বাংলায় সুফিবাদ : সুফিদের অবদান: কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সুফি Sufism in Bengal: Contributions of the Sufis : Some Important Sufis

সুফিবাদ
Sufism
বাংলায় সুফিবাদ
Sufism in Bengal
বাংলায় ও উত্তর-ভারতে সুফিবাদ
Sufism in Bengal and North-India
বাংলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সুফি
Some important Sufis in Bengal বাংলায় সুফিবাদ : সুফিদের অবদান; করো কজন গুরুত্বপূর্ণ সুফি
সুফিবাদ
Sufism
মুসলমান শাসনামলে বাংলা ছিল সুফি অধ্যুষিত দেশ। এই সুফিরা প্রদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের তরকীর জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। কি ইসলাম বিস্তারে, কি মুসলমান শাসন সম্প্রসারণ ও সংহতি বিধানে, কি শিক্ষা
ও সাধারণভাবে বাঙালি অধিবাসীদের, বিশেষকরে মুসলমানদের মানসিক ও নৈতিক উন্নতি উৎকর্ষ বিধানে সুফিদের কৃতিত্ব ছিল মুসলিম সেনাপতি বিজেতা ও শাসকল অপেক্ষা অনেক বেশি স্থায়ী ও কার্যকর। তাদের ধর্মীয় অনুরাগ, ধর্ম প্রচারের আমার, আদর্শস্থানীয় চরিত্র ও মানব হিতৈষণামূলক কার্যাবলির দ্বারা তারা জনমানসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেন এবং ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেন। ধর্মান্তরিত লোক শিষ্য সংগ্রহের মাধ্যমে, তারা মুসলমান সেনাপতিদের রাজনৈতিক বিজয়ের সে নৈতিক বিজয় সম্পন্ন করে অমুসলিম অধ্যুষিত দেশে মুসলমান শাসনকে শক্তি ও স্থায়িত্বের একটি উৎস প্রদান করেন। বাংলার প্রতিটি আনাচে কানাচে প্রতিষ্ঠিত সুফিদের 'খানকাহ্’গুলো ছিল আধ্যাত্মিক, মানব কল্যাণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যাবলির এক একটি প্রধান কেন্দ্র। এ সকল প্রতিষ্ঠান নানাভাবে মুসলমানদের তরীতে ও বাঙালি সমাজের উন্নয়নে যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা করে ।
'সুফি নামটি সাধারণত ইসলামে মরমীবাদী ও সাধু পুরুষদের নামের সঙ্গে জড়িত। এই অভিমত পোষণ করা হয় যে, তাদেরকে ঐ নামে অভিহিত করার কারণ হলো তারা 'সুফ' নামে এক প্রকার রঙিন মোটা পশমী কাপড় পরিধান করতেন। 'সুফি' নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে অবশ্য অন্যান্য মতও প্রচলিত আছে। যাহোক হিজরির দ্বিতীয় শতকে এ নামটির সাধারণ ব্যবহার শুরু হয়। সুফিরা তাদের অনুপ্রেরণা লাভ করেন কুরআন থেকে এবং কুরআনের কিছু বাণীকে ব্যাখ্যা করেন গুপ্ত জ্ঞানের (esoteric) উৎসরূপে। তারা পয়গম্বরকে প্রথম এবং হযরত আলীকে দ্বিতীয় আধ্যাত্মিক-গুরু 13 পথপ্রদর্শকরূপে শ্রদ্ধা করেন। অধ্যাপক ম্যাসিগনো (Massignon) বলেন, সুফিবাদ ও মরমীবাদী আন্দোলন এসেছে আদিম মুসলমানদের অতিরিক্ত কঠোর সংযমের প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকার সূত্রে। এর উৎপত্তি ঘটেছে কুরআন থেকে এবং রসুলুল্লাহর অভ্যাস বা আচার আচরণ থেকে। যদিও ইসলামকে অপেক্ষাকৃত কমই কৃচ্ছপরায়ণরূপে ধরা হয়, তথাপি মুসলমান আদি পুরুষগণের মধ্যে অনেকে ছিলেন, যারা গভীর নিষ্ঠা ও সাধারণভাবে জীবন যাপন করতেন। এদের নিকট ইসলাম ছিল আত্মার সংযম ছাড়া কেবল বাহ্যিক কতকগুলো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সমষ্টিমাত্র নয়। তারা কেবলই ভাবতেন এই জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা, বিচার দিনের কথা এবং অনন্ত শান্তির কথা। অধ্যাপক গিব বলেন, প্রাথমিক যুগে কঠোর তপস্যা পরায়ণতার শ্রেষ্ঠ প্রতীক ছিলেন বসরা নিবাসী আল-হাসান (৬৪৩-৭২৮খ্রি.) যার স্মৃতি আজও ইসলামে অম্লান হয়ে রয়েছে।
প্রথম যুগের আরব মুসলমানদের থেকে উৎপত্তি লাভ করে সুফিবাদ পারস্যের মরমী মাটিতে পরিপূর্ণভাবে প্রসার লাভ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে সুফিবাদ আল্লাহর ভীতি ও শেষ বিচার দিনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু কালক্রমে এই ধারণার পরিবর্তন আসে এবং প্রেমের মধ্য দিয়ে প্রিয়তম আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ভিত্তিরূপে পরিগণিত হয়। বসরার সাধ্বী রমণী রাবেয়া (৭১৩-৮৮১ খ্রিঃ) ছিলেন এর প্রথম প্রসিদ্ধ পথিকৃতা। তিনি বলতেন, 'আল্লাহর প্রেম আমাকে এতবেশি নিমগ্ন করেছে যে, আর কারো কোনো প্রেম বা ঘৃণাই আমার অন্তরে নেই।” দশম শতক থেকে সুফিবাদ। মূলস্থান থেকে সরে আসতে থাকে সর্বেশ্বরবাদের দিকে, যা ছিল গ্রিক দেশীয় দার্শনিক চিন্তাধারার, বিশেষকরে নিঃসরণের প্রভাবজাত ৷ এই অভিমতও পোষণ করা হয় যে,
ভারতীয় একত্ববাদ (Monism) বা বেদাত্মবাদী দর্শনের প্রভাবও এখানে ছিল। সর্বেশ্বরবাদ মরমী বিশ্বাসেও নিহিত যে স্রষ্টা চিরকাল ধরে বিশ্বব্যাপী (অন্তর্নিহিত); তিনিই সৃষ্টি এবং সৃষ্টিই তিনি। স্রষ্টা সৃষ্টির ভিতর দিয়েই নিজেকে প্রকাশ করেন। সৃষ্টিলোক ব্যতিরেকে, তার কোনো আলাদা অস্তিত্ব নেই। মুসলমান সুফিরা অবশ্য স্রষ্টার মূলতত্ত্বে এবং তিনি যে ব্রান্ডের অতীত এই বিশ্বাস রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি সৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। তিনি সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে, আবার সমস্ত সৃষ্টির মূলেও।
'সুফিদের মতে, কুরআনের দুটি ব্যাখ্যা আছে, একটি বাহ্যিক বা বহিরঙ্গ অপরটি গুপ্ত বা গূঢ়জ্ঞান। মারিফাত নামে কুরআনের গুঢ় বা গুপ্তজ্ঞানকেই তারা অধিক মূল্য দিয়ে থাকেন। ‘সুফি’রা প্রেমের মূলতত্ত্বের উপর তাদের মতবাদের প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিমিত্ত অন্যান্য পন্থা অপেক্ষা প্রেমের পথকেই তারা অধিকতর ভালোবাসেন। তারা প্রেমকেই ধর্মের সারবত্তা (নির্যাস), সৃষ্টির কারণ ও এর বিস্তৃতির মূল হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রেমই প্রিয়তম আল্লাহর সঙ্গে মিলনের একমাত্র নির্ভুল উপায়। মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী বলেন,
