বাংলা লিপি Bangla Alphabet

বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি। কুটিল লিপি থেকে এর উদ্ভব। কুটিল লিপি আবার ব্রাহ্মীলিপির একটি বিবর্তিত রূপ। ব্রাহ্মীলিপির উৎপত্তি সুদূর প্রাচীন কালে হলেও খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের পূর্বেকার ব্রাহ্মীলিপির কোন নিদর্শন আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। এ লিপির প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় পিপ্রাবা (Piprahwa) ও বলী নামক দুটি অভিলেখে, যা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে উৎকীর্ণ। এই লিপি ৩৫০-১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত অশোকলিপি বা মৌর্যলিপি নামে পরিচিত ছিল এবং এ সময়েই ব্রাহ্মীলিপির প্রথম বিবর্তন লক্ষ করা যায় । বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে অশোক বা মৌর্যলিপিকে দুই স্তরে ভাগ করা হয় প্রাচীন ও অর্বাচীন। প্রাচীন মৌর্যলিপি আবার উত্তরী ও দক্ষিণীভেদে দুই ভাগে এবং অর্বাচীন সাত ভাগে বিভক্ত।
ব্রাহ্মীলিপির বিবর্তনের দ্বিতীয় স্তর কুষাণলিপি। কুষাণ রাজবংশের নামানুসারে। এর নামকরণ হয় কুষাণলিপি। খ্রিস্টীয় ১০০-৩০০ অব্দ পর্যন্ত এ লিপির প্রচলন ছিল। ব্রাহ্মীলিপির বিবর্তনের তৃতীয় স্তর গুপ্তলিপি। গুপ্ত রাজবংশের নামানুসারে এর এরূপ নামকরণ করা হয়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতক পর্যন্ত এ লিপি ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। এ সময়ে গুপ্তলিপির কোন কোন বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা বর্ণের আকার ধারণ করে। যেমন, মহারাজা জয়নাথের দানপত্রে ই ও গ বর্ণদুটি বর্তমান। বাংলা বর্ণের মতো। ব্রাহ্মীলিপির বিবর্তনের ইতিহাসে এর পরবর্তী স্তর কুটিল লিপি। কোন রাজবংশের প্রভাব ছাড়াই এ লিপি ষষ্ঠ থেকে নবম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। এ লিপির অক্ষর ও স্বরের মাত্রা অনেকটা কুটিলাকৃতির বলেই সম্ভবত এর নাম হয়েছে কুটিল লিপি। ভারতবর্ষের প্রায় সকল আধুনিক লিপির উৎস এই কুটিল লিপি। কুটিল লিপির প্রধানত দুটি রূপ উত্তর ভারতীয় ও দক্ষিণ ভারতীয়। উত্তর ভারতীয় কুটিল লিপির পশ্চিমাঞ্চলীয় রূপ থেকে দেবনাগরী এবং পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে অর্থাৎ মগধ অঞ্চলের কুটিল লিপি থেকে বাংলা লিপির উৎপত্তি হয়। ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দ থেকেই এই পূর্বাঞ্চলীয় কুটিল লিপির বিবর্তন শুরু হয় এবং এর অধিকাংশ বর্ণ আধুনিক বাংলা বর্ণের আকারে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরিত বর্ণমালার প্রথম ব্যবহার দেখা যায় দশম শতকে বিনায়ক পালের তাম্রফলকে। এভাবে তা গুর্জর শাসনামলে তদানীন্তন বাংলাদেশে প্রবেশ লাভ করে। পরবর্তীকালে এই বর্ণমালা স্বাধীনভাবে বহু বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে দশম শতকের শেষভাগে মূল বাংলা বর্ণমালায় পরিণত হয়। এই বর্ণমালার প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় প্রথম মহীপালের (৯৮০- ১০৩৬) বাণগড় দানপত্রে এবং কম্বোজের রাজা নয়পালদেবের (১০৩৬-১০৫৩) ইদার দানপত্রে। বাণগড় দানপত্রে আধুনিক বাংলা বর্ণমালার অ, উ, ক, খ, গ, চ, ঢ, ব, হ এবং জ বর্ণ দেখতে পাওয়া যায়।
