মুসলিম সমাজ গঠনে সুফিদের ভূমিকা Role of the Sufis in Formation of the Muslim Society


মুসলিম সমাজ গঠন, সমাজ উন্নয়ন ও মুসলিম প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশে সুফিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত উপমহাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল সুদিরবেশদের আবাসস্থল ও তাদের আধ্যত্মিক কার্যাবলির দৃশ্যস্থান ছিল। সর্বত্র তারা তাদের চরিত্র ও কাজের প্রভাব রেখে গেছেন। বিপুল সংখ্যক সাধু দরবেশের উপস্থিতিতে একদা বাংলাদেশ ধন্য হয় এবং অন্য যে কোনো স্থান অপেক্ষা এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব অনেক বেশি গভীর ও স্থায়ী হয়। বাংলায় মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও বাঙালি
অধিবাসীদের মরমী-প্রকৃতি এর উজ্জ্বল প্রমাণ বহন করছে। বাঙালি সিদ্ধপুরুষগণ নানাভাবে ইসলাম ও সমাজের সেবা করেন এবং মুসলমান সমাজের উন্নতিকল্পে তারা এমনকি মুসলমান বিজেতা, সেনাপতি ও শাসনকর্তাদের অপেক্ষা অধিকস্থায়ী অবদান রেখে যান ।
বিভিন্ন সময় শত শত সুফি দরবেশ ও তাদের অনুগামী শিষ্যরা বাংলায় আগমন করেন এবং বিভিন্ন শহর ও গ্রামঞ্চলে এমন কি প্রদেশের নিভৃততম কোণেও ছড়িয়ে পড়েন। তারা ধর্মের শ্রীবৃদ্ধি সাধন করেন এবং অতীন্দ্রিয়বাদ ও স্বর্গীয় প্রেমের প্রসার সাহন করেন। এভাবে তারা মানুষের নৈতিক বল এবং দুঃস্থ মানবতার জন্য তাদের গভীর সহানুভূতি ও সেবা অমুসলমান জনসাধরণকেও তাদের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ইসলামের উদারতা ও সংস্কৃতিক প্রাধান্য যা 'সুফিপুরুষগণ তৎকালীন আদর্শ অনুসন্ধানকারী ও সমাজের নির্যাতিত ও অধঃপতিত মানুষের নিকট তুলে ধরেছিলেন। সুতরাং, এই সকল আদর্শবান পুরুষের প্রচারকার্য অমুসলমান, বৌ ও সমভাবে সকল শ্রেণির হিন্দুদেরকে ইসলামের স্নিগ্ধ ছত্রছায়াতলে আকৃষ্ট করেছিল শেখ জালাল উদ্দিন তাবরিজী ও তার অনুগামী শিষ্যদের প্রচেষ্টার ফলে উত্তরবঙ্গের মালদহ ও দিনাজপুর জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। এই সুফি তাপস সম্বন্ধে একটি সমসাময়িক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তাঁরা পান্ডুয়ায় আগমনের পর বিপুল সংখ্যক লোক তার নিকট ভিড় জমায় এবং তারই হাতে ইসলাম কবুল করে। আখী সিরাজ, আলাউল হক, নূর কুতুব আলম প্রমুখ খ্যাতনামা চিশতীয়া সুপুিরুষদের নিকট উত্তর বাংলার বহু লোক ইসলামে দীক্ষালাভ করে। ইবনে বতুতার মতে সিলেটের অধিবাসীরা শেখ জালালের (শাহ্ জালাল) ধর্মীয় প্রচারকার্যে আকৃষ্ট হয়ে ইসলামে দীক্ষিত হয়। স্থানীয় সাহিত্যে মরক্কোর এই পরিব্রাজকের মতের সমর্থন পাওয়া যায়। একটি লোকসংগীতে উল্লেখ আছে, “সিলেটে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ছিল, কিন্তু কোনো মুসলমান ছিল না। শাহ জালালই সর্বপ্রথম সে স্থানে আজান দেন অর্থাৎ ইসলাম প্রচার করেন।”
বুলনা যশোরে মুজাহিদ দরবেশ খানজাহান আলীর প্রচেষ্টায় ইসলাম বিস্তার লাভ করে। চট্টগ্রাম-নোয়াখালী অঞ্চলে চতুর্দশ শতকের মধ্যভাগে মুসলমানদের দ্বারা বিজিত হয়। তথাপি এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠাতা বিদ্যমান। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? বাস্তবিক এটা ছিল মুলমান সুফি দরবেশদের অমরকীর্তি তারা এই অনুসলমান অঞ্চলে প্রবেশ করেন এবং ধৈর্যের সঙ্গে ধীরে ধীরে ইসলামের ধর্মবিশ্বাস লোকদের মধ্যে বিস্তার করেন। স্থানীয় জন প্রবাদ এই মহান সুফি দরবেশদের বাংলায় মুসলিম সমাজ গঠন:সুলতানদের ভূমিকা, সুফিদের ভূমিকা, উলামাদের ভূনিবার কীর্তিরাজিতে উজ্জ্বল। ইতিহাসসম্মত সঠিক প্রমাণের অভাবে এই সব
অনেক বর্ণনাই হয়তো গ্রহণ করা কঠিন, তবু এগুলোতে বাংলার বিভিন্ন এলাকার দরবেশদের ব্যাপক ধর্ম-প্রচারমূলক কার্যাবলির প্রতিফলন দেখা যায়।
বাংলা সাহিত্যে প্রকাশ পায় যে, ত্রয়োদশ শতকের শেষভাগে পূর্ববঙ্গে মুসলমানদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। কবি কৃত্তিবাসের মতে, মুসলিম-প্রভাব এত বে পায় যে, সংমিশ্রণের ভয়ে পূর্ববঙ্গের ব্রাহ্মণগণ তাদের পৈতৃক ঘরবাড়ি পরিত্যাগ করেন। কবি লিখেছেন যে, তার পূর্বপুরুষ নারসিংহ ওঝা, যিনি সোনারগারের মর্দন দেবের একজন সভাসদ ছিলেন, (ত্রয়োদশ শতকের শেষভাগে) তিনিও ঐ সময়ে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে পশ্চিম বাংলায় চলে আসেন। ত্রয়োদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের মুসলমানদের দ্বারা সোরাগাঁও বিজিত হয় নি। তাহলে কিভাবে সে সময় ঐ অ মুসলমানদের সংখ্যা এত বৃদ্ধি পায়। এতে ইঙ্গিত মেলে যে সোনারগাও অঞ্চ মোসলমানদের দখলে আসার পূর্বেই সে অঞ্চলে বহু মুসলমান ছিল। এয়োদশ শতকে সপ্তদশকে শেখ শরফউদ্দিন আবু তাওয়ামা সোনারগাঁয়ে খানকাহ ও ইসলাি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই এলাকায় মুসলমানদের শিক্ষার জন্য একটি ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ায় এই ধারণা দৃঢ় হয় যে, শেখ আবু তাওয়ামার সোনারগাঁয়ে পৌঁছাবার পূর্বেই সেখানে মুসলমান অধিবাসী ছিল। মুসলমানদের ধর বিজিত হওয়ার পূর্বে সোনারগঁয়ে মুসলিম অস্তিত্ব সুফি দরবেশদের প্রচারমূলক কার্যাবলিরই ফলশ্রুতি।
ইসলামের প্রসার ছাড়াও বাংলা দেশে মুসলমানদের রাজ্য বিস্তৃতি ও মুসলিম সমাজের উন্নতি বিধানে মুসলমান সুফি-দরবেশদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কখনো নিজেরা, কখনো মুসলমান সেনাপতিদের সঙ্গে সহযোগিতায় তারা প্রদেশের শেষ সীমা পর্যন্ত মুসলিম অধিকার কায়েম করেন। স্থানীয় কিংবদন্তিতে, ধর্মের জন্য হিন্দু রাজাদের বিরুদ্ধে কয়েকজন সুফি পুরুষের জেহাদ করার বিষয় উল্লেখ করা হয়, যেমন বাবা আদম শহীদ, শাহ সুলতান মাহী সওয়ার, মখদুম শাহ দৌলা ও অন্যান্য দরবেশদের কেউ কেউ বঙ্গদেশে ধর্মের শাসন-সীমা বিস্তৃত করতে এবং ছোট ছোট হিন্দুরাজা ও জমিদারদের এলাকায় বসবাসকারী মুসলমান প্রজাদের দুঃখ দুর্দশা মোচন করতে মুসলমান শাসনকর্তা ও সেনাপতিদের সঙ্গে যোগদান করেন। মুসলমান সৈন্যদলে সুফি দরবেশদের উপস্থিতির ফলে সৈন্যদের মধ্যে বিপুল নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বলের সঞ্চার হয়। এভাবে নৈতিক বলে বলীয়ান হয়ে মুসলমান সৈন্যরা অনুসলমান সেনাদের উপর বিজয়ী হয়।
মুজাহিদ-দরবেশ জাফরখান গাজী ও শাহ্ সফিউদ্দিন সাতগাঁয়ের হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং ঐ অঞ্চল বাংলাদেশের মুসলমান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। শাহ্ জালাল ও তাঁর শিষ্যরা সিলেটের হিন্দুরাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিকান্দার গাজীর