“আমরা যবে থাকি বসি ভবনে সেই মধুক্ষণ তুমি আর আমি
দুই দেহে দুইরূপে, কিন্তু সদা একমন তুমি আর আমি।”
সুফিবাদ হচ্ছে স্রষ্টার জন্য তীব্র ভালোবাসার মাধ্যমে আত্মার উন্নয়ন। জে.এ সুবহানের ভাষায়, “সুফিবাদ আধ্যাত্মিক জীবনে অগ্রগতির কথা বলে ‘যাত্রা’ হিসেবে এবং ঈশ্বরান্বেষণকারীকে অভিহিত করে ‘সালিক' বা ভ্রমণকারীরূপে। এর শিক্ষা হলো- স্রষ্টার পূর্ণজ্ঞান (মারিফত) অর্জনে সেই একমাত্র সত্যে যা সমস্ত বস্তু নিচয়ের মধ্য দিয়ে বিধৃত ভ্রমণকারীকে পথ প্রদর্শন করে। অতঃপর ভ্রমণকারীর আত্মা মন্থর গতি স্তরে স্ত রে (মোকাম থেকে মোকামে) এবং বিশেষ অবস্থায় অভিজ্ঞতার (আহয়াল/অবস্থা) মধ্য দিয়ে পথ ধরে স্রষ্টার সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে চালিত হয় যাকে বলা হয়েছে 'ফানা' ফিল হকিকত বা পরমমূলের সঙ্গে মিলনের স্বকীয় সত্তার বিনাশ। ‘ফানা’ হচ্ছে
আত্মোৎসর্গ বা আত্মবিনাশের সেই স্তর যেখানে অন্বেষণণকারী তার স্রষ্টার প্রতি অদম্য প্রেমে সব কিছু বিস্মৃত হন। শেষ পর্যায় ‘বাকিবিল্লাহ' লাভ হয়, যখন 'সুফিন আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতায় পৌঁছেন এবং সর্বক্ষণ পরম মূলের সঙ্গে নিমগ্ন থাকেন।
মরমী জীবনে, ‘সুফি' সাধক কয়েকটি প্রশিক্ষণ স্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেন। প্রথমত, তিনি শরিয়তের বিধি নিষেধ অনুসারে সঠিকভাবে জীবনযাপন করে। তার মনকে সংযত করবেন। এরূপে তার মন আদেশ মতো চলতে ও অনুগত থাকতে তৈরি হবে। এরপর তিনি 'তরিকত' (পথ) নামক স্তরে পৌঁছেন, যে পথে তার একজন আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের সাহায্য প্রয়োজন হয়। এই পথপ্রদর্শককে বলা হয় 'পীর' বা শেখ, যিনি তাকে তদীয় অন্তরসত্তায় পবিত্রকরণে শিক্ষা দেন। ‘সালিক' পীরের খানকায় বাস করেন, তার সেবা করেন এবং আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকর্মে তার নির্দেশাবলি অনুসরণ করেন। স্বর্গীয় প্রেমের আলোকে মনকে আলোকিত করার জন্য “জিকর' ও 'সামা (অধ্যাত্ম সংগীত) প্রণালিরূপে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী স্তরে ‘মারিফত'- এখানে পরিশুদ্ধ মনকে স্বর্গীয় জ্ঞানের সাহায্যে আলোকিত করা হয়। আত্মসংযম, নিষ্ঠা ও নৈতিক উৎকর্ষের দ্বারা ‘সুফি’ যে স্তরে উন্নীত হন তা ‘ফানা ফিল্লাহ বা আত্মোৎসর্গ বা আত্মার বিনাশ এবং বাকি বিল্লাহ বা স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন নামে পরিচিত। এখানে সাধক তার প্রিয়তমের সঙ্গে বাস করেন চিরন্তন স্বর্গসুখে ।
সুফিরা নিজেদেরকে কেবল তাদের আত্মোৎকর্ষতা লাভের জন্যই নিয়োজিত করেন না, তারা ইসলামের জন্য এবং মানব হিতৈষষণামূলক কার্যেও নিজেদেরকে উৎসর্গ করেন। মানব সেবাকেই তারা স্রষ্টার প্রতি গভীর নিষ্ঠা ও প্রেমরূপে বিবেচনা করে থাকেন। জালালউদ্দিন রুমী বলেন, “মানুষের চিত্ত জয় করাই মহত্তম তীর্থযাত্রা এবং একটি হৃদয় সহস্র কাবার চেয়েও শ্রেয়। কাবাতো কেবল ইব্রাহিমের গৃহ, কিন্তু হৃদয়ই হচ্ছে আল্লাহর একমাত্র আবাস।” ধর্মপ্রচার ও মানব-কল্যাণকর কার্যাবলির এই সমুদয় আদর্শ নিয়েই ইসলামের প্রথম যুগের সুফিরা ভারতে আগমন করেছিলেন।
উদ্ভবকালের কয়েক বছরের মধ্যে সুফিবাদ বহু সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায় এবং এর সংখ্যা প্রায় ১৭৫ এর উপরে অনুমান করা হয়। কিছুসংখ্যক সম্প্রদায় ভারতে তাদের শাখা বিস্তার করে এবং এই উপমহাদেশের মানুষের মন ও নৈতিকতার উপর একটি স্থায়ী প্রভাব রেখে যায়। খাজা মুঈনউদ্দিন চিশতি (১১৪২-১২৬৬) ছিলেন ভারতে চিশতিয়া তরীকার প্রতিষ্ঠাতা। মুলতানের শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (১১৬৯- ১২৬৬ খ্রিস্টাব্দ) এই উপমহাদেশে ‘সোহরাবর্দীয়া তরীকা প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ আবদুল কাদির জিলানীর (১০৭৮-১১৬৮ খ্রিস্টাব্দ) কাদিরীয়া তরীকা গউথ জিলানী নামক তদীয় একজন বংশধর কর্তৃক ভারতে প্রথম প্রবর্তিত হয় ১৪৮২ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ‘উচ’ এ বসতি স্থাপন করেন ও সেখানেই ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তুর্কীস্তানের খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (মৃত্যু ১৩৮৮) নিকশ বন্দিয়া' তরীকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তার একজন শিষ্য খাজা বাকিবিল্লাহ তুর্কীস্তান থেকে দিল্লিতে আগমন করেন ও
সেখানে ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। এদের দ্বারাই ভারতে ‘নকশবন্দিয়া’ তরীকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। শরফউদ্দিন আলী কলন্দর নামে একজন বিখ্যাত সিদ্ধপুরুষ ১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে পানিপথে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ভারতে ‘কলন্দরিয়া' নামে একটি
নতুন
তরীকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এগুলো ছাড়াও এই উপমহাদেশে আরো বহু সুফি সম্প্রদায়ের প্রসার ঘটেছিল
বাংলায় সুফিবাদ
Sufism in Bengal
ইসলাম অধ্যুষিত পশ্চিম ও মধ্য-এশিয়া এবং উত্তর-ভারত থেকে বিভিন্ন সময়ে শত শত সুফি দরবেশ বাংলাদেশে আগমন করেন। তারা নানা তরীকার, বিশেষকরে চিশতিয়া ও সোহরাবর্দীয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বহির্দেশ থেকে আমদানিকৃত হলেও, বাংলাদেশে সুফিবাদ বিস্তারের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়। সুফিবাদ সমগ্র বাংলাদেশ, এমন কি সুদূর গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, ফলে খানকাহ ও দরগাহ দেশের আনাচে কানাচে পর্যন্ত গড়ে উঠেছিল। বাংলার মাটিতে সুফিবাদ এত বেশি প্রসার লাভ করে যে কয়েকজন বিখ্যাত বাঙালি সুফির শিক্ষার ভিত্তিতে এখানে কয়েকটি নতুন মরমী সম্প্রদায়ের বিকাশ হয়। বাংলায় সুফিবাদের প্রসার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে, খ্যাতনামা বাঙালি সুফি শেখ আলাউল হকের প্রসিদ্ধ শিষ্য হযরত মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর (মৃত্যু ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দ) সিমনানী কর্তৃক জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাকীর নিকট লিখিত একটি পত্র থেকে। তিনি লেখেন : “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কি চমৎকার দেশ এই বাংলা- যেখানে অসংখ্য সাধু দরবেশ ও তাপসগণ বিভিন্ন দিক থেকে আগমন করেন এবং বাংলাকেই তাদের দেশ ও বসবাসের স্থান হিসেবে বেছে নেন। উদাহরণস্বরূপ, পীরানা পীর হযরত সিহাবউদ্দিন সোহরাবর্দীর সত্তরজন নেতৃস্থানীয় শিষ্য দেবগাঁয়ে চিরশান্তির ক্রোড়ে শায়িত আছেন। সোহরাবর্দী তরীকার কয়েকজন সুফি পুরুষ মাহীসুনে এবং জালালীয়া সম্প্রদায়ের সুফিরা দেওতলায় সমাহিত আছেন। শেখ আহমদ দামিস্কীর কয়েকজন প্রধান শিষ্য আছেন নারকোটিতে। ‘কদরখানী’ দ্বাদশ সুফিদের অন্যতম হযরত শেখ শরফউদ্দিন তাওয়ামা সোনারগাঁয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। এরই প্রধান শিষ্য ছিলেন হযরত শেখ শরফ উদ্দিন মানেরী। এছাড়া, হযরত বাদ আলম ও বদর আলম জাহেদী ছিলেন। মোটকথা, বাংলাদেশে শুধু বড় বড় শহরের কথা বলি কেন, এমন কোনো গ্রাম কিংবা শহর নেই, যেখানে পুণ্যাত্মা সুফি পুরুষগণ গমন করেননি ও বসতি স্থাপন করেননি। সোহরাবর্দীয়া সম্প্রদায়ের সিদ্ধপুরুষদের অনেকেই বিগত, কিন্তু যারা জীবিত আছেন তাদের সংখ্যাও অনেক ।
হযরত মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানীর পত্র থেকে আমরা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি নতুন সুফি তরীকার উল্লেখ পাই। ‘জালালীয়া’ সুফি মতবাদের সুচনা হয় বিখ্যাত সুফি শেখ জালালউদ্দিন তাবরিজী থেকে- যার সম্মানার্থে দেওতলার নাম হয় তাবরিজাবাদ। 'আলাই’ সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় পান্ডুয়ার খ্যাতনামা দরবেশ শেখ আলাউল হক থেকে। শেখ আলাউল হক ছিলেন বিখ্যাত কোরেশ সেনাপতি খালিদ বিন অলিদের বংশধর। এ কারণে তার সম্প্রদায় ‘খালিদীয়া' নামেও পরিচিত। তদীয় খ্যাতনামা সন্তান হযরত নূর কুতবুল আলম থেকে যে সুফি সম্প্রদায়ের সূচনা হয়েছিল। তার নাম হয় 'নূরী'। আলাউল হকের একজন শিষ্য শেখ হোসেন যুক্কুর পোষ হোসেনী সুফিমতের প্রবর্তন করেন। 'রুহানিয়া' নামে পরিচিত আরো একটি সুফি সম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয় বাংলায়। এগুলো ছাড়া, ‘কলন্দরিয়া' এবং 'শাত্তারিয়া' সম্প্রদায়ও বাংলার মাটিতে প্রসার লাভ করে। এই সমস্ত সুফিবাদের শাখা-প্রশাখা এবং অসংখ্য খানকাহ ও দরগার অস্তিত্ব বাংলায় সুফিবাদের জনপ্রিয়তার স্মৃতি বহন করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]