একাদশ শতকের শেষভাগে কিংবা দ্বাদশ শতকের প্রারম্ভে বিজয়সেনের (১০৯৮- ১১৬০) দেওপাড়ার খোদিত লিপিতে এই মূল বাংলা বর্ণমালার আরো উন্নত রূপ লক্ষ করা যায়। দ্বাদশ শতকের শেষভাগে এই বর্ণমালা আরো বিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রায় বর্তমান বর্ণমালার আকার ধারণ করে। এ সময়কার বাংলা বর্ণমালার নিদর্শন পাওয়া যায় লক্ষ্মণসেনের আনুলিয়ার দানলিপি, ১১৯৬ খ্রিস্টাব্দের সুন্দরবনের দানলিপি ইত্যাদিতে। এরপর পূর্বভারতে মুসলমান বিজয়ের ফলে সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারা কিছুকাল (১৩শ-১৪শ শতক) বন্ধ থাকে। ফলে বাংলা লিপির ব্যবহার ও এর বিবর্তনও বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চদশ শতকে স্বাধীন সুলতানদের অনুপ্রেরণায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা পুনরায় শুরু হয়। এ সময় চৈতন্যদেবের বৈষ্ণবধর্মের প্রভাবে ষড়গোস্বামী, চৌষট্টি মোহন্ত ও অন্যান্য বৈষ্ণবের অনেকেই বাংলা অক্ষরে সংস্কৃত ও
বাংলা ভাষায় অসংখ্য পুস্তক রচনা করেন। এ সময় বাংলা লিপির আকৃতিগত ভেন কোন পরিবর্তন হয়নি। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এবং পঞ্চদশ শতাদের বোধিচর্যাবতার গ্রন্থে বাংলা লিপির পূর্ণ বিকাশ লক্ষ করা যায়।
খ্রিস্টীয় ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে বাংলা লিপির কোন কোন বাতি সামান্য পরিবর্তন হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলি তৎকালে প্রচলিত প্রাচীন পুথির বাংলা অক্ষরের আদলে বাংলা হরফ হুগলিতে প্রথম বাংলা মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছরই এই মুদ্রণযন্ত্র হ্যালহেডের A Grammar of the Bengal Language নামক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এতে বাংলা অংশের মুদ্রণে উইলকিনস নির্মিত বাংলা হরফ ব্যবহার করা হয়। এর পর উনিশ শতকে প্রায় সর্বত্র মুদ্রণ পদ্ধতি প্রচলিত হয়ে যায়। ফলে হস্তলিখিত পুজি ব্যবহার হ্রাস পায় এবং বাংলা লিপির বিবর্তনও যায় বন্ধ হয়ে, কারণ পুঁথিগুলো হ লেখা হতো বলে ব্যক্তিভেদে হস্তাক্ষরেরও পরিবর্তন ঘটত। তাই মুদ্রণযন্ত্রে বাংলা এয় মুদ্রণ প্রচলিত হওয়ায় বাংলা অক্ষর ব্যক্তিপ্রভাব থেকে মুক্ত হয়। ফলে বাংলা সিি একটি স্থায়ী রূপ লাভ করে। বর্তমানে প্রযুক্তিগত কারণে বাংলা লিপি বিভিন্ন একর শৈল্পিক রূপ লাভ করলেও তার প্রকৃত রূপটি অপরিবর্তিতই রয়েছে।
বাংলা লিপির বর্ণ দুই প্রকার স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ । অ, আ, ই ইত্যাদি এগারোটি স্বরবর্ণ এবং ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি ঊনচল্লিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ। মোট বর্ণ ৫০টি। স্বরবর্ণপুরে স্বাধীনভাবে উচ্চারিত হতে পারে, কিন্তু ব্যঞ্জনবর্ণসমূহ স্বরবর্ণের সাহায্য ব্যতীত উচ্চারিত হতে পারে না। ইংরেজি vowel- এর মতো বাংলা স্বরবর্ণ সব সময় পূর্ণ আকারে লিখিত হয় না; ক্ষেত্র বিশেষে অ-বর্ণ ব্যতীত অন্য সকল স্বরবর্ণের পরিবর্তে নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। অ-বর্ণটি সাধারণভাবে সকল ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গেই থাকে (যেমন : ক = কৃ + অ), যদি সেগুলোর সঙ্গে অন্য কোন স্বরধ্বনি বা স্বরচিহ্ন থাকে। শব্দের প্রথমে প্রতিটি স্বরবর্ণই পূর্ণাকারে লিখিত হয়, কিন্তু অন্যত্র তাদের প্রতীক চিহ্নসমূহ ব্যবহৃত হয়। যেমন- আম (আ + ম) জাম (জ্ + 1 +ম)। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আ- স্বরবর্ণটি 1-কার চিহ্ন ধারণ করেছে।
বাংলা সাহিত্য : কাল-বিচারে বাংলা সাহিত্যকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০), মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০) ও আধুনিক যুগ (১৮০০-)। মধ্যযুগ আবার তিনভাগে বিভক্ত: আদি-মধ্যযুগ (১২০০-১৩৫০), মধ্য-মধ্যযুগ (১৩৫০-১৭০০) ও অন্ত্য-মধ্যযুগ (১৭০০-১৮০০)। অনুরূপভাবে আধুনিক যুগও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত; প্রস্তুতিপর্ব (১৮০০-১৮৬০), বিকাশের যুগ (১৮৬০-১৯০০), রবীন্দ্রপর্ব (১৯০০-১৯৩০), রবীন্দ্রোত্তর পর্ব (১৯৩০-১৯৪৭) এবং বাংলাদেশ পর্ব।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]