সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ


সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ বিমাতার চক্রান্তে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং পিতা-পুত্রের সংঘর্ষে
সিকান্দার শাহের মুত্যু হলে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি বৈমাত্রেয়
ভাইদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করেন এবং তাঁদের অন্ধ করে দেন বা হত্যা করেন।


গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ তাঁর পিতা ও পিতামহের মত দক্ষ নৃপতি ছিলেন। কিন্তু তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব যুদ্ধ বিগ্রহের
ক্ষেত্রে নয়। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, বিদ্বান ও কবিদের পৃষ্ঠপোষক, সুফি-সাধকদের প্রতি ভক্তি, ইসলামি সভ্যতার
কেন্দ্রস্থলে মাদ্রাসা স্থাপন এবং চীন সম্রাটের সঙ্গে দূত বিনিময়ের জন্য তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কামরূপ আক্রমণ করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। গৌহাটি যাদুঘরে
আজম শাহের একটি শিলালিপি রক্ষিত আছে। অনুমান করা হয় এটি কামরূপের কোন অঞ্চলে আবিষ্কৃত
হয়েছিল। আমরা জানি, সুলতান ইলিয়াস শাহের রাজত্বকালের শেষের দিকে কামরূপ বিজিত হয়েছিল।
এমন হতে পারে যে সিকান্দার শাহের রাজত্বকালে কামরূপে মুসলমান অধিকার লোপ পায় এবং
গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ এই অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। আসাম বুরুঞ্জীতে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম
শাহ কর্তৃক কামরূপ আক্রমণ ও বাংলার সুলতানের পরাজয়ের কথা উল্লেখিত আছে। তবে ১৩১৬ বঙ্গাব্দে
(১৩৯৪-৯৫ খ্রি:) লিখিত যোগীনিতন্ত্র নামক গ্রন্থে মুসলমানদের কামরূপ আক্রমণ ও অধিকারের কথা
উল্লেখিত আছে। যদিও অসমিয়া সূত্রে তাঁর পরাজয়ের কথা আছে। মুদ্রা ও লিপি তাঁর বিজয় ও অধিকারের
কথাই প্রমাণ করে। তবে এই অধিকার বেশিদিন স্থায়ী হয়েছিল কিনা বলা যায় না।
রিয়াজ- উস-সালাতীন গ্রন্থে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের ন্যায়পরায়ণতার কাহিনী বর্ণিত আছে। তিনি নিজে
বিদ্বান ছিলেন এবং বিদ্যার সমাদর করতেন। তিনি ফার্সি ভাষায় কবিতা লিখতেন এবং একবার তিনি
ইরানের বিখ্যাত কবি হাফিজকে বাংলায় আসার আমন্ত্রণ জানান। রিয়াজ-উস-সালাতীনে কবি হাফিজের
সঙ্গে গিয়াসউদ্দিনের যোগাযোগের একটি কাহিনী পাওয়া যায়। একবার সুলতান ফার্সি ভাষায় একছত্র
কবিতা লিখে দ্বিতীয় চরণটি আর রচনা করতে পারলেন না। তখন সুলতান এই চরণটি লিখে একজন দূত
মারফত ইরানে কবি হাফিজের নিকট পাঠিয়ে দেন। কবি হাফিজ দ্বিতীয় চরণটি রচনা করেন। সাথে সাথে
তিনি একটি গজল রচনা করে বাংলার সুলতানের নিকট পাঠান। সুলতান হাফিজের নিকট বহুমূল্যবান
উপহার পাঠালেন। গজলটি “দিওয়ান-ই-হাফিজ” নামে হাফিজের কাব্য সংগ্রহের মধ্যে হুবহু পাওয়া যায়।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মক্কা ও মদিনা শরিফে বহু টাকা ব্যয়ে মাদ্রাসা স্থাপন করেন ও এই দুই
শহরের অধিবাসীদের মধ্যে বিলি করার জন্য বহু অর্থ প্রেরণ করেন। পিতা এবং পিতামহের মতো তিনিও
মুসলমান সুফিদের অত্যন্ত ভক্তি করতেন। তাঁর সমসাময়িক সুফিদের মধ্যে শায়খ আলাউল হকের পুত্র ও
শিষ্য শায়খ নূর কুতুবই আলমের নাম বিখ্যাত। তাঁর ভাই আজম খান মুলতানের উজির ছিলেন। বিহারে
শামস্ বলখি নামে আর একজন দরবেশকে তিনি বিশেষ ভক্তি করতেন।
বিদেশে দূত প্রেরণ গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বের একটি অভিনব ও প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য। পারস্যের
