হতো। গ্রামের শাসন কেন্দ্রের পাশেই শিক্ষা কেন্দ্র, ধর্ম মন্দির, বাজার বসত। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে গ্রামে বাজার বসত। গ্রামের বাড়ি-ঘর তৈরি হতো বাঁশ, কাঠ ও মাটি দিয়ে। দরিদ্র অধিবাসীরা বাঁশ বা কাঠের ঘরে খড়ের ছাউনি দিত। অবস্থাপন্ন লোকেরাও এইসব উপকরণ দিয়েই দোচালা, চৌচালা বাসগৃহ নির্মাণ করতো। ঘরের বেড়া আর খুঁটি দেয়া হতো বাঁশ বা কাঠ দিয়ে। নিম্নশ্রেণির লোকেরা কুঁড়েঘরে বসবাস করতো।
প্রাচীনকালে গ্রাম বাংলার সমাজ জীবন কেমন ছিল তা সঠিকভাবে বর্ণনা করা কঠিন । কারণ সুদূর অতীতের সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে পাণ্ডু রাজার ঢিবি ও নরসিংদি জেলার বেলাবো থানায় সম্প্রতি আবিষ্কৃত ওয়ারী বটেশ্বর নামক স্থানে যে প্রাচীন নির্দেশন পাওয়া গেছে তা থেকে প্রাচীন বাংলার সামাজিক জীবন সম্পর্কে অনুমান করা যায়। প্রাচীন যুগে নতুন পাথরের যুগে বাংলার জনগণ গ্রামে বাস করতো এবং তারা কৃষি ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলেছিল। বাংলার আদি জনগোষ্ঠী অস্ট্রিক নামে পরিচিত ছিল। ঐ যুগে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছিল এবং সমাজে জাতিভেদ প্রথা ছিল না। জনপদের যুগে বাংলার কৌম সমাজ ছিল এবং তারা কৌমের নিয়ম নীতি মেনে চলতো। এ সময় সামাজের প্রাকৃতিক শক্তির উপাসনা করতো। এরপর আর্য সংস্কৃতির প্রভাবে সমাজে বর্ণ প্রথা সৃষ্টি হয় এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে কর্মফল জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস গড়ে ওঠে। পাল আমলে মূলত সমাজ পরিপুষ্ট হয়।
প্রাচীন সাহিত্য এবং পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়মনামতির পোড়ামাটির ফ থেকে পাল আমলের সমাজ জীবন সম্পর্কে জানা যায়। পাল আমলে সমাজে জাতিে প্রথা ছিল। সমাজে ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়েস্থ ও শূদ্র এই চারটি শ্রেণি ছিল। তার
গন্ধবণিক, স্বর্ণকার, কর্মকার, মালাকার ইত্যাদি কারিগরদের নিজস্ব সঙ্গে ছিল। এগুলো পরে জাতিতে পরিণত হয়েছিল। অন্ন গ্রহণ ও বিবাহ সম্বন্ধ ব্যাপারে দিদি নিষেধ খুব কঠোর ছিল।
পাল যুগে নারীদের স্বাধীনতা ছিল না। তবে সমাজে অবরোধ প্রপার বাড়াবাড়ি ছিল না। রাজবাড়ির মেয়েরা পর্দার আড়াল থেকে অনাত্মীয় পুরুষদের সঙ্গে কথ বলতেন। বিধবা বিবাহ নিন্দনীয় ছিল
গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। শিল্পীরাও গ্রামে বাস করতো। বাঁশ ও বেতের শিল্প, মৃৎশিল্প, কার্পাস ও অন্যান্য বস্ত্রশিল্প, পৌহ শিল্প ইত্যাদির কেন্দ্র থামে ছিল। কৃষি কর্মের প্রয়োজনীয় বাঁশ ও বেতের নানা প্রকার জিনিসপত্র তৈরি করতো। দা, কুড়াল, কোদাল, লাঙ্গলের ফলা ইত্যাদি নিত্যব্যবহার্য জিনিস গ্রামে তৈরি হতো।
গ্রামের অনেকে ব্যবসায় বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করতো। অনেক গ্রামে পুরুষের বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল। স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহমরণের উল্লেখ পাওয়া যায় সমাজে নারীরা ছিলেন স্বল্পভাষী এবং স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সমাজে ধুতি, শাড়ী ছিল বাঙালির প্রধান পোশাক। পুরুষেরা সাধারণত ধুতি চাদর পরত এবং মেয়েরা শাড়ি পরিধান করতো। অনকে মেয়েরা উড়না ব্যবহার করতো। রাজবংশের এবং ধনী পরিবারের ব্যক্তিরা মূল্যবান পোশাক পরিধান করতো। মেয়েদের শাড়ি ও অন্তবাস, পুরুষদের ধুতি প্রভৃতিতে কোন কোন ক্ষেত্রে নানারকম লতাপাতা, দুল এবং জ্যামিতিক নকশা আঁকা থাকতো। সভাসমিতি এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ পোশাকের ব্যবস্থা ছিল। সন্ন্যাসী এবং দরিদ্র শ্রমিকরা ন্যাঙ্গোটি পরতেন। সৈনিক ও কুস্তিগিররা পরতেন উরু পর্যন্ত লম্বা খাটো আটকানো জাঙ্গিয়া, কানে কুন্ডল, গলায় হার, হাতে আংটি ইত্যাদি স্ত্রী পুরুষ উভয়ে ব্যবহার করতো। কর্পূর, চন্দন ইত্যাদি প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার ছিল। মেয়েরা আলতা, সিঁদুর ও কুমকুম ব্যবহার করতো।