মুসলমান সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করেন এবং সেখানে মুসলমান আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। জনপ্রবাদভিত্তিক হলেও এটা সত্য যে, সুফি-মুজাহিদ খানজাহান আলী। খুলনা যশোরের দুর্গম অঞ্চলে নিয়মিত অভিযান করে তা মুসলমানদের শাসনাধীনে আনয়ন করেন। একটি জন-প্রবাদ অনুযায়ী একজন হিন্দু জমিদারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন সুফি দরবেশ শাহ মাহমুদ গজনবী। বাংলার বিভিন্ন অংশে মুসলিম অধিকার বিস্তারে সুফি দরবেশদের অবাদান সম্পর্কে এ রকম আরো বহু জনশ্রুতি প্রচলিত আছে।
বঙ্গদেশে মুসলিম শাসনের সংহতির ক্ষেত্রেও সুফি-দরবেশদের অবদান উল্লেখযোগ্য। বাস্তাবিকই মুসলমান সেনাপতিদের সামরিক ও ভৌগোলিক বিজয়ের সঙ্গে সুফি-দরবেশগণ ইসলামে দীক্ষাগ্রহণকারী ও শিষ্য সংগ্রহ করে নৈতিক বিজয় যুক্ত করেন এবং এভাবে একটি অমুসলিম দেশে মুসলিম রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও শক্তির উৎস প্রদান করেন। সাধু দরবেশদের নীরব সাধনা ব্যতিরেকে, শুধু সামান্যসংখ্যক সৈন্যদলের উপর নির্ভর করে বিপুল সংখ্যক ভিন্নধর্মীয় অধিবাসীদের উপর প্রভুত্ব বজায় রাখা মুসলমান শাসকদের পক্ষে সমস্যা হয়ে দাঁড়াত ।
এসব সাধুপুরুষগণ সঙ্কটের সময়ে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজকে রক্ষা করেছেন। জনশ্রুতিতে এরূপ অনেক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় যে, মুসলমানদের দুর্ভাগ্য ও দুর্যোগের দিনে সুফি দরবেশগণ তাদের অভিভাবকরূপে তাদের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের অসামান্য আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শক্তির দ্বারা মুসলমানদের উপর হিন্দুরাজা ও জমিদারদের অত্যাচার বন্ধ করেছেন। মুসলমানদের রক্ষার্থে নৈতিক শক্তি ফলপ্রসূ না হলে তাঁরা অস্ত্র পর্যন্ত ধারণ করেছেন। হযরত নূর কুতব আলম বাংলাদেশে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। ইলিয়াস শাহী সুলতানদের উদার শাসন নীতির ফলে হিন্দুরা রাজ্যের উচ্চপদগুলো দখল করে এবং হিন্দু কর্মচারী রাজা কংস রাষ্ট্রে প্রাধান্য স্থাপন করেন। রাজা কংস দরবেশ ও উলেমার উপর নির্যাতন করেন এবং মুসলামনদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ফলে বাংলার মুসলমানগণ এক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। নূর কুতব আলম আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি এই সংকট মুহূর্তে মুসলিম সম্প্রদায় ও রাষ্ট্রের ভাগ্যের প্রতি উদাসীন থাকতে পারেননি। তিনি মুসলমানদের মতানৈক্য দূর করে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বাংলার মুসলমানদেরকে রক্ষার জন্য তিনি ইব্রাহিম শার্কীর সাহায্য প্রার্থনা করেন। সেই ঘোর দুর্দিনে তিনি মুসলমানদের সাহায্যে এসেছিলেন বলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজ এক মহাসংকট থেকে রক্ষা পায় এবং শক্তিশালী হয়ে উঠে। এরূপ ভাবে নূর কুতব আলম ছিলেন মুসলিম বাংলার ত্রাণকর্তা। তার কর্মশক্তির ফলেই মুসলিম সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাষ্ট্র ও সমাজে এক নবীন শক্তির সঞ্চার হয়। বাস্তবিকই বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের অগ্রগতিতে তার অবদান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুফি দরবেশগণ বাংলাদেশে মুসলিম রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় ইসলামি নীতির সমর্থক ছিলেন। সাধারণত তাঁরা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতেন না। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজের বিপদের দিনে তারা কখনো নির্বিকার থাকেননি। বাংলার ইলিয়াস শাহী সুলতানগণ রাজকার্যে অধিক সংখ্যায় হিন্দুদের নিয়োগ করার নীতি অনুসরণ করে উত্তর ভারতের সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছিলেন। সুলতানগণ তাদের সালতানাত রক্ষার্থে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সহযোগিতা লাভের প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন এবং বাঙালি অধিবাসীদের স্বদেশ প্রেমের উপর তাদের শক্তির উৎস গড়ে তুলতে ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু ঐ সময়ের দরবেশ ও উলেমা রাজ্যের দায়িত্বপূর্ণ পদে হিন্দুদের নিয়োগ অসমীচীন মনে করেন। শেখ আলাউল হক বুঝতে পেরেছিলেন যে, এ ধরনের নীতি অনুসরণের মধ্যে বাঙালি মুসলমানদের জন্য বিপদের সম্ভাবনা নিহিত আছে। সেজন্য, শেখ আলাউল হক সুলতান সিকান্দর শাহের নিকট এ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। পরবর্তীকালে সংঘটিত ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, শেখ আলাউল হক রাষ্ট্রীয় নীতির পর্যালোচনায় সম্পূর্ণ অভ্রান্ত ছিলেন। যদি সুলতান সিকান্দর শাহ শেখের পরামর্শ গ্রহণ করতেন, তাহলে রাজা কংসের মাধ্যমে হিন্দু প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দরুন মুসলমানদেরকে যে দুর্ভোগ ভোগ করতে হয় এবং সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের উত্তরাধিকারীর রাজত্বকালে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজ যে বিপদের সম্মুখীন হয়, তা শুরুতেই এড়ানো যেত।
এমনকি হযরত মাওলানা মুজাফ্ফর শামস বলখীও বাংলাদেশে মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্বপূর্ণ উচ্চপদে বিপুল সংখ্যক হিন্দুদের নিয়োগ করা যে অসমীচীন হয়েছে সে সম্পর্কে সিকান্দর শাহের পুত্র ও উত্তরাধিকারী গিয়াস উদ্দিন আজম শাহকে অবহিত করেন। বাঙালি সুলতানের নিকট শেখ তাঁর পত্রে অবিশ্বাসীদের সঙ্গে যে অন্তরঙ্গতা নিষিদ্ধ সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বাণী উদ্ধৃত করেন, “তোমরা যারা বিশ্বাস কর, তোমাদের অন্তরঙ্গতা দিও না তাদেরকে যারা বাইরের সারিতে আছে।” তিনি মুসলমান ধর্মীয় নেতাদের বাণীও উদ্ধৃত করেন। তারা বলেছেন যে, মুমিনের কখনো উচিত নয় যে, অমুসলিম ও অপরিচিত ব্যক্তিদেরকে তারা বিশ্বস্ত, অন্তরঙ্গ ও মন্ত্রদাতারূপে গ্রহণ করে। শেখ যুক্তি দেখান যে, হিন্দুদেরকে বন্ধু ও অনুগ্রহভাজন করার যৌক্তিকতার কারণ সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি কুরআনের বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে দেখান যে, এ রকম নীতি মুসলিম রাষ্ট্রে দুঃখ, কষ্ট ও রাজদ্রোহ আনয়ন করবে। অবিশ্বাসীরা মুসলমান শাসকদেরকে বিনষ্ট করতে কখনো পশ্চাদপদ হবে না এবং তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করবে। একজন অবিশ্বাসী বিধর্মীকে হয়তো কোনো কাজ দেয়া যেতে পারে কিন্তু তাই বলে তাকে শাসনকর্তা কিংবা ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ করা উচিত হবে না,
