বাংলায় ইলিয়াস শাহী শাসন আযম শাহ, রাজা গণেশ ও পরবর্তী ইলিয়াস


সুলতান সিকান্দার শাহ
সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সিকান্দার শাহ বাংলার সিংহাসনে আরোহণ
করেন। তবে তাঁর দীর্ঘ রাজত্বকালের কিছু মুদ্রা ও কয়েকটি শিলালিপি ছাড়া অন্য কোন সূত্রে তাঁর সম্বন্ধে
বিশেষ কিছু জানা যায় না। তাঁর রাজত্বের প্রারম্ভে দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক কর্তৃক দ্বিতীয় বার
বাংলা আক্রমণ এবং এই প্রসঙ্গে দিল্লির ঐতিহাসিকদের লেখনিতে সিকান্দর শাহের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু
ফিরোজ শাহের প্রত্যাবর্তনের পর দিল্লির সাথে বাংলার সম্পূর্ণভাবে সম্পর্কছেদ ঘটে। ফলে এরপর বাংলা
সম্বন্ধে দিল্লির ঐতিহাসিকদের তেমন কোন সম্যক জ্ঞান ছিল না।
সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহের রাজত্বকালে দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক প্রথম বাংলা
আক্রমণ করেন। কিন্তু তেমন কোন সাফল্য অর্জন না করে ফিরে যান। ইলিয়াস শাহের জীবিতাবস্থায়
উভয়ের মধ্যে মিত্রতা বজায় ছিল এবং উভয়ের মধ্যে একাধিকবার উপঢৌকন বিনিময় হয়েছিল। ইলিয়াস
শাহের মৃত্যুর সময় ফিরোজ শাহের দূত উপহার নিয়ে বাংলা আসার পথে ইলিয়াস শাহের মৃত্যু সংবাদ
পান, ফলে তিনি বাংলায় না এসে দিল্লিতে ফিরে যান। তদুপরি সিকান্দর শাহের সিংহাসন আরোহণের পর
পরই ফিরোজ শাহ বাংলার বিরুদ্ধে তাঁর দ্বিতীয় অভিযান প্রেরণ করেন। দিল্লির সুলতান সম্ভবত ইলিয়াস
শাহের রাজত্বের অবসানের অপেক্ষায় ছিলেন। তাই সিকান্দার শাহের রাজত্বের প্রারম্ভেই বাংলায় দিল্লির
শাসন পুন:প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত সময় মনে করে কাল বিলম্ব না করে তিনি আবার বাংলা আক্রমণ করেন।
প্রথমবারের মতো এবারও ফিরোজ শাহ এক বিরাট সৈন্যদল ও নৌবহর সঙ্গে নিয়ে বাংলা আক্রমণ করেন।
কনৌজ, অযোধ্যা ও জৌনপুর হয়ে ফিরোজ শাহ বাংলায় এসে পৌঁছালে সুলতান সিকান্দার শাহ তাঁর
পিতার পথ অনুসরণ করে দুর্ভেদ্য ও জলেবেষ্টিত একডালা দুর্গে আশ্রয় নেন। ফিরোজ শাহ একডালা দুর্গ
অবরোধ করেন এবং উভয়পক্ষে যুদ্ধ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ বিরক্ত হয়ে সন্ধির জন্য অস্থির
হয়ে ওঠেন এবং অবশেষে উভয় পক্ষে সন্ধি স্থাপিত হয়। ফিরোজ শাহ ৮০,০০০ টাকা দামের একটি মুকুট
এবং ৫০ আরবি ও তুর্কি ঘোড়া সিকান্দার শাহকে উপহার দেন। সুলতান সিকান্দার শাহ ফিরোজ শাহকে
চল্লিশটি হাতি এবং আরো নানা মূল্যবান উপহার পাঠান যতদিন ফিরোজ শাহ ও সিকান্দার শাহ বেঁচে
ছিলেন, ততদিন উভয়ের মধ্যে উপহার বিনিময় চলেছিল। সুতরাং দেখা যায় যে, ফিরোজ শাহের দ্বিতীয়
অভিযানও ব্যর্থ হয়েছিল। বরং সিকান্দার শাহ তাঁর নিকট হতে স্বাধীন ও সার্বভৌম নৃপতি হিসেবে স্বীকৃতি

আদায় করে নিয়েছিলেন। ফিরোজ শাহের এই দ্বিতীয় অভিযান ৭৫৯ হিজরিতে শুরু হয়েছিল এবং দুই
বৎসর সাত মাস চলেছিল।
সিকান্দার শাহের দীর্ঘ রাজত্বকালে ফিরোজ শাহ তুঘলকের আক্রমণ ব্যতিত অন্য কোন ঘটনা সম্পর্কে
তেমন কোন কিছু জানা যায় না। এ পর্যন্ত তাঁর শাসনকালের তিনটি শিলালিপি ও বেশ কিছু মুদ্রা আবিষ্কৃত
হয়েছে। শিলালিপি থেকে বোঝা যায় তিনি মুসলমান সুফি সাধকদের অত্যন্ত ভক্তি করতেন। তিনি ১৩৬৩
খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর জেলার দেবকোর্টে মোল্লা আতার দরগায় একটি মসজিদ নির্মাণ করে। পান্ডুয়ায় শায়খ
আলাউল হক তাঁর সমসাময়িক ছিলেন। তাঁর সাথে বিহারের মনে এর বসবাসকারী শায়খ শরফউদ্দিন
ইয়াহিয়া মনেরীর সৌহার্দ ও পত্রালাপ ছিল। কথিত আছে শায়খ আলাউল হকের প্রতি তাঁর প্রথমে অতীব
ভক্তি থাকলেও পরবর্তীকালে উভয়ের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল।
সুলতান সিকান্দার শাহ শিল্পানুরাগী ও শিল্প স্রষ্টা ছিলেন। স্থাপত্য শিল্পে তাঁর অমর কীর্তি পান্ডুয়ার আদিনা
মসজিদ। ১৩৪৬ হতে ১৩৭৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এটি নির্মিত হয়। আয়তনের বিশালতায় ও উচ্চমানের
কারুকার্যের জন্য এই মসজিদটি বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের ইতিহাসে অতুলনীয়। বিশালাকার এই মসজিদটি
ছিল দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০৭ ফুট ও প্রস্থে প্রায় ২৮৫ ফুট। মসজিদের অঙ্গসজ্জায় বাংলাদেশের সনাতন
পোড়ামাটির শিল্পের ব্যবহার একে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যে সুশোভিত করেছে। তবে এত বড়
স্থাপত্য নির্মাণে বাংলাদেশের কারিগরদের অদক্ষতার কারণে মসজিদটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বর্তমানে
এটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। পশ্চিমদিকের কিছু অংশ এখনও এর অবস্থানের চিহ্ন বহন করছে।
মুদ্রা ও শিলালিপিতে সুলতান সিকান্দর শাহ কর্তৃক ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাধি পাওয়া যায়। কোন কোন মুদ্রায়
“আল-মুজাহিদ ফি সবিল উর রহমান” (আল্লাহর রাস্তায় যোদ্ধা) বা “ইমাম-উল-আজম” (প্রথম ইমাম)
উপাধির ব্যবহার দেখা যায়। মনে হয় যে, তিনি ধর্ম বিষয়ে মুসলমানদের নেতৃত্ব দান করেছিলেন।
সিকান্দার শাহের শেষ জীবন সুখে কাটেনি। রিয়াজ-উস-সলাতীন গ্রন্থে উল্লেখিত আছে যে, সিকান্দার
শাহের পুত্র গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ বিমাতার চক্রান্তে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছিলেন এবং পিতা-পুত্রের
সংঘর্ষে পিতার মৃত্যু হয়। বুকাননের পান্ডুলিপির বিবরণেও এই তথ্য পাওয়া যায়। মুদ্রা প্রমাণে এই ঘটনা
সত্য বলে মনে হয়। ৭৫৯ হিজরি থেকে ৭৯১ হিজরি পর্যন্ত জারিকৃত সিকান্দার শাহের মুদ্রা পাওয়া যায়।
৭৯০ হিজরিতে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কর্তৃক উৎকীর্ণ মুদ্রা এই বিদ্রোহেরই প্রমাণ বলে মনে করা হয়।
সিকান্দর শাহের মৃত্যুর সঠিক তারিখ নিরূপন করা সম্ভব নয়। তবে ৭৯১ হতে ৭৯৫ হিজরির মধ্যবর্তী
কোন সময়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। সুলতান হিসেবে গিয়াসউদ্দিন কর্তৃক উৎকীর্ণ মুদ্রার
প্রথম তারিখ ৭৯৫ হিজরি। সুতরাং সিকান্দার শাহের রাজত্বকাল মোটামুটিভাবে ৭৫৯ হিজরী (১৩৫৮ খ্রি:)
হতে ৭৯৫ হিজরি (১৩৯৩ খ্রি:) পর্যন্ত ধরে নেয়া যেতে পারে।
সিকান্দার শাহের প্রায় ৩৫ বৎসরব্যাপী দীর্ঘ রাজত্বকাল বাংলার মুসলিম শাসনকালের ইতিহাসে অভ‚তপূর্ব।
ফিরোজ শাহ তুঘলকের আক্রমণ ব্যতিত অন্য কোন দুর্যোগের সম্মুখীন তাঁকে হতে হয়নি। সমগ্র বাংলায়
বিস্তৃত রাজ্য তিনি অক্ষুন্ন রেখেছিলেন। যদিও উৎসের অভাবে তাঁর শাসনকাল সম্পর্কে আমরা খুব কমই
জানতে পারি। তবুও স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ লক্ষ করে এ কথা বলা যেতে পারে যে, তাঁর শাসনামলে দেশে
সুশাসন ও শান্তি বিরাজিত ছিল। ইলিয়াস শাহ কর্তৃক প্রবর্তিত স্বাধীন সুলতানি দৃঢ় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল
সিকান্দার শাহের শাসনকালে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]