বর্তমানকালের বাঙালিদের মতো পাল যুগের গ্রামীণ বাঙালিদের আহার্য দ্রব্য ছিল ডাল-ভাত, মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ফল, দুধ, ঘি, দধি ইত্যাদি। বাঙালিদের প্রিয় খাদ্য হিসেবে পিঠা ও পায়েসের নাম মঙ্গল কাব্যের বহু স্থানে উল্লেখ রয়েছে। এখনকার মতো তখনো পরিচিত ফল, মূল ও তরকারি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হতো। সকলের জন্য সুরাপান ও ব্রাহ্মণদের জন্য মাছ-মাংস ভক্ষণ ধর্মসম্মত বলে পরিগণিত হতো না। পূর্ববঙ্গে শুটকি ও ইলিশ মাছ প্রিয় খাদ্য ছিল।
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
প্রাচীন যুগে গ্রামে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব পালন করা হতো। এ যুগে বাঙালিরা বারো মাসে তেরো পার্বণ পালন করতো। সমাজে হিন্দু ও বৌদ্ধ এই দুই শ্রেণির লোক বেশি থাকায় তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল। শিশুর জন্মের পূর্বেই তার মঙ্গলের জন্য গর্ভদান, জন্মের পর নামকরণ, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন অনুষ্ঠান হতো। শুভ বিবাহ, নতুন গৃহে প্রবেশ উপলক্ষে শানা কর্ম প্রভৃতি পারিবারিক অনুষ্ঠান ছিল। মৃত্যুর অববহিত পূর্বে ও পরে নানাবিধ ও শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন উপবাস অনুষ্ঠান, অধ্যয়ন, বিদেশযাত্রা, তীর্থ গমন প্রভৃতিগুলোকে শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান হিসেবে পালন করা হতো। বিবাহ উপলক্ষে আমোদ-প্রমোদ হতো। সমাজে আমোদ-প্রমোদের জন্য নাচ-গান, অভিনয়, মল্লযুদ্ধ, লাঠিখেলা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, যেমন— বৈদ অর্চনা, দুর্গা অর্চনা, শারদোৎসব, হোলী উৎসব প্রভৃতির প্রচলন ছিল। নবান্ন, পৌষ পার্বণ ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন পূজা ও আনন্দ উৎসবের প্রচলন ছিল। কুলবধূরা প্রতিদিন বৈদ্যের পূজা, মঙ্গল ঠাকুরের পূজা, সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বেলে তুলসী পূজা প্রভৃতি প্রাত্যহিক অনুষ্ঠান পালন করতো। পুরুষদের কুস্তি, শিকার এবং মেয়েদের গোলকধাধা ও কড়ি প্রিয় খেলা ছিল। পাল যুগে সমাজে সম্প্রীতি বিদ্যমা ছিল। পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও তারা হিন্দু ধর্মের প্রতি উদার ছিলেন। পাল যুগে হিন্দুরা উচ্চ রাজপদে নিয়োগ লাভ করতো।
পাল যুগে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা ছিল সরল ও অনাড়ম্বর। সমতটের জনগণ কষ্টসহিষ্ণু, তাম্রলিপ্তির মানুষ সাহসী ও কর্মতৎপর এবং কর্ণসুবর্ণের অধিবাসীরা সাধু ও ভদ্র ছিল। এ যুগে সমাজে নৈতিকতার কদর ছিল। বাংলার প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রে সত্য, শৌচ, দয়া, দান প্রভৃতি সর্বাধিক গুণের মহিমা কীর্তন এবং ব্রাহ্মণ হত্যা, মদ্য পান, চৌর্যবৃত্তি ব্যভিচার ইত্যাদি কঠিন পাপ বলে গণ্য হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সমাজে দুর্নীতি এবং অশ্লীলতা প্রচলিত হয়।
পাল যুগে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন পরিবহন ছিল। স্থল পথে যাতায়াতের জন্য গরুর-গাড়ি, ঘোড়া, পালকি এবং জলপথে নৌকা ছিল। ধনী লোকেরা হস্তী, অশ্ব ঘোড়ার গাড়ি প্রভৃতি ব্যবহার করতো। বিবাহের পর বর গরুর গাড়িতে বধূকে নিয়ে বাড়িতে উঠতো। গ্রামে খাল, বিল, হাওড় প্রভৃতি স্থানে চলাচলের জন্য ভেলা ব্যবহার করতো ।