মোটকথা তাকে মুসলমানদের উপরে কর্তৃত্ব করার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে না। আল্লাহ বলেন, “মুমিনগণ অবিশ্বাসীদের থেকে বন্ধু ও সাহায্য গ্রহণ করবে না এবং আল্লাহকে অবহেলা করবে না। যদি কেউ তা করে কোনো কিছুতেই তারা আল্লাহর সাহায্য পাবে না, তোমাদেরকে কেবলমাত্র সতর্ক করে দেয়া হবে যাতে তোমরা নিজেদের উপর নির্ভর করে তাদের (অবিশ্বাসীদের) থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করতে পার।” শেখ আরো বলেন যে, ‘যারা বিশ্বাসীদের উপর অবিশ্বাসীদেরকে কর্তৃত্ব প্রদান করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কুরআন, হাদিস ও ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলিতে সতর্কবাণী রয়েছে। আল্লাহ অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে মানুষকে ধনসম্পদ ও খাদ্যসামগ্রী দান করেন। এবং তিনি (বিধাতা) তাদের হাত থেকে মুক্ত করেন।” মানুষের সংস্থান, বিজয় ও সমৃদ্ধির একটি কর্তৃত্বময় প্রতিশ্রুতি আছে। পরাজিত অবিশ্বাসীরা মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে শক্তি ও কর্তৃত্ব চালায় এবং তাদের অধীনে দেশ শাসন করে। কিন্তু ইসলামের দেশে মুসলমানদের উপরেও তাদেরকে রাজকর্মচারী নিযুক্ত করা হয়েছে এবং তারা এখন মুসলমানদের উপর কর্তৃত্ব করে। এমন ঘটনা ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।
বাংলায় ইলিয়াসশাহী সুলতানদের রাজত্বকালে, হযরত মাওলানা মুজাফ্ফর শামস বলখীর পত্রে মুসলিম রাষ্ট্রে হিন্দু কর্মচারীদের বিরাট প্রভাবের কথা প্রকাশ পায় । এর মধ্যে মুসলিম শাসন ও সমাজের ভবিষ্যৎ বিপদের ইঙ্গিত ছিল। হিন্দুদেরকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে নিয়োগ করার মতো নির্বুদ্ধিতার বিরুদ্ধে সুলতান গিয়াস উদ্দিনকে পরামর্শ দেয়া শেখ তার নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু সুলতান শেখের পরামর্শ গ্রহণ করেননি। এই যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ অমান্য করার দরুন তাঁর উত্তরাধিকারীদেরকে খুব দুর্ভোগে পড়তে হয় এবং মুসলিম রাষ্ট্র এক মহাবিপদে পতিত হয়। হযরত নূর কুতব আলমের সময়োচিত হস্তক্ষেপের ফলে মুসলিম রাষ্ট্র এই বিপদ থেকে মুক্তি পায়।
সুফি দরবেশদের অধিকাংশই আলেম ছিলেন। মাওলানা শরফউদ্দিন আবু তাওয়ামা, মখদুম শরফউদ্দিন এহিয়া মানেরী, হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া, শেখ আলউল হক, হযরত নূর কুতব আলম ও অন্যান্য সুফিদের জীবন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । বাস্তবিকই বাংলায় ও এ উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের প্রথম যুগের সুফি-দরবেশদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞানে ব্যুৎপত্তি অত্যাবশ্যক ছিল। আখী সিরাজউদ্দিন উসমানকে শিষ্যত্ব গ্রহণ সম্পর্কে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার উক্তি এই মত সমর্থন করে। আমরা দেখতে পাই, সুফি দরবেশদের মধ্যে অনেকে ঐ যুগের বড় আলেম ছিলেন এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠিত খানকাহগুলো ছিল শিক্ষা ও জ্ঞানের কেন্দ্র। এসব শিক্ষাকেন্দ্রের নামোল্লেখ করতে পারি, যেগুলো সুফি-দরবেশদের খানকায় গড়ে উঠেছিল এবং এগুলোর বিচ্ছুরিত জ্ঞানালোকে বাংলা ও উত্তর-ভারত আলোকিত হয়েছিল।
