বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যশিল্প : সুলতানি আমল ও মুঘল আমলে বাংলার মুসলিম স্থাপত্য রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য Muslim architecture in Bengal: Chief Characteristics of the Bengal Muslim Style Sultanate Period and Mughal Period

বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ
Development of Muslim architecture in Bengal ১৩.২ বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Muslim architecture in Bengal
সুলতানি আমলে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশিল্প
Muslim architecture of Bengal in Sultanate period
সুলতানি আমলে বাংলার বিখ্যাত মুসলিম স্থাপত্যকীর্তিসমূহ
The famous Muslim architecture performances in Bengal
সুলতানি আমলে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য
The main characteristics of Muslim architecture of Bengal in Sultanate Period
মুঘল আমলে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশিল্প
Muslim architecture of Bengal in Mughal Period
মুঘল আমলে বাংলার বিখ্যাত মুসলিম স্থাপত্যকীর্তিসমূহ
The famous Muslim architecture performances of Bengal
মুঘল আমলে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য
The main characteristics of Muslim architecture of Bengal in Mughal Period
– বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যশিল্প : সুলতানি আমল ও মুঘল আমলে বাংলার মুসলিম স্থাপত্য রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ১৩.১ বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ
Development of Muslim Architecture in Bengal ইউরোপের ইতিহাসে যুগবিন্যাস ভিন্নতর হলেও ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমন, বিশেষত দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আফগানিস্তানের ঘোরী বংশীয়দের দিল্লি অধিকারের সময় থেকেই ভারতবর্ষের ইতিহাসে মধ্যযুগের শুরু বলে সাধারণত ধরে নেয়া হয়। দিল্লি অধিকারের পর কয়েক বছরের মধ্যেই মুসলমানদের বাংলায় আগমন ঘটে। ১২০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে বখতিয়ার খলজি কর্তৃক বঙ্গবিজয় থেকেই সূচনা হয় বাংলায় মুসলিম শাসনের। বাংলায় মুসলিম শাসন শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পরিবর্তন ঘটায়। এতদিন যে উপাদানগুলে সমাজ ও সংস্কৃতিকে গড়ে তোলে তা ছিল সাধারণ কথায় হিন্দু ও ভারতীয় উপাদান। কিন্তু এরপর তা আর অবিমিশ্র ভারতীয় হিন্দু উপাদান হিসেবেই থাকে না, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম উপাদানও এর সাথে যোগ হয়। মুসলমান তথা আরব, পারস্য দেশীয় আফগানদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ও বহিরাগত মুসলিম উপাদানের সমন্বয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন আসে এবং তা আখ্যাত হয় ‘ভারতীয় ইসলামি বা ‘ভারতীয় মুসলিম’ উপাদানরূপে। এ সময়ে বাংলায় যে স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ ঘটে তা শুধু সাধারণভাবে ‘ভারতীয় মুসলিম'ই নয়, বিশেষভাবে স্থানীয়ও। এটি এমন একটি স্থাপত্যরীতি যা রূপলাভ করে স্থানীয় হিন্দু-বৌদ্ধ রীতির সঙ্গে মুসলিম উপাদানের সংমিশ্রণে। মুসলমানগণ নিয়ে এসেছিলেন তাদের ধর্মীয় প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ গঠনশৈলী এবং হিন্দু ও বৌদ্ধরা তাতে যোগান দিয়েছেন নির্মাণের কলাকৌশল। বলা বাহুল্য যে, মুসলমানগণ ইমারতের কাঠামো পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন কিছু নির্মাণশৈলীও আমদানি করেন যার সাথে ইতঃপূর্বে ভারতীয়দের কোন পরিচয় ছিল না এগুলো হচ্ছে কোন ইমারতের সদরের বহির্ভাগের কাঠামো নির্মাণে খিলান ও স্তম্ভ এবং গম্বুজ তুলে ধরার জন্য পেন্ডেন্টিভ ও স্কুইঞ্চের ব্যবহার। মূলত এগুলো মুসলিম উপাদান নয়। মুসলমানরা প্রাক-ইসলাম যুগে ব্যবহৃত রোমান-বাইজেন্টীয় ও পারসিক উৎস থেকে এগুলো গ্রহণ করে এমনভাবে প্রয়োগ করেছেন যে, সারা ইসলামি বিশ্বে সেগুলো মুসলিম ইমারতের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। হিন্দু-বৌদ্ধ টেকনিকের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয় ছাদ ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত স্তম্ভ, সদল (লিন্টেল) ও কড়ি-বরগা এবং ইমারতের কোণ ভরাটের জন্য কর্বেল রীতির প্রয়োগ। এগুলো হচ্ছে সুদীর্ঘকালের পাথর খোদাই কাজের রীতির সাথে সম্পৃক্ত টেকনিক । ১৩.২ বাংলার মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Muslim Architecture in Bengal এ স্থাপত্য পদ্ধতির প্রধান উপাদানগুলো ছিল খিলান (আর্চ), গম্বুজ (ডোম), মিনার ও মেহরাব। সংযোজক পদার্থ হিসে.. চুন, বালি ও পানি মিশ্রিত দ্রব্য এবং সাজসজ্জার নিমিত্তে উজ্জ্বল ও রঙিন টালির ব্যবহার মুসলিম স্থাপত্য রীতির একটি
বৈশিষ্ট্য ছিল। এ উপমহাদেশে মুসলমানদের দালানকোঠা, মসজিদ, সমাধি সৌধ ইত্যাদির নির্মাণ পদ্ধতিতে এসব উপাদানের প্রাধান্য ছিল। তবে মুসলমান নির্মাতাগণকে স্থানীয় ও সহজলভ্য জিনিস ও রাজমিস্ত্রি এবং পরিবেশের উপর নজর রাখতে হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় চিন্তাধারা ও রীতিনীতির কিছুটা প্রভাব মুসলিম স্থাপত্যের উপর পড়েছিল।
পারিপার্শ্বিকতার ছাপ বিদ্যমান ।
এ স্থাপত্যগুলোতে স্থানীয় প্রকৃতি ও
মুসলিম বাংলার স্থাপত্য শিল্পের বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমরা চার ভাগে ভাগ করতে পারি । যথা :
১. জলাবায়ু বা Climate;
২. অলঙ্করণ বা Design;
৩. উপাদান বা Material;
৪. ঐতিহ্য বা Tradition.
১. জলবায়ু (Climate) : ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়াজনিত বৈশিষ্ট্যের ফলে এ উপমহাদেশের যে কোন স্থান অপেক্ষা এ প্রদেশের মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের উপর স্থানীয় প্রভাব বেশি করে অনুভূত হয়েছিল। বাংলায় বৃষ্টিপাত একটি অতি সাধারণ ঘটনা। এর দ্বারা প্রদেশের দালানকোঠার ছাদ নির্মাণ রীতি প্রভাবিত হয়। এ জন্য বক্রাকৃতি বিশিষ্ট ছাদ নির্মাণ রীতি উদ্ভাবন করতে হয়েছিল যাতে প্রবল বৃষ্টিপাতে ছাদ ও দালানের কোনরূপ ক্ষতি হতে না পারে। প্রচুর বৃষ্টিপাত বাংলার মসজিদগুলোর নির্মাণ পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়। সাধারণত এ ধরনের মসজিদের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে লিওয়ান, ওজুর চৌবাচ্চা ও সংলগ্ন মিনার ছিল না। এর মধ্যে ছিল একটি বড় নামাজ কক্ষ এবং সম্মুখে ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ ও এক পাশে একটি বিরাট পুকুর অথবা চৌবাচ্চা। মসজিদের প্রবেশ মুখের আকৃতিতে স্থানীয় জলবায়ুর প্রভাব বিদ্যমান ছিল। বৃষ্টিবাদল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দরজাগুলো ছোট রাখা হতো। দালানকোঠা এমনভাবে নির্মিত হয়েছে যাতে স্থানীয় মাটি ও জলবায়ুর উপযোগী হয়।
২. অলঙ্করণ (Design) : মুসলিম বাংলার স্থাপত্য শিল্পের অলঙ্করণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো টেরাকোটা (Terracotta)। পাথরের এবং টেরাকোটার সাজসজ্জা আদিনা মসজিদে প্রথম প্রচলিত হয়। দালানকোঠার খিলান ছিল দ্বিকেন্দ্রিক ও তীক্ষ্ণ ধারবিশিষ্ট এবং ভারি স্তম্ভ বা পাথরের খামের উপর নির্ভর ছিল। পুরোনো মালদহে অবস্থিত গুনমস্ত মসজিদ ও জাম-ই-মসজিদের খিলানবিশিষ্ট ছাদ ছিল। বাংলার মুঘল পূর্ববর্তী মসজিদগুলো চার রকমের ছিল। যথা :