বাংলা চিরকালেই গ্রামীণ দেশ। অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করতো। গ্রামে সহজ সরল জীবন যাপনকারীরা ছিল ধনী। সামন্তরা আরাম আয়েসে জীবন যাপন করতো। বৃত্তহীন গরিব মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করতো। ব্রাহ্মণরা শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসন, সবক্ষেত্রে আধিপত্য বজায় রেখে সমাজে সুবিধা ভোগ করতো।
সেন আমলে গ্রাম বাংলার সমাজ ব্যবস্থা পাল আমলের অনুরূপ ছিল। তবে এ যুগে হিন্দু ধর্ম শাসক শ্রেণির ধর্ম হওয়ায় সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেন যুগে বল্লাল সেন কৌলিণ্য প্রথা প্রবর্তন করে। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্য এই শ্রেণির মধ্যে ঐ প্রথা প্রবর্তিত হয়। কয়েকটি বিশেষ গুণের অধিকারী হলে কুলীনের মর্যাদা দেয় হতো। স্পৃশ্য, অস্পৃশ্য ও প্রায়শ্চিত্ত প্রভৃতি সংস্কার সেন শাসনকালেই ব্যাপকতা লাভ করেছিল। ‘বল্লাল চরিত' থেকে জানা যায় যে, রাজার ইচ্ছানুযায়ী কোন শ্রেণিকে সমাজে উন্নত বা অবনত করা হতো। সমাজে জাত- পাতের বিভেদ হয়ে ওঠে। সমাজের রক্ষণশীলতা বেড়ে যায়। পাল আমলের ন্যায় সেন যুগে মানুষের জীবনযাত্রা অনাড়ম্বর ছিল। সমাজে নারীর সম্মান ছিল। পুরুষেরা অনেক সময় একাধিক বিবাহ করতো। বিধবা বিবাহ নিন্দনীয় ছিল। সমাজে সহমরণ প্রথা বিদ্যমান ছিল।
পাল যুগের ন্যায় এ যুগে গ্রামের সাধারণ বাঙালিদের প্রধান খাদ্য ছিল ভাত, নাছ, মাংস, দুধ, দই, ক্ষীর, ঘি, ফলমূল, শাক-সবজি ইত্যাদি। সুরাপান নিষেধ হলেও অনেকেই এই নিষেধ মানত না। সাধারণ বাঙালিদের পোশাক পরিচ্ছদে কোন চাকচিক্য বা আড়ম্বর ছিল না। তবে রাজপরিবারভুক্ত ব্যক্তি ও বিত্তশালীদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ছিল। পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই অলংকারের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। প্রসাধনী হিসেবে তারা কর্পূর, চন্দন, আলতা, সিঁদুর প্রভৃতি ব্যবহার করতো।
পাল যুগের মতো সেন যুগেও গ্রামে নানা রকম খেলাধুলা, আমোদ প্রমোদ ও ধর্মীয় উৎসব লক্ষ করা যায়। সমাজে পাশা ও দাবা খেলা খুব জনপ্রিয় ছিল। জনসাধারণ, নাচ, গান ও অভিনয় উপভোগ করে অবসর সময় যাপন করতো। ক্রীড়া কৌতুকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কুস্তি, শিকার, নৌকাবাইচ ইত্যাদি। পূজা পার্বণ উপলক্ষেও বিভিন্ন আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থা হতো। মাঘে শ্রীপঞ্চমী, ফাল্গুনে দোল পূর্ণিমা ও বাসন্তী পূজা, চৈত্রে চড়ক পূজা, বৈশাখে বাস্তুপূজা। জ্যৈষ্ঠে, জামাই ষষ্ঠি, আশ্বিনে দুর্গা পূজা, অগ্রহায়ণে নবান্ন, পৌষ পার্বণ প্রভৃতির সাথে বাঙালির হৃদয়ের যোগাযোগ ছিল নিবিড় ।
প্রাচীন বাঙালি গ্রামকেন্দ্রিক জীবন ও গ্রামীণ সংস্কৃতি সম্পর্কে 'বাঙালির ইতিহাস আদি পর্ব' গ্রন্থে নীহাররঞ্জন রায় লিখেন যে, বাংলায় ইতিহাসের আদিপর্বে- এবং শুধু আদিপর্বেই নয়, সমস্ত মধ্যযুগ ব্যাপি এবং বহুলাংশে এখনো- বাঙালি জীবন প্রধানত গ্রামকেন্দ্রিক এবং বাঙালির সভ্যতা ও সংস্কৃতি গ্রামীণ । গ্রামকে কেন্দ্র করেই সাধারণ বাঙালির দৈনন্দিন জীবন এবং তার সমস্ত ভাবনা- কল্পনা আবর্তিত হতো। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এটি ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় কথা। এর কারণ বুঝতে পারা কঠিন নয়।
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস প্রথম কারণ আমাদের কোমবদ্ধ আদিম জীবনধারা, যে জীবনে প্রধান জীবনোপায় শিকার ও কৃষি এবং খুব ছোট ছোট গৃহশিল্প এবং যার সমাজ গঠনের প্রধান আশ্রয় গোষ্ঠী ও পরিবার। স্বভাবতই এই ধরনের জীবন শস্য ফলাবার মাঠ, নদনদী, খালবিলের জলাশয় এবং অরণ্যকে আশ্রয় করেই গড়ে ওঠে এবং এভাবে গ্রামের পত্তন হয়। কৌমজীবনে পরিবার ও গোষ্ঠীবন্ধন স্বভাবতই প্রবল এবং যেহেতু আমাদের মধ্যে কৌমচেতনা আজও সক্রিয়ভাবে বহমান, সেহেতু বৃহত্তর জনসমাজ গঠিত হওয়ার পরও আমাদের গ্রামকেন্দ্রিক