শেখ শরফউদ্দিন আবু তাওয়ামা ছিলেন ত্রয়োদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের খ্যাতনামা পণ্ডিতদের অন্যতম। ইসলামি শিক্ষা ও অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে তার ব্যুৎপত্তি ছিল। তিনি সোনারগাঁয়ে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এমনকি
উত্তর-ভারত থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে সমবেত হন। সোনারগাঁও একাডেমিতে শরফউদ্দিন এহিয়া মানেরী ছিলেন তার সবচেয়ে খ্যাতনামা ছাত্র। শেখ শরফউদ্দিন আবু তাওয়ামা ‘মাকামাত' নামে ‘তাসাওউফ' বা ইসলামি মরমীবাদের উপর একখানা মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। সমগ্র উপমহাদেশব্যাপী শিক্ষিত মহলে 'মাকামাতের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। এই গ্রন্থের চাহিদা লাহোরের মতো সুদূর অঞ্চলে ছিল- তার প্রমাণ রয়েছে। ফারসি কবিতার আকারে লিখিত ফিকাহ্ এর উপর অন্য একখানা গ্রন্থ শেখ আবু তাওয়ামার লেখনী-প্রসূত বলে তাঁকে কৃতিত্ব প্রদান করা হয়। যদি এ গ্রন্থ তাঁর দ্বারা লিখিত নাও হয়ে থাকে, তাহলেও তদীয় শিষ্যদের মধ্যে কেউ তাঁর শিক্ষার উপর ভিত্তি করে এটি সংকলন করেছেন।
ভারতের খ্যাতনামা সিদ্ধপুরুষদের অন্যতম মখদুম শরফউদ্দিন এহিয়া মানেরী তাঁর মহান শিক্ষকের যোগ্য ছাত্র ছিলেন। তিনি একজন সুফি পুরুষ ও পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর গ্রন্থরাজি তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ও সুফি জ্ঞানের পরিচয়
বহন করে।
শেখ আখী সিরাজ, শেখ আলাউল হক এবং হযরত নূর কুতব আলম, এঁরা সকলেই তাঁদের বিদ্যাবত্তার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তাঁরা শুধু আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিস্তারেই নয়, সাধারণ শিক্ষা বিস্তারেও সমান আগ্রহী ছিলেন। নূর কুতব আলম একটি মাদ্রাসা স্থাপন করেন এবং পরবর্তী সময়ে সুলতান হোসেন শাহ এই প্রতিষ্ঠানের জন্য যুক্ত হস্তে দান করেন। এই খ্যাতনামা সুফি পুরুষ ও পণ্ডিতদের খ্যাতি উত্তর-ভারত ও বাংলার সর্বত্র থেকে শিষ্য ও শিক্ষার্থীদেরকে আকৃষ্ট করে। মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী, শেখ নাসিরউদ্দিন মানিকপুরী, শেখ হোসেন যুক্কার পোষ এবং উত্তর-ভারতের আরো অনেকে শেখ আলাউল হকের নিকট তাঁর পান্ডুয়া শিক্ষাকেন্দ্রে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করেন। হুশামউদ্দিন মানিকপুরী, শেখ কাকো ও অন্যান্যরা হযরত নূর কুতব আলমের যে সামান্য কয়েকটি পত্র পাওয়া গেছে তাতে তার ইসলামি মরমীবাদ সম্বন্ধে গভীর জ্ঞানের পরিচয় মেলে। এসব পত্রাদির কিছুসংখ্যক দরবেশ, উলেমা ও শিষ্যদের নিকট লিখিত হয়েছিল।
রাজশাহীর বাঘার হাওদা মিয়া নামে অধিকতর পরিচিত হযরত হামিদ দানিশমন্দের খানকাহ শিক্ষার মহা-বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলের একজন মুঘল পরিব্রাজক আবদুল লতিফ এটা লক্ষ করেছিলেন।
জাহাঙ্গীর
মোটকথা, বাঙালির সুফি দরবেশদের খানকাহ ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের মহাকেন্দ্রস্বরূপ ছিল। এ কেন্দ্রগুলো কেবল বাংলার জন্যই নয়, বরং সমগ্র ভারতের