কবি হাফিজের নিকট দূত প্রেরণ ছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্যও যে তিনি দূত
পাঠিয়েছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়। আজম শাহ জৌনপুরের কাকী সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা খাজা জাহান
মালিক সরওয়ারের নিকট দূত প্রেরণ করেন। তিনি চীন সম্রাটের সাথেও দূত এবং উপহার বিনিময় করেন।
চীনা গ্রন্থের সাক্ষ্যে ১৪০৫, ১৪০৮, ১৪০৯ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কর্তৃক চীনে দূত ও উপহার
প্রেরণের কথা জানা যায়। চীনা প্রতিনিধি দলের সাথে আগত দোভাষী মা-হুয়ান বাংলা সম্বন্ধে একটি
মনোজ্ঞ বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কর্তৃক প্রকাশিত ৮১৩ হিজরি (১৪১০ খ্রি:) পর্যন্ত মুদ্রা পাওয়া যায়।
সুতরাং মুদ্রা প্রমাণে বলা যায় যে, তিনি ৭৯৫ হতে ৮১৩ হিজরি (১৩৯৩ -১৪১১ খ্রি:) পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছর
কাল রাজত্ব করেন। রিয়াজ-উস-সালাতীনে বলা হয়েছে যে, রাজা কানস্ (সম্ভবত রাজা গণেশ) নামক
জমিদারের ষড়যন্ত্রে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ উত্তরাধিকারসূত্রে এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েছিলেন। এই
সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে খুব একটা সাফল্য অর্জন না করলেও তিনি তা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন। সুশাসক
বিদ্যোৎসাহী ও ন্যায়বিচারক হিসেবে তিনি সুনাম অর্জন করেছিলেন।তদানীন্তন ইসলামি বিশ্বের সাথে
যোগাযোগ স্থাপন এবং চীন দেশের সাথে দূত বিনিময় করে তিনি বাংলার সাথে বহির্বিশ্বের পরিচয় ঘটান।

তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় চরিত্রের অধিকারী। তাঁর জীবনের কোন কোন ঘটনা এতই বৈচিত্র্যপূর্ণ যে সেগুলো
হতে তাঁকে রূপকথার রাজপুত্রের সমপর্যায়ভুক্ত বলে মনে হয়।
মা-হুয়ানের বিবরণ
মা-হুয়ানের বিবরণে তৎকালীন বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি সুস্পষ্ট চিত্র বিধৃত রয়েছে। এতে
বাংলার সামুদ্রিক বন্দর, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প ও সমাজ সংস্কৃতির তথ্য পাওয়া যায়। বাংলায় হিন্দু ও
মুসলমান দুই ভিন্ন জনগোষ্ঠীর অবস্থান এবং তাদের ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য পোষাক ও সংষ্কৃতির কথা তিনি উল্লেখ
করেছেন। কৃষি প্রধান বাংলায় উৎপাদিত বিভিন্ন শস্যের কথা জানা যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এদেশে
চা উৎপাদিত হতো না, তাই পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হতো। দেশের অধিকাংশ অধিবাসী ছিল
কৃষিজীবি। এছাড়া বণিক, জ্যোতিষ, শিল্পী এবং পন্ডিত ছিল। ধনী বণিকরা পণ্য সম্ভার নিয়ে বিদেশে
বাণিজ্য করতে যেতো এবং সে উদ্দেশ্যে বৃহৎ নৌযান নির্মাণ করা হতো শিল্প দ্রব্যের মধ্যে বাংলার সূক্ষè
সুতি বস্ত্রের বেশ প্রশংসা করা হয়েছে। এবং ছয় প্রকার সূক্ষè সুতি বস্ত্রের উল্লেখ এতে রয়েছে। এ দেশের
মুদ্রার নাম ছিল টংকা। তবে সাধারণ বিমিয়ের জন্য কড়ির ব্যবহারও প্রচলিত ছিল। অপরাধীদের শাস্তির
জন্য ভারি বাঁশ নিয়ে প্রহার ও নির্বাসনের প্রচলন ছিল। এদেশের জনসাধারণের ভাষা যদিও ছিল বাংলা,
তবে সরকারি কাজকর্ম ফার্সি ভাষায় হতো এবং উচ্চপদস্থ মুসলমান কর্মচারীও ফার্সি ভাষা ব্যবহার করতো।
মা-হুয়ান নানা প্রকার আমোদ-প্রমোদ, ক্রীড়া-কৌতুকের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও মা-হুয়ানের বিবরণ