ভাবনা-কল্পনা এবং সমাজবন্ধন কখনো ঘুচেনি। কারণ কৌমচেতনার আশ্রয়ই হচ্ছে গ্রাম, এক একটি গ্রামকে আশ্রয় করেই তো একটি প্রাচীন গাঞী, গোষ্ঠী ও গোষ্ঠীবদ্ধ বিভিন্ন পরিবার। কিন্তু এই গ্রামকেন্দ্রিক প্রধান কারণ আমাদের সামাজিক ধনোৎপাদন পদ্ধতি । নানা অধ্যায়ে বলেছি, আমাদের প্রধান জীবনোপায় ছিল কৃষি এবং ছোট গৃহশিল্প। কৃষি একান্তই ভূমিনির্ভর। ছোট ছোট গৃহশিল্পে যাঁরা নিযুক্ত থাকতেন তাঁরাও প্রধানত না হন অংশত কৃষকই এবং তাঁরাও সেজন্যই একান্ত ভূমিসংলগ্ন জীবনেই অভ্যস্ত ছিলেন। কৃষিভূমি তো সমস্তই গ্রামে। বস্তুত কৃষিভূমিকে আশ্রয় করেই তো গ্রামগুলো গড়ে উঠত। এই ভূমিই আবার গোষ্ঠী ও পরিবার-বন্ধনের আশ্রয়, অথবা একেবারে উল্টিয়ে বলা চলে এক এক ভূম্যাংশ আশ্রয় করেই এক একটি গোষ্ঠী ও পরিবার; এবং যেহেতু সেই ভূমি অনড়, অচল এবং সেই ভূমিই সকলের জীবিকাশ্রয়, সেহেতু গোষ্ঠী এবং পরিবারও স্থির এবং গোষ্ঠী পরিবারবন্ধনও দৃঢ়। তীর্থ পর্যটন, শিক্ষাদীক্ষা আহরণ, ধর্মপ্রচার এবং ব্যবসায় বাণিজ্য ছাড়া গ্রাম ছেড়ে বাইরে যাবার কোনো প্রয়োজন কারো হতো না। জীবিকা সংগ্রহ হতো গ্রামেই এবং গ্রামগুলো সাধারণত ছিল স্বনির্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই ধরনের উৎপাদন ও বণ্টন পদ্ধতিতে জীবন গ্রামকেন্দ্রিক হবে এটি কিছু বিচিত্র নয় এবং যেহেতু গ্রামকেন্দ্রিক সেহেতু আমাদের সংস্কৃতি গ্রামীণ ।
খ্রিস্টোত্তর প্রথম-দ্বিতীয় শতক হতে আরম্ভ করে অন্তত ষষ্ঠ-সপ্তম শতক পর্যন্ত, বিশেষভাবে চতুর্থ হতে সপ্তম শতক পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী বাংলাদেশ উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য প্রান্তের সুবিস্তৃত অন্তর্বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান অংশীদার হয়েছিল এবং তার ফলে তার ঐকান্তিক কৃষি ও ভূমি নির্ভরতায় কিছুটা বোধহয় ভাঁটা পড়েছিল। বৃহত্তর ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রয়োজনে গ্রাম ছেড়ে অন্তত কিছু কিছু লোককে কমবেশি সময়ের জন্য বিদেশে যাপন করতে হতো। তার ফলে তাদের গ্রামকেন্দ্রিক গোষ্ঠী ও পরিবারবন্ধনও কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ত, সন্দেহ নেই। যুদ্ধবিগ্রহ এবং হয়তো রাজকীয় কাজকর্মের প্রয়োজনেও কিছু কিছু লোককে স্বল্পকালের জন্য হলেও দেশের বাইরে যাপন করতে হতো। তার ফলেও কর্ম ভাবনা-কল্পনার পরিধি কিছুটা বিস্তৃত হয়েছিল এবং ধীর-মন্থর গ্রাম্য জীবনস্রোতে বের হতে কিছু তরঙ্গাভিঘাত লেগেছিল। ব্যবসায় বাণিজ্যের জন্য গ্রাম্য গৃহশিল্পও নিশ্চয়ই কিছু কিছু বিস্তৃত হয়ে থাকবে এবং বৃহত্তর যৌথশিল্পগুলো নগরগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। প্রধানত এসব প্রয়োজনেই এবং কিছুটা রাষ্ট্রীয় ও সামরিক প্রয়োজনে প্রাচীন বাংলায় কিছু কিছু নগরের উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু সাধারণভাবে বাঙালির কৃষিনির্ভরতা কখনো একেবারে ঘুচেনি; বণিক-ব্যবসায়ীরাও দেশ বিদেশ ঘুরে গ্রামেই ফিরে আসতেন এবং অর্জিত ও সংগৃহীত ধন গ্রামেই ব্যয়িত ও বণ্টিত হতো, পরিবার ও গোষ্ঠীকে আশ্রয় করে। নগরের যৌথ শিল্পগুলোরও যোগান যেত গ্রাম হতেই এবং সে অর্থের অন্তত একটি বৃহৎ অংশ গ্রামেই ফিরে আসত। এসব কারণে বাংলায় যে সব নগর গড়ে উঠেছিল সেগুলোকেও আকৃতি-প্রকৃতিতে বৃহত্তর ও সমৃদ্ধির গ্রাম ছাড়া আর কিছু বলা চলে কি না সন্দেহ। কিন্তু অষ্টম শতক হতে আরম্ভ করে বাংলায় এবং উত্তর-ভারতের প্রায় সর্বত্রই বৃহত্তর ব্যবসায় বাণিজ্য স্রোতে ভাঁটা পড়ে যায় এবং বাঙালি জীবন আবার একান্তভাবে কৃষিনির্ভর হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। তার ফলে জীবনে ঐকান্তিক গ্রামকেন্দ্রিকতাও বেড়ে যায় এবং আদিপর্বের শেষের দিকে ও মধ্যযুগে তা ক্রমবর্ধমান। বৃহত্তর, সংগ্রামমুখর, উল্লাস-উতরাল জীবনের স্পর্শও সেজন্যই বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতির স্রোতে কোনো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেনি, তার তটরেখাকে প্রসারিত বা প্রবাহকে গভীর গম্ভীর করতে পারেনি। বৃহত্তর, গভীরতার এবং ভাব ও মননসমৃদ্ধির যেটুকু পরিচয় প্রাচীন বাঙালির সংস্কৃতিতে দৃষ্টিগোচর তা সর্বভারতীয় সংস্কৃতি এবং বৃহত্তর শিল্প-ব্যবসায় বাণিজ্যগত জীবনোপায়ের দান ।