সিমনানী, নাসিরউদ্দিন মানিকপুরী, শেখ হোসেন যুক্কার পোষ, হুসামউদ্দিন, মানিকপুরা, জন্য সাধু দরবেশ ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের জন্ম দেয়। শরফউদ্দিন মানেরা,
শেখ কাকু ও উত্তর ভারতের অন্যান্য কয়েকজন বাংলার আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের খ্যাতনামা শিক্ষার্থী ছিলেন। এভাবে সাধু দরবেশগণ বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষা বিষয়ক উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন ।
সুফি দরবেশদের খানকাহগুলো বিরাট জনহিতৈষণামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও পরিগণিত হয়। এখানেই স্রষ্টা-সন্ধানী মানুষেরা তাদের মনের শান্তি খুঁজে পেতো এবং তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত হতো। খানকাহগুলো ছিল একাধারে চিকিৎসালয় এবং আশ্রয়স্থান যেখানে দুঃস্থ বদ্ধ উন্মাদ এবং রুগ্ন ব্যক্তিরা সরাসরি আশ্রয় লাভ করতো। তারা শেখ ও তদীয় শিষ্যদের নিকট লাভ করতো সেবা, চিকিৎসা ও আন্তরিক যত্ন। প্রতিটি খানকাহর সঙ্গে একটি করে লঙ্গরখানা বা বিনা খরচে খাবার ব্যবস্থা থাকত-যেখান থেকে গরিব ও অভুক্ত লোকদের খাবার দেয়া হতো। লঙ্গরখানার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিষয় সম্পত্তিও দান করা হতো। শেখ জালালউদ্দিন তাবরেজী ও পান্ডুয়ার বিখ্যাত সুফি দরবেশদের প্রতিষ্ঠিত খানকাসমূহের বিরাট আয়ের লাখেরাজ জমি ছিল। এভাবে সাধু দরবেশদের খানকাহ্ ও লঙ্গরকানাগুলো দুঃস্থ বিপন্ন মানুষের নিকট এক মহামুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। বিনা খরচে খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে সাধু দরবেশগণ দেশের দীনদুঃখী ও সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসতে এবং তাদের অনুভূতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে সক্ষম হন ৷
মুসলিম আমলে বাংলাদেশ ছিল শতশত সুফি দরবেশগণের কার্যাবলির দৃশ্যস্থল। ফলে, বাঙালি মুসলমানগণ তাদের ঘনিষ্ঠতম সান্নিধ্য ও প্রত্যক্ষ প্রভাবের আওতায় আসে। সিদ্ধপুরুষগণ তাঁদের জীবনে ও ধারণায় অধ্যাত্মবাদ ও উদারতাকে আদর্শস্বরূপ তুলে ধরেন। তাঁরা সঠিকভাবে আধ্যাত্মিকতার পরিমণ্ডলে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেন এবং পার্থিব জগতের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করেন। তাঁরা ধর্মের উদার ব্যখ্যা দান করেন।
বাঙালি মুসলমানগণ এই সকল ধর্মীয় মহান শিক্ষকদের অধ্যাত্মবাদ ও উদারতা গ্রহণ করে। এই অধ্যাত্মবাদ মানুষের মনে এতে গভীরভাবে রেখাপাত করে যে, এমনকি আজও বাঙালি মুসলমানের চরিত্রে একদিকে রয়েছে মরমীবাদের অনুপ্রেরণা, অন্যদিকে রয়েছে পার্থিব জগতের প্রতি বৈরাগ্য। বাংলা সাহিত্যে, বিশেষকরে স্থানীয় লোক-সংগীতে, তাদের মরমী অনুভূতির সুন্দর প্রকাশ দেখা যায়।
হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল মতের লোকদের মিলনকেন্দ্র ছিল এই খানকাহগুলো। এ কেন্দ্রগুলো অবারিত প্রতিষ্ঠান ও খোলাখুলি আলোচনার স্থানে পরিণত হয়। এভাবে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান একটা উদারনৈতিক ও অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে। ফলে উভয় শ্রেণির জনগণ একে অন্যের নিকটতর হয় এবং একে অন্যের মতামত বুঝতে পারে। এই উদার পরিবেশে একটি সাধারণ সাংস্কৃতিক মতবাদ সত্যপীর পূজার উদ্ভব হয় এবং বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। সুফি সিদ্ধপুরুষগণ দেশে যে উদার আবহওয়ার সৃষ্টি করেন তার ফলে বাংলার হিন্দুসমাজে একটি উদার সংস্কার আন্দোলনের জন্য সম্ভব হয় এবং এর পূর্ণ বিকাশ ঘটে নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্মে।