(ক) এক গম্বুজবিশিষ্ট; (খ) সম্মুখে বারান্দাসহ এক গম্বুজবিশিষ্ট; (গ) বহু গম্বুজবিশিষ্ট এবং (ঘ) বহু গম্বুজবিশিষ্ট খিলান করা ধনুকের মতো ছাদবিশিষ্ট মসজিদ ।
৩২০ বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যশিল্প : সুলতানি আমল ও মুঘল আমলে বাংলার মুসলিম স্থাপত্য রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য
বসার স্থানসহ বহু গম্বুজওয়ালা মসজিদ ও দালানকোঠা নির্মাণে প্রচুর পরিমাণে চকচকে টালি ব্যবহৃত হতো। ফলে বাংলায় স্থাপত্য শিল্প গৌরবের চরম শিখরে।
আরোহণ করে।
৩. উপাদান (Material) : নির্মাণ কার্যের নিমিত্তে সুলভে পাওয়া উপাদানগুলোর খুব প্রভাব ছিল বাংলার গৃহাদির আকৃতি ও নির্মাণ কৌশলের উপর। দৃষ্টান্তস্বরূপ, প্রদেশে প্রচুর বাঁশ পাওয়া যেত। এগুলো কুঁড়েঘর নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হতো। বাংলায় বেশিরভাগ ঘরবাড়ি বাঁশের খুঁটি ও খড়ের চাল দিয়ে নির্মাণ করা হতো। দোচালা ও চারচালা এই দুই ধরনের নির্মিত ঘর দেখা যেত। বাঁশের নির্মিত ঘরে চাল সরলরেখার পরিবর্তে বাঁকানো হতো। বাংলায় পাথরের ব্যবহার দুর্লভ ছিল। রাজমহলের নিকট 'Black Beselt' নামে এক ধরনের পাথর পাওয়া যেত। বাংলার পলি কাদামাটি গৃহনির্মাণের জন্য প্রচুর উপাদান সরবরাহ করতো। এর দ্বারা ইট তৈরি করা হতো। দালানকোঠা বেশিরভাগ ইটের দ্বারা নির্মিত হতো। তবে কোনো কোনো দালানে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।
৪. ঐতিহ্য (Tradition) : প্রাক-মুসলিম স্থাপত্যের সাথে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের অনেক মিল রয়েছে। তাই মুসলিম স্থাপত্য প্রাক-মুসলিম স্থাপত্যের কাছে অনেকাংশে ঋণী। মনোলিথিক পিলার হলো মুসলিম স্থাপত্যের একটা বিশেষ ঐতিহ্য। এটা স্থানীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন স্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে আর্চ, মিনার, মেহরাব এবং টাওয়ার এদেশের মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ছিল। কেবল মেহরাব হলো বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের মাঝে সংযোজিত একটি বিষয়। মুসলিম স্থাপত্যের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ইট পাথর দিয়ে গড়া হয় ।
সুলতানি আমলে বাংলায় অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে স্থাপত্যগুলো গড়ে উঠেছিল। এগুলোর মাধ্যমে বাংলার খ্যাতি বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
স্থানীয় রীতিনীতির সাথে মুসলিম স্থাপত্য পদ্ধতির সমন্বয় হতো এবং বাংলায় মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের বিশিষ্টরূপ গ্রহণের পথে কয়েকটি স্তরের বিবর্তন হয়েছে। এ বিবর্তন শুরু হয়েছে প্রদেশের মামলুক শাসনকর্তাদের আমলে এবং পরবর্তী ইলিয়াস শাহী সুলতানদের সময়ে এটা একটি পূর্ণাঙ্গ স্থাপত্য শিল্প পদ্ধতিতে পরিণত হয়। ত্রিবেনী, সাতগাঁও, হুগলি এবং পান্ডুয়ায় মামলুক রীতিতে নির্মিত অট্টালিকাগুলো ছিল বাংলার স্থাপত্য শিল্পের গঠন পর্ব। পরবর্তী ইলিয়াস শাহী রীতিতে বাংলার বিশিষ্ট স্থাপত্য শিল্প পদ্ধতি পূর্ণরূপে বিকাশ লাভ করে।
বাংলার মুসলিম স্থাপত্যকে দু'ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
১. সুলতানি আমল/ প্রাক মুঘল আমল ও
২. মুঘল আমল

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]