প্রাচীন বাংলার নারী
Women in Ancient Bengal
বাৎস্যায়ন তাঁর কামসূত্রে গৌড়ের নারী মৃদুভাষিণী, অনুরাগবর্তী এবং কোমলাঙ্গী বলে তৃতীয় চতুর্থ শতকে যে উক্তি করে গিয়েছেন তা আজও মোটামুটি সত্য বললে ইতিহাসের অপলাপ করা হয় না। কিন্তু বাৎস্যায়নের উক্তির ভিতর প্রাচীন বাঙালি নারীর সমগ্র ছবিটি পাওয়া যায় না, সে চিত্র ফুটিয়ে তোলার উপাদানও অত্যন্ত স্বল্প। এই অধ্যায়ে এবং অন্যত্র প্রাচীন বাঙালি নারীর কোনো কোনো দিক সম্বন্ধে ইতিপূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। তাঁদের প্রসাধন, অলংকার বিলাস-ব্যসন সম্বন্ধে স্বল্প যা জানা যায়, তা বলা হয়েছে; সভানন্দিনী-বাররামা দেবদাসীদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে; শবরী- ডোম্বীদের জীবনযাত্রার কিছু কিছু চিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করা হয়েছে। সম্পন্ন, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত নারীদের পাওয়া যায় বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষে ততটুকু বলা হয়েছে। তবু আরো যা বলবার বাকি রয়ে গেল তা না বললে ঐতিহাসিকের কর্তব্য করা হবে না; এই প্রসঙ্গে সে কর্তব্য পালন করা যেতে পারে।
গোড়াতেই বলা চলে, বৃহত্তর হিন্দুসমাজের গভীরে (শিক্ষিত নগর সমাজের কথা বলছি না) আজও যে সব আদর্শ, আচার ও অনুষ্ঠান সক্রিয় প্রাচীন বাঙালি সমাজেরও তাই ছিল; যে সব সামাজিক রীতি ও অনুষ্ঠান পরী ও নগরবাসী সাধারণ নারীরা দৈনন্দিন জীবনে আজও পালন করে থাকেন, যে সব সামাজিক বাসনা ও আদর্শ পোষণ করেন, প্রাচীন বাঙালি নারীদের মধ্যেও মোটামুটি তাই ছিল সক্রিয়। বাংলার লিপিমালা ও সমসাময়িক সাহিত্যই তার প্রমাণ। যে অসবর্ণ বিবাহ আজও বৃহত্তর হিন্দুসমাজে প্রচলিত অথচ সুআদৃত নয়, মাঝে মাঝে তেমন ঘটে থাকে এবং সমাজ ক্রমে সেই বিবাহ স্বীকার করেও লয়, প্রাচীন বাংলায়ও অবস্থাটা ঠিক তাই ছিল। দশম-একাদশ- দ্বাদশ শতকের বাঙালি রচিত স্মৃতশাস্ত্রগুলোতে অসবর্ণ বিবাহের কোনও বিধান নেই, সবর্ণে বিবাহই ছিল সাধারণ নিয়ম। কিন্তু অসবর্ণ বিবাহ যে প্রাচীন বাংলায় একেবারে অপ্রচলিত ছিল না তার প্রমাণ সমতট-রাজ লোকনাথের মাতামহ পারশব কেশব। কেশবের পিতা ছিলেন ব্রাহ্মণ কিন্তু মাতা বোধহয় ছিলেন শূদ্রকন্যা; কেশবের পারশব পরিচয়ের এটিই কারণ। কিন্তু তাতে কেশবকে সমাজে কিছু হীনতা স্বীকার করতে হয়নি, তাঁর কন্যা গোত্রদেবী বা দৌহিত্র লোকনাথকেও নয়। কিন্তু কেবল সপ্তম শতকেই বোধ হয় নয়, পরেও এই ধরনের অসবর্ণ বিবাহ কিছু কিছু সংঘটিত হতো, নইলে পঞ্চদশ শতকের গোড়ায় সুলতান জালাল-উদ-দীন বা যদুর সভাপণ্ডিত ও মন্ত্রী বাঙালি বৃহস্পতি মিশ্র যে স্মৃতিগ্রন্থ রচনা করেছিলেন তাতে ব্রাহ্মণের পক্ষে অন্য নিম্নতর বর্ণ হতো স্ত্রী গ্রহণে কোনো বাধা নেই, এ বিধান কোনো প্রয়োজন হতো না। বাংলার পাল ও সেন আমলের লিপিগুলো পড়লে মনে হয় লক্ষ্মীর মতো কল্যাণী, বসুধার মতো সর্বংসহা, স্বামীব্রতনিরতা নারীত্বই ছিল প্রাচীন বাঙালি নারীর চিত্তাদর্শ, বিশ্বস্ততা, সহৃদয়া, বন্ধুসমা এবং স্থৈর্য, শান্তি ও আনন্দের উৎসস্বরূপা স্ত্রী হওয়াই ছিল তাঁদের একান্ত কামনা। স্বামীর ইচ্ছাস্বরূপিনি হওয়াই তাঁদের বাসনা এবং শামুক যেমন প্রসব করে মুক্তা তেমনই মুক্তাস্বরূপ বীর ও গুণী পুত্রের প্রসবিনী হওয়াই সকল বাসনার চরম বাসনা । বন্ধ্যা নারীর জীবন কেউই কামনা করতেন না। লিপির পর লিপিতে এসব কামনা, বাসনা ও আদর্শ নানা প্রসঙ্গে বারবার ব্যক্ত হয়েছে। উচ্চকোটি শিক্ষিত সমাজে মাতা ও পত্নীর সম্মান ও মর্যাদা এই জন্যই বেশ উচ্চই ছিল, সন্দেহ নেই । লিপিগুলোতে উভয়েরই সম্বন্ধ ও সসম্মান উল্লেখ তার সাক্ষ্য; কোনো কোনো রাজকর্মে রাজ্ঞীর অনুমোদন গ্রহণও তার অন্যতম সাক্ষ্য ।