অনেকটা সমাজের উচ্চ শ্রেণীভিত্তিক, তথাপি পঞ্চদশ শতাব্দীর বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা জানার জন্য
একান্তভাবেই চৈনিক তথা মা-হুয়ানের বিবরণের ওপর ভরসা করতে হয়।
সুলতান সাইফউদ্দিন হামজা শাহ
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র সাইফউদ্দিন হামজা শাহ সুলতান হন। এ পর্যন্ত তাঁর
শাসনকালের কোন লিপি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে মুদ্রার সাক্ষ্যে বলা যায় যে, তিনি ৮১৩ হিজরি
(১৪১০-১১ খ্রি:) হতে ৮১৪ হিজরি (১৪১১-১২ খ্রি:) পর্যন্ত রাজত্ব করেন। মুদ্রায় তিনি ‘সুলতান-উসসালাতীন' উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালেও চীন দেশের সাথে সদ্ভাব অক্ষুন্ন ছিল এবং দূত
বিনিময় হয়েছিল । রাজা গণেশের চক্রান্তে সুলতানের ক্রীতদাস শিহাবউদ্দিন তাঁকে হত্যা করেন এবং
নিজেই সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সুলতান শিহাবউদ্দিন বায়েজিদ শাহ
মুদ্রায় প্রমাণ পাওয়া যায় যে, শিহাবউদ্দিন সুলতান হয়ে শিহাবউদ্দিন বায়েজিদ শাহ নামে ৮১৪ হিজরি
(১৪১১-১২ খ্রি:) হতে সুলতান সাইফউদ্দিন হামজা শাহের ক্রীতদাস ছিলেন এবং বিশ্বাসঘাতকতা করে
স্বীয় প্রভুকে হত্যা করে সিংহাসন অধিকার করেন। শিহাবউদ্দিনের রাজত্বকাল সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায়
না। সম্ভবত, রাজা গণেশের চক্রান্তে তাঁকে হত্যা করা হয়।
সুলতান আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ
মুদ্রা প্রমাণে বলা যায়, শিহাবউদ্দিন ফিরোজ শাহ সুলতান হন। সাতগাঁও ও মুয়াজ্জামাবাদ টাকশাল হতে
উৎকীর্ণ তাঁর ৭১৭ হিজরির (১৪১৪-১৫ খ্রি:) মুদ্রা পাওয়া গেছে। এমনও হতে পারে যে, গনেশের চক্রান্তে
পিতার মৃত্যু হলে আলাউদ্দিন রাজধানী ফিরোজাবাদ ত্যাগ করে রাজ্যের কিছু অংশে নিজেকে সুলতান বলে
ঘোষণা করতে সমর্থ হন। তবে তাঁর রাজত্বকাল ক্ষণস্থায়ী হয়েছিল। রাজা গণেশ তাঁকে অপসারিত করে
ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলো।

এভাবে সাময়িকভাবে বাংলার রাজধানীতে রাজা গণেশের আবির্ভাবই ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন
অবসানের প্রধান কারণ। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের হত্যা হতে শুরু করে আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহের হত্যা
ও অপসারণ পর্যন্ত রাজা গণেশের প্রভাবই বাংলার রাজনীতির ধারা নির্ধারণ করেছিল।
রাজা গণেশ
৮১৭ হিজরি (১৪১৪-১৫ খ্রি:) সালের পর বাংলার ইতিহাসে প্রায় ত্রিশ বৎসরকাল রাজা গণেশ ও তাঁর
বংশধরগণ শাসন বজায় রেখেছিলেন।রাজা গণেশের ইতিহাস পুনরুদ্ধার কষ্টসাধ্য।কারণ সমসাময়িককালের
কোন ইতিহাস নেই বললেই চলে। কিংবদন্তী ও কুলপঞ্জিতে রাজা গণেশ সম্বন্ধে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
কিন্তু তাদের মধ্যে গণেশ ও তাঁর বংশের ইতিহাস পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের প্রামাণিকতা সম্বন্ধে সন্দেহের
অবকাশ আছে। যে সমস্ত সূত্রের মধ্যে গণেশ ও তাঁর বংশের ইতিহাস পাওয়া যায় তার মধ্যে আবুল ফজল
রচিত আইন-ই-আকবরী, নিজামউদ্দিন বখ্শী রচিত তাবাকাৎ-ই-আকবরী ও গোলাম হোসেন সলিম রচিত
রিয়াজ-উস-সালাতীন উল্লেখযোগ্য। তবে পরবর্তী সময়ে লিখিত এসব সূত্রে ঘটনার যে বিবরণ পাওয়া যায়
তার মধ্যে কতখানি সত্যতা নিহিত আছে বলা কঠিন। মুদ্রার মত প্রামাণিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে
মোটামুটিভাবে রাজা গণেশ ও তাঁর বংশধরদের ইতিহাস পুনরুদ্ধার করা যায়।
বাংলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের পূর্বে গণেশের পরিচয় সম্বন্ধে মতানৈক্য রয়েছে। রিয়াজ-উসসালাতীনের মতে, গণেশ ছিলেন ভাতুড়িয়ার জমিদার। গণেশ যে একজন জমিদার ছিলেন তা শেখ নূর