সাধু দরবেশদের সততা ও ব্যক্তিত্ব, তাঁদের মানবতা ও সেবা, প্রীতি ও উদারতা শিক্ষিত অশিক্ষিত সকল শ্রেণির হিন্দুরা জনগণকে তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট করে। তাদের অনেকেই দরবেশদের হাতে ইসলাম কবুল করে এবং অন্যরা যদিও নিজেদের ঐতিহ্যগত ধর্মবিশ্বাসকেই রক্ষা করে আসছিল। তথাপি তারা সুফি দরবেশদের একান্ত ভক্ত হয়ে উঠে এবং তাদের অলৌকিক ক্ষমতাকে স্বীকৃতি জানায়। তারা পীর পূজা শুরু করে এবং তাদের অন্তরাকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার মানসে পীরের আশীর্বাদ কামনা করে। এমনকি বহু শতাব্দীব্যাপী হিন্দুরা ভক্তির সঙ্গে সুফি-পীর দরবেশদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছে এবং তাঁদের আশীর্বাদ লাভের আশায় মাজার শরীফ পরিদর্শন করছে। মুসলমান পীর দরবেশদের প্রতি হিন্দুদের এই শ্রদ্ধা বাংলা সাহিত্যে ও হিন্দু কবিদের বর্ণনায় প্রতিভাত হয়েছে।
সংস্কৃত গ্রন্থ শেখ শুভোদয়ার লেখক হলায়ুধ মিশ্র জালালউদ্দিন তাবরিজীর প্রতি হিন্দুদের গভীর শ্রদ্ধার কথা উল্লেখ করেন। দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তিলাভের আশায় তারা তাঁর সাহায্য কামনা করতো ও তাঁর পবিত্র নামে তাদের বিষয় সম্পত্তি অর্ধেক উৎসর্গ করতো ।
কবি আরো লিখেছেন যে, লোকেরা রোগমুক্তি, সন্তান কামনা ও সৌভাগ্য লাভের আশায় তাঁর অনুগ্রহ কামনা করে প্রার্থনা জানাত। সপ্তদশ শতকের হিন্দুকবি ক্ষেমানন্দকে ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতকের মুসলমান পীর দরবেশদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায়। কবি তার মনসা মঙ্গল কাব্যের ভূমিকায় গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বড় খাঁ গাজী, সুবা খাঁ ও অন্যান্য পীর দরবেশদের প্রশংসাকীর্তন করেছেন। অষ্টাদশ শতকের আর একজন হিন্দুকবি বিদ্যাপতি মহান তাপস খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী, জাফর খাঁ গাজী, বড় খাঁ গাজী ও ইসমাইল গাজীর পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। কবি বলেন যে, তিনি তাঁর কাব্য সত্যপীর পাঁচালী মুসলমান পীর দরবেশ
সত্যপীরের আদেশে রচনা করেন। কবি কৃষ্ণহরিদাস তার কবিতায় তাহির মাহমুদ নামক পীরের শিষ্যরূপে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। মুসলমান পীর দরবেশগণ তাঁদের
নাম আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও জনহিতকর কার্যাবলির দ্বারা হিন্দু জনগণের মনে গভীর ও
স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন।
এগুলো সেই সকল অসংখ্য দৃষ্টান্তের কয়েকটি মাত্র। বাস্তবিকই মুসলিম পীর দরবেশগণ যথার্থরূপে বাংলার আধ্যাত্মিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক বিজয়ের প্রতীকস্বরূপ ছিলেন। এভাবে মুসলিম সমাজগঠনে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]