সমসাময়িক নারীজীবনের আদর্শ ও কামনা লিপিমালায় আরো সুস্পষ্ট ব্যক্ত হয়েছে, রামায়ণ, মহাভারত ও পৌরাণিক বিচিত্র নারীচরিত্রের সঙ্গে সমসাময়িক নারীদের তুলনায় এবং প্রাসঙ্গিক উল্লেখের ভিতর দিয়ে। ধর্মপালের মাতা দেদ্দাদেবীর তুলনা করা হয়েছে চন্দ্রদেবতার পত্নী রোহিণী, অগ্নিপত্নী স্বাহা, শিবপত্নী সর্বাণী, কুবের পত্নী ভদ্রা, ইন্দ্রপত্নী পৌলোমী এবং বিষ্ণুপত্নী লক্ষ্মীর সঙ্গে। শ্রীচন্দ্রের পত্নী
সমাজ : গ্রামীণ জীবন, প্রাচীন বাংলার নারী
শ্রীকাঞ্চনার তুলনা করা হয়েছে শচী, গৌরী এবং শ্রীর সঙ্গে। ধবলঘোষের পত্নী সাবা তুলিতা হয়েছেন ভবানী, সীতা এবং বিষ্ণুজায়া পদ্মা এবং বিজয়সেন মহিষী বিলাসদেবী লক্ষ্মী এবং গৌরীর সঙ্গে। সমসাময়িক কামরূপ শাসনাবলিতেও এই ধরনের তুলনা হতো উল্লেখ সুপ্রচুর।
মাতার কামনা ছিল শুভ্র নিষ্কলঙ্ক সুদর্শন সন্তানের জননী হওয়া; প্রসবাবস্থায় কামনারূপ সন্তান জন্মলাভ করে, এই বিশ্বাসও জননীর মধ্যে সক্রিয় ছিল। শ্রীচন্দ্রের রামপাল লিপিতে সুবর্ণচন্দ্রের নামকরণ সম্বন্ধে একটি সুন্দর ইঙ্গিত আছে। প্রসূতির স্বাভাবিক প্রবণতানুযায়ী সুবর্ণচন্দ্রের মাতার ইচ্ছা হয়েছিল শুল্কপক্ষে নবোদিত চন্দ্রের পূর্ণ ব্যাসরেখা দেখবার, তাঁর সে ইচ্ছা পূরণ হওয়ায় তিনি সোনার মতো উজ্জ্বল অর্থাৎ সুবর্ণময় একটি চন্দ্র (অর্থাৎ সুবর্ণচন্দ্ররূপ পুত্র) দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছিলেন বাংলাদেশে সাধারণ লোকদের মধ্যে এ বিশ্বাস আজও সক্রিয় যে শুরুপক্ষের গোড়ার দিকে নবোদিত চন্দ্রের পূর্ণ গোলকরেখা প্রত্যক্ষ করলে প্রসূতি চন্দ্রের মতো স্নিগ্ধ সুন্দর প্রসব করেন।
সংক্রান্তি ও একাদশী তিথিতে এবং সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণে তীর্থস্নান, উপবাস এবং দানে অনেক নারীই অভ্যস্ত ছিলেন; রাজান্তঃপুরিকারাও ছিলেন। স্বামী ও স্ত্রী একই সঙ্গে দান-ধ্যান করতেন, এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয়; স্ত্রী ও মাতারা একক অনেক মূর্তি ও মন্দির ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছেন, দান-ধ্যান করেছেন এ রকম সাক্ষ্যও সুপ্রচুর। রামায়ণ-মাহাভারতের কথা প্রাচীন বাংলায় সুপরিচিত ও সুপ্রচলিত ছিল, এমন কি নারীদের মধ্যেও। মদনপালের মহিষী চিত্রমতিকা দেবী বেদব্যাস-প্রোক্ত মহাভারত আনুপূর্বিক পাঠ ও ব্যাখ্যা করে শুনিয়েছিলেন এবং নীতিপাঠক ব্রাহ্মণকে দক্ষিণাস্বরূপ মদনপাল কিছু ভূমিদানও করেছিলেন।
নারীরা বোধ হয় কখনো সম্পন্ন অভিজাত গৃহে শিশুধাত্রীর কাজও করতেন। তৃতীয় গোপালদেব শৈশবে ধাত্রীর ক্রোড়ে শুয়ে খেলে মানুষ হয়েছিলেন, মদনপালের মনহলি লিপিতে এই রকম একটু ইঙ্গিত আছে। জীমূতবাহনের দায়ভাগ গ্রন্থ প্রামাণিক হলে স্বীকার করতে হয়, নারীরা প্রয়োজন হলে সুতা কেটে, তাঁত বুনে অথবা অন্য কোনো শিল্পকর্ম করে স্বামীদের উপার্জনে সাহায্য করতেন, কখনো কখনো অর্থলোভে প্ররোচিতা হয়ে স্ত্রীরা স্বামীদের শ্রমিকের কাজ করতে পাঠাতেন। এ ব্যাপারে স্ত্রী-রা নিয়োগকর্তাদের নিকট হতে উৎকোচ গ্রহণে দ্বিধাবোধ করতেন না ৷
একটি মাত্র স্ত্রী গ্রহণই ছিল সমাজের সাধারণ নিয়ম, সাধারণ লোকেরা তাই করতেন। তবে রাজরাজারা, সামন্ত-মহাসামন্তদের মধ্যে অভিজাত সমাজে, সম্পন্ন ব্রাহ্মণদের মধ্যে বহুবিবাহ একেবারে অপ্রচলিত ছিল না এবং সপত্নী বিদ্বেষও অজ্ঞাত ছিল না। দেবপালের মুঙ্গের লিপিতে, মহীপালের বাণগড় লিপিতে সপত্নী বিদ্বেষের ইঙ্গিত আছে, আবার কোনো কোনো লিপিতে স্বামী সমভাবে সকল স্ত্রীকেই