কুতুব-ই-আলমের একখানি চিঠি হতেও জানা যায়। ফিরিশতার বিবরণ হতে জানা যায় যে, শাসন ক্ষমতা
হস্তগত করার পূর্বে গণেশ ইলিয়াস শাহী সুলতানদের অমাত্য ছিলেন।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের মৃত্যু প্রসঙ্গে আমরা গণেশের প্রথম উল্লেখ পাই এবং পরবর্তী
সুলতানদের সময় তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন অমাত্য হিসেবে দেখতে পাই। এই সময় গণেশের ক্রমাগত
ক্ষমতা বৃদ্ধির পরিণতি হয়েছিল বাংলার সিংহাসন অধিকার। আজম শাহের পরবর্তী তিনজন সুলতানের
শাসনকালে গণেশ অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ছিলেন এবং তাঁরই ষড়যন্ত্রে শিহাবউদ্দিন বায়েজিদ শাহের মৃত্যু হয়
এবং আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ অপসারিত ও নিহত হন। রাজা গণেশ বাংলার সর্বময় ক্ষমতা অধিকার
করতে সক্ষম হন।
রিয়াজ-উস-সালাতীন হতে জানা যায়, ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন উচ্ছেদ করে রাজা গণেশ নিজেই
সিংহাসনে বসেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুসলমান দরবেশদের সাথে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। গণেশ অনেক
মুসলমান দরবেশকে হত্যা করেন। দরবেশদের নেতা নূর কুতুব-ই-আলম জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম
শর্কীকে বাংলা আক্রমণের আহ্বান জানান। সুলতান ইব্রাহিম সসৈন্য বাংলায় উপস্থিত হলে রাজা গণেশ
নতি স্বীকার করেন এবং নূর কুতুব-ই-আলমের সাথে আপোষ করেন। আপোষের শর্তানুযায়ী রাজা গণেশের
পুত্র যদুকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয় এবং যদুই জালালউদ্দিন মাহমুদ নাম ধারণ করে বাংলার
সিংহাসনে বসেন। সুলতান ইব্রাহিম শর্কী জালালউদ্দিনকে সিংহাসনে বসিয়ে জৌনপুরে ফিরে যান।
বুকাননের বিবরণীতেও এ ঘটনার সমর্থন পাওয়া যায়। মুদ্রা প্রমাণেও এ কথা নি:সন্দেহে বলা যায় যে,
৮১৮ হিজরি হতে সুলতান জালালউদ্দিন মাহমুদ বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ৮১৭ হিজরিতে
জারিকৃত সুলতান আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহের মুদ্রা পাওয়া গেছে। সুতরাং রাজা গণেশ অতি অল্পকালের
জন্য (৮১৭ হিজরির শেষের দিকে বা ৮১৮ হিজরির প্রথম দিকে) সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। ৮১৮
হিজরি হতে তাঁর পুত্র যদু জালালউদ্দিন নামে বাংলা শাসন করতে থাকেন।
কোন কোন সূত্রে রাজা গণেশ কর্তৃক দ্বিতীয় বার সিংহাসন অধিকারের উল্লেখ আছে। সুলতান ইব্রাহিম
শর্কীর প্রত্যাবর্তনের পরপরই রাজা গণেশ শাসনদন্ড পরিচালনা আরম্ভ করেন এবং পুত্র যদুকে সুবর্ণধেনু ব্রত
দ্বারা পুনরায় হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করেন। ১৩৩৯ ও ১৩৪০ শকাব্দে পান্ডুনগর, সুবর্ণগ্রাম ও চাটিগ্রাম টাকশাল
হতে প্রকাশিত দনুজমর্দন দেব নামে একজন হিন্দুরাজার কিছু মুদ্রা পাওয়া গেছে। ১৩৪০ শকাব্দে পান্ডুনগর
ও চাটিগ্রাম টাকশাল হতে প্রকাশিত মহেন্দ্রদেব নামে একজন রাজার মুদ্রাও পাওয়া গেছে। মুদ্রা প্রমাণের

ওপর ভিত্তি করে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী মত প্রকাশ করেন যে, এ সময় রাজা গণেশ গৌরবসূচক
“দুনজমর্দন” ও ”চন্ডীচরণ পরায়ণ” উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ভট্টশালীর এই মত সর্বজনস্বীকৃত নয়।
অনেকে দনুজমর্দন দেবকে পূর্ববঙ্গীয় রাজা বলে মত প্রকাশ করেছেন। তবে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া
কঠিন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]