মুসলিম নারী-শিক্ষা Muslim Woman Education

মুসলমানগণ তাদের মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজন স্বীকার করেন। যাতে বালিকার তাদের ধর্মের, মূলনীতি, কুরআন পাঠ ও ধর্মের ক্রিয়া-কর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য পিতা কন্যাদের শিক্ষিত করে তোলা ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করতেন। বালিকাদের ও বালকদের ‘বিসমিল্লাহখানি' অনুষ্ঠান দ্বারা অক্ষর-পরিচয় শুরু হতো এবং তারা একই মক্তবে বালকদের সঙ্গে একত্রে পড়াশুনা করতো। এডামের রিপোর্টে একই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ করার প্রমাণ মেলে। এ থেকে এই ধারণা জন্মায় যে, স্ত্রী শিক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ের একটা বিশেষ স্তর পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
সমাজে পর্দা প্রথার ফলে মেয়েদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল। মাধ্যমিক পর্যায়ে সহশিক্ষা সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার কোনো নিয়মিত পদ্ধতি ছিল না। প্রাথমিক মানের শিক্ষার পর মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ প্রকৃতপক্ষে উচ্চশ্রেণি ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল- বিশেষত, যারা এর জন্য ব্যবস্থা করতে সক্ষম ছিলেন। সম্রাট আকবর ফতেহপুর সিক্রিতে তাঁর প্রাসাদের রাজ-পরিবার ও অভিজাত শ্রেণির মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
এ থেকে অনুমান করা হয় যে, শাসক, অভিজাত সম্প্রদায় ও অবস্থাপন্ন মুসলমানেরা তাদের মেয়েদের শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটা দেখা গেছে যে, মুসলমান শাসনামলে উচ্চপরিবারে মেয়েরা সুশিক্ষিত ও সংস্কৃতিসম্পন্ন ছিলেন। মুঘল সমাজে বহু ী ছিলেন, যাঁরা তাঁদের সাহিত্য বিষয়ক কৃতিত্বের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন বাবুরের কন্যা গুলবদন
বেগম, হুমায়ুনের ভাগ্নি সেলিমা সুলতানা, আকবরের দুধ-মা মহাম আনাগা, জাহাঙ্গীরের মহিষী নূরজাহান, শাহজাহানের পত্নী মমতাজ মহল, শাহজাহানের কন্যা জাহানারা ও আওরঙ্গজেবের কন্যা জেবুন্নেসা।
মুঘল রমণীগণ রাজ-প্রাসাদস্থিত বিদ্যালয়ে বা গৃহে নিযুক্ত শিক্ষয়িত্রীদের মাধ্যমে। উচ্চশিক্ষা লাভ করতেন। সতীউন্নেসা নামক জনৈকা উচ্চশিক্ষিতা ও প্রতিভাসম্পন্না মহিলার নিকট জাহান আরা ও রওশন আরা শিক্ষাপ্রাপ্ত হন এবং আওরঙ্গজেবের অনুগ্রহভাজন খাস মুনশী (সেক্রেটারি) ইনায়েত উল্লাহ কাশ্মিরীর মা হাফিজার নিকট জেবুন্নেসা শিক্ষা লাভ করেন। এ উপমহাদেশের অন্যান্য মুসলমান রাজ্যে এ ধরনের মহিলা শিক্ষয়িত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়। ফিরিস্তা অনুসারে, মালবরাজ সুলতান গিয়াসুদ্দিনের হারেমে (১৪৬৯-১৫০০ খ্রি.) পনেরো হাজার রমণী ছিলেন এবং এঁদের মধ্যে বহু শিক্ষয়িত্রী, গায়িকা ও অন্যান্য বৃত্তির মহিলা ছিলেন।” অবশ্যই শিক্ষায়িত্রীগণ রাজপ্রাসাদে মেয়েদের শিক্ষাদান কার্যে নিয়োজিত ছিলেন। শিক্ষিত ও বিদ্যোৎসাহী সুলতানগণ, অভিজাত সম্প্রদায় এবং অবস্থাপন্ন লোকেরাও তাদের কন্যাদের শিক্ষাদানের নিমিত্ত গৃহে বিদ্যালয় এবং শিক্ষয়িত্রী রাখার ব্যবস্থা করতেন। এমনকি, উনিশ শতকের প্রথম পাদেও এডাম পাণ্ডুয়ায় অবস্থাপন্ন মুসলমানগণ কর্তৃক গৃ - শিক্ষয়িত্রী রাখার রীতি লক্ষ করেছেন। বাস্তবিকই, এটা ছিল মুসলমান আমলে ঐতিহ্যগত প্রথা। মৌলবীগণ যাঁরা সাধারণত মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন, তাঁরাও তাঁদের অবসর সময়ে অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের কন্যাদেরকে শিক্ষাদান করতেন। এভাবেই মুসলমান বালিকারা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতো। এটি একটি বিশেষ ধরনের বন্দোবস্ত বিধায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী মেয়েদের সংখ্যা ছিল খুবই কম । উচ্চশিক্ষার জন্য নিয়মিত সুযোগ-সুবিধার অভাববশত মুসলমান মেয়েরা প্রতিভা বিকাশের কোনো বিশেষ পথ পায়নি। এ সত্ত্বেও, বিদ্যাবত্তায় মেয়েদের কৃতিত্ব এবং পুরুষের সঙ্গে সাহিত্য-বিষয়ক প্রতিযোগিতায় তাদের সাফল্য ও গুণপনার কথা আমরা শুনতে পাই। হাসানহাটির জনৈক কাজীর স্ত্রী হিন্দুশাস্ত্রে খুবই পারদর্শিনী ছিলেন। 'গদাই মল্লিকের পুথি'; বা 'মল্লিকার হাজার সওয়াল' (মল্লিকার হাজার প্রশ্ন) নামে অভিহিত কাব্য থেকে জানা যায় যে, মল্লিকা নাম্নী মুসলমান বালিকা জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে, যে পুরুষ তাকে সাহিত্য-বিষয়ক বিতর্কে পরাজিত করতে পারবে, তাকেই বিয়ে করবেন। বহু রাজপুত্র ও বিদ্বান ব্যক্তি তার সঙ্গে বিতর্কে অবতীর্ণ হন, কিন্তু সকলেই মল্লিকার নিকট পরাজয় বরণ করেন। অবশেষে জনৈক সুফি পণ্ডিত আবদুল হাকিম গদা তার হাজার প্রশ্নের উত্তরদান করে তাকে বিতর্কে পরাজিত করেন। অতঃপর মল্লিকা তাঁর বিজয়ীকে বিয়ে করেন। যদিও এটি একটি গল্প মাত্র, তথাপি এতে তৎকালীন সমাজের অবস্থার পরিচয় মেলে যে, বাংলার মুসলমানদের মধ্যে এ রকম বিদুষী রমণী বিরল ছিল না। কবি আবদুল হাকিমের 'সয়ফুল মুলক' পুঁথি নামে অন্য একটি সমসাময়িক কাব্যগ্রন্থ থেকে এ ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়। এই প্রেম কাব্যের নায়িকা লালমতি (লালবানু) সর্ববিদ্যায় পারদর্শিনী ছিলেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]