ভালবেসেছেন, সে ইঙ্গিতও আছে (ঘোষরাবা লিপি)। প্রাচীন বাংলার লিপিমালায় বহুবিবাহের দৃষ্টান্ত সুপ্রচুর; তবে একপত্নীত্বই যে সুখী পরিবারের আদর্শ তা স্পষ্টই স্বীকৃত হয়েছে তৃতীয় বিগ্রহপালের আমগাছি লিপিতে ।
প্রাচীন বাংলায়ও বৈধব্যজীবন নারীজীবনের চরম অভিশাপ বলে বিবেচিত হতো। প্রথমই মুচে যেতো সীমান্তের সিঁদুর এবং সঙ্গে সঙ্গে তার সমস্ত প্রসাধন-অলংকার সমস্ত সুখসম্ভোগ পড়ত খসে। সাধারণভাবে প্রাচীন ভারতবর্ষের অন্যত্র যেমন, প্রাচীন বাংলায়ও কন্যা বা স্ত্রী হিসেবে ছাড়া নারীদের ধনসম্পত্তিতে কোনো বিধিবিধানগত ব্যক্তিগত অধিকার বা সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। কিন্তু স্মৃতিকার জীমূতবাহন বিধান দিয়েছেন, স্বামীর অবর্তমানে অপুত্রক বিধবা স্ত্রী স্বামীর সমস্ত সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকারের দাবি করতে পারেন। এই প্রসঙ্গে জীমূতবাহন অন্যান্য স্মৃতিকারদের বিরুদ্ধ মতামত সব লিপিবদ্ধ করেছেন এবং যাঁরা বিধান দিয়েছেন যে, বিধবা স্ত্রী শুধু খোরাকপোশাকের দাবি ছাড়া আর কিছু করতে পারেন না কিংবা মৃত স্বামীর ভ্রাতা এবং নিকট আত্মীয়বর্গের দাবি বিধবা-স্ত্রীর দাবি অপেক্ষা অধিকতর বিধিসঙ্গত, তাঁদের বিধান সজোরে খণ্ডন করতে চেষ্টা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অবশ্য একথা বলেছেন সম্পত্তি বিক্রয়, বন্ধক বা দানে বিধবার কোনো অধিকার নেই এবং তিনি যদি যথার্থ বৈধব্য জীবনযাপন করেন তবেই স্বামীর সম্পত্তিতে তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকবে। বিধবাকে মৃত্যু পর্যন্ত স্বামীগৃহে স্বামীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বাস করতে হবে, প্রসাধন- অলংকার-বিলাসবিহীন সংযত জীবনযাপন করতে এবং স্বামীর পরলোকগত আত্মার কল্যাণার্থে যে সব ক্রিয়াকর্মানুষ্ঠানের বিধান আছে তা পালন করতে হবে। স্বামীগৃহে যদি কোনো পুরুষ আত্মীয় না থাকেন তা হলে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে পিতৃগৃহে এসে বাস করতে হবে। প্রায়শ্চিত্ত প্রকরণ গ্রন্থ মতে বিধবাদের মৎস্য, মাংস প্রভৃতি যে কোনো রূপ উত্তেজক পদার্থভক্ষণ নিষিদ্ধ ছিল; বৃহদ্ধর্মপুরাণের বিধানও তাই। বিবাহ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে বিধবাদের উপস্থিতি অমঙ্গলসূচক বলে তখনো পরিগণিত হতো এবং তাঁরা সাধারণত উৎসব ও অন্যান্য মঙ্গলানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পরতেন না। স্বামীর চিতায় সহমরণে যাবার জন্য তখনো ব্রাহ্মণ্যসমাজ বিধবাদের উৎসাহিত করতেন। বৃহদ্ধর্মপুরাণে বলা হয়েছে;
যে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যায় তিনি স্বামীর গুরু পাপ হতে উদ্ধার করেন। নারীর পক্ষে এর চেয়ে সাহস ও বীরত্বের কাজ আর কিছু নেই। এই সহমরণের ফলেই স্ত্রী স্বর্গে গিয়ে পূর্ণ এক মন্বন্তর স্বামীর সঙ্গে সহবাস করতে পারেন। স্বামীর মৃত্যুর বহু পরেও একান্ত স্বামীগতচিত্ত হয়ে স্বামীর কোনো প্রিয় বস্তুর সঙ্গে এক অগ্নিতে প্রবেশ করে যে বিধবা আত্মাহুতি দিতে পারেন, তিনিও পূর্বোক্তফল প্রাপ্ত হন।
বৃহদ্ধর্মপুরাণের এই উক্তি হতে স্পষ্টই বুঝা যায়, সতীদাহ ও সহমরণ প্রথা প্রাচীন বাংলায় অন্তত আদিপর্বের শেষ দিকে অজ্ঞাত ছিল না ।
নারীদের যৌনশুচিতা ও সতীত্বের আদর্শ স্মৃতিকারেরা যথেষ্ট জোরের সঙ্গেই। প্রচার করেছেন, সন্দেহ নেই; সমাজের মোটামুটি আদর্শও তাই ছিল; এ বিষয়েও সন্দেহের অবকাশ কম। তৎসত্ত্বেও স্বীকার করতেই হয়, বিত্তবান নগর সমাজে তার ব্যতিক্রমও কম ছিল না। আর পল্লীসমাজের যে স্তরে ব্রাহ্মণ্য আদর্শ পুরাপুরি স্বীকৃত ছিল না; আদিম কৌমগত সামাজিক আদর্শ ছিল বলবত্তর, সে স্তরে যৌনজীবনের আদর্শই ছিল অন্য মাপের, রীতিনীতিও ছিল অন্যতর। হিন্দু-ব্রাহ্মণ্য সমাজাদর্শ দ্বারা তার বিচার চলতে পারে না। হাড়ি, ডোম, নিষাদ, শবর, পুলিন্দ, চণ্ডাল প্রভৃতিদের বিবাহ ও যৌনজীবনের রীতিনীতি ও আদর্শ কি ছিল, তা জানতে হলে তা আজকের সাঁওতাল, কোল, হো, মুণ্ডা প্রভৃতিদের ভিতর খুঁজতে হবে। ব্রাহ্মণ্য আদর্শ দ্বারা শাসিত সমাজেও অনিচ্ছায় বলপূর্বক ধর্ষিতা নারী তখনকার দিনেও সমাজে পতিত বা সমাজচ্যুত বলে গণ্য হতেন না; বিধিবদ্ধ প্রায়শ্চিত্ত অনুষ্ঠানেই তাঁর শুদ্ধি হয়ে যেত, এ সাক্ষ্য আমরা পাই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে। হিন্দুসমাজের নিম্নতম স্তরে বিধবা-বিবাহও একেবারে অপ্রচলিত ছিল না বলেই মনে হয়।
নগর-সমাজের উচ্চকোটি স্তরের নারীরা লেখাপড়া শিখতেন বলে মনে হয়, পবনদূত কাব্যে নারীদের প্রেমপত্র রচনার ইঙ্গিত আছে। নানা কলাবিদ্যায় নিপুণতাও তাঁদের অর্জন করতে হতো, বিশেষভাবে নৃত্যগীতে। নট গাঙ্গোকের পুত্রবধূ বিদ্যুৎপ্রভা সম্বন্ধে সেক শুভোদয়ায় যে সুন্দর গল্পটি আছে তাই এই উক্তির সাক্ষী। জয়দেব পত্নী পদ্মাবতীও নৃত্যগীতে সুদক্ষা ছিলেন ।
বাৎস্যায়নের সাক্ষ্যে মনে হয়, প্রাচীন বাংলার রাজান্তঃপুরের মেয়েরা স্বাধীনভাবে চলাফেরায় খুব অভ্যস্ত ছিলেন না; পর্দার আড়াল হতে তাঁরা অপরিচিত পুরুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। অন্তঃপুরে অবগুন্ঠনময়ীর জীবনই সমাজের উচ্চকোটি স্তরে সাধারণ নিয়ম ছিল বলে মনে করবার হেতু বিদ্যমান। লক্ষ্মণসেনের মাধাইনগর লিপিতে রাজান্তঃপুরের সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। কেশবসেনের ইদিলপুর লিপিতে আছে, বল্লাল সেন তাঁর বিজিত শত্রুর রাজলক্ষ্মীকে জয় করে এনেছিলেন পাল্কীতে বহন করে। মনে হয়, সম্ভ্রান্ত মহিলারা পথে ঘাটে যাতায়াতকালে পথযাত্রীদের দৃষ্টি হতে নিজেদের আড়াল করে চলতেন। কেশবসেন সুপুরুষ ছিলেন, তাঁর ইদিলপুর লিপিতে দেখা যায়, তিনি যখন রাজপথে বের হতেন, পৌরসীমন্তিনীরা সৌধশিখরে উঠে তাঁর রূপ নিরীক্ষণ করতেন। কিন্তু পবনদূতে বিজয়পুরের মহিলাদের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে মনে হয়, তাঁদের অবগুণ্ঠনের বালাই খুব বেশি ছিল না। সম্ভ্রান্ত স্তরে যাই হোক, সমাজের যে স্তরে নারীদের হাটে-মাঠে-ঘাটে খেটে জীবিকানির্বাহ করতে হতো, নানা কাজে কর্মে শারীরিক শ্রম করতে হতো, তাঁদের মধ্যে অবগুণ্ঠিত জীবনযাপনের কোনও সুযোগ ছিল না, প্রয়োজনও ছিল না, সে আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাও ছিল না। মধ্যবিত্ত কুলমহিলারা অবগুণ্ঠন দিতেন; বস্তুত, অবগুণ্ঠন ছিল তাঁদের কুলমর্যাদা জ্ঞাপনের অন্যতম অভিজ্ঞান। এই মধ্যবিত্ত কুলমহিলাদের জীবনচর্যার একটি সুন্দর ছবি রেখে গেছেন কবি লক্ষ্মীধর।
অবগুণ্ঠিত শির স্বতই লজ্জানত, গমন মন্থর দৃষ্টি পায়ে নিবন্ধ, বাক্য পরিমিত এবং মৃদুমধুর-এসব দ্বারা এই মহিলা যেন উচ্চস্বরে নিজের কুলমর্যাদা প্রকাশ করছেন।
বাংলার কবি উমাপতিধর বাঙালি নারীর সুন্দর একটি প্রাকৃত অথচ অনন্যসাধারণ ছবি এঁকে রেখে গেছেন এবং সদুক্তিকর্ণামৃত গ্রন্থে তা উদ্ধৃত হয়েছে। এই ছবিটি উদ্ধার করেই এই অধ্যায়ের আলোচনা শেষ করা যেতে পারে। একবসনা পল্লীবাসিনী বাঙালি নারী বনের মধ্যে ঢুকেছেন ফুল আহরণের জন্য, একটু উঁচুতে নাগালের বাইরে গাছের ডালে ফুল ফুটে আছে, পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বাহু উপরের দিকে তুলে সুন্দরী ফুল পাড়ছেন; নাভিদ বসনমুক্ত, একদিকের স্তন প্রকাশিত।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার নারীদের কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হতো। তাদের আচরণে সংযম, সত্যবাদিতা, যৌনসূচিতা গ্রথিত করা হতো। নিষ্ঠুর সতীদাহ প্রথায় স্বামীর চিতায় বিধবা নারীকে জীবন বিসর্জন দিতে হতো। কঠোর সামাজিক বিধি নিষেধের মাধ্যমে নারীকে শৃঙ্খলিত করা